কাগজের তুমি আমি পর্ব-২৬

0
3454

#কাগজের_তুমি_আমি
#দ্বিতীয়_অধ্যায়
#২৬তম_পর্ব

চারঘন্টা পর ডা.ইশরাত ওটি থেকে বের হয়। উদ্বিগ্ন হয়ে তার দিকে এগিয়ে যায় অনল। তখন ডা.ইশরাত বলেন,
– কনগ্রেচুলেশন অনল, মেয়ের বাবা হয়েছো তুমি। নার্স বেবিকে নিয়ে আসছে। বেবি সুস্থ আছে। ব্লাড লেগেছে প্রচুর বাট ইন্টার্নাল আর এক্সটার্নাল কোনো ড্যামেজ হয় নি আল্লাহর রহমতে।
– ম্যাম, আমার স্ত্রী
– অনল ইউ হ্যাভ টু বি স্ট্রং ওকে?
– ম্যাম, ইজ সি ওকে? ও ঠিক আছে তো?
– অনল রিল্যাক্স। ঠান্ডা হও। এটা একটা মিরাকেল ই বলতে পারো। আমি ভেবেছিলাম শুধু বাচ্চাকে বাঁচানো যাবে। কয তোমার স্ত্রীর প্রচুর ব্লিডিং হয়েছে। বাট রাখে আল্লাহ মারে কে! সে বেঁচে আছে, এখনো হোপ আছে। বাট আপাতত জ্ঞান নেই, জ্ঞান না ফিরা অবধি কিছু বলতে পারছি না। এটাও তো কম নয় বলো। আই.সি.উ তে অবজারভেশনে রাখা হয়েছে। প্রচুর ব্লাড লস হয়েছে ওর।
– ও বেঁচে যাবে তো?
– অনল, ডাক্তারদের ১০% চান্স মানে হিউজ ব্যাপার। প্রথমে ০% ছিলো এখন ১০% তো আছে। দোয়া করো যাতে এই ডেঞ্জার টাইমটা তার কেটে যায়। সে এক রকম কোমাতে আছে। জ্ঞান না ফেরা অবধি কিছুই বলতে পারছি না। তবে আমি হোপ ছাড়ছি না। আর আজ তোমার ওয়াইফের উইলপাওয়ারের জন্য সে বেঁচে আছে। সো তুমিও হোপ ছেড়ো না। ওকে? ইউ হ্যাভ টু বি স্ট্রং। তোমার বেবিকে তো সামলাতে হবে নাকি?

ডা.ইশরাতের কথা শুনে ধপ করে আবার বসে পড়লো অনল। পা জোড়া যেনো জোর হারিয়ে ফেলেছে। ধারা বেঁচে আছে জেনে যতটা খুশি লাগছে যখন মনে হচ্ছে সে কোমাতে মনটা নিমিষেই দুঃখের জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে। কিন্তু এখন সত্যি ভেঙ্গে পড়ার সময় না। ধারা অন্তত বেঁচে তো আছে। এখনো আশা হারায় নি। এমন ও তো হতে পারে কিছুক্ষণ পর ই সে চোখ খুলবে, খুলে বলবে,
– অনল ভাই, আমি ফিরে এসেছি। ফিরে এসেছি তোমার কাছে। তোমার প্রিন্সেস সহ।

কথাটা ভাবতেই দীর্ঘশ্বাস বের হলো মন থেকে। তখন একটা নার্স সাদা তোয়ালে মোড়া একটা ছোট্ট পরীকে নিয়ে এলো অনলের কাছে। মুখে হাসি একে বললো,
– স্যার আপনার মেয়ে।

