#চলো_রোদ্দুরে
#ফাতেমা_তুজ
#part_10
সকাল আট টা বাজতেই স্কিপিং বন্ধ করে দেয় ভোর। শরীরে আর কুলাচ্ছে না। তিন্নি তো বেশ অনেক আগেই হাঁপিয়ে গেছে। সে এখন রেস্ট নিতে ব্যস্ত। দড়ি টা নিয়ে রেখে দেয়। যাওয়ার পূর্বে তিন্নির পাশে বসে দুই মিনিট জিরিয়ে নেয়।শীত হলে ও শরীর টা ঘামে ভিজে গেছে একদম। বেশ হিউজ এমাউন্ট এর কসরত হয়েছে। তবে অক্টোবরেই শীতের প্রকোপ পুরো দেশে আলোড়ন ফেলেছে। পানির বোতল থেকে পানি নিয়ে ঢক ঢক করে পান করে নেয়। তোয়ালে বারিয়ে দিয়ে তিন্নি বলে
_আপনার দম আছে বলতেই হয়।
_অভ্যাস এটা। ছোট থেকেই দড়ি লাফ খেলেছি প্রচুর। গ্রামে তো এসব ই হয়।
_হুম। আচ্ছা এখন কি নাস্তা করবেন?
_সবাই আসুক তারপর ই করবো। এখন গিয়ে ফ্রেস হয়ে নেই।
_ওকে।
ঘরে ফিরে দু একটা আড়মোড়া ভেঙে নেয়। পা টা ব্যাথা করছে। ওয়াসরুমের দিকে যাবে তখনি চোখে পরে কেবিনেট এর উপর একটা প্যাকেট। কিছু টা অবাক হয় মেয়েটা। তবে আগ্রহ দমাতে না পেরে তৎক্ষনাৎ প্যাকেট টা খুলে ফেলে। ভেতরে কালো কোর্ট পরা একটা লেডি ডল। হাতে একটা ডায়েরীর মতো। বিষয় টা বুঝতে পেরে হেসে ফেলে। এটা যে রাদের কাজ খুব ভালোই বুঝেছে সে। আইনজীবী মেয়ে টা ওকে ওর কর্মের কথা মনে করিয়ে দিবে। রাদের নাম্বারে কল করে। রিসিভ করেই রাদ বলে
_কেমন আছো?
_ভালো, আপনি এসেছিলেন?
_হুম।
_দেখা করলেন না কেন?
_তুমি স্কিপিং করছিলে। তাছাড়া তোমাকে বিরক্ত করতে ইচ্ছে হয় নি।
_আইনজীবী পুতুল টা আপনি দিয়েছেন তাই না।
_হুম। পছন্দ হয় নি?
_খুব পছন্দ হয়েছে। আচ্ছা ডাক্তার সাহেব একটা কথা বলবো?
_হুম বলো। এতো হেজিটেশন করছো কেন?
_আমি যদি না পারি লক্ষ্যে পৌছাতে?
_এমন কেন বলছো ভোর। তুমি পারবে, আর না পারলে ও কোনো সমস্যা নেই। আমি আছি তো, তোমার হাত ধরে একদম রোদ্দুরে পৌছে দিবো।
_পৌছে দিবেন।
কথা টা বলার সময় গলা ধরে আছে ভোরের।কেন এমন হলো জানা নেই ওর। তবে সে দিকে লক্ষ্য করে নি রাদ। সে বক বক করতে ব্যস্ত।
_আরে হ্যাঁ। কাল কে তোমায় কলেজ এ নিয়ে যাবো। এডমিশন টেস্ট এর আগে কিছু ফরমালিটিস আছে। ক্যাম্পাস টা ও ঘুরিয়ে দেখিয়ে নিবো। দেখবে খুব ভালো লাগবে তোমার।
_আচ্ছা।
আইনজীবী পুতুল টার দিকে তাকিয়ে থাকে ভোর। এই পোশাক টা গাঁয়ে দিলে ওকে কেমন দেখাবে?
.
আজকাল বড্ড প্যারা দিচ্ছেন ইফতিহার।হাঁপিয়ে উঠেছে রাদ। এতো কাজের চাপ নাকি তাঁকে একা সামলাতে হবে। নিজের গালে থাপ্পড় বসাতে ইচ্ছে হয়। মন চায় চেঁচিয়ে বলতে ‘ মম , ড্যাড কেন আমার আর কোনো ভাই বোন নেই? তোমাদের দেওয়া একশ ফিটের চাপ আমি নিতে পারছি না। হুহ ‘
ফোঁস করে নিশ্বাস ফেলে রাদ। গাঁয়ের শুট টা বিজনেস টাইকুন দের মতো করে কাঁধ এর এক সাইটে ঝুলিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে। রামিসা আসেন খাবার নিয়ে। যদি ও রাদ নাকোচ করে তবে রামিসা ও হার মানার পাত্রী নন। নিজ হাতে খাইয়ে তবেই উঠে। মুখ টা বাংলার পাঁচের মতো করে রেখেছে রাদ। রামিসা বলেন
_মুখ টা এমন কেন বেটা?
