ছিলাম তো তোমারই পাশে পর্ব-২৪

0
2589

#ছিলাম_তো_তোমারই_পাশে
#পর্ব_24
Writer::Shaanj Nahar Sanjida


সকালে সূর্যের মৃদু আলোতে আভির ঘুম ভাঙলো।চোখ খুলতেই মাথাটা কেমন যেনো ঝিম ধরতে লাগলো।চারপাশে তাকিয়ে দেখলো পুরো রুমটা জুড়ে যেনো এক ঝড় বয়ে গেলো।পাশে তাকিয়ে দেখলো আস্থা নেই। কোথা থেকে কি হয়ে গেলো আভি যেনো কিছুই মনে করতে পারছে না!মাথা ধরে বিছানা থেকে উঠতেই দেখলো আস্থা বিছানা বরাবর ফ্লোরে হাত পা জড়ো করে দেয়ালে হেলান দিয়ে বসে আছে আর অগ্নি চক্ষু দিয়ে আভিকে দেখছে।আস্থার চোখ দিয়ে যেনো আগুন বের হচ্ছে।চোখের কাজল লেপ্টে আছে।চোখ জোড়া লাল হয়ে আছে মনে হয়েছে অনেক কান্না করেছে।কপালের কিছুটা অংশ ফুলে আছে।ঠোঁটের কোণে কেটে গিয়ে রক্ত জমাট হয়ে আছে।ব্লাউজের হাতা ছিরা।দুই হাতে খামছির দাগ স্পষ্ট।গলাতে খামছি কামড়ের দাগ রয়েছে।শাড়ি এক কোণে পড়ে আছে।মোটকথা আস্থার অবস্থা অনেক শোচনীয়।আর তা দেখে আভির বুকটা চিন করে উঠলো।আভি নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলো ওর শরীরেরও কোনো কাপড় নেই।তারমানে কালকে রাতে নেশার ঘোরে আমি কিছু এমন করেছি যার জন্য আস্থার এই অবস্থা!শিট আমি মানুষ থেকে কবে এমন পশু হয়ে গেলাম।আমি কি করে আস্থার সাথে এইসব করতে পারলাম।আমার কিছু মনে পড়ছে না।
আভি আস্থার দিকে তাকিয়ে এইসব ভাবতে লাগলো।
কিছুক্ষণ আস্থার চোখের দিকে তাকিয়ে রইলো।আস্থা ঘুম থেকে উঠার পর শুধু ওকে দেখেই যাচ্ছে কোনো কথা বলছে না।আর তাই দেখে আভি নিজেই বললো
আস্থা,,, কা,,,কাল রাতে কি হয়েছিল?(আভি সংকোচ নিয়ে)

আমি উঠে দাঁড়ালাম।আভির কাছে গিয়েই ওকে কষে একটা চড় মারলাম।আমার চড় খেয়ে আভি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।আমি রাগে কখনও নিজের উপর থেকে নিজের কন্ট্রোল হারাই না কিন্তু সেই আমিই আভিকে চড় মারলাম।

আভি!তোমার কাছ থেকে আমি এইসব আশা করিনি।তুমিই বলেছিলে আমরা সব জানার পর আলাদা হয়ে যাবো।আর এরিই মধ্যে তুমি আর আমি যেনো নিজেদের মধ্যে কোনো সম্পর্ক না রাখি।আর সেই তুমি কালকে রাতে পশু হয়ে গিয়েছিলে।
আমি কান্না করতে করতে কথা গুলো বললাম।
বলেই নিজের জামা কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লাম।

আমি কি এমন করেছি!যা আস্থার কান্নার কারণ হলো।(আভি মনে মনে)

ওয়াশরুমে থেকে বেরিয়েই
আমি বাহিরে চলে যাবো।তখনই আভি আমাকে বললো
আস্থা।আমি জানি না কালকে কি হয়েছে!
আভি আরো কিছু বলার আগেই আমি বললাম।

