#গোধূলি_বেলায়_প্রেম
#ফাবিহা_নওশীন
|পর্ব-৩৪|
“আপনার কি মনে হচ্ছে আমি বসতে এসেছি?এতকিছুর পরেও আমি এখানে আপনাদের সাথে বসে খোশগল্প করবো?আমি শুধু একটা কথা বলতে এসেছি।দুদিনের মধ্যে বাসা ছেড়ে দিবেন।আর আপনার মেয়েকে বলবেন আমার ছেলের পেছন ছেড়ে দিতে।আর সবচেয়ে ভালো হয় যদি আপনার মেয়ের দ্রুত অনত্র বিয়ে দিয়ে দিন।”
সাদিবের বাবা একনাগাড়ে কথাগুলো ভারী কন্ঠে বললো।
সবগুলো কথা ভালো লাগলেও রীতির বাবার শেষের কথাটা ভালো লাগলোনা।নিজের মেয়ের বিয়ে দেবো বাড়িওয়ালার কথায়।
—-“আপনি এই বাড়ির মালিক তাই এই বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে বলার অধিকার আপনার আছে।কিন্তু আমার মেয়ের বিয়ে দেবো কিনা দেবোনা সেটা বলার বিন্দুমাত্র অধিকার আপনার নেই।”
সাদিবের বাবা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বললো,
—-“সেই!! মেয়েকে তো আমার ছেলের গলায় ঝুলাতে চান।অবশ্য এমন ছেলে কে হাতছাড়া করতে চায়?তাই তো চেষ্টা করে গেছেন।কিন্তু আমি থাকতে কিছুতেই সে স্বপ্ন পূরণ হবেনা।আমার ছেলে বোকা হতে পারে কিন্তু আমি না।(রীতির দিকে তাকিয়ে বললো)তুমি দেখতে সহজ সরল হলেও বেশ ধুরন্ধর কিসিমের মেয়ে।আমার ছেলেকে ফাসিয়ে নিলে?আর কাউকে চোখে পড়লো না?”
রীতি সাদিবের বাবার কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলো।যেনো সব অপরাধ ওর।আর ওর বাবাকেও কথা শোনাচ্ছে।
রীতির বাবা মেয়ের অপমান সহ্য করতে পারছেনা।
—-“দেখুন ভাই সাহেব আপনার যদি মনে হয় ওরা ভুল করেছে তবে সেটা শোধরানো চেষ্টা করা উচিৎ।আমার মনে হয়েছে ওরা ভুল করেছে তাই আমি শুধরানোর চেষ্টা করছি।আর আপনি সেটা না করে আমার মেয়েকে দোষারোপ করছেন?অন্যায় বা ভুল যেটাই হোক ওরা দুজনেই করেছে তাই একার আমার মেয়েকে আপনি কথা শুনাতে পারেন না।”
সাদিবের বাবা বললো,
—-“আমার ছেলে কতটা সরল মনের,কতটা উদার মনের সেটা এই বাড়ির মানুষই না পুরো মহল্লা জানে।আর সেই সুযোগ আপনার মেয়ে কাজে লাগিয়েছে।এক বাড়িতে থেকে বিভিন্ন ভাবে আমার ছেলের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে।আমি কিছু বুঝি না মনে করেছেন?আর আপনার মেয়ের সাহস আপনারা যুগিয়েছেন।ছিহ!কত নিচ লোক আপনারা? ”
রীতির মা আর রিমন ততক্ষণে সেখানে এসে দাড়িয়েছে।সাদিবের বাবার কথা শুনে ওরা নির্বাক।রীতি মাথা নিচু করে চুপ করে আছে।সাদিবের বাবার মানসিকতা এতটা নিচ সেটা জানা ছিলো না।জানতো দাম্ভিক লোক কিন্তু চিন্তাধারা এতোটা নিম্নমানের সেটা জানতোনা।রীতির বাবাকে কন্টিনিউসলি অপমান করে যাচ্ছে।রীতি নিজের অপমান চুপচাপ হজম করলেও বাবার অপমান মেনে নিতে পারছেনা।আর বাবার সামনে দাড়িয়ে বড়দের সাথে বেয়াদবিও করতে পারছেনা।নয়তো জবাব দিয়ে দিতো।
রীতির বাবা বললো,
—-“আমার আপনার মতো কোটি কোটি টাকা নাও থাকতে পারে কিন্তু আমার কাছে আমার শিক্ষা,আমার মূল্যবোধ,আমার আদর্শ আছে।এগুলোই আমার সম্পদ।আমি আমার মেয়েকে যথেষ্ট ভালো শিক্ষা দিয়েছি।মানছি ও ভুল করে ফেলেছে আপনার মতো অহংকারী লোকের ছেলেকে ভালোবেসে।কিন্তু ওকে আমরা কোনো ভুল শিক্ষা দেইনি।আর না বলেছি আপনার ছেলেকে ভালোবাসতে।তাই এই ধরনের বানোয়াট কথা বলবেন না।”
সাদিবের বাবা উচ্চস্বরে বললো,
—-“শিক্ষা নিয়ে এতো অহংকার?হুম মেয়েকে কি শিক্ষা দিয়েছেন?বড়লোক ছেলেকে পটানোর?কিভাবে ছেলে পটাতে হয় সেই শিক্ষা দিয়েছেন।আবার শিক্ষা নিয়ে বড়বড় কথা বলছেন?”
