চন্দ্রপ্রভা রজনী পর্ব-২২+২৩

0
332

#চন্দ্রপ্রভা_রজনী
#পর্বঃ২২
লিখাঃসামিয়া খান

সামনের জলধারার উপর উদাস দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে মায়া।দীর্ঘ পনেরদিন যাবত তার জলের মধ্যে বসবাস।একটা নাম না জানা পাখি তার মাথার উপর দিয়ে শব্দ করে উড়ে গেলো।মায়া চিনেনা ওই পাখিকে।ভীনদেশের সব কিছু তার কাছে অচেনা লাগে।এই যেমন -সামনের নীল-সবুজ মিশেল জলকে বড্ড অচেনা লাগছে।অনেকটা শেওলা মিশ্রিত সমুদ্রপানির মতো লাগছে।ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম বিখ্যাত দেশ হলো ইতালি।নানা ইতিহাস সমৃদ্ধে ভরপুর। সিটি অফ লাভ!ভেনিস হচ্ছে ইতালির অন্যতম নান্দনিক সৌন্দর্যে ভরপুর।প্রেমের শহর,সাহিত্যের শহর বলা হয় একে।জলের শহর ভেনিস।কারণ পুরো শহরটাই জলের উপর।১১৮ টি দ্বীপ নিয়ে ভেনিস শহর ঘটিত।পুরো শহর জুড়ে রয়েছে নানা ক্যানেল।মোট ১১৭টি।এই ক্যানেলগুলোর মধ্য চলাচলের অন্যতম উপায় হলো ছোট ছোট নৌকা বা ডিঙি।এসব ক্যানেলে আবার অনেক জমকালো সেতু রয়েছে।তার মধ্যে অন্যতম রিয়ালটো ব্রীজ যা গ্র্যান্ড ক্যানেলের উপর তৈরী।রিয়ালটো ব্রীজ এর নিচে অপূর্ব কারুকাজ খচিত গন্ডোলায় বসে পানির দিকে এক দৃষ্টিতে তাঁকিয়ে আছে মায়া।ভেনিসে আসার পর থেকে প্রায় প্রতিদিন লিরা মম তাকে কোথাও না কোথাও নিয়ে যায়।তার ভাষ্যমতে সে মায়ার মা।মায়ার নাম এখন হয়ে গিয়েছে মায়াবিনী।অথচ সব নাম, মায়ামতি নামের কাছে বড্ড ফিকে লাগে।

তার পাশে সদ্য বিবাহিত নবদম্পতিগুলো গন্ডোলা করে ঘুরে বেড়াচ্ছে।তাদের দেখতে মায়ার বেশ লাগে।সেও তো নতুন বউ।তিনমাস হলো কেবল তার বিয়ের।আদৌ কি সে বিবাহিত?বিবাহিত হলে তো আর তার স্বামী তাকে ছেড়ে দিতে পারতো না।রোজ দিহানের সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে একবার করে ভিজিট করে মায়া।সম্প্রতি কথা উঠেছে খুব শীঘ্রই সুপারস্টার দিহান আহসান এর সাথে প্রযোজক রিশা চৌধুরীর বিয়ে।তাদের চকচকে ঝলমলে যুগল ছবি পুরো টাইমলাইন জুড়ে ঘুরে বেড়ায়।মায়া শুধু অবাক হয়ে দিহানকে দেখে।দিহান যেন আরো সুশ্রী হয়ে উঠছে দিনকে দিন।নাকী মায়ার চোখে ওকে নিত্যনতুন লাগে?

লিরার শব্দে চকিত হয় মায়ার।লিরাকে মায়ার কাছে ষাটের দশকের বিখ্যাত অভিনেত্রী সুচরিতা সেন এর মতো লাগে।বড্ড মিষ্টি দেখতে তার মধ্যে ব্যবহার পুরো অমায়িক।

“হোয়াট আর ইউ থিংকিং হানি?”

“কিছুনা।”

মায়ার নির্লিপ্ত স্বাভাবিক উত্তর।এটা সে সবসময় করে।খুবই সংকীর্ণ কথা বলে মায়া তার সাথে।মায়ার জড়তা স্পষ্টত লিরার কাছে।

“মায়াবিনী!তোমার জানতে ইচ্ছে করেনা যে আমি তোমার মা হলাম কীভাবে?”