কালকে রাতে কিছুই হয়নি।
বলেই চলে আসলাম।

আভি সেখানে বসে কিছু মনে করার চেষ্টা করতে লাগলো।অনেক কষ্টে ওর মনে পড়লো আস্থার সাথে ও কি কি করেছে!
হায় আল্লাহ আমি কি করলাম! ছি নিজের কাজের উপর নিজেই লজ্জা পাচ্ছি।আমাকে যে করেই হোক আস্থার কাছ থেকে ক্ষমা চাইতে হবে।
বলেই আভি ওয়াশরুমে ঢুকে গেলো।


আমি সমুদ্রের পাড়ে বসে আছি।সমুদ্রের ঢেউ একের পর এক পাড়ে এসে পড়ছে।ঠিক যেনো আমার জীবনের সমস্যাগুলোর মত একের পর এক এসে আমার জীবনে এসে আমার জীবনকে উলোট পালট করে দিচ্ছে।কিন্তু এই সমুদ্র তো বিশাল তাই এর ঢেউ গুলো এর উপর কোনো প্রভাব ফেলে না।কিন্তু আমার জীবন,,,আমার জীবন তো এতো বিশাল না।এতো সমস্যা এক জীবনে কি আধও আমি কাটিয়ে উঠতে পারবো?আভি কালকে রাতে এক পশু হয়ে গেছিলো।কোনোদিন ওর এমন রূপ দেখবো ভাবতে পারি নি।
কালকে রাতে কি হয়েছে তা ভাবছি।
কালকে রাতে যখন আভি আমার সাথে জোর করছিলো।তখনই ওকে ধাক্কা দিয়ে উঠে যেতেই ও আমাকে ধরে ফেললো আর তখন ওর সাথে ছুটোছুটি করতে গিয়ে বেডের কিনারে বাড়ি খেয়ে আমার কপাল ফুলে গেছে।কি কপাল আমার!সারা শরীরে ওর দেয়া খামছি আর কামড়ের দাগ।কিন্তু আল্লাহ বাঁচিয়ে দিয়েছে এর থেকে বেশি কিছু হওয়ার আগেই আভি ঘুমিয়ে পড়েছিল।না হলে সেই পশু আভি থেকে রক্ষা পাওয়া অনেক কঠিন হয়ে যেতো।কিন্তু নিজের সম্মান একটুর জন্য হারাতে বসে ছিলাম আমি।এইটা ভাবতেই আমার শরীর কাটা দিয়ে উঠছে।না কিছুতেই আর আভির সাথে থাকা যাবে না। ও যেকোনো সময় আবার আমার উপর ঝাপিয়ে উঠতে পারে।একবার ভাগ্য সাথে ছিলো বলে যে সারাজীবন সাথেই থাকবে তেমন তো আর কথা না।(আমি মনে মনে)

তখনই পাশ থেকে কেউ একজন জোরে চিৎকার করে বলে উঠলো।
আস্থা আই অ্যাম রিয়েলি সরি।

আমি তাকিয়ে দেখি আভি হাপাচ্ছে।মনে হয় দৌড়ে এসেছে।ওকে দেখেই আমার কাল রাতের কথা মনে হয়ে গেলো।আমি পাড় থেকে উঠেই ওকে পাশ কাটিয়ে চলে যেতে লাগলাম তখনই ও আমার হাত ধরে ফেললো। আমি হেছকা মেরে হাত ফেলে দিলাম।পরেই আবার হাটতে লাগলাম।তখনই আভি লাফ দিয়ে আমার সামনে এসে দাড়ালো।
সরি।(কান ধরে আভি)

