ছিলাম তো তোমারই পাশে পর্ব-০৬

0
2733

#ছিলাম_তো_তোমারই_পাশে
#পর্ব_6
Writer:: Shaanj Nahar Sanjida


আভি আপন মনে ড্রাইভ করতে লাগলো।অনেকক্ষন ড্রাইভ করার পর ও বুঝতে পারলো গাড়িতে কিছুক্ষণ ধরেই অনেক শান্তি লাগছে।কিন্তু এই শান্তি তো কাম্য ছিল না।আভি ড্রাইভ করতে করতে আস্থার দিকে তাকিয়ে দেখলো,,,
এই জন্য।গাড়িতে এতো শান্তি।এই পকপকানি ঘুমাচ্ছে।
আভি খেয়াল করে দেখলো আস্থার একটু ঠান্ডা লাগছে।তাই ও কাচুমাচু হয়ে ঘুমাচ্ছে।তাই আভি গাড়ি সাইডে দাড় করালো।
আস্থার পাশের জানালাটা বন্ধ করে দিলো।পিছনের শিট থেকে একটা পাতলা চাদর এনে আস্থার গায়ে পেঁচিয়ে দিলো।

পেঁচিয়ে দেয়ার সময় আভির খেয়াল করে আস্থাকে মনোযোগ সহকারে দেখতে লাগলো।আভির মুখ একদম আস্থার মুখের সামনে চলে আসলো।আভি উবু হয়ে আস্থার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখতে লাগলো।
আস্থা নীল শাড়িতে যেনো রানীর মতো লাগছে।ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক একটু উঠে গেছে।গলার বেলি ফুলের মালার অনেকটা অংশ নষ্ট হয়ে গেছে সাথে অনেক ফুল পড়েও গেছে।কিন্তু এইগুলো যেনো ওকে আরো সুন্দর করে তুলছে।কানের দুলে যেই ফুল গুলো ছিলো তা এখনও ঠিক আছে।তবে এখন ওকে কোনো জঙ্গলের রানী মনে হচ্ছে। জঙ্গলি রানী।হা এই নাম তাই তোমার জন্য বেস্ট।দেখতে রানীর মতো কিন্তু স্বভাব একদম জঙ্গলির মতো।
এইমেয়ে দেখতে তো সুন্দর।কাজ গুলো সুন্দর হলে ভালো হতো।
বলেই আভি আবার ড্রাইভিংয়ের দিকে মনোযোগ দিতে লাগলো।

কিছুক্ষণ পর আস্থার মোচড়ামুচড়ি করতে করতে উঠলো।
আহ্।কোমর ধরে গেলো গো।(আমি ঘুমের মধ্যে)

আভি আমার দিকে ভ্রু উচুঁ করে তাকালো

আমি চোখ খুলেই আভির দিকে তাকালাম

কী হলো?আমার দিকে এইভাবে তাকিয়ে আছেন কেনো?(আমি ভ্রু কুঁচকে)

ঘুমের মধ্যে কোমরের কি হলো তোমার?(আভি)

এইভাবে বসে কি ঘুমানো যায়?বসে বসে আমার কোমর ব্যাথা করছে।(আমি কোমরে হাত দিয়ে)

তাহলে ঘোড়ার মতো দাড়িয়ে ঘুমাও।(আভি ইয়ারকী করে)

আপনি কি আমার সাথে মজা করছেন?(আমি রাগী লুক দিয়ে)

না না। ভুলেও না।তোমার সাথে মজা করবে কোন পাগলে?(আভি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে)

কেনো আছে না পাগল? উদাহরণস্বরূপ আপনি(আমি)

তুমি এখন আমাকে রাগাতে চাও?(আভি রাগী গলায়)

রাগলে কি করবেন শুনি?(আমি কোমরে হাত দিয়ে)

আভি গাড়ি থামিয়ে
নামো গাড়ি থেকে!(আভি)

আরে এইটুকু কথায় সিরিয়াস হয়ে গেলেন?আমি তো এমনি মজা করছিলাম।যেতে যেতে বোর হয়ে যাবো।তাই ভাবলাম এন্টারটেইনমেন্ট করি দুজন মিলে!(আমি জোরপূর্বক হাসি দিয়ে)

নামতে বলছি না।(আভি স্থির চোখে)

