#কাব্য_কথা
#পর্ব_৫
#লেখনীতে_ওয়াসেনাথ_আসফি
গত ১৫ মিনিট ধরে বুকসেলফের ওপর থেকে একটা ফাইল নিচে নামানোর চেষ্টা করছি কিন্তু আমি ব্যর্থ, আর এই ফাইল নিচে না নামতে পারলে আমি এই হনুমানের অফিস রুম থেকে বের হতে পারবো না।
ফ্ল্যাশব্যাক,,,,,,,,,,,,
তুমি তোমার কথা রাখোনি কেনো?
অপরিচিত নাম্বারে পরিচিত কারো কণ্ঠ শুনে ধড়ফড়িয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলাম কন্ঠটা আমার খুব চেনা হ্যা এটা কাব্য ভাইয়া কিন্তু সে আমাকে এতো সকালে কেনো কল করলো? এইসব ভাবতে ভাবতে আবার তার কন্ঠ শুনে হুস ফিরল আমার……….
হ্যালো! তুমি কি আমার কথা শুনতে পারছো? নাকি আবার ঘুমিয়ে পড়েছো কোনটা?
হুমম শুনতে পাচ্ছি কিন্তু আপনি আমাকে এতো সকালে কল কেনো করলেন?( ঘুমু ঘুমু কণ্ঠে)
কলটা আপনার করার কথা ছিল মিস নীলাঞ্জনা।
আমার মানে? (হুট করে মনে পড়লো কালকের সেই শর্তের কথা।)
ওহহ সরি সরি সরি! আমি ভুলে গেছিলাম, এইবারের মতো মাফ করে দেন প্লিজ আর এমন ভুল করবো না,,,,, আর আপনার নম্বর টা ও আমি হনুমানননন,,,,,, সরি! কাব্য ভাইয়াআআআ সরি! কাব্য দিয়ে সেভ করে রাখবো তাও প্লিজ বকা দিয়েন না।
কথার এমন কথা শুনে কাব্য বোকা বনে চলে গেলো।
আচ্ছা বকবো না।
সত্যি?
হুমম। এখন তোমাকে যেটা বলতে বলছিলাম সেটা বল।
ওহ এখন?
এখন নয়তো কখন দুপুরে?
না মানে বলছিলাম যেটা বলতে বলছেন সেটাই বলতে হবে?
হুম।
আচ্ছা বলছি,,,,,,,, গুড মর্নিং কাব্য ভাইয়া…….( বলেই কলটা কেটে দিলাম আর জোরে জোরে নিশ্বাস নিতে লাগলাম। এভাবে কি কারো নাম নেওয়া যায়)।
কথার এমন আচমকা কল কেটে দেওয়াতে কাব্য রাগ করার বিনিময়ে মুচকি হেসে বলে উঠলো……… তুমি তো আমাকে আবার একটা নতুন বাহানা তৈরী করে দিলে প্রিয়সী।
কাব্য ভাইয়ার সাথে কথা বলে টাইম দেখে তো আমি শেষ অলরেডি ৭টা বাজে আর আজকে আমার ৮: ৩০টায় ক্লাস আছে তাই আর দেরি না করে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করলাম আর ভাইয়াও অফিসে যাওয়ার জন্য বের হচ্ছিলো তাই আমি ভাইয়াকে বললাম………. ভাইয়া তুমি কি আমাকে একটু ভার্সিটিতে নামায় দিতে পারবা?
একটু কেনো পুরোটাই দিতে পারবো।( একটু মজা করে)
উফফ এখন মজা করোনা এমনি লেট হয়ে গেছে চলো তাড়াতাড়ি।
আচ্ছা চল।
ভার্সিটির গেট থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে আছে কাব্য অপেক্ষা করছে তার প্রিয়সীর জন্য। কিছুক্ষন পর কাব্য দেখতে পেলো কথা একটা ছেলের বাইক থেকে নামছে কথা ছেলেটিকে জড়িয়ে ধরে কিছুই একটা বলছে। ছেলেটা হেলমেট পরা ছিল তাই কাব্য তার চেহারা দেখতে পায়নি। কথা এবং ছেলেটাকে একসাথে দেখে কাব্যর প্রচন্ড রাগ উঠে যায় আর দ্রুত সেখান থেকে চলে যায়। এর পর কথার সাথে কয়েকবার কাব্যর দেখা হয় কথা কাব্যর সাথে সকালের বিষয়ে কথা বলতে চায় কিন্তু কাব্য কথা কে এড়িয়ে চলে যায়। এতে কথার অনেক খারাপ লাগে এবং কাব্যের এমন ব্যাবহারে কথার ভীষণ রাগ লাগে আর মনে মনে ভাবতে থাকে কাব্যর অফিস রুমে গিয়ে কাব্যর সাথে কথা বলবে। যেই ভাবা সেই কাজ………… করিডোর দিয়ে হাঁটছি উদ্দেশ্য কাব্যর অফিস রুম কিন্তু হটাৎ করেই সেদিনের মতো আবার আমাকে কেউ আমার হাতে টানদিয়ে সেই অন্ধকার ক্লাস রুমে নিয়ে গেল সেদিন এর মতো লোকটা আমার মুখ চেপে ধরে দাঁড়িয়ে আছে। চোখের সামনে পুরো অন্ধকার কিছুই দেখা যাচ্ছেনা না কিন্তু আমি কিছু অনুভব করতে পারছি তার নিশ্বাসের শব্দ গুলো শুনতে পারছি তার হার্ট বিট গুলো এতো ফাস্ট চলছে যে আমি তা শুনতে পারছি আর সবথেকে বেশি অনুভব