_ড্যাড আমার বারো খানা বাজিয়ে দিয়েছে মম। এই টাকা পয়সা আমার চাই না। এতো কাজ কি করে সম্ভব?
_হোয়াই বেটা? কাজ কে দেখে ভয় পাচ্ছো তুমি। এমন শিক্ষা তো আমরা দেই নি।আর রইলো কথা প্রপার্টিজ আর ব্যাংক ব্যালেন্স। লিসেন বেটা টাকা উপার্জন জরুরী তবে সেটার সাথে কিছু লক্ষ্য রাখা প্রয়োজন। তোমার পাপা বছর শেষে 25% গরীব দের দান করে দেন। তুমি তো নিজ চোখে দেখেছো আমাদের হসপাটালে বড় বড় অপারেশন সহ হার্ট এর পেসেন্ট যাঁরা মধ্যবিত্ত এতো টাকা খরচ করা কষ্ট সাধ্য তাঁদের ফ্রি লি ট্রিট করা হয়। আর রোজ কত শত মানুষ বিনা মূল্যে চিকিৎসা পাচ্ছে। এর মূল অংশ তো আসে হসপিটাল আর বিজনেস থেকেই। ডোনেশন তো বছর শেষে আসে যেটা দিয়ে অন্ধ দের ট্রিট করা হয়। যদি তোমার পাপা এই কাজ গুলো না করতেন তাহলে এতো গুলো মানুষের উপকার হতো কি করে?
_হুহহ বুঝলাম। বাট আম টায়ার্ড মম।
_নতুন কাজের সাথে মানিয়ে নিতে একটু সময় তো লাগবেই।
_ইয়াহ।
রামিসা এগোয়, পিছন থেকে আদুরে গলায় রাদ বলে
_মম
_হ্যাঁ বেটা। কিছু লাগবে তোমার?
_হুম।
_কি?
_তোমাকে।
রাদের কথায় কিছুক্ষণ চমকায়িত হন তিনি। পরিশেষে হেসে উঠেন। বেশ জমিয়ে বসে রাদ। রামিসার কোলে মাথা এলিয়ে ফোন টা সাইলেন্ট করে দেয়। বহু দিন পর মায়ের সঙ্গ চেয়েছে রাদ। যখন খুব বেশি ক্লান্ত হয়, একটু স্বস্তি প্রয়োজন মনে হয় তখনি রামিসার কোলে মাথা রাখে। স্বযত্নে ছেলের মাথায় বিলি কেঁটে দেন তিনি। আর মায়ের নরম হাতের ভালোবাসায় ছেলেটা চোখ বুঁজে নেয়। দরজার কাছে এসে দাঁড়িয়ে যান ইফতিহার। মা ছেলের ভালোবাসা তে ইন্টারফেয়ার একদম ই পছন্দ নয়। তাই মৃদু হেসে চলে যান তিনি। কি মনে করে যেন নিজ রুমের ডোর এর কাছে এসে আবারো ফিরে আসেন। ধীর পায়ে বেডের কাছে এসে ছেলের কপালে চুমু এঁকে দেন, একি ভাবে রামিসার কপালে চুমু দেন। কিছু টা রাগি লুক নিলেই পরক্ষনেই হেসে ফেলেন তিনি।
বলেন
_ছেলেটা জেগে থাকলে ও এমন করতে তুমি?
_হুম ক্ষতি কি তাঁতে?