রীতি সাদিবের বাবার চিতকারে কেপে উঠলো।অফিস টাইম সবাই অফিসে যাবে।সাদিবের বাবার চিতকার শুনে বিল্ডিংয়ের দু-চার জন জড়ো হয়েছে।তারা দূরে দাড়িয়ে আছে।দিয়ার বাবাও দাড়িয়ে আছেন।দিয়া সকাল সকাল প্রাইভেট পড়তে গিয়েছে।সেখান থেকে সোজা ভার্সিটি যাবে।তাই বাড়িতে নেই।
রীতির বাবা বিস্ময় নিয়ে সাদিবের বাবার দিকে তাকিয়ে আছে।তারপর রীতিকে বললো,
—-“দেখ,কোন মানুষের ছেলেকে ভালোবেসেছিস?আমি নাকি তোকে ছেলে পটানোর শিক্ষা দিয়েছি?তুই এই জায়গায় এনে আমাকে দাড় করালি?এতোগুলা মানুষের সামনে আমাকে কিভাবে অপমান করছে।”
রীতি নীরবে চোখের পানি বিসর্জন দিচ্ছে।
সাদিবের বাবা তাচ্ছিল্য করে বললো,
—-“কি আমার পাতি স্কুল মাষ্টার তার আবার সম্মান? মান-সম্মান থাকলে এই কেলেংকারী করতেন?”
রীতির বাবা আশেপাশের মানুষকে দেখে বললো,
—-“দেখুন আপনি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছেন।এভাবে সিনক্রিয়েট করার অধিকার আপনার নেই।আপনার বাড়ি বলে আপনি যা খুশি করতে পারেন না।আমি একজন শিক্ষক।এই সমাজে আমার একটা সম্মান আছে।সেটা নিয়ে ছেলে খেলা করতে পারেন না।”
সাদিবের বাবা আঙুল তুলে বললো,
—-“আমি কি করতে পারি সে সম্পর্কে আপনার কোনো ধারণা নেই।আমার সম্মান নিয়ে ছেলেখেলা করে নিজের সম্মান দেখাচ্ছেন।সামান্য স্কুল শিক্ষক হয়ে আকাশ ছোয়ার স্বপ্ন দেখছে।ভেবেছেন মেয়েকে আমার ছেলের গলায় ঝুলিয়ে দিয়ে এবাড়িতে ফ্রিতে থেকে যাবেন।হিসেব-নিকেশ তো ভালোই কষেছেন।”
রীতি আর সহ্য করতে না পেরে কাদতে কাদতে বললো,
—-“আংকেল অনেক হয়েছে।ব্যাস।যা অন্যায় করার আমি করেছি তাই যা বলার আমাকে বলুন।দয়া করে আমার বাবার সাথে এভাবে কথা বলবেন না।আমার বাবার থাকার জায়গার অভাব পড়েনি যে আপনার বাড়িতে থাকবে।”
সাদিবের বাবা গর্জে উঠে বললো,
—-“চুপ করো বেয়াদব মেয়ে।এইসব ড্রামা অন্য জায়গায় করবে।তোমাদের মতো মেয়েদের আমার চেনা আছে।”
রীতির বাবাও সমান তালে গর্জে উঠে বললো,
—-“তোমাদের মতো মেয়ে মানে?কি বলতে চান আপনি? ”
—-“থার্ডক্লাস মাইন্ডের চিপ মেয়ে।”
—-“আমার মেয়ে চিপ হলে আপনার ছেলে কি?দুধে ধোঁয়া তুলসীপাতা?কোথায় আপনার সেই গুনধর ছেলে?মায়ের আঁচলে মুখ লুকিয়ে বসে আছে কেনো?ডাকুন তাকে।”
—-“আমার ছেলে সামান্য স্কুল শিক্ষকের ছেলে নয়।যে রায়হান খানের ছেলে।সে বাড়িতে বসে বসে অন্যের টাকায় বড়লোক হওয়ার ফন্দি আটেনা।ও আপনার মতো লোভী নয়।তার যথেষ্ট কাজ আছে।যথেষ্ট ব্যস্ত সে।”
—-“আমরাও পরিশ্রম করে খাই।উপর তলায় বসে নিচতলার মানুষের রক্ত চুষে খাইনা।নিচতলার মানুষকে পায়ে পিষিনা।মানুষকে মানুষ মনে করি।আপনার মতো অমানুষ না।”
