ছিলাম তো তোমারই পাশে পর্ব-৩১ এবং শেষ পর্ব

0
4155

#ছিলাম_তো_তোমারই_পাশে
#শেষ_পর্ব
Writer:: Shaanj Nahar Sanjida


আমি আর আভি কেবিনে বসে হাসাহাসি করছি তখনই সবাই প্রবেশ করলো।
অনেক হয়েছে আপনাদের আলাপ।এখন বাকি আলাপ বাড়িতে গিয়ে করা হবে।(আয়ুশ)

বাড়িতে?আভিকে কি ডিসচার্জ করা হয়েছে?(আমি কৌতূহল নিয়ে)

হুম ভাবী।আমি আর বাবা সব কাগজ পত্র নিয়ে নিয়েছি।বাবা(জিসান)ডক্টরের কাছে গিয়ে কথা বলে এসেছে।উনিই অনুমতি দিয়েছে তাই চিন্তা করার কোনো দরকার নেই।(আয়ুশ)

হুম।মা এখন তুই আর চিন্তা করিস না।আভি উঠে গেছে তোর চিন্তা শেষ এখন।(সুমাইয়া)

হুম।এখন তুইও বাড়ি চল।(কলি)

তুইও বাড়ি চল মানে?আস্থা এতো দিন কোথায় ছিলো?(আভি অবাক হয়ে)

ভাইয়া তোমাকে আমি যেতে যেতে সব বলবো।(ছায়া)

হ্যা।অনেক বিচার দেয়া আছে তোমার বউয়ের নামে।(কলি)

আভি আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আর আমি মুচকি হেসে দিলাম।আভিও মুচকি হেসে পিচ্ছি আভার দিকে তাকালো।কিন্তু সবার মুখে খুশি থাকলেও আভা মুখ ফুলিয়ে আছে।আভি আভাকে hi দিলেও আভা মুখ ভেংচি দিয়ে দিলো।এতে আভি অনেক অবাক হলো।
পরেই আয়ুশ,,বাবা(আদি,জিসান) আভিকে ধরে হাঁটতে সাহায্য করলো।কয়েক বছর না হাটার কারণে আভির হাঁটতে একটু সমস্যা হচ্ছে।তবে ডক্টর বলেছে দুই একদিন হাঁটলে ঠিক হয়ে যাবে।হসপিটাল থেকে দুটি গাড়ি করে আমরা যাচ্ছি।একটা গাড়িতে আমি,আভি,ছায়া আর আয়ুশ।আয়ুশ ড্রাইভ করছে পাশের সিটে ছায়া বসে আছে ছায়ার কোলে আয়ুশি।পিছনে আমি,আভি আর আমাদের মাঝখানে আভা বসে আছে।অন্য গাড়ি মা আর বাবাদের।
আমাদের গাড়িতে
আভা মা তুমি সেই কখন মুখ ফুলিয়ে আছো।কোনো সমস্যা হয়েছে?(আমি ওর মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে)

আম্মু উনি কে?(আভা মুখ ফুলিয়ে)

আমি আভাকে কিছু বলতে যাবো তার আগেই আভি,,,
তুমি উনাকে কি বলো?(আভি)

আম্মু।(আভা)

তাহলে আমি তোমার আব্বু।(আভি আভাকে কোলে নিয়ে)

ও তোমার জন্যই আম্মু রাত জেগে কাদতো?(আভা)

আভি আভার কথা শুনে অবাক হয়ে গেলো।পরেই আমি তাড়াতাড়ি ওকে আভির কোল থেকে নামিয়ে নিজের কোলে বসালাম।
আভা মা।এখন তো তুমি জেনে গেছো এখনও কি তুমি মুখ ফুলিয়ে বসে থাকবে?(আমি)

না আম্মু।আমিও উনাকে অনেক ভালোবাসবো যতটুকু তোমায় ভালোবাসি।(আভা আমাকে জড়িয়ে ধরে)

আভি অবাক হয়ে আমার মায়ের মত কান্ড কারখানা দেখছে।কিছুক্ষণ পর আভা আমার কোলেই ঘুমিয়ে গেলো।


বাড়িতে
আজ বাসায় সবাই এই বাড়িতেই থাকবে।আজ যেনো বাড়িতে এক আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে।রাতে ডিনার শেষ করে এখন ঘুমাবে!