_উফফ যাও তো।
আড়চোখে বাবা মায়ের ভালোবাসা দেখে রাদ ও হাসে। পরক্ষণেই আবারো ঘুমে টলে যায়।
পাখির গুঞ্জনে আর থাকা যাচ্ছে না। এমনি তে ও প্রচুর ঘুমিয়েছে রাদ। কাল এতো হিউজ পরিমানে ধকল গেছে যে ঘুম কে সব থেকে বেশি আপন মনে হয়েছে। এক্সারসাইজ করার কথা মাথায় ও আসে নি। তবে রোজ নিয়ম করে এক্সারসাইজ করবেই ছেলে টা। এর পেছনে বিশেষ কারন ও রয়েছে। অষ্টম শ্রেনি তে পড়া কালীন একটা প্রশ্নে ছিলো একজন খেলোয়ার রোজ খেলা করে আর একজন ডাক্তার চেম্বারে বসে রোগী দেখে। কে অধিক ফিট থাকবে। সেই প্রশ্নের উত্তরে ছিলো ডাক্তার দীর্ঘদিন এভাবে থাকলে মুটিয়ে যাবেন ও দ্রুত অসুস্থ হবেন। তারপর থেকে রাদের যে কি হলো মাথায় এমন তেমন ভূত চাপলো যে রোজ এক্সারসাইজ করা শুরু হলো।
তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে মিররে যেতেই ইফতিহারের আগমন। স্বচ্ছ হেসে তিনি বলেন
_গুড মর্নিং মাই বয়।
_গুড মর্নিং ড্যাড।
_মাই চারমিং বয় তোমাকে আজ রাতের মিটিং এ এটেন্ট করতে হবে।
_হোয়াই ড্যাড।
_আমি রেস্ট চাই বেটা। তোমার উপর সমস্ত ভার ছেড়ে দিয়ে আমি আর তোমার মম সেকেন্ড টাইম হানিমুনে যাবো।
_উফ ড্যাড। তুমি আমায় মেরেই দিবে।
_লিসেন রাদ, আজকের মিটিং অনেক বেশি জরুরী।আমি তোমাকে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো।
_বুঝেছি আমি।
_কোথায় যাচ্ছো রাদ?
কিচেন থেকে বলেন রামিসা। মোর ঘুরিয়ে রামিসার কাছে আসে ওহ। কিছু একটা করতে হবে।স্টিকি রাইস তৈরি করছিলেন তিনি। আদুরে গলায় রাদ বলে
_সুশি বানাও প্লিজ।
_বাট সি ফিস তো বাসায় নেই। আর সুশি তে চিকেন তো খাও না তুমি।
_ডোন্ট ওরি। আমি তো এখন খেতে চাচ্ছি না। লাঞ্চ এ খাবো, আমি বরং প্রন নিয়ে আসি।
_কাঁচা বাজারে যাবে তুমি। তাঁর থেকে ভালো আমি ড্রাইভার কে পাঠিয়ে দেই।
_ মম, আমি কাঁচা বাজারে যাচ্ছি না। শপ থেকে ফ্রোজেন প্রন আর স্যালমন নিয়ে আসবো, আর কিছু লাগবে?
_সয়া সস আছে তাহলে বরং সি উইড নিয়ে এসো। যা আছে তাঁতে হবে না।
_ওকে আমি তাহলে যাচ্ছি।
_আরে নাস্তা টা করে যাও বেটা।
_বাইরে থেকে করে নিবো। আমার জন্য অপেক্ষা করো না।
বাসা থেকে বের হয়েই স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে। এখন না বের হলে আর সুযোগ ই মিলতো না। দ্রুত গতিতে ড্রাইভ করতে থাকে রাদ। ফোন করে বলে যাতে রেডি হয়ে থাকে ভোর।
ওকে পিক করে সোজা যায় কলেজে। বিশাল মাপের কলেজ টা দেখে শুকনো ঢোক গিলে মেয়েটা। বলে
_এতো বড় কলেজে পড়তে হবে আমায়?
_হুম। ক্যাম্পাস টা অনেক সুন্দর। আসো ঘুরিয়ে নিয়ে আসি। আর ফর্ম ফিলাপ ও করতে হবে।
_ডাক্তার সাহেব।
_হুম।
_আমার ভয় হচ্ছে। আশে পাশের সবাই কে দেখতেই আন ইজি ফিল করছি।
_কিছু হবে না। আসো আমার সাথে।
পুরো ক্যাম্পাস টা শর্ট কার্ট ঘুরিয়ে নেয় রাদ। এখান কার ব্যবস্থা দেখে কিছু টা হা হয়ে যায় ভোরের মুখ।
তবে আরো বেশি ভয় পায় কলেজের অধ্যক্ষ দের দেখে। একেক জন প্রফেসর যেন একেক টা ডাকু। অন্তত ভোরের কাছে তেমনি মনে হলো। অতিরিক্ত লম্বা একজন কে দেখে তো রাদের হাতা খামচে ধরলো।
_কি হলো?
_আব্দুর রহমান।
_হোয়াট। কে আব্দুর রহমান।
_কাবুলের সেই বন্ধু , ঐ যে প্রবাস বন্ধু।
মেয়েটার কথায় ফিক করে হেসে ফেলে রাদ। আশ্বস্ত করে বলে
_উনি হাইট এ একটু বেশি ই বটে, বাট আব্দুর রহমান এটা মানতে পারছি না। ওনার হাইট 6’3 হলে ও রোগা পাতলা দেহ। আর আব্দুল রহমান ছিলো আস্ত এক কুমড়ো। হোয়াট এভার আর ওনি হলেন ম্যাথ এর প্রফেসার।
_ওহ। আচ্ছা আপনি ও তো লম্বা তাহলে আপনার হাইট কতো?
