চন্দ্রপ্রভা রজনী পর্ব-২৭+২৮

0
339

#চন্দ্রপ্রভা_রজনী
#পর্বঃ২৭
লিখাঃসামিয়া খান

লিরা ঘামছে।প্রচুর ঘেমে গিয়েছে।কপালে বিন্দু বিন্দু জলকণা জমে আছে।অনবরত হাতে পায়ে কম্পণ সৃষ্টি হচ্ছে।তার এত অস্থিরতার কারণ হচ্ছে মায়া।মায়াকে পাচ্ছেনা সে।সেই সকালে মায়া বাসা থেকে বের হয়েছিল।কিন্তু এখনো ফিরে যাওয়ার নামগন্ধ নেই।এদিকে যেখানে যেখানে মায়ার যাওয়ার সম্ভাবনা আছে সেরকম সব জায়গায় খোঁজা শেষ।তাও তাকে খুঁজে পাচ্ছেনা লিরা।ক্লান্ত হয়ে একসময় ব্রীজের উপর বসে পড়লো সে।যে করেই হোক মায়াকে খুঁজে বের করতে হবে।তা নয় সে যা চায় তা কখনো সম্ভব হবেনা।

হুট করে কারো কণ্ঠস্বরে পিছন ফিরে তাঁকালো লিরা।চকচকে ঝলমলে হাসি মুখে লাগিয়ে দিহান দাঁড়িয়ে আছে।লিরার মেজাজ চরম খারাপ হলো।এতোসময় পর সে বুঝতে পারলো আসলে মায়া কোথায় গিয়েছে।বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো লিরা।

“কেমন আছেন ফেক শ্বাশুড়ী আম্মা?”

“তুমি আসলে একটা জঘন্য ছেলে।আমার মেয়ে মায়াবিনী কোথায়?”

লিরার কথা শুনে দিহান নিজের ব্লেজার ও প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে কিছু খোঁজার চেষ্টা করলো।মনে হয় কাঙ্ক্ষিত বস্তুটি পায়নি।গলায় মন খারাপের আবাশ মিশ্রিত করে বলল,

“আমার পকেটে তো আপনার মায়াবিনী নেই?”

“আমি কি জোকার তোমার কাছে যে ফাজলামো করো?”

“উহু!ঠাট্টার সম্পর্ক না তো আমাদের শাশুড়ী আম্মা।”

“ভদ্রলোক না তুমি?তাহলে ভদ্রভাবে কথা বলো।”

“বলবো।আগে বলেন আমার বউ কোথায়?”

“তা আমার থেকে ভালো তুমি জানো।”

“দেখেন,সিরিয়াসলি বলছি আমার বউ কোথায়?”

দিহানের বলিষ্ঠ কণ্ঠে লিরা একটু অপ্রতিভবোধ করলো।মিনমিন করে কিছু একটা মনে মনে বলল।

“মায়া কোথায়?”

“আমি নিজেও জানিনা মায়া কোথায়।সেই তখন খুঁজে চলেছি কিন্তু মায়াকে পাচ্ছিনা।”

“আপনি মজা করছেন তাই নাহ?”

“নাহ।সত্যিই আমি মায়াকে খুঁজে পাচ্ছিনা।”

লিরার সাথে কথা বলে আর সময় নষ্ট করতে চাইলো না দিহান।দৌড়ে সে স্থান ত্যাগ করলো।
,
,
,
সুবাহ ঘুমাচ্ছে।আর পাশে আরিয়ান বসে হসপিটালের কাজ করছে।এখন বেশ খানিকটা সুস্থ সুবাহ।বাচ্চাটাও সুস্থ আছে।আরিয়ান মনে মনে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছে।সুবাহ আর তার অনাগত সন্তানের সমস্ত দায়িত্ব আজীবন আরিয়ান বহন করবে।মায়াকে বিয়ে করার পরও।একটু নড়েচড়ে উঠলো সুবাহ।চোখ মেলে আরিয়ানকে দেখে উল্টো ঘুরে গেল।আরিয়ানকে এখন সুবাহার বনের হনুমান এর মতো লাগছে।লোকটা আস্ত একটা গন্ডার।চামড়া সাদা হলে কীহবে?স্বভাবে গন্ডার আর মহিষ।মনে মনে এত গালি শুনেও সুবাহার মন শান্ত হলো না।তার কেন যেন ইদানীং মনে হয় শুধু আরিয়ানকে শাস্তি দিতে।কিছু একটা মাথায় আসতেই উঠে বসলো সুবাহ।

“আরিয়ান কিছু খাবেন?”