রুমে
আমি আভির বুকে শুয়ে আছি চুপ করে গুটিসুটি মেরে।আভি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।

আস্থা?(আভি)

হুম।(আমি)

এতো চেপে শুয়ে আছো যেনো কেউ তোমাকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নেবে।(আভি)

হুম।নিয়েছেই তো!সময় তোমার আর আমার কাছ থেকে ছয়টা বছর কেড়ে নিয়েছে।(আমি)

আমি ভাবতে পারি নি তুমি ছয়টা বছর আমার জন্য অপেক্ষা করবে।বাবা(জিসান)আমার কাছ থেকে ক্ষমা চেয়েছে।(আভি)

কেনো?(আমি মুখ তুলে তাকিয়ে)

উনি নাকি তোমাকে অনেক জোরাজুরি করেছে আরেকটা বিয়ে করার কিন্তু তুমি কিছুতেই বিয়ে করো নি।আরো নিজের বাবা মার বাড়ি ছেড়েছ।নিজের হাতে গড়া কোম্পানি ছেড়ে দিয়েছ।শুধু মাত্র আমার জন্য।(আভি আমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে)

আমি আভির গালে হাত দিয়ে
তোমার জন্য না আভি আমার জন্য।আমার জন্য আমি এইসব করেছি।আমিই তোমাকে ভালোবাসা থেকে নিজেকে আটকাতে পারি নি।আমার সম্পূর্ন জুড়ে তো তুমি!তোমাকে ছাড়া এই মন অন্য কারো পাশে থাকার সাহস করতে পারে নি।

তবুও ছয়টা বছর তুমি কত কষ্টেই না ছিলে।অন্তত কেউ থাকলে তো তোমার কষ্ট কম হতো।(আভি)

ছিলো তো আমার পাশে একজন।
বলেই আমি উঠে দৌড় দিলাম।

আভি আমার কথা শুনে অবাক হয়ে গেলো।

আমি বিছানা থেকে নেমে আমার ব্যাগ থেকে একটা ডাইরি বের করে ওইটা আভিকে দিলাম

এইটা কি?(আভি কৌতুহলী হয়ে)

আমি এই ছয় বছর যা যা করেছি সব এই ডায়রীতে লেখা।আমার ফ্ল্যাটে এইরকম আরো 12 টা ডায়রি আছে।তোমাকে হারিয়ে দেড় বছর পর্যন্ত চুপ ছিলাম কিন্তু আমার খেয়াল ঠিকই ছিল।সেই দেড় বছর আমার অবস্থা কি হয়েছিল সব এইসব ডায়রীতে লেখা।আমি এই ছয় বছরের প্রতিটা দিন যা যা করেছি সব ডায়রীতে লিখেছিলাম এইভেবে যাতে যেই দিন তুমি উঠবে আমি এইসব ডাইরি তোমাকে দেবো।আর তুমিও আমার কষ্টটা বুঝবে।এইভেবে আমি আমার কষ্টটা তোমার সাথে ভাগ করতে পারবো।তাহলে বলো তুমি থাকতে আমি অন্য কারো কাছে কেনো কষ্ট ভাগ করবো।
আমি মুচকি হেসে আভির দিকে তাকিয়ে বললাম।তখনই আভি আমাকে জড়িয়ে ধরে আমার চোখে মুখে চুমু দিয়ে ভরিয়ে দিল।

থ্যাঙ্ক ইউ আস্থা।আমি ভাবছিলাম এতো বছর আমাকে ছাড়া তুমি কতটা কষ্টে ছিলে।এইসব ভেবে নিজেকে অপরাধী মনে করছিলাম।কিন্তু এখন তুমি এই ডায়রীতে লিখে আমার অপরাধ বোধ কমিয়ে দিয়েছো।ধন্যবাদ আমাকে সব সময় এইভাবেই নিজের পাশে রাখার জন্য।

