জোর করে বিয়ে পার্টঃ ১৩

0
2202

জোর_করে_বিয়ে
পার্টঃ ১৩
লেখকঃ সিয়াম হোসেন

সিয়াম সকালে উঠে ফ্রেশ হয়ে বাইরে যেতে লাগলো ।‌
–কোথায় যাচ্ছো (সানজিদা)
-বাইরে
-তোমাকে একটা কথা বলার ছিলো (সানজিদা)
-কি
-বলছিলাম যে কি আমাকে একটু মার্কেটে নিয়ে যাবে (সানজিদা)
-কেনো তুমি একা যেতে পারো না । (সিয়াম)
-এমন করো কেনো গেলে কি হবে (সানজিদা)
-আমার কাজ আছে তোমার দরকার হলে যাও‌ আমি যেতে পারবো না (সিয়াম)
এমন সময় সিয়ামের বাবা এসে হাজির
-দেখুন না বাবা আপনার ছেলেকে বললাম আমাকে মার্কেটে নিয়ে যেতে কিন্তু নিচ্ছে না (সানজিদা)
-কিরে সিয়াম বউমা কি ঠিক বলছে (বাবা)
-হুমম
-নিয়ে জানা তাছাড়া তো ও সব সময় বসেই থাকে বাসায় আজকে একটু যেতে চেয়েছে যা (বাবা)
-আমার কাজ আছে আমি যেতে পারবো না (সিয়াম)
-তোর কোনো কাজ নেই তুই বউমাকে নিয়ে মার্কেটে যা (বাবা)
-আমি পারবো না বললাম তো (সিয়াম)
-বউমা যখন যেতে চায়ছে তখন নিয়ে যানা (পিছন থেকে সিয়ামের মা)
-আম্মু
-কোনো কথা হবে না যা (মা)
-হুমম যাচ্ছি যাও গিয়ে রেডি হয়ে আসো (সিয়াম)
-হি হি আমি রেডিই আছি চলো (সানজিদা)
বাহ্ এতো দেখি ৪.৫ জি সিমের থেকেও ফাস্ট একে বারে প্রস্তুত হয়ে আছে ।
-কি হলো দাড়িয়ে আছো কেনো চলো (সানজিদা)
-হুমম চলো (সিয়াম)
-এই নে গাড়ির চাবি যা (সিয়ামের বাবা)
-উহু আমরা রিকশায় করে যাবো আপনি চাবি রেখে দিন (সানজিদা)
সিয়ামকে নিয়ে সানজিদা বাইরে এসে একটা রিকশায় উঠলো । দুজনেই‌ রিকশার পাশাপাশি বসে‌ আছে । বাতাসে সানজিদার চুল গুলো উড়ছে আর সেই‌গুলা সিয়ামের মুখের উপড় গিয়ে পড়ছে । সিয়ামের কাছে বেপারটা বিরক্তি কর লাগলেও ‌এক রোমান্টিকতা কাজ করছে । রিকশা চলছে তার আপন গতিতে । তারপর দুজনেই মার্কেটে চলে এলো ।
সানজিদা সেই‌ কখন থেকে মার্কেট করেই‌ যাচ্ছে এই জন্যই বলে মেয়ে মানুষের সাথে মার্কেটে আসতে নেই ।
-কি হলো ‌হয়েছে তোমার (সিয়াম)
-হুমম আর অল্প একটু (সানজিদা)
-এতোক্ষন লাগে মার্কেট করতে তাড়াতাড়ি করো নাহলে আমি চলে গেলাম । (সিয়াম)
-এই তো হয়ে গেছে আর একটু ওই পাশ টার দোকানে চলো (সানজিদা)
সানজিদা সিয়ামকে নিয়ে একটা শার্ট প্যান্টের দোকানে নিয়ে এলো ।
-এখানে নিয়ে এলে কেনো (সিয়াম)
-মার্কেট করবো (সানজিদা)
-কি তুমি ছেলেদের পোশাক পড়বে পাগল টাগল হয়ে যাও নি তো (সিয়াম অবাক হয়ে)
-ধুর আমি কেনো ছেলেদের পোশাক পড়তে যাবো (সানজিদা)
-তাহলে
-এটা তো তোমার জম্য দেখি ঘুরে দাড়াও এই শার্টটা তোমার গায়ে হয় কিনা (সানজিদা)
সিয়ামের পিঠের সাথে একটা শার্ট ঠেকিয়ে ধরলো ।
-হুমম হবে কালার টাও অনেক সুন্দর মামা এইটা প্যাক করে দিন তো (সানজিদা দোকানদারকে বললো)
-মামা প্যাক কইরেননা । আর এখানে আমার জন্য তোমাকে মার্কেট করতে বলিনি তুমি যা দরকার নাও (সিয়াম)
-একটা শার্টই তো নাও না (সানজিদা)
-কি মামা আফা যখন বলছে নিয়ে যান (দোকানদার)
-ঠিক আছে দিন । (সিয়াম)
তারপর দুজনেই মার্কেট করে বাইরে বেড়িয়ে এলো ।
-চলো একটা কফি শপে যায় এক সাথে কফি খাবো (সানজিদা)
-না এখন বাসায় যাবো (সিয়াম)
-আসো না শুধু একটা কফি প্লিজ (সানজিদা)
সিয়াম আর সানজিদা সামনের দিকে হাটছে ।