“তুমি সুস্থ এখন?”

“অনেকটা।”

“ঠিক আছে।একটু আচর খেতে মন চাচ্ছে সুবাহ।একটু আনবে।”

“আরিয়ান!ইয়া আলাহ!আপনিও প্রেগনেন্ট আমার মতো?”

“ছিঃ সুবাহ।এই বুদ্ধি তোমার?”

“আমার বুদ্ধি তো এখন খুলে গেলো।বাবু দেখেছো তোমার বাবার পেটেও একটা বাবু আছে।ঠিক তোমার মতো।”

কথাগুলো সুবাহ নিজের পেটে হাত দিয়ে বলছিল।সেদিকে মি.বিন এর মতো মুখ করে আরিয়ান কিছু সময় তাঁকিয়ে ছিল।

“মেন্টাল তুমি?”

“আচ্ছা আমার প্রাণের ডাক্তার।আপনার বাবুটা সিজারে হবে নাকী নরমালে?”

“জঘন্য তুমি সুবাহ।”

“এই আপনার প্রতি মাসে মান্থলি যে হতো তা তো আমি টের পায়নি কখনো।এজন্যই তো বলি ন্যাপকিনগুলো কমে যায় কেন?”

“সুবাহার বাচ্চা!তোমাকে পাগলাগারদ রেখে আসবো যদি আর একটা বাজে কথা বলো।”

“ওহ আল্লাহ আমার তো মিষ্টিও বিলাতে হবে।আমার জামাই প্রেগনেন্ট।আচ্ছা কয়মাস চলে আপনার?বাচ্চাটা বিয়ের আগের না পরের?”

“স্টুপিড মেয়ে।পুরাই মেন্টাল হয়ে গিয়েছে।জঘন্য।”

গজরাতে গজরাতে আরিয়ান রুম ত্যাগ করলো।আরিয়ান যাওয়ার পর সুবাহ শরীরের আড়মোড়া ভেঙে আবার ব্ল্যানকেট জড়িয়ে শুয়ে পড়লো।আপাতত শান্তি লাগছে তার।প্রচুর শান্তি।
,
,
,
অন্ধকার!ঘুটঘুটে অন্ধকার একটা রুমে মায়া অবস্থান করছে।তার হাত -পা বাঁধা।নরম বিছানায় শুয়ে আছে সে।অবসাদে ঘুম চলে আসছে তার কিন্তু পারছেনা ঘুমাতে।কাঁধের মধ্যে কারো গরম নিশ্বাস পাওয়ায় শিওরে উঠলো মায়া।উঠে বসতে যাবে তখন দিহান পাশের বেড ল্যাম্প জ্বালিয়ে দিলো।

“শালার বাচ্চা শালা।আমাকে রেখে কই গিয়েছিলি?”

“উফ মায়া।এগুলো কেমন গালি।আর নিজের স্বামীকে কেউ শালা বলে?”

“আমার হাত খুলেন।”

“উহু।আগে প্রমিস করো।বিড়ালের মতো ছটপট করবেনা।তা নয় দিবো মাইর।”

মায়ার বাঁধন খুলে দিলে ইচ্ছামতো দিহান কিছুক্ষণ আঁচড়ে,কাঁমড়ে একাকার করে দিলো মায়া।দিহান পুরোটা নিশ্চুপ সহ্য করলো।আঘাত করা শেষ হলে দিহানের বুকে মাথা রেখে বেশকিছুক্ষণ কাঁদলোও মায়া।

“বউবাণ!”

“আবার বউবাণ কি দিহান?”

“বাণ মানে হচ্ছে তৃষ্ণা।আর বউ মানে তো জানো।এজন্য বউবাণ মানে বউয়ের তৃষ্ণা।”

“আপনি এত আজগুবি কথা বানান কীভাবে?”

“নায়ক বলে কথা।”

“ঢং।”

“আমার উপর রাগ করেছিলে তাই নাহ?”

“হুম ছিলাম।অনেক।”

“জানিতো।এজন্য তাড়াতাড়ি তোমাকে নিতে আসলাম।”

“তাহলে আসতে দিলেন কেন?”

মায়ার মাথায় হাত বুলানো শুরু করলো দিহান।

“তোমার এক্সিডেন্টের সময় হুট করে লিরা নামের ভদ্রমহিলা হসপিটালে উপস্থিত হোন।এসেই তোমাকে নিজের মেয়ে দাবী করে বসে।তোমার বাবা-মা এবং আমি অবরোধ করলে মহিলা কেস করে বসে।সব আমার পক্ষে ছিল।হুট করে তোমার বাবা-মা বেঁকে বসে। তার কারণ এখনো জানিনা আমি।”

“হয়তো আমি তাদের মেয়ে না তাই।”

“উহু।তারাই তোমার বাবা-মা।”

“তাহলে?”