অনল বেকুবের মতো বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে ছিলো। সুভাসিনী বেগম এবং রাজ্জাক সাহেব তার পাশেই দাঁড়িয়ে রয়েছেন। অনুভূতিগুলো কেমন যেনো গবলেট হয়ে আছে। নতুন প্রাণের আগমণটাকে হাসিমুখে বরণ করার মতো মনটাও নেই। অনল তখন উঠে দাঁড়ায়। আস্তে করে নার্সের হাত থেকে বাচ্চাটাকে নিজের কোলে নেয়। একটা ছোট্ট ধারা যেনো তার কোলে ছিলো। ধারার মতো মুখ, ধারার মত নাক, কুচকুচে কালো চুল তার মাঝে শুভ্র মুখখানি। শুধু চোখ দুটো হয়েছে দিগন্তের মতো। এব্যাতীত পুরো ধারা। সহস্র চুমু দিয়ে কাঁপা কন্ঠে অনল বললো,
– প্রিন্সেস, তোমার আম্মুটা আমাকে জ্বালানো বন্ধ করলো না। দেখো না, কোথায় তুমি আসছো আমাদের হ্যাপি ফ্যামিলি হবার কথা। সে ঘুমিয়ে আছে। কিন্তু ডোন্ট ওয়ারি। আমরা তাকে ঠিক ঘুম থেকে উঠাব দেখো। পারবো না আমরা? তোমার বাবা অনেক হোপলেস হয়ে গেছে, তুমি একটু আমার সাহস হয়ে থেকো ওকে? এখনো অনেক পথ চলা বাকি যে

বলেই বাচ্চাটাকে জড়িয়ে হু হু করে কেঁদে উঠে। ছেলেটাকে এভাবে কাঁদতে দেখে রাজ্জাক সাহেব আর সুভাসিনী বেগম ও চোখের বাধ ছেড়ে দেয়। অনন্যার মৃত্যুর পর সুভাসিনী বেগম কখনোই অনলকে হাউমাউ করে কাঁদতে দেখে নি। অনল কাঁদলেও আড়ালে কেঁদেছে, নয়তো শুধু ধারার সামনে। কিন্তু আজ ধারার সামনেও কাঁদার অপশন নেই, এটাকেই হয়তো নিয়তি বলে______

সময় যেতে থাকে, জুলাই এর প্রথম সপ্তাহ চলছে। একদিন দুদিন করে দশটা দিন কেটে যায়। ধারার হেলথ এর ডেভেলপমেন্ট হতে থাকে। কিন্তু জ্ঞানটা এখনো ফিরে নি। অনল সারাটাদিন ধারার পাশেই বসে থাকে। ডাক্তার হবার এই এক সুবিধে, আই.সি.উ তে এলাউ করা হয়েছে। আর ও যেহেতু এই হাসপাতালেই কাজ করে তাই সমস্যা হয় নি। মেয়ের নাম রেখেছে অধরা। অনল এবং ধারার মেয়ে অধরা। সারাদিনের সব আপডেট ধারাকে বলে অনল। মেয়েকে ফাঁকে ফাঁকে দেখেও আসে। আই.সি.উ এর বাকি প্যাসেন্টরাও চায় যাতে মেয়েটা জেগে উঠে। আর অনল সে আর কাঁদে না, যতই কষ্ট হোক সে একেবারেই কাঁদে না। শুধু প্রতিক্ষা করে রয়েছে কবে তার বউটি জেগে উঠবে____

রাত ২টা,
ঝুম ঝুম করে বৃষ্টি পড়ছে। বৃষ্টির জন্য বাসায় যাওয়া হয় নি অনলের। রাতেও ক্লান্ত হয় নি আকাশ, বরং তীব্র গতিতে বৃষ্টি হচ্ছে। ঠান্ডা হীম বাতাসে চোখটা লেগে এসেছে অনলের। ধারার জেগে উঠার আশার আলোটা ক্ষীণ হচ্ছে আর মনটা ক্লান্ত। হঠাৎ মনে হতে লাগলো তার হাতে ধীর ছোয়া লেগেছে। তন্দ্রা কাটিয়ে চড়াক করে উঠলো অনল। মনের ভুল নাকি সত্যি কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। ধারার হাতটা নিজের হাতে নিয়ে ঘুমানোটা অভ্যেস হয়ে গেছে তার। ঘুমের মধ্যেই মনে হলো আংগুলগুলো নড়েছে। এখন এই ছোয়াটা কি ঘুমের মাঝে ভুল করেই অনুভব হলো? এক মন দিয়ে ধারার দিকে খেয়াল করলো। সময় পার হচ্ছে আর অধৈর্য হয়ে পড়েছে অনল। হুট করে মনে হলো ধারার হার্ট বিট ধুম করে কমে যাচ্ছে। পালস রেট যেন কমে যাচ্ছে। বুকটা কামড় দিয়ে উঠলো অনলের। তাড়াতাড়ি ওয়ার্ডবয়কে ডাকলো সে। অনন্যার মতো একই রকম অবস্থা হচ্ছে। কিন্তু রিপোর্টস তো ধারার ঠিক ছিলো। কি হচ্ছে এটা। সময় নষ্ট না করে সি.পি.আর দিতে লাগলো অনল। না হার্ট বিট বাড়ছেই না। বরং কমেই যাচ্ছে। অনল থামলো না। চোখে মুখে অন্ধকার দেখছে সে। একটা সময় চিৎকার করতে লাগলো সে,
– প্লিজ ধারা, আমাকে ছেড়ে যাস না। আমি মরে যাবো। আমি সত্যি মরে যাবো। ধারা প্লিজ স্টে উইথ মি।

