চলো রোদ্দুরে পর্ব-০৯

0
574

#চলো_রোদ্দুরে
#ফাতেমা_তুজ
#part_9

সাত টা দিন এতো টা যন্ত্রণার কেন হলো বুঝতে পারছে না রাদ। প্রতি টা সেকেন্ড মন একটাই ইচ্ছে পোষন করে চলেছে আর সেটা হলো ফিরে চলো। অথচ এর আগে ও অনেক গুলো মেডিকেল ক্যাম্পেইন করেছে ছেলেটা। তখন মনে হয়েছে ইস আরেক টু সময় থাকতে পারলে ভালো হতো। এবার যেন সব এলোমেলো তবে কাজ কর্মে কোনো প্রভাব পরতে দেয় নি।বেশ ভালোই ব্যালেন্স করে চলেছে। তবে মনের শান্তি নেই।একটা বিশেষ পাতার সন্ধান ও করেছে। যেটা দিয়ে অনিদ্রার রোগ সারানো যায়। তবে আশংকা করা হচ্ছে এই পাতা ব্যবহার করে অনেকেই নেশা গ্রস্ত হতে পারে। যদি ও এখনো এর মেডিকেল প্রুভ বের হয় নি। কাঁধে ব্যাগ টা ঝুলিয়ে এই পাহাড়ি এলাকা কে এক বার দেখে নেয় রাদ। উহুহ পিছু টান নেই। কিন্তু এর আগের বার, ফিরতেই ইচ্ছে করছিলো না। অদ্ভুত কেমন।

_ আমি আগের স্টপে নামবো।

পাশ থেকে ভ্রু কুটি করে নাহিদ বলে
_কেন?

_একটু দরকার ছিলো।

_আমাদের ডিনার পার্টির কি হবে?

_আরে তোরা কর না। আমি অন্য সময় জয়েন হবো। আজ খুব দরকার। আসছি রে।

ব্যাগ নিয়ে নেমে যায় রাদ। ইচ্ছে করে দুই স্টপ আগে নেমেছে ছেলে টা। যাতে করে ধরা না পরে। সাথে তো গাড়ি নেই তাই এক টা সি এন জি তে করে ভোরের হোস্টেল এর সামনে আসে। সময় দশ টা বাজার দশ মিনিট বাকি। অর্থাৎ অনুমতি নিয়ে বেশি ক্ষন কথা বলা যাবে না। তাই আবারো সেই পথ অবলম্বন করে ছেলেটা। আজ ও একি ভাবে জানালায় মাথা এলিয়ে আছে ভোর। অভ্যাস হয়ে গেছে মেয়ে টার। রোজ এভাবেই মাথা রাখতো। যদি রাদ আসে এই অপেক্ষায়।
_এই মেয়ে।

_ডাক্তার সাহেব!

_ব্যলকনির ডোর খুলো।

_আমি আসছি, সাবধানে।

ডোর খুলে দেয় ভোর।ব্যলকনিতে পা রেখে স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে রাদ। হাসি হাসি মুখে বলে
_কেমন আছো?

_ভালো। আপনি এতো রাতে?

_এমনি আসলাম আর কি।

_ওহহ। মাত্র ফিরলেন বুঝি?

_হ্যাঁ কাল সকালে কিছু তেই ছাড় পাবো না। তাছাড়া বিকেলে একটা আর্টিকেল রেডি করতে হবে। ড্যাড আবার কখন কি ধরিয়ে দেয় তাই এখনি আসলাম দেখা করতে।

কাউচে বসে রাদ। দু বার হাই তুলে বলে
_এই কয়েক দিন এক দম ই ঘুম হয় নি।

_কেন?

_পাহাড়ি মশা একটু একটু করে খুব যত্নে আমাকে কামড় দিয়েছে। ভুল বসতো স্প্রে নিয়ে যাই নি আমরা। আর সেই এলাকায় কোনো প্রতিরোধক ব্যবস্থা ও নেই। ভেবেছিলাম ডেঙ্গু জ্বর বাঁধিয়ে ফেলবো।দ্যান কিছু পাহাড়ি পাতার সাহায্য মশার থেকে বেঁচেছি।

_আচ্ছা। আপনি কি ফ্রেস হবেন?

