কালোবউ পর্ব-১৮+১৯

0
1356

🖤#কালোবউ🖤
লেখিকাঃ Tahmina Toma
পর্বঃ ১৮

আকাশঃ মা আগামীকাল বাড়িতে পার্টি আছে।

মাঃ কীসের পার্টি??

আকাশঃ কীসের পার্টি মানে?? বাবা যে পার্টি দিতো এওয়ার্ড ফাংশনের পরে সেই পার্টি।

মাঃ ওহ্ ঠিক আছে।

চাঁদঃ ওয়াও পার্টি???? কতদিন পর আবার পার্টি।

আকাশঃ কাল আর এ কলেজ যাবে না।

চাঁদঃ না,,,, যাবো তো,,,,, ফ্রেন্ডদের ইনভাইট করে চলে আসবো।

মাঃ মেঘলা তুইও তোর ফ্রেন্ডদের ইনভাইট করে আছিস। তোর বাড়ির সবাইকে আমি বলছি।

মেঘলাঃ কিন্তু মা,,,,,,,,,,,,

মাঃ কিন্তু কী আবার??

মেঘলাঃ কিছু না,,,,,,(খেয়ে সবাই যে যার রুমে চলে এলাম। সজীবকে বললে যদি আবার কোন ঝামেলা করে। আবার শুধু লিজাকে বললেও জানলে ঝামেলা করবে)

আকাশঃ কী ভাবছো??

মেঘলাঃ (উনাকে সজীবের কথা বলবো?? না না থাক আবার ওল্টো বুঝবে) কিছু না।

আকাশঃ তাহলে দাঁড়িয়ে আছো কেন?? ঘুমিয়ে পড়ো।

মেঘলাঃ হুমম,,,(সোফায় শুয়ে পড়লাম। উনিও বেডে শুয়ে পড়েছে। সকালটা প্রতিদিনের মতোই আযান শুনে শুরু হলো। আজকেও উনাকে ডেকে তুলতে হলো।)

আকাশঃ (প্রতিদিন একই সময় একই স্বপ্ন কেন দেখছি আমি?? কেন??)

মেঘলাঃ (ব্রেকফাস্ট করে যে যার কাজে চলে এলাম। সকাল থেকে বাড়ি সাজানো শুরু হয়ে গেছে)

চাঁদঃ ভাবি আগে আমার কলেজে চলো। ফ্রেন্ডদের বলেই চলে আসবো। তারপর তোমার সাথে তোমার ভার্সিটি যাবো।

মেঘলাঃ আচ্ছা ঠিক আছে।(চাঁদের কলেজে ওর ফ্রেন্ডদের ইনভাইট করে ভার্সিটি এসে লিজাকে ফোন দিলাম।) কোথায় তুই??

লিজাঃ বকুলতলায়,,, তুই??

মেঘলাঃ গেটের সামনে,,, (আসে পাশের ছেলেগুলো চাঁদের দিকে কেমন করে তাকিয়ে আছে) তুই বস আমি আসছি।

লিজাঃ ওকে

মেঘলাঃ (চাঁদকে নিয়ে বকুলতলায় গেলাম।) কেমন আছিস??

লিজাঃ এইতো,,, সাথে এই পিচ্চি পরী কে রে??

মেঘলাঃ ওর নামই চাঁদ,,,,

লিজাঃ ওয়াও এই পিচ্চিতো অনেক কিউট।

চাঁদঃ আমি একদম পিচ্চি না। ইন্টার ১ম বর্ষে পড়ি(গাল ফুলিয়ে)

লিজাঃ ও মা গাল ফুলিয়ে আরো কিউট লাগছে।

মেঘলাঃ হয়েছে তোর আর বলতে হবে না। সন্ধ্যায় বাসায় পার্টি আছে চলে আছিস।

লিজাঃ না রে ইয়ার তুই তো আব্বু কে চিনিস,, যেতে দেবে না।

মেঘলাঃ আমি আঙ্কেলের সাথে কথা বলে এসেছি আসার সময়। আঙ্কেল রাজি হয়েছে(মুচকি হেসে)