এটা একটা মিরাকেল, হয়তো এটা ভালোবাসার একটা কঠিন পরীক্ষা। আবার ও রাখে আল্লাহ মারে কে। তিড়িক করে চোখ মেললো ধারা। যেনো কেউ পিটিয়ে তাকে ঘুম থেকে উঠিয়েছে। তাড়াতাড়ি অক্সিজেন লেভেল বাড়িয়ে দেয় অনল। হার্টবিট আবার ও নরমাল হয়ে উঠে ধারার। ধারা এভাবে চোখ খুলবে এটা যেনো কল্পনার বাহিরে ছিলো। অনলের এখনো হাত কাঁপছে। তার ধারা চোখ খুলেছে। তার ধারার জ্ঞান ফিরেছে। ফাইনালি, তার ধারা ফিরে এসেছে। ধারা এখনো আশেপাশের জগতে অভ্যস্ত নয়। চোখ দিয়ে আশেপাশে দেখছে আর ধাতস্থ হবার চেষ্টায় আছে সে। মিনিট বিশেক পর অক্সিজেন মাস্কটা নামিয়ে দেয় সে। অনল অশ্রুসিক্ত চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। তার প্রাণটা এতোক্ষণ গলায় আটকে ছিলো। আর নিজেকে আটকে রাখতে পারলো না সে, ধারার ঘাড়ে মুখ লুকিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো। এতোদিনের জমানো কষ্ট গুলো যেনো আর ধরে রাখতে পারলো না। বাহিরে বর্ষনের ন্যায় তার চক্ষুযুগল বর্ষনে ব্যস্ত। ধারার ঘাড় ভিজে যাচ্ছে। ধীর গলায় ধারা বললো,
– ছেলেমানুষের এভাবে কাঁদতে আছে?
– তুই চুপ করে থাক। বেয়াদব মেয়ে, থাপড়ে কান লাল করে দিবো তোর। জানিস কি ভয়টা পেয়েছিলাম। ভেবেছিলাম তুই ও আমাকে ছেড়ে চলে যাবি। আমি মরে যেতাম ধারা, সত্যি বলছি। এই মনটা আর ভার নিতে পারবে না। তুই তো জানতি
– অনেক কষ্ট দিয়েছি না?
– অনেক, অনেক, অনেক। আমাকে আর কত জ্বালাবি বল তো?
– যতদিন আল্লাহ হায়াত রেখেছেন
– এভাবে জ্বালাস না, তোর সব আবদার মেনে নিবো। এভাবে ভয় দেখাস না। বয়স তো কম হলো না বল। আমার গলা শুকিয়ে এসেছিলো জানিস

নার্স কিছু বলতে যাবে, ধারা চোখ দিয়ে ইশারা করে। সে জানে তার এই পাগল প্রেমিকটা একটু এমন ই। অনলের পিঠে হাত রেখে বললো,
– তোমার প্রিন্সেস ভালো আছে তো?

ধারার কথায় উঠে বসে অনল। চোখ মুছে ধারার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় সে। ধীর গলায় বলে,
– বাপকা বেটি পুরো বাপের মতো হয়েছে জানিস, সারাক্ষণ ঘুমায়। খুব তাড়াতাড়ি ইনশাআল্লাহ আমরা তার কাছে যাবো৷ আমি ওর নাম রেখেছি। অধরা।
– অধরা, তুমি জানলে কি করে?
– তোর ডাইরি তে পড়েছিলাম।
– তুমি তো মানুষ ভালো না আমার ডাইরিতে হাত দাও।
– ভালো হইছে। আর কথা বলিস না। একটু রেস্ট কর
– এতোদিন তো তাই করেছি গো, আজ একটু কথা বলতে দাও

