ছিলাম তো তোমারই পাশে পর্ব-১৪

0
2781

#ছিলাম_তো_তোমারই_পাশে
#পর্ব_14 (Bonus_part)
Writer:: Shaanj Nahar Sanjida


সকালের কিচিরমিচির ডাকের বদলে বাহিরের ভীষণ চিৎকার শুনে ঘুম ভাঙতে শুরু করলো
আমি ঘুম ঘুম চোখে পাশেই ছায়াকে বলছি
ছায়া একটু দেখ না বাহিরে কি হচ্ছে?ওনাদের বল আমার ঘুম পাচ্ছে চেঁচামেচি যেনো না করে।(আমি ছায়ার দিকে হাত বাড়িয়ে)

আয়ুশ কি হলো?হাত দিয়ে ধাক্কা দিচ্ছিস কেনো?(আভিও ঘুম ঘুম চোখে)

এই কথা শুনে আমার ঘুম হওয়া হয়ে গেলো।
আয়ুশ?(আমি অবাক হয়ে)

ছায়া?(আভি অবাক হয়ে)

আভি তুমি এখানে কি করছো?(আমি)

আমারও একই প্রশ্ন তুমি এখানে কি করছো?(আভি)

আমি জানি না।আমার শরীরে কাপড়ও নেই।(আমি চাদর পেঁচিয়ে)

আমার শরীরেও কোনো কাপড় নেই।কি হচ্ছে এইসব?আমরা তো ছাদের ছিলাম এখন এইখানে এই বেড রুমে কি করে আসলাম?(আভি অবাক হয়ে)

ওইদিন বাদ দিন আগে বলেন আমাদের কাপড় চোপড় কোথায়?আমরা এই অবস্থায় কেনো?(আমি কাদতে কাদতে)

আমি কি করে জানবো আমিও তো অবাক হয়ে আছি।(আভি)

আমরা অবাক হয়ে একে অপরের দিকে তাকালাম তখনই দরজা ভেঙ্গে আয়ুশ ঢুকলো।পড়ে বাকি সবাই ঢুকলো।
মা এসেই আমার গালে একটা চড় মারলো।

মা?(আমি অবাক হয়ে)

আন্টি?(আভি অবাক হয়ে)

সবাই একটু বাহিরে যান আমাদের পারিবারিক ব্যাপার আমরা দেখে নিচ্ছি।
বলেই আদি আঙ্কেল সবাইকে বাহিরে বের করে দিলো।

কী করে করতে পারলি তুই এইসব?(কলি আস্থাকে মারতে মারতে)

মা আমি কিছু করি নি।আমি জানি না কি হচ্ছে বিশ্বাস করো।(আমি কাদতে কাদতে)

কিন্তু মা আমার কোনো কথাই শুনছে না।মেরেই যাচ্ছে আমাকে যে মা আমাকে কোনো দিন একটা ফুলের টোকা দেয় নি আজ সেই মা আমাকে নিজের হাত দিয়ে মারছে।কিন্তু আমার আফসোস আমি এখনও জানি না।আমি কি এমন করেছি?যার জন্য মা এতো রেগে আছে।মা কাদঁছে আর আমাকে মেরেই যাচ্ছে।অন্যদিকে ছায়া আর ঈশানি আন্টি মাকে থামানোর চেষ্টা করছে।

অন্যদিকে বাবার দিকে তাকিয়ে দেখি উনি পাথরের মতো স্থির হয়ে আছে।কি হয়েছে আমি এখনও কিছু বুঝতে পারছি না।আমি কোনোদিন বাবাকে এতো হতাশ দেখি নি।বাবার চোখ দিয়েও পানি পড়ছে।বাবা কোনো দিন আমাদের সামনে নিজের চোখের পানি দেখায় নি।কিন্তু আজ,,,
বাবা কি হয়েছে?তুমি কেনো কাদঁছো?কি হয়েছে বাবা আমায় বলো!কে কাদিয়েছে তোমায়?(আমি কাদতে কাদতে)

তুই!আস্থা তুই।(বাবা কাদতে কাদতে)

আমি?(আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে)

কী করে করতে পারলি এমন একটা জঘন্য কাজ আস্থা।আমাদের লালন পালনে কি কোনো খুঁত ছিলো এইভাবে তুই ধুলোয় মিশিয়ে দিলি।(জিসান কাদতে কাদতে)

আমি বাবার কথা শুনে পাথর হয়ে গেলাম।

আয়ুশ ছায়া।তোমরা আভি আর আস্থাকে তৈরি করে নিচে নিয়ে এসো।আমরা সেখানেই বাকি কথা বলবো।(আদি স্থির গলায়)

কী কথা বাবা?(আভি কৌতূহল নিয়ে)

যা তোমরা ঘটিয়েছ।সেই খেসারত তো তোমাদের দিতেই হবে।সেই খেসারতের জন্যই নিচে আসবে।
বলেই আদি জিসানকে নিয়ে চলে গেলো।

ঈশানি আন্টি মাকে নিয়ে চলে গেলো।

মা কি হয়েছে?(আভি)

তোর থেকে আমি এইটা আশা করিনি আভি।কি করে পারলি একটা মেয়ের জীবন নষ্ট করতে।তোকে পেটে ধরেছি এইটা ভেবেই এখন আমায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে।
বলেই কাদতে কাদতে সুমাইয়াও বেরিয়ে গেলো।