লিজাঃ সত্যি,,,,,,,,,,,,,,,

মেঘলাঃ হুম সত্যি,,, বিকেলের মধ্যে চলে আসবি।

লিজাঃ ওক্কে বেবী।

সজীবঃ আরে মেঘলা কখন এলি?? সাথে কে,,,,,,(মেয়েটার দিকে তাকিয়ে কথা বন্ধ হয়ে গেছে। এতো কিউট একদম ছোট্ট পরী। অনেক আটা ময়দা সুন্দরী দেখছি এমন ন্যাচারাল বিউটি দেখিনি। কে এই মেয়ে??)

মেঘলাঃ এইতো এখনই এসেছি?? সাথে আমার ননদ চাঁদনি।

সজীবঃ চেহারার সাথে নামের মিল আছে,,,,এতো চাঁদনী নয় পুরো চাঁদটাই(বিরবির করে)

মেঘলাঃ কিছু বললি,,?

সজীবঃ ক,,কই নাতো?? তা হঠাৎ ওকে নিয়ে এলি সাথে??

মেঘলাঃ ক্লাস করবো না শুধু তোদের ইনভাইট করতে এসেছি।

সজীবঃ ক,,,,কিসের ইনভাইট( এর বিয়ে নয়তো?? না না এই প্রথম সজীব মির্জার কাউকে দেখে প্রথম ভালোবাসার অনুভূতি নাড়া দিয়েছে এভাবে হারাতে পারে না। আর এত পিচ্চির বিয়ে হয় কীভাবে??)

মেঘলাঃ এমনি একটা পার্টি আছে বাসায়। সন্ধ্যায় চলে আছিস।

সজীবঃ(এতো মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। বাট বাড়িতে কেউ বললো না কেন ইনভাইটেশন আছে?? সবার মুডও কেমন গম্ভীর বাড়িতে। তাতে আমার কী?? আকাশ চৌধুরীর বোন এতো সুন্দর জানাই ছিলো না।) ওকে চলে আসবো।

মেঘলাঃ ( ভার্সিটি থেকে চাঁদ শপিংমলে নিয়ে গেলো। দুজনে কিছু কেনাকাটা করে বাসায় চলে এলাম। বাসায় এসে দেখি বাবা- মা চলে এসেছে। ড্রয়িংরুমের সোফায় বসে আছে। দৌঁড়ে গিয়ে জরিয়ে ধরে কান্না করে দিলাম।) মা,,,

মেঘলার মাঃ আরে পাগলি কাঁদছিস কেন??

মেঘলাঃ কতদিন পর তোমাদের দেখলাম (আব্বাকে জড়িয়ে ধরে)

আব্বাঃ পাগলি একটা তাই এভাবে কাঁদতে হয়??

মেঘলাঃ ভাই কোথায়?

আব্বাঃ সন্ধ্যার আগে চলে আসবে। ওর অফিস আছে তো।

মেঘলাঃ আচ্ছা,,,,,,, তোমরা খেয়েছো???

আকাশের মাঃ না কিছু খেতে দেয়নি,,, তোর জন্য বসিয়ে রেখেছি।

মেঘলাঃ আমি তাই বললাম নাকি??(মাথা নিচু করে)

চাঁদঃ আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল-আন্টি,,, কেমন আছেন আপনারা ??

আব্বাঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম মা ভালো আছি।

মেঘলার মাঃ তুমি কেমন আছো??

চাঁদঃ আমি ভালো আছি।

আকাশের মাঃ তোরা যা ফ্রেস হয়ে নে।

মেঘলাঃ মা-আব্বা তোমরা বসে গল্প করো। আমি আসছি।

আব্বাঃ আচ্ছা যা,,,

মেঘলাঃ (রুমে এসে তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে নিচে গেলাম আবার। গল্প করতে লাগলাম মা আর আব্বার সাথে। লান্সের আগে উনি চলে এলেন। আমরা সবাই তখন ড্রয়িংরুমে গল্প করছি)

আকাশঃ(বাসায় এসে দেখি মেঘলার বাবা-মা চলে এসেছে) আসসালামু আলাইকুম বাবা-মা,,,,কেমন আছেন??