আমি কিছু না বলেই আবার পাশ কাটিয়ে চলে আসতে লাগলাম।তখনই কিছু লোক আমার পিছনে তাকিয়ে হাসছিলো।আমি তাদের হাসি দেখে অবাক হয়ে পিছনের তাকাতেই শকড খেলাম
যেই আভি চৌধূরী কখনও কোনো দিন কারো সাথে মাথা নত করে নি সেই আভি চৌধূরী আমার জন্য এই সমুদ্র সৈকতের সবার সামনে কান ধরে উঠবস করছে আর আই অ্যাম সরি আস্থা জপ করছে।
আমিও হয়েছি জেদী এতো সহজে মাফ করা যায় না তোমাকে আভি চৌধূরী তোমার জন্য আমি আমার সম্মান হারাতে হারাতে বেচেছি।এতো সহজে তো আর তোমায় ছাড়া যাচ্ছে না আভি।

আস্থা এইবার তো মাফ করে দাও।আর কোনো দিন এমন করা তো দূরে থাক।আর কোনো দিন আমি নেশাই করবো না।(আভি উঠ বস করতে করতে)

আমি ভ্রু উচুঁ করে শুধু ওর দিকে তাকিয়ে আছি।

আর কত উঠ বস করবো।(আভি উঠ বস করতে করতে)

আমি কি বলেছি উঠ বস করো?তোমার শরীরে চর্বি বেশি তুমি করছো এতে আমার কি?(আমি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)

আস্থা দেখো এতটাও কিন্তু কঠোর হলে ভালো না।(আভি ঠোঁট ফুলিয়ে)

আভির এই অবস্থা দেখে আমার খুব হাসি পাচ্ছে।তবুও কোনমতে নিজের এই হাসি আটকে কঠিন গলায় বললাম
তা যখন অন্যায় করেছিলে তখন মনে ছিলো না?

দেখো কিছু হলে রাগটা মানা যেতো যেহেতু কিছু হয়নি তাহলে রাগটা কি ঠিক?(আভি)

তারমানে তুমি চাও কিছু হোক আমাদের মধ্যে?(আমি সন্দেহর দৃষ্টিতে)

এইটা কখন বললাম?(আভি অবাক হয়ে)

বলো নি তো কি?বুঝাতে তো চাইছো।(আমি)

এখন তুমি আমাকে কথার জালে ফাঁসাতে চাইছো!(আভি ঠোঁট ফুলিয়ে)

আমি চুপ করে রইলাম।অন্যদিকে আভি সেই উঠ বস করেই যাচ্ছে।আমি ওকে থামিয়ে বললাম

অনেক হয়েছে আভি।এইবার থামো।আর কোনোদিন এমন কিছু করবে না।(আমি)

আভি উঠে আমার কপালে চুমু দিয়ে বলল
হুম।আর এমন হবে না।

আর আমাদের চারপাশে সবাই হাত তালি দিতে লাগলো।সকালে প্রায় অনেক মানুষই সূর্যোদয় দেখতে এসেছিল।কিন্তু ফ্রীতে আমাদের কাহিনী দেখে গেলো এই আর কি?আমি আর আভি তাকিয়ে হাসছি।সবাই আমাদের মধ্যে কতো ভালোবাসা এই নিয়ে বলাবলি করছে।কিন্তু আমরা তো জানি আমাদের মধ্যে কি রয়েছে?
তবে সত্যিই কি আমরা জানি আমাদের মধ্যে কি রয়েছে?আমাদের মধ্যে কোনো ভালোবাসার সম্পর্ক না হওয়াতেও আভি এমন করলো।কিন্তু কেনো করলো এমন?কি কারণ ছিল আভির!আমি আভির দিকে তাকিয়ে ভাবছি।তখনই আভি আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললো
আমাদের কি ভালোবাসা দেখছো?

আমি শুধু তাকিয়ে ওর হাসি দেখছি।পরেই আবার সামনে দিকে তাকিয়ে রইলাম।অন্যদিকে আভি আস্থার দিকে তাকিয়ে
আই উইশ কালকে আমাদের মধ্যে কিছু হতো।তাহলে তুমি সারাজীবনের জন্য আমার হয়ে যেতে আস্থা।আমি নিজের অজান্তেই তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি।আমি বুঝতে পারলাম তোমাকে ছাড়া আমি অচল।কিন্তু এখন আমার কোনো আফসোস নেই আমাদের মধ্যে যাই হোক না কেনো তোমার অনুমতি নিয়েই হবে।আর এখন যেই সত্যিই আসুক না কেনো!তুমি আর আমি কখনো আলাদা হবো না।তুমি আমার ছিলে,আছো আর থাকবে।এটা কোনোদিন পরিবর্তন হবে না।তোমাকে সারাজীবন আমার হয়েই থাকতে হবে।এখন শুধু তোমাকে বুঝাতে হবে আমি তোমাকে ভালোবাসি।তারপর তোমার আর আমার মধ্যে কোনো সমস্যা থাকবে না।(আভি মনে মনে)

