গ্রামের লাজুক মেয়ে পর্ব-১১

0
681

#গল্পঃ গ্রামের লাজুক মেয়ে ?
#লেখকঃ Md: Aslam Hossain Shovo
#পর্বঃ ১১…

√-~ রিতু বাসায় যাওয়ার পর তিন দিন আর রিতুর সাথে যোগাযোগ নেই, তিন দিন পর রাতে রিতু মেসেজ করলো-
রিতুঃ এই বাবু কেমন আছো?

আমিঃ বাবু না ছাই, কোথায় হারিয়েছিলে তুমি শুনি?

রিতুঃ সরি বাবু, আমি অসুস্থ ছিলাম।

আমিঃ অসুস্থ মানে?? কি হয়েছিলো হঠাৎ করে?

রিতুঃ বাসায় আসার পর হঠাৎ মাথা ব্যাথা ও পেট ব্যাথা হয়েছিলো খুব।

আমিঃ তাও আমায় একটু কষ্ট করে বলতে তো পারতে? এখন কেমন আছো?

রিতুঃ সরি… এখন অনেক ভালো।

~ এই ভাবে আমাদের সম্পর্ক চলতে থাকলো। রিতু বাসার যাওয়ার পর থেকে মাঝে মাঝে কথা বলতো না, খুব অসুস্থ থাকে এটায় বলতো আমায় । এই ভাবে তার সাথে কথাও কম হতে লাগলো দিতে দিতে। ওকে ফেসবুক আইডি খুলা শিখিয়ে দিলাম আমি। তারপর থেকে ফেসবুকে কথা হত আমাদের। কিন্তু ফেসবুক খুলে দেওয়ার পর ওকে হারানোর টেনশন ও বেড়ে গেলো, বিশ্বাস ছিলো রিতু অন্য ছেলেদের পাল্লায় পড়বে না, কিন্তু মনের মধ্যে অজানা ভয় হতে লাগলো।

প্রথম ১ মাস আমাদের সম্পর্ক খুব সুন্দর ভাবে কাটলো। ১ মাস পর থেকে রিতু কেমন যেনো হতে লাগলো। আগে সারাদিন, সারারাত কথা বলার জন্য পাগল থাকতো, আমার মোবাইলের চার্জ শেষ হলে আমার মোবাইল কেউ বকা দিতো, আর এখন আর সেই কম কথা বলে না ৷
সামান্য একটু অন্য রকম কথা বললে রেগে গিয়ে ঝগড়া করে এখন। যতক্ষণ না তাকে সরি বলি, সে চুপ হয়ে থাকে , কথা বলে না আমার সঙ্গে । মনে হচ্ছিল রিতু পাল্টে গিয়েছে। মনে মনে খুব কষ্ট পেতাম তার এমন ব্যবহারে। কিন্তু মন থেকে ভালোবাসতাম বলেই তাকে বার বার সরি বলতাম, নিজের দোষ না থাকলেও।

কথাও বলে খুব কম৷ সে এটা কখনো বুঝতে পারতো না যে আমি তাকে কতটা ভালোবাসি। আমি তাকে বার বার বলি যে, তুমি কি আমাকে এড়িয়ে চলতে চাও… তাতেও সে রাগ হয়ে কথা শুনাই। আমার নাকি বিশ্বাস নেই তার উপর…যদি আমার বিশ্বাস নাই থাকতো তাহলে এতোটা ভালোবাসা দিতে পারতাম না তাকে, সে সেটা বুঝে না।

বেশ কিছুদিন ধরে দেখছি কথা তো তেমন বলেই না, কয়েকদিন পর পর বলে, তারপর কথা বলার পরেই বলে শরীর খারাপ লাগছে। বুঝতে পারলাম সে আমায় এড়িয়ে চলছে। রাতে আমার আর ঘুম হচ্ছে না তার কথা ভেবে যে রিতু আমার সাথে এমন করছে কেনো, তাহলে কি সে অন্য কাউকে পছন্দ করে।
কান্না ও করলাম অনেক, যাকে আমি আমার মনের থেকে ভালোবাসছি, যাকে ফ্যামিলির একজন ভাবছি ও ভালোবাসি, সে কিনা শুধু আমায় কষ্ট দেয়।

মনে মনে ভেবে রাখলাম, যদি শুনি সে অন্য কাউকে পছন্দ করে তাহলে আমি তার উপর থেকে দাবি ছেড়ে তার জীবন থেকে দূরে সরে যাবো। পরের দিন মেসেজ করলাম…

আমিঃ রিতু সত্যি করে বলবে, তুমি আমায় এড়িয়ে যাচ্ছ না তো?

