#কথা_দিলাম?
#পর্ব:৩
#নিশাত আহমেদ
.
.
আয়ানের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে সিয়া।প্রচণ্ড অস্বস্তি হচ্ছে ওর।ওর দৃষ্টি ক্রমশ চঞ্চল হয়ে আয়ানের থেকে সরে গিয়ে আশেপাশে ঘুরতে থাকে।কিন্তু আয়ান স্থির,শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সিয়ার দিকে।ওর দৃষ্টিতে না আছে সিয়ার প্রতি কোনো অভিযোগ না আছে কোনো অভিমান।”আরে,আয়ান ভাইয়া না?আপি দেখ আয়ান ভাইয়া।” আয়ানকে দেখে উচ্ছ্বসিত নুসরাতের কণ্ঠ থেকে ভেসে আসে কথাগুলো।সিয়া তখনো অন্যদিকে তাকিয়ে আছে।”আরে সিয়া যে।কেমন আছ?” হাসিমুখে সিয়ার দিকে এগিয়ে আসে মীরা।
-“এইতো আলহামদুলিল্লাহ্।তোমরা কেমন আছ আপু?”
-“ভালো।এখানে শপিং করতে এসেছ?”
-“জী আপু।সামনে ৭তারিখ আমার আর আরহানের এংগেজমেন্ট।”
সিয়ার কথা শুনে এবার সিয়ার দিক থেকে চোখ সরায় আয়ান।
-“ওহ্।আয়ান আর তিনারও তো ৭তারিখেই এংগেজমেন্ট।আমরা তো সেজন্যই এসেছি।”
সিয়ার মাথায় যেন আকাশ ভাঙে মীরার কথা শুনে।তবে কি ভুলে গেল আয়ান সবকিছু?পরক্ষণেই মনে হলো যা হচ্ছে ঠিকই তো হচ্ছে।যদি সিয়া আরহানের সাথে নতুন জীবন শুরু করতে পারে তাহলে আয়ানের ক্ষেত্রে দোষ কোথায়? “আচ্ছা,সিয়া অনেকদিন পর তো দেখা হলো কফি খাবে?চলোনা একটু ক্যাফেতে গিয়ে বসি।” মীরার আবদারে রাজি হওয়ার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা ছিল না সিয়ার।কিন্তু না হয়েও উপায় নেই।তাই বাধ্য হয়ে সবাই ক্যাফেতে এসে বসলো।
-“আয়ান তুই অর্ডার দিয়ে আয়।”
-“হুম।সিয়া একটু আসবে?দরকার ছিল।”
আয়ানের কথায় ভেতরটা কেঁপে ওঠে সিয়ার।কী এমন দরকার আয়ানের যে আলাদা কথা বলতে হবে?আরহানের দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকায় সিয়া।”যাও।ঘুরে এসো তোমার এতদিনের পুরোনো বন্ধুর সাথে।” আরহানের অনুমতি পেয়ে ধীর পায়ে আয়ানের সাথে রিসেপশনের দিকে চলা শুরু করে সিয়া।বাকিরা সবাই একটা টেবিলে গিয়ে বসে।সিয়া নিচের দিকে দৃষ্টি রেখে হাঁটছে।পাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটার দিকে তাকানোর সাহস নেই ওর।”কেমন আছ?” শান্ত গলায় প্রশ্ন করে আয়ান।”ভালো।তুমি?” সিয়ার প্রশ্নে আয়ানের মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে ওঠে। “আমার আবার থাকা না থাকা।আছি একরকম।” কিছুক্ষণ চুপচাপ হাঁটে দুজনে।হঠাৎ থেমে যায় আয়ান।সিয়ার দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করে,”এই জায়গাটা দেখে কিছু মনে পরছে,সিয়া?” আয়ানের প্রশ্নে মুখ তুলে সামনে তাকায় সিয়া।ওর ভেতরে তোলপাড় শুরু হয়ে যায় আয়ানের প্রশ্নে।এই সেই জায়গা যেখানে দাঁড়িয়ে একদিন আয়ান ওকে বলেছিল ভালোবাসে।একবুক আশা নিয়ে সিয়ার সামনে হাঁটু গেড়ে বসেছিল আয়ান।কিন্তু সিয়া?সিয়া ফিরিয়ে দিয়েছিল ওকে এই বলে যে ওর জীবনে অন্য কেউ আছে।আর এই অন্য কেউটা আর কেউ নয়।আরহান।আয়ানের সব স্বপ্ন ভেঙে গিয়েছিল সেদিন।”সবাই আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে,আয়ান।আমাদের যাওয়া উচিত।” সিয়ার কথা এড়ানোর প্রবল চেষ্টায় আর বাঁধা দেয় না আয়ান।রিসেপশনে গিয়ে খাবার অর্ডার দিয়ে চলে আসে।সবাই গল্প করলেও আয়ান খেয়াল করছে সিয়া মোটেও স্বস্তিতে নেই ওর সামনে।”আপু,আমাদের লেট হচ্ছে।যাওয়া যাক?নাহলে তোমরা থাক।আমি চলে যাই।” সিয়ার সামনে থেকে সরে যাওয়ার জন্য মীরাকে অনুরোধ করে আয়ান।মীরা সিয়াকে বিদায় জানিয়ে আয়ানের সাথে বেরিয়ে আসে।
.
