গ্রামের পিচ্চি বউ পর্ব :- ৪০ + ৪১ এবং ৪২

0
1365

গল্প :- গ্রামের পিচ্চি বউ
পর্ব :- ৪০ + ৪১ এবং ৪২
লেখিকা :- বাবুনি
.
.
-:”তারপর ওকে নিয়ে পুরো বাংলো বাড়ি ঘুরে দেখালাম_
ওর খুশি দেখে আমি খুব অবাক হলাম,এই তুচ্ছ একটা জায়গায় ঘুরতে এসে এতো খুশি মেয়ে টা_
সত্যি ভাবতেই ভালো লাগে..যে প্রকৃত স্ত্রী সে দামি পোশাক,দামি গিফট,দামি খাবার,দামি জায়গা_ঐ সব কিছু চায় না..
সে একটু সময় ও ভালোবাসা চায় তার স্বামীর কাছে..
রুমকি তা প্রমাণ করে দিল আজ..
অনেকক্ষণ ঘুরলাম তারপর ওকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে খেতে যাবো বলে ঠিক করলাম..
ও কিছুতেই মানতে নারাজ,ওর এক কথা বাসায় পৌছে খাবো..
বাইরে খেতে পারবে না ও… বাইরের খাবার না কি ভালো না, অসুস্থ হয়ে পড়বো..
কি আর করা পিচ্চি বউ এর কথা তো রাখতেই হবে,তা না হলে আবার গাল ফুলিয়ে বসে থাকবে, কথা বলবে না..

বাসায় পৌছে ,খেয়ে নিলাম ওকে নিয়ে..
গল্প করে সময় পার হয়ে গেল , রাতের খাবারের সময় হয়ে গেছে..
সবাই একসাথে খেয়ে যে যার রুমে চলে গেলাম..
একটু পর রুমকি বলল,এই যে ..
আমি শুয়ে থাকার ভান করলাম..
ও আবার বলল এই যে শুনছেন..
আমি কোনো জবাব দিলাম না ওর কথার..
একটু পর ও আমার পাশে এসে আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলল ,এই রাফসান..
আমি ওকে জরিয়ে ধরলাম ..
রুমকি: আপনি জেগে আছেন..? আমি ভাবছি ঘুমিয়ে পড়ছেন বোধহয়..
আমি:তাই , তুমার মুখে রাফসান নাম টি শুনতে কিন্তু বেশ লাগছিলো..
রুমকি:সরি,নাম ধরে ডাকার জন্য..
আমি:আরে দূর বোকা, আমার তো ভালোই লাগছে.. মাঝেমধ্যে এই ভাবেই ডেকো শুনতে ভালো লাগে আমার..
রুমকি: কিন্তু..
আমি: কোনো কিন্তু না, আমি বলছি ডাকতে ডাকবে ওকে_তবে যখন তুমি আর আমি একা থাকবো তখন..
রুমকি:ওকে..
আমি:হুমমম..বাট ডাকছিলে কেনো সেটা বল..
রুমকি:বাইরে বৃষ্টি পড়ছে..
আমি:হুমমম,তো..
রুমকি: আপনি যদি অনুমতি দেন তাহলে একটু বৃষ্টিতে ভিজবো.. আমার খুব ভালো লাগে বৃষ্টিতে ভিজতে..
আমি:এই কথা ,বাট যদি জর আসে বৃষ্টির সাথে..
রুমকি:কিছু হবে না , আমি এরকম অনেক দিন ভিজেছি..
আমি:ওকে..
তাহলে দাঁড়াও আমি ও ভিজবো তুমার সাথে তুমি একা না..
রুমকি: সত্যি আপনি ও ভিজবেন..
আমি:হুমম, দুজন এক সাথে ভিজবো..আর জর আসলে এক্সট্রা নাপা খাবো..বলেই হেসে দিলাম..
রুমকি ও আমার কথা শুনে হাসছে..
তারপর বলল, তারাতাড়ি আসেন বৃষ্টি থেমে যাবে তো..
