#কতোবার_বোঝাবো_বল
#ইফা_আমহ্নদ
পর্ব::০৪
— আজকাল বুঝি দেহ ব্যাবসা,, পতিতালয়ে যাওয়ার শুরু করলাম দিয়েছো নাকি?? প্রথম দিন তো দেখলাম ওরনা ছাড়া এসেছিলি,, চুলগুলো উঠি। মনে করেছিলাম,, হয়তো নেক্স থেকে ড্রেসই পড়বে না ।। কিন্তু তুমি যে আমার চেয়ে এতো ফাস্ট সেটা জানতাম না।। ( আমার চোখে চোখ রেখে আবির)
এই কথাগুলো শুনে পাড়লে আমি সেখানেই কেঁদে দেয় ,, কিন্তু কেন কাঁদবো ।। আমি কেন কাঁদবো,, আমি কেন কষ্ট পাবো,, আমি তো এতো নিচু কাজ করি নি,, যেমনটা তিনি ভাবছে ।। আমার ভাবতে অবাক লাগছে এইটা ভেবে ,, মানুষের মন মানসিকতা এতো নিচ হয় কেমন করে ।।। আমাকে এতো গুলো বাজে কথা বলার পড়বও আমি একটাও কথা বললাম না ।। তাকে ধাক্কা দিয়ে আমার থেকে দূরে সরিয়ে দিলাম।।
ধাক্কার তাল সামলাতে না পেরে আবির নিচে পড়ে গেছে ।। কিন্তু আর তাতে কিছু যায় আসে না।। আমি তার দিক থেকে চোখ ফিরিয়ে অন্যদিকে তাকালাম ,, খুব ঘৃণা লাগছে ,, তার দিকে তাকাতে ।। চোখ দুটো ভোরে এসেছে ,, কাদবো না ।। আমি আস্তে আস্তে এগিয়ে গিয়ে এসাইনমেন্ট গুলো তুলে তার দিকে ছুঁড়ে মারলাম ।। তারপর কড়া কড়া গলায় বললাম….
— আপনার এসাইনমেন্ট করা শেষ ,, এবারও কি ঐ ভিডিও টা ইন্টারনেটে আপ দিবেন ।। দিলে দিন , এজ ইউর উইস ।। ( অন্যদিকে তাকিয়ে আমি)
আর কোনো কথা না বলে সোজা স্কুটি নিয়ে বেড়িয়ে এলাম বাড়ির উদ্দেশ্যে।। আর ভাবতে লাগলাম একটু আগের কথাগুলো।।
সামনে তাকিয়ে দেখলাম আমার কিছু চুল তার মুখে পড়ে আছে আর তিনি চোখ বন্ধ করে আছে,, কি জানো একটা উপভোগ করার চেষ্টা করে আছে।।
আমি হাত বাড়িয়ে আমার চুল গুলো তার মুখ থেকে সরিয়ে নিতেই তিনি আমার হাত ধরে ফেললেন ।।
— আচ্ছা তুমি কি সেম্পু উইস করো ,,বলো তো ?? ( আমার চুলের স্মেল নিতে নিতে আবির)
— কেন ববলুন ততো!! ( তুতলিয়ে আমি)
আবির অদ্ভুত দৃষ্টি দেখে আমি আস্তে বেঞ্জ থেকে উঠি যেতে নেই।। হঠাৎ আবিরও উঠে দাঁড়িয়ে একপা একপা করে আমার দিকে এগুতে লাগলেন ।। তার এগিয়ে আসা দেখে আমি পেছনে এগুতে লাগলাম।। পিছিয়ে যেতে যেতে দেয়ালের সাথে আটকে গেলাম।।
আবির আমার কাছে এসে তার একহাতে আমার কোমর চেপে ধরলেন আর অন্য হাত দিয়ে দেয়ালে ঠেস দিয়ে তার মুখ আমার চুলের বাজে গুজলেন।।
তার প্রতিটি নিঃশ্বাসের শব্দ আমি গুনতে পারছি।। শরীরে এক অদ্ভুত শিহরণ খেলে গেল।। আমার কথা যেন সব গলায় আটকে গেল।। আমি কাঁপা কাঁপা গলায় বললাম….
— কককি কররছেনন!!
