ছিলাম তো তোমারই পাশে পর্ব-১২

0
2708

#ছিলাম_তো_তোমারই_পাশে
#পর্ব_12
Writer::Shaanj Nahar Sanjida


এখন চলো তোমাদের গান সিলেক্ট করতে হবে!তোমরা নাচবে তো?(ছায়া চোখ মুছতে মুছতে)

আরে ইয়ার।এইটাই তো কষ্টের কথা।এতো গান শুনি এখন একটা গানও মাথায় আসছে না।(আমি মাথায় হাত দিয়ে বেডে বসে পড়লাম)

এইটা আমি ভেবে ফেলেছি।আমরা কি গানে নাচবো!(নিতু আমার কাধে হাত রেখে)

কী গানে?(আমি আর ছায়া এক্সসাইটেড হয়ে)

আমরা নাচবো তেরা ইয়ার হু মে।এই গানে ভালো হবে না?(নিতু)

ভালো হবে না ভালো হয়ে দৌড়াবে।কিন্তু আরেকটা সমস্যা আমাদের নাচা কিন্তু প্রাকটিস করে দিতে হবে।(আমি)

এখন থেকেই শুরু করো আমি দেখি!(ছায়া)

ওকে চলো শুরু করা যাক।
বলেই আমরা শুরু করে দিলাম।


অন্যদিকে
আমাদের গানটা কেমন আভি?তোমার পছন্দ হয়েছে?(তুলি)

হুম।ভালোই।চলো প্রাকটিস শুরু করে দেই।(আভি)

ওকে।চলো।(তুলি)

আমাদের গানটা কেমন হয়েছে আয়ুশ!(তিশা)

ভালোই হয়েছে!এই কম্পিটিশন তো আমরাই জিতবো(আয়ুশ নেহার দিকে তাকিয়ে)

এইযে মিস্টার।এতো ওভার কনফিডেন্ট হলে ভালো হবে না।(নেহা আয়ুশ এর দিকে তাকিয়ে)

শুনুন।আমাদের না কনফিডেন্ট গিফটেড।আপনাদের মত না জোগাড় করতে হয়।(আয়ুশ ভাব নিয়ে)

তাই নাকি।দেখা যাবে।জিতবো তো আমরাই।(নেহা)

আমরা তো জিতে গেছিই।শুধু কালকে আপনি দেখবেন।আর হ্যা জেতার পর কিন্তু প্রাইজটা আপনার হাত দিয়েই নিবো।
বলেই একটা চোখ টিপ দিয়ে আয়ুশ চলে গেলো।

নেহা সেখানে দাঁড়িয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বললো
ইন্টারেস্টিং তো?

পরে আয়ুশ তিশা আর আভি তুলি।আয়ুশ আর আভির রুমে প্রাকটিস করতে শুরু করলো।অন্যদিকে ডালিয়া নিহাল আর নেহা এবং ওর পার্টনার এক রুমে।আর আমি নিতু আপু এক রুমে।আমরা সবাই সারারাত প্রাকটিস করলাম।


সকাল বেলা
রাতের বেলা প্রাকটিস করতে করতে সব কয়টা যার যার রুমে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে। প্রত্যেকটার কোমর হাত পা ব্যাথায় টনটন করছে।সকাল বেলা ঈশানি আন্টি সব গুলোকে চিচিয়ে ঘুম থেকে উঠিয়েছে।খাবারের টেবিলে মার দায়িত্ব পড়ছে।কেনো জানি আসার পর থেকে খাবারের দায়িত্ব মার কপালেই পরে।বাবা আর বাকি আংকেলরা স্টেজ আর ডেকোরেশন দেখছে।সুমাইয়া আন্টি আর রাইশা আন্টি গায়ের হলুদের খাবারের দায়িত্বে আছে।ঈশানি আন্টি সব কিছুর তদারকি করছে।এই জন্যই সকাল সকাল আমাদের ধরে বেধে ঘুম থেকে উঠালো।
আমরা সব কয়টা একে একে সিড়ি দিয়ে নামছি আর একেকজনের কোমরে হাত,, পায়ে হাত,, ঘাড়ে হাত,,পিঠে হাত,,একজন খুঁড়ে খুঁড়ে হাঁটছে,,একজন হাত নাড়াতে পারছে না।