আমি বিছানা থেকে নেমে ওর হাত ধরে ছাদে উঠলাম..
দুজনের উপর বৃষ্টি ঝড়ছে_
নিমিষেই দুজনকে বৃষ্টির পানি কাকভেজা করে দিলো..
রুমকি আনন্দে মেতে উঠেছে বৃষ্টির পানির সাথে..
আমার দিকে তাকাবার সময় নেই এখন ওর..
আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি একদৃষ্টিতে , বৃষ্টির পানি পড়ে ওর মধ্যে যেনো এক আলোর খেলা চলছে, ওর সৌন্দর্য বহুগুন বাড়িয়ে দিয়েছে..
আমি আর নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না..
ওর পাশে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলাম,ও চোখ বন্ধ করে দিয়েছে,ওর ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলাম..
ও কেমন যেন কেঁপে উঠলো..
কিছুক্ষণ পর দুজন দুজনের দিকে লজ্জায় তাকাতে পারছিলাম না…
.
#Part :- 41
.
.
-:”রুমকি এক দৌড়ে রুমে চলে গেলো..
আমি ও ওর পিছু পিছু আসলাম..ও ওয়াশ রুমে চলে গেছে_
আমার ও ফ্রেশ হওয়া প্রয়োজন,ভিজে যা অবস্হা হয়েছে গায়ের কাপড়ের..
কিছু সময় পড় রুমকি বের হয়ে এলো..
আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলল,যান মিস্টার ফ্রেশ হয়ে আসেন..
আমি ও একটু হেসে বললাম যাচ্ছি ম্যাডাম..
ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি,আমার পিচ্চি বউ ঘুমিয়ে পড়েছে..
কি আর করবো,আমি ও ঘুমিয়ে পড়লাম..
সকালে মনে হলো আমার গায়ে বৃষ্টি পড়ছে রাতে যেভাবে রুমকি আর আমি ভিজেছিলাম..
ভাবলাম এইসব হয়তো আমি স্বপ্ন দেখছি..
চোখ মেলে তাকাতেই বুঝতে পারলাম স্বপ্ন না সত্যি আমার পুরো গায়ে পানি, দেখে মনে হচ্ছে এই মাত্র আমি গোসল করেছি..
পাশেই শাখচুন্নি টা দাঁড়িয়ে আছে আর হা হা করে হাসছে..
আমার রাগে মাথা গরম হয়ে যাচ্ছে..
বললাম ঐ শাখচুন্নি আমার গায়ে পানি দিছো কেনো..?
রুমকি:দিয়েছি বেশ করেছি..
আমি:কি বললে, তবে রে দাঁড়া আজ তর একদিন নয়ত আমার যে কয়দিন লাগে..
রুমকি,দিলো দৌড়..
আমি ও রুমকির পিছু পিছু দিলাম দৌড়..
রুমকি দৌড়ে আম্মুর রুমে চলে গেলো..
আমি ও গেলাম..
ও আম্মুর পিছনে গিয়ে লোকালো..
আমি বললাম ঐ পিচ্চি এখন লোকাচ্ছো কেনো,আসো আম্মুর পিছন থেকে বেরিয়ে আসো বলছি..
রুমকি:না আমি আসবো না, আপনি আমাকে মারবেন হাতের কাছে পেলে..
আম্মু:কি হয়েছে রে রাফসান ওকে এইভাবে দৌড়াচ্ছিস কেনো..?আর তুই আমার লক্ষি বউমাকে মারবি কেনো..?
আমি:দৌড়াই কি আর স্বাদে,কি হয়েছে তা তুমার শাখচুন্নি বউমাকেই জিঙ্গেস করো..
আম্মু:রুমকি কি হয়েছে, আর রাফসান তকে মারবে কেনো..?
রুমকি:কই কিছু না তো..
আমি :রাগে দাঁতে দাঁত চেপে বললাম_কিছু হয় নি তাই না আম্মুর সামনে এখন খুব সাধু সাজা হচ্ছে..
