#জোর_করে_বিয়ে
পার্টঃ ১০
লেখকঃ সিয়াম হোসেন
সিয়াম সকালে এখন ঘুমিয়ে আছে ।
-আচ্ছা সানজিদা একটা কথা বলি । (সিয়াম)
-হুমম
-রাগ করবা নাতো (সিয়াম)
-রাগ করার কথা হলে তো রাগ করবোই (সানজিদা)
-তাহলে থাক বলবো না (সিয়াম অভিমানী কন্ঠে)
-ইলে বাবা লে আমাল বাবু দেখি লাগ করছে (সানজিদা)
-ওই তুমি বাচ্চা নাকি যে তোতলিয়ে কথা বলছো (সিয়াম)
-হি হি বলো কি বলবা(সানজিদা)
-না বলবো না বললে তুমি রাগ করবে । (সিয়াম)
-বললাম তো করবো না এখন বলো (সানজিদা)
-সত্যি । (সিয়াম)
-তিন সত্যি এখন বলো (সানজিদা)
-চারপাশে কতো অন্ধকার তাই না আর আকাশের চাঁদটা কি সুন্দর তার আলো দিয়ে সেই অন্ধকারটাকে মুছে দিচ্ছে । (সিয়াম)
-ধুর কি যেনো বলতে চাচ্ছিলে সেটা বলো । (সানজিদা)
-আহ্ বলছিই তো । আচ্ছা এই চাঁদনি আকাশের নিচে তুমি আর আমি একা আশে পাশে কেউ নেই তোমার কিছু করতে ইচ্ছা করছে না । (সিয়াম)
-না
-তবে আমার করছে চলোনা দুজনে চন্দ্রান্সান করি । (সিয়াম বলছে আর সামনের দিকে এগোছে )
-দেখো কাছে আসবে না কিন্তু খারাপ হয়ে যাবে । (সানজিদা লজ্জা মাখা মুখে)
সিয়াম সানজিদার হাতটা ধরে কাছে টেনে নিয়ে মুখটা সানজিদার কাছে নিয়ে আসছে ।
-আ ভুত ভুত ভুত (সিয়াম চিৎকার করে )
-ওই ভুত পাইলেন কই । (সানজিদা রাগী কন্ঠে )
-আমার গায়ে পানি আসলো কোথা থেকে আমি তো ছাদে ছিলাম আর তুমি…(সিয়াম আর কিছু বললো না বুঝতে পারছে যে এটা স্বপ্ন ছিলো ধুর শালা স্বপ্নের মাঝেও একটু রোমান্স করতে দিলো না )
-আমি কি হ্যা আর কোল বালিসটা নিয়ে কি করছিলেন ছি (সানজিদা)
-এতে ছি বলার কি আছে তোমাকে তো আর ধরতে দিচ্ছো না (অস্পষ্ট ভাবে)
-কি বললেন (সানজিদা রাগী কন্ঠে)
-কিছু না পানি মারলে কেনো (সিয়াম)
-সেই কখন থেকে ডাকছি উঠার নামে তো খোজই নেই (সানজিদা)
-কেনো
-আপনার মা নিচে ডাকছেন খেতে আসুন (সানজিদা)
-হুমম আসছি । (সিয়াম)
তারপর সিয়াম বাথরুমে ফ্রেশ হতে চলে গেলো ।
অপরদিকে সিয়ামের মা রান্না ঘরে কাজ করছিলেন এমন সময় সানজিদা উপস্থিত ।
-আরে তুমি রান্না ঘরে কেনো আর সিয়ামকে ডাক দিয়েছো । (সিয়ামের মা)
-হুমম আপনাকে একটা কথা বলার ছিলো । (সানজিদা)
-কি
-আচ্ছা আপনারা দুজনেই এতো ভালো তাহলে আপনার ছেলে এমন কেনো । (সানজিদা)
-সত্যি কথা বলতে ওর এমন হবার পিছনে একমাত্র আমরাই দায়ী (মা)
-মানে
-একমাত্র ছেলে তাই কোনো দিন কিছু বলতে পারিনি সেই জন্য এমনটা হয়েছে তবে তুমি চাইলে ওকে ঠিক করতে পারো জানি আমার ছেলেকে তুমি এখনও মেনে নিতে পারছো না হয়তো তবে সত্যি কথা বলতে ও যেমনই হোক না কেনো মনটা অনেক ভালো । (মা)
সানজিদা কোনো কিছু না বলে চলে এলো ।