আব্বাঃ ওয়ালাইকুম আসসালম আমরা ভালো আছি বাবা তুমি কেমন আছো??

আকাশঃ ভালো আছি,, আচ্ছা আপনারা বসুন আমি ফ্রেস হয়ে আসছি। মেঘলা একটু এসো তো দরকার আছে।

মেঘলাঃ(চোখ বড়বড় করে তাকালাম। এর আবার কী হলো??)

আকাশঃ কী হলো আসো??

মেঘলার মাঃ তুই এখনো বসে আছিস কেন?? জামাই বাবাজী ডাকছে তো (বিরবির করে)

মেঘলাঃ হুম,,, আসছি(যতসব ঢং,,,এমনি ভালো করে কথা বলে না এখন সবার সামনে লজ্জায় ফেললো)

আকাশঃ (রুমে এসে ড্রেসিংটেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে টাই খুলছি আর মেঘলা দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আমার দিকে চোখ ছোটছোট করে তাকিয়ে আছে।) হোয়াট??

মেঘলাঃ আমাকে ডেকে আনলেন কেন??

আকাশঃ বাহ্ বেশ ভালো,,, বাবা-মাকে দেখে গলার স্বর চেঞ্জ হয়ে গেছে।

মেঘলাঃ ক,,,কই,,,,,, আমি জিজ্ঞেস করলাম ডাকলেন কেন??

আকাশঃ( শার্টের বোতাম খুলতে খুলতে বললাম) ডেকে এনেছি যাতে তোমার মা-বাবা মনে করে আমি তোমাকে চোখে হারায়। (মুচকি হেঁসে)

মেঘলাঃ (কতবড় বদমাশ লোক) আপনি একটা রাক্ষস, ডেভিল, জিরাফ, গন্ডার, হাতি, গরু, মহিষ, তেলাপোকা, টিকটিকি, এনাকন্ডা, পঁচা ডিম, পঁচা আলো, পঁচা কুমড়া, সাতদিনের বাসি করলার তরকারি আর,,,,,

আকাশঃ আর (কী অদ্ভুত সব কথা না না এগুলোতো গালি দিচ্ছে তাও এমন অদ্ভুত। রাগ করার বদলে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। এটা কী মেঘলা?? নাকি অন্য কেউ?? যে আমার সামনে কথা বলতে তোতলায় সে আমাকে এসব বলছে?? আমি শকড হয়ে গেছি। ওর সামনে এসে দাড়ালাম) আর কী??

মেঘলাঃ আর,,, আর,,,,, এখন মনে পড়ছে না। সব কিছুর একটা লিমিট আছে। আপনি আমার সাথে কী শুরু করেছেন?? যা ইচ্ছে বলবেন যা ইচ্ছে করবেন। আমি কী খেলনা পুতুল?? যদি যোগ্য মনে না হয় বিয়ে কেন করেছেন??

আকাশঃ এত রাগ,,,??(আজ কেন জানি না ওর কথায় রাগ হচ্ছে না ভালো লাগছে। এতদিন মনে হয়েছে মাটির পুতুল বিয়ে করেছি। ভেঙে ফেললেও কিছু বলবে না। এমন মানুষ ভালোলাগে বলেন??) আমার ইচ্ছে হয়েছে তাই করেছি।

মেঘলাঃ আবার ইচ্ছে হলে তাড়িয়েও দেবেন। আপনি তাড়িয়ে দিলে সমাজের কথা আর সয্য করতে পারবো না আমি। মরা ছাড়া উপায় থাকবে না।

আকাশঃ মেঘলা,,,,,,,,(শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। ওকে হারানোর কথা ভাবতেও আমার দম বন্ধ হয়ে আসে)

মেঘলাঃ (উনি জড়িয়ে ধরায় আমার হুঁশ ফিরলো। রাগের মাথায় আজ কীসব বলে দিয়েছি। এখন ভয়ে দম বন্ধ হয়ে আসছে। কী আছে কপালে আল্লাহ জানে??)