রিতুঃ হঠাৎ এমন কথা কেনো?

আমিঃ আগে বলো, তুমি কি আমায় এড়িয়ে চলছো?

রিতুঃ সত্যি বলতে হুমম।

আমিঃ কেনো এড়িয়ে যাচ্ছে বলবে প্লিজ?

রিতুঃ এমনি…

আমিঃ বলতে বলছি, প্লিজ বলো…

রিতুঃ আমি বলতে পারবো না… বায়

আমিঃ তাহলে কি ভেবে নিবো তুমি অন্য কাউকে পেয়েছো??

রিতুঃ হুমম তাই ভেবে নিও বায়.. ভালো থেকো…

~ ফেসবুক থেকে রিতু চলে গেলো এটা বলে। আমিও আর মেসেজ করলাম না। এটা কিভাবে হয়, একটা মেয়ে এভাবে সুন্দর করে অভিনয় কিভাবে করে, কান্না করবো নাকি কি করবো বুঝতে পারছি না।
তারপর ৭-৮ দিন আমিও মেসেজ দেয় নাই, সেও দেয় নাই। ৮ দিন পর মেসেজ দিলাম—

আমিঃ তাই নতুন যাকে পেলে, তাকে নিয়ে খুব সুখে আছো তাই না রিতু??

রিতুঃ হা হা, আমার আর সুখে থাকা.. হাসালেন…

আমিঃ আচ্ছা একটা মেয়ে এতোটা বেইমান হতে পারে? একজন কে পেলেই অন্য জনকে ভুলে যায়।

রিতুঃ হুমম পারে,, ওই সব কথা বলে এখন কি লাভ??

আমিঃ আমার আর কিছু বলার নেই। আমার জীবন টাই নষ্ঠ করে দিলেন আপনি, আপনার সুখের জীবন করতে গিয়ে…

রিতুঃ আমার আর সুখের জীবন.. হা হা..

আমিঃ হাসার মানে কি??

রিতুঃ তাহলে সত্যি শুনবেন??

আমিঃ বললে শুনবো, বলুন??

রিতুঃ আমার খুব কঠিন একটা রোগ হয়েছে। আমি চাইনা আমার থেকে তোমার সেই রোগ হক, সেই জন্য তোমার থেকে আমি অনেক দূরে সরে যেতে চাই।

~ আমি তার থেকে রোগের নামটা শুনে মনে হলো রোগটা আমার হয়েছে। আমার চোখ দিয়ে পানি পড়া শুরু করলো। খুব কষ্ট হচ্ছিল ~

আমিঃ তুমি অসুস্থ হয়েছো বলে, আমার থেকে দূরে সরে যাবে৷ আমায় এতোটা কষ্ট দিবে তুমি?

রিতুঃ আমার এতো বড় একটা সমস্যার কথা জেনেও তুমি আমার সাথে সম্পর্ক রাখবে?

~ আমি কিভাবে তাকে বুঝাবো, এটাতো শুধুমাত্র আল্লাহর দেওয়া সামান্য রোগ, আমি চাই তার যত বড়ই সমস্যা হক তার সাথে থাকতে। কিন্তু কিভাবে বুঝাবো তাকে বুঝতে পারছি না যে আমি তাকে কতটা ভালোবাসি।

কিন্তু মেসেজে তো আর সব বুঝানো যায় না। মনে হচ্ছিল তখনি তাকে সম্ভব হলে বিয়ে করে নিতে, তাহলে হয়তো একটু হলেও বুঝতে পারতো আমি তাকে গার্লফ্রেন্ড নয়, ঘরের বউ করার স্বপ্ন দেখি। নিজের কলিজা বের করে তাকে দেখানোর ইচ্ছে হচ্ছিল, তাকে আমি কতটা ভালোবাসি। আর সে কিনা মাত্র রোগের জন্য আমার থেকে দূরে সরে যেতে চাই, এটা ভেবে অনেক কষ্ট পেয়েছি।

আমি শুধু ভাবতে লাগলাম, আজ যদি এটা আমার ফ্যামিলির কারো হত, তাহলে কি তার থেকে দূরে সরে যেতাম? কখনো না। তাই রিতুর যদি আরো চেয়ে বড় সমস্যা ও হয়, তার পাশে আছি ও থাকবো ইনশাআল্লাহ ।

আমি কখনো তাকে গার্লফ্রেন্ড ভাবি নাই, সব সময় নিজের হবু বউ ভাবছি প্রথম থেকে, যে তাকে গার্লফ্রেন্ড করে ঘুরাঘুরি, প্রেম, ডেটিং করবো এগুলো কখনো ভাবি নাই আমি, শুধু চিন্তা করছি সে আমার হবু বউ, আর তাকে বিয়ে করে বিয়ের পর জমিয়ে প্রেম করবো, সংসার করবো ~

তাকে উত্তর দিলাম-
আমিঃ শুনো রিতু, এর চেয়ে যদি তোমার সমস্যা আরো বড়ও হই, তাও আমাকে ছেড়ে যাওয়ার চিন্তা করো না। আমি তোমাকে কখনো ছাড়তে চাই না।

রিতুঃ হুমমম আচ্ছা।

~ তারপর থেকে আবার একটু সাভাবিক হতো লাগলো আমাদের সম্পর্ক। আমার বাসায় ওর সমস্যার কথা বললাম, বলার আগে ভাবছি যদি আমার ফ্যামিলি ওকে মানতে না চাই ওর সমস্যার কথা শুনে, তাহলে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করবো… কিন্তু আল্লাহর রহমতে তারা হাসিমুখে মেনে নিলো। তারা বললো রোগ দেওয়ার মালিক আল্লাহ, রিতুর যদি ইচ্ছে থাকে বউ হওয়ার তাহলে আমাদের আপত্তি নেই। সবাই আরো ওর আমাকে এড়িয়ে যাওয়ার ওর পাগলামি কথা শুনে বললো, রিতু এতো বোকা মেয়ে নাকি, এই জন্য নিজেকে ছোট করতে হবে, রিতুকে বলবি আমাদের কেনো আপত্তি নেই, তার মা-বাবা চাইলে তাকে বউ করে আনবো এই বাড়ির।

তারপর থেকে রিতুকে নিয়ে সবাই মজা করতো আমার সাথে, আমি নাকি রিতুর হবু স্বামী, আবার তার জন্য এতো চিন্তা করি যা সব স্বামীরাও করে না মেয়েদের । মা প্রতিদিন রিতুর খোঁজ নিতো, মা বলতো মেয়েটা কত সুন্দর করে কথা বলে,,,রিতুর কথা নাকি মায়ের অনেক পছন্দ হয়েছে।

আমি বুঝতে পারতাম যে,,, রিতু তখনোও ভাবতো যে তার অসুস্থতার কথা শুনেও কেনো তার সাথে কথা বলি বা সম্পর্ক রাখছি…
সত্যি বলতে আমি তাকে নিজ ইচ্ছায় কখনো ছাড়তে পারবো না। শুধু আল্লাহর উপর ভরসা রেখে দিলাম, যেনো আল্লাহ রহমত করলে তাকে তাড়াতাড়ি বিয়ে করে এনে প্রমাণ করতে পারি, আমি তাকে সত্যি কতটা ভালোবাসি ~

এই ভাবে আরো ৩ মাস চলে গেলো আমাদের সম্পর্কের । সে আমাকে বাবু বলতো, আমি বলতাম সোনা। কিন্তু তাকে পিচ্চি বলতে আমার খুব ভালো লাগতো, পিচ্চি বললে সে রাগ হত তাই। বলতো আমি মোটেও পিচ্চি না, আমি বড় একটা মেয়ে। দুঃখের বিষয় আমরা বেশির ভাগ মেসেজ এ কথা বলতাম, কারন মোবাইলে কথা বলতে খুব লজ্জা হত তার। ৩ মাসে মাত্র ৫-৬ মিনিট মোবাইলে কথা বলছি।