বাবা আর আদি আঙ্কেল এসেছিলো পানি খেতে কিন্তু আমাদের এই অবস্থা দেখে
কলি?তুমি না বলেছে ছায়ার পা মচকে গেছে।কিন্তু এখানে দেখি সব গুলো খুরাছে।(জিসান অনেক হয়ে)

হুম।মনে হচ্ছে পঙ্গুদের মেলা বসেছে।(আদি)

আমি জানি না।কাল রাত পর্যন্ত তো সব ঠিক ছিলো এখন কি হয়েছে?(কলি)

অন্যদিকে আমি নাচতে নাচতে ফাল দিতে দিতে নিচে মেনে আসলাম।

কিরে সব গুলো খুরাচ্ছে কেনো? তুই ঠিক আছিস কেনো?(জিসান অবাক হয়ে)

আসলে বাবা ওরা খুড়াচ্ছে কারণ ওরা সারা রাত নাচের প্রাকটিস করছে।যার কারণে সবার শরীর ব্যাথা করছে।আর আমি ঠিক আছি কারণ আমি আর নিতু আপু বেশি প্রাকটিস করি নি।এইজন্য।এখন খাবো সরো দেখি।
বলেই খাবারে টেবিলের বসলাম।আর সিড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি আভি কোমরে হাত দিয়ে খুরাতে খুড়াতে নিচে নামছে।আমি ওকে দেখে হাসতে হাসতে মাটিতে গড়াগড়ি খেতে লাগলাম।আভি শুধু আমার দিকে একটু রাগী লুক দিলো।এখন বেচারার আমার সাথে তর্ক করার ইচ্ছেও নেই বললে ভুল হবে।তর্ক করার শক্তি নেই।

আস্থা বেশি হাসলে কাদতে হয়।(আভি কানের কাছে ফিসফিস করে)

এখন তো হেসে নেই।বলেই আবার হাসতে শুরু করলাম।

খাবার টেবিলে বসে একটা জিনিষ খেয়াল করলাম।আয়ুশ একটি বারের জন্যও ছায়ার দিকে তাকায় নি কথা বলা তো দূরের কথা।সারাক্ষণ নেহার সাথে লেপ্টে আছে। তা দেখে আমি ছায়ার দিকে তাকালাম ছায়াও আমার দিকে তাকিয়ে পরে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলো।
খাবার দাবার শেষ করে সবাইকে ব্যাথার ঔষুধ খাওয়ানো হলো এখন সবাই ঠিক আর আভিও আগের মত ঝগড়া করতে পারবে।


সন্ধ্যায় আমরা সবাই তৈরি হতে লাগলাম।
মেয়েটা সবারই কলা পাতা রঙের শাড়ি পড়বে আর ছেলেরা সেই রঙের পাঞ্জাবি।আমাদের মায়েরাও কলাপাতা রঙের শাড়ি পড়বে আর বাবারাও সেই রঙের পাঞ্জাবি।
আমি,,ছায়া আর নিতু আপু তারাতারি তৈরি হয়ে গেলাম।অনুষ্ঠানটা হবে বাগানে।তাই রেডি হয়ে নিতু আপু বাগানে চলে গেলো।ছায়া যেনো কোথায় গেলো বলে গেলো না।আমি বেরিয়ে মা আর বাবার কাছে গেলাম।


মা বাবার রুমে
আজ তোমাকে সত্যি কলাবতী লাগছে কলি!(জিসান কলির হাত ধরে)

সত্যিই?(কলি মুচকি হাসি দিয়ে)

আমি কি মিথ্যা বলতে পারি?(জিসান)

তোমাকেও খুব হ্যান্ডসাম লাগছে।(কলি লজ্জা পেয়ে)

তাদের রোমান্সের বারোটা বাজিয়ে আমি হুশ করে ঘরে ঢুকে গেলাম

মা বাবা আমাকে কেমন লাগছে?(আমি এক্সসাইটেড হয়ে)