— তুমি তো বললে না ,, তুমি কি সেম্পু উইস করো,, যে স্মেল আমাকে নেশা ধরিয়ে দিচ্ছে।। তাই তো তোমার চুলের বাজে মুখ গুজে বোঝার চেষ্টা করছি ,, এটা কোন সেম্পু।। ( আবির)
— ককেন ?? ( আমি)
— এই সেম্পুটা আমার হবু বউকে উইস করতে বলবো ।(আবির)
হঠাৎ তিনি আমার গলার ওরনাটা সরিয়ে ফেললেন। তারপর আমার গলার কাঁটা দাগটায় হাত বোলালেন।।
— দেখে তো মনে হচ্ছে না,,এটা নো ছোটো বাচ্চায় বাইট করেছে ,, ( আমাকে উদ্দেশ্য করে আবির) আচ্ছা তুমি কি আবার বিয়ে টিয়ে করছো নাকি ।।
আমি মাথা নাড়িয়ে না সূচক বোঝালাম।।
( তারপরে কি হয়েছিলো তা তো আপনারা জানেনই )
বাড়ি ফিরে ১ ঘন্টা শাওয়াল নিয়ে বেডে বসে বসে নিজের চুল ছিড়ছি,, আর আর আফসোস করছি ,, কেন যে ঐ ভার্সিটিতে ভর্তি হতে গেলাম ,, এই বলে।।
ড্রয়িং রুম থেকে হাসির আওয়াজ পেয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি ৩.৫০ বাজে ।। এখন কে আসবে ভাবছি ।। পাপা,, ভাইয়া তো অফিসে,, মাম্মাম আর আপি বাড়িতে ।। আর হে জানভিও তো আছে ।। কিন্তু জানভি তো এতো জোরে হাসে না,, তাই কৌতূহল মেটাতে ড্রয়িং রুমের দিকে পা বাড়ালাম।। গিয়ে দেখি,,সেখানে মজলিস বসেছে।। পাপা মাম্মাম আপি ,, ভাইয়া,,আর জানভি তো আছেই সাথে যোগ দিয়েছে জানভির বাবা মা।। মানে আমার ফুফু ফুফা ।।
— আসসালামুয়ালাইকুম,, কেমন আছো তোমরা??(আমি)
— আলাইকুম সালাম,, ভালো আছি ,, তুই কেমন আছিস?? ( জেরিন)
( জেরিন আমার ফুফু,,)
— এই তো আলহামদুলিল্লাহ।।তোমরা যে আসবে ,, জানতো আগে বললো না।। (আমি)
— কেন আমরা এসেছি,, তুই বুঝি খুশি হসনি ,, ঠিক আছে আমরা চলে যাবো ।।( অজয়).
(অজয় আমার ফুফা)
— কি যে বলো না,,তোমরা আসবে ,, আর আমি খুশি হবো না ,, পারলে তো আমি তোমাদের আমাদের সাথেই রাখি ।। কি থাকবে।।(আমি)
— না ,, থাকবো না,,, তোদের সাথে থাকলে আমার না খেয়েই সারাজীবন থাকতে হবে।।( অভিমানী সুরে জেরিন)
— কি যে বলো ,, না তোমরা কেন না খেয়ে থাকবে ??(আমি)
— এখন যেমন না গেয়ে আছি ,,তেমন ।।
— তোমরা এখনো কি খাও নি কেন??(আমি)
— তুই এসে একা একা সেই কখন থেকে ঘরের দরজা দিয়ে আছিস ,,তাহলে আমরা খাই কি করে ।।
— চলো তো আগে কিছু খেয়ে নিবে ।।
তারপর সবাইকে নিয়ে লান্ধ করে নিলাম।।
রুমে ফিরে একবার ঠিক করে নিলাম আজ ক্লাভে যাবো ,, অনেক দিন হলো তো যা না ।। কিন্ত তা আর কোথায় হলো ।। জানভিকে নিয়ে আজকে পার্কে যেতে হবে ।। জানভি যেতো বার এসেছে ,, ঠিক ততবার ওকে নিয়ে পার্কে ঘুরতে গিয়েছি।।তাই আমি একটা গ্ৰাউন পরে ,,হালকা একটু লিপস্টিক দিয়ে,,, চুলগুলো ছেয়ে দিয়ে রেডি হয়ে নিলাম। বাহিরে বেরিয়ে দেখি ,, জানভি আগেই বাইক নিয়ে দরজার দিকে তাকিয়ে আছে।। আমি আর ওকে অপেক্ষা না করিয়ে সোজা বাইকে উঠে বসলাম।। কিছুক্ষণ পরে আবার একটা পার্কে চলে এলাম।।