-আম্মু কই খেতে দাও (সিয়াম)
-আজকে থেকে আপনি নিজ হাতে নিয়ে খাবেন কেউ আপনাকে দিবে না বুঝছেন । (সানজিদা)
-মানে
-মানে খুব সোজা হাত দিয়ে তুলে নিয়ে খান । (সানজিদা ঝাড়ি মেরে)
-আমি পারবো না আম্মু দাও (সিয়াম)
-আম্মা আপনি দিবেন না ঠিক আছে যদি ভালো না লাগে আপনাকে খেতে হবে না । (সানজিদা)
সিয়াম আর কি বলবে অসহায়ের মতো সব কিছু নিজ হাতে নিয়ে খেয়ে রুমে চলে গেলো ।
-সানজিদা তাহলে থাক আমরা এখন যাই ভালো ভাবে থাকিস (সানিজদার বাবা)
-যাবেন কেনো থাকুন এখানে ((সিয়ামের বাবা)
-না অনেক দিন হলো গ্রাম থেকে এসেছি আর সানজিদা জামাইকে নিয়ে আসিস কিছুদিন পর (সানজিদার বাবা)
-হুমম আব্বু যাবো (সানজিদা কাদো কাদো কন্ঠে)
সানজিদার বাবা মা দুজনেই চলে গেলেন । রাতে সিয়াম ঠিক করলো আগে গিয়ে বিছানার উপর শুয়ে থাকবে আর ঘুমানোর ভাব করবে তারপর দেখবো সানজিদা বিছানা ছারা কোথায় ঘুমায় । যেই ভাবা সেই কাজ আগে গিয়ে বিছানার উপর শুয়ে ঘুমানোর ভাব করছে ।
-এই উঠুন (সানজিদা)
-ঘুমানোর ভাব করছে যেনো কিছুই শুনতে পারছে না
-কি হলো উঠুন আমি ঘুমাবো (সানজিদা)
এবারও সিয়াম উঠছে না দেখে সানজিদা মনে মনে একটা উপায় খুজতে লাগলো ।
-উঠবেন নাকি পানি মারবো । (সানজিদা)
এখনও কোনো সারা নেই
-ঠিক আছে আপনি শুয়ে থাকুন আমি আসছি (সানজিদা বলেই বাথরুমে গেলো পানি আনতে)
সিয়াম তো এখনও শুয়ে আছে যেই দেখলো যে সানজিদা বাথরুমে গেছে ওমনি উঠে তাড়াতাড়ি করে সোফায় শুয়ে পড়লো ।
-কি বেপার এখন সোফায় গেলেন কেনো । (সানজিদা)
-ওইখানে শুয়ে আমার রাত করে গোসল করার কোনো ইচ্ছাই নেই । (সিয়াম)
-হি হি সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল কিভাবে বাকা করতে হয় আমার জানা আছে । (সানজিদা)
কথাটা বলেই বিছানায় শুয়ে পড়লো ।
দেখতে দেখতে ১ মাস হয়ে গেছে ওদের বিয়ের তবে সিয়ামের এখনও পর্যন্ত সানজিদার সাথে এক বিছানায় শুয়ার সৌভাগ্য হয়নি ।
এই কয়দিনে সানজিদাও সিয়ামের প্রতি কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়েছে তবে সেটা সিয়ামকে বুঝতে দেওয়া যাবেনা কারণ এখনও ও সম্পূর্ণ ভালো হয়নি । কিছু বদ অভ্যস গুলো ঠিক করতে হবে ।
ছাদে বসে সিয়াম ও তার বন্ধুরা আড্ডা দিচ্ছে ।
-কিরে মামা এখন তো ঠিক মতো দেখাই করতে চাস না । (রাফি)
-কি ভাবে করবে সারাদিন তো ভাবি নিজের আচলে বেধে রাখে । (সোহাগ বলেই হেঁসে উঠলো)
-আর বলিস না বিয়ের আগে ছিলাম সিংহ আর বিয়ের পরে এখন হয়ছি ভেজা বিড়াল ।(সিয়াম)
-কেনো
-সব সময় শাসন করে এটা করলাম কেনো ওটা করলাম কেনো (সিয়াম)
-এটা তোর দোষ তুই তো ওকে বিয়ে করার জন্য উঠে পরে লেগেছিলি । (সোহাগ)
