#কাঞ্চাসোনা_২
#পর্ব_০৩
#জাকিয়া_সুলতানা_ঝুমুর
সকাল অবাক হয়ে শাহীনের দিকে তাকিয়ে থাকে।ফর্সা দেখতে স্বাস্থ্যবান লোকটা কেমন করে তাকিয়ে আছে।উনার চোখের চাহনি সকালের পছন্দ হয় না।চোখের চাহনি ভালো নাকি খারাপ এটা মেয়েরা বেশ বুঝতে পারে।শাহীন সকালের দিকে তাকিয়ে বললো,
“এই বাসার সাথে কি সম্পর্ক সুন্দরী?”
সকাল কিছু বলার আগে মনোয়ারা ছুটে আসে।এতোক্ষণ সকালের সাথে বসেই গল্প করছিলো একটু রুমে গিয়েছে তখনি শাহীনের গলার স্বর শুনেছে আসতে আসতে দেখেন সকালকে কিছু বলছে।শাহীনের কথা,চলাফেরা ভালো না বিধায় সকালকে শাহীনের থেকে দূরে থাকতে বলতো আর সেই সকালই কিনা স্বয়ং শাহীনের সামনে দাঁড়িয়ে।মনোয়ারা সকালের হাতে ধরে রুমে যেতে ইশারা করে।সকাল চলে গেলে তিনি শাহীনকে বললো,
“ভেতরে আসছো না কেনো?”
শাহীন সকালের যাওয়ার পানে তাকিয়ে থাকে।আহা মেয়েটার শরীর তো না যেনো পুতুল!চাচীর কথা শুনে বলে,
“এটা কে চাচী?”
“আমার বোনের মেয়ে।বেড়াতে এসেছে কিছুদিন থাকবে।”
শাহীনের মনে ফুল ফুটে।মুচকি হেসে রুমে যেতে যেতে মনে মনে ভাবলো,”বেশ সুন্দর।চোখে লাগার মতো।”
স্বাভাবিক ভাবেই কেটে যায় পুরো একটা সাপ্তাহ।ধ্রুবর অফিসে কাজের চাপ বেশী থাকায় বাসা থেকে অফিস মুখীই বেশী হতে হচ্ছে।যদিও সময় পেলেই সকালকে দেখে।কেনো দেখে যানা নেই কিন্তু সকালের লাজুক মুখটা দেখতে খুব ভালো লাগে।দুজনের চোখে চোখ পড়ে গেলে বুকে সুখের অনুভূতি দোলা দেয়।এই বয়সে এসে ধ্রুবর এসব মানায়?
মনোয়ারার নিষেধ অনুযায়ী সকাল শাহীনের সামনে যায় না।কিন্তু তার ধ্রুবর সামনে যেতে ইচ্ছা করে।কেনো ইচ্ছা করে জানে না।ধ্রুবকে ভাবতে ইচ্ছা করে।কোনো এক চুম্বকীয় শক্তিতে ধ্রুব যেনো সকালকে টানে।ধ্রুবর সামনে গেলে বুকের কাঁপন বেড়ে হয় দ্বিগুণ তখন দুনিয়ার সব লজ্জা যেনো তাকে ঝাপটে ধরে।এতো ল/জ্জার কারণও সে খুঁজে পায় না।কিশোরী মনে যে বসন্তের বাতাস বয় এটা কিশোরী নিজেই জানে না কিংবা জানতে চায় না।
