#কথা_দিলাম ?
#পর্ব:৯
#নিশাত আহমেদ
.
.
উন্মাদনায় ভরা রাতটা পেরিয়ে এক নতুন সকাল আসে আয়ান আর সিয়ার জীবনে।সব দূরত্ব পেরিয়ে অবশেষে একে অপরের কাছে এসেছে ওরা।ঘুম ভাঙতেই পাশে সাদা চাদরে জড়ানো ঘুমন্ত সিয়ার দিকে চোখ যায় আয়ানের।মুচকি হেসে সিয়ার কপালে ঠোঁট বুলায় আয়ান।সিয়ার ঘুম ভেঙে আয়ানের চোখে চোখ পরতেই লজ্জায় লাল হয়ে যায় সিয়া।মুখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে হয়।আয়ান সিয়ার মুখ ধরে নিজের দিকে করে।সিয়া লজ্জায় শেষ। “কেমন কাটল আমার বউয়ের রাতটা?”মুচকি হেসে জিজ্ঞাসা করে আয়ান।
-“ইশ!তুমি না…”
-“কী?আমি কী?”
-“কিছু না।যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।”
-“আগে আমার পাওনাটা বুঝিয়ে দাও।”
-“কীসের পাওনা?”
-“ঐ যে কাল শিখিয়ে দিলাম।মর্নিং কিস।”
-“আয়ান!আগে ফ্রেশ হয়ে আস তারপর।বাসি মুখে কিস করবো না।”
-“ওহ্।অমনি আমি বাসি হয়ে গেলাম তাই না?আচ্ছা বেশ বউয়ের এইটুকু আবদার তো রাখাই যায়।”
আয়ান উঠে ওয়াশরুমে চলে যায়।আয়ান বের হলে সিয়া ফ্রেশ হতে চলে যায়।সিয়া বেরোতেই ওকে জাপটে ধরে আয়ান।
-“এবার দাও ফ্রেশ মুখে ফ্রেশ কিস।”
-“তুমি শোধরাবে না।নির্লজ্জ কোথাকার!”
-“কী করবো বলো।তোমাকে দেখলে লজ্জা,ভদ্রতা আর থাকে না।”
সিয়া আয়ানের গালে আলতো করে ঠোঁট বুলিয়ে নিচে চলে যায় কফি আনতে।
.
.
তিয়ার রাতের ঘুম উড়ে গেছে।ওর এখন একটাই নেশা কীভাবে সিয়া আর আয়ানের সংসার ভাঙা যায়।ভাবতে ভাবতেই মাথায় একটা প্ল্যান চলে আসে তিয়ার।ফোনটা তুলে ডায়াল করে একজনের নাম্বারে।ফোন রিসিভ হতেই বাঁকা হাসি দেখা যায় ওর মুখে।
-“কী খবর?তিয়া ম্যাডাম হঠাৎ আমায় ফোন করেছে?”
-“খুবই খারাপ খবর।স্পেশালি আপনার জন্য।খুব তো নিউইয়র্কে শান্তি খুঁজছেন।এদিকে যে আপনার খাঁচার পাখি বেরিয়ে আমার জীবনটা নষ্ট করছে।”
-“মানে?”
-“মানে আপনার কলিজার টুকরা সিয়াকে আয়ান বিয়ে করেছে।”
-“হোয়াট?”
-“ইয়েস।আর সব কিছু হয়েছে তোমার জন্য।কে বলে ছিল সিয়াকে বিয়ে না করে নিউইয়র্ক যেতে।বিয়ে করে নিয়ে গেলেই তো গল্প শেষ।তুমি সিয়াকে নিয়ে থাকতে আর আমি আয়ানকে।কী এমন জরুরি তলব পরেছিল তোমার?”
-“জরুরি তলবই পরেছিল।ঐ মুহূর্তে না এলে আমাদের কম্পানিটা অনেক বড় লস্ খেয়ে যেত।কিন্তু এতকিছু কখন ঘটে গেল?”
-“যেদিন তুমি গেছ সেদিনই।আর হ্যাঁ,তুমি তো আবার আরেক কাণ্ডও করে রেখে গেছ।”
-“কী কাণ্ড?”
-“তোমার এক্স গার্লেফ্রন্ডের সাথে রাত কাটিয়ে সেটার ভিডিও ভাইরাল করে রেখে গেছ।”
-“হোয়াট?কীসের ভিডিও?কীসের রাত কাটানো?কী বলছ এসব?”
-“বুঝতে পারছ না,তাই না?সেদিন রাতে তুমি দিশার সাথে যা করেছ তার জন্য দিশা প্রেগনেন্ট।আর ভিডিও ভাইরাল হয়ে গেছে।সিয়াও জানে।সিয়াকে ভিডিওটা পাঠানোর কী দরকার ছিল?”
-“কীসের ভিত্তিও?আমার তো ঐ রাতটার কথাই মনে নেই।ভিডিও তো দূরেই থাক।আমি সামনে মাসেই ফেরার ব্যবস্থা করছি।আমি থাকতে সিয়া আয়ানের সাথে সুখী হবে সেটা ইমপসিবল।আমি যত দ্রুত সম্ভব ফেরার চেষ্টা করছি।”
ফোন কেটে দেয় আরহান।ওর মাথায় এখন হাজারটা গিট পেকে গেছে।কী করেছে ও?এবার সবটা কীভাবে সামলাবে সেটাই ভাবনা।তিয়ার মনটা এখন শান্ত হলো।কারণ ও জানে আরহান যদি একবার ফেরে সিয়া আর আয়ানকে ও কোনোদিন এক হতে দেবে না।এখন শুধু ওর ফেরার অপেক্ষা।
.