আম্মু:ঐ তুই থাম তো,আর বল কি হয়েছে..?
আমি:তুমার দুধে ধোয়া তুলসী পাতা বউমা আমাকে পানি দিয়ে ভিজিয়ে কি হাল করেছে,দেখতে পাচ্ছো না..?
আম্মু:কি রে রুমকি তুই ওকে পানি দিয়ে ভিজিয়েছিস কেন..?
রুমকি :আম্মু আমি ইচ্ছে করে পানি দেই নি,ওনি ঘুম থেকে উঠছিলেন না তাই….
আমি:তাই বলে ও পানি ঢালবে আমার উপর…? তুমি ই বলো আম্মু..
আম্মু:রুমকি তুই ডাকলেই তো পারতে পানি দিলি কেনো..?
রুমকি :আমি অনেক্ষণ ডাকছি ওনি উঠারই নাম নেই তাই পানি দিছি,ওনার অফিসের সময় হয়ে যাচ্ছে এদিকে তো আমি কি করবো বলেন..
আম্মু:তুই ঠিক কাজটিই করেছিস, বাদর টা কে রুজ এইভাবে ভিজাবি যদি ঘুম থেকে উঠতে দেরী করে..এই টা আমার ওয়ার্ডার..
আমি:দেততত, শেষ পর্যন্ত তুমি ও ওর সাথে হাত মিলাচ্ছো আম্মু_?কোথায় ওকে শাসন করবে তা না..
রুমকি আমার দিকে তাকিয়ে মুখে ভেংচি কাটলো..
আমি রাগে গজ গজ করতে করতে বেরিয়ে আসলাম ওখান থেকে..
রুমকি ও আম্মু দুজন হাসছে..
আমি রেডি হয়ে না খেয়ে অফিসে চলে গেলাম..
অফিস থেকে এসে দেখি রুমকি গাল ফুলিয়ে বসে আছে..
কি আজব,কোথায় আমার রাগ করার কথা উল্টো ও রাগ করে আছে_
.
.
#Part :-42
.
.
-:”রুমকির পাশে গিয়ে বসলাম, বললাম রুমকি এটা কি হলো…?
রুমকি:কি হলো আবার…?
আমি:রাগ করার কথা আমার ছিলো এখন তুমিই রাগ করে আছো…?
রুমকি:কে বলল আমি রাগ করেছি.. আমি রাগ করি নি..
আমি: মিথ্যা বলছো কেন , আমি তো জানি তুমি রাগ করেছো..
রুমকি: না আমি রাগ করি নি..
আমি: শাকচুন্নী আবার ও মিথ্যা কথা বলে,(কথা টা আস্তে আস্তে বললাম )
রুমকি:কি বললেন আপনি…..?
আমি:না কিছু না বলছিলাম যে এখন ও কি না খাইয়ে রাখবে…? সারাদিন তো কিছুই খাই নি…
রুমকি: খাচ্ছেন না কেনো , আমি কি খেতে মানা করছি ..খান নি আমাকে শুনাচ্ছেন..
আমি: না তা হবে কেন,বলছি যে তুমাকে রেখে কিভাবে খাবো.. তুমি ও আসো এক সাথে খাবো…
রুমকি: আমি খেয়েছি যান আপনি খেয়ে নিন..
আমি:দূরর মিথ্যা বলছো কেন..
রুমকি: মিথ্যা বললাম কই সত্যি বলছি, আপনার আসতে দেরি হচ্ছে দেখে..আব্বু আম্মু বললেন ওনাদের সাথে খেতে তাই খেয়ে নিছি..
আমি:গুড,খাটাস নি আমাকে রেখে খেয়ে নিছে..
রুমকি:কি… আমাকে কিছু বললেন…?
আমি: না বলছি যে খেয়েনিছো তো কি হয়েছে এখন আমার সাথে খাবে আরেকটু চলো..
রুমকি: না এখন আর খাবো না..আর হে আপনাকে রেখে পেট ভরে খাই নি অল্প খাইছি আগে..?