-কেমন আছো সানজিদা (পিছন থেকে নিলয়)
সানজিদা কন্ঠটা শুনে পিছনে তাকিয়ে নিলয়কে দেখে কিছুটা অবাক হলো । তারপরও‌ কোনো কথা না বলে হাটতে লাগলো ।
-রেগে আছো আমার উপরে (নিলয়)
-কে আপনি (সানজিদা)
-বুঝছি এখনও রেগে আছো চলো না এক সাথে বসে কথা বলি (নিলয়)
-আপনার সাথে কোনো কথা বলার ইচ্ছাই ‌আমার নেই । (সানজিদা)
-শুধু একটা কফি খেতে যতক্ষন লাগে সেই সময় টুকু প্লিজ(নিলয়)
তিনজনে মিলে একটা কফি খেতে লাগলো । হঠাৎ করে আশিকের ফোন আসায় সিয়াম ওদের দুজনকে রেখে একটু বাইরে কথা বলতে গেলো‌।
-কেমন আছো‌(নিলয়)
-………
-আমি জানি তুমি আমার উপরে রেগে আছো প্লিজ আমাকে মাফ করে দাও তখন সিয়ামের বন্ধুরা আমাকে ‌উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে ছিলো কিন্তু আমি এখন বুঝতে পারছি (নিলয়)
-এই বিষয় বাদ দিয়ে অন্য কিছু থাকলে বলুন (সানজিদা)
-আপনি করে কেনো বলছো তাছাড়া এই‌ সিয়ামই বা তোমার সাথে কি করছে এখানে । (নিলয়)
-ও আমার স্বামী সুতরাং সাবধানে কথা বলুন (সানজিদা)
-ওহ্ এতো দিন তো ওকে সব সময় ঘৃণা করে আসতে এখন আবার স্বামী হলো কি করে তুমি কি ভুলে গেছো‌ ও তোমার সাথে কি করেছে । (নিলয়)
-না ভুলিনি আর তাছাড়া ও যা করেছে ভালো করেছে অন্তন তোমার মতো একজন লোককে তো চিনতে ‌পেরেছি যে মানুষকে বিশ্বাসই করতে জানে না । (সানজিদা)
-দেখো‌ সানজিদা এখানে আমার কোনো দোষ নেই‌ সিয়ামের বন্ধুরা আমাকে উল্টা পাল্টা বুঝিয়ে ছিলো আর এই সিয়াম ও ভালো না । (নিলয়)
-ওর বিষয় নিয়ে একটা কথাও বলবে না ও ভালো কি না ভালো সেটা আমার থেকে আপনি বেশি জানেন না (সানজিদা)
নিলয় সানজিদার দুটি হাত নিজের দুহাতের মধ্য ধরলো
-প্লিজ সানজিদা আমাকে মাফ করে দাও আমি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছি তাছাড়া আমি তোমাকে এখনও ভালোবাসি প্লিজ তুমি আমার কাছে ফিরে এসো । (নিলয়)
-হাতটা ছাড়ুন সিয়াম চলে আসবে । (সানজিদা)
কথাটা বলতেই সিয়াম এসে হাজির আর যেটা দেখলো সেটার জন্য সিয়াম হয়তো প্রস্তুত ছিলো না সোজা রাগ করে বেড়িয়ে গেলো ।
-সিয়াম (সানজিদা পিছন থেকে ডাক দিলো )
-কি হলো বলোনা তুমি আমাকে মাফ‌ করেছো‌। (নিলয়)
-আপনাকে হাত ছাড়তে বলেছি আপনার জন্যই ‌সিয়াম আমাকে ভুল বুঝে চলে গেলো । (সানজিদা)
-না ছাড়বো না আগে বলো (নিলয়)
-আপনাকে হাত ছাড়তে বলেছি (সানজিদা)
-আগে বলো না হলে ছাড়বো না আর সিয়ামের মাঝে এমন কি আছে যা আমার মাঝে নেই এক সময় তো সিয়ামকে দেখতে পারতে না নাকি ওর টাকা আছে সেই‌জন্য । (নিলয়)
সানজিদা নিজের হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে নিলয়ের গালে কোষে একটা থাপ্পর মেরে দিলো ।
-ওর বিষয়ে আর একটা কথাও বলবেন না । আর আজকের পর থেকে যদি আমার সামনে আসেন তো খারাপ ‌হয়ে যাবে কিন্তু বলে দিলাম । (সানজিদা সেখান থেকে বেড়িয়ে বাসার দিকে রওনা দিলো । )

