#জোর_করে_বিয়ে
পার্টঃ ৫
লেখকঃ সিয়াম হোসেন
পরের দিন সিয়াম ভার্সিটিতে যাবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে । তবে আজকের সাজাটা সম্পূর্ণ আলাদা । একদম ভদ্রতা যাকে বলে ।
-আম্মু ক্ষুদা লাগছে খেতে দাও ভার্সিটিতে যেতে হবে । (সিয়াম)
মা তো এক ভাবে তাকিয়ে আছে সিয়ামকে এমন পোশাক পড়া দেখে ।
-কি হলো হা করে তাকিয়ে আছো কেনো দাও ক্ষুদা লাগছে তো । (সিয়াম)
-হুমম (মা)
তারপর খেয়ে দেয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্য বেড়িয়ে গেলো । সিয়ামের বন্ধুরাও যেনো অবাক পোশাকটা পড়া দেখে ।
-কিরে সিয়াম এই পোশাকে । (আশিক)
-কেনো কি হয়েছে ।(সিয়াম)
-না মানে ইন করে শার্ট পড়েছিস কখনও তো ছেড়া জিন্স প্যান্ট ছাড়া পড়িস না তাই । (আশিক)
-অনেক তো হলো এবার একটু ভালো হয়ে দেখিনা কেমন লাগে । (সিয়াম)
-আচ্ছা তুই সিয়াম তো । (আশিক)
-কেনো সন্দেহ আছে । (সিয়াম)
-তেমন টাই তো মনে হচ্ছে হঠাৎ করে এতো পরিবর্তন কি মনে করে । (আশিক)
-এমনি আচ্ছা মোকসেদ স্যার কোথায় । (সিয়াম)
-কখনও তো মকলেজ ছারা ডাকোস না আজকে আবার ভালো নাম ধরে ডাকতেছোস । (রাফি)
-বল না কোথায় । (সিয়াম)
-আছে হয়তো তার রুমে । (রাফি)
-চল স্যারের সাথে দেখা করে আসি । (সিয়াম)
-কেনো (আশিক)
-মাফ চাইতে হবে । (সিয়াম)
-মানে কি (আশিক)
-গেলেই দেখতে পাবি চল । (সিয়াম)
সবাই মিলে স্যারের কাছে গেলো
-স্যার আসবো । (সিয়াম)
-ও সিয়াম কখনও তো পারমিশন নিয়ে আসো না আজ কি মনে করে । (স্যার)
-স্যার সরি (সিয়াম)
-সরি কিন্তু কেনো(স্যার)
-আপনার সাথে সেদিন খারাপ ব্যবহার করার জন্য আর যেই ছবিটা ছিলো ওটা ডিলেট করে দিয়েছি । আমাকে মাফ করে দিন । (সিয়াম)
স্যার কিছু না বলে সিয়ামের দিকে তাকিয়ে আছে । আচ্ছা সিয়াম কি আমাকে সত্যি বলছে ।
-কি হলো স্যার বলুন না মাফ করছেন(সিয়াম)
-হুমম করছি এখন যাও আর এরপর থেকে কখনও করবে না ঠিক আছে (স্যার)
-জি স্যার (সিয়াম)
সিয়ামের বন্ধুরা সবাই মিলে বাইরে দাড়িয়ে কথা শুনছিলো
-চল প্রিন্সিপালের কাছে দিয়ে মাফ চেয়ে আসি । (সিয়াম)
তারপর প্রিন্সিপালের কাছে গিয়ে মাফ চেয়ে এসে ক্লাসে বসলো ।
এদিকে সানজিদা ও মিম গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকছে ।
-উফ আজকে বেয়াদপ টা নেই (সানজিদা মনে মনে বললো)
ক্লাসে এসে দেখে সিয়াম বসে আছে তাও আবার শান্তশিষ্ট ভাবে ।