আমি:ওরে আমার পিচ্চি বউ তাহলে আসো যেতটুকু পেট ভরে নি এখন খেয়ে পূরণ করবে..
রুমকি: না আমি আর খাবো না..
আমি: চুপ করে থাকো আর আমি যা বলি তাই শুনো ওকে,বলেই ওকে কোলে তুলে নিয়ে সিরি বেঁয়ে নিচে নেমে এলাম..
খাবার টেবিলে বসালাম একটা চেয়ার টেনে..
ও বসে আছে..
আমি ভাত নিতে যাবো পেলেটে ও নিজেই আমার আগে ভাত বেড়ে দিতে লাগল..
আমি মনে মনে বললাম আমার পিচ্চি বউ টা এখন অনেক বুঝে, সাংসারিক কাজের সাথে ও বেশ জরিয়ে নিয়েছে নিজেকে..
এক পেলেটেই দুজন মিলে একসাথে খেলাম..

খাওয়া শেষে রুমকি ও আমি দুজন মিলে গল্প করলাম , টিভি দেখলাম,আর মাঝে মাঝে একে অন্যকে ভালোবাসার প্রতীক এঁকে দিলাম …

আমার পিচ্চি বউ এর সাথে আমার বেশ সুখেই দিন গুলো কাটছিল.. কখন যে দেখতে দেখতে প্রায় ৩বছর কেটে গেলো বুঝতে পারলাম না…
এই ৩বছরে আমার পিচ্চি বউ সাংসারিক কাজে বেশ মনোযোগী হয়ে উঠেছে, আম্মু আব্বুর সেবা যত্ন করে, রান্নাবান্না করে, আমার কখন কি লাগবে তার খেয়াল রাখে..
মোট কথা সংসারে যা যা কাজ করলে একটা সংসার সুখের ও সুন্দর হয়..ও তার নিবিড় সম্পর্ক গড়ে তুলেছে এর সাথে,কোনো ত্রুটি রাখে না ও সংসারের.. পড়া বাদ দিয়ে দিয়েছে ইন্টার পাশ করে…আমি ও অনার্স পাশ করে আব্বুর অফিসটাকে আরও বেশি উন্নত মানের স্তরে প্রবেশ করালাম… নিজের চেষ্টা ও পরিশ্রম দিয়ে… সাথে আমার পিচ্চি বউ এর সাফর্ট তো আছেই…
সত্যি আমি অনেক ভাগ্যবান ওর মতো একটা পিচ্চি বউ আমার জিবনে পেয়ে..

একদিন অফিস থেকে এসে আমি রোজকার মত বিছানায় শুয়ে ফোন টিপছি.. হঠাৎ রুমকি আমার পাশে এসে বসল..
আমি:কি গো আমার পিচ্চি বউ কিছু বলবে..?
রুমকি:হুমমম…
আমি:বলো…
রুমকি: আচ্ছা আমি যা বলবো তা এনে দেবে তুমি…?
আমি:হুমমম অবশ্যই বলো তুমার কি চাই…?
রুমকি: আচ্ছা রাফসান তুমি আমাকে ছোট্ট একটা বাঘের বাচ্চা এনে দেবে…?বল দেবে..
আমি:ওর কথা শুনে ফোন অফ করে বললাম, কি বললে তুমি আবার বলো…
রুমকি: আবার বলল ,আমাকে একটা ছোট্ট বাঘের বাচ্চা এনে দেবে প্লিজ …
আমি:ওর কথা শুনে (মনে মনে বললাম কি বলে এসব ও ওর কি মাথা খারাপ হয়ে গেলো না কি…?বাঘের বাচ্চা দিয়ে ও কি করবে…)
তারপর বললাম ঐ তুমি বাঘের বাচ্চা দিয়ে কি করবে…?
রুমকি: আমি পালন করবো তাই…
আমি: আল্লাহ কি বলে এসব …কি বলবো এখন ওকে…
আজ সেই ৩বছর আগের মতো আচরণ করছে.. একদম বাচ্চাদের মত আবদার করছে…
.
.
চলবে………….