এখন আমার একটু ভয় করছে!কারণ উনি আমাকে এখানে নামতে বলছে এই জন্য না।আমি এতো রাতে একা একা ঠিকই সামলে নিতে পারবো।কিন্তু কথাটা হচ্ছে।আমার কাছে এখন একটা টাকাও নেই।তাই আমি না ঢাকা যেতে পারবো না গ্রামের বাড়িতে। ফোনে চার্জও নেই তাই ফোনও বন্ধ।কেউকে কলও করতে পারবো না।বাবার নম্বর মুখস্ত ছিলো কিন্তু বাবা কয়েকদিন আগেই নম্বর চেঞ্জ করছে।মার নম্বর মুখস্ত করিনি।ছায়ার ফোন তো নিয়েই যায় নি।এখন উনি মাঝ পথে আমাকে নামিয়ে দিলে চরম বিপাকে পড়বো আমি।যে করেই হোক উনাকে বুঝিয়ে আমাকে গ্রামের বাড়ি অবধি যেতে হবে।পড়ে উনার ব্যাবস্থা করা যাবে।(আমি মনে মনে)

কি হলো যাও।নামো।(আভি)

প্লিজ এমন করবেন না।অসহায়ের প্রতি একটু দয়া করুন।একা একটা মেয়েকে এভাবে ছেড়ে দিবেন!(আমি নেকা কান্না করে)

ছেড়ে দিবো?কোথায় ছেড়ে দিবো?(আভি অবাক হয়ে)

এখানে ছেড়ে চলে যাবেন?(আমি চোখ বড় করে)

দূর।তুমি আর তোমার এই জঙ্গলী চিন্তা ভাবনা।(আভি হতাশা নিয়ে)

মানে?(আমি অবুঝের মতো)

মানে ওই দেখো হোটেল আমরা সেখানে গিয়ে রাতের খাবার খাবো।তোমার তো জানি না কিন্তু আমার খুব ক্ষিদে পেয়েছে।(আভি হাত দিয়ে দেখিয়ে)

আমারও ক্ষিদে পেয়েছে।চলুন আমরা খাবার খেয়ে নেই।
বলেই আমি তাড়াতাড়ি নেমে হোটেলের দিকে রওনা দিলাম।

এই মেয়ে,,,আর এই মেয়ের আকাশ কুসুম কল্পনা।(আভি হাসতে হাসতে)


অন্যদিকে গ্রামের বাড়িতে বিকেলের কাহিনী
ছায়ার চোখ শুধু আয়ুশ কেই খুঁজছে।আয়ুশ ছায়াকে সেই পুকুর পাড়ের পর রেখে কোথায় যে চলে গেছে কোনো খবরই নেই।অন্যদিকে ছায়া তার জীবনে দ্বিতীয় বন্ধু পেয়ে খুব খুশি।সে বিকেলে আয়ুশকে খুঁজতে খুঁজতে বাগান পর্যন্ত চলে আসলো।কিন্তু এখানেও আয়ুশকে না পেয়ে বাগানের কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে বসে বসে ডাইরি লিখতে শুরু করলো।আজ ও যা করেছে।সাথে আয়ুশ এর কথাও লিখলো।আয়ুশ এর সাথে ওর কতো ভালো বন্ধুত্ব হয়েছে।

অনেকক্ষন ডাইরি লিখার পর ছায়া চোখ বুজে বিকেলের ঠান্ডা হওয়ার মধ্যে চোখ বসে রইলো।তখনই পাশ থেকে কারো কথা শুনতে পেলো।

চোখ খুলে আশেপাশে তাকাতেই দেখলো আয়ুশ একটা মেয়ের সাথে এমন হেসে হেসে কথা বলছে যেনো ওইটা আয়ুশ এর প্রেমিকা।আর এই মেয়েটাই সেই মেয়ে যে বাসের শিট থেকে ওকে উঠিয়ে দিয়েছিলো।

ছায়া বসে বসে শুধু শুধু দেখছে আর ভাবছে আয়ুশ কে ডাক দিবে কিনা?

আয়ুশ তো উনার জিএফ এর সাথে কথা বলছে।আমি কি উনাকে ডাক দিবো?উনি হয়তো বিরক্তবোধ করতে পারে?থাক ফ্রেন্ডেও প্রাইভেসি দেয়া দরকার।আমার তো তেমন জরুরি না।পড়ে হলেও সমস্যা নেই।
এইটা ভেবেই ছায়া ডাইরি নিয়ে উঠে যেতে লাগলো।
তখনই ছায়া আয়ুশ এর নজরে পড়লো
ছায়া?কোথায় যাচ্ছো?(আয়ুশ ডাক দিলো)

কোথাও না। এইতো একটু ঘুরোঘুরি করছিলাম।(ছায়া মুচকি হাসি দিয়ে)

একা একা ঘুরোঘুরি করতে বুঝি ভালো লাগে?(আয়ুশ ছায়ার কাছে এসে)

