কথা_দিলাম পর্ব-১০

0
3947

#কথা_দিলাম ?
#পর্ব:১০
#নিশাত আহমেদ
.
.
সিয়াকে কোলে তুলে নেয় আয়ান।বিছানায় শুয়িয়ে ওর কপালে ঠোঁট বোলায়।

-“এখন থেকে তোমার বিছানা থেকে নামা নিষেধ।”
-“মানে?”
-“মানে কোনো রকম স্ট্রেস নেওয়া নিষেধ।যা যা লাগবে আমাকে বলবে।আমি এনে দেব।কিন্তু তুমি বিছানা থেকে নামবে না।”
-“তাহলে তো হাত পায়ে জং ধরে যাবে।মোটা হয়ে যাব তো।”
-“বাবু আসার পর জিম-ডায়েট করে শুকিয়ে যাবে।এমনিতেও তোমার যা খাওয়া-দাওয়ার ছিরি!”
-“একদম আমাকে খাওয়ার খোঁটা দেবে না বলে দিলাম।ভালো হবে না কিন্তু।”
-“আচ্ছা।বেশ।এবার রেস্ট নাও।আমি খবরটা সবাইকে জানিয়ে দিয়ে আসি।”
-“আমিও যাবো।”
-“না।”
-“প্লিজ।নিয়ে চলো না।”

সিয়ার জোড়াজুড়িতে ওকে নিয়ে নিচে নামে আয়ান।খবরটা পেয়ে চৌধুরী বাড়িতে খুশির বন্যা বয়ে যাচ্ছে।এদিকে এই খবর পেয়ে তিয়ার মাথায় আবার আগুন জ্বলে উঠল।সব শেষ।এবার আয়ান বা সিয়া কাউকেই ছাড়বে না ও।
.

.
দেখতে দেখতেই সিয়া আর আয়ানের বিয়ের আট মাস কেটে গেল।আর সিয়ার প্রেগনেন্সির তিনমাস।আয়ান সিয়ার প্রচুর খেয়াল রাখছে।প্রতিটা মুহূর্ত সিয়ার দিকে খেয়াল রাখছে।ওর কোনো সমস্যা হচ্ছে কিনা,কিছু লাগবে কিনা প্রতিটা মুহূর্ত অস্থির।তবে ওদের কপালে বোধহয় সুখ জিনিসটা লেখা নেই।আরহান নিউইয়র্ক থেকে ফিরেই সোজা চলে গেল চৌধুরী বাড়িতে।”সিয়া!কোথায় তুমি?সিয়া!!” আরহানের চিৎকারে ভেতরটা ধুকধুক করে ওঠে সিয়ার।আরহান ফিরে এসেছে?এবার না জানি কী করবে ও।আয়ানের সাথে সিয়া নিচে নামে।আরহান রাগে ফুঁসছে।সিয়াকে দেখেই ওর দিকে তেরে যায় আরহান।”তোমার সাহস কী করে হলো আয়ানকে বিয়ে করার?” চিৎকার করে ওঠে আরহান।সিয়া কেঁপে ওঠে আরহানের চিৎকারে।
“খবরদার!সিয়া আমার বিবাহিত স্ত্রী।ওর সাথে কোনোরকম অভদ্রতা আমি মেনে নেব না।তুই আমার বোনের জীবনটা নষ্ট করেছিস।তার শাস্তি তো তোকে পেতেই হবে।সিয়াকে কিছু বলার সাহস দেখাস না।” আরহানের শার্টের কলার চেপে ধরে বলে আয়ান।”আমি তোর সাথে কথা বলছি না।এবং বলতে চাইও না।আমি সিয়ার সাথে কথা বলছি।আমার আর সিয়ার মধ্যে ঢুকিস না।” আয়ানের হাতটা ছিটকে সরিয়ে দেয় আরহান।

-“ঢুকে তো আমি গেছি।সিয়া আমার স্ত্রী।তাই ওকে কিছু বলতে গেলে আমার মুখোমুখী তো হতেই হবে।”
-“তুই…..”

আরহানের কথা শেষ হওয়ার আগেই কোনো বাচ্চার কান্নার আওয়াজ পায় ও।দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে দিশা দাঁড়িয়ে আছে।কোলে ফুটফুটে একটা মেয়ে।আরহানের ভেতরে অদ্ভুত এক অনুভূতি হচ্ছে মেয়েটাকে দেখে।মায়া জন্মাচ্ছে ওর প্রতি।”আরহান,দেখ তোমার পাপের ফল।নিষ্পাপ বাচ্চাটা তোমার জন্য আজ….” ঘৃণায় আর কিছু বলতে পারে না সিয়া।আরহান কিছুক্ষণ কী যেন ভাবে।”সিয়া,তোমার সাথে একটু কথা আছে।আলাদা।একটু আস।” আরহানের কথা শুনে সিয়া আর আয়ান একে অপরের দিকে তাকায়।আয়ান বাধা দিতে চায়।কিন্তু সিয়া আরহানকে নিয়ে রুমে চলে যায়।

-“বলো।কী বলবে?”
-“তোমায় আমাকে বিয়ে করতে হবে।”
-“হোয়াট?পাগল হয়ে গেলে নাকি?আমার বিয়ে হয়ে গেছে।”
-“জানি।কিন্তু শরিয়ত মোতাবেক নয়।আর বিয়েতে সাক্ষী লাগে।তোমাদের বিয়েতে ছিল সাক্ষী?”

আরহানের কথা শুনে চুপ করে যায় সিয়া।ঠিকই তো।আয়ান এত তাড়াতাড়ি সবকিছু করেছে যে সাক্ষীর কথা মাথাতেই ছিল না।

-“কী হলো?দেখ সিয়া,একটা ডিল করি তোমার সাথে।তুমি আমাকে বিয়ে করবে।আর আমি দিশার বাচ্চাকে প্রাপ্য সম্মান দেব দিশাকেও সমাজে লাঞ্ছিত হতে হবে না।নাহলে আমি কিছু করবো না।”

আরহানের কথায় দিশা দ্বিধায় পরে গেল।দিশার সম্মান ফেরানোটাও যে দরকার।আর আরহানই সেটা পারবে।কিন্তু আয়ান?ওর বাচ্চা?কী হবে ওদের?

-“বেশ।তবে তার আগে একটা কথা তোমার জানা দরকার।”
-“কী কথা?”
-“আমি প্রেগনেন্ট।আমার গর্ভে আয়ানের বাচ্চা আছে।মেনে নেবে তুমি?”

আরহানের মাথায় বাজ পরে এই কথা শুনে।কিছুক্ষণ ভেবে সিয়ার দিকে তাকিয়ে বাকা হাসে আরহান।

-“কংগ্রেটস।আমি দ্বিতীয় বার বাবা হতে যাচ্ছি।আমি প্রস্তুত।তুমি?”

আরহানের কথা শুনে প্রচণ্ড অবাক সিয়া।এতটা নিষ্ঠুর আরহান।কীভাবে হতে পারে?কাঁদার উপায়ও নেই সিয়ার।আরহান সিয়ার হাত ধরে নিচে নিয়ে আসে।সবাই ওর জন্য অপেক্ষা করছে।

-“সিয়া,সবাইকে কিছু বলবে।বলো বেবি।”

সিয়া আরহানের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।চোখ দিয়ে পানি গড়াচ্ছে।

-“সিয়া,কী বলবে তুমি?”

আয়ানের গলা শুনে ভেতরটা ফেটে যাচ্ছে সিয়ার।মানুষটাকে পেয়েও হারালো ও।

-“আমি..আমি আরহানকে বিয়ে করবো।”

চলবে…