.
সিয়া আর আয়ানের দিনগুলো স্বপ্নের মতো কাটছে।সিয়া কোনোদিন ভাবতেও পারেনি আয়ান ওকে আবার এতটা ভালোবাসবে।নিজেকে খুব ভাগ্যবতী মনে হচ্ছে ওর।আয়ানের প্রতিটা মুহূর্ত জুড়ে এখন শুধু সিয়া।ওর পুরো দুনিয়াটাই সিয়া।যে কাজই করে মনটা ওর দিকেই পরে থাকে।হঠাৎই অসুস্থ হয়ে যায় সিয়া।একে তো শরীর দুর্বল হয়ে গেছে।আবার খাওয়ার রুচিও নেই।যাই খাচ্ছে উগলে দিচ্ছে।আয়ানের মাথায় নতুন চিন্তা ভর করলো।বউটার আবার কী হলো কে জানে।এক সপ্তাহ পার হয়ে গেল।সিয়া সুস্থ হওয়ার বদলে উল্টে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পরলো।এবার আয়ান ঠিক করলো আর দেরি করা ঠিক হবে না।সিয়াকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে চলে গেল আয়ান।টেস্ট শেষে বাড়ি ফিরে এলো।রিপোর্ট পেলে ডাক্তার ফোন করে বলে দেবেন বাকিটা।
“তোমাকে কতবার বলেছি খাওয়া-দাওয়া ঠিকমতো করবে।এখন কী অসুখ বাধালে কে জানে।আমার চিন্তা হয় না বুঝি।” খাটের উপর হাঁটু ভাজ করে বসে আছে সিয়া।আয়ান গম্ভীর মুখে পায়চারি করছে আর সিয়াকে বকছে।সিয়া মাথা নিচু করে আয়ানের কথা শুনছে।”আমি অসুখ নিমন্ত্রণ করে ডেকে এনেছি নাকি?আমাকে বকছ কেন?”ভয়ে ভয়ে বলে সিয়া।সিয়ার কথা শুনে চোখ রাঙায় আয়ান।”না খেয়ে অসুখ বাধালে তাকে নিমন্ত্রণই বলে।” আয়ানের বকাবকির মাঝখানেই সিয়ার ফোনে ডাক্তারের কল আসে।সিয়া ফোনটা রিসিভ করে কানে ধরে।আয়ান সিয়ার মুখের এক্সপ্রেশন খেয়াল করছে।ফোনের কথা যত বারছে সিয়া চোখ তত বড় হচ্ছে।ফোনের কথাগুলো শুনে সিয়া যেন থ মেরে গেছে।আয়ান বুঝে গেছে সিরিয়াস কিছুই হয়েছে। “আচ্ছা,ধন্যবাদ।”বলে ফোন কেটে দেয় সিয়া।আয়ান তীক্ষ্ম দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সিয়ার দিকে।সিয়া ভয়ে ভয়ে আয়ানের দিকে তাকিয়ে একটা ঢোক গেলে।”কী হয়েছে?” গম্ভীর কণ্ঠে প্রশ্ন করে আয়ান।
-“মানে..আসলে..উনি বললেল যে..”
-“কী আমতা আমতা করছ?কী হয়েছে বলো।কী বললেন উনি?”
আয়ানের ধমক শুনে কুঁচকে যায় সিয়া।কিছুক্ষণ আয়ানের দিকে তাকিয়ে থেকে হাসা শুরু করে দেয়।সাথে চোখে পানিও আছে।”পাগল হয়ে গেল নাকি মেয়েটা?অসুখটা কী এতটাই সিরিয়াস যে শুনে সিয়া ভয়ে পাগলই হয়ে গেল?”মনে মনে ভাবে আয়ান।”কী হয়েছে বলবে তো।হাসছ কেন পাগলের মতো?” সিয়া খাট থেকে নেমে আয়ানের গলা জড়িয়ে ওর গালে চুমু এঁকে দেয়।আয়ানের হাতটা নিজের পেটের উপর রেখে ওর কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে ফিসফিস করে বলে সিয়া “কংগ্র্যাটস,উড বি ড্যাড।” সিয়ার কথায় হা করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে আয়ান।ও কী ভুল শুনল?”সত্যি?” ভেজা চোখে কাঁপা গলায় প্রশ্ন করে আয়ান।”কী সত্যি?বিশ্বাস হয় না?” সিয়ার চোখ মুখ দিয়ে উচ্ছ্বাস উতলে পরছে।দুজনের চোখ দিয়েই পানি গড়াচ্ছে।তবে এটা খুশির অশ্রু।সিয়াকে জড়িয়ে ধরে আয়ান।আনন্দে আত্মহারা হওয়ার ইচ্ছা হচ্ছে ওর।পাগল হয়ে যাচ্ছে একটা খবর পেয়ে।
চলবে….