চলবে,,,,,

🖤#কালোবউ🖤
লেখিকাঃTahmina Toma
পর্বঃ১৯

মেঘলাঃ (উনি জড়িয়ে ধরায় আমার হুঁশ ফিরলো। রাগের মাথায় আজ কীসব বলে দিয়েছি। এখন ভয়ে দম বন্ধ হয়ে আসছে। কী আছে কপালে আল্লাহ জানে??)

আকাশঃ (অনেক সময় হয়ে গেছে মেঘলা আমার বুকে মাথা রেখে চুপচাপ আছে৷ এভাবে জড়িয়ে ধরে আমিও এখন অস্বস্তিতে পরে গেছি। কী বলবো এখন?) আমি ওয়াশরুম থেকে আসছি,,,,,(ওকে সরিয়ে তাড়াতাড়ি ওয়াশরুমে চলে গেলাম)

মেঘলাঃ( চুপচাপ বসে আছি সোফায়। আজ আমার কী হয়েছিলো?? এত সাহস কোথায় পেলাম?? আর উনারই বা কী হয়েছিলো?? একটুও রাগ করলো না উল্টো জড়িয়ে ধরলো??)

সন্ধ্যায়

চাঁদঃ ভাঁবি দেখো আবার সব এক এনেছে ভাইয়া?? তোমার গ্রাউনটা ব্লাক আমারটা আবার হোয়াইট। ভাইয়া আমার জন্য সবসময় হোয়াইট আনে।(মন খারাপ করে)

মেঘলাঃ কারণ তোমাকে হোয়াইট ড্রেসে সবসময় এঞ্জেল লাগে। (মিষ্টি হেঁসে) আর তোমার ভাইয়ার মনে হয়ে ব্লাক হোয়াইট আর ব্লু কালার ছাড়া কোন কালার চোখে পড়ে না। এখন তাড়াতাড়ি রেডি হও।আবার তোমার ভাইয়া রাগ করবে। আর ভাই আসবে,,, কবে থেকে ভাইয়ের সাথে কথা বলি না। তাড়াতাড়ি করো না।

চাঁদঃ মাহিন ভাইয়া আসবে কখন (মন খারাপ করে)

মেঘলাঃ আব্বা তো বলেছিলো সন্ধ্যায় তাড়াতাড়ি চলে আসবে।

চাঁদঃ ওহ্ (জানি না কেন মাহিন ভাইয়া সবসময় আমাকে এড়িয়ে চলে? সবার সাথে কী সুন্দর করে কথা বলে। কিন্তু আমাকে দেখলেই সেখান থেকে চলে যায়। কী করেছি আমি?? উনার সাথে আমি খারাপ ব্যবহার করিনিতো কখনো,,,তাহলে এমন কেন করে?? মাহিন ভাইয়াকে যে আমার অনেক ভালো লাগে।)

মেঘলাঃ কী হলো চাঁদ??

চাঁদঃ কিছু না (জোর করে হেঁসে)

মেঘলাঃ ( আমি আর চাঁদ রেডি হয়ে নিলাম।) চাঁদ হিজাব??

