কথা_দিলাম পর্ব-০৪

0
3440

#কথা_দিলাম?
#পর্ব:৪
#নিশাত আহমেদ
.
.
কাঁধে কারো ঠোঁটের স্পর্শে কেঁপে ওঠে সিয়া।তবে কার স্পর্শ সেটা বুঝতে খুব বেশি সময় লাগলো না।সিয়ার কোমর আরহানের দুই হাত বেধে রেখেছে।”আর কয়েকদিনের অপেক্ষা।তারপর তুমি আমার আমি তোমার।” সিয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে আরহান।”হুম।” কোমর থেকে আরহানের হাত সরিয়ে চলে যেতে নেয় সিয়া।পেছন থেকে সিয়ার হাত চেপে ধরে আরহান।

-“তোমার জন্য একটা খুশির খবর আছে।শুনবে না?”
-“কী খুশির খবর?”
-“আমি আর তিয়া ঠিক করেছি যেহেতু এংগেজমেন্টের দিন এক তাই জায়গাটাও এক হওয়া উচিত।তাই আমরা একই কনভেনশন সেন্টারে এংগেজমেন্টের আয়োজন করছি।”

আরহানের কথা শুনে ওর দিকে ঘুরে দাঁড়ায় সিয়া।জ্বলজ্বল চোখে আরহানের দিকে তাকিয়ে আছে ও।চোখজোড়া প্রশ্ন করছে”কেন কর তুমি এরকম?আমাকে কষ্ট দিতে কি এতই ভালো লাগে?কীসের প্রতিশোধ নিচ্ছ?” সিয়ার চোখের দিকে তাকিয়ে সবগুলো প্রশ্নই পড়ে।কিন্তু উত্তর না দিয়ে বেরিয়ে যায়।সিয়া ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে।চোখের সামনে আয়ান অন্য একটা মেয়েকে আংটি পরাবে।কীভাবে সহ্য করবে ও?

আজ ৭তারিখ এসেই গেলো।চারটে জীবনের পরিণতির সূচনা হবে আজ।আয়ানে-তিনার পরিবার অনেক আগেই পৌঁছে গেছে।কিছুক্ষণ পর আরহানের হাত ধরে আসে সিয়া।আয়ানের দৃষ্টি একবার সিয়ার দিকে তারপর আরহানের ধরে রাখা হাতের দিকে গিয়ে অন্যদিকে চলে যায়।মেয়েটাকে অপরূপ মায়াবতী লাগছে আজ।কিন্তু ওর উপর কোনো অধিকার নেই আয়ানের।এংগেজমেন্টের আগে নুসরাত আয়ানের কাছে জেদ করে বসে গান গাইতে হবে।

-“আয়ান ভাইয়া,আজকে এত স্পেশাল একটা ডে।তুমি তো অনেক সুন্দর গান গাও।একটা গান গাও না প্লিজ”
-“গাইতেই হবে?”
-“হ্যাঁ।প্লিজ।গাও না।”

সিয়ার দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে আয়ান।”বেশ” আয়ানের কথায় লাফিয়ে ওঠে নুসরাত।কোত্থেকে একটা গিটার এনে ধরিয়ে দেয় আয়ানের হাতে।আয়ান সিয়ার দিকে তাকিয়ে গান শুরু করে,

“Woh kehne wale,mujhko farebi
Kaun farebi hai yeh bata..
Woh jisne gum liya,pyaar ke khatir
Ya jisne pyaar ko bech diya..
Nasha daulat ka aisa bhi kya
Ke tujhe kuch bhi yaad nahi
Kya hua tera wadaa…
Woh kasam wo irada
Bhule ga dil..jisdin tujhe..
Wo din zindagi ka akhri din hoga…”