আমি আর কিছু বললাম না।চুপ করে ওকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম।


বেলকনিতে
আমি দোলনায় বসে আছি।আর আভি আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে আছে।আমরা দুজন মিলে এখন চাঁদ দেখছি।

আস্থা?(আভি)

হুম!(আমি আভির দিকে তাকিয়ে)

আভাকে?(আভি)

ও আভা!আভা হচ্ছে আয়ুশ আর ছায়ার মেয়ে!(আমি মুচকি হেসে)

ছায়া আর আয়ুশ কি করে সম্ভব?ছায়া না আকাশকে ভালোবাসে?তাহলে আকাশ কোথায়?(আভি)

ও তুমি তো জানো না।আকাশ ভাইয়া আসলে ছায়ার সাহায্য নিয়ে পিয়ালীকে জেলাস ফিল করাতে চেয়েছিলো।আর আমার বোনও আকাশ ভাইয়াকে দিয়ে আয়ুশকে বুঝাতে চেয়েছিলো।যে যাকে আমরা সত্যিই যাদের ভালোবাসি তাদের অন্যকারো হতে দেখা কতটা কঠিন।আয়ুশ তো ভেবেছিল এতদিন ও যাই করেছে ওর ভালোবাসা কিন্তু ছায়া ওকে বুঝিয়ে দিয়েছে ওইসব ওর ভালোবাসা কোনোদিন ছিলোই না।অনেক খাটিয়েছে ছায়া আয়ুশকে।কিন্তু অবশেষে ওদের বিয়ে হলোই।(আমি)

কিন্তু এতো সমস্যা নিয়ে বিয়ে হলো কি করে?(আভি)

এইটা জানতে তোমাকে ফ্ল্যাশ ব্লাকে যেতে হবে।(আমি)


অতীত
এখন ছোটো বাচ্চা আনবো কথা থেকে?(জিসান)

এতো ছোট বাচ্চা তো মা ছাড়া থাকতেও পারবে না।(সুমাইয়া)

আর এতো ছোটো বাচ্চা পাওয়াও যাবে না।(আদি)

কিন্তু বাচ্চাই তো একমাত্র ভরসা।আমার মেয়েটাকে তো বাঁচাতে হবে।(কলি)

কারো কাছ থেকে কি বাচ্চা আনা যাবে না?(জিসান)

কে দেবে তাদের বাচ্চা?(সুমাইয়া)

আর ট্রিটমেন্ট হতে কতদিন লাগে কে জানে?এতদিন বাচ্চা রাখা অসম্ভব।(আদি)

সবাই চিন্তিত।

ছায়া সেখান থেকে উঠে গিয়ে আস্থার রুমে গেলো।


আস্থার রুমে
আস্থা অন্দকার রুমে বসে আছে।কেউ ওর রুমে লাইট জ্বালায় নি।ছায়ার গিয়েই রুমের লাইট অন করতেই দেখলো আস্থার গালে হাতে অনেক মশার কামড়।বেলকনির দরজা খোলা থাকায় সন্ধ্যায় মশা এসে ওকে কামড়েছে।কিন্তু ওর কোনো অনুভূতিই হলো না।ছায়া আস্থার মুখের দিকে তাকিয়ে নিজের চোখ মুছতে লাগলো।পরেই বেলকনির দরজা বন্ধ করে মশা মারার স্প্রে করলো।আস্থা পাশে এসে ওর গালে হাত দিয়ে নিচে হাঁটু গেড়ে বসলো

