গ্রামের লাজুক মেয়ে পর্ব-১৩

0
735

#গল্পঃ গ্রামের লাজুক মেয়ে ?
#লেখকঃ Md: Aslam Hossain Shovo
#পর্বঃ ১৩…

√-ভাবি ঈশার দিকে তাকিয়ে চোখ লাল করে বললোঃ ওই ঈশা, তোর দুলাভাই মানে?

ঈশাঃ আমি জানি ওনি রিতু বুবুর বয়ফ্রেন্ড।

ভাবিঃ তাহলে জানিস তো, তারপরেও ওর হাতে কামড় দিলে কেনো?

ঈশাঃ কি আর বলবো বড় বুবু মনের কষ্টের কথা। প্রতিদিন বাসার সামনে দিয়ে যে সব ছেলেরা যায় তাদের ধরে ধরে কামড় দেই আমি, নাহলে যে মুখে স্বাদ পায় না। এখন তো ছেলেরা আমাদের বাড়ির সামনে দিয়ে যেতে ভয় পায়। তাই যখন দেখলাম এই পোলা, মানে দুলাভাই আমাদের বাসায় এসেছে, তারপর শুনলাম তার নাম শুভ, সিদ্ধান্ত নিলাম আজ মারামারি হয়ে যাক দুলাভাইয়ের সাথে (পেত্নী হাসি দিয়ে)

আমিঃ কি ভয়ানক মেয়ে রে বাবা। গ্রামের মেয়েরা বুঝি এমনি হয়, এই ডেঞ্জারাস মেয়ের বিয়ে হবে কার সাথে..? তার কপাল শেষ…

~ ঈশা এসে সরাসরি আমার গলা জরিয়ে ধরে বললো–
ঈশাঃ কেনো দুলাভাই, আপনার লগে বিয়া হইবো… i love you Sona babu… Ummmaash ?

আমিঃ আপনি কি করছেন এগুলো ছাড়ুন ছাড়ুন বলছি..

ঈশাঃ আমি ছাড়বো না গো তোমায় ডার্লিং ?

~ রিতু সোনা তো এগুলো দেখে তেলে বেগুনে জ্বলছে। রিতু এসে ঈশা হাত ধরে কাটতে লাগলো–
রিতুঃ এই ঈশা, বাসায় মেহমান এলে এমন করতে হয় বুঝি। ছাড় বলছি শুভ ভাইয়াকে…

ঈশাঃ তুই চুপ থাক বলছি (রিতুর দিকে তাকিয়ে)

আমিঃ এই ভাবে বড় বোনকে তুই করে বলতে হয় নাকি? সরি বলো রিতুকে এখুনি…

ঈশাঃ আমার বয়েই গিয়েছে সরি বলার জন্য। ও কি আমার আপন বোন নাকি হুমম।আব্বা কালীবাড়ি হাটে গিয়ে ওকে কুড়িয়ে পেয়েছে, ওই থেকে আমাদের এখানে থাকে বেচারী। তাকে বলবো আমি সরি,ধুর… ? (মুখ ভেংচি কেটে)

ভাবিঃ ঈশা এবার কিন্তু একটু বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে বলে দিলাম, মাইর লাগাবো তোকে… ?

রিতুঃ তুই এমন করে বলতে পারছি বোন (চোখের কোনায় পানি চলে এসেছে)

আমিঃ কুড়িয়ে পাওয়া বোন মানে?

ভাবিঃ আরে বলো না, ঈশা খুব পাজি। তুমি হয়তো জানো না, বাড়ির ছোট মেয়ে গুলো খুব দুষ্টু সয়তান হয়,ঈশায় তেমন। তুমি কিছু মনে করো না ভাই, রিতুকে কষ্ট দিতে ঈশা এভাবে বলে সব সময়। রিতু বড় বোন তো, মুখ বুঝে সহ্য করে সব, কিছু বলে না ঈশাকে। এই রিতু যা শুভ কে ঘরে নেওয়া যা..