সামির মেসের ছোট সিংগেল খাটে শুয়ে আছে।বন্ধ চোখের পাতা খুলে জানালার দিকে তাকায় সূর্যের আলো কমে জানান দিচ্ছে সন্ধ্যার আগমনী বার্তা।সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে অথচ মেয়েটা এখনো মেসের নিচে ঘুরঘুর করছে,মেয়ে মানুষ এতো বেহায়া হবে কেনো?রা/গে তার মুখ কুঁচকে যায়।সে নিজের মনকে আয়ত্বে আনতে চায়,বুঝাতে চায় মেয়েটা তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুর বোন।মাগরিবের আজান কানে আসলে সে উঠে বসে।ছোট ওয়ারড্রোব থেকে একটা ট্রি শার্ট বের করে গায়ে দেয়।মুখে রা/গ ঝুলিয়ে বেরিয়ে যায়।দ্রুত পায়ে দোতলা থেকে নিচে নামে।
মিতুর চোখজোড়া ফুলে লাল টকটকে হয়ে আছে।অতিরিক্ত কান্নার ফলে মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে লাল দেখাচ্ছে।এইযে এখনো এককোনে দাঁড়িয়ে নিঃশব্দে কাঁদছে।হাত দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে চোখ ফুলিয়ে ফেলেছে।রিক্সার হুডে লেগে ডান হাতের দুইটা আঙুল খুব বাজেভাবে কেটে গেছে।অনেকটা র/ক্ত ঝড়েছে।শীত কাল বিধায় ব্যা/থাটা বেশীই করছে।মনের দুঃখ আর হাতের ব্যাথায় মিতুর ইচ্ছা করছে চিৎ/কার করে কান্না করতে।আজকে বিকালে কোচিং শেষ করে আসার সময় সামির আর একটা মেয়েকে এক রিক্সায় বসে থাকতে দেখেছে।হ্যাঁ বসতেই পারে স্বাভাবিক কতো ফ্রেন্ড সার্কেলই তো থাকতে পারে কিন্তু দুজনে শুধু বসেই ছিলো না মেয়েটা সামিরের গায়ে ঢলে পড়ে হাসছিলো সেই হাসির সামিল সামির নিজেও হচ্ছিলো।মেয়েটা সামিরের চুল ঠিক করে দিচ্ছিলো গালে হাত দিয়েও গাল টেনে দিয়েছে।এই দৃশ্য দেখেই মিতুর ম/রে যেতে ইচ্ছে করেছে।সামিরের গালফ্রেন্ড আছে?কই কখনো জানতে পারে নি যে!কিন্তু সামির কেনো কখনো বলেনি?মিতু খুব জানে যে সামির তার দুর্বলতা টের পেয়ে গেছে,তার বুকের উত্তাল ঢেউ একটু হলেও দেখেছে।তাহলে কেনো এই নির্বাক থাকা?কিসের এতো এড়িয়ে চলা?সোজাসাপটা বলা যায় না আমার গালফ্রেন্ড আছে?মিতু এই সব প্রশ্নের উত্তরের জন্যই সামিরের মেসে এসেছে।এতো মানুষিক চাপ নিয়ে থাকা যায় না।এসেছে সেই আছরের পরে এখন মাগরিবের আজান দিচ্ছে কিন্তু মিতু ঠায় দাঁড়িয়ে আছে।সামিরকে কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস তার নেই।আবার এটাও ভ/য় লাগে যা দেখেছে সব যদি সত্যি হয়?তার নিজেকে অসহায় লাগে।তাইতো কাঁদছে।এক তরফা প্রেমে এতো ক/ষ্ট কেনো?