সানজিদা ক্লাসে আসার পরই সিয়াম ওকে আড় চোখে লক্ষ্য করে চলেছে ।
কিছুক্ষন বাদে নিলয় এসে সানজিদার পাশে বসলো ।
-কেমন আছেন । (নিলয়)
-ভালো আপনি (সানজিদা)
-ভালো । আচ্ছা একটা কথা বলি । (নিলয়)
-কি
-এই বন্ধুত্তের মাঝে আপনি শব্দটা মানায় না তুমি করে বলি (নিলয়)
-ঠিক আছে বলতে পারেন (সানজিদা)
-না তোমাকেও তুমি করে বলতে হবে (সিয়াম)
-আচ্ছা বলবো (সানজিদা)
সিয়াম শুধু বসে ওদের কথা বলা দেখছিলো । প্রচন্ড রাগ উঠছে ছেলেটার উপর কোথা থেকে উড়ে এসে জুড়ে বসেছে । ইচ্ছা করছে এখনই গিয়ে নাকটা ফাটিয়ে দেই । কিন্তু এটা করা যাবে না নিজের রাগটাকে ধরে রাখতে হবে । তবে শুধু এক ভাবে তাকিয়ে আছে নিলয়ের দিকে । চোখের মাঝে রাগ ভাব ।
-দেখছো ছেলেটা আমার দিকে কেমন করে রাগি লুক নিয়ে তাকিয়ে আছে । (নিলয়)
-তো কি হয়েছে তুমি ভয় পাও নাকি । (সানজিদা)
-ভয় তো পায়ই যদি কিছু বলে । (নিলয়)
-কিছুই বলবে না চুপ করে বসে থাকো ।
(সানজিদা)
ক্লাস শেষে স্যার বেড়িয়ে গেলো । নিলয় সানজিদা মিম বসে বসে গল্প করছে ।
-সানজিদা তোমার সাথে একটা কথা বলার ছিলো । (সিয়াম)
সানজিদা কিছু না বলে মুখ ঘুরিয়ে নিলো ।
-প্লিজ শুধু একটু কথা বলবো । (সিয়াম)
-আমি আপনার সাথে কথা বলতে পারবো না ।(সানজিদা)
-শুধু একটা কথা । (সিয়াম)
-কি বলেন । (সানজিদা)
-এখানে না ওই দিকে আসো । (সিয়াম)
সানজিদাকে নিয়ে ক্লাসের এক কোনায় নিয়ে গেলো ।
-হুমম বলুন কি বলবেন । (সানজিদা)
-ধন্যবাদ (সিয়াম)
-মানে । (সানজিদা)
-কালকের ওই থাপ্পরটা মারার জন্য । জানো আজ পর্যন্ত আমার মা আমার গায়ে হাত তুলে নাই । এই প্রথম তুমি মারলে । সত্যি কথা বলতে আমি তোমার মতোনই একজন কে চেয়েছিলাম যে আমাকে ভয় করবে না । (সিয়াম)
-আমার মতো চেয়েছিলেন মানে বুঝলাম না । (সানজিদা)
-মানে আমি তোমাকে ভালোবাসি । (সিয়াম)
বলার সাথেই সানজিদা দুই গালে দুইটা থাপ্পর মেরে দিলো ।
-আপনাদের কাছে এই ভালোবাসা হতে পারে ছেলে খেলার মতো । খুব সহজেই ভালোবাসি বলে দিলেন । এর পর থেকে আমাকে আর ভালোবাসি বললে খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু । আর আমার আাশে পাশেও ঘুরবেন না । (সানজিদা)
-সত্যি ভালোবাসি (সিয়াম)
-ওটা আপনার কাছে রাখুন(সানজিদা)
বলেই সানজিদা চলে গেলো ।
-কি রে মেয়েটা তোকে আজ কেউ থাপ্পর মারলো আর তুই কিছু বললি না(আশিক)
-আরে এটা ভালোবাসার চিহ্ন (সিয়াম)
-ভালোবাসার চিহ্ন তাই না কই এর আগে যার সাথেই প্রেম করেছিস সেতো কখনও তোকে থাপ্পর মেরে ভালোবাসার চিহ্ন দেয়নি । (আশিক)