এর মধ্যে নাকি রিতু একবার হসপিটালেও ভর্তি ছিলো। তার রক্ত দেওয়া লাগছিলো। শরীর খুব দুর্বল ছিলো।

আমরা অনেক রাতেও কথা বলতাম।
কিন্তু একটা জিনিস কখনো বুঝতে পারলাম না, সে আমায় রাত ১১ টা বাজলে বলতো, বাবু আমি এখন ঘুমাবো বায়… তারপর আবার রাত ১২ টা বাজলে মেসেজ দেওয়া শুরু করতো, এই বাবু পাপ্পি দেও, রাত ২ পর্যন্ত শুধু পাপ্পি দিতে হতো তাকে, কথায় কথায় পাপ্পি চাইতো ওই দুই ঘন্টার কথার মধ্যে । সকালে যদি আবার পাপ্পি দিতাম, তাহলে খুব রাগ হত… বলতো এই বিয়ের পাপ্পি দেওয়া আমি পছন্দ করি না। তাহলে রাত ১২ থেকে ২ টা পর্যন্ত এতো পাপ্পি চাইতো কেনো, মাথায় আসতো না ব্যাপার টা….

তাহলে কি ওর মাথায় সত্যি কেনো তার কাটা আছে, নাকি ঘারে জ্বীন ভর করছে । রাত ১১ টার আগে কথা বলতো লাজুক ভাবে, আর ১২ টার পর থেকে মনে হতো একটা পাকনা বুড়ির সাথে কথা বলছি। খুব পাকনামি করতো আমার সাথে। কিন্তু তখন ঝগড়া করতো না,,,আর সারাদিন খুব ঝগড়া করতো।
আগের থেকে খুব ঝগড়াটি হয়ে গিয়েছে, তার মা-বাবাও তাকে বকা দিলে ঝগড়া করতো আমার সাথে, এমন ঝগড়াটি হয়েছে । আর বলতো আমি নাকি তাকে ঝগড়া করা শিখিয়েছি, আসলে সত্যি বলতে আমিই শিখিয়েছি ? মজা লাগতো ঝগড়া করতে আরকি…

~ ভাবিকে ওর গভীর রাতের রহস্যময় কথা গুলো বললাম, যে রাত হলে এমন এমন কথা বলে, আর দিন হলে সব সাভাবিক হয়ে যায়। ভাবি মন দিয়ে কথা গুলো শুনে বললো-

ভাবিঃ শুভ, আমার তো রহস্য লাগছে। তাহলে কি ওর ঘারে জ্বীন আছে নাকি? (মুচকি হেসে)

আমিঃ হাসেন কেনো? আমিও তাই ভাবছি। নাহলে শুধু রাত হলে এমন করে কথা বলে কেনো?

ভাবিঃ তাহলে এক কাজ করো, তোমার ভাইয়াকে রাজি করাও আমাকে শেরপুর পাঠাতে। আমি গিয়ে ব্যাপারটা বুঝে রিতুর জ্বীনের চিকিৎসা করাবো। তুমিই বলো, মোবাইলে তো আর সব বুঝানো যায় না কাকিমা কে….

আমিঃ তা হয়তো ঠিক। কিন্তু আমি যদি যেতে পারতাম আপনার সাথে ভালোই হতো।

ভাবিঃ আরে বুকা, আমি গেলে তো তোমার ভাইয়া সাথে বডিগার্ড দিবেই তোমাকে। তাহলে তো তোমার ও যাওয়া হয়ে গেলো।

আমিঃ আচ্ছা ভাবি আমি যেই ভাবে হক রাজি করাবো।

~ সাত দিন, পায়ে ধরে, হাজার রকম ভাবে বুঝিয়ে সবাই কে রাজি করালাম ভাবিকে শেরপুর পাঠাতে।
বৃহস্পতিবার সকালে আমি আর ভাবি রওনা হলাম শেরপুরের উদ্দেশ্য ?……………………~ গল্প চলবে ~….

বিঃদ্রঃ রিতুর ঘারে কি সত্যি জ্বীন আছে বা জ্বীন ছাড়াবে কিভাবে জানতে হলে পড়তে হবে আগামী পর্ব…