এভাবে সারাটারাত ধীরে ধীরে কথা বললো এই দম্পতি। সকালের দিকে ধারা ঘুমালো। তবুও অনল আশ্বস্ত হতে সব রিপোর্ট আবার চেক করালো। যখন সব কিছু নরমাল হলো তখন স্বাভাবিক হলো সে। আর দুদিন হাসপাতালে রাখবে ধারাকে। আজ বিকেলেই নরমাল ওয়ার্ডে শিফট করবে। এখন আর অক্সিজেন লাগছে না ধারা। চলাফেরা হালকা হালকা করছে। ব্লিডিং হচ্ছে বলে শরীরটা দূর্বল। আজ অধরাকে নিয়ে আসবে সে ধারার কাছে। মাতৃত্বের আঁচল থেকে টানা দশটা দিন আলাদা ছিলো বচ্চাটি। দুদিন পর ডাক্তার তাকে চেকাপ করে রিলিজ দিয়ে দেওয়ায় বাসায় নিয়ে গেছিলো অনল। সুরাইয়া বেগম এবং সুভাসিনী বেগম ই দেখেছেন তাকে। এখন বাচ্চাটি তার মায়ের উষ্ণতা পাবে। মায়ের গায়ের গন্ধ ই আলাদা। সেই গন্ধ বাচ্চাদের সবচেয়ে প্রিয়। কি অদ্ভুত একটা দৃশ্যই না হবে, তার বউ এবং মেয়েকে একত্রে কাছে পাবে অনল। এতোদিনের অতৃপ্ত মনটা যেনো তৃপ্ত হবে। আর এখনো যে তার আরো একটি কাজ করা বাকি, সেটা না হয় সময় হলেই জানাবে ধারাকে।

বিকেল ৪টা,
ধারাকে নরমাল ওয়ার্ডে শিফট করা হয়েছে। অধরাকে নিয়ে এসেছে অনল। যখন অধরাকে ধারার কোলে দিলো মেয়েটা একেবারে চুপ করে গায়ের সাথে মিশে ছিলো। আগে একটা সময় ধারা বাচ্চা কোলে নিতে ভয় পেতো, এতো ছোট বাচ্চা যদি পড়ে যায়। আজ ও খুব সাবধানতার সাথে ধরলো। নরম তুলতুলে হাত পা হালকা ছুটাছুটি করছে। ধারার ভয় দেখে অনলও ধারার পেছনে বসলো। পেছন ধরলো তার পরিবারকে। ধারার যেনো বিশ্বাস ই হচ্ছে না, যাকে বাঁচানোর এতো লড়াই তারা করেছে, সেই বাচ্চাটা আজ তার কোলে। আলতো করে চুমু খেলো অধরার কপালে। অনলের দিকে তাকিয়ে বললো,
– ধন্যবাদ
– কষ্ট তো তুই করেছিস, তোকে ধন্যবাদ। আমাকে আমার প্রিন্সেস দেবার জন্য। আমার কাছে ফিরে আসার জন্য।
– তোমাকে ধন্যবাদ, আমার পাশে থাকার জন্য।

মুচকি হাসি হেসে ধারার কপালে ঠোঁট ছোঁয়ালো অনল। আবেশে চোখে বন্ধ করে অনলের কাঁধে মাথা রাখলো। এটা যেনো পৃথিবীর সবথেকে শান্তির জায়গা। তার কোলে তার সন্তান। আর তার স্বামী তাকে আগলে রেখেছে। এই সময়টা যদি থেমে যেতো মন্দ হতো না।