আসুপী!তুই কবে থেকে এমন নিষ্প্রাণ হয়ে গেলি।আভি ভাইয়ার ভালোবাসা তোকে এতটাই অনুভূতিহীন করে তুলেছে যে নিজের কষ্ট তুই দেখতে পারছিস না।তোর এই অবস্থা দেখে মা বাবা আদি আংকেল সুমাইয়া আন্টি আমরা সবাই কষ্ট পাচ্ছি।তুই জানিস আরশি আপু আর পিয়ালী আপু কতো কেঁদে গেছে তোর সামনে।কিন্তু তোর কোনো অনুভূতিই হলো না।যাদের চোখ জল আসলে তুই পাগল হয়ে যেতি আজ তাদের চোখেই তোর জন্য জল।আসুপি প্লিজ সুস্থ হয়ে যা।
ছায়া আস্থার হাঁটুর ওপর মাথা রেখে কাদতে শুরু করলো।

কিছুক্ষণ পর আস্থাকে শুইয়ে দিয়ে ছায়া বাহিরে বের হতেই দেখলো আয়ুশ দাড়িয়ে আছে

তুমি এখানে কি করছো?(ছায়া অবাক হয়ে)

ছায়া আমার কিছু কথা ছিল তোমার সাথে।একটু ছাদে আসবে।(আয়ুশ)

ঠিক আছে। চলো।(ছায়া)


ছাদে
কী বলবে?(ছায়া)

ছায়া আমাদের বিয়ে করা উচিত।(আয়ুশ)

কিহ!তুমি পাগল হয়ে গেছো?(ছায়া রেগে)

ছায়া দেখো আমাদের মা বাবা আস্থা ভাবীর জন্য কোনো বাচ্চা খুঁজে পাচ্ছে না।এমনি ভাবী অনেক দিন ধরেই অসুস্থ।এখন বাচ্চা খুঁজতে খুঁজতে আরো দেরি হবে।এর থেকে ভালো আমরা আমাদের বাচ্চাকে ভাবীর কোলে দেই।এইভাবে বাচ্চাটাও মা বাবা থেকে আলাদা হলো না আর ভাবীও সুস্থ হয়ে গেলো।(আয়ুশ)

শুধু মাত্র আসুপি আর বাচ্চার জন্য তুমি বিয়ে করতে চাও?(ছায়া নিচের দিকে তাকিয়ে)

আয়ুশ ছায়ার গাল নিজের দুহাত ধরে উপর দিকে উঠিয়ে বললো

বিয়েটা করবো কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি।আমি জানি তুমি আর আমি একদিন এক হবো।কারণ তুমিও আমাকে ভালোবাসো।তুমি আমার থেকে দূরে এইজন্য চলে গেছো যাতে তুমি আমার পাশে থাকতে পারো।আমি বুঝতে পেরেছি মাঝে মাঝে দূরে যেতে হয় যাতে আমরা পাশে থাকতে পারি।তাই শুধু শুধু ঝগড়া করে লাভ নেই।চলো আমরাই আমাদের ভাইবোনদের বাঁচাই।যারা সারা জীবন আমাদের গাছ হয়ে আগলে রেখে ছিলো তাদের আজ আমরা ঢাল হয়ে রক্ষা করবো।তুমি তোমার বোনকে স্বাভাবিক করবে আর আমি আমার ভাইয়ের ভালোবাসা রক্ষা করবো।এই প্রথম ভালো কিছু করতে চাইছি তুমি আমার পাশে থাকবে,,,?(আয়ুশ হাত বাড়িয়ে)

ছিলাম তো তোমারই পাশে।(ছায়া মুচকি হেসে আয়ুশ এর হাত ধরে)


বর্তমান
তো এইভাবে আমার আওয়ারা ভাই তোমার গম্ভীর বোনকে পটিয়েছে।(আভি)

এইভাবে বলো না।ওরা আমাদের জন্য কতো কিছু করেছে। জানো ওদের বিয়ে একদম সাদামাঠা ছিলো।(আমি মুখ ফুলিয়ে)

এতে তুমি মুখ ফুলিয়ে আছো কেনো?(আভি ভ্রু কুঁচকে)

আমার কতো ইচ্ছে ছিলো আমার বোনের বিয়েতে আমি কতো আনন্দ করবো কিছুই হলো না।(আমি মুখ ফুলিয়ে)