চাঁদঃ আরে ভাবি আমরাতো বাড়িতেই আছি। হিজাব পড়বো না।

মেঘলাঃ কিন্তু,,,,,

চাঁদঃ কিছু হবে না,,,,,চলো,,

মেঘলাঃ (গার্ডেনে আছে সবাই। আমরাও সেদিকে গেলাম)

আকাশঃ (গেস্ট সব প্রায় এসে পড়েছে। এই দুই মহারানীর এখনো আশার সময় হয়নি। সবাই জিজ্ঞেস করছে মিসেস চৌধুরী কোথায়?? বাসার দিকে তাকাতেই আমি হা করে আছি। মেঘলাকে কালো গ্রাউনে এতো সুন্দর লাগতে পারে আমি কল্পনাও করতে পারিনি।ব্লাক গ্রাউন, ব্লাক ডায়মন্ডের জুয়েলারি, মুখে হালকা মেকআপ, চোখে গাড় কাজল, ঠোঁটে হালকা গোলাপি লিপস্টিক, লম্বা চুলগুলো ছেড়ে দেওয়া,,,,, চোখ ফেরানো দায়। চাঁদটাকেও এঞ্জেল লাগছে সব সময়ের মতো)

মেঘলাঃ (সামনে তাকাতেই আকাশের দিকে চোখ গেলো। ব্লু শার্টের উপর ব্লাক ব্লেজার, ব্লাক প্যান্ট, ব্লাক শো, হাতে রিচ ওয়াচ, চুলে হয়তো জেল দেয়নি,,,ঘন সিল্কি চুলগুলো হালকা উড়ছে, কপালে কিছু চুল পড়ে, চুলগুলো হাত দিয়ে একবার পিছনে দিলো,,,,, সত্যি প্রত্যেক মেয়ের স্বপ্নের রাজকুমার হয়তো আকাশের মতোই। আমি সত্যি লাকী তাই এমন হাসবেন্ড পেয়েছি। ভালোবাসা নাহয় নাই পেলাম। সবার ভাগ্যেতো আর ভালোবাসা থাকে না।)

চাঁদঃ কী হলো ভাবি দাঁড়িয়ে গেলে কেন?? চলো,,,,,

মেঘলাঃ হুম চলো,,,,,

আকাশঃ (চোখ সরিয়ে নিলাম ওর থেকে। আবার গেস্টদের সাথে কথা বলতে শুরু করলাম।)

মেঘলাঃ (আব্বা-মার কাছে গেলাম। তাদেরও চেনা যাচ্ছে না। আব্বা দামী প্যান্ট-শার্ট ব্লেজার পরেছে। মা আর আমার শাশুড়ি মা একই শাড়ি পরেছে শুধু কালার ভিন্ন। গেস্টদের সাথে কথা বলছে সবাই।) তোমাদের সবাইকে অনেক কিউট লাগছে।

শাশুড়ী মাঃ এই বুড়ো বয়সে কিউট। কী যে বলে না বেয়াইন আপনার মেয়ে??

মাঃ হুম,,,,, ঠিক বলেছেন।

মেঘলাঃ বুঝলে চাঁদ সত্যি কথার দাম নেই এই জামানায়।

চাঁদঃ ঠিক বলেছো ভাবি।

শাশুড়ী মাঃ দুটোই বড্ড দুষ্টু। কিন্তু আমার মা দুটোকে পরী লাগছে একদম।

মাহিনঃ আর আমাদের কেমন লাগছে আন্টি??

মেঘলাঃ (সবাই পিছনে তাকিয়ে দেখি ভাই আর উনি দাঁড়িয়ে আছে। ভাইকে জড়িয়ে ধরলাম) ভাই,,,,,

মাহিনঃ কেমন আছিস পেত্নী?? (ভার গলায়)

মেঘলাঃ তোর সাথে ঝগড়া না করে ভালো থাকতে পারি নাকি?? তুই কেমন আছিস??