রিতুঃ বুবু, আমার হাতে পায়ে গোবর লেগে আছে। তুমি শুভ ভাইয়াকে ঘরে নিয়ে যাও, আমি একটু গোসল করে আসি পুকুর থেকে।

আমিঃ না না,, ভুলেও এই কাজ করবে না তুমি রিতু…এই দুপুরে পুকুরে যেতে হবে না তোমার, এই দুপুর বেলা পুকুরে গেলে জ্বীনে যদি আবার ক্ষতি করে তোমার…

রিতুঃ জ্বীন মানে??

ভাবিঃ এই রিতু তুই যা গোসল করে আস, পরে বলছি সব তোকে।

~ রিতু গোসল করতে চলে গেলো। ঈশা আমার গলা ছিড়ে হাত ধরে ঘরের মধ্যে নিয়ে গেলো। ভাবি তার কাকিমার সাথে দেখা করিয়ে দিলো আমায়, সালাম করলাম, কথা হল কিছু। বসার ঘরে নিয়ে গেলো ভাবি। কাকিমা নাস্তা দিয়ে গেলেন, আমি আর ভাবি সেগুলো খাচ্ছি ও টিভি দেখছে। আমি বার বার দরজার দিকে তাকাচ্ছি যে রিতু এসেছে কিনা। ভাবি ব্যাপার টা বুঝতে পারছে, মিটমিট করে হাসছে ~

কিন্তু যার ভয় পাচ্ছি, সেই এসে হাজির।
আমায় দেখে সয়তানি হাসি দিয়ে বললো… দুলাভাই গো.. ? (ঈশা)

~ আমি আর উত্তর দিলাম না…
আমার সামনাসামনি এসে বসে আমার হাত ধরে বললো-
ঈশাঃ দুলাভাই গো দুলাভাই, মেরি জান কা টুকরা, মেরি বেবী কা বাপ তে তু… ?

আমিঃ এমন করো না প্লিজ ঈশা। তুমি আমার থেকে ছোট মানুষ, আমার ছোট বোনের মত তুমি… সবাই এভাবে তোমার দুষ্টুমি দেখলে তোমায় খারাপ বলবে…

ঈশাঃ চুপ করো তো, সব সময় পঁচা কথা বলবে না। আমি গুড গার্ল… দুলাভাই গো দুলাভাই, আমি তোমায় নিজে হাতে খাওয়ায়ে দিবো গো..? (বলেই মুখের মধ্যে আপেলের টুকরো চেপে ধরলো)

আমিঃ ওই ভাবি তুমি আমায় আগে বলো নাই কেনো রিতুর আবার এমন একটা বোন আছে। আর রিতুও আমায় বলে নাই তার এই বোনের কথা,, আসুক আজ রিতু পাজি… (ভাবির দিকে তাকিয়ে)

ভাবিঃ এমন পাজি তোমার সালিকা, আগে জানলে তুমি ভয় পেতে প্রেম করতে বুঝি রিতুর সাথে, তাই বলি নাই বুঝলে। আর ঈশা কে আমার ছোট দেবরের বউ করবো ভাবছি, কেমন হবে বলো তো…?

আমিঃ বললেই হল, আপনার সব বোন বুঝি আমাদের বাসায় নিবেন, তাহলে আত্মীয় বাড়বে কিভাবে.. আমি ওমন হতে দিবো না কখনো।

~ এই সময় রিতু এসে দাঁড়ালো। আমায় একটু ভেংচি কেটে রিতু বসে পাড়লো পাশেই ~

ঈশাঃ ডার্লিং তুমি কি যে বলো, আমি শুধু তোমার বউ হবো গো, অন্য কারো না…(সামনে থেকে উঠে জোর করে কোলে বসে পড়লো)

আমিঃ ওই ভাবি,,, গ্রামের মেয়েরা বুঝি এমন চালু হয়? আমার কিন্তু রাগ লাগছে খুব..