আমি চারদিকে তাকিয়ে চারপাশের পরিবেশ,, মানুষগুলোকে পর্যবেক্ষণ করার চেষ্টা করছি ।। একটু আগে জানভির কাছে আমি বায়না ধরেছিলাম ,,যে আমি আইসক্রিম খাবো ,,,তাই সে গেছে আমার জন্য
আইসক্রিম আনতে।।
আমি গাছের নিচে একটা বেঞ্জ দেখে সেখানে গিয়ে বসে পড়লাম।। বারবার মনে হচ্ছে, কেউ আমাকে ফলো করছে ।। কিন্তু যতোবারই খুজছি ,, ততবারই বৃথা ।। তাই চুপচাপ বসে আছি ,,, যে ফলো করছে করুক,, নাহলে বিস্কিট খাক ।। আমার বায়নায় ছেদ ঘটালো জানভি ।।
— এই নে তোর ,,, আইসক্রিম,, ।। এবার খুশি তো ।।( হাঁপাতে হাঁপাতে জানভি)
— হে খুশি ।।বলেই আইসক্রিম টা মুখে পুড়ে দিলাম।।জানভি আমার দিকে তাকিয়ে আছে।। তাই আমি ওকে একটু সাদলাম ।।
— কিএভাবে কি দেখছো ,, খাবে নাকি ।।
— না তুই খা।। আমি বাদাম খাবো ।।
বলেই পকেট থেকে একটা বাদামের প্যাকেট নিয়ে হাতে ঢেলে ফু দিয়ে খেতে লাগলো।। আমিও ডং দেখিয়ে আইসক্রিম খেতে লাগলাম। এমন ভাবে খাচ্ছি ,, মনে হচ্ছে জীবনেও চোখে দেখি নি।।ও আমাকে দেখিয়ে ডং করে খেতে লাগলো।। বাদামের খোসায় ফু দিতেই তা উরে এসে আমার চোখে পড়লো ,, আমি চোখ বন্ধ করে নিলাম।।। জানভি তাড়াতাড়ি এসে আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে আমার গালে হাত দিয়ে চোখে ফু দিতে লাগলো ।। আমি হাত দিয়ে জানভির শার্ট শক্ত করে চেপে ধরে আছি ।।
হঠাৎ কোনো হাতে তালির শব্দ পেয়ে তাকিয়ে দেখি,, আবির ,,আর তার ফ্রেন্ডরাআমার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। জানভি উঠে দাঁড়ালো,, আমিও উঠে দাঁড়ালাম ।।
— আমি তো ভেবেছিলাম তুমি বাড়িতে এইসব নোংরা কাজ করো ,,, তুমি যে এমন পার্কে এসে এই সব করো জানতাম না।। তাতে কি আজ তো জানলাম।। আচ্ছা,, তোমার গলায় যে দাগটা ,, এইটা কি তোমার এই প্রেমিক দিয়েছে।। নাকি অন্য কোন কাস্টমার।। ছিঃ ছিঃ তোমার লজ্জা করছে না,, নিজের বাবা মা র সম্মান নষ্ট করতে।। আচ্ছা তো কি টাকা পয়সার অভাব,,,তাহলে আমাকে বলতে পারতে ,, আমি নিজের তোমাকে অনেক টাকা দিতাম ।। আর যদি তোমার তাতেও না হতো ,, তাহলে ভার্সিটি থেকে সাহায্য তাহবিল তুলতাম ,, তাতে তো তোমার হতো ।। আমার এখন তোমার দিকে তাকাতেই ঘৃণা হচ্ছে।। ছিঃ ছিঃ নিলজ্জ কোথাকার।।( ঘৃনার দৃষ্টিতে আবির)
চারপাশে তাকিয়ে দেখি ,,, আমাদের গিয়ে অনেক মানুষের ছড়াছড়ি।। খুব কাঁদতে ইচ্ছে করছে । আর নিজের কান্নাকে আটকে রাখতে পারলাম না ।। শব্দ করে কেঁদে দিলাম।। জানভি আমাকে বেঞ্জ এ বসিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করছে ।। কিন্তু আমার কান্না কিছুতেই কমছে না।। বেরেই চলেছে।। সব লোক আমাদের তুলে কিছু একটা বলছে ।। কিন্তু তা আমার কান পর্যন্ত পৌঁছাতে না ।।
প্রথম বার জীবনে এমন অসম্মান আমি কখনো পাই নি।। পাড়লে এই মুহুর্তে মরে যেতাম।। কিন্তু তবুও চেঁচিয়ে বলতে লাগলাম…….