মাহিনঃ তোর চুল না ছিড়ে, রিমোট নিয়ে মারামারি না করে কেমন থাকতে পারি?? তোকে ছাড়া বাড়িতে ভালো লাগে নারে পেত্নী। তাই বাড়িতে বেশী থাকি না এখন ফ্রী থাকলে ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দেই।

মেঘলাঃ (ভাইয়ের সাথে আমার ভালোবাসার থেকে মারামারির সম্পর্ক বেশী) জানি জানি কেমন ভালো লাগে না। এতদিনে একবার কেউ দেখতে এসেছিস। বাড়ি থেকে তাড়িয়ে বেঁচে গেছিস। এখন পৃথিবী থেকে বিদায় নিলে সবাই বেঁচে যায়(আকাশের দিকে তাকিয়ে)

সবাই একসাথেঃ মেঘলা,,,,,,

মাহিনঃ এসব কেমন কথা মেঘ?? নতুন চাকরি ছুটি পাওয়া যায় নাকি।

মেঘলাঃ(আকাশ আমার দিকে এমন করে তাকিয়ে আছে যেন চোখ দিয়ে গিলে নেবে)

আকাশঃ(এই মেয়ের মুখে ভালো কথা আসে না)

চাঁদঃ(মাহিন ভাইয়াকে আজ অনেক হান্ডসাম লাগছে। ড্রেসও আমার সাথে মিলে গেছে। হোয়াইট শার্ট, হোয়াইট প্যান্ট, হোয়াইট ব্লেজার। ড্রেসআপ পুরো ভাইয়ার মতোই শুধু কালার চেঞ্জ। কিন্তু আমায় যেন দেখতেই পায়নি এমন ভাব করছে)

মাহিনঃ (পিচ্চিটাকে আজকেও পরীর মতো লাগছে,,, পুরো হোয়াইট এঞ্জেল। এভাবে কেন তাকাও পিচ্চি?? আমার মন যে পাথর দিয়ে তৈরি নয়। কতক্ষণ শক্ত করে রাখবো। আমি যে তোমার যোগ্য নই। তুমি বড়লোক বাবা আর ভাইয়ের আদরের দুলালী। সেখানে আমি গরীর বাবার একটা ছোট চাকরি করা ছেলে। তোমার ভাই কোনদিন মেনে নেবে না। বরং আমার বোনের সংসারে অশান্তি হবে যা আমি কোনদিন হতে দেবো না) কেমন আছেন আন্টি??

আকাশের মাঃ হ্যাঁ বাবা ভালো,,, তুমি কেমন আছো??

মাহিনঃ জী আন্টি ভালো?? পিচ্চি কেমন আছো??(চাঁদের দিকে তাকিয়ে)

চাঁদঃ জী ভাইয়া ভালো।(আসছে আমি নাকি পিচ্চি?? আপনি পিচ্চি আপনার বউ পিচ্চি,,,, না না বউতো আমি হবো(লজ্জা পেয়ে) আর আমি পিচ্চি না।)

আকাশের মাঃ তোমরা যাও নিজেদের মতো এনজয় করো।

আকাশঃ মাহিন চলো ওদিকটায় যাই।

মাহিনঃ ওকে ভাইয়া,,,,

মেঘলাঃ চাঁদ চলো দেখি লিজা এসেছে কিনা?? ডাইনিটাকে বিকেলে আসতে বলছি এখনো নাম নেই আসার।

রুপঃ মেঘমনি,,,,,,,,

মেঘলাঃ আপু,,,,,,

সজীবঃ হাই চাঁদ,,,,

চাঁদঃ 🙄 হাই ভাইয়া,,,,,,,,

মেঘলাঃ সজীব তুই,,,

রুপঃ তুই সজীবকে চিনিস??

মেঘলাঃ হুম ও আর আমি এক সাথেই পড়ি। তুমি ওকে চেনো??

রুপঃ রবিনের ছোট ভাই সজীব আমার দেবর।

মেঘলাঃ ওহ্

আকাশঃ আরে মিসেস মির্জা যে,,, তা মিস্টার রবিন মির্জা কোথায়??