_কতো মনে হয়?
_উহুহ বুঝতে পারছি না।
_5’9 আসো এবার। আমি 6 ফিট রোগা পাতলা ভূত নই।
বাই দ্যা ওয়ে তুমি কি মুটিয়ে যাচ্ছো?
ছেলেটার কথায় কপালে দু খানা ভাজের সৃষ্টি হচ্ছে। এপাশ ওপাশ ফিরে নিজেকে দেখে নেয়। সব তো ঠিক ই আছে। আর মোটা ও হয় নি। রাদের দিকে প্রশ্ন বিদ্ধ দৃষ্টি তে তাকাতেই হেসে ফেলে রাদ।নিজের বোকামি বুঝতে পেরে গোমড়া হয়ে যায় মুখ। ততক্ষণে লম্বা করে ম্যাথ এর প্রফেসার স্যার সামনে চলে আসেন। রাদের সাথে কুশল বিনিময় করে বলেন
_ওয়াও কতো দিন পর তোমার পদধুলি পরলো আমাদের ক্যাম্পাসে।
_তেমন নয় স্যার। বাট আপনার সাথে দেখা হয়ে ভালো লাগলো।
_সেই তো গেলে আর এলে না। বাট কোনো দরকারে এসেছিলে কি?
_জি স্যার। ওহ হলো ভোর, ফার্স্ট ইয়ারে এডমিশন করাবো।
_ওহহ আই সি। যেহেতু আরো কয়েক মাস আগে এডমিশন টেস্ট হয়ে গেছে তাই ওকে পার্সোনালি কিছু প্রশ্ন করা হবে সাথে রাইটিং টেস্ট।
_আমি জানি সেটা।
_ওকে তাহলে আসো আমি সব ব্যবস্থা করে দিচ্ছি।
ম্যাথ প্রফেসার চলে যান। এতোক্ষন রাদ এর সাথে চিপকে ছিলো মেয়েটা। কিছু টা দূরে সরে গিয়ে মাথা নত করে ফেলে। কিছু একটা ওকে সংকোচে ফেলেছে দেখে রাদ বলে
_কিছু বলতে চাও তুমি?
_হুমম।
_বলো কি বলবে।
_আমি তো দু ব্যাচ পিছিয়ে গেছি। সবাই আমার উপর হাসবে তাই না? আমি তো সবার বড় হয়ে গেলাম।
_এর জন্য মুড অফ।
বাচ্চা দের মতো মাথা কাত করে ভোর। কিছু টা দীর্ঘশ্বাস মেশানো সুরেই রাদ বলে
_ প্রথমতো এটা সম্পূর্ন ভেলুলেস কথা। আর তাছাড়া এখানে যাঁরা ফার্স্ট ইয়ারের স্টুডেন্টস তাঁরা কেউ ই তোমার থেকে ছোট নয়। বরং বেশির ভাগ ই বড় হবে।
_কি করে?
_ক্লাস টপকানোর দিক থেকে গ্রাম এগিয়ে আছেই বটে। চার বছর হলেই কাঁধে ব্যাগ ঝুলিয়ে গ্রামের বাচ্চা দের স্কুলে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ক্লাস ওয়ান টা বোধহয় যেমন তেমন ভাবেই যায়। সবাই বাচ্চাদের পড়াশোনায় ফোকাস করে না। শুধু গন্ডি পেরোলেই হয়। বাট শহরের ক্ষেত্রে হয় কি বিশেষ করে এসব একটু নামি দামি কলেজের প্রায় সব স্টুডেন্ট এর পেরেন্স রা জব করে। তাঁরা বাসায় টিউটর রেখে পড়ায় আর তারপর কেজি স্কুলে পড়ায়। এতে করে হয় কি গ্রামের তুলনায় শহরের স্টুডেন্টস দের বয়স টা একটু বেশি ই হয়ে যায়। তো লজ্জা পাওয়ার মতো কিছু নেই। বুঝেছো?