পরেই আয়ুশ আভিকে অন্যরুমে নিয়ে গেলো।আর আমি সেই রুমেই পাথরের মতো বসে আছি।ছায়া আর নিতু আপু আমাকে কাপড় পড়িয়ে দিচ্ছে।হাত পা সব স্থির হয়ে আছে আমার।নড়াচড়ার একটু শক্তিও পাচ্ছি না এখন আমি।কালকে পর্যন্ত আমি স্ট্রং আস্থা আজ যেনো ভেঙ্গে গুড়গুড় হয়ে গেছি।চোখ থেকে পানি পড়া যেনো থামছেই না।যেটুকু বুঝেছি মা বাবা আর বাকি সবার কোনো প্রকার ভুল হয়েছে।তারা হয়তো ভাবছে আমি আর আভি খারাপ কিছু করেছি।কিন্তু আমি আর আভি এইসব কিছুই করি নি।কিন্তু কি হয়েছে ছাদ থেকে আমরা এখানে এই নোংরা অবস্থায় কি করে আসলাম।আমার কি হবে এখন আমি কি করবো?আমার তো কথা বলার শক্তিও এখন নেই।


অন্যদিকে
আয়ুশ কি হয়েছে?বাবা মা,,জিসান আঙ্কেল আর কলি আন্টি এতো ক্ষেপে আছে কেনো?(আভি)

যদি তাদের প্রাপ্ত বয়স্ক ছেলেমেয়ে এক সাথে রাতে এক রুমে থাকে।তাও আবার ওই অবস্থায় যেই অবস্থায় তোমাদের পাওয়া গেছে সেই অবস্থায় তাহলে কোন বাবা মায়ের মাথা ঠিক থাকে বলো তো ভাই।(আয়ুশ)

আয়ুশ।কি বলছিস তুই সোজাসুজি বল।(আভি)

এই বাড়ির সবাই আর এই গ্রামের সবাই এইটা ভাবে তুমি আর আস্থা অবিবাহিত হাওয়া সত্ত্বেও অবৈধ সম্পর্ক তৈরি করেছো।(আয়ুশ)

আয়ুশ এইসব কি বলছিস তুই?
আভি মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়লো।

আমি ঠিকই বলছি ভাই।আজ সকালে গ্রামের প্রধান আর তার লোকবল এসে খবর দিল যে এই বাড়িতে নাকি কারা অবৈধ সম্পর্ক তৈরি করেছে।গ্রামের মানসম্মান নাকি ডুবিয়ে ফেলছে।এইটা নাকি উনাদের গ্রামের অপমান।কিন্তু উনার এই কথা কেউ বিশ্বাস করেনি।পরেই সবাই খোঁজ নিয়ে দেখে তুমি আর আস্থাই গায়েব।সারা বাড়ি খুঁজার পর তোমাদের ওই রুমে ওই অবস্থায় পাওয়া যায়।আর এতে সবাই ধরে নেয় গ্রাম প্রধানের কথাই ঠিক।তুমি আর আস্থা সত্যিই কিছু করেছো!(আয়ুশ)


অন্যদিকে
ছায়া আমি এমন কিছুই করিনি বিশ্বাস কর। এতো জঘন্য কাজ আমি কোনো দিন করতে পারি না। নিতু আপু বিশ্বাস করো আমি কিছুই করিনি।(আমি ছায়াকে জড়িয়ে ধরে)

আমি বিশ্বাস করি আস্থা তুমি এমন কিছু করো নি।(নিতু আপু আমার মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে)

আমার বোন কোনোদিন কোনো খারাপ কাজ করতে পারে না।তুমি চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে।(ছায়া আমাকে জড়িয়ে ধরে)

কিন্তু মা বাবা? উনারও কি বিশ্বাস করবে আমার কথা?(আমি কাদতে কাদতে)

মা এখন রেগে আছে সব স্বাভাবিক হলে উনিও ঠিক হয়ে যাবে।আর বাবা একটু শকট এ আছে উনিও ঠিক হয়ে যাবে। শত হোক তুমি তাদের আদরের মেয়ে।তোমাকে আমার থেকে বেশি আদর করে।তোমার উপর রাগ করেই থাকবেই না দেখো।(ছায়া)

আমি এখন আদরের মেয়ে না ছায়া।সবার আস্থা এখন আমার উপর থেকে উঠে গেছে।(আমি)

আমার আস্থা আছে তোমার উপর আস্থা।(নিতু)

আর আমারও আছে আসুপি।কিন্তু তোমাকে স্ট্রং থাকতে হবে।(ছায়া)

এখন আমাদের নিচে যাওয়া উচিত।(নিতু)

হুম। চলো।(আমি চোখ মুখ মুছে)


আয়ুশ আমি এমন কিছু করিনি।তুই কি বিশ্বাস করিস আমি এমন কিছু করতে পারি।(আভি আয়ুশ এর দিকে তাকিয়ে)

আমি জানি আমার ভাই এমন কিছু করতে পারে না।কিন্তু এই গ্রামের লোকজন অনেক আগেরকার দিনের মানুষ ওদের কি করে আটকাবে?ওরা তো ভুলেও বিশ্বাস করবে না।আমি তোমাকে চিনি জানি তাই বিশ্বাস করলাম কিন্তু উনারা তো তোমাকে চেনে না।তাহলে?(আয়ুশ আভির কাধে হাত রেখে)

আমি জানি না আয়ুশ!আচ্ছা আয়ুশ ওই গ্রাম প্রধান জানলো কি করে এইসব?(আভি)

উনাকে নাকি উনার কোনো এক সোর্স বলেছে।উনার নাকি চারদিকে লোক রয়েছে।(আয়ুশ)

এই গ্রামের প্রধানকে ধরতে হবে।(আভি)

এখন এইসব পসিবল না।এখন কিছু হলে সম্পূর্ন দোষ তোমার উপর এসে পড়বে।এখন পরিস্থিতি বুঝে কাজে করতে হবে।(আয়ুশ)

ঠিক বলেছিস!(আভি)

এখন আমাদের নিচে যাওয়া উচিত।(আয়ুশ)

চল।


চলবে,,,,