“জানিনা কারণ কি।তাও সব আমার পক্ষে যেতো মাঝখান থেকে মাহসিন বিশ্বাসঘাতকটা করলো।”

“এটা জানি আমি।”

“তোমাকে কে বলল?”

“রিশা এসেছিল রুমে।”

“ওহ।তাও ভালো খুলে দেয়নি বাঁধন।তা নয় আজকে এট্যাক দিতে আমাকে।”

মায়াকে ছেড়ে উঠে বসলো দিহান।আলমারি থেকে একটা শাড়ী বের করে মায়াকে পড়তে দিলো।

“এটা পড়ে আসো মায়া।আজকে আবার তোমাকে বউ সাজাবো।আমার মনের মতো করে।”

চলবে,,

#চন্দ্রপ্রভা_রজনী
#পর্বঃ২৮
লিখাঃসামিয়া খান

“মনুষ্য প্রজাতির চিরায়ত স্বভাবের মধ্যে অন্যতম স্বভাব হচ্ছে যখন তার দোষ সকলের সামনের প্রকাশ পায় তখন অনুতপ্তবোধ করা।অথচ এই চিরায়ত স্বভাবের ব্যতিক্রম রয়েছে কিছু ব্যক্তির মধ্যে।যারা শেষ পর্যন্ত এই ধারণায় থাকে একমাত্র আমিই সঠিক।পরবর্তীতে তাদের জীবন ভেলা জীবননদীর কোন প্রান্তে গিয়ে উপনীত হয় তা বলা মুশকিল।এবং অত্যন্ত দূর্ভাগ্য হলো সেই হতভাগ্যের যার সাথে সারাজীবন এরকম ঠিক-বেঠিকের খেল খেলা হয়।তাদের অদৃষ্টের সমান পরিণতি বিরাজমান থাকে উক্ত হতভাগ্যের অদৃষ্টে।”

হাতের হ্যান্ডক্যাফের দিকে তাঁকিয়ে একমনে কথাগুলো বলে চললো লিরা।মনে হচ্ছে অনেক বিজ্ঞবান দার্শনিক তার জীবনদর্শনের ঘটনাগুলো ব্যক্ত করে চলেছে।পুলিশের কাস্টাডি রুমে লিরার মুখোমুখি বসে কথাগুলো শুনতে বেশ অদ্ভুত লাগলো দিহানের কাছে।ঠিক বেমানান লাগছে এই কথাগুলো।বন্ধ কারাগারে বন্দির মুখ থেকে শুনছে এজন্য হয়তো।

“পানি খাবেন লিরা মা?”

“পানি খাবো কিন্তু কখনো মা বলবে না আমাকে।”

দিহান কোন উচ্চবাচ্চ্য না করে পানির গ্লাস এগিয়ে দিলো লিরার দিকে।গ্লাসটা হাতে নিয়ে ঢকঢক করে সম্পূর্ণ গ্লাসটা খালি করে টেবিলে রাখলো লিরা।লম্বা একটা শ্বাস নিয়ে বলতে শুরু করলো,

“আমার বাবার কোন ছেলে সন্তান ছিলনা।ছিলনা ঠিক তা বলবো না।আমাদের একটা ভাই হয়েছিল যখন আমার বয়স আট।যার ঠোঁটদুটো রক্তজবার মতো লাল ছিল।এবং মুখে ছিল অমায়িক হাসি।কিন্তু বাবা ছোট থেকে পুরুষবিদ্বেষী ছিলেন।ছেলেদের সহ্য করতে পারতেন না।শতাব্দীর পর শতাব্দীতে এরকম কেউ জন্মায় যে কীনা ছেলে সন্তান চায়না তা খুব দুর্লভ।আব্বুজান সেই দুর্লভ বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিলেন।এজন্য ভাইকে তিনি এক নিঃসন্তান ভিক্ষুক দম্পতিকে দান করে দেন।অথচ তার ছিল অঢেল টাকা পয়সা।তিনি এই কাজটা কেন করেছিলেন তা খুব পরে জানতে পেরেছিলাম আমরা।”

কিছুসময় এর জন্য থামলো লিরা।কিযেনো ভেবে চলেছে একমনে।

“আপনি মায়াকে কেন মারতে চান?”