_হুমম।
ফর্ম ফিলাপ শেষে এক্সামের ডেট দিয়ে দেয়। মাঝে রয়েছে আর পাঁচ দিন। বেশ মনোযোগী হয়ে পড়তে হবে। ক্যাম্পাসের চার পাশে স্ট্রিট ফুড এর স্ট্রল রয়েছে।সেখান থেকে ভেলপুরি খায় রাদ আর ভোর। ফুচকা খাওয়া হলে ও ভেলপুরি খাওয়া হয় নি মেয়েটার। নাচোস কিনেছে মাত্র, তখনি ফোন টা টং করে বেজে উঠে। ফোনে ইফতিহারের নাম টা দেখেই আত্মায় পানি শেষ। অনেক টা লেট হয়ে গেছে। অলমোস্ট 11 টা। তাছাড়া ইফতিহারের সাথে ম্যাথ প্রফেসার এর বেশ ভালো সম্পর্ক ই বটে। ওনাকে তো ভোর এর বিষয় টা আড়াল করার কথা বলা ও হয় নি।
আজ আর রক্ষা নেই। মাথায় হাত দেয় রাদ। আনমনেই বলে উঠে ‘ আজ তুই গেলি রাদ। তোর লুকিয়ে রাখা ভোর কে দু চোখ মেলে দেখবে সবাই। তোর রক্ষা নাই। সর্বশান্ত হয়ে রাস্তায় পরে থাকবি। ‘
নাচোস হাতে নিয়ে ছেলেটার মুখের দিকে অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকে ভোর। ওহ বুঝতে পারে না রাদ কেন তিতা করলার মতো মুখ কুঁচকে আছে ?
চলবে
#চলো_রোদ্দুরে
#ফাতেমা_তুজ
#part_11
ইফতিহার আজ সত্যি সত্যি খুব রেগে গেছেন। ছেলে টা যে এতো বেশি অবাধ্য হবে জানা ছিলো না। তবে সে রাগ এতো টাই হাসি সুলভ ভাবে নিবে রাদ তা কেউ ই আঁচ করতে পারেন নি। হাসতে হাসতে যেন পেটে খিল ধরে গেছে। এবার রামিসা ও হেসে ফেলেন। কারন ওনি নিজে ও খুব ভালো করে জানেন ইফতিহার পরিবারের কারো সাথে রাগ দেখাতে পারেন না। আর সে যদি হয় রাদ আর রামিসা তাহলে তো একদম ই নয়। ফোঁস করে দম ফেলেন ইফতিহার। এমন স্ত্রী সন্তান এই প্ল্যানেট এ দুটো নেই। এর জন্য হয়তো বা প্ল্যানেট নাইন এ যেতে হবে। সযত্নে ইফতিহারের কাঁধে হাত রাখেন রামিসা। ক্ষীন রাগার চেষ্টা করলে ও মুখে রাগ ফুটে না। হার মেনে নেন তিনি। রাদের দিকে তাকিয়ে চোখ পাকিয়ে ইফতিহার কে উদ্দেশ্যে করে রামিসা বলেন
_যেটা পারবে না সেটা চেষ্টা কেন করো? কখনো ওর ওপর রাগ দেখাতে পেরেছো তুমি? বরং একটু কিছু হলেই ছেলেটা রাগ দেখায়। আর তুমি চুপ চাপ বসে থাকো।
_এক্সাকলি ড্যাড। প্লিজ আর চেষ্টা করো না।
_হুম আর চেষ্টা করবো না। বাট তুমি এতো কেন লেট করলে? সামান্য জিনিস নিয়ে আসতে এতো লেট করে কেউ?
_স্যরি ফর দ্যাট। তোমরা তো জানোই আমি একটু আই মিন অনেক টাই ধীর। কি করবো বলো?
রামিসা উঠে যান। রাদ এখন ইমোশনাল কথা বার্তা বলবে। যাঁর একটার ও ভেলু নেই। বরং সব কিছু তে সিমপ্যাথি নিয়ে নিবে।
রাদের ইমোশনাল কথা বার্তা তে মোমের মতো গলে যান ইফতিহার। রাদের কাঁধে হাত রেখে বলেন
_একদম নয়। আমি জানি আমার বেটা বেস্ট।
_নো ড্যাড আমি বেস্ট নই। সব কাজে পারদর্শী হতে পারি নি।
_সামান্য বাজার নিয়ে এতো মন খারাপ করবে জানলে আমি তোমাকে ফোন ই করতাম না। আসলে তুমি যখন তখন বের হয়ে যাচ্ছো যা আমাকে চিন্তায় ফেলে। কখন তোমার ক্ষতি হয়ে যায় সেটাই ভয়। বি কেয়ারফুল মাই বয়।
ইফতিহারের কথা শুনে রাদ নিজেই ইমোশনাল হয়ে যায়। এতো ভালোবাসা কে কষ্ট দেওয়ার কোনো মানেই নেই। মনে মনে স্থির করে আজ থেকে বিজনেস এ মনোযোগী হবে। ছেলের গোমড়া মুখ দেখে রামিসা বলেন
_মন টা খারাপ কেন রাদ?
