জোরপূর্বক ভালোবাসা part 16 +17

0
4848

#জোরপূর্বক_ভালোবাসা
#Writer_Ashiya_Nur
#part 16 &17

আশিয়া দৌড়ে বাইরে এসেছে ঠিকই কিন্তু এখন সবার সামনে যাবে কি করে। সবাই তো লজ্জা দেবে শাড়ির আচলঁ দিয়ে মাথা ঢেকে নিলো এখন বুঝা যাচ্ছে না কিন্তু ঠোঁট তো আর ঢাকা যাবে না কি করব এখন কথা গুলো ভাবছিলাম।

হঠাৎ পেছনে থেকে কেউ ডেকে উঠলো,,
তাকিয়ে দেখি একটা মেয়ে কোলে একটা বাচ্চা ও আছে একদম ছোট আমার সামনে এসে হেসে উঠল, আমি তো তাকে চিনি না তাকিয়ে আছি।

– আমি সোনিয়া আকাশের ডাবি।

আমি তো অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি আকাশে ভাই আছে ও তো বলেছিল ওর ভাই নাই ও একা।

– এতো অবাক হচ্ছো কেন আমি আকাশের মামাতো ভাইয়ের বউ। এ তোমার ঠোঁটে কি হয়েছে গো কেটে গেছে দেখছি।

ওনার কথা শুনেই আতকে উঠলাম। ঠোঁটে হাত দাঁড়িয়ে আছিএই ভয় টাই পাচ্ছি লাম এখন কি বলবো।

– আসলে

– থাক বুঝেছি আর বলত হবে। ঔষধ দিয়েছো

আমি না জানালাম। ভাবিটা আমাকে নিজের রুমে থেকে ঔষধ এনে লাগিয়ে দিলো। ভাবির সাথে কথা বলে বুঝতে পারলাম ভাবি অনেক মিশুক আর ভালো। নিচে বসে আছি আশে পাশে থেকে অনেকে দেখতে এসেছে সবাই নানা কথা বলে যাচ্ছে। এক ঘন্টার বেশি সময় তাদের সামনে থাকতে হলো তার পর শাশুড়ি মার সাথে বলে কাজ করতে গেলাম সে কি যেন বুঝে আমাকে আবার ঘরে পাঠিয়ে দিল আমি তো সেই খুশি কারণ আমার প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছিল।

আমি মানা করে ছিলাম কিন্তু জোর করে বলল যেতে আমি ও আর কথা না বারিয়ে রুমে চলে আসি। এসে দেখি আকাশ আবার ঘুমিয়ে পরেছে। খাটের মাঝ খানে শুয়ে আছে আমি একবার ডাকতে চেয়েছিলাম কিন্তু কেন জানি কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না তাই না ডেকেই এক পাশে জরোসরো হয়ে শুয়ে পরলাম। হঠাৎ একজোরা হাত আমার কাছে টানতে লাগল,,

আমি : আপনি ঘুমাননি

আকাশ : ঘুমিয়ে ছিলাম তোমার জন্য আবার জেগে গেলাম ( বলেই আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে ধরে)

আমি : ওফ ছারুন

আকাশ আর ও শক্ত করে জরিয়ে ধরে মাথা দিয়ে না জানাল।
আমি ছুটার চেষ্টা করে ও ছুটতে পারছি না।

আকাশ : নরা নরি করলে কি আবার

বলেই নিজের ঠোঁট আমার দিকে এগিয়ে আনে আমি ওর মতলব বুঝে ঠোঁটে উপর হাত দিয়ে ধরি। আকাশ আমার গালে চুমু দেয় তারপর হাত সরিয়ে ঠোঁটে কাছে যেতে গেলেই আমি আমার মাথা আকাশের বুকের কাছে নিয়ে জরিয়ে ধরি।

আমি : আচ্ছা আর নরবো না।

আকাশ নিজের উদ্দেশ্যে সফল হয়ে মুচকি হেসে নিজে ও জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরে।

পরদিন

আজ বৌভাতের অনুষ্ঠান। অনেক আত্মীয় সজন আসছে পার্লার থেকে লোক এসে আমাকে সাজিয়ে দিয়ে গেছে আমি রুমে বসে আছি হঠাৎ আকাশ এলো রুমে। নীল কালারের শেরোয়ানি পরেছি এমনিতেই ফর্সা তার মধ্যে নীল রং অনেক সুন্দর লাগছে আমি হা করে তাকিয়ে আছে।

আকাশ : কি দেখছো

আকাশের আওয়াজ পেয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলাম।

আকাশ : এই চোখ সরালে কেন দেখো আমি কি দেখতে মানা করছি নাকি।

আমি : অন্যের জিনিস আমি দেখি না।

আকাশ : আবার সেই কথা।

বলেই রেগে আমার হাত মুচরে ধরে আমি ব্যাথায় আহ করে উঠি।

#চলবে

#জোরপূর্বক_ভালোবাসা
#Writer_Ashiya_Nur
#Last_part

আকাশ ছারুন আমার লাগছে ছুটাছুটি করে।

আকাশ : আমার ও লাগছে এইখানে। ( হাত দিয়ে বুকের মাঝে দেখিয়ে)

আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি আকাশের দিকে ওর কথা গুলো আজ অন্য রকম লাগছে কোন রাগ নেই। স্বাভাবিক ভাবেই বুঝাতে চাইছে। আকাশের চোখের দিকে তাকিয়ে আছি না এই চোখ মিথ্যে বলতে পারে না। ওর চোখ ছলছল করছে। কিন্তু তাহলে ওই ছবি গুলো কিছু মাথায় আসছে না।

আচমকা আকাশ আমার ঠোঁট নিজের ঠোঁটের মাঝে নিয়ে নিলো আমি আর র্বধা দিলাম না আবেশেই চোখ বন্ধ করে রইলাম। হঠাৎ কারো কথায় দুজনেই দুজনের থেকে সরে দাড়ালাম। তাকিয়ে দেখি সোনিয়া ভাবি।

ভাবি: আমি কি ভুল সময় এসে পরলাম নাকি।

আমি : ( আমি তো লজ্জা মরে যাচ্ছি ছি ছি ওনি কি ভাবছে )

ভাবি: ভুল সময় আসলে ও কিছু করার নেই। এখন রোমান্স না করে নিচে আস তারাতারি।

ভাবি বলেই চলে গেল। আমি উল্টো দিকে ঘুরেই আছি। আকাশ পেছনে থেকে আবার জরিয়ে ধরলো আমি সরিয়ে ফিরে তাকালাম।

আমি : আবার

আকাশ : তুমি আমাকে বিশ্বাস করেছো তো। ( অসহায় মুখ করে )

আমি কিছু না বলে তাকিয়ে আছে। আকাশ কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থেকে আমার হাত ধরে হাটতে লাগল।

আমরা নামার সাথে সাথে সব লাইট বন্ধ হয়ে গেল। একটা লাইট শুধু আমাদের দিকে ধরা হলো আকাশ আমার হাত ধরেই স্টেজে নিয়ে বসালো এবং নিজেও বসলো। তবুও হাত ছাড়ে নাই সেই ভাবেই ধরে রেখেছে। সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে নিশ্চয়ই হাত এভাবে ধরে রাখার জন্য।

আমি : আমার হাত ছারুন সবাই তাকিয়ে আছে কিভাববে।

আকাশ : আই ডোন্ট কেয়ার?

আমি : ছারুন প্লিজ

আমি হাত ছুটানোর চেষ্টা করছি আর আকাশ আর ও ভালো করে হাত ধরে নিলো রাগী ভাবে আকাশের দিকে তাকালাম।

আমি : সব সময় আপনার জালাতন আমার অসহ্য লাগে। ছারুন আমাকে।

বলে জোর করে ছারিয়ে নিলাম আকাশ ছলছল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে চাইছিল আমি অন্য দিকে তাকিয়ে যাই। আকাশ আমার পাশে থেকে উঠে যায়। আমি দেখি কিন্তু তেমন কিছু ভাবি না।

সব আত্মীয় সজন রা এসে কথা বলছে আর আকাশে কথা জিগ্গেস করছে। আমাদের বাড়ি থেকে ও সবাই চলে এসেছে আমার ছোট বোন তো দৌড়ে এসে আমাকে জরিয়ে কান্না করা। সবার সাথে হাসি মুখে কথা বললাম সবাই শুধু আকাশের কথা জিগ্গেস করছে কোন যন্ত্রণায় পরলাম। অনেক ক্ষণ হয়ে গেছে আকাশে কোন খবর নেই।

হঠাৎ কাউকে দেখে চমকে গেলাম অশি এসেছে এখানে। সোজা আমার কাছে এসে কথা বলতে লাগল

অশি: হাই আশিয়া কেমন আছ।

আমি : ভালো তুমি

অশি: আমি কি করে ভালো থাকবো আশিয়া আকাশ আর আমি দুজন দুজনকে অনেক ভালোবাসি কিন্তু আকাশে পরিবারের তোমাকে বিয়ে করার জন্য জোর করেছে।

আমি তো আকাশকে একটু বিশ্বাস করতে যাচ্ছিলাম এখন আবার এসব শুনে অবাক হয় অশির দিকে তাকালাম। কি জোর করেছে কিন্তু আকাশের ব্যবহার তো তা বলছে না ওফ আমি কাকে বিশ্বাস করবো।অশি অনেক কথা বলে আমার কাছে থেকে চলে গেল।

আকাশ অশিকে ভালোবাসলে আমার সাথে তাহলে কেন করলো। কিছুই মাথায় ঢুকছে না পরিবারের জোর করেছে। স্টেজে থেকে উঠে দাড়ালাম রুমে যাওয়া জন্য আশেপাশে আকাশ কে খুজলাম কিন্তু নাই কোথায় গেল। সিরি কাছ এসে কারো কথায় থেমে গেলাম। অশি কারো সাথে ফোনে কথা বলছে। ও যে আমাকে মিথ্যে বলেছে সেগুলোই বলছে।