কলি আর জিসান নিজেকে সংযত করে।

কী হলো?তোমরা কি করছিলে? তোমরা কি বেস্ত? তা হলে আমি যাই।
বলেই আমি যেতে নিবো তখনই মা আর বাবা আমাকে আটকালো।

কাবাবের হাড্ডি।এসেই যখন পড়েছিস তাহলে আবার চলে যাচ্ছিস কেনো?(জিসান)

কাবাবের হাড্ডি?আচ্ছা ছাড়ো এখন বল অনেক কেমন লাগছে?(আমি শাড়ি দেখিয়ে)

একদম ছোটো কলাবতী লাগছে আমার মেয়েটাকে!(জিসান আস্থার গালে হাত দিয়ে)

দেখতে দেখতে আমাদের মেয়েটা কতো বড়ো হয়ে গেলো?(কলি চোখ ছলছল করছে)

হুম।কয়েকদিন পরেই যেই ছোটো ছোটো হাত ধরে পথ চলা শিখিয়েছি কয়েকদিন পরেই এই হাত দুটো অন্যর হাতে তুলে দিতে হবে!(জিসান আস্থার হাত ধরে)

হুম। মেয়েরা যে কেনো তাড়াতাড়ি বড়ো হয়ে যায় জানি না।তোরা দুটো যদি সারাজীবন আমাদের ছোটো আস্থা আর ছায়াই থাকতি তাহলে কতো ভালো হতো।(কলি আস্থার গালে হাত দিয়ে)

আমি বাবা মাকে জড়িয়ে ধরে
আমরা কোথায় বড়ো হয়েছি বলো।আমরা তো তোমার এই ছোটো আস্থা আর ছায়া।এখনও তো কিছু হলে মায়ের কাছে এসে কান্না করতে করি।বাবার কাছে বিচার দেই।তাহলে বড়ো আর হলাম কই?(আমি)

আমাদের কাছে তো তুই সেই ছোটো আস্থা।কিন্তু লোকের কাছে তো বড়ো হয়ে গেছিস।আর মেয়ে বড়ো হয়ে যাওয়াই মানে তাকে বিয়ে দেয়ার সময় হয়ে গেছে।(কলি)

কিন্তু আমি বিয়ে করবো না।বলেছি না আমি সারাজীবন বাবার বাড়ি বসে বসে খাবো।এখন এমন করছো যেনো আমি তোমাদের বোজা হয়ে গেছি।(আমি)

দূর।পাগলী মেয়েরা কি বাবার উপর বোজা হয়।ওরা তো হয় বাবার রাজকুমারী।যেমন তুই আমার রাজকুমারী।(জিসান)

হয়েছে হয়েছে অনেক ইমোশনাল কথা এখন গিয়ে তুই তৈরি হো। নাচবি না।(কলি)

ও হ্যা এইটাই বলতে ভুলে গেছিলাম।তোমরা তাড়াতাড়ি এসো। একটু পরেই আমাদের নাচ।(আমি)

তুই যা আমরা আসছি (জিসান)

ওকে।তাহলে আমরা যাই।
বলেই আমি দৌড়ে নিচে চলে গেলাম।

আমাদের মেয়েটা সত্যিই দেখতে দেখতে কতো বড়ো হয়ে গেছে।(কলি)

হুম।এখন একটা ভালো ছেলে পেলে শুভ কাজটা সেরে ফেলবো।(জিসান)


অন্যদিকে
ছায়া আয়ুশকে খুঁজতে খুঁজতে পুকুর পাড়ে চলে আসলো।সারা বাড়ি ছায়া আয়ুশকে খুজে পেলো না।তাই পুকুর পাড়ে চলে আসলো।আসার পর ছায়া আয়ুশকে দেখলো ঠিকই কিন্তু আয়ুশ এর সাথে নেহাও ছিলো।তারা অনেক কাছাকাছি ছিলো।যা দেখে ছায়ার মন ভাঙ্গতে একটুও সময় লাগলো না।
ভাবতে পারি নি।তুমি এত তাড়াতাড়ি রেলেশনে যেতে রাজি হবে!(আয়ুশ নেহার চুল নিয়ে খেলা করতে করতে)