আমি তো এখানে কাউকে চিনিও না।(ছায়া)

আমি আছি না!আমাকে তো চিনো।আমার সাথে ঘুরবে!(আয়ুশ)

কিন্তু আপনি তো বেস্ত।(ছায়া মেয়েটাকে মিন করে)

আরে ও,,, ওর সাথে তোমার পরিচয় করিয়ে দেই। ও হচ্ছে তিশা।আমার খালাতো বোন।ওর বোন তুলির নাকি আজকে বিকেলে আসার কথা সে ব্যাপারে জিজ্ঞেস করছিলাম।(আয়ুশ)

ওহ।আমি তো ভাবলাম যে উনি আপনার,,,,,(ছায়া)

আমার কি? জিফ?
বলেই আয়ুশ হো হো করে হেসে দিলো।

ছায়া শুধু অবাক চোখে তাকিয়ে ওর হাসি দেখছে।যেনো নিজের অজান্তেই এই হাসির মায়ার পরে যাচ্ছে ও।

শুনো! ও শুধু আমার বোন ছাড়া কিছুই না।(আয়ুশ)

ওহহ।(ছায়া)

ওকে।তিশা তুমি যাও।আমি আর ছায়া একটু ঘুরোঘুরি করে আসি।(আয়ুশ)

তিশা মুখ ফুলিয়ে ভিতরে চলে গেলো।

আয়ুশ আর ছায়া হাঁটছি
তুমি চুপ করে আছো কেনো?(আয়ুশ)

কী করবো তাহলে?(ছায়া)

কিছু বলো?(আয়ুশ)

আপনি উনাকে ভালোবাসেন না?কিন্তু উনি তো আপনাকে ভালোবাসে!(ছায়া)

দেখো ছায়া ও আমার টাইপের না।(আয়ুশ)

তাহলে কেমন আপনার টাইপের?(ছায়া আয়ুশ এর দিকে তাকিয়ে)

আসলে আমি নিজেই জানি না।আমি একজনের মধ্যে বাধা থাকা একদম পছন্দ করি না।আসলে একজনকে সারাজীবন কি করে ভালোবাসতে পারে মানুষ?একজনকে বেছে নিয়ে সারা জীবন কাটানো কতো বোরিং একটা জিনিস তাইনা?তুমিই বলো তুমি পারবো একজনকে ভালোবেসে সারা জীবন কাটিয়ে দিতে?(আয়ুশ)

অবশ্য আমি একজনকে ভালোবেসে সারাজীবন কাটাতে পারবো না যদি না উনাকে সারাজীবন পাশে পাই। কিন্তু যদি উনার সঙ্গ সারা জীবন থাকে তবে এক জীবনও অনেক কম মনে হবে।তাই আমার মতে ভালোবাসার মানুষের সাথে সারাজীবন কাটানো যায়,,,যদি সে আপনার পাশে থাকে।আর না হলে প্রতিটা দিনই আপনার কাছে দমবন্ধকর লাগবে।(ছায়া)

বাহ।ছায়া।বলতে হবে তোমার চিন্তা ভাবনা সেই।আমার ভালো লেগেছে।কিন্তু সরি আমি এইটা মানতে পারবো না যে লাইফে একজনকে ভালোবাসা সম্ভব।(আয়ুশ)

যখন আপনি একজনকে ভালোবাসবেন তখন বুঝবেন!(ছায়া মুচকি হেসে)

আশা করি সেদিন জলদি আসুক আমার লাইফে।আর আমি প্রমিজ করছি যাকেই ভালোবাসি না কেনো তোমাকে সবার আগে বলবো!(আয়ুশ মুচকি হেসে)

আমিও অপেক্ষা করবো।(ছায়া)


অন্যদিকে আরেক জুটি
ও মা গো!আমার কি ক্ষুদা লাগছে।উনি এতো লেট করছে কেন?(আমি পেটে হাত দিয়ে)

ওই কি সমস্যা তোমার?ভদ্র ভাবে বসো।(আভি বিরক্ত হয়ে)

বসেই তো আছি আপনার সামনে পুতুলের মতো। নড়াচড়াও তো করতে দিচ্ছেন না।একটু হাটাহাটি করবো তাও করতে দিচ্ছেন না।বসিয়ে রেখেছেন নিজের সামনে।(আমি)

দেখো তুমি আমার দায়িত্ব।আমি নিজের দায়িত্ব পালন করছি।(আভি)

এমন ভাবে বলছে যেনো আমি তেনার বিয়ে করা বউ।(আমি বিড়বিড়)

কি বলছো আবার বিড়বিড় করে?(আভি)