_স্যরি মম , স্যরি ড্যাড। আমি সত্যিই খুব অন্যায় করে ফেলেছি। তোমাদের চিন্তায় রাখা উচিত হয় নি। আর হবে না।
_ইটস ওকে বেটা। তোমার কোনো দোষ নেই। বরং আমরা দোষী।এখন ডাইনিং এ আসো তোমরা।
_বাট মম।
_তোমার মম ঠিক বলছে রাদ। আমরা তোমাকে সব দিলে ও সেভাবে স্বাধীনতা দিতে পারি নি। সারাক্ষন মাথায় ভয় চাপিয়ে দিতে হয়।বাট কি করার বলো?
_তোমরা প্লিজ এমন ভাবে বলো না। আমি এবার কেঁদে দিবো।
রাদের কথায় হেসে উঠেন ইফতিহার ও রামিসা। পুরো খান মঞ্জিলে চাঁপা খুশি ছেয়ে যায়। এমন হাজারো ভালোবাসা ছড়িয়ে আছে এই বাসার প্রতি টা ইটের গাঁয়ে।
দেখতে দেখতে কেঁটে যায় পাঁচ টি দিন। আজ ভোরের এডমিশন টেস্ট। এই কয়েক দিন মেয়েটার সাথে দেখা করতে পারে নি রাদ। তবে ফোনে যোগাযোগ করেছে। পাঁচ টা দিন বিজনেস এ খুব মনোযোগ দিয়েছে যাঁর ফলে ইফতিহার ও সন্তুষ্ট। ব্রেক টাইম চাইতেই হাসি মুখে সম্মতি দিয়েছেন তিনি।হোস্টেলের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে রাদ। গেট দিয়ে ছুটে আসে ভোর। রাদ কে দেখে থেমে যায়। চোখ দুটো ঝল মল করছে। যেন তৃপ্তি পেয়েছে এই চোখ। মৃদু স্বরে বলে
_ডাক্তার সাহেব।
_পিপারেশন কেমন তোমার?
_ভালো।
গাড়ি তে উঠার আগে আরো কিছু টুক টাক কথা হলো দুজনের। ভোরের যতো টা মনোবল ছিলো কলেজ ক্যাম্পাসে এসে তাঁর সব টাই হাওয়ায় মিলিয়ে গেল। রাদের দিকে বার বার তাকাচ্ছে ওহ। হঠাৎ করেই একটা সাইটে নিয়ে যায় রাদ। যাঁর ফলে কিঞ্চিত ভয় পেয়ে যায়। গলার মাফলার টা টেনে খুলে দেয়। অজান্তেই মুখ দিয়ে বের হয়
_কি করছেন ডাক্তার সাহেব?
_এমন ভাবে মাফলার নিয়েছো মনে হচ্ছে এটা কোনো দোপাট্টা। আমি সুন্দর করে পরিয়ে দিচ্ছি দেখো।
স্বযত্নে গলায় মাফলার পরিয়ে দেয় রাদ। স্কাফ টা টেনে ঠিক করে মেয়েটা। হাসি হাসি মুখে বলে
_এবার ঠিক লাগছে?
_হুম নাও পারফেক্ট।
_ আচ্ছা ডাক্তার সাহেব এখানে কারো গাঁয়ে কলেজ ড্রেস নেই কেনো?
_কলেজ কার্ড নিয়ে আসলেই হয়। কলেজ ড্রেস আছে তবে কেউ সেটা পরে না এমন কি কলেজে ধরা বাঁধা নিয়ম করে ও দেয় নি। বাট সেমিস্টার আর ফাইনাল এক্সামে কলেজ ড্রেস মাস্ট।
প্রাইভেট কলেজ কে নিজের বাসার প্লে গ্রাউন্ডে আয়োজিত ফেয়ার মনে হওয়া টা অস্বাভাবিক নয়। টাকার জোর হলো বড় জোর।
গুটি কয়েক মানুষ ভোর কে দেখছিলো। তাঁতে ও কেমন কেঁপে উঠে ওহ। অর্ধ মাস পেরোলে ও ভয় কে জয় করতে পারে নি। আশ্চর্য জনক হলে ও সত্য রাদ কে এতো টা ভয় লাগে নি। হয়তো তখন মানসিক চাপের মধ্যে ছিলো তাই।
_আমি বাইরে আছি একদম ই ভয় পাবে না। যাহ যাহ কোশ্চেন করবে একদম সোজা সাপটা উত্তর দিবে। আর রাইটিং পার্ট টা কঠিন হয় না একদম ই। সেটা অনায়াসে পারবে তুমি।
_আপনি আসবেন না?
_এক্সাম হলে বাইরের কেউ এলাউ হয়?
