কাব্য কথা পর্ব-০৪

0
227

#কাব্য_কথা
#পর্ব_৪
#লেখনীতে_ওয়াসেনাথ_আসফি

কাব্য ভাইয়া আমার কাছে এসে আমার মুখের সামনে ঝুঁকে দাড়ালেন কিছুক্ষন আমার দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলো,,,,,,,,,,,,
ভুল হয়ে গেছে তোমাকে পিচ্ছি না বলে মিনি সাউন্ড বক্স বললে বেশি ভালো হতো আর এই নাম টা তোমার সাথে অনেক বেশি মানায়। (একটু ভাব নিয়ে কথাটা বললো)।

ওনার এমন কথা শুনে আমার রাগটা আকাশ চুম্বি হয়ে গেলো। নিজেকে কন্ট্রোল করতে না পেরে আমার হাত দুটো তার বুকের উপর রেখে আস্তে করে তাকে ঝুঁকে থাকা থেকে সোজা করে দিলাম আর নিজেও দাড়িয়ে পড়লাম আর বলতে শুরু করলাম,,,,,,,, আপনার সাহস কি করে হয় আমাকে মিনি সাউন্ড বক্স বলার হুঁ? প্রথমে আমাকে পিচ্ছি বললেন আবার এখন মিমি সাউন্ড বক্স,,,,, কেনো আমি কি আপনার নিজস্ব সম্পতি যে যখন খুশি তখন ভিন্ন ভিন্ন নামে ডাকবেন?

কথার এমন কাজে কাব্য অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে আর ভাবছে কথা তার বুকের উপর হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে। নিজের ভাবনার ইতি টেনে কাব্য বলে উঠলো,,,,,,,,,,,,,, তোমার সাহস কি করে হয় আমাকে টাচ্ করার হে,,,,, আর তুমি যদি কথায় কথায় চিল্লাচিল্লি না করতে আর মুখে মুখে তর্ক না করতে তাহলে তো তোমাকে আর এই নাম টা দিতে হতো না।

কাব্যর ভাইয়ার কথা শুনে তৎক্ষণাৎ তার বুকের ওপর থেকে হাত সরিয়ে নিলাম আর অপরাধীর মতো নিচে তাকিয়ে সরি বললাম। আর বেশি দেরি না করে তাড়াতাড়ি সেখান থেকে বেরিয়ে পড়লাম।

(এদিকে কাব্য তাকিয়ে আছে কথার যাওয়ার পানে।)

রাস্তা দিয়ে হাঁটছি আর ভাবছি আমি কাব্যর বুকের ওপর হাত রাখার পর ওর হার্ট বিট এর গতি ভয়ঙ্কর ভাবে বেড়ে গেছিলো,, ওর হার্ট বিট গুলো আমি অনুভব করতে পারছিলাম শব্দ গুলো যেনো আমায় বলছিলো তুমি আমার শুধু আমার! আমার অনেক লজ্জা লাগছে কিসব উল্টা পাল্টা ভাবছি আমি ! ওনার হার্ট বিট আমাকে এইগুলা বলতে যাবে কেনো,,,, ওই হনুমান টা তো আমাকে দেখলেই বকা বকি, ধমক আর শাস্তি দিতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে কিন্তু ওই দিন ঐ অন্ধকার ক্লাস রুমে কাব্য ভাইয়া যে আমাকে না না ধুর কি ভাবছি আমি কাব্য ভাইয়া কেনো আমার সাথে এমন করবে! আর আমিতো ছেলেটার মুখ দেখিনি,তাহলে কে ছিলো সে? উফফ আমি আর ভাবতে পারছি না।

হাতে কলম আর টেবিলের ওপর তার ব্যাক্তিগত ডায়রি নিয়ে বসে আছে কাব্য তার ঠোঁট এর কোনায় বিরাজ করছে মুচকি হাসি আর ভাবছে কেন্টিনে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো গুলো,,,,, দ্বিতীয় বারের মতো কথা নিজ থেকে স্পর্শ করল তাকে এবং ডায়রি তে লেখতে লাগলো তার প্রিয়সীর থেকে পাওয়া অনুভূতি গুলো,,,,,,!!!!!!!!!!!!!

সন্ধা গড়িয়ে রাত হয়ে গেলো,,,,, ভার্সিটি থেকে বাসায় আসে ফ্রেশ হয়ে খাবার খেয়ে আমার বেলকনিতে এসে দাড়িয়ে ছিলাম কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে পাশে থাকা আমার ঝুলায় বসে পড়ি আর ভাবতে থাকি কাব্য ভাইয়ার কথা কেনো মানুষটা আমার ভাইয়া ডাকে এতো রেগে যায় কেনো মানুষটা আমার সামনে আসলে তার চোখে আমার জন্য এক অন্য রকম আবেগ দেখতে পাই তাহলে কি কাব্য ভাইয়া আমাকে পছন্দ করে, না পছন্দ করলে কারো চোখে এতো গভীর মায়া দেখা যায়না তাহলে কি এটা ভালোবাসা,,,,,,,, না না কিসব উল্টা পাল্টা ভাবছি আমি উনি আমাকে কেনো ভালোবাসবে আমাকে তো তার সহ্য হয়না,,,,, এসব ভাবতে ভাবতে কখন যেন আমার চোখে ঘুম চলে এলো বুঝতে পারিনি। ঘুম থেকে উঠে দেখি ৮: ৩০বাজে, ঝুলা থেকে উঠে রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বাইরে এলাম দেখি ভাইয়া কার সাথে যেন কথা বলছে আর হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে। আমাকে দেখে হাতের ইশারায় বসতে বললো আমিও আগ্রহ নিয়ে বসে পড়লাম,,,,,,,