চলবে…..💞💞
#কতোবার_বোঝাবো_বল 🌿
#ইফা_আমহ্নদ
পর্ব::০৫
— আমি পতিতালয়ের বাসিন্দা,, দেহ ব্যাবসা করে থাকি ,, তার বিনিময়ে টাকা উপার্জন করি ।। আমার বাবার আমাকে টাকা দেওয়ার ক্ষমতা নেই।। তার জেনো কি বলছিলেন,, আমি রাস্তায় রাস্তায় নোংরা কাজ করে থাকি ।। আমার যদি টাকার সমস্যা হয় তাহলে জেনো আপনাকে বলি ,,আপনি দিবেন।। আর জেনো কি…( একটু ভেবে আবার আমি) আপনার ক্ষমতা না থাকলে ভার্সিটি থেকে সাহায্য তাহবিল তুলে আমাকে দিবেন।। আমি নাকি কাস্টমার নিয়ে ঘুরি ,,তাই না।। এখন তাহলে আপনার বলা কথাগুলোর উত্তর দেই ।। আমি আলিয়া আহমেদ হানি।। ডটার অফ তানজিম আহমেদ এন্ড রাইসা তমোনা।। দেশের টপ বিজন্যাস ম্যান দের মধ্যে একজন ।। আর তার মেয়েকে নাকি নোংরা কাজ করে টাকা উপার্জন করতে করতে হবে । হাউ ফানি,,তাই না ।। চাইলে ঐরকম দশটা ভার্সিটির দায়িত্ব আমার পাপা একা নিতে পারে,, সেখান থেকে তাহবিল নেওয়ার দরকার পড়ে না।। আর হে সত্যি হলো এই যে আমার চোখে বাদামের খোসা গিয়েছিলো ,,তাই জান সেটা তুলে আনার চেষ্টা করছিলো।।
বলেই উল্টো হাঁটা দিলাম বাড়ি ফেরার পথে,, কিছুদূর গিয়েও ফিরে এলাম।। তারপর আবিরের সামনে তুরি বাজিয়ে বললাম….
— আর হে,,,কি জানো বলছিলেন আপনি সেদিন ।। ( মনে করার চেষ্টা করে আমি) আপনি নাকি ,, মেয়েদের সম্মান করেন,, তার নাকি মায়ের জাত।। তাহলে কি আমি মায়ের জাত না । ও সরি আপনি হয়তো ভুল করে বলে ফেলেছেন।। ঐখানে হয়তো হবে,, যে আপনার নিজের মায়ের জাত,,তাকে সম্মান করেন!! আর হে আমার এটা মনে হচ্ছে যে,,,এই ধরনের নোংরা কাজ আপনি করেন ,, সবাইকে সেরকম ভাবেন ।। ক্যারেক্টার লেস।।( এক প্রকার চেঁচিয়ে বললাম আমি)
সাথে সাথে আবির মিষ্টি বলে আমার গায়ে তোলার জন্য হাত তোলে ।। তা দেখে আমি চোখ দুটো খিচে বন্ধ করে নেই।। কিছুক্ষণ পর সামনে থাকা লোকটার কোনো রেশপনস না পেয়ে চোখ খুলে দেখি….