রুপঃ ওর একটু কাজ আছে তাই আসেনি।

আকাশঃ কাজ আছে নাকি নিজের হার মানতে কষ্ট হচ্ছে,,,,,

রুপঃ তেমন কিছু না,,,

চাঁদঃ(এদের ফালতু কথাবারতা শোনার কোন মানেই হয় না। অন্যদিকে চলে এলাম। গেটের দিকে তাকিয়ে দেখি লিজা আপু আর মাহিন ভাইয়া কথা বলছে)

মাহিনঃ কেমন আছো লিজা??

লিজাঃ আমি ভালো আছি ভাইয়া,,, আপনি কেমন আছেন??

মাহিনঃ ভালো,,, তোমাকে মনে হয় মে,,,,,,

চাঁদঃ আপু ভাবি তোমাকে খুঁজছে।

মাহিনঃ আমিও সেটাই বলতে চাইছিলাম।

লিজাঃ মেঘ কোথায়??

চাঁদঃ সুইমিংপুলের দিকে আছে,,সজীব ভাইয়া আর রুপ আপুও।

লিজাঃ ওকে আমি যাচ্ছি(যেতে যেতে)

মাহিনঃ রুপ আপু এসেছে??

চাঁদঃ হুম,,,,,

মাহিনঃ তুমি থাকো আমি দেখা করে আসি,,,,,

চাঁদঃ ভাইয়া আপনার সাথে আমার কথা আছে,,

মাহিনঃ কী কথা পিচ্চি??

চাঁদঃ আমাকে আপনার কোন দিক থেকে পিচ্চি মনে হয়?? (একটু সিরিয়াস মুড নিয়ে দাঁড়িয়ে)

মাহিনঃ ও,,,ওকে পিচ্চি বলবো না। কী কথা আছে বলো??

চাঁদঃ আচ্ছা আমাকে ভালো করে দেখে বলুনতো আমি কী দেখতে খুব পঁচা(ঘুরে দেখিয়ে)

মাহিনঃ পঁচা হবে কেন?? তুমিতো পরীর মতো দেখতে। যে কোন ছেলে একবার দেখলেই তোমার প্রেমে পড়ে যাবে।

চাঁদঃ তাহলে আপনি প্রেমে পড়েননি কেন?? আপনি আমাকে এড়িয়ে চলেন কেন??

মাহিনঃ এসব কী বলছো তুমি চাঁদ?? তোমার কী মাথা খারাপ হয়ে গেছে??

চাঁদঃ আপনি সত্যি বুঝতে পারছেন না আমি কী বলছি?? আপনি বুঝতে পারেন না আমি কী বলতে চাই??

মাহিনঃ তুমি পাগল হয়ে গেছো। আবোল তাবোল বলছো।(এখান থেকে চলে যেতে লাগলাম)

চাঁদঃ (পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম) আপনি কেন বুঝতে চাইছেন না আমি আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি। আপনি যখন লিজা আপু সাথে হেঁসে কথা বলছিলেন আমার মনে হচ্ছিল আমি আপনাকে হারিয়ে ফেলবো। তাই মনের কথা বলে দিলাম

মাহিনঃ (আমি জমে বরফ হয়ে গেছি। শরীরে এক বিন্দু শক্তি নেই মনে হচ্ছে। তবু নিজেকে সামলে চাঁদের হাত ধরে সামনে নিয়ে দাঁড় করালাম) চাঁদ আমাদের পরিচয় মাত্র ১ মাসের মতো। তুমি আমাকে দেখেছো ৪-৫ বার। এটা ভালোবাসা না চাঁদ এটা ভালোলাগা যা কিছু দিন পরই কেটে যাবে। আর তুমি আমাকে না আমার থেকে কয়েকগুণ বেশি ভালো কাউকে ডিজার্ভ করো। তাই এসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলো। সময় হলে অনেক ভালো ছেলের সাথে তোমার বিয়ে দেবো(মিষ্টি হেঁসে মাথায় হাত বুলিয়ে চলে এলাম। আকাশ ভাইয়া এসব জানলে গন্ডগোল হয়ে যাবে। আর কখনো তোমার সামনেই আসবো না। তাহলে আমিও দূর্বল হয়ে যাবো)

চাঁদঃ আপনি আমাকে চেনেন না মিস্টার মাহিন হাসান। ছোটবেলা থেকে যখন যা চেয়েছি তাই পেয়েছি। আপনাকেও আমার চাই সেটা যেভাবেই হোক না কেন??