ইনান: জানিস কথা আমার বন্ধু তার ভার্সিটির এক ছাত্রীর প্রেমে হাবু ডুবু খাচ্ছে। (কথাটি বলে আবারও হাসতে শুরু করলো)

মাও আমাদের সাথে যোগ দিলো আর বলে উঠলো

মা:কে আনান?

ইনান: হুঁ ( হাসতে হাসতে)।

আমি বোকার মতো তাদের দিকে তাকিয়ে আছি,, আর ভাবছি এই আনান টা আবার কে? তাই নিজের কৌতুহল দুর করতে ভাইয়াকে জিজ্ঞেস করলাম,,,,,,,,,,,, ভাইয়া এই আনান টা কে?

ইনান: ওহ তোকে তো বলা হয়নি,,,,, আনান হলো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড, ও আর আমি এক স্কুল, কলেজ আর ভার্সিটিতে পড়ছি। ওর আপন বলতে কেউ নেই শুধু এক চাচু আর এক খালা বাদে, ও ওর চাচ্চু আর খালার বাসায় থাকে। ওর বাবা মা অনেক আগেই মারা গেছে। মা দেখতে নাকি অনেকটা ওর মায়ের মতো তাই আনান আমাদের একমাত্র আম্মাজানকে মামনি বলে ডাকে।

ভাইয়ার কথা গুলো শুনে বুকের ভিতরটা ফেটে যাচ্ছে এক অজানা কষ্ট হচ্ছে তার জন্য। মেয়েরা তো কান্না করে নিজেদের কষ্টগুলো কম করতে পারে কিন্তু ছেলেরা পারে না তাদের কষ্ট তারা নিজের ভিতরে চেপে রাখে।( কথা গুলো নিজে নিজে ভাব ছিল কথা)

কিরে কি হইসে তোর?( ইনান )

কিছু না ভাইয়া ভাব ছিলাম, তোমার বন্ধুরতো তাহলে অনেক কষ্ট হয় তাইনা?

ইনান:হ্যা হয়, ও মুখে কিছু না বললেও আমি বুঝি যখন মা আমকে আদর করে, খাইয়ে দেয়, বকা দেয়, আমার নাম ধরে ডাকে তখন ওর চোখে পানি চলে আসে তখন বুঝতে পারি ওর ভিতরে অনেক কষ্ট হচ্ছে। তাই ওর কষ্টটা দুর করতে মাও ওকে আমার মতো আদর করে ভালোবাসে, খাইয়ে দেয়।

তোমার বন্ধু কি প্রায় আমাদের বাসায় আসে?

ইনান: হুঁ ।

তাহলে আমি দেখি না কেনো?

ইনান: তুই যখন বাড়িতে থাকিস না তখন আসে।

ওহহ!

হুঁ। অনেক কথা বলে ফেলেছি এখন যা খাওয়া দাওয়া শেষ করে ঘুমা যা ( মাথায় একটা চাটি মেরে)

আহ ভাইয়া মারো কেনো এতক্ষন তো ভালই ছিলা?

বেশি আদর দিলে পারে তুই আমার ঘাড়ে উঠে নাচবি তাই তোকে সোজা রাখার জন্যে একটু চাটি মারলাম।

তাহলে আমি কি এখন বকা নাকি?

সোজাও না আবার বকাও না মাঝা মাঝি।

এইসব বলে শুরু হয়ে গেলো ভাইবোনের খুনসুটির ঝগড়া কিন্তু হটাৎ করেই আবার আমার মনটা খারাপ হয়ে গেলো আনান ভাইয়ার কথা ভেবে। সত্যিই লোকটা অনেক একা তার তো ভাই বোনও নেই যার সাথে নিজের সুখ দুঃখ ভাগ করে নিবে। আমার না খুব করে তাকে দেখতে ইচ্ছে করছে যদি একবার নিজ চোখে তাকে দেখতে পারতাম একটু কথা বলতে পারতাম !

রাতের খাবার শেষ করে নিজের রুমে গিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলাম একটা ঘুম এক ঘুমে সকাল হয়ে গেলো আর আমার ঘুম ভাঙ্গলো বিরক্তিকর একটা শব্দে আর সেটা হলো আমার ফোন এর রিংটোন। ফোন হাতে নিয়ে দেখি একটা অপরিচিত নাম্বার বিরক্তি নিয়ে ফোনটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলে উঠলো,,,,,,,

তুমি তোমার কথা রাখোনি কেনো?

#চলবে……..