আবিরের হাতটা জানভি ধরে আছে,, আর দুজন দুজনার দিকে অগ্নি দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে।। তাদের দুজনের নিরবতা ভেঙ্গে জানভি বলে উঠলো।।
— তোর সাহস কিকরে হয় ,, মিষ্টি জানের গায়ে হাত দেওয়ার।। সে মিষ্টি গায়ে আজ পর্যন্ত কোনো একটা ফুলের টোকা অবধি আমি লাগতে দেই নি ।।আর তুই তাকে মারতে চাইছিস,, তোকে তো আমি…
— দেখো ,,ভালো ভাবে কথা বলো!!( আবির)
— তোর সাথে ,,এর থেকে ভালো ভাবে কথা বলা যায় না।। আমার ভাবতে আজ লজ্জা লাগছে ,, আমি এমন একটা জাতি ,,, যারা অন্য জাতিকে সম্মান করতে পারে না।। সত্যি আজ আমরা ব্যর্থ,, এই সমাজে।।
আর কোনো কথা বলার আগেই আমি জানভিকে টেনে ঐখান থেকে নিয়ে এলাম ।। আসার সময় একবার ও পেছনে ফিরে তাকাই অবধি নি।। দেখতে চাই নি,,, পেছনে থাকা লোকটার ভাবাবেগ।।
বাসায় ফিরে ,, আমি একবারও রুমের বাহিরে যাই নি ।। আর জানভিকে পার্কের ব্যাপার টা বাড়িয়ে জানাতে বারন করে দিয়েছি।। এখন মাঝরাতে বেডে শুয়ে এপাশ তো কখনো ওপাশ করছি ।। ঘুমাতে আর পারছি না।। বারবার তখনকার দৃশ্য টা ভেসে উঠছে চোখের সামনে।। আমি তবুও ভোলার চেষ্টা করছি,, কিন্তু পারছি না।। অবশেষে একসময় ঘুমিয়ে পড়লাম।।।
ঘুমের মধ্যে মনে হচ্ছে, কেউ কেঁদে কেঁদে উঠছে ।। হয়তো বা আমার সেই স্বপ্ন টা ।। কিন্তু হঠাৎ চোখে পানি পড়তেই লাফিয়ে উঠলাম।। তাকিয়ে দেখি…
বাহিরে থেকে আসা আবছা আলোয় কেউ একজন আমার রুম থেকে বেলকেনি দিয়ে বেরিয়ে গেল।। আমি তাড়াতাড়ি উঠে বেলকেনিতে গেলাম কিন্তু অন্ধকারে কাউকে দেখা যাচ্ছে না।।আমি রুমে ঢুকে লাইটটা অন করে দিয়ে বেডে চোখ পড়তেই,, রক্তের দাগ দেখতে পেলাম,,, কিন্তু আমার বেডে রক্তের এলো কোথা থেকে সেটাই বুঝতে পারলাম না,,তাই রুমের চারদিকে চোখ বোলাচ্ছি।। চোখ গিয়ে আটকে গেল টেবিলের উপরে রাখা খাতাটার দিকে ।। জানালা থেকে আসা হাওয়ায় খাতাটা কখনো বন্ধ হচ্ছে,তো কানো খুলছে ।। দেখে মনে হচ্ছে,,আমার সাথে লুকোচুরি খেলছে।। আমি আস্তে আস্তে হেটে খাতাটার কাছে গেলাম।। খাতাটা হাতে নিতেই দেখলাম কিছু একটা লেখা আছে।। তাই পড়তে শুরু করলাম।।
“” জানি ,, এতোক্ষণে তুমি হয়তো বুঝতে পেরেছো কেউ তোমার রুমে এসেছিলো ।। তাহলে তুমি ঠিক ভাবছো ,,আমি এসেছিলাম।। আমার মিষ্টির কাছে ।। তুমি হয়তো ভাবছো ,,,কে সে ।।। তাহলে বলবো ,, একবার বেলকেনিতে এসে নিজের চোখে দেখে যাও””
এতো টুকু পড়তেই আমি বেলকেনিতে চলে গেলাম।। আমার রুমের আলোয় তাকে স্পষ্ট দেখা না গেলেও আবছা আবছা দেখা যাচ্ছে।। আমি আবার পড়তে শুরু করলাম।।
“”আমি জানতাম তুমি আসবে ।। জানতে ইচ্ছা করছে কে উদ্দেশ্য আমি ,,,তাহলে তোমার ফোনের ইন্টারনেট কানেকশন টা অন করো ।। “”
আর কিছু লেখা নেই ।।
আমি ফোনটা হাতে নিয়ে ইন্টারনেট কানেকশন টা অন করতেই একটা মেসেজ চলে এলো।।
— কি ভাবছো ,,,তোমার একাউন্ট টা কোথায় পেয়েছি,, তাহলে বলবো ,, এভাবে ফোনটা কে যেখানে সেখানে পাসওয়ার্ড ছাড়া ফেলে রাখলে যে কেউ পাবে।।
— কে আপনি ,,আর আমার রুমে কেন এসেছেন ?? ( আমি টেক্সট করলাম)
— আমি কে তা জেনে তুমি কি করবে ,,,আপাদত এটা জেনে রাখো ,, মিষ্টি প্রমিক ।। আর হে তোমার রুমে এসেছি ,,, তোমাকে দেখতে ,, তোমাকে সরি বলতে !!( অন্যপাশের টেক্সট)