হায়রে,,
আভি হাসতে হাসতে।

হাসছো কেনো?(আমি রেগে)

এইভাবে হাসি কান্নার মধ্যে দিয়ে আমাদের রাত পার হলো।


সকালে
কিহ?(আভি চিৎকার দিয়ে)

হ্যা।ভাই তোমাদের আবার বিয়ে হবে।(আয়ুশ আভির কাধে হাত রেখে)

বিয়ে হবে বুঝলাম।কিন্তু আস্থা কে ওই বাড়িতে গিয়ে থাকতে হবে কেনো?আর তাও আবার এক মাসের জন্য।(আভি সোফায় বসে)

কারণ ভাইয়া বিয়ের আগে তো কনে জামাই বাড়িতে থাকে না।তাই আপুকে ওই বাড়িতেই থাকতে হবে।(ছায়া আভির পাশে বসে)

তাই বলে এক মাস?(আভি)

বিয়ের জাকজমোক প্রস্তুতির জন্য আমাদের এক মাস তো লাগবেই।(আয়ুশও সোফায় বসে)

না না।
বলেই আভি পায়চারি করতে লাগলো।

আর আয়ুশ আর ছায়াও পায়চারি করতে লাগলো আভিকে মানানোর চেষ্টা করতে লাগলো।

অন্যদিকে আমি আর বাকি সবাই টেবিলে বসে ওদের তামসা দেখছি।আভা চোখ কচলাতে কচলাতে নিচে নামলো।আয়ুশি এখনও ঘুমাচ্ছে।

আম্মু।আব্বু,মা আর বাবা কি করছে?(আভা)

বিয়ে করানোর চেষ্টা করছে।(আমি আভাকে কোলে নিয়ে)

কী মা বাবার আবার বিয়ে হবে?(আভা এক্সসাইটেড হয়ে)

আমরা সবাই আভার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি।

একদম ঠিক।আমাদের বিয়ে একা কেনো হবে?আয়ুশ আর ছায়ার বিয়েও তো সাদামাটা হয়েছে এখন ওদের বিয়েও আমাদের সাথেই হবে।আর ছায়াকেও একমাসের জন্য ওই বাড়িতে যেতে হবে আস্থার সাথে।(আভি)

এইবার বুঝ বউ ছাড়া কেমন মজা।আমার থেকে আমার বউকে আলাদা করা।তোর বউকেও তোর সাথে থাকতে দিবো না।(আভি মনে মনে)

এইটা তো অনেক ভালো আইডিয়া।আমাদের সাথে ছায়া আর আয়ুশ এর বিয়েটা হলেও তো অনেক ভালো হয়।কি বলো তোমরা বাবা মা?(আমি এক্সসাইটেড হয়ে)

আমাদের কোনো আপত্তি নেই।যদি ছায়া আর আয়ুশ রাজি থাকে।(জিসান,কলি,আদি,সুমাইয়া)

কিরে ছায়া রাজি?(আমি)

আমি আর কি বলবো সবাই যা বলে তাই ঠিক।(ছায়া লজ্জা পেয়ে)

দরকার নেই।আমাদের বিয়ে তো হয়েই গেছে।আর হয়ে লাভ কি?(আয়ুশ)

কেনো?এখন কেন জ্বলে ভাই?(আভি টিটকারি দিয়ে)

এইভাবে ওরা ভাই ভাই আবার ঝগড়া শুরু করলো

অনেক হয়েছে!(আদি আঙ্কেল রেগে)

আভি আয়ুশ চুপ।

জিসান।তুই তোর মেয়েদের নিয়ে যা এইবার ব্যান্ড বাজিয়ে চৌধূরী বাড়ির বউ আসবে।(আদি)

হুম।এইবার ব্যান্ড বাজিয়ে খান বাড়ির মেয়ে বিদায় হবে।(জিসান)

কিন্তু আভি আর আয়ুশ এর চেহারা দেখে বুঝা যাচ্ছে ওদের এখনই ব্যান্ড বেজে গেছে।(কলি ভ্রু কুঁচকে)