ঈশাঃ ডার্লিং তুমি কিন্তু আমায় পঁচা বলছো। আমি মোটেও পঁচা না।

~ রিতু তার ছোট বোন ঈশার কান্ড দেখে রেগে যাচ্ছে। চোখ মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে রাগে। মনে হচ্ছে ঈশার খবর আছে কিছুক্ষণের মধ্যে।
ভাবি বললো,তোমরা গল্প করো আমি কাকিমার সাথে কথা বলে আসি। ভাবি চলে গেলো ~

কিন্তু ঈশার দুষ্টুমি বেড়ে যাচ্ছে, ঈশা আমার বুকের পশম দেখে বলতে লাগলো-
ঈশাঃ ডার্লিং তোমার বুকে অনেক পশম। তারমানে আমার ডার্লিং য়ের অনেক মায়া বুঝি…? লাভ ইউ ডার্লিং..

আমিঃ ঈশা প্লিজ আমার কোলের থেকে উঠে ওখানে গিয়ে বসো। আর আমি তো তোমার ডার্লিং না, তোমার বড় ভাইয়া….

ঈশাঃ ডার্লিং চুপ করো তো। তুমি আমার ডার্লিং বুঝলে। আমি তোমায় ভালোবাসি i love you…

~ রিতু রাগে লাল টমেটো হয়ে গিয়েছে ~

আমিঃ ঈশা বোন আমার,,,এটা কিন্তু বেশি বেশি হচ্ছে। তোমার আম্মু এভাবে দেখলে আমাদের কি বলবে..? ছি ছি উঠো…

রিতু রাগি কন্ঠে ঈশাকে বললো–
রিতুঃ ঈশা তোকে কিন্তু আব্বাকে দিয়ে বকা শুনাবো বলে দিলাম। শুভ ভাইয়া আমাদের মেহমান, তারই কোলে বসতে তোর লজ্জা করে না?

ঈশাঃ তুই চুপ থাক বুবু। আমি বুঝি কার সাথে কি করতে হয়। তুই গাধা, গাধার মত থাক…

রিতুঃ এবার কিন্তু আম্মু কে ডাক দিবো..

ঈশাঃ ডার্লিং তুমি ওর কথার দাম দিয়ো না তো। ও হলো পেত্নী। ডার্লিং তুমি চুমু খাবে? তোমার ঠোঁট টা দেখি…

~ রিতুর ধৈর্য্য শেষ হয়ে গেলো। উঠে এসে ঈশার হাত টান দিয়ে আমার কোল থেকে উঠিয়ে নিয়ে দরজার সামনে নিয়ে রুম থেকে বের করে দিয়ে বললো–

রিতুঃ তুই অনেক বেয়াদব হয়ে গিয়েছিস ঈশা। তোর লজ্জা করে না এমন করতে? ছি ঈশা ছি…

ঈশাঃ তুই আমাকে বেয়াদব বললি? তাহলে দেখ…

~ ঈশা দৌড়ে এসে রিতুর হাতে কামড় বসিয়ে দিলো। রিতু সোনা আমার কষ্ট পাচ্ছে, কিন্তু তাও ঈশাকে কিছু বলছে না। সালি আমার কি রে, আমাকে কামড় দিয়েছিলো, এখন আমার বউ কেউ দিয়ে দিলো।

তাড়াতাড়ি গিয়ে রিতুকে ছাড়াতে লাগলাম। নাহলে আমার বউয়ের হাত থেকে রক্ত বের হয়ে যাবে হয়তো। রিতু আম্মু আম্মু বলে চিৎকার করছে ~
~ কাকিমা ও ভাবি দৌড়ে আসলো। কাকিমা ঈশাকে ছাড়িয়ে নিয়ে বকা দিতে লাগলো ~

রিতুঃ আম্মু আম্মু দেখো ঈশা শুভ ভাইয়াকে কত আজেবাজে কথা বলছে…

ঈশাঃ মিথ্যা কথা আম্মু। আমি কিছু খারাপ বলি নাই।

রিতুঃ আম্মু সত্যি ঈশা শুভ ভাইয়াকে কত আজেবাজে কথা বলছে আবার আমার ওইসব মানা করাতে আমায় কামড় দিয়েছে (রাগ হয়ে বললো)

কাকিমাঃ ঈশা এগুলো কি হচ্ছে? শুভ তোর ভাইয়া, তাকে তুই আজেবাজে কথা বলছিস কেনো?

