চন্দ্রপ্রভা রজনী পর্ব-২০+২১

0
332

#চন্দ্রপ্রভা_রজনী
#পর্বঃ২০
লিখাঃসামিয়া খান

সাদা-শুভ্র বর্ণের সিলিং এর দিকে এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে রয়েছে মায়া।হাতে ক্যানোলা লাগানো।রুমের সবকিছু শুভ্র।বলতে গেলে ধবধবে সাদা।এমনকি তার পড়নের গাউনটাও সাদা।আগে এরকম সাদার মধ্যে থাকতে বেশ অস্বস্থি লাগতো তার কাছে।কিন্তু ইদানীং অভ্যেস হয়ে গিয়েছে।ঠিক যেমন দিহানকে ছাড়া থাকাতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে।দিহানের কথা মাথায় আসতেই চোখের কার্নিশ বেয়ে এক ফোঁটা জল গড়িয়ে পরলো।একই বাড়ীতে থাকে তারা।অথচ তাদের মধ্যে কতো দূরত্ব!মায়ার এক্সিডেন্টের দুই মাস অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে।এদুমাসে অনেক কিছু বদলে গিয়েছে।তার মধ্যে সবথেকে বেশী যে জিনিস পরিবর্তন হয়েছে তা হচ্ছে দিহানের ব্যবহার।দিহান আর আগের মতো মায়াকে ঠিক ভালোভাসে না।আচ্ছা ভালোবাসা নামক বস্তু বা অনুভূতি আদৌ কি কমে?এটা ভেবে পায়না মায়া।

দরজা খোলার শব্দে সেদিকে তাঁকালো মায়া।দিহান রুমের ভিতরে প্রবেশ করলো।কালো রঙের একটা পোশাক পরিধান করে রয়েছে সে।পুরুষ মানুষকে কালো তে বেশী সুন্দর লাগে।এতোদিনে দিহানের রুপ মনে হয় আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।মায়াকে দেখে একটা হাসি দিলো দিহান।ব্যাস ওটাই যথেষ্ট ছিল মায়াকে ঘায়েল করার জন্য।দিহানের এই হাসিগুলো কোথাও গিয়ে বড্ড লাগে মায়ার।মায়ার যতো অভিযোগ ছিল দিহানের উপর তা মূহুর্তে গলে পানি হয়ে গেলো।কিন্তু কোথাও কিঞ্চিৎ অভিমান মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো।যার দরুণ দিহানের থেকে চোখ সরিয়ে উল্টো দিকে তাঁকালো।উল্টো দিকে রয়েছে ড্রেসিং টেবিল।সে হিসেবে মায়ার দৃষ্টি একদম আয়না ভেদ করে বিপরীতে দিহানের উপর এসে ঠেকলো।

সাথে সাথে মায়া তার দৃষ্টি বন্ধ করে ফেলল।আরশিতে এখন আর নিজের মুখমন্ডল দেখতে ভালো লাগেনা তার।এক্সিডেন্টের এর ফলে একটা বিশ্রী দাগ পুরো মুখমণ্ডলে জায়গা করে নিয়েছে।যদিও দাগটাতে তাকে খুব একটা অসুন্দর দেখায় না তবুও মনের মধ্যে কোথাও একটা খুঁতখুঁতে ভাবটা থেকেই যায়।

মায়ার অবস্থা দেখে এক গাল হাসলো দিহান।হাসির মধ্যেও একটা চাপা কষ্ট অনুভব করতে পারছে সে।খুব শীঘ্রই যে তার জানটাকে তার থেকে আলাদা করে ফেলবে মানুষ।

“মায়ামতি!”

দিহানের কণ্ঠে নিজের নাম অনেকদিন পর শুনতে পেল মায়া।ডাকটা শুনে ক্রন্দন ঠেকাতে মায়া নিজের দন্ত দিতে অধর চেপে ধরলো।মায়ার থেকে সারা না পেয়ে দিহান আবার ডাকলো,

“মায়ামতি গো!”