– এতো কিছু করে ও আশিয়াকে আকাশে জীবন থেকে সরাতে পারলাম না।বিয়েটা করে ই ফেলল কিন্তু আমি ওদের সুখী হতে দেবো না তাই তো আশিয়াকে

আর কিছু বলতে দিলাম রাগী আমি মাথা ফেটে যাচ্ছে সজোরে চর বসিয়ে দিলাম অশি গালে।

আমি : এভাবে আমাকে ঠকালি কেন কি ক্ষতি করেছি তোর।

অশি; তুই আমায় চর দিলি আর কি ক্ষতি কোন ক্ষতি করিস নি কিন্তু আমি আকাশে কে ভালোবাসি আর ওকে চাই।

আমি : কিন্তু আকাশ তোকে ভালোবাসে না জোর করে ভালোবাসা পাওয়া যায় না।

অশির সাথে ঝগড়া করে এসে রুমে বসে আছি। এখন ছয়টার মতো বাজে আকাশে কে আর দেখি পি কোথায় গেল রাগ করে চিন্তা হচ্ছে কিন্তু কাউকে বলতে ও পারছি না। চুপ করে বসে আছি আজ আমাদের বাড়ি যাওয়া কথা ছিলো আকাশ নেই তাই যাওয়া হলো না সবাই অনেক খুজেছে আকাশ কে কি পাই নি রাজু আর বাচ্চু ভাইয়া ও যানে না কোথায় আছে তারা খুজতে গেছে।

রাত দশটার দিকে আকাশ বাড়িতে আসে এসেই ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পরতে নেই আমার দিকে একবার ও তাকায় নি। অনেক কষ্ট দিয়েছি আমাকেই রাগ ভাঙাতে হবে। আকাশ শুতে যাবে আমি ওর সামনে গিয়ে দাড়ালাম ও অবাক হয়ে তাকিয়ে।

আকাশ : কি হলো সামনে এসে দাড়ালে কেন। তুমি তো চাও আমি যেন তোমাকে টাচ না করি এখন তাহলে এমন করছো কেন।

আমি : সরি

আকাশ : কেন সরি কেন

আমি : তোমাকে ভুল বুঝার জন্য।

আকাশ ( অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে ) মানে

আমি সব খুলে বললাম আকাশ কে। সব শুনে ও আমাকে সরিয়ে দিলো।

আমি : কি হলো সরিয়ে দিলে কেন।

আকাশ : তো কি করবো এখন বলবে কিছু ছি দেখাবে আর তুমি তা বিশ্বাস করলে কি করে। আমি তোমার জন্য কি কি না করেছি তুমি ভাবলে কি করে আমি ওই মেয়েকে ভালোবাসতে পারি কি করে ভাবলে। তোমার আমাকে সব জানানো উচিত ছিলো কিন্তু তুমি তো নিজ শুনে বিশ্বাস করে আমাকে ছেড়েচলে যেতে চাইলে। একবার ও কি মনে হয়নি আমি কি করে থাকবো তোমাকে ছাড়া।

আমি : সরি আমার ভুল হয়ে গেছে আর এমন ভুল হবে না।

আকাশ তবুও মানছে না। রাগ যে ভালোই করেছে বুঝা যাচ্ছে।

আমি ও ছেড়ে দেওয়ার পাএী না আমি জানি কি করে ওর রাগ ভাঙাতে হয়। আকাশ সামনে গিয়ে আচমকা ওর ঠোঁটে ঠোঁট চেপে ধরলাম। আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে আমার দিকে ও যে কল্পনা না করে নি এমন কিছু করবো প্রথমে সারা পা দিলেও পরে আমি ছেড়ে দিতে গেলে নিজেও। সব রাগ এতে মাটি হয়ে যায়। আকাশকে জোর করে ছারিয়ে জরিয়ে ধরি।

আমি : সরি মাফ করে দাও প্লিজ।

আকাশ আর মাথা বুকে থেকে উঠিয়ে,, কি বললে

আমি: কই

আকাশ : তুমি করে বললে।

আমি : হুম বলেছিলাম না বিয়ের পর তুমি করে বলবো।
আকাশের মুখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে ও অনেক খুশি হয়েছে আবার আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে ধরলো এতো জোরে চেপে ধরেছে যেন ছেড়ে দিলে পালিয়ে যাব।

আকাশ : তোকে অনেক ভালোবাসি জান। প্লিজ কখনো ছেড়ে যাস না তাহলে বাচতে পারবো না।

আমি; আমি ও কখনো ছেড়ে যাব না।

আকাশ: আই লাভ ইউ জান

আমি : লাভ ইউ টু

আকাশ আশিয়াকে কোলে তুলে নেই। সব রাগ অভিমান শেষ। এখন শুধু ভালোবাসা সুখে থাক আশিয়া আকাশ ভালো থাকুন।

সমাপ্ত