তোমার মত এত হট ছেলে যদি প্রপোজ করে তাহলে কি আর না করে পারা যায়?(নেহা পাঞ্জাবির কলার ঠিক করতে করতে)

হ্যা। তাও ঠিক।তাহলে আগে তো অ্যাটিটিউড দেখিয়েছিলে কেনো?(আয়ুশ)

আমি ভেবে ছিলাম।তুমি আর ওই ছায়া মেয়েটা রিলেশনশিপে আছো তাই আর বিরক্ত করতে চাই নি।(নেহা)

আমি আর ছায়া।
বলেই আয়ুশ হাসতে শুরু করলো।
দেখো আমি আর ছায়া ইম্পসিবল।ছায়ার মতো মেয়েকে গার্লফ্রেন্ড বানানো অসম্ভব।(আয়ুশ)

কেনো মেয়েটা দেখতে তো সুন্দরী।(নেহা)

শোনো ও শুধু দেখতেই সুন্দর আর কিছু না।একটা বোরিং বেহেনজী ছাড়া আর কিছু না ও।(আয়ুশ)

তাহলে ওর সাথে বন্ধুর রেখেছো কেনো?(নেহা)

কারণ আসার সময় বাসে ও আমাকে অ্যাটিটিউড দেখিয়ে ছিলো ওইটারই একটু বদলা নিলাম।আসলে আয়ুশ চৌধুরীকে অ্যাটিটিউড দেখিয়ে যাবে আর আয়ুশ চৌধুরী ছেড়ে দিবে এতো বড় মনের মানুষ আমি না।আর ওই মেয়ে একটা বোকা যাই বলি তাই বিশ্বাস করে।(আয়ুশ হাসতে হাসতে)

তাই নাকি।তাহলে আমিও তোমাকে অ্যাটিটিউড দেখিয়েছি আমাকেও কি ওই বোকা ছায়ার মতো বোকা বানাবে?(নেহা)

তোমাকে বোকা বানাবে কে? কার এত সাহস আছে আয়ুশ চৌধুরীর গার্লফ্রেন্ডকে বোকা বানাবে।
বলেই আয়ুশ নেহাকে কাছে টেনে নিলো।

আর এইসব দেখে ছায়া যেনো পাথর হয়ে জমে গেলো।ছায়া সোজা নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে বসে রইলো।আজ যেনো ওর চোখ স্থির।মানুষ অতি কষ্টে পাথর হয়ে যায় আজ ছায়াও হয়ে গেলো।
ছায়া কাদবি না।আসুকে প্রমিজ করেছিলি তুই আয়ুশকে ভুলে যাবি।এখন তাই কর।তোকে শক্ত হতে হবে।
বলেই অন্ধকার রুমে বসে রইলো।কিন্তু মন কি আর মানে সেই চোখ বেয়ে পানি পড়তে শুরু করলো।চিৎকার করে কাদতে শুরু করলো ছায়া।


অন্যদিকে একে একে সব নাচের প্রতিযোগিতা শেষ হয়ে গেলো
আমি আর নিতু আপুও নেচেছি।আর সবাই আমাদের নাচের প্রশংসা করছে।আভি আর তুলিও খুব সুন্দর নেচেছে।ভাবতে পারি কি মি:কোবরা এতো ভালো নাচতে পারে।আর নাচের কম্পিটিশনে জিতেছে আয়ুশ আর তিশা।কিন্তু এই কম্পিটিশনে ছায়াকে এক বারের জন্যও দেখলাম না।রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে বসে আছে।বুঝতে পারলাম কিছু একটা হয়েছে কিন্তু কি হয়েছে তা জানার এখন সঠিক সময় মনে করলাম না।ওকে একটু একা থাকতে দেয়াই ভালো মনে করলাম।যেহেতু ছায়া নেই সেহেতু বাগানে বসে বসে সবার সাথে আনন্দ করার মুডও আমার নেই।তাই
সবাই নিচে গায়ে হলুদ দিচ্ছে আমি ছাদের একা এসে বসে আছি তখনই আভি আসলো,,,,


চলবে,,,