এবার তাঁকালো মায়া তার দিকে।নয়ন ভর্তি অশ্রু তার।দিহান গিয়ে মায়ার পাশে বসলো।মায়ার চিবুকে একটা চুম্বন প্রদান করে তার বুকে মাথা রাখলো দিহান।

বাস্তুহারা যদি হুট করে থাকার জন্য কোন জায়গা খুুঁজে পায় তাহলে যেমন খুশী হবে ঠিক তেমনি খুশী এখন মায়া হচ্ছে।আজ কতোদিন পর দিহানের স্পর্শ অনুভব করতে পারলো।দিহানের এই একটা স্পর্শের জন্য সে কতোকাল তৃষ্ণার্ত ছিল।
আজ সেই তৃষ্ণা মিটলো।

“মায়ামতি তুমি কেমন আছো?”

অভিমানী কণ্ঠে মায়ার উত্তর,

“আজ সময় হলো আপনার আমার কাছে আসতে?এতদিন মনে ছিল আমার কথা?”

“মনে তো সবসময় থাকে মায়ামতি।কিন্তু আমি যে নিরুপায়।”

“কচুর নিরুপায়।আপনি জানেন আমি কতো কেঁদেছি।”

“হুম জানি তো।কিন্তু আরো যে কাঁদতে হবে তোমার।”

“মানে?”

মায়ার বুক থেকে মাথা উঠালো দিহান।তার দিকে আর তাঁকালো না।দৃঢ়তার সাথে বলল,

“তোমার স্যালাইন শেষ মায়া।সেই সাথে এ বাড়িতে থাকার সময়সীমাও।এখন তোমার চলে যেতে হবে।”

দিহানের কথা শুনে বজ্রাহতের মতো হয়ে গেল মায়া।একটা ঢোক গিলে দিহানকে প্রশ্ন করলো,

“আপনি মজা করছেন তাই নাহ?”

“নাহ্।”

“আপনি মজা করছেন আমি জানি।”

“ভুল জানো।”

“আপনি এরকম করতে পারেন না!”

“পারি করতে।তোমার মা এসেছে তোমাকে নিয়ে যাবে এখন।”

বিছানা থেকে উঠে দাড়ালো দিহান।মায়ার দিকে একবার তাঁকিয়ে দরজার দিকে পা বাড়ালো।এতক্ষণ নির্লিপ্ত থাকলেও দিহানকে যেতে দেখে মায়ার হুঁশ ফিরলো।হাত থেকে ক্যানোলা টান দিয়ে খুলে বিছানা থেকে নামার চেষ্টা করলো।কিন্তু পারলো না মেঝেতে পরে গেল।এক্সিডেন্টের সময় পায়ে আঘাত পাওয়ার কারণে হাঁটতে পারেনা মায়া।

গলা ফাঁটিয়ে চিৎকার করে কাঁদছে মায়া কিন্তু দিহান তার কথা শুনলো না।চলে গেলো তার দৃষ্টির বাহিরে।মেঝেতে পড়ার কারণে পায়ে বেশ আঘাতপ্রাপ্ত হলো মায়া।এদিকে ক্যানোলা টান দেওয়ার কারণে হাত দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে।ওই অবস্থায় মাটিতে বিলাপ করে কাঁদছে।মুখ দিয়ে জোরে জোরে আওরাচ্ছে,

“এগুলো সব স্বপ্ন,সব স্বপ্ন।বাস্তব নয়।”

“না মায়া তুমি ভুল করছো।এটা বাস্তব।এবং এখন তোমার আমার সাথে যেতে হবে।”

নারী কণ্ঠ শুনে মাথা তুলে সামনে তাঁকালো মায়া।পঞ্চার্শোধ একটা প্রৌড়া তার সামনে দাড়িয়ে আছে।মুখে বেশ আভিজাত্যের ছাপ।পোশাক দেখে মনে হচ্ছে বিদেশি কেউ হবে।চেহারাতেও বাঙালির কোনো ছাঁপ নেই।অথচ স্পষ্ট বাংলায় বলছে।

ঠিক হয়ে বসার চেষ্টা করলো মায়া।কিন্তু পায়ে টান লাগায় চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো।মায়ার ব্যাথা পাওয়া দেখতে প্রৌড়াটি শশব্যস্ত হয়ে গেল।তাড়াতাড়ি এসে মায়াকে ধরলো।

“মায়াবিনী!তুমি ব্যাথা পেয়েছো?”

“কে আপনি?আর আমি মায়াবিনী নই।মায়া!”