সময় বহমান, দিন দিন করে মাস চলে যাচ্ছে। দেখতে দেখতে জুলাই শেষে আগষ্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর মাস চলে গেছে। নভেম্বর এ পা রেখেছে পৃথিবী। কার্তিক মাস শেষে অগ্রহায়ণ মাস চলে এসেছে। ঠান্ডা হাওয়া বইছে ব্যস্ত ঢাকা শহরে। অধরা এখন চার মাস হবে হবে করছে। মজার ব্যাপার, দেখতে দেখতে ধারা এবং অনলের বিয়ের একটা বছর হতে যাচ্ছে। এক বছর আগে এই নভেম্বরেই তাদের বিয়ে হয়েছিলো। কিন্তু স্ত্যি বলতে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কটি তাদের মাঝে এখনো তৈরি হয় নি। একই রুমে তো থাকে কিন্তু তাদের মাঝে শারিরীক সম্পর্ক তৈরি হয় নি। আজকাল আজকাল অনলের মাঝে বিস্তর পরিবর্তন দেখা গেছে। হালকা হলেও ধারা উপলব্ধি করতে পারছে। আগে অনল হাসপাতালে যাবার আগে মেয়ের সাথে কিছুক্ষণ খেলে ধারার কপালে চুমু খেয়ে তারপর যেতো। আসার পর ও একই তার মেয়ের সাথে খেলে, তাকে ঘুম পাড়িয়ে তারপর ধারাকে সারাটাদিনের সব কথা বলতো। মেয়েও হয়েছে বাবা পাগল, বাবা ছাড়া সে ঘুমাতেও চায় না। মেয়ে ঘুমাবার পর দুজন বারান্দায় বসে কফিহাতে জ্যোৎস্না বিলাষ করতো। কিন্তু আজকাল অনলের যেনো ধারার সাথে কথা অবধি বলার সময় হচ্ছে না। এসে মেয়েকে সময় দিয়েই শেষ। ধারা যখন নিজ থেকে কিছু বলতে যায় তখন একটা অনীহা দেখাচ্ছে। ধারা যেনো কিছুতেই বুঝে উঠছে না কি হচ্ছে। নাহ এভাবে থাকা যায় না। অনলের পরিবর্তনটা যেনো বড্ড বেশি চোখে লাগছে ধারার। রাতের খাবার পর সব গুছিয়ে রুমে আসে ধারা। অধরা তখন অনলের কোলে ঘুম। ধারাকে দেখে অধরাকে খাটে শুইয়ে দেয় অনল। এরপর বারান্দায় চলে যায়। অনলের এই কাজটা যেনো ধারার বড্ড বেশি চোখে লাগছে। সে কি কোনো ভুল করেছে! বুঝে উঠতে পারছে না। ধারাও দেরি না করে অনলের পিছু নিয়ে বারান্দায় আসলো। অনল তখন পকেটে হাত গুজে বাহিরে তাকিয়ে আছে। এবার ধারা আর আর থাকতে পারলো না। বেশ স্পষ্ট স্বরে বললো,
– অনলভাই কি হয়েছে?
– কি হবে?

অনলের নির্বিকার চিত্তে বলা কথাটা যেনো আরো মেজাজ খারাপ করিয়ে দিলো ধারার। হিনহিনে গলায় বললো,
– কি হয়েছে বুঝছো না? তুমি আমাকে এড়িয়ে যাচ্ছো কেনো?
– এড়িয়ে যাচ্ছি মানে?
– তুমি কদিন ধরেই দেখছি অনেক বদলে গেছো! একটু বলবে কি হয়েছে? আমি কি কোনো দোষ করেছি? আমি যেনো মূহুর্তেই অদৃশ্য হয়ে গেছি তোমার কাছে। আমার রান্না তুমি মুখে তুলছো। রাতে ঘুমানোর সময় দেখি তুমি খাটে শুচ্ছো না, ড্রয়িং রুমে চলে যাচ্ছো। আমি কথা বলতে আসলে ঠিক মুখে কথাও বলছো না কি হয়েছে বলবে?

এবার অনল একটু নড়েচড়ে দাঁড়ালো। স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বললো,
– তুই বুঝতে পারবি আমি বুঝেছিলাম, আসলে লুকিয়ে যেতে চেয়েছিলাম কিন্তু পারছি না। তুই যেহেতু সত্যিটা জানতে চাচ্ছিস আমি তাহলে বলি, আমি ক্লান্ত ধারা। আমি এই কাগজের সম্পর্কটা টানতে টানতে ক্লান্ত। আমার মুক্তি চাই। কেনো যেনো এই সম্পর্কটাকে আর ভালো লাগছে না।
– মানে?

অধীর কন্ঠে বললো ধারা। তার গলা কাঁপছে। তার সুখের সংসারটাকি এভাবে ভেঙ্গে যাবে? অনল ভাবলেশহীন ভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। এবার সে একটু এগিয়ে আসলো। ধারার মুখোমুখি হয়ে বললো,
……………….

চলবে

মুশফিকা রহমান মৈথি