হুম।দেখে মনে হচ্ছে বিদায় ওদের হবে।(সুমাইয়া ভ্রু কুঁচকে)

অবশেষে ব্যাগ বস্তা প্যাক করে আমার আর ছায়ার যেতে হলো খান বাড়িতে।আমাদের সাথে আভা আর আয়ুশিও গেলো।

আভি আর আয়ুশ দরজার দিকে তাকিয়ে আছে।

বউ শোকে ছেলে গুলো পাগল হয়ে গেছে।(আদি)

হুম।ঠিক বলেছো।ওহে আমার বীর পুত্র বাড়ির বউ আনার প্রস্তুতি নাও।(সুমাইয়া চিৎকার করে)

হ্যা মা।(আভি আর আয়ুশ)


বিয়েরদিন
বিশ্বাস হচ্ছে না আমাদের বিয়ে হচ্ছে ছায়া?(আমি ছায়ার দিকে তাকিয়ে)

আমারও আপু।(ছায়া আয়নার দিকে তাকিয়ে)

আম্মু মা তোমরা তৈরি।আব্বু ফোন দিয়েছে তারা বেরিয়ে গেছে।নানু বলেছে তোমাদের বলতে।(আভা)

থ্যাঙ্ক ইউ মা। বোন কোথায়?(ছায়া)

আয়ুশি নানুর কাছে।(আভা)

ওকে মা।তুমি যাও গিয়ে এখন খেলো।(আমি)

ওকে।আম্মু।
বলেই আভা চলে গেলো।

কিছুক্ষণ পরেই পিয়ালী আর আকাশ ভাইয়া আসলো আর সাথে করে ওদের ছোটো ছেলেকেও নিয়ে আসলো।ওদের বিয়ে হয়েছে চার বছর হয়েছে।আর ছেলেটার বয়স দুই বছর।এখন ওরা সুখেই আছে।আমাদের সাথে কথা বার্তা বলে এখন তারা স্টেজের দিকে চলে গেলো।তারপরই আসলো আরশি আর জয় ওরা হলো নতুন কাপল মাত্র ছয় মাস হয়েছে ওদের বিয়ে হয়েছে শুনেছি হানিমুন থেকে মাত্র আসলো।ওরাও দেখা করে স্টেজের দিকে চলে গেলো আকাশ ভাইয়ার সাথে কথা বলতে।নিহাল আর ডালিয়াও এসেছে।ওদেরও এক ছেলে এক মেয়ে।


হটাৎ নিচের থেকে সবাই বলাবলি করতে লাগলো বর এসেছে।
আমি আর ছায়া বেলকনিতে দাড়িয়ে দেখি ঘোড়ায় চড়ে এসেছে আয়ুশ আর আভি।আভির কোলে আভা বসে আছে আর আয়ুশ এর কোলে আয়ুশি।এখন সবাই ছবি তুলতে ব্যাস্ত।আর আমরা তাকিয়ে তাকিয়ে আমাদের বর দেখতে ব্যস্ত।
আভি গোল্ডেন কালার শেরওয়ানি পড়েছে।মাথায় পাগড়ী।পুরাই রাজা মহারাজা লাগছে।(আমি মনে মনে)

আয়ুশ সাদা রঙের শেরওয়ানি পড়েছে।আভি ভাইয়ার মত মাথায় পাগড়ী।সত্যিই কোনো হিরো থেকে কম না।(ছায়া মনে মনে)

আভি আর আয়ুশ উপর দিকে তাকিয়ে দেখলো বেলকনিতে ওদের রানীরা দাড়িয়ে আছে।আজ একমাস পরে ওদের দেখা মিললো।
আস্থা।লাল রঙের বেনারসী শাড়ি পরেছে।মাথায় লাল রঙের ওড়না দিয়েছে।চুলে গাজরা।চোখে কাজল আর ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক।গলায় কানে হালকা গয়না।মেহেদী হাতে লাল রঙের রেশমি চুড়ি।এই ডিজিটাল যুগেও আস্থার এই সাজ আমাকে অবাক করলেও আমার চোখ দিকই আটকে গেছে আস্থার উপর।আস্থাকে যেনো অপ্সরী লাগছে।(আভি মনে মনে)