সামির চুপচাপ গিয়ে মিতুর পাশে দাঁড়ায়।মিতু সামিরের উপস্থিতি টের পায় না সে নিজের মতো কাঁদে,হাত দিয়ে চোখ মুছে।সামির অপলক মিতুর দিকে তাকিয়ে আছে।উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ের রঙের অধিকারী তবুও সৌন্দর্যের কমতি নেই।কাটাকাটা নাক মুখ দেখলে সে কেউ মিতুকে সুন্দরী বলতে বাধ্য।এই সুন্দরী নিজের সবটা উজার করে সামিরকে চায়।সামিরকে একবার দেখার জন্য লুকিয়ে লুকিয়ে সামিরের মেসের সামনে আসে।এক কথায় সামিরকে মিতু অনেক ভালোবাসে।এই ভালোবাসার কথা কখনো মিতু বলেনি কিন্তু সামির বুঝে গেছে।তীক্ষ্ণ চোখে তাকালেই সামির মিতুর মনটা পড়তে পারে।তিন বছর ধরেই সামির মিতুর পরিবর্তন লক্ষ করছে।এমনিতে মিতু সামিরকে ভ/য় পায় কখনো মুখ ফুটে কিছু বলেনা।সামির সব বুঝে সব দেখে কিন্তু বরাবরের মতো যে নিশ্চুপ।সে গলা খাকারি দিয়ে নিজের উপস্থিতি জানান দেয়।মিতু সামিরকে দেখে চোখ মুছে নড়েচড়ে দাঁড়ায়।সামির রা/গ দেখাবে রা/গ দেখাবে বললেও মিতুর কান্না দেখে আর রা/গ দেখাতে পারে না।গম্ভীর গলায় বললো,
“এখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো মিতু?এদিকে কোনো কাজ আছে?”
সামিরকে দেখে তার কথা শুনে মিতুর বুকটা ভেঙেচুড়ে কান্না আসে।ধরা গলায় বলে,
“ফ্রেন্ডের বাসায় এসেছিলাম।”
সামির মুচকি হাসে।মিথ্যা কথাটাই মনেপ্রানে বিশ্বাস করে বললো,
“অহ,আচ্ছা।”
মিতু সামিরের দিকে তাকায়।উনি এমন কেনো?এতো নির্বাক কেনো?
সামির মিতুর চোখে চোখ রাখে।মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখের কি হাল করেছে?মিতুর কাজল চোখের এমন বেহাল দশা তার ভালো লাগে না।আস্তে অথচ গম্ভীর গলায় বললো,
“কাঁদছো কেনো?”
মিতু ধরা গলায় বললো,
“এমনি।”
“এমনি কেউ কাঁদে?”
“আমি কাঁদি।”
সামির পকেটে হাত ঢুকিয়ে দাঁড়ায়।মিতুর দিকে তাকিয়ে বললো,
“বাসায় যাও রাত হয়ে যাচ্ছে।”
মিতুর রা/গ হয়।তাকে তাড়ানোর এতো তাড়া?
“হোক রাত যাবো না বাসায়। আপনার কি?”
মিতুর রা/গ দেখে সামির হাসে।
“আমি তোমার ভাই হই না!ভাই হিসেবে বলেছি।”
“আমি আপনাকে ভাই মানি না।”
“কি মানো?”
মিতুর বলতে ইচ্ছে করে ‘আমি আপনাকে আমার জীবন মানি।’কিন্তু মুখে বললো,
“আপনার কিছুতে তো আমি কথা বলিনা।তাহলে আমাকেও ভাইগিরি দেখাতে আসবেন না।”
“আমাকেও কিছু বলতে পারো সমস্যা নেই।”
“কি বলবো?”
সামির রাস্তার দিকে তাকিয়ে বললো,
“বাসায় যাও।সবাই চিন্তা করবে।”
“হুম।”
“রিক্সা ডেকে দেই?”
“না।”
সামির শক্ত হয়ে দাড়িয়ে থাকে।চোখের মনি এদিক ওদিক ঘুরিয়ে নিজেকে ব্যস্ত করতে চায়।আস্তে করে বললো,
“পাগ/লামি করোনা মিতু।”
“কিসের পাগ/লামি?”
সামির মিতুর দিকে তাকায়।কিসের পাগ/লামি এটা দুজনেই জানে।মুখে না বললেও দুজনের মন ঠিক জানে।মিতু টলমল চোখে সামিরের গভীর চোখে তাকায়।সামির তার চোখের দৃষ্টি সরিয়ে নেয়।পাশ দিয়ে যাওয়া একটা রিক্সা ডাকে।মিতু চেচিয়ে উঠে বললো,
“যাবোনা বলেছি তো।”
সামিরের রা/গ হচ্ছে কিন্তু এই মেয়েটার সামনে রা/গ দেখাতে পারছে না।মিতু ফুপিয়ে শব্দ করে কেঁদে দেয়।সামির বললো,
“কি হয়েছে মিতু?কাঁদছো কেনো?”