_হওয়া ই যায়। আজ অনেক টা সময় আড্ডা দিবো।

মাথা ঝাঁকায় ভোর। ওয়াসরুম থেকে ফ্রেস হয়ে আসে রাদ। তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে গেলেই ভোর বলে
_এটা আমার ব্যবহার করা তোয়ালে।

এক পলক তাকিয়ে আবারো মুখ মুছে রাদ। অবাক হয় ভোর। বেডে উঠে বসে রাদ বলে
_তোমার টা সমস্যা নেই।

_তবু ও।

_বেশি কথা বলো তুমি। এখন বসো তোমার জন্য গিফ্ট এনেছি।

_গিফ্ট?

_হুমম। কাছে আসো।

পাশা পাশি বসে ভোর। ভোরের চোখে হালকা হাতে হাত বুলিয়ে বলে
_ক্লোজ ইউর আই।

চোখ বন্ধ করতেই ঝনঝন আওয়াজ এসে কানে বিঁধে। কেন যেন শব্দ টা বেশ ভালো লাগে ওর কাছে। ফট করেই চোখ খুলে ফেলে। রাদ তখন কিছু একটা বের করছিলো। ওকে দেখে বলে
_নট ফেয়ার। একদম ই ঠিক হলো না। সারপ্রাইজ বলে কিছুই রইলো না। তুমি চিটিং করলে।

_এটা কি ডাক্তার সাহেব?

_মুক্তোর মালা।

_ওহ আচ্ছা। ছোট সময়ে মেলা থেকে অনেক গুলো কিনেছিলাম আমি। খুব ভালো লাগে আমার।

_উহুহ ঐ গুলো নয় এটা। ঐ গুলো তো রিয়েল না। এটা একদম খাঁটি মুক্ত দিয়ে গড়া।

রাদের দৃষ্টি তে দৃষ্টি দেয় মেয়েটি। শুভ্র সুন্দর মুখে অবিশ্বাস্য কর চাহনি। ইশারায় কিছু একটা বলে রাদ। তবে সেটা বোধ গম্য হয় না। বেড থেকে নেমে গিয়ে ভোরের এলোমেলো চুল গুলো এক পাশ করে মুক্তোর মালা টা পরিয়ে দেয় ওকে। দারুন এক হাসি উপহার দেয় ভোর। সোজা মিররের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়।নিজেকে পর্যবেক্ষন করতে ব্যস্ত হয়। সে দিকে তাকিয়ে থাকে রাদ। অল্প তে খুশি হওয়া মানুষ গুলো সত্যি খুব ভালো হয়।মিররের মাঝ দিয়ে রাদ কে দেখতে থাকে ভোর। সেই স্বচ্ছ হাসি টা যেন ওকে আঘাত করে চলেছে। চোখ নামিয়ে বলে
_জানেন ডাক্তার সাহেব আমার খুব ভালো লাগে এমন উপহার। অনেক ইচ্ছে হতো কেউ আমাকে উপহার দিক। কিন্তু সে ইচ্ছে টা কখনোই পূরন হয় নি। সবাই আমার ছোট ভাইয়ের জন্য খেলনা নিয়ে আসতো কিন্তু আমার জন্য কিছু নিয়ে আসতো না।

মেয়েটির কথায় হিংসে নয় বরং অভিমান ফুটে উঠেছে। অবেহেলা কতো টুকু ব্যথিত করে সেটাই ফুটে উঠেছে। রাদ অনুভব করে মেয়েটি বড্ড অভিমানী। অল্প তেই অভিমান জুড়ে বসে। আর এ তো বিশাল পরিমানের অবহেলা। শ্বাস বন্ধ হয়ে মরে যায় নি এটাই তো বেশি।

‘ মিসেস হাসনা বললেন তুমি নাকি পড়া শোনায় খুব চটপটে। স্কুলে রোল কতো ছিলো? ‘

_ লাস্ট ইয়ার যখন এস এস সি দিয়েছিলাম তখন 4 ছিলো। তবে এর আগে 2 অথবা 3 হতো সব সময়।

_ কখনো ফার্স্ট হও নি?