“হয়।কিন্তু আপনাকে দেখে তো মনে হয় আপনি বলবেন না।”

একটা অদ্ভুত হাসি হাসলো লিরা।হাসির কম্পণ জলে গিয়ে মনে হয় স্রোতের সৃষ্টি করলো।সেদিকে বেশ মনোযোগ দিকে কিছু খুঁজার প্রয়াসে রয়েছে মায়া।হাসি থামালো লিরা।

“মায়াবিনী তোমার জন্ম কোথায় জানো?”

“হ্যাঁ।বাংলাদেশে।”

“না তুমি ভুল তোমার জন্ম ইতালিতে।এই প্রেমের শহর, ভালোবাসার শহর ভেনিসে।”

“মানে?”

“তোমার বায়োলজিক্যাল মাদার হলো হুসনে আরা।মানে আমার ছোট বোন।”

“তাহলে তো আপনি আমার খালা লাগেন।”

“লাগতাম।এখন আমি তোমার মা।তুমি যখন জন্ম নিলে তখন তোমাকে দত্তক হিসেবে দিয়েছিল তোমার মা-বাবা আমার কাছে।”

“কেন?”

“কারণ আমি সন্তান জন্ম দিতে অক্ষম!”

“দুঃখিত।”

“না এতে দুঃখিত হওয়ার কিছু নেই।যখন তুমি জন্ম নিলে তখন আমার স্বামী জীবিত ছিল।তুমি দেখতে নাকী ছোট্ট বিড়াল ছানার মতে হয়েছিলে।আমার স্বামী বলতো সবসময়।যেহেতু আমাদের কোন সন্তান হইনি তাই তোমাকে দত্তক হিসেবে চাই আমরা।প্রথম প্রথম হুসনে আর ও তোমার বাবা রাজি না হলেও। পরে আমার কান্নাকাটিতে রাজী হয়ে যায়।তুমি তোমার জন্মের এক বছর পর্যন্ত ভেনিসে ছিলে।”

“তাহলে আমাকে দিয়ে দিলেন কেন আবার?”

একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো লিরা।স্কার্ফে মুখ জড়াতে জড়াতে বলল,

“আমার স্বামী মারা যাওয়ার পর বেশ আর্থিক সমস্যা হয়েছিল।এবং হুট করে হুসনে আরা কেন জানি তোমার জন্য পাগলের মতো আচরণ করতো।বাধ্য হয়ে তোমার বাবা তোমাকে নিয়ে যায়।আমার তখন এরকম সামর্থ্যও ছিলনা তোমাকে রাখার।প্রায় বিশ বছর আমি একটা কেস লড়ে তারপর তোমাকে পেয়েছি।”

“বিশ বছর?এটা কি আদৌ পসিবল?আপনার এই কথাটা মিথ্যা।”

“তুমি কীভাবে বুঝলে মায়াবিনী?”

“আমি গরু নই।”

“আবার পুরোদস্তুর চালাকও নও।”

“হয়তো।বাসায় যাবো।”

আর কিছু বলেনা মায়া এবং শুনতেও চাচ্ছেনা।কারণ তার মনে হচ্ছে লিরা এখন যা বলবে সব মিথ্যে।মায়ার ভিতরে ক্ষুদ্র এক ধরণের ব্যাথা অনুভব হচ্ছে।আপাতত তার ঘুম প্রয়োজন।গভীর ঘুম!
,
,
,
দিহার চেম্বারে এসেছে দিহান আর রিশা।ইদানীং রিশা বেশ অসুস্থ থাকে।কারণটা কারো অজানা নয়।ফার্স্ট স্টেজ ব্রেস্ট ক্যান্সারে ভুগছে সে।মূলত দিহার হসপিটালে সে চিকিৎসা গ্রহণ করছে।দিহার কাছে এমনিই ক্যাজুয়াল মিট এর জন্য এসেছিলেন।সেখানে দিহানকেও পেয়ে যায়।সেই থেকেই তিনজনে বসে কিছু আলাপ আলোচনা করছে।

“রিশা!আরিয়ানকে দেখে কি কিছু বুঝতে পারো মায়া কোথায় থাকতে পারে?”

“দিহা ভাই নিজে জানলে তো?এই লিরা ম্যাডাম প্রচুর চালাক মহিলা।ভাইয়াকে বলেছে ফ্রান্সে যাচ্ছে।অথচ দিব্যি কোন দেশে গিয়ে লুকিয়ে রয়েছে।”

“আরিয়ান ভাইকেও ঘোল খাইয়ে ছাড়ছে।”

কথাটা বলে দিহা আর রিশা অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো।দিহান চেয়ারে বসে গভীরভাবে কিছু চিন্তা করছে।

“আচ্ছা দিহা!”