“এত অস্থির হবেনা দিহান।বলবো আমি।”

“বলেন।কিন্তু একটু তাড়াতাড়ি মায়া একা।”

লিরা তা তোয়াক্কা না করে আবার আরম্ভ করলো।

“আমার মা ও বাবার বৈশিষ্ট্যের অধিকারী ছিলেন।ভাইকে হাড়ানোর বিন্দুমাত্র আক্ষেপ তারমধ্যে ছিলনা।যখন ভাই হয় তখন মাত্র আমি আট বছরের।মস্তিষ্কের কিছুটা পরিপক্কত্বা ছিল।সেজন্য এই ঘটনাগুলো মনে রাখতে পেরেছিলাম।ভাই হওয়ার দুইবছর পর আমার বোন হুসনে আরা মানে মায়ার মায়ের জন্ম হয়।দুই মেয়েকে বাবা অনেক ভালোবাসতেন।বলতে গেলে কোন রাজার মেয়ে থেকে কম ছিলাম না।সময় যেতে থাকে এবং আমি আর হুসনে আরা বড় হতে থাকি।আমার বাইশ বছর বয়সে বিয়ে হয় এক ইতালির প্রবাসীর সঙ্গে।বিয়ের পর ইতালিতে নিয়ে আসা হলো আমাকে এবং বেশ সুখেই ছিলাম।”

এ পর্যায়ে আবার থামলো লিরা।এই থেমে থেমে বলা কথাগুলোতে বেশ খারাপ লাগছে দিহানের।তাও মুখে শক্ত রেখা ফুটিয়ে চুপ করে বসে রইলো।

“বিয়ের বেশকিছুদিন পর আমি জানতে পারলাম আমি কখনো মা হতে পারবো না।বিশ্বাস করো পুরো দুনিয়া উল্টে গিয়েছিল।আমার স্বামী আমাকে প্রচুর মেন্টালি সাপোর্ট দিতো।তাতে সাময়িক ব্যথাটা কিছুটা কমতো।তার প্রায় পনের বছর পর আমি কনসিভ করলাম।আমার পুরো দুনিয়াতে জান্নাত অনুভব হতে লাগলো।যখন আমার নয়মাস চলছে তখন হুসনে আরা তার স্বামী আফজাল এবং মা-বাবা বেড়াতে আসলো ইতালি।তখন হুসনে আরার পেটে তখন মায়া।এখানে আসার কিছুদিন পরে হুসনে আরার লিভার পেইন উঠলো।আশ্চর্যভাবে নয়মাস চলাকালীন আমারও লিভার পেইন উঠে গেল।

আমার ফুটফুটে একটা ছেলে হয়েছিল।কিন্তু বাবা আমাকে বলল আমার সন্তান মৃত জন্ম নিয়েছে অথচ দিব্যি বেঁচেছিল।তারা আমার ছেলেটাকে কাউকে দিয়ে দেয়।ঠিক আমার ভাইয়ের মতো।আমি যখন বলি তাহলে সবুজকে কেন দিলো না।তখন বাবা আসল ঘটনা বলে।বাবা একজন পীরের মুরিদ।সেই পীর তাকে বলে যে এই সন্তান তার জন্য সৌভাগ্য এই সন্তান তার জন্য দূর্ভাগ্য।এই পীরের কথায় বাবা তার নিজের তিনটা সন্তান এবং আমার ছেলেটাকে অন্যকে দিয়ে দেয়।”

ঘেমে গিয়েছে লিরা।জোরে জোরে শ্বাস ফেলছে।আরো এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিল দিহান।

“সব বুঝলাম কিন্তু এতে মায়ার কি দোষ?”

“প্রতিহিংসা বলে পৃথিবীতে একটা বস্তু আছে।পনের বছর পর আমি মা হয়েছিলাম।মায়াকে সর্বোচ্চ ভালোবাসতো সবাই।”

“আপনার স্বামী এগুলো জানতো না?”

“ও তো আস্ত একটা শূয়োরকা বাচ্চা ছিল।বাবার কথায় নিজের সন্তানকে বলি দেই সে মানুষের বাচ্চা হতে পারেনা।”

“তাতে মায়ার কি দোষ?”

“ওইযে প্রতিহিংসা।তাই নিজের ছেলের কষ্টটা ভুলতে ওকে কষ্ট দিতাম।”

“তার বদলা তো আপনি আপনার বাবা ও স্বামীর উপর নিবেন।মায়া কেন?”