_উহুহ। ফার্স্ট বয় ছিলো চেয়ারম্যান এর ছেলের। কিন্তু একদম ই পড়াশোনা পারে না ওহ। প্রতি টা ক্লাস টেস্টে ফেল করতো। অথচ ফাইনালে টপ করতো।

_হুম বুঝলাম। বিশাল পরিমানে চোর যাকে বলে। হোয়াট এভার, কলেজে ফার্স্ট গার্ল হতে হবে কিন্তু। ইউ নো হোয়াট তোমার ডাক্তার সাহেব একটা পাগল ছিলো। কখনো কেউ হারাতে পারে নি। তবে ক্লাস টেনে আমি ফার্স্ট বয় থেকে সেকেন্ডে এসে গিয়েছিলাম। যে পরিমানে কান্না করেছিলাম আমি নিজে ও জানি না। ইনফেক্ট ফার্স্ট বয় যে ছিলো ওহ নিজেই স্যারের কাছে গিয়ে বলেছিলো স্যার রাদ কে ফার্স্ট দেওয়া যায় না।

ফিক করে হেসে উঠে ভোর। কেটলি থেকে গরম পানি ঢালতে ঢালতে রাদ বলে
_বিশ্বাস হচ্ছে না তোমার? এটা একদম সত্যি বলছি। বাট ভারসিটি তে গিয়ে কিছু টা পিছিয়ে গেছি। এতো এতো ট্যালেন্ট এর মাঝে টিকে থাকা কষ্ট ই বটে। তবে টপ থ্রি থেকে কখনোই সরাতে পারে নি। শুধু মাত্র সেমিস্টার এক্সামে ফেল হতে হতে বেঁচে ছিলাম।

_কেন? ফেল হতে বেঁচে ছিলেন কেন?

_আরে বলো না। যখন মাথায় যা আসে আর কি। ওর জন্য মম আমাকে বকে ছিলো। বি কজ মেডিসিন এর কোর্স টা করি কেউ ই চায় নি। বাট আমার খুব ভালো লেগেছিল। আর ফার্স্ট সেমিস্টার টা আমার কাল হয়ে গেল। 1’5 এর জন্য ফেল করি নি। ইসস কি লজ্জা।

প্রচন্ড হাসি পায় ভোরের। স শব্দে হেসে উঠে মেয়েটা। সাউন্ট প্রুভ রুম নয় এটা খেয়াল হতেই ভোরের মুখ চেপে ধরে রাদ। ফিস ফিস করে বলে
_ হুশশ সাউন্ড বাহিরে গেলে কেলিয়ে বের করবে আমায়। আসো একটা ড্রিঙ্কস পান করা যাক।

_কি সেটা?

_আই হেব সাম ক্যাডবেরি চকলেট বল। আর এখন চকলেট বল দিয়ে হট চকলেট বানিয়ে ফেলবো। আসো দেখাচ্ছি।
.

সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠেই এক্সারসাইজ শুরু করেছে রাদ। ইফতিহার কিছু টা অলস ই বটে। রামিসা ডাকাডাকি না করলে ঘুম থেকে উঠতেই চান না। জগিং করতে করতে গার্ডেনে আসেন তিনি। রাদ তখন পুশ আপ করতে ব্যস্ত। টান টান উত্তেজনায় চল্লিশ খানা পুশ আপ নিমিষেই করে ফেলে রাদ। তবে এখন অনুভব করে শরীর ব্যাথা হতে শুরু করে। আরো দশ টা পুশ আপ দিয়ে উঠে যায়। ইফতিহার বলে
_আমি ভেবেছিলাম সেঞ্চুরি টা করবে তুমি। বাট কখনোই সেঞ্চুরি করো না। এটা ঠিক নয় বেটা।

_লিসেন ড্যাড। আমি কেন আমার বাপ দাদা ও সেঞ্চুরি করে নি। সেখানে আমি কেন করবো?