“জ্বী ভাইয়া।”

“সবুজ তোকে মায়ার ব্যাপারে কিছু বলছেনা কেন?”

“জানিনা ভাইয়া।আমার মায়ার জন্য খুব টেনশন হয়।না জানি কি অবস্থায় আছে।”

“মায়া ভালো অবস্থাতেই আছে।”

“এত শিওর কীভাবে দিহান?”

“কারণ লিরা ব্যক্তিটাকে যতোটুকু চিনেছি তাতে সে মায়ার ক্ষতি করতে আসেনি।অন্য কোন কারণ আছে।”

“আমারোও তাই মনে হয়।তোমাদের বিয়েটাকে কতো সহজে ফেক বানিয়ে দিলো।”

“সব হয়েছে মাহসান এর বাচ্চার জন্য।শালা**।”

“উফ দিহান দুটো মেয়ের সামনে কেউ এত বাজে গালি দেয়?”

“দিতে হয়।এসব কালসাপদের জন্য।”

“এখন এসব কথা বাদ।মায়াকে কোথায় খুঁজবি।”

“মায়া ভেনিস আছে। আমি জানি।”

“মানে দিহান!তুমি কিভাবে জানলে?”

“ওর ফেসবুক আ্যকাউন্টের পাসওয়ার্ড জানতাম।তাতেই হয়েছে।কারণ ওর আইডির লোকেশন এখন ভেনিস এ দেখাচ্ছে।”

“তাহলে তো হয়েই গেল।মায়ার কাছে যাওনা কেন?”

“এত সহজ না রিশা।লিরা কে এবং কি চায় তা জানতে হবে।”

“সেটা অবশ্য ঠিক।”

খটখট শব্দ হলো দরজায়।দিহা অনুমতি দিলে ভেতরে একটা ওয়ার্ড বয় ঢুকে তার হাতে একটা খাম দিলো।খামের উপরে সুবাহ এর নাম লিখা।খামটা খুলতেই একটা রিপোর্ট বের হয়ে আসলো।রিপোর্টটা পড়ে দিহা থম মেরে গেলো।কৌতুহল হয়ে দিহান জিজ্ঞেস করলো

“কি হয়েছে?”

“ভাইয়া সুবাহ আপু তিন সপ্তাহের প্রেগন্যান্ট।”

চলবে,,,

#চন্দ্রপ্রভা_রজনী
#পর্বঃ২৩
লিখাঃসামিয়া খান

উদবাস্তুর ন্যায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে আছে সুবাহ।মাত্র তিনদিন আগে জানতে পারলো সে অন্তঃসত্বা।আর একটু আগে জানতে পারলো তার স্বামী আরিয়ান দ্বিতীয় বিয়ে করেছে।বারান্দায় আঁচল পেতে বসে আছে সে।তার সামনে গেট দিয়ে নববিবাহিত বউ নিয়ে প্রবেশ করছে আরিয়ান।বহুল সমাদরে তাকে ঘরে তুলে নিলেন সুবাহার শ্বাশুড়ী আনোয়ারা বেগম।আজ সকালে বিয়ে করেছে আরিয়ান এবং একটু আগে খবর পেয়েছে সবাই।লাল টুকটুকে একটা শাড়ী পরে আরিয়ানের সাথে দাড়িয়ে আছে মেয়েটি।দুধে-আলতা গায়ের রঙ না হলেও বেশ ফর্সা।মেয়েটাকে চিনে সুবাহ।আরিয়ানের কলেজে পড়ে।মেয়েটির নাম দুর্বা।মায়ার ফ্রেন্ড।মায়া যখন এক্সিডেন্ট করেছিল তখন থেকে চিনে।বেশ ভালো পরিচয় ছিল তার সাথে।

আরিয়ানের প্রিয় ছাত্রী হিসেবে দুর্বার সাথে যে তার বেশ সখ্যতা ছিল সুবাহ জানতো।অথচ বিষয়টি যে পরকীয়া তা ঘুণাক্ষরেও টের পায়নি সুবাহ।চার সপ্তাহের অন্তঃস্বত্তা সে।সকাল থেকে অনেক চিৎকার, চেঁচামেচি, কান্নাকাটি করে লাভ হইনি।