“কে বলল ওদের উপর নেইনি।বাবাকে বালিশ চাপা এবং আমার স্বামীকে অতিরিক্ত কোকেন খাইয়ে মেরে ফেলেছিলাম।”

চমকে গেল দিহান।

“চমকানোর কিছু নেই।হুসনে আরার পরিবারকেও মারতাম।কিন্তু ওরা ঠিক সময় মা কে নিয়ে ইতালি থেকে চলে যায়।এবং আমার কাছে কোন টাকা পয়সা না থাকায় আমি তাদের ধরতেও পারিনা।তখন বিজনেসে লস হয় তাই সাহায্য করার মতো কেউ ছিলনা।তারপর প্রায় বাইশ বছর পর আমি বাংলাদেশে যাই।এরমধ্যে আমি নিজের ছেলেকে অনেক খুঁজেছি।পাইনি।হয়তো মেরে ফেলেছিল ওকে।”

“সব বুঝলাম আপনার।তারমানে সবুজের এক্সিডেন্ট এবং মায়ার এক্সিডেন্ট আপনি করিয়েছিলেন?”

“হ্যাঁ।কিন্তু ঠিক সময়ে মায়া বেঁচে যায়।এজন্য কেস করি মিথ্যা জিনিস নিয়ে।মায়ার মা-বাবা চুপ ছিল কারণ ওদের বিরুদ্ধে আমার কাছে প্রমাণ ছিল যে আমার ছেলেকে ওরা কিছু একটা করেছিল।আর তাছাড়া ওদের বিজনেসে অনেক বড় একটা অংশ বাবার।যার মালিক হলাম আমি।এজন্য ওরা চুপচাপ মায়াকে দিয়ে দেয় আমার কাছে।অবশ্য আরিয়ান গাধাটাও সাহায্য করেছে অনেক।”

“মায়াকে কেন এখানে নিয়ে এসেছেন?”

“ওর পরিণতি আমার মতো করতাম।”

আরো এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে দিহান বলল,

“আপনার জন্য আমার করুণা আছে লিরা ম্যাডাম কিন্তু সমবেদনা নেই।ভালো থাকবেন।তিনটা খুন করেছেন আপনি।তার শাস্তি তো পাবেন।”

লিরা কিছু বলল না। চুপচাপ বসে রইলো। আস্তেধীরে দিহান উঠে গেল চেয়ার থেকে।আপাতত তার উষ্ণতা চাই।অনেকটা!
,
,
,

গন্ডলায় পাশাপাশি বসে আছে দিহান।একে অপরের গা ঘেসে।পাশে কালো জলধারা।আকাশে রক্তিম বর্ণের চাঁদ উঠেছে।

“মায়াবউ!”

“হুম।”

“মন খারাপ?”

“কিছুটা।”

“মন খারাপ করিও না।”

“পীর জিনিসটা কতোটা খারাপ ছিল তাই নাহ?”

“অনেক খারাপ ছিল।আগের যুগের মানুষ ছিল তারা।তাই এগুলো আরো বিশ্বাস করতো।”

“নানার এই একটা বিশ্বাসের জন্য কতো জীবন নষ্ট হয়ে গেল।”

“এটা নিয়তি ছিল।এই সবকিছুর মধ্যে ভালো কিজানো?তোমার আর আমার দেখা হয়েছে।”

“রিশার ক্যান্সার হয়েছে?”

“হ্যাঁ।বাট ট্রিটমেন্ট করলে ঠিক হয়ে যাবে।এজন্য আজকে ইউ.এস.এ যাবে।”

“আমরা কবে দেশে ফিরবো?”

“এক মাস পর।”

“কেন?”

“সুবাহ প্রেগনেন্ট তো জানো।আরিয়ান যাতে ওর উপর মায়া করতে পারে তাই আমরা ওদের কিছুটা সময় দিবো।”

“ঠিক আছে।আচ্ছা একটা প্রশ্ন?”

“করেন মাধুরীলতা।”

“আপনি কেন আমার সাথে ওই সময় কথা বলেননি?অথচ শরীরে টান লাগলে তো ঠিকই এসেছেন।”

“এটা বলবো না।”

“কেন?”

“এটা আমাদের বিয়ের ২০তম বছরে বলবো যে কথা বলতাম না তাও কেন এসেছিলাম।”

“এখন বললে কি হয়?”

“বাবু হয়।”

“কথা বললে বাবু হয়?”

“হয়তো।”

“ঢং।”

“মধুমঞ্জুরী!তোমার জন্য ঢং কেন?সবই করতে পারি।শুধু ডিম দেওয়া বাদে।”

দিহানের কথায় হেসে দিল মায়া।এই মায়াময় রাতে যা আরো রহস্যময় ঠেকলো দিহানের নিকট।

চলবে,,,