করতে পারছি তার বডি স্মেল আমি পুরো হারিয়ে গেছি তার মাঝে হটাৎ আমার ঘাড়ে একটু ব্যাথা অনুভব করতে পারছি মনে হচ্ছে কেউ কামড় দিল কিন্তু পরক্ষনেই বুঝতে পারলাম সেই কামড় দেওয়া জায়গায় কেউ গভীর ভাবে চুমু দিচ্ছে আর আমার হাতটা তার হাতের মুঠোয় শক্ত করে চেপে ধরে আছে। নিজেকে ছাড়াতে তাকে জোরে একটা ধকা দিলাম হয়তো আচমকা ধাকা দেওয়ার কারণে লোকটা টাল সামলাতে না পেরে দূরে সড়ে পড়লো এই সুযোগে আমি দরজা খুলে দিয়ে তাকে খুঁজতে লাগলাম কিন্ত আমি তাকে খুঁজে পেলাম না কিন্তু যাওয়ার আগে আমার হাতে আবার একটা চিরকুট ধরিয়ে দিয়ে গেছে। চিরকুটাতে লেখা ছিলো……… তুই শুধু আমার শুধু আমার! চিরকুটা পড়ে কেমন যেন লাগছে এক অজানা অনুভূতি হচ্ছে আমার মনে হচ্ছিলো কেউ আমাকে তার জীবনের চেয়েও বেশী ভালোবাসে। এইগুলো ভাবতে ভাবতে দেখি কাব্য ভাইয়া আমার সামনে দাড়িয়ে আছে আর আমায় শান্ত সরে বললো কথা আমার সাথে এসো। কথা টা শুনে আমার একটু কেমন যেনো লাগলো প্রথম বারের মতো কাব্য ভাইয়া আমার নাম ধরে ডাকছে কিন্তু তার মুখে আমার নাম নেওয়া টা আমি মেনে নিতে পারছিনা বুকের ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে । মন বলছে কেনো আপনি আমায় কথা বলে ডাকলেন পিচ্ছি অথবা মিনি সাউন্ড বক্স বলে ডাকলেন না বড্ডো অভিমান হচ্ছে আমার তার ওপর কিন্তু এমন কেনো হচ্ছে তা আমি নিজেও জানি না,,,,, এইসব ভাবনা বাদ দিয়ে আমিও বাধ্য মেয়ের মতো তার পিছু পিছু হাটতে লাগলাম……….. তারপর আমি এখন এই ঝামেলায় ফাইশা গেছি। কারন হলো আমি আমার কথা রাখিনি এবং কথা শেষ না করেই ফোন কেটে দিছি। এখন শাস্তি স্বরূপ এই কাজ করছি।
বর্তমান……….!
এতক্ষন লাগে একটা ফাইল নিয়ে আসতে।
আসলে কাব্য ভাইয়া থুক্কু স্যার অতো উচুঁতে আমার হাত যাচ্ছে না।
এইজন্য তোমাকে পিচ্ছি বলে ডাকি কিন্তু তুমি তো বুঝনা শুধু শুধু মিনি সাউন্ড বক্স এর মতো শব্দ করো।
ওনার মুখে এই নাম গুলো শুনে মনের অজান্তেই হেসে দিলাম।
আর এদিকে কাব্য মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে আমার হাসির দিকে। যেনো এক অজানা তৃপ্তি পাচ্ছে সে। আমি হাসি থামিয়ে তাকে ডাক দিয়ে বললাম………. আমাকে একটু হেল্প করেন না প্লিজ আমার কথায় তার ঘোর কাটলো আর একটু পিছনে গিয়ে একটা চেয়ার এনে বললো এটার ওপর দাঁড়িয়ে কাজটা শেষ করো তাড়াতাড়ি। আমি লাফ দিয়ে উঠে পড়লাম চেয়ারে আর ফাইলটা খুব সহজেই পেরে নিলাম কিন্তু বিপত্তি ঘটে নামার সময় চেয়ার থেকে নামতে গিয়ে মুখ থুবড়ে পড়ে যেতে নেই কিন্তু পড়ার আগেই কাব্য ভাইয়া আমায় ধরে ফেলে আর কোলে তুলে নেয় ভয়ে চোখ বন্ধ করে আছি কিন্তু কারো দ্রুত গতিতে বেড়ে যাওয়া হার্টবিটের শব্দ শুনতে পাচ্ছি চোখ খুলে দেখি আমি কাব্য ভাইয়ার কোলে আর আমার মাথাটা তার বুকের সাথে লেগে আছে এই সব কিছুর মাঝে আরো একটা জিনিস আমি অনুভব করতে পারছি সেটা হলো তার বডি স্মেল। একদম সেই লোকটার মতো তাহলে কি কাব্য ভাইয়াই ছিল সেটা? কাব্য ভাইয়ার ধমকে ধ্যান ভাঙ্গলো আমার…….
দেখে নামতে পারো না, পরলে কি হতো বুঝতে পারছো তুমি এতটা কেয়ারলেস কেনো তুমি। কথা টা বলেই কোল থেকে নামিয়ে দিল আর আমার বহু দুটো চেপে ধরলো।
সরি আমি বুঝতে পারিনি। প্লিজ রাগ করিয়েন না।
আমার কথায় একটু শান্ত হয়ে বলে উঠলো,,,,, তুমি এখন যাও। আমিও চলে আসতে নিলাম কিন্তু কাব্য ভাইয়া আবার বলে উঠলো,,, দাড়াও।
আমি থেমে তার দিকে ঘুরে দাঁড়ালাম আর সে আমার কাছে এসে আমার উড়নাতে হাত দিলো………….।
#চলবে………।