আরিয়ান বিয়ে করেছে।এতে কেউ তাকে সাপোর্ট না করলেও তার শ্বাশুড়ী করেছে।বাধ্য হয়ে সুবাহ তার বাবা মাসুদ সাহেবকে কল করেছে।সেখানে কল করে আবার নতুন কাহিনি শুনতে হলো তার।এখন নাকী তার বাবা কিছু বলতে পারবেনা কারণ সামনে ইলেকশন।যদি সবাই জানে তার মেয়ের জামাই দ্বিতীয় বিয়ে করেছে তাহলে তার নির্বাচনে অনেক ক্ষতি হবে।এগুলো শুনে সুবাহ কোন প্রতিক্রিয়া দেখায়নি।চুপচাপ বারান্দায় বসে দুর্বার শ্বশুর বাড়ীতে আগমন দেখলো।

আর দেখতে ইচ্ছে করছেনা।এজন্য মেঝে থেকে উঠে বিছানায় শরীরটা এলিয়ে দিলো।এই অবস্থায় একমাত্র দিহান তাকে বাঁচাতে পারে।কিন্তু দিহান এখন ইতালিতে।সুবাহ একবার ভাবলো তার নিজের ফ্ল্যাটে চলে যাবে।পরক্ষণে ভাবলো একা থাকলে নিজের ঠিকমতো খেয়াল না রাখলে বাচ্চাটার ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।কাঁদতে কাঁদতে চোখ বলের আকার ধারণ করেছে।খোলা বা বন্ধ দুটো করতেই বেশ কষ্ট লাগছে।ঘুম আসছে খুব গভীর।এত গভীর যে সব ভুলে যাচ্ছে সে।

দুর্বাকে অন্য রুমে রেখে নিজের রুমে আসলো আরিয়ান।বিছানায় ঘুমিয়ে আছে সুবাহ।তার কাছে এসে পেটে একবার হাত বুলিয়ে দিলো সে।সুবাহার প্রতি তার ভালোবাসা নেই।অথচ হাজার হলেও সে পুরুষ মানুষ।দীর্ঘদিন এক নারীর সাথে এক রুমে থেকে নিজের শরীরের আবেগকে সংযত রাখা আদৌ কোন পুরুষের পক্ষে সম্ভব হবে কীনা তা তার জানা নেই।

অন্তত সে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি।যার ফলস্বরূপ তার অনাগত সন্তান আসতে চলেছে।রুমের দরজা লাগিয়ে সুবাহার পাশে শুয়ে পড়লো আরিয়ান।এই বাচ্চাটাকে সে নিজের কাছে রাখবে।সে জানে মায়া বাচ্চা খুব ভালোবাসে।তাই এই বাচ্চাটাকে মেনে নিবে।হাজার হলেও প্রথম সন্তান তার।মায়ার কথা মনে হতেই আরিয়ান লিরাকে কল করলো।কিন্তু রিসিভ হলোনা।এই মহিলাটা বড্ড ট্যারা।কি সুন্দর তাকে ফাঁকি দিয়ে ফ্রান্সের বদলে ইতালিতে গিয়ে বসে আছে।একবার শুধু মায়াকে নিজের করে পেলে তখন আচ্ছামতে শিক্ষা দিবে আরিয়ান।

“আমাকে ছাড়ুন আরিয়ান!”

আরিয়ান কোন কথা বলল না।উল্টো সুবাহকে আরেকটু চেপে ধরলো।মেয়েটা বেশ নরম,তুলতুলে খরগোশ ছানার মতো।

“আমাকে ছাড়লে খুশী হবো।”

“এত ভাব দেখানোর কিছু হইনি সুবাহ।দুর্বাকে আমি না, আমার বন্ধু বিয়ে করেছে।বাট আপাতত বিষয়টা গোপন রাখতে হবে তাই আমার নাম দিয়েছি।”

“আপনাকে কি আমাকে গরু মনে হয়?”

“না তো!তুমি গরু হবে কেন?তুমি তো গাভিন গাই।”

“বাজে কথা বাদ দেন।সবাই জানে আপনি বিয়ে করেছেন আর আপনি বলছেন আপনি করেননি!মিথ্যাবাদী।”

“প্রফেসর ম্যাডাম বিশ্বাস করুন।আর তাছাড়া আমার নিজের কাজেও দুর্বা দরকার।আজকে যদি ওকে এ বাড়িতে না নিয়ে আসতাম তো কালকে মা আমার খালাতো বোন এর সাথে জোর করে বিয়ে দিতো।তখন কি করতেন?”