সাদিবের বাবা রাগে ফুসতে ফুসতে বললো,
—-“এতো বড় স্পর্ধা?আমার বাড়িতে দাঁড়িয়ে আমার মুখের উপর এতো বড় কথা?লোভী,ছোট লোক।”
রীতির বাবাও ক্ষেপে গেলো।
—-“কে ছোটলোক সেটা আপনার ব্যবহারেই বলে দিচ্ছে।”
সাদিবের বাবা রীতির বাবার কলার চেপে ধরে বললো,
—-“ব্যবহারের দেখেছেন কি?আপনি জানেন আমি আপনার কি হাল করতে পারি?ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিতে পারি রাস্তার লোক কোথাকার।কোথায় থেকে এসব এসে জুটেছে আমার বাড়িতে।”
রীতির মা এগিয়ে এসে স্বামীকে ছাড়ানোর চেষ্টা করছে।রীতি মুখে হাত দিয়ে পাথরের মতো দাড়িয়ে আছে।সাদিবের বাবার ওর বাবার কলার চেপে ধরেছে সেটা যেনো বিশ্বাসই করতে পারছেনা।
সাদিবের বাবা রীতির বাবার কলার ধরে ঝারা মারে।রীতির বাবা তাল সামলাতে না পেরে পড়ে যেতে নেয়।রীতির মা ধরে ফেলে।রীতির বাবা যেনো লজ্জায় অপমানে মরে যাচ্ছে।
সাদিবের বাবা আবারো উচ্চস্বরে বললো,
—-“লজ্জা থাকলে দুদিনের মধ্যে বাড়ি ছাড়বেন।নয়তো ঘাড় ধাক্কা মেরে বের করে দেবো।থার্ডক্লাশ জংলী লোক কোথাকার।”
সাদিবের বাবা রাগে গজগজ করতে করতে সিড়ি দিয়ে নেমে গেলো।রীতি আর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতে পারছেনা।দৌড়ে ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।চোখে পানি বাধ মানছেনা।চিতকার করে কাদছে।
“আজ আমার জন্য শুধুমাত্র আমার জন্য বাবাকে এইভাবে অপমানিত হতে হলো সবার সামনে।সবাই বাবাকে কত সম্মান করে আর সাদিবের বাবা একদিনেই আমার বাবার মাথা নিচু করে দিলো?সবার সামনে এইভাবে অপমান করতে পারলো?এর জন্য আমি দায়ী।আমি কি করে বাবার সামনে গিয়ে দাড়াবো?এতোটা অসম্মান বাবা কি করে মেনে বিবে?আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছে।এর আগে কেনো মরে গেলাম না?আমার মতো মেয়ের বেচে থাকার কোনো অধিকার নেই।”
রীতির বাবা একা একা বলছে,
—-“আমার বাবা একজন ছোটখাটো ব্যবসায়ী ছিলেন।অল্প শিক্ষিত ছিলো।তার স্বপ্ন ছিলো তার একমাত্র ছেলে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হবে।গনিতের শিক্ষক হবে।সবার সামনে গর্ব করে বলবেন তার ছেলে বড় মাষ্টার হয়েছেন।বাবা যা ইনকাম করেছেন আমার পেছনে খরচ করেছেন।নামীদামী স্কুল-কলেজে প্রচুর টাকা খরচ করে পড়িয়েছেন।আমিও তার স্বপ্ন পূরণ করেছি।মানুষের কাছে শিক্ষক হিসেবে অনেক সম্মান পেয়েছি।কোনো দিন কেউ আমাকে একটা কথা শোনাতে পারেনি।এখানে সেখানে,রাস্তাঘাটে সবাই আমাকে সালাম দিয়ে কথা বলতো আর আজ??
আজ আমার এতোটা অসম্মান হলো?এই দিন দেখার জন্য এতো পরিশ্রম করে ছেলে-মেয়েকে বড় করছি?”
রীতির মা কেদেই চলেছে কিছু বলে শান্তনাও দিতে পারছেনা।
.