আভি?(আমি আভিকে জোরে ধাক্কা দিয়ে)

কী হয়েছে?(আভি হকচকিয়ে)

আমার দিকে তাকিয়ে কি ভাবছো?(আমি অবাক হয়ে)

আমি কি আস্থাকে বলে দিবো আমি ওকে ভালবাসি?নাকি বসে থাকবো কখন ও আমায় ভালোবাসে?(আভি মনে মনে)

কী হলো আবার কি ভাবছো?(আমি)

আস্থা আই,,,
বলেই আভি চুপ করে গেলো।

আই কি?(আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে)

আই,,,(আভি বলতে গিয়েও বলতে পারছে না)

আরে কখন থেকে আই আই বলে যাচ্ছো।বলো আই কি?(আমি বিরক্ত হয়ে)

কিছু না।চলো ক্ষুদা লাগছে।(আভি আমাকে টানতে শুরু করলো)

আমি শুধু ওর দিকে তাকিয়ে রইলাম।কি বলতে যেয়েও আভি বলতে পারলো না।হয়তো ইম্পর্ট্যান্ট কথা ছিল।কিন্তু কি কথা?(আমি মনে মনে)


পরেই আভি আর আমি একটা প্রথমে একটা ফার্মেসিতে গেলাম।আমার কপালে, হাতে আর ঠোটে যেই ক্ষত গুলো আছে আভি ওইসব গুলোতে মলম লাগিয়ে দিল।আভি পরম যত্নে আমায় মলম লাগাতে লাগলো।আমি ওর চোখের দিকে তাকিয়ে দেখছি ওর চোখ ছলছল করছে।হয়তো আমাকে এতো ক্ষত দিয়েছে বলে ও এখন অনুতপ্ত।তবে যাই হোক ওর এই যত্নের কাছে আমি এমন হাজার ক্ষত পেতে রাজি।আর যদি কেউ আমাকে এইভাবে সরি বলে তাহলে তো কথাই না।
এইটা ভেবেই আমি হেসে দিলাম।

মানুষ মলম লাগানোর সময় কাদে আর তুমি হাসছো?(আভি মলম লাগাতে লাগাতে)

ওই যে তুমি বলো আমি অদ্ভুত!(আমি হাসতে হাসতে)

হুম।আমার অদ্ভুত আসু।
বলেই আমার গাল টেনে দিল।


পরেই আমরা একটা লোকাল রেস্টুরেন্ট এ গিয়ে ব্রেক ফাস্ট করলাম।কেনো জানি আভিকে আজ একটু ভিন্ন রকম লাগছে!ওর চোখে কেনো জানি আমি আজ অন্যরকম কোনো নেশা দেখতে পারছি।এই নেশা অন্যরকম এক ভালোবাসার।ওর প্রতিটা ছোঁয়ায় আমি ভালোবাসার স্পর্শ পাচ্ছি।তবে কি আভিও আমাকে ভালোবাসে?না এইটা কি করে সম্ভব!ও তো তুলিকে ভালোবাসে!আস্থা তুই একটু বেশিই ভাবছিস!না এখন ভেবে লাভ নেই।এখন না হয় শুধু এই মুহূর্ত গুলো উপভোগ করি।পড়ে না হয়ে পরের চিন্তা।এইসব ভেবেই আমি আভির দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসি দিলাম।আভিও আমার দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিলো।


চলবে,,,^_^