ছায়া হালকা পিঙ্ক কালারের বেনারসী শাড়ি পড়েছে।চুল গুলো খোঁপা করে গোলাপী রঙের গোলাপ লাগিয়েছে।চোখে চশমা পড়া।সেই আগের ছায়ার মতো সেই ছায়া যাকে আয়ুশ প্রথম বাসে দেখেছিল।ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক।কিন্তু সেই মন ভুলানো হাসি যেনো ঠোঁটকে আরো আকর্ষণীয় করে তুলেছে।আস্থা ভাবীর মত হালকা গয়না পড়েছে। তবে এতেও ওকে অনেক সুন্দর লাগছে।(আয়ুশ মনে মনে)

এই সাধারণ সাজেও অসাধারণ লাগছে আমার রাণীকে।(আভি আর আয়ুশ মনে মনে)

অবশেষে আমাদের বাবা মাদের কথা মত ব্যান্ড বাজিয়ে আমাদের বিদায় দিয়া হলো।আর ওই বাড়িতে আমাদের গ্রহণ করা হলো।


বাসর রাতে
এখন আভি আর দেরি না করে তাড়াতাড়ি করে আস্থার ঘোমটা খুলে দিলো।

কী মশাই আজ লেট করলে না যে?(আমি মুচকি হাসি দিয়ে)

এক্সপিরিয়েন্স আছে তো তাই।(আভি প্রাউড ফিল করে)

তাই নাকি?(আমি)

কোনো সন্দেহ আছে?(আভি)

থাকলে কি করবে?(আমি)

দূর তো করতেই হবে।
বলেই আভি আমাকে জড়িয়ে ধরলো।

আজ বাধা দেবো না।(আমি)

থ্যাঙ্ক ইউ।
বলেই আভি আমার ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে দিলো।অনেক ঝড় ঝাপটার পর অবশেষে আমাদের ভালোবাসা পূর্ণতা পেলো।অবশেষে আমরা এক হলাম।
((লেখিকা রোমান্টিক না।উনি রোমাঞ্চ বলতে এতটুকুই পাড়ে 🙂😑))


সাত বছর পর
বাবা।একদম ভয় পাবে না।(আমি)

হুম।মনে রাখবে যাই হোক না কেন বাবা মা তোমার সাথেই আছে।(আভি)

আমি জানি আমার মা বাবা দুনিয়ার বেস্ট মা বাবা।
বলেই আরাভ আমাকে আর আভি কে চুমু দিয়ে স্কুলের ভিতরে দৌড় দিল।

আজ আমরা দুজন আমাদের ছেলে আরাভকে স্কুলে দিতে এসেছি।আজ ওর প্রথম দিন স্কুলে।দেখতে দেখতে যে কখন সাত বছর হয়ে গেলো বুঝতেই পড়লাম না।বুঝার আগেই পাঁচ বছরের একটা ছেলের মা বাবা হয়ে গেলাম আমরা।সত্যিই কতো সফরে কতো কিছু হয়ে আমাদের জীবন কাটাতে হয়।কখনও মেয়ে, স্ত্রী,বৌমা,,মা,শাশুড়ি,,দাদী নানি আরোও কত।একজন মেয়ে আর একজন স্ত্রী হিসেবে তো আমি ভালো।কিন্তু একজন মা হিসেবেও নিজেকে প্রমাণ করে চলেছি।আর এইক্ষেত্রে আমার পাশে রয়েছে আভি।আমরা একে অপরের পাশে থেকে এক উপরকে সব সময় ভালোবেসেই যাবো সব সময় একে অপরকে সাপোর্ট করে যাবো।আর কোনোদিন ওর কাঁধে মাথা রেখে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলতে তো পারবো যে সারা জীবন ছিলাম তো তোমারই পাশে।

………………#THE_END………………………….