রিমনের প্রচন্ড রাগ হচ্ছে।ইচ্ছে করছে গিয়ে ওই লোককে মার্ডার করে দিতে।
১১টা।পুরো বাড়িতে পিনপতন নীরবতা।মনে হচ্ছে কিছুক্ষণ আগে ধ্বংসাত্মক খেলা শেষে সবাই ভিষণ ক্লাস অথবা বিধ্বস্ত।
রীতির মা খাটের কোনায় হেলান দিয়ে আছে।
রীতির বাবা কাউকে ফোন করছে তারপর রীতির মায়ের সামনে এসে বললো,
—-“সব গুছিয়ে নেও।একঘন্টার মধ্যে ট্রাক চলে আসবে জিনিসপত্র নিতে।আমরা আজি বাড়িতে ফিরে যাচ্ছি।”
রীতির মা কোনো প্রশ্ন না করে চুপচাপ জিনিসপত্র গুছানো শুরু করে দিলো।
রীতি পড়ার টেবিলে বসে এক দৃষ্টিতে বাইরে আকাশের দিকে চেয়ে আছে।রীতির মা রীতির সামনে এসে বললো,
—-“জিনিসপত্র গুছিয়ে নেও।আজ আমরা এই বাড়ি ছেড়ে দিচ্ছি।এক ঘন্টার
মধ্যে ট্রাক চলে আসবে।”
রীতির মা কথাটা বলেই চলে গেলো।রীতির মা যেতেই রীতি উঠে দাড়ালো।লাগেজে এলোমেলো ভাবে জামাকাপড়,বইপত্র রাখছে।ও যেনো অনুভূতিশূন্য হয়ে গেছে।কোনো কিছুই অনুভব করতে পারছেনা।রোবটের মতো সব গুছিয়ে নিচ্ছে।
ঠিক এক ঘন্টা পরেই বাড়ির বাইরে দুটো ট্রাক আর একটা টেক্সি এসে দাড়ালো।রীতিদের অপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বাড়িতেই রয়ে গেছে।এখানে শুধু প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে এসেছে।তাই সব গোছাতে বেশি সময় লাগেনি।বাকিটা লোকদের সাহায্যে গুছিয়ে নিচ্ছে।একে একে সব জিনিসপত্র ট্রাকে তোলা হলো।
তিনটা নাগাদ ফ্ল্যাট প্রায় খালি হয়ে গেছে।এতোক্ষণে পুরো বিল্ডিংয়ের সবাই সবটা জেনে গেলেও সাদিবের সবটা এখনো অজানা।সকাল সকাল নতুন বাড়ির কাজ দেখাশোনা করতে বেড়িয়েছে বাবার কথা মতো।অনেক ব্যস্ত সে।
রীতি শেষ বারের মতো পুরো রুমটা দেখে নিলো।তারপর বারান্দায় গিয়ে দাড়ালো।বারান্দা থেকে নিচের দিকে চোখ রাখলো।এই বারান্দায় কতশত স্মৃতি রয়েছে।রীতির বেলি গাছের দিকে চোখ গেলো।রীতি বেলি গাছের টপটা নিতে চেয়েও নিলোনা।রীতির চোখ মুখ কেমন শক্ত হয়ে আছে।বুকের ভেতরটা ফেটে গেলেও চোখ দিয়ে এক বিন্দু পানি আসছেনা।
রীতি ধীর পায়ে সিড়ি দিয়ে নেমে যাচ্ছে।
আর উপর নিচ সবটা দেখছে।সকালেও সব ঠিক ছিলো কি থেকে কি হয়ে গেলো এক মুহুর্তে।
রীতি সাদিবের ফ্ল্যাটের সামনে এসে সাদিবের ফ্ল্যাটের দরজার দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে থেকে চোখ সরিয়ে নিলো।
তারপর দ্রুত পায়ে নিচে নেমে গেলো।তারপর চোখ গেলো সাদিবের বেলীফুলের গাছের দিকে।সেই বড় বকুল গাছটার দিকে আর কোনার দিকের আমগাছ।এই বাড়ির আনাচে-কানাচে রীতির পদচিহ্ন আঁকা।কত সুন্দর মুহূর্তের স্মৃতি জড়িয়ে আছে।হাসি-কান্না,ভালোবাসা, ভালো-লাগা,অভিমান,খুনসুটি কত কি।
রীতি গেইটের বাইরে গিয়ে খোদাই করা লেখাটা শেষ বারের মতো দেখলো “সুখ নীড়”।
গাড়িতে উঠে বসে ছাদের দিকে তাকালো।সেই ছাদ যেখান থেকে সবটা শুরু।সবচেয়ে সুন্দর মুহূর্তগুলো সেই জায়গার অধিকারে।গতকালও সাদিবের সাথে ভালোবাসাময় মুহুর্ত কাটিয়েছে।কত সুন্দর ছিলো সে সময়টা।ভালোবাসায় পূর্ণ।
রীতি আর নিজের আবেগ কন্ট্রোল করতে পারলোনা।কেদে ফেললো।
রিমন সাদিবদের ফ্ল্যাটের কলিং বেল চাপতেই সাদিবের মা দরজা খোলে দিলো।রিমনকে দেখে সাদিবের মা বললো,
—-” রিমন,সাদিবকে খোজছো?ও তো বাড়িতে নেই।”
রিমন শক্ত মুখ করে বললো,
—-“জ্বি না।বাড়ি ভাড়া দিতে এসেছি।এই নিন।(একটা খাম এগিয়ে দিয়ে)”
সাদিবের মা বিস্ময় নিয়ে বললো,
—–“এখনো তো মাস শেষ হয়নি।আজ কেনো?”