-হুমম তবে অন্য দিক দিয়ে ভালো হয়েছে মা বাবার কথা সব সময় শোনে তাদের কাজে সাহায্য করে শুধু আমার বেলায় জিরো । এখন তো মা বাবা ওর ভক্ত হয়ে গেছে ও যা বলবে সেটাই জানিস এখন আমার হাতে একটা টাকাও দেইনা চাইলেই বলে বউমার কাছ থেকে নে । এ কেমন বিচার (সিয়াম)
-কেনো রে বাসর রাতে বিড়াল মারছিলি না যদি মারতি তাহলে আজকে হয়তো আর এমনটা হতো না (আশিক)
-আর বিড়াল মারতে গেছিলাম উল্টা বিড়াল নিজেই আমারে খামছি দিছে । (সিয়াম)
কথাটা শুনে সবাই হেসে উঠলো। এমন সময় পিছন থেকে সানজিদা এসে হাজির ।
-এতো হাসি কিসের (সানজিদা)
-ও কিছু না ভাবি এমনি গল্প করছিলাম ওই চল সবাই ভাবি আসছে এখন আর থাকা যাবে না । (আশিক)
সবাই চলে গেলো ।
-আপনাকে না বলছিলাম আড্ডা দিবেন না তারপরও কি মনে করে হু যান গিয়ে জামা কাপর গুছিয়ে নিন । (সানজিদা)
-কেনো
-আমার গ্রামের বাড়ি যাবো যান নিজের জামা কাপর কি কি নিবেন নিয়ে নিন । (সানজিদা)
-বলছিলাম তুমি গিয়ে গুছিয়ে দাও তাহলেই তো হয় । (সিয়াম)
-পারবো না পারলে নিজে গুছিয়ে নিন । (সানজিদা)
সিয়াম নিজের রুমে গিয়ে জামা কাপর গুয়ে রেখে দিলো । পরের দিন দুজনেই সানজিদাদের বাসায় এসে হাজির ।
-আম্মু কেমন আছো । (সানজিদা)
-সানজিদা তুই হঠাৎ করে ফোন করতে পারতি তাহলে আগে থেকে সব কিছু করে রাখতাম । (মা)
-সারপ্রাইজ দিলাম (সানজিদা)
তারপর দুজনেই রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে খেয়ে নিলো । বিকালের দিকে সানজিদার বান্ধবী সুমাইয়া এসে হাজির ।
-আসসালামু ওয়ালাইকুম দুলাভাই (সুমাইয়া)
-ওয়ালাইকুম আসসালাম আপনাকে চিনলাম না । (সিয়াম)
-আমি সানজিদার বান্ধবী । (সুমাইয়া)
-ওহ তার মানে আমার শালি (সিয়াম)
-শালি হলাম কি করে আমি কি সানজিদার বোন নাকি (সুমাইয়া)
-বোন আর বান্ধবী একই তো । (সিয়াম)
-তা দুলাভাই সানজিদা কেমন আদর করে আপনাকে । (সুমাইয়া)
-আর আদর সেটা তো আমার কপালে নেই (সিয়াম)
-কেনো
– তোমার বান্ধবী তো একটা ডাইনাসর সব সময় আতংকের উপরে রাখে । (সিয়াম)
-কেনো ওকে দেখে ভয় পান বুঝি । (সুমাইয়া)
-আমি কেনো তোমার বান্ধবীকে ভয় পাবো উল্টা ওই আমাকে ভয় পায় । (সিয়াম)
-হুমম সেটা তো বুঝতেই পারছি । (সুমাইয়া)
দরজার পাশে যে সানজিদা দাড়িয়ে ছিলো এটা সিয়াম খেয়াল করেনে । সানজিদা তো সিয়ামের দিকে একভাবে রাগী লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে ।
-আচ্ছা দুলাভাই আসি বেঁচে থাকলে খোজ দিয়েন । (সুমাইয়া বলেই হাসতে হাসতে বেরিয়ে গেলো)
সিয়াম ভাবছে এই যা এখনও কি কিছু বলবে নাকি যদি বলে তাহলে আমার মানসম্মান শেষ শশুর বাড়ি বলে কথা ।
চলবে….