“নাহ!তুমি আমার মেয়ে মায়াবিনী।”

মায়ার কপালে ছোট একটা চুমো খেলো প্রৌড়াটি।

“আমি আপনার মেয়ে নই।আপনার ভুল হচ্ছে।আমার মায়ের নাম হুসনেআরা।আপনি প্লিজ দয়া করে ওই রুমে আমার স্বামী আছে তাকে ডেকে দেন।”

“দিহান তোমার স্বামী কোনোকালেই ছিলনা।তোমাদের বিয়ে সব নাটক ছিল।দিহান তোমাকে ভোগ করেছে শুধু।”

“এই, এই আপনি কে এগুলো বলার?কোন সাহসে আমার স্বামীর সম্পর্কে বাজে কথা বলেন?”

“ধীরে মায়াবিনী!আমি তোমার মা।”

“মিথ্যাবাদী।কতোক্ষণ ধরে মিথ্যা বলছে।আপনি মানসিক বিকারগ্রস্থ।আপনাকে এ রুমে দেখলে দিহান দেখবেন কি করে।দিহান,দিহান,দিহান!”

মায়ার ব্যাকুল কণ্ঠে ডাক দিহান শুনতে পেল কীনা কে জানে।কিন্তু তার ডাকে সাড়া দিলো না।মায়াকে এভাবে নেওয়া যাবেনা তা বেশ বুঝতে পারলো প্রৌড়াটি।তাই ফোন হাতে ম্যাসেজ করে কাউকে রুমে আসতে বলল।

একটু পরে আরিয়ান রুমে প্রবেশ করলো।আরিয়ানকে দেখে মায়া আরো জোরে জোরে দিহানকে ডাকা শুরু করলো।সেদিকে তোয়াক্কা না করে একটা ইঞ্জেকশন মায়ার শরীরে পুঁশ করে দিলো আরিয়ান।থেমে থেমে মায়া গভীর ঘুমে তলিয়ে যাচ্ছে।অথচ তার ঠোঁট তখনও একটা নামের জন্য নড়ছে।আর তা হচ্ছে দিহান!

চলবে,,,

#চন্দ্রপ্রভা_রজনী
#পর্বঃ২১
লিখাঃসামিয়া খান

আলোর কোন বর্ণ আছে?নাহ!নেই কোনো বর্ণ।বিচিত্রহীন আলো।অথচ মানুষ আলোর মধ্যে সাদা রং খুঁজে।কারণ?কারণ হলো আলো যেকোনো রঙকে আরো উজ্জীবিত করে তুলতে পারে।বিড়াল ছোট্ট একটা প্রজাতির নাম।অথচ তার মধ্যেও কতো মান-অভিমান, ভালোবাসা বিদ্যমান।তাহলে কেন তা সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত মানুষ এর মধ্যে নেই?এসব প্রশ্নের কোন উত্তর খুঁজে পায়না দিহান।মায়াকে নিয়ে চলে যাওয়া হয়েছে বেশ কিছুক্ষণ আগে।একবারও বাঁধা দিতে পারেনি দিহান।আইনের হাতে যে সে বন্ধি।

সে বাঁধা না দিলেও অবুঝ জিকজ্যাক নামের ছোট্ট বিড়ালটি বাঁধা দিয়েছে।যতোক্ষণ মায়াকে গাড়ী পর্যন্ত নেওয়া হলো ততক্ষণ দৌড়াদৌড়ি করেছে একবার দিহানের কাছে তো একবার মায়ার কাছে।মায়া তখন গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন।মেও মেও প্রতিধব্বনি করে বার বার দিহানকে জানান দিচ্ছিলো মায়াকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না আর।মায়াকে নিয়েই গেল।অনেকটা ক্ষোভেই তাই জিকজ্যাক দিহানের উপর আক্রমণ করে বসে।দিহান আঘাতপ্রাপ্ত হয়নি কিন্তু অবাক হয়েছে জিকজ্যাকের ব্যবহারে।ঠিক সেসময় থেকে জিকজ্যাককে একটা রুমে আঁটকে রাখা হয়েছে।

মায়া যে বিছানায় শুয়ে ছিলো সে বিছানায় শুয়ে আছে দিহান।মাঝেমধ্যে জোরে জোরে নিশ্বাস ফেলে নিজের শূন্যতাগুলোকে জানান দিচ্ছে।