_না।
_তাহলে আমি কি করে এলাউ হবো? আমি বাইরেই ওয়েট করছি। তুমি কেবিনে যাও।
মাথা ঝাঁকায় ভোর। কেবিনের দরজা খুলে দেয় দারোয়ান। কিছু টা চিন্তা গ্রস্ত হয় ছেলেটা। মিনিট দুয়েক পর দরজা খুলে ছুটে আসে ভোর। চোখ মুখ কেমন দেখাচ্ছে মনে হচ্ছে প্রচন্ড ভয় পেয়েছে। ওয়েটিং চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়ায় রাদ। সঙ্গে সঙ্গে রাদের বুকে ঝাঁপিয়ে পরে মেয়েটা। সামান্য আর্তনাদ করে বলে
_দুটো আব্দুর রহমান , দুটো নয় তিনটে আব্দুর রহমান।
_এই ভোর কি বলছো তুমি?
_তিন জন , ঐ খানে তিনজন
_হ্যাঁ তিনজন তো কি হয়েছে?
_ম্যাথ স্যার তিনজন ম্যাথ স্যার।
ভোরের কথা টা প্রথম দিকে বুঝতে না পারলে ও পরে বুঝতে পারে। এতো প্রেসারে এটা মাথায় ই ছিলো না। কেবিন থেকে তিনজন স্যার ই বেরিয়ে আসেন। ওনাদের দিকে তাকিয়ে রাদের চোখ দুটো ওহ যেন ঝলসে যায়। মৃদু হাসার চেষ্টা করে বলে
_আমি ওকে নিয়ে রেস্ট রুমে যাচ্ছি স্যার। আসলে ওহ ভয় পেয়েছে। বুঝতে পারে নি।
_ইটস ওকে। যাও তুমি আমরা অপেক্ষা করছি।
_থ্যাংকস।
ভোর কে নিয়ে যেতে থাকে রাদ। আড়চোখে আবারো তাকায় ভোর। তিন টে মানুষ একদম এক চেহারা আবারো ভয় পেয়ে যায়। এমন টা তো ভূতের হয়। তিন জনের ছদ্মবেশ ধারন করে। তাছাড়া জ্বীন ভর করলে এমন টা দেখা সম্ভব। তবে ওকে কি জ্বীন ভর করেছে?
_পানি খাও।
_উহুহ।
_অনেক ভয় পেয়েছো?
_হুম।
_আচ্ছা দেখি তাকাও তো আমার দিকে।
রাদের দিকে প্রগাঢ় দৃষ্টি মেলে তাকায় ভোর। চোখে মুখে এখনো আতঙ্ক। তবে এতো টা ভয় পাওয়া কিছু টা ফোবিয়ার মতো মনে হলো। হঠাৎ করেই ডুকরে কেঁদে দিবে তা ভাবতে ও পারে নি ছেলেটা। ভোরের কান্নার গতি বেড়ে গেল। রাদের হাত ধরে বলল
_আমাকে জ্বীনে ভর করেছে ডাক্তার সাহেব। আমি এখন আর বাচঁবো না।
_জ্বীন! এই মেয়ে কি সব বলছো।
_আমি ঠিক ই বলছি। আমাকে দুষ্টু কোনো জ্বীন ভর করেছে।
_স্টপ ক্রাই। কি বাচ্চা দের মতো আচারন করছো। আবার বলছো জ্বীন ভূত, শান্ত হও।
_আমি সত্যি বলছি। ঐ খানে তিনজন ম্যাথ প্রফেসর ছিলেন।
মুখ চেপে হাসে রাদ। এতোক্ষন ওর পায়ের কাছে হাঁটু গেড়ে বসে থাকলে ও এবার পাশে বসে। ভোর এখনো কেঁদে চলেছে।নিজের আদুরের হাতের স্পর্শ দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। শাহাদাত আঙুলের সাহায্যে চোখ মুছিয়ে বলে
_এতো ভীতু হলে চলে? শোনো মেয়ে, ভয় পাওয়া টা স্বাভাবিক ছিলো বাট কান্না করা টা একদম ই বেমানান।
_কিন্তু
_কোনো কিন্তু নয়। শোনো আগে, কি শুনবে তো?
_হুম।
_তিন জন ম্যাথ প্রফেসর দেখেছো তাই তো?