মিতু নিজের অভিযোগ আর চেপে রাখতে পারে না।মেয়ে তো পানির মতো নিজেকে ছিটিয়ে শান্ত হতে চায়।কান্নারত গলায় বললো,
“মেয়েটা কে ছিলো?”
সামির অবাক হয়।ভ্রুকুঞ্চন করে বললো,
“কোন মেয়ে?”
তারপর তার ইসরাতের কথা মনে পড়লো।ইসরাত তার ভার্সিটির ফ্রেন্ড।শুধু ফ্রেন্ড বললে কম হবে ইসরাতকে বোন বলা যায়।বিয়ে হয়ে গেছে তারপরেও আগের মতোই দুষ্টুমি করে।আজকে তো ইসরাতের সাথেই রিক্সায় ছিলো।এটাই কি মিতু দেখেছে?তাই এই কান্নাকাটি?সামির মিতুর উত্তরের আশায় মিতুর দিকে তাকিয়ে থাকে।মিতু বলতে বলতে কেঁদে দিলো,
“রিক্সায় পাশাপাশি বসে ছিলেন।”
মিতুর কান্না সামিরের ভালো লাগে না।
“তো কি হয়েছে।বসতে পারিনা?”
“কি হয়েছে না!”
মিতু কান্নার জন্য কথা বলতে পারছেনা।সামির মাথার চুল টেনে ধরে।
“ও ইসরাত আমার ফ্রেন্ড।”
ফ্রেন্ড!মিতুর বুকের উপর থেকে বড়োসড়ো পাথর সরে যায়।আস্তে করে বললো,
“শুধু ফ্রেন্ড?”
“আর কি হবে?”
“হয় না অন্যকিছু।”
সামির মিতুর ইঙ্গিত বুঝে।মাথা নেড়ে বললো,
“না এসব না,ইসরাত আমার ভালো ফ্রেন্ড।”
মিতু সামিরের দিকে তাকায়।
“এভাবে গায়ের সাথে লাগে কেনো?”
“ও এমনি।ফ্রি টাইপের।”
মিতু মাথা নেড়ে বললো,
“আমার এসব ভালো লাগে না।”
“কেনো?”
“যা আমার তা একান্ত আমার।”
সামিরের চোয়াল শক্ত হয়।
“কি তোমার?”
মিতু নিশ্চুপ।সামির কিছুক্ষণ মিতুর দিকে তাকিয়ে সামনে চলন্ত রিক্সা দাঁড করায়।
“মাথা থেকে এসব বের করে দাও।”
“আর কোনো মেয়ের সাথে রিক্সায় উঠবেন না।”
সামির হাসে।
“আদেশ করছো?”
মিতু সামিরের চোখের দিকে ব্যাকুল হয়ে তাকায়।
“এসব আমার সহ্য হয় না।”
মিতুর ব্যাকুলতা ঠিক সামিরকে ছুঁয়ে যায়।কিন্তু কন্ঠে রুক্ষতা এনে ধমকে বললো,
“যাও বাসায় যাও।আর কখনো মেসের নিচে আসবেনা।”
“ওই মেয়ে…”
মিতু কথা শেষ করার আগে সামির ধমকে বললো,
“থা/প্পড় দিয়ে কান ফাটিয়ে দেবো বে/য়াদব।কথা কানে যায় না?বাসায় যাও।”
সামিরের ধমকে মিতুর বুকটা কেঁপে উঠে।মিতু কাঁদতে কাঁদতে রিক্সায় উঠে বসে।দুনিয়াতে এতো এতো ছেলে থাকতে এমন একটা ছেলেকেই ভালোবাসতে হলো?এমন রুক্ষভাষী ছেলেকেই কেন মন দিতে হলো?কেনো কেনো কেনো?