_হুম বুঝলাম। তুমি নাই করতে পারো বাট আমার দাদু ভাই সেঞ্চুরি করবেই। আর সেটা যদি না করাতে পারি তবে আমি ও ইফতিহার খান নই।

হট তোয়ালে গিয়ে মুখ মুছতে মুছতে ইফতিহারের পাশে বসে রাদ। ওয়াটার বোতল থেকে কিছু টা পানি পান করে বলে
_যদি তোমার দাদু ভাই না আসে?

_হুমম চিন্তার বিষয় ই বটে। সমস্যা নেই আমি আমার নাতনি কে দিয়েই সেঞ্চুরি করাবো। আই উইস সে তোমার মতো গর্দভ না হয়।

_ড্যাড।

ইফতিহার বেঞ্চ থেকে উঠে আবারো জগিং এ নামে। রাদের মনে হলো এখন এক বার ভোর কে দেখা দরকার। এখন রোড ফ্রি আছে আর এই সময়ে একটু স্পিড দিয়ে ড্রাইভ করলে ত্রিশ মিনিটেই পৌছে যাবে। যেহেতু ছয় টা বাজে মাত্র। আর আকাশে এখনো কিছু টা অন্ধকার সেহেতু টাইম লি পৌছাতে পারবে। হোস্টেল এর এক্সারসাইজ শুরু হয় সাড়ে ছয় টার পর।

ঘুমু ঘুমু চোখে টলমলে পায়ে হোস্টেল থেকে গ্রাউন্ড এ বের হয় ভোর। কুয়াশার কারনে এখনো হোস্টেল এর এপাশ ওপাশ দেখা যাচ্ছে না। সবাই অলরেডি এক্সারসাইজ শুরু করে দিয়েছে। ভোরের মনে হলো আজ ও একটু বেশি ই লেট করে ফেলেছে। হবেই তো কাল রাতে একটার পর ঘুমিয়েছে। রাদের হট চকলেট এর পাল্লায় পরে এক ঘন্টা সময় লস হয়েছে। বহু কষ্টে সফল হয়েছে। বাট পড়া আদান প্রদান করতে করতে কখন যে বারো টা পেরিয়ে গেছে খেয়াল ই ছিলো না। সাড়ে বারো টার দিকে চলে গেছে রাদ। আর ওর ঘুমাতে ও দেরি হয়েছে। তাই তো আজ লেট। সাধারনত সবাই কিছু স্পেসিফিক এক্সারসাইজ করছে। যাঁর কোনো টা তেই ধারনা নেই মেয়েটার। তাই তো বাচ্চা দের মতো দড়ি লাফ খেলে। অবশ্য এতে ও বেনিফিট আছে।ভোর কে দেখেই এগিয়ে আসে তিন্নি। মুখে সামান্য হাসি ফুটিয়ে বলে
_গুড মর্নিং ম্যাম। আপনি আজ লেট করলেন যে?

_গুড মর্নিং। আসলে আপু কাল অনেক টা রাত করে ঘুমিয়েছি তো তাই।

_ওহহ। আজ কে ও স্কিপিং করবেন?

_হ্যাঁ ঐ টাই বেটার আমার জন্য।

_ওকে।

দড়ি নেওয়ার জন্য তিন্নি পা বাড়াতেই পিছু ডাকে ভোর। বলে
_তিন্নি আপু।

_ইয়েস ম্যাম।

_আমার সাথে দড়ি লাফে যোগ দান করবেন?

_দুজন এক সাথে স্কিপিং করবো?

_হ্যাঁ আপনি শুধু আমার পায়ের সাথে পা মেলাবেন।

_গ্রেট। ছোট সময়ে অনেক খেলেছি আমি। দড়ি নিয়ে আসছি আমি।

তিন্নি ছুট লাগায়। গেটের কাছ থেকে ভোর কে দেখে চলেছে রাদ। অনেক টা আড়ষ্টতা কাঁটিয়ে নিয়েছে। বেশ ভালো লাগে ওর কাছে। খেলার সাথে সাথে এক্সারসাইজ ও হয়ে যাচ্ছে। ঘড়ির কাঁটা টা টিট টিট করে বেজে উঠে। অর্থাৎ সাত টা বেজে গেছে। গাড়ি ঘুরিয়ে চলে যায় রাদ।

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাফ করবেন।

চলবে