ঈশাঃ বিশ্বাস করো আম্মু আমি কিছু আজেবাজে কথা বলি নাই। ও পেত্নী আমায় বেয়াদব বলায় কামড় দিয়েছি ওকে ।

রিতুঃ মিথ্যা বলবি না কিন্তু, নাহলে কিন্তু এখন… ?

ঈশাঃ কি করবি শুনি? আম্মু আম্মু জানো রিতু বুবুর সাথে শুভ ভাইয়ার কি চলছে?? শুনবে একবার বলো শুনবে…? (কাকিমার দিকে তাকিয়ে)

কাকিমাঃ থাক তোর আর বলতে হবে না। তোর শুভা বুবু আমায় সব বলছে কিছুক্ষণ আগে।

~ তারমানে ভাবি, আমার ও রিতুর সম্পর্কের কথা রিতুর আম্মু, মানে কাকিমার কাছে সব বলে দিয়েছে। কি যে লজ্জার মধ্যে পড়লাম। আমি একটু পিছনে চলে গেলাম। রিতুও দূরে গিয়ে মাথা নিচু করে ফেললো ~

ঈশাঃ তাহলে বুঝলে তো (চিৎকার করে)

কাকিমাঃ নাহয় দুই জন দুই জনকে পছন্দ করে, তাই বলে তুই তোর বড় বোনের হাত কামড়াবি নাকি ?

ঈশাঃ বোন আমায় বেয়াদব বললো কেনো?

~ রিতুর আবার রাগ উঠে গেলো। এগিয়ে এসে বললো-
রিতুঃ তাই বেয়াদব বলবো না কি চুমু দিবো? বেয়াদব মেয়ে। যানো আম্মু ঈশা শুভ ভাইয়াকে গিয়ে কোলে বসে শুভ ভাইয়াকে বলে পাপ্পি দিবে… ছি ছি…

ঈশাঃ আইছে ম্যাডাম, হওওও দিতে চাইছি পাপ্পি, তাতে তোর কি? আমি একশ বার দিবো। পারলে ঠেকা…

কাকিমাঃ (রেগে) ঈশা এই বার কিন্তু খুব বারাবাড়ি হচ্ছে। আমার কিন্তু মাথা গরম হচ্ছে, কি বেয়াদবের মত কথা বলছিস..?

ঈশাঃ ওহহ এখন আমি বেয়াদব। আর সেই লোক যখন আমায় পাপ্পি দিয়েছে তখন কি সে বেয়াদব হয় নাই?

কাকিমাঃ সেই লোক মানে? কে কি করছে তোর সাথে?

ঈশাঃ কে আবার, আপনার বড় মেয়ের জামাই শুভ স্যার… আমার সাথে ?

~ ও মোর খোদা, এটা আবার কোন বিপদে পড়লাম। প্রেম তো করতে আসি নাই, আরো বিপদে পড়তে আসছি মনে হচ্ছে ~

আমিঃ ছি ঈশা ছি, এটা কি বলছো তুমি? তুমি আমার বোনের মত, তোমায় এটা কিভাবে করবো।

ঈশাঃ বোনের মত না বাল… বোনের মত হলে তো ওমন করে পাপ্পি দিতেন না ওতো গুলো…

~ সবাই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। কি বিপদে ফেললো সালি আবার। আজ যদি ঈশা তুমি সালি না হয়ে বউ হতে, তাহলে বুঝাতাম কত ধানে কত চাল (মনে মনে) ~

আমিঃ ঈশা তুমি কি বলছো এই আজেবাজে কথা?

ঈশাঃ মিথ্যা বলবেন না কিন্তু, বলবো আমি সব বলবো? আপনি আমার সাথে কি কি করছেন…

আমিঃ আমি আবার কি করছি,, কি এমন বলবেন বলুন…? (ভয়ে ভয়ে)

শুবশ্রী ভাবিঃ- কি বলবি বল বল?

ঈশাঃ তাহলে শুনুনু………….. ~ গল্প চলবে ~

বিঃদ্রঃ ঈশা এমন কি বলবে শুভর নামে, জানতে হলে পড়তে হবে আগামী পর্ব।