সজীবঃ( আমিও ছোটবেলা থেকে যা চেয়েছি তাই পেয়েছি। আর মেয়েদের না চাইতেও পেয়েছি। এই প্রথম কোন মেয়েকে ভালোবেসে বিয়ে করার স্বপ্ন দেখেছিলাম। কিন্তু তার মনে অন্যকারো বসবাস কীভাবে মানবো?? আমি ভালো না থাকলে তোমাদের কাউকে ভালো থাকতে দেবো না। মিসেস আকাশ চৌধুরী আমাকে সবার সামনে ছোট বানিয়ে সুখে সংসার করবে আমি বসে বসে দেখবো। মাহিন হাসান আমার ভালোবাসা কেরে ভালো থাকবে?? লাস্ট মিস চাঁদনি চৌধুরী আমার মন ভাঙার শাস্তি পেতে হবে তোমায়। তোমাদের জীবন আমি নরক করে ছাড়বো। ,,,,,,,,,,,,, রুপ ভাবি আকাশ চৌধুরী আর মেঘলার সাথে কথা বলছে সেই সুযোগে চাঁদনির সাথে কথা বলার জন্য ওর পিছনে এসেছিলাম। এখানে এসে এসব জানতে পারবো ভাবতেই পারিনি। চাঁদকে প্রথম দেখেই ভালোবেসে ফেলেছি। মন ভাঙার কষ্ট আজ বুঝতে পারছি। চোখ মুছে চলে এলাম সেখান থেকে)

আকাশঃ কী ব্যাপার সবাই এসে গেছে আবিদ খান এখনো এলো না??

আবিদঃ আকাশ,,,,, এসে পড়েছি।

আকাশঃ অসংখ্য ধন্যবাদ আমিতো ভাবলাম আসবেন না।

আবিদঃ তোমার বাবা আমার বন্ধু ছিলো আর তুমি আমাকে এতো রিকোয়েস্ট করলে আসবো না??

আকাশঃ ধন্যবাদ আঙ্কেল,,, মেঘলা এদিকে এসো।

মেঘলাঃ (রুপ আপু, লিজা আর আমি গল্প করছিলাম তখনই উনি ডাকলেন। পিছনে ফিরে আমার চোখ কপালে অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠলাম) মামা,,,,

আকাশঃ আবিদ আঙ্কেল এ হচ্ছে আমার ওয়াইফ মেঘলা মনি। আর মেঘলা উনি আমার বাবার বন্ধু মিস্টার আবিদ খান।

রুপঃ(আবিদ খান নামটা শুনে পেছনে ফিরলাম। আজ তিন বছর পর এই মুখটা দেখলাম। কত শুকিয়ে গেছে,,, চেহারায় সেই রাগি ভাব নেই। আজ চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করছে তোমাকে কষ্ট দিয়ে আমিও ভালো নেই বাবা)

মেঘলার মাঃ মেঘলা একটু শোন মাহিন নাকি,,,,,,,,,,,,,,,,,, (মাহিন বলছে ওর কাজ পড়ে গেছে চলে যাবে তাই মেঘলাকে বলতে এসেছিলাম। এখানে এসে এই মুখটা দেখবো কল্পনাও করতে পারিনি। ২৫ টা বছর পর এই মুখটা দেখলাম। চুল দাড়ি পেকেছে, গায়ের চামড়া কুচকে গেছে, চেহারার সেই রাগি মানুষের ছাপটা নেই। কত পরিবর্তন হয়ে গেছে ভাইয়া) ভাইয়া,,,,,

আবিদঃ আবিদা,,,,,,,,,,,,, রুপ,,,,,

চলবে,,,,,,,,,,