ধ্রুব অফিস থেকে ফিরে খাবার খেয়ে রুমের লাইট অফ করে শুয়ে আছে।হাতের কাজ আপাতত শেষ।আজকে সারাদিন দৌড়াদৌড়ির উপরে থাকতে হয়েছে বিধায় মাথা প্রচন্ড ব্যাথা করছে।শুয়েই মিতুর ফোন নাম্বারে ডায়াল করে।মিতু তখন মন খারাপ করে শুয়ে ছিলো সকাল পাশে শুয়ে মিতুর মন ভালো করতে চাইছে।ধ্রুব ফোনে বললো তার মাথা ম্যাসেজ করে দিয়ে আসতে।মিতু ফোন রেখে সকালকে বললো,
“সকাল তুমি যাও।ভাইয়ার কপালটা একটু টিপে দিয়ে আসো।প্লিজ।আমার খুব খারাপ লাগছে।”
সকাল চোখ বড়ো বড়ো করে তাকায়।
“আমি!”
“হ্যাঁ।এতো অবাক হচ্ছো কেনো?”
“না মানে।আপু আমার কেমন জানো লাগে।”
“যাও না প্লিজ।এটুকু হেল্প করো।”
সকাল না বললেও মিতু শুনলো না হাজারো অনুরোধ করে ঠিক পাঠিয়ে দিলো।সকাল ধ্রুবর রুমের সামনে গিয়ে বুকে হাত দিয়ে জোড়ে শ্বাস ফেলে।দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে অন্ধকার হাতরে দাঁড়ায়।অন্ধকারে কি করবে বুঝতে পারে না।ধ্রুব দরজা খুলার শব্দ শুনে বললো,
“লাইট জ্বালা।”
সকাল লাইট জ্বালালে ধ্রুব বললো,
“লক্ষী বোন মাত্র পাঁচ মিনিট।ঠিক আছে।”
সকালের উপস্থিতি ধ্রুব এখনো টের পায়নি।সকাল আস্তে করে বিছানার দিকে এগিয়ে যায়।ধ্রুব চোখ বন্ধ করেই হাত নেড়ে বললো,
“কুইক।প্রচুর ব্যা/থা।”
সকাল বিছানায় ধ্রুবর পাশে বসে।তার দম আটকে আসছে।ধ্রুব লম্বা হয়ে শুয়ে আছে।সকাল আলতো হাতে ধ্রুবর কপালে হাত দেয়।আস্তে আস্তে ম্যাসাজ করে দেয়।ধ্রুব চোখ বন্ধ করেই মিতুর পরিবর্তন বুঝতে পারে।মিতু তো এভাবে ম্যাসাজ করে না তাহলে আজকে এতো মোলায়েম ভাবে ম্যাসাজ করছে কেনো?ধ্রুব ফট করে চোখ খুলে তাকায়।একি এতো মিতু না এ যে সকাল!সকাল যে কিনা আজকাল ধ্রুবর অভ্যাস হয়ে যাচ্ছে।মায়াবী মুখটা না দেখলে কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগে।রাত দিন এই পিচ্ছিকে ভাবতেই ভালো লাগে।ধ্রুব বিস্মিত হয়।মিতুর জায়গায় সকাল কেনো?সকাল ধ্রুবর বিস্ময় কাটিয়ে দিলো।
“মিতু আপুর শরীর ভালো না তাই আমাকে পাঠিয়েছে।”
“আচ্ছা।”
সকাল মাথা নিচু করে বসে থাকে।ধ্রুব বললো,
“আমিতো ভেবেছি মিতু এসেছে তুমি যে এসেছো বুঝিনি।”
সকালের শরীর ঝিমঝিম করছে।এর আগে কখনো এমন লাগেনি।ধ্রুবর দিকে তাকালে দেখলো ধ্রুব তার দিকেই তাকিয়ে আছে এতে করে সকালের লজ্জার পরিমান আরো বাড়লো।
“ম্যাসাজ করে দেই?”