_হুম।
_প্রথম প্রথম আমার অবস্থা ও খারাপ ছিলো। দুজন হলে ও চলতো, কিন্তু তিনজন কে দেখে ভরকে গিয়েছিলাম। আসলে ওনারা ট্রিপল। আর ভাগ্য ক্রমে তিন ভাই ই একই কলেজে আছেন। প্রায় সব স্টুডেন্টস রাই গুলিয়ে ফেলে। আমি ও গুলিয়ে ফেলি কে কোন স্যার। তাই কলেজে সবাই মাথায় নিয়ে নিয়েছে অধ্যক্ষ তিন জন। আর তাছাড়া কে কখন অধ্যক্ষ হিসেবে ঢুকে যাচ্ছে বোঝা ও যায় না। তিন জন কেই অধ্যক্ষ গননা করা হয়। একটু অদ্ভুত তাই না?
_ আপনার কথা মতো ওনারা এক মায়ের তিন সন্তান। সেটা ও আবার এক সঙ্গে। আমার মাথা ঘুরছে ডাক্তার সাহেব।
মাথা চেপে ধরে ভোর। পানি এগিয়ে দেয় রাদ। মেয়েটা যেন একটু তেই ভয় পেয়ে যায়। দুজনেই কিছুক্ষন থম মেরে থাকে। সময় চলে যাচ্ছে দেখে রাদ বলে
_মনে করবে কলেজের অধ্যক্ষ তিন জন ই। কে কোন টা সহজে ধরা যায় না। আর সব থেকে প্যারা ময় ওনারা এক রকম স্টাইল আর এক রকম কস্টিউম পরে।
_ওহহ।
_আর হ্যাঁ তবে একটা টেকনিক শিখিয়ে দেই খেয়াল রাখবে তিন জনের মধ্যে যে বেশি লম্বা সে হলো ম্যাথ এর প্রফেসর। আর ভ্রু এর উপর সামান্য কাঁটা দাগ সে হলো কলেজের অধ্যক্ষ।
_আর আরেকজন।
_আরেক জন , উফফ ওহ হ্যাঁ আরেক জন এর কথার স্টাইল কিছু টা মেয়েলি সে হলো সহ অধ্যক্ষ।
_মেয়েলি?
_হুম।
জোরে হেসে উঠে ভোর। এতোক্ষন পর যেন সমস্ত ভয় টা কেটেছে। ভাবা যায় একই কলেজের তিন টি বিশাল পদে রয়েছে ট্রিপল ভাই।মেয়েটা তো ভেবেছিলো জ্বীন ভূতে ধরেছে ওকে। অবশেষে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে দুজনেই। এবার মৌখিক এক্সাম টা দিতে পারলেই হলো।
কেবিন থেকে বের হয়েই চাঁপা হাসি তে ভেঙে পরে ভোর। ওর হাসি দেখে রাদ বলে
_হাসছো কেন?
_আপনার কথা অক্ষরে অক্ষরে সঠিক ডাক্তার সাহেব। আমি দেখেছি একজন স্যারের কন্ঠ টা কিছু টা মেয়েলি। একটুর জন্য হেসে ফেলে নি।
_হায়রে তুমি সেগুলো নিয়ে পরে আছো? সব উত্তর করতে পেরেছিলে?
_বারো টা প্রশ্ন করেছে আট টা পেরেছি।
_আচ্ছা সমস্যা নেই। ছয় টা হলেই পাস মার্ক দিয়ে দেয়। আধ ঘন্টার এক টা এক্সাম হবে। শুধু মাত্র এম সি কিউ বুঝেছো?
_হুমম।
_মনোযোগ দিয়ে দাগাবে। কোনো ভুল যেন না হয়।
_আচ্ছা মনে রাখবো।
_আর শোনো।
_হুম।
রাদের কাছাকাছি এসে দাঁড়ায় ভোর। মেয়েটার হাস্য উজ্জল মুখ টা দেখে শান্তি অনুভব হয়। নিজ দায়িত্ব পালনে বেশ সর্তক রাদ। জান যাবে তবে মান যাবে না। ভোর হলো ওর মান। যাকে হারাতে দিবে না কখনোই।
_কিছু বলবেন?
_ওহহ হ্যাঁ। যদি ভালো ভালো এক্সাম টা শেষ করতে পারো চকলেট দিবো।
_এহহ আমি চকলেট খাই না। বাচ্চা নই আমি।
সোজা সাপটা জবাবে কিছু টা ভরকে যায় রাদ। ওর বন্ধু মহলের সব গুলো মেয়ে চকলেট বলতে অজ্ঞান। আর এ দিকে ভোর উল্টো। মাথা চুলকোতে থাকে রাদ।যাক মেয়েটার মধ্যে ইউনিক কিছু আছে তবে। ভোরের নাম ধরে ডাকে এক্সামিনার, এক পলক তাকিয়ে ছুটতে লাগে মেয়েটা।যেতে যেতে বলে
_দোয়া করবেন ডাক্তার সাহেব।
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।
চলবে