“মানে?হাতের মোয়া নাকী?আপনি কি অবিবাহিত যে জোর করলে বিয়ে করে নিবেন।”

“আমার মায়ের জন্য হাতের মোয়া।গাঁধা মেয়ে কতো বলতাম যে মাকে খুশী করো।তা না করে কি করতে আল্লাহ মালুম।এখন করো ফেক সতিনের সংসার।”

“এই আপনি কি সত্যি বলছেন? ”

“আপাতত আমি ঘুমাবো সুবাহ।পরে কথা বলি।”

আরিয়ানকে ধাক্কিয়ে ওর উপরে চড়ে,চিমটি কামড় কিছু দিয়ে লাভ হইনি। আর একটা কথাও বলাতে পারেনি সুবাহ।কুম্ভকর্ণের ন্যায় ঘুমাচ্ছে আরিয়ান।মনে মনে একটা জঘন্য গালি দিয়ে সেও ঘুমিয়ে পড়লো পাশে।

,
,
,

এখন মোটামুটি হাঁটতে পারে মায়া।নতুন করে হাঁটতে পেরে বেশ ভালো লাগে তার।গত দুদিন ধরে কেন যেনো তার মনে হচ্ছে দিহান ভালো নেই।এবং তাকে ডাকছে।অথচ সব নর্মাল মনে হচ্ছে তার সোশ্যাল মিডিয়ার আপডেট দেখে।আজকে মায়া একাই বের হয়েছে।তার সাথে লিরা আসেনি।ক্যাম্পানাইল গীর্জার সাথে একটা ব্রীজ রয়েছে।উনিশ শতকের বিখ্যাত কবি লর্ড বায়রন এর নামে ব্রীজটা।মূলত সেই ব্রীজে ঘুরতে এসেছে মায়া।ছোট্ট গন্ডলায় একপাশে সে এবং একপাশে মাঝি।

একটা লোককথা আছে এ ব্রীজ সম্পর্কে।আর তা হলো কিংবদন্তী প্রেমিক,প্রেমিকারা যদি সূর্যাস্তের সময় যখন ক্যাম্পানাইলের গীর্জায় ঘন্টাগুলো বাজবে তখন এই ব্রীজের নিচে দাঁড়িয়ে পরস্পরকে চুম্বন করে তাহলে তারা স্বর্গীয় ভালোবাসা লাভ করবে।একথা মায়া দিহানের কাছে শুনেছিল।এবং আগামী বছর তাদের এখানে আসারও কথা ছিল।অথচ তা স্বপ্ন রয়ে গেলো।হুট করে দিহানের সুবাস পাচ্ছে মায়া।তার পাশ দিয়ে আরেকটি গন্ডোলা যাচ্ছে।সেখানে একটি ছেলে বসে আছে।এবং তার কণ্ঠে লর্ড বায়রণ এর শব্দ শোভা পাচ্ছে,

” She walks in Beauty, like night of cloudless climes and starry skies;And all that’s best of dark and bright.Meet in her aspect and her eyes:Thus mellowed to that tender light, Which Heaven to gaudy day denies”.

কথাগুলো বেশ ভালো লাগলো মায়ার কাছে।এবং কে বলেছে তা দেখার জন্য সে পাশে তাঁকালো। কারণ দুটো গন্ডোলিয়া একদম গা ঘেষে ব্রীজের নিচে দাঁড়িয়েছে।ওপর পাশের ছেলেটিকে দেখে মায়ার জ্ঞান হাড়ানোর অবস্থা।প্রথমে ভাবলো ভুল দেখছে কিন্তু ভালোমতো খেয়াল করে দেখে না সে সত্যি দেখছে।বসা থেকে উঠে দাড়ালো মায়া।তার দিকে একটা চমৎকার হাসি দিয়ে মায়ার গন্ডোলায় উঠে আসলো দিহান।মায়ার সামনে দাড়িয়ে তার কোমড় ধরে টান দিয়ে নিজের সাথে চেপে ধরলো দিহান।মায়া বাকরুদ্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছে।আরেকবার নির্মল হাসি দিয়ে তার কানে কানে দিহান বলল,

“হ্যাপি থার্ড মান্থ এনিভার্সেরি বিলাইবউ।”

কান থেকে মুখ উঠিয়ে মায়াকে কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে তার অধরযুগল নিজের আওতায় নিয়ে আসলো দিহান।এমন সময় ক্যাম্পানাইল গীর্জার ঘন্টাগুলো প্রবল স্বরে সমহিমায় বেজে উঠলো।এবং অস্তমান সূর্য আকাশে কমলার রঙ ধারণ করলো।যা পরিবেশকে আলাদারকম ভয়ংকার সুন্দর করে তুলেছে।

চলবে,,