ধ্রুব সকালের দিকে তাকিয়ে থাকে।এমন আদুরে লাগে কেনো মেয়েটাকে?কি মায়াবী চেহারা।ধ্রুব ভাবছে মায়ের কথামতো বিয়ে করলে এই মেয়েটা তার বউ থাকতো এই রুমজুড়ে সকালের রাজত্ব চলতো।সকালের কথা শুনে বললো,
“থাক লাগবে না।”
“সমস্যা নেই।”
ধ্রুব মিষ্টি করে হেসে চোখ বন্ধ করে।সকাল তার কোমল হাত ধ্রুবর কপালে রাখে।আস্তে আস্তে ম্যাসাজ করে দেয়।ধ্রুবর কেমন যেনো লাগছে।সকালের ছোঁয়া পেয়েই কিনা হৃদপিণ্ডের কার্যক্ষমতা বেড়ে গেছে।এতো জোড়ে লাফাচ্ছে মনে হচ্ছে সকাল শুনতে পাচ্ছে।ধ্রুব একনজরে সকালকে দেখে।ধ্রুবর এমন পা/গলকরা চাহনী সকাল নিতে পারেনা।ধ্রুব বললো,
“তোমার হাত নেই সকাল?”
সকাল অবাক হয়।কি আজব প্রশ্ন!হাত না থাকলে ম্যাসাজ করছে কিভাবে?তাও বললো,
“আছে।”
“কই?আমি একটু ধরে দেখি?”
সকাল কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে তাকিয়ে থাকে।হাত আবার ধরার কি আছে?সকালের নিশ্চুপতায় ধ্রুব আবার বলে,
“ধরি?”
সকাল কিছু বলার আগেই ধ্রুব আলতো করে সকালের হাত ছুঁয়ে দেয়।
“তোমার হাত খুব সফট,তুলতুলে।”
ব্যাস এতোটুকু কথাই সকাল এতো লজ্জা পায়।মুখের লজ্জার লালিমা ভেসে উঠে।ধ্রুব পাশে থাকাই দায় হয়ে যায়।সে আস্তে করে বললো,
“ব্যাথা কমেছে?”
ধ্রুব আস্তে করে বললো,
“হ্যাঁ।”
“তাহলে আমি যাই।”
ধ্রুবর ইচ্ছা করে আরো কিছুক্ষণ সকালকে বসিয়ে রাখতে।লজ্জামাখা মুখটা আরো দেখতে।বড়ো বড়ো চোখের পলক ঝাপ্টানি দেখে বুকের কাঁপন বাড়াতে।
“উফ ব্যাথা আরো বেড়েছে।”
সকাল ব্যস্ত হয়ে বললো,
“কোথায়?”
ধ্রুব তার গালে হাত দেয়।উদ্যেশ্য সকালের হাতের ছোঁয়া গালে নেয়ার।
“এখানে ব্যাথা সকাল।প্রচুর।তুমি কি একটু ম্যাসাজ করে দেবে?প্লিজ।”
সকাল ধ্রুবর করুন মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।লোকটা কি সকালের অসস্থি বুঝে না?তার যে অ/সহ্যকর অনুভূতি হচ্ছে এটা কি টের পাচ্ছে না?তার দম আটকে আসে।ডাগর চোখ মেলে ধ্রুবর গভীর চোখে তাকায়।আস্তে করে বললো,
“যাই।”
ধ্রুব মাথা নেড়ে বললো,
“প্লিজ।”
সকাল ধ্রুবর অনুরোধ উপেক্ষা করতে পারে না।হাত দিয়ে ধ্রুবর গাল ধরে।ধ্রুব চোখ বন্ধ করে সকালের ছোঁয়া অনুভব করে।দূরো আম্মার কথা না শুনে লস হলো।বিরাট লস।শুনলে এই আদুরে প্যাকেজটা তার থাকতো।ইশ!!
চলবে……