.
বাড়ি ফিরে এসে জানালার কাছে দাঁড়ায় সিয়া।মনে করে সেই দিনটার কথা যেদিন আয়ান এসেছিল ওর জীবনে।
ফ্ল্যাশব্যাক…
রাস্তার ধারে বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে ভিজছিল সিয়া।আজ ওর খুব আনন্দের দিন।অনার্সে ফার্স্ট ক্লাস পেয়েছে ও।তাই নিজের আনন্দগুলো বৃষ্টির সাথে ভাগ করে নিচ্ছে।কিন্তু ওর সব আনন্দে কাদা ঢেলে দিল একটা গাড়ি এসে।ঠিক ওর সামনে এসেই গাড়িটা ব্রেক নিল আর একগাদা কাদা ছিটকে এসে সিয়ার পুরো শরীর কর্দমাক্ত করে ছারলো।নিজের দেহ থেকে চোখ সরিয়ে গাড়ির দিকে তাকাতেই গ্লাস নামিয়ে মুখ বের করলো একজন সুদর্শন পুরুষ।আর এটা আর কেউ নয়,আয়ান।
-“এক্সকিউজ মি!চোখে দেখতে পান না নাকি চোখ বন্ধ করে গাড়ি চালাচ্ছিলেন।”
-“এই কর্দমাক্ত রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিবিলাশ করলে তা কাদাবিলাশেই পরিণত হবে।মেয়েদের এত ঢং কেন কে জানে?”
-“একে তো আপনি আমাকে কাদায় মাখিয়েছেন।তার উপর আবার এত বড় বড় কথা?রাস্তা কি আপনার কেনা নাকি?আর কোথায় লেখা আছে যে রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে বৃষ্টিবিলাশ করলে কাদায় মাখতেই হবে?”
-“আপনার ভাগ্যে।”
-“দেখুন এবার কিন্তু বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে।ভুল করেছেন যখন ক্ষমা চান।”
-“ক্ষমা?আমি?এই সামান্য কারণে?নেভার।ভুল আমার না আপনার ছিল।তাই আমার ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।সাইড হন।আমি গাড়ি ঘোরাবো।”
-“না।আপনি যতক্ষণ না আমার কাছে ক্ষমা চাচ্ছেন আমি সাইড হব না।”
-“আচ্ছা ত্যাড়া তো আপনি।দেখুন,আমি সরি বললে তো আর আপনার জামার কাদা পরিষ্কার হবে না।আপনি সাইডে গিয়ে বৃষ্টিবিলাশ করুন।জামার কাদা ধুয়ে যাবে।”
-“আমি ত্যাড়া না আপনি ত্যাড়া?স্টুপিড কোথাকার।!”
-“বুঝেছি।আপনি সরবেন না তো?”
-“না”
-“আচ্ছা।বেশ”
সিয়ার সাইড দিয়ে আয়ান এমনভাবে গাড়ি ঘুরায় যে বেচারির গায়ের কাদা বৃষ্টির পানিতে যা একটু পরিষ্কার হয়েছিল আবার পুরোটা মেখে গেল।পেছন থেকে লোকটাকে হাজারখানেক গালি দিয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ায় সিয়া।
.
.
নিজের অবস্থার কথা ভেবে নিজেই হেসে দেয় সিয়া।কি হাস্যকরই না লাগছিল ওকে।প্রথম সাক্ষাৎ ঝগড়া দিয়ে শুরু হলেও যেদিন কলেজে একদল বদমাইশের হাত থেকে আয়ান বাঁচিয়েছিল সেদিন ছেলেটার সম্পর্কে ধারণাই পাল্টে যায় সিয়ার।এরপর বন্ধুত্ব।আর বন্ধুত্ব থেকে ভালোবাসা।কিন্তু এখন আর এসব ভেবে লাভ নেই।এখন ওর জীবনে অন্য কেউ আছে।আয়ানের জীবনেও অন্য কেউ এসেছে।একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সিয়া।
চলবে…