কীসের শূন্যতা তার মধ্যে?জনপ্রিয় তারকা দিহান আহসান।না আছে টাকার অভাব না অন্য কিছুর।তাও সে আজকে নিজের বউকে নিজের কাছে রাখতে পারলো না?এত সফলতা দিয়ে কি হবে যদি নিজের সবথেকে মূল্যবান জিনিস হারিয়ে ফেলে।

পকেট থেকে ফোন বের করে মাহসিনের নাম্বার ডায়েল করে তাকে রুমে আসতে বলল দিহান।কথা বলে ফোনটা কেঁটে উঠে বসলো।আজকে আর একটা জিনিস হারাবে এখন।ঠিক হারাবে না!কালসাপের বিষাক্ত কুন্ডলি থেকে নিজেকে মুক্তি দিবে।

অনেকটা উৎফুল্ল মনে মাহসিন দিহানের সামনে এসে দাড়ালো।মনে হচ্ছে কোন বিষয়ে সে খুব খুশী।একনজর মাহসিন এর দিকে তাঁকিয়ে দিহান তার দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো,

“এত খুশী কেন মাহসিন আজকে?”

বত্রিশ দন্ত্য বের করে হাসতে হাসতে মাহসিন উত্তর দিলো,

“স্যার আসলে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।একটু আগে গ্রাম থেকে মা ফোন করে বলল।যাকে আমি ভালোবাসাতাম সে মেয়ের সাথে।”

“ওহ আচ্ছা!তাই নাকী?তাহলে তো তোমাকে অভিনন্দন।”

“জ্বী স্যার দোয়া করবেন।”

“আমার থেকে দোয়া চাও?”

“কী যে বলেন না স্যার।আপনার দোয়া তো আগে লাগবো।”

“ঠিক আছে।তোমাকে আজকে আমি একটা স্পেশাল দোয়া দিচ্ছি।”

“সেটা কি স্যার।”

“বলছি।”

কিছুক্ষণ দিহান চুপ থেকে মাহসিনের চোখে একদম চোখ রেখে বলিষ্ঠ কণ্ঠে বলল,

“তোমার ভালোবাসা তোমার থাকবেনা।ঠিক যেমন আমার ভালোবাসা আমার কাছে নেই।”

মাহসিনের মুখ পান্ডুর বর্ণ ধারণ করেছে।এই ভয়টাই সে পাচ্ছিলো।শেষমেশ দিহান সব জেনে গেল না তো?

“স্যার আপনি আমাকে এ দোয়া দিতে পারলেন?”

“কেন পারবো না?তুমি যদি মায়াকে আমার থেকে দূরে সরানোর ষড়যন্ত্রে অংশগ্রহণ করতে পারো তাহলে আমি কেন এই দোয়া দিতে পারবো না।”

হুট করে দিহানের পা ধরে বসে পড়লো মাহসান।আকুলিবিকুলি করে বলছে,

“স্যার আমাকে মাফ করে দেন। আমার ভুল হয়ে গিয়েছে।”

“তুমি সর্বপ্রথম আমার বিশ্বাস তখন ভেঙেছিলে যখন তুমি আরিয়ান যে মায়ার প্রেমিক তা জানা সত্বেও চুপ ছিলে।আর দ্বিতীয়বার আমার ভালোবাসাকে দূরে সরিয়ে। তৃতীয়বার যে আমাকে খুন করতে চাবে এমন পরিকল্পনাতে অংশগ্রহণ করবেনা তার কোন গ্যারান্টি নেই।”

“না স্যার আপনি ভুল বুঝছেন।আমি নিজেকে শুধরে নিবো।”

“বিশ্বাঘাতককে প্রথমবার ক্ষমা করে দিলে তা ভুল।দ্বিতীয়বার ক্ষমা করে দিলে তা বোকামি। আর তৃতীয়বার ক্ষমা করে দিলে তা পাপ।আর আমি পাপ করতে চাইনা।শুধু একটা কথা মনে রাখবে। আমার শরীরে রাজনৈতিক রক্ত।আমাকে মাত দেওয়া এত সহজ না।তোমার প্রাপ্য টাকা তোমার ব্যাংকে চলে যাবে।তুমি এখন আসতে পারো।”

,
,
,

“তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ আরিয়ান আমার মেয়েটাকে আমার কাছে ফেরত দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য।”