বলছি খাবার দিতে এতো দেরি করছে কেনো?আমার ক্ষুদা লেগেছে।(আমি)

মাত্র পাঁচ মিনিটই তো হলো!(আভি)

দূর বসে থাকতে আমার একটুও ভালো লাগছে না।আমি উঠলাম।
বলেই আমি চেয়ার থেকে উঠে পড়লাম

আরে আরে কোথায় যাচ্ছো?(আভি)

মশাই আমি বাচ্চা না!এখানেই আছি ঠিক ফিরে আসবো।(আমি)

ওকে।(আভি)

এইমেয়ের একটু ধৈর্য্যও নেই।এক জায়গাতে থাকতেই পারে না।(আভি মনে মনে)

আমি হোটেলের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরছিলাম।হোটেলের দোকান থেকে চিপস নিয়ে খাচ্ছিলাম।আমার কি টাকা তো যাবে উনার।অবশেষে পুরো হোটেলের চক্কর দিতে লাগলাম।


অন্যদিকে আয়ুশ আভিকে ফোন দিয়ে
হ্যালো ভাই? পেয়েছো মেয়েকে?বাবা জিজ্ঞেস করছিল?তুমি নাকি তার ফোন ধরছিলে না।আর জিসান আঙ্কে ও বললো তার মেয়ের ফোন বন্ধ বলছে।এখন উনারা টেনশন করছে।এখন বলো তোমার কি খবর?(আয়ুশ একদমে বলতে শুরু করলো)

তুই ফোন করেই তো বক বক করতে শুরু করলি আমাকে বলতে দিলে তো?(আভি)

এখন তো বলতে দিলাম(আয়ুশ)

থ্যাঙ্ক ইউ জাহাঁপনা।এখন শুনুন।বাবাকে বল চিন্তা করতে না উনার বন্ধুর মেয়েকে আমি নিয়ে আসছি।আর জিসান আঙ্কেলকে বল উনার মেয়ের ফোনে চার্জ নেই।তাই ফোন বন্ধ।আমরা কালকে সকালে ঠিক পৌঁছে যাবো।কোনো চিন্তা যেনো না করে।(আভি)

ওকে। তাতো আমি বলে দিবো এখন বল।আংকেলের মেয়ে তো দেখলাম চরম সুন্দরী।তো কিছু মিছু হইছে?(আয়ুশ)

আমি তোর মত না।একজনকে ভালোবাসি একজনকেই ভালোবাসবো।(আভি)

হো তা জানি।(আয়ুশ)

আর আংকেলের মেয়েই ওই ক্লাবের মেয়ে।(আভি)

কী?এই মেয়েই তোর ব্রেক আপ করিয়েছে?(আয়ুশ চিৎকার করে)

হুম।এই মেয়েই করিয়েছে।(আভি)

তাড়াতাড়ি নিয়ে আয় আমি ওকে পুজো করবো।(আয়ুশ)

তার আগে আমি ওকে বলি দিবো।(আভি)

((বাহ!একজন পুজো দিবে আরেকজন বলি দিবে!কি পেয়েছো আমাদের নায়িকাকে তোমরা?– লেখিকা))

তুই ওকে কিছু বলিস নি?(আয়ুশ)

না।ওকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে এসে যা করার করবো।(আভি)

ওকে।যা করার করিস।এখন সুরক্ষিত বাড়ি নিয়ে আয়।(আয়ুশ)

হুম।আমার দায়িত্ব আমি পালন করবো।(আভি)

রাখি খোদা হাফেজ।

বলেই আয়ুশ আর আভি ফোনটা কেটে দিলো।


কিছুক্ষণ পর আস্থা আসলো
তোমার ঘুরাঘুরি শেষ?(আভি আমার দিকে তাকিয়ে)

আর ঘুরাঘুরি?আমার ক্ষুদা লাগছে।ওদের বলুন খাবার নিয়ে আসতে।নাহলে আমিই কিচেনে চলে যাবো!(আমি বসতে বসতে)

ওকে।ওকে।আমি বলছি।
বলেই ওদের ডাকতে যাবে তখনই খাবার নিয়ে আসলো।

এই নাও তোমার খাবার চলে আসলো!(আভি)

আপনারা এত দেরি করলেন কেনো?নেক্সট টাইম দেরি করলে খবর আছে।(আমি)

হয়েছে এখন খাও(আভি)

তা আর বলতে।
বলেই আমি রাক্ষসীর মত খাবারের উপর ছাপিয়ে পড়লাম।

আভি শুধু আস্থার খাবারের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।

পাগলী একটা।(আভি মনে মনে)


চলবে,,,,