এদিকে সিয়াম ভাবছে না এটা মেনে নেওয়া যায় না সানজিদা এখনও মনে হয় নিলয়কে ভালোবাসে ঠিক আছে ও যেহেতু নিলয়কেই ভালোবাসে ওকে নিলয়ের কাছে ফিরিয়ে দিবো ।

সানজিদা বাসায় এসে দেখে যে সিয়াম খাটের উপরে বসে আছে ।
-সিয়াম (সানজিদা ডাক দিতে সিয়াম রাগী ভাবে ওর দিকে তাকায়)
-দেখো তুমি যেটা ভাবছো সেটা কিন্তু ঠিক না । (সানজিদা)
-কি ঠিক না । (সিয়াম)
-আমার আর নিলয়ের মাঝে কিছু….
-থাক আর বলতে হবে না বুঝে গিয়েছি আসলেই আমার প্রথমেই বোঝা উচিত ছিলো যে জোর করে কারো মন পাওয়া যায় না । (সিয়াম)
-কিন্তু আমি তো ।
-আর বলতে হবে না তুমি আমার কাছ থেকে মুক্তি চাও তো ঠিক আছে আমি আর তোমাকে আটকাবো না তোমার যা ইচ্ছা করো । (সিয়াম)
-কি সব বলছো বিশ্বাস করো সিয়াম আমার আর নিলয়ের মাঝে তেমন কিছুই নেই । (সানজিদা)
-কি বিশ্বাস করবো হ্যা যেটা নিজের চোখে দেখেছি সেটাকে কি ভাবে অবিশ্বাস করবো আর কি যেনো বলছিলা ওকে হাত ছাড়ো না হলে সিয়াম এসে দেখে ফেলবে এটার মানে কি হু এর পরেও কি আর কিছু বুঝার বাকি আছে (সিয়াম)
-সিয়াম তুমি শুধু সেটাই‌ শুনেছো কিন্তু তার আগে কি হয়েছে সেটা তো শুনবা । (সানজিদা)
-তোমাকে আর বলতে হবে না । তুমি নিলয়ের কাছে যেতে চাও তো ঠিক আছে আমি তোমাকে আটকাবো না যাও (সিয়াম)
-সিয়াম আমার কথাটা তো শোনো । (সানজিদা)
-আমার এখন ভালো লাগছে না প্লিজ আমাকে একা ছেড়ে দাও (সিয়াম)
-কথাটা তো ….
-বললাম না ভালো লাগছে না আমাকে একা থাকতে দাও । (সিয়াম জোর গলায়)
-হুমম যাচ্ছি । (সানজিদা কাঁদতে কাঁদতে সিয়ামের মায়ের রুমে চলে গেলো । )
-কিরে মা কি হয়েছে কাঁদছিস কেনো আর সিয়াম ওতো জোরে করে কথা বলছিলো কেনো । (মা)
-আমার সব শেষ হয়ে গেলো (সানজিদা)
-কেনো রে মা কি হয়েছে সিয়াম তোকে কিছু বলছে (মা)
তারপর সানজিদা আজকে কি হয়েছে সেটা খুলে বললো ।
-কাঁদিস না মা ঠিক হয়ে যাবে সিয়ামকে গিয়ে এই‌কথাটা বল । (মা)
-ও‌ আমার কোনো কথায় শুনতে চায় না । (সানজিদা)
-ঠিক আছে তুই‌ এখানে থাক আমি ওর সাথে কথা বলে আসছি (মা)
-না আম্মা আপনি‌ এখানেই থাকুন ও একটু এক থাকতে চায় ওর মন ভালো হলে আমিই বুঝিয়ে বলবো । (সানজিদা)
-ঠিক আছে তুই ‌এখানে বস আমি তোর জন্য খাবার নিয়ে আসছি । (মা)
-আমার ক্ষুদা নেই (সানজিদা)
-এটা কেমন কথা সেই সকালে খেয়ে বেড়িয়েছিস এখন তো কিছু খেয়ে নে আর কাঁদিস না সিয়ামের মন ভালো হলে দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে । (মা)
-তাই‌ যেনো হয় । (সানজিদা)
সানজিদা এখনও কেঁদেই চলেছে । কেনো যে তখন নিলয়ের সাথে কথা বলতে গেলাম তখন যদি কথা না বলতাম তাহলে হয়তো এখন সিয়াম আমাকে ভুল বুঝতো না । এই সব ভাবছে আর কান্না করছে ।

সিয়ামও‌ রুমে বসে সানজিদার কথা ভাবছে । কি করে সানজিদা আমার সাথে এমনটা করতে পারলো । আমি তো ওকে সত্যিই ভালোবেসেছি তার পরও ও আমার সাথে এমন করে কেনো । ঠিক আছে ওকে‌ আমি মুক্তি দিয়ে দিবো ও যখন আমাকে ভালোইবাসে না তখন কি লাভ ওকে‌ এখানে শুধু শুধু বন্দি করে রেখে । ওকে‌ ওর খোলা আকাশেই ছেড়ে দেওয়া উচিত যেখানে সিয়াম নামে কেউ থাকবে না ।

চলবে….