আয়ানের গান শুনে পুরো পরিবেশটাই থমথমে হয়ে আছে।সিয়া নিঃশব্দে চোখের পানে ফেলছে।”আজকের এত আনন্দের দিনেও স্যাড সং?তবুও অনেক সুন্দর গেয়েছ।থ্যাংকস্ ভাইয়া।” মন খারাপের সুরে কথাগুলো বলে নুসরাত।আয়ান মলিন হেসে সিয়ার দিকে তাকায়।”আচ্ছা,এবার তাহলে আসল কাজ শুরু করা যাক?” আরহানের কথায় সম্মতি জানিয়ে আংটিগুলো নিয়ে আসা হয়।প্রথমে আয়ান আর তিয়ার এংগেজমেন্ট হবে।আয়ান দ্রুত আংটিটা নিয়ে সোজা তিয়ার আঙুলে পরিয়ে দেয়।আয়ানের হাত থেকে আংটিটা যত দ্রুত তিয়ার আঙুলের যত গভীরে যায় সিয়ার হৃদয়ে বিদ্ধ তীরটাও তত গভীরে ঢুকে যায়।তিয়াও আয়ানের আঙুলে আংটি পরিয়ে দেয়।চারপাশটা করতালির আওয়াজে ভরে ওঠে।এবার সিয়া আর আরহানের পালা।আরহান এক হাতে আংটি নিয়ে অপর হাত সিয়ার দিকে বাড়িয়ে দেয়।সিয়া ভেজা চোখে আয়ানের দিকে তাকায়।আয়ানের দৃষ্টির তীক্ষ্মতা সিয়ার কলিজা ছেদ করছে।কাঁপা হাতটা আরহানের হাতের উপর রাখে সিয়া।আরহান আংটিটা পরিয়ে দেয়।সিয়ার কিছুতেই মন চাচ্ছে না আরহানকে আংটি পরাতে।কিন্তু ও নিরুপায়।বাধ্য হয়ে আরহানের হাতে আংটি পরিয়ে দেয় সিয়া।চারপাশটা আবারও করতালিতে ভরে ওঠে।এই করতালি সিয়ার কাছে পরাজয়ের জয়ঢাক বলে মনে হচ্ছে।আজ পুরো দুনিয়ার কাছে হেরে গেল ও।আর সবার আগে নিজের কাছে,আয়ানের কাছে।সেদিন খাওয়া-দাওয়া শেষে সবাই বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।সিয়া পুরো অনুষ্ঠানেই চুপচাপ ছিল।
.

.
দুইদিন পর সিয়ার ফোনে কল আসে দিশার।দিশা আয়ানের ছোটবোন।কিন্তু সিয়ার চেয়ে বড়।অনেকদিন পর হঠাৎ দিশার ফোন পেয়ে বেশ অবাক হয় সিয়া।রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে শান্ত গলার স্বর ভেসে আসে,

-“কেমন আছ,সিয়া?”
-“আলহামদুলিল্লাহ্,ভালো।তুমি কেমন আছ?”
-“আমার কথা বলার জন্যই ফোন করেছি তোমায়।”
-“এতদিন পর হঠাৎ কী মনে করে ?”
-“সিয়া,একটা অনুরোধ করবো।রাখবে?”
-“অবশ্যই।বলো।”
-“কাল একটু দেখা করতে পারবে আমার সাথে?”
-“কোথায় যেতে হবে বলো?”
-“কোথাও যেতে হবে না।আমি তোমাদের বাড়িতে যাব।”
-“আচ্ছা।”

ফোন কেটে দেয় দিশা।পুরো কথোপকথনে দিশার কণ্ঠে হতাশা ছিল।মনে হচ্ছিল ও কিছু নিয়ে খুব চিন্তিত।চিন্তায় পরে যায় সিয়া।পরেরদিন সকালে সিয়াদের বাড়ির কলিংবেল বেজে ওঠে।সিয়া দৌঁড়ে গিয়ে দরজা খুলে দেয়।দিশা এসেছে।সিয়াকে দেখে একটু হাসে দিশা।হাসিটা যে কৃত্রিম তা বুঝতে অসুবিধা হয় না সিয়ার।দিশাকে নিয়ে রুমে চলে যায় সিয়া।

-“বলো কী বলবে।”

দিশা কিছুক্ষণ অন্যদিকে তাকিয়ে কী যেন ভাবে।তারপর সিয়ার দিকে তাকিয়ে শান্ত গলায় প্রশ্ন করে,

-“তুমি আরহানকে বিয়ে করছ?”

দিশার প্রশ্নে মুখ কালো হয়ে যায় সিয়ার।মুখে বিষণ্ণতার ছাপ স্পষ্ট ফুটে ওঠে।

-“হ্যাঁ।”
-“সিয়া,আমি তোমাকে এখন কিছু বলবো।যা শোনার পর তোমার মত পাল্টাতেও পারে।আমার এই কথার উপরেই নির্ভর করছে আরহানকে তুমি আদেও বিয়ে করছ কিনা।”

দিশার কথায় প্রচণ্ড অবাক হয় সিয়া।কী বলছে দিশা এসব?কী এমন বলবে ও?”বলো।” একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে দিশা।

চলবে…