—-“কারণ আমরা আজ চলে যাচ্ছি।বাড়ি ছেড়ে দিয়েছি।ভাড়া মিটিয়ে যাচ্ছি।আন্টি ধরুন গাড়িতে সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে।”(তাড়া দেখিয়ে)
রিমন খাম ধরিয়ে দিয়ে দ্রুত চলে গেলো।সদিবের মা খাম হাতে একরাশ বিস্ময় নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
“ওরা হটাৎ চলে যাচ্ছে কেনো?সাদিবের বাবা কি কিছু বলেছে না এমনি?”
সাদিবের মা সাদিবের বাবাকে ফোন করলো।
সাদিবের বাবা ফোন রিসিভ করতেই সাদিবের মা জিজ্ঞেস করলো,
—-“তুমি রীতির বাবাকে কিছু বলেছো?”
—-“হ্যা বলেছি।যদি লজ্জা থাকে তো দুদিনের মধ্যে বাড়ি ছাড়বে।”
সাদিবের মা ঝাঝালো কন্ঠে বললো,
—-“ছেড়ে দেবেনা,ছেড়ে দিয়েছে কিছুক্ষণ আগে।”
—–“তাহলে তো বেশ ভালো হয়েছে।”
সাদিবের মা ফোন কেটে দিয়ে ছেলের কথা ভাবতে লাগলো।সাদিব কি রিয়েক্ট করবে সত্যিটা জানার পর।সাদিবকে ফোন করবে কিনা বুঝতে পারছে না।
সাবিহা মায়ের এমন উদাসীন ভাব দেখে বললো,
—-“মা কি হয়েছে? ”
সাদিবের মায়ের হুশ ফিরলো।সে সাবিহার দিকে ড্যাবড্যাব করে চেয়ে আছে।সাবিহা মায়ের নির্লিপ্ত ভাব দেখে বললো,
—-“মা কিছু কি হয়েছে?”
সাদিবের মা বললো,
—-“সর্বনাশ হয়ে গেছে।তোর বাবা অঘটন ঘটিয়ে ফেলেছে।রীতিরা কিছুক্ষণ আগে বাড়ি ছেড়ে দিয়েছে।চলে গেছে।”
সাবিহা মায়ের কথা শুনে স্তব্ধ হয়ে গেলো।
দৌড়ে রীতিদের ফ্ল্যাটের সামনে গিয়ে কাউকে না পেয়ে কেদে দিলো।তারপর দ্রুত সাদিবের নাম্বারে ফোন করলো।
সাদিব লেবারদের সাথে কথা বলছে।লেবারের সাথে কথা বলতে বলতে ফোন রিসিভ করলো।
সাবিহার কান্নার শব্দ শুনে এক সাইডে গিয়ে দাড়ালো।তারপর বিচলিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
—-“সাবিহা,কি হয়েছে এভাবে কাদছিস কেনো?”
সাবিহা কাদতে কাদতে বললো,
—-“বাবা সব শেষ করে দিয়েছে,ভাইয়া।রীতি আপুরা চলে গেছে।”
সাদিবের কানে রীতি আপুরা চলে গেছে কথাটুকু পৌছতেই সাদিবের পুরো পৃথিবী থমকে গেলো।হাত-পা যেনো জমে গেছে।বুকের ভেতরে ভয়ংকর ব্যথা করছে।মনে হচ্ছে দম আটকে আসছে।শরীরের ব্যালেন্স রাখতে পারছেনা।হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেলো।সাদিব নিজের শরীরের ভার বইতে না পেরে বসে পড়লো।
চলবে….!