“আমি আপনার জন্য না নিজের জন্য দিহানকে মায়ার থেকে সরিয়েছি।”

আরিয়ানের সামনে থাকা প্রৌড়াটির নাম হলো লিরা।লিরা একটা মেকী হাসি হাসলো।

“তা অবশ্য জানি আরিয়ান।নিজের স্বার্থ তো পাগলও বুঝে।আর তুমি অবশ্যই পাগল নয়।”

“হুম।আমি খুব শীঘ্রই সুবাহকে ডিভোর্স দিবো।ইলেকশনটা চলে গেলে।সে পর্যন্ত মায়াকে দিহানের থেকে দূরে সরিয়ে নেন।”

“এজন্য তো আজকে রাতে ফ্রান্স চলে যাবো।রাতে ফ্লাইট।”

“লিরা মম! এখনো কিন্তু দিহানের বিবাহিত স্ত্রী মায়া।”

“ওটা নিয়ে টেনশন করো না আরিয়ান।এতকিছু হলো তখন এটার সমাধানও পাবো।”

সিগারেট ধরাতে ধরাতে আরিয়ান বলল,

“আমি কি মায়ার সাথে একবার দেখা করবো?আজকে তো চলে যাবেন।”

“নো ডিয়ার।এখন দেখা করা রিস্ক।তোমাকে নিয়ে অনেক নেগেটিভ চিন্তা আছে ওর মনে।তা আগে দূর হতে দাও।”

“ঠিক আছে।কিন্তু মায়া কি রাজি যাওয়ার জন্য?”

“হ্যাঁ, আমি কথা বলেছি।ও কিছুই বলেনি।অনেকটা রোবট হয়ে গিয়েছে।”

“শক পেয়েছে বেচারি।”

“হয়তো।”

“চিন্তা নেই সব ভুলে যাবে।সময় আসতে দেন।দিহান নামের কাউকে চিনবেনা মায়া।”

কথাটা বলে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল আরিয়ান।মনে হচ্ছে বৃহদাকার একটা পাথর বুক থেকে নেমে গিয়েছে।এখন শুধু মায়ার সাথে মিলনের দিনের অপেক্ষা।

,
,
,

সাদা তুলতুলে নরম পশমে আবৃত নীলচোখের বিড়ালটি লুকিয়ে লুকিয়ে দিহানকে দেখছে।কিন্তু কাছে আসছে না দিহানের।অভিমান নাকী ভয়?তা জানেনা দিহান।

কালো রঙের একটা ক্রিস্টাল পাথরের একটা লকেট তার গলায় ঝুলছে।একটু হেঁসে দিহান জিকজ্যাককে কোলে তুলে নিলো।দিহানের কোলে উঠেও তার থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখলো জিকজ্যাক।বড্ড অভিমান জমেছে।

“বাবু জিকজ্যাক।এনে দিবো তো মায়াকে।কয়দিন অপেক্ষা করো।”

বিড়ালটা কি বুঝলো কে জানে।দিহানের কথার প্রতিত্ত্যুরে মেও মেও প্রতিধব্বনি উঠালো।

“বললাম তো এনে দিবো।এবং আজ থেকে ঠিক দুমাস পরে তোমার বিয়েও দিবো।সাথে থাকবে আমার মায়ামতি।চলো এখন সূর্যোদয় দেখবো।”

জিকজ্যাককে কোলে নিয়ে দিহান বেলকনিতে এসে দাঁড়ালো।মায়াবিহীন একটা রাতের অবসান ঘটলো।

হালকা হালকা আলো এসে দিহান আর জিকজ্যাকের শরীরে এসে লাগছে।ঠিক এসময় শহরের একপ্রান্ত থেকে একটা প্লেন উড্ডয়ন করলো ফ্রান্সের উদ্দেশ্য।

দিহান হাত বাঁকিয়ে সময়টা একবার দেখে নিলো।মায়ার ফ্লাইটের সময়ের অবসান হয়েছে।সামান্য হাসলো দিহান।আকাশের দিকে তাঁকিয়ে মিনমিন করে বলল,

“আবার দেখা হবে তোমার-আমার মায়ামতি।ভিনদেশে সম্পূর্ণ আলাদা একটা কাহিনি নিয়ে।সম্পূর্ণ আলাদা সময়।”

চলবে,,