— কেন কি করেছেন আপনি?? ( আমি টেক্সট করলাম)
— আর জন্য তোমাকে এতো কিছু সহ্য করতে হলো ।। সত্যি বলছি ,, আমি কিছুই ইচ্ছে করে করিনি ।। সেদিন তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম তুমি স্কুটি চালিয়ে কোথায় একটা যাচ্ছিলে ।। মাঝরাস্তায় স্কুটিতে ওরনাটা পেঁচিয়ে যাওয়ার পর নাকের ডগায় তোমার রাগ ।। যখন তুমি ভার্সিটির ভেতরে ঢুকছিলে ,, তখন তোমার কপালে জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম।। হাত বাড়িয়ে ঠান্ডা হাওয়া অনুভব করা ,, ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি।। থুতনিতে থাকা কালো কুচকুচে তিলটা ।।সবই যেনো আমাকে তোমার কাছে টানছো ।। সেদিন তোমার দেখা আর পেলাম না।। পরের দিন ফলো করে পেলাম।।
জানো রাতের অন্ধকারে ঘুমন্তো অবস্থায় তোমাকে কতোটা মায়াবী লাগছিলো।। আর সহ্য করতে পারলাম না।। তাই বাইটা দিয়ে দিলাম।। আর তার জন্য তোমাকে এতো কিছু সহ্য করতে হয়েছে ।। আই এম এক্সটেমলি সরি ।। অনেক দেরি করে ফেললাম।। এখন ঘমাও বাই ।।( অন্যপাশের টেক্সট)
— তারমানে আপনি আমাকে বাইট টা দিয়েছিলেন।।
টেক্সট টা করার পর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলাম কিন্তু কোনো রিপ্লে আসলো না ,,, আসবে কিভাবে সিনই তো হয়নি ।।আমিও আর কিছু না ভেবে ঘুমিয়ে পড়লাম।।
🌿🌿
দুদিন হয়ে গেল ভার্সিটিতে যাওয়া হয় না।। শুরু বাড়িতেই ছিলাম।। ফ্রেন্ডরা অনেক ফোন দিয়েছিলো ,, ভার্সিটিতে যেতো বলেছিলো ।। কিন্তু কে যাই ।। এই দুদিনে অনেকবার ঐ মিষ্টি প্রেমিকের সাথে অনেক কথা হয়েছে।। যতোটুকু জেনেছি ,,তা হলো ও আমাদের ভার্সিটিতে পড়ে ।। এর বেশি কিছু না।। তবে প্রথমবার কোনো ছেলের প্রতি এতোটা দূর্বল হয়ে পড়েছি ।।
এখন বেডে পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছি ।। হঠাৎ আমার পাশে থাকা সেল ফোনটা বেজে উঠলো …!! তাকিয়ে দেখি,, ঋতু ফোন দিয়েছে।। ঘুম ঘুম চোখে না তাকিয়ে রিসিভ করে নিলাম।।।
— হে ,, বল।।(আমি)
— কোথায় তুই দুদিন ধরে আসছিস না,,, আজকেও কি আসবি না নাকি??( ঋতু)
— কেনো রে,,, তোর বিয়ে লেগেছে নাকি ,,,যে আসতে হবে!!(আমি)
— না ,, অরিনেশন লেগেছে।। সিনিয়র আপিরা সবাইকে কালকে শাড়ি পড়ে আসতে বলেছে ।। আর ফাস্ট ইয়ারের সবাইকে কিছু না কিছু করতে বলেছে।।( ঋতু)
— ভালো তো যা না ।। আমাকে কেন বলছিস??(আমি)
— কেন ,,তুই বুঝি আসবি না।। শোন আমরা তোর নাম না গানের লিস্টে দিয়ে দিয়েছি।।( ঋতু)
— কি …..!! ভালো করেছিস,, যখন আমার নাম দিয়েছিস তেমন আমার হয়ে গানটাও গাও ।। বাই
আর কিছু বলার আগেই আমি ফোনটা কেটে দিলাম।।
ফোনটা রাখতেই হঠাৎ একটা মেসেজ চলে এলো।। তাকিয়ে দেখলাম ,, সে ছেলেটা ।। না চাইতেও মুখের কোনে হাসি চলে এলো।। চেক করে দেখতে পেলাম।।
“” আজ ২ দিন তোমাকে দেখি না ।। মনে হচ্ছে ২ যুগ হয়ে গেছে।। খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তোমাকে।। একবার আসবে পিলিজজজজজ”””
তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হতে রেডি হয়ে বেরিয়ে এলাম।।হাজার না চাওয়ার সওেও পা বাড়াতে ভার্সিটির উদ্দেশ্য।।
চলবে ….💞💞
( ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন,,,, ধন্যবাদ//