-বাদ দে চল । (সিয়াম)
সিয়াম সানজিদার পিছনে যাচ্ছে তখনই নিলয় গাড়ি নিয়ে এসে সানজিদা আর মিমকে নিয়ে গেলো । সিয়ামের প্রচন্ড রাগ হচ্ছে । যে ওর সামনেই ওর ভালোবাসার মানুষটাকে গাড়িতে করে নিয়ে গেলো ।
এভাবেই দেখতে দেখতে কয়েকটা দিন চলে যায় । সিয়াম প্রতিদিনই সানজিদার সাথে কথা বলার চেষ্টা করে কিন্তু সানজিদা শুধু ওকে অপমানই করে যায় । সিয়াম আর ওর বন্ধুরা মিলে ভার্সিটির এক পাশে চুপচাপ বসে আছে । এমন সময় দেখে সানজিদা আর নিলয় ভার্সিটিতে ঢুকছে ।মিম নেই আজকে সেই জন্য নিলয় সানজিদার হাতটা ধরে আরো গায়ের কাছে আসার চেষ্টা করছে । সিয়াম এটা দেখে রেগে গিয়ে নিলয়ের কাছে চলে গেলো ।
-নিলয় তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে সানজিদা তুমি যাও । (সিয়াম)
সানজিদা ওর ক্লাসে চলে গেলো ।
-সানজিদা তোমার কি হয় । (সিয়াম)
-বন্ধু হয় । (নিলয়)
-বন্ধু হয় ঠিক আছে কিন্তু ওর সাথে এতো গায়ে পড়ার চেষ্টা করছো কেনো । (সিয়াম)
-আমি কি করবো না করবো সেটা তোমাকে বলতে বাধ্য নয় । তাছাড়া আমি সানজিদাকে ভালোবাসি । (নিলয়)
-দেখো নিলয় তুমি দেখতে অনেক সুন্দর অনেক ভালো মেয়ে পাবে সানজিদাকে ভুলে যাও । (সিয়াম)
– এই কথাটাই যদি আমি তোমাকে বলি । (নিলয়)
-দেখো নিলয় তুমি কিন্তু তোমার সিমা অতিক্রম করছো । (সিয়াম)
-কি করবে তুমি আমাকে ভয় দেখচ্ছো আমি তোমাকে ভয় পায় না যা করার করো । (নিলয়)
কথা গুলো বলে নিলয় চলে গেলো । সিয়াম আর কিছু না বলে মাথা নিচু করে ক্যাম্পাসের দিকে যাচ্ছে । কিন্তু সিয়ামকে এই কথা গুলো বলার জন্য তার বন্ধুরা গিয়ে নিলয় কে উড়া ধুরা মেরে চলে এলো ।
নিলয়ও মার খেয়ে সুযোগের সত ব্যবহার করার উপায় খুজে নিয়ে সোজা সানজিদার কাছে চলে গেলো ।
-আরে নিলয় তোমার এই অবস্থা হলো কি করে ।(সানজিদা)
-তোমার সাথে ঘুরি বলে সিয়ামের বন্ধুরা এসে আমাকে মারছে আমার তো মনে হয় সিয়ামই ওদের কে বলেছিলো আমাকে মারার জন্য । (নিলয়)
-কি সিয়াম তোমাকে বলছে ঠিক আছে চলো আমার সাথে । (সানজিদা)
-না ওর কাছে যাওয়ার দরকার নেই যদি আবার কিছু বলে । (নিলয়)
-কিছুই হবে না আমি আছি তো চলো । (সানজিদা)
সিয়ামের লাছে গিয়ে সানজিদা একটা থাপ্পর মেরে দিলো ।
-আপনাকে ভেবে ছিলাম হয়তো গুন্ডামি ছেরে দিয়েছেন । কিন্তু না কুকুরের লেজ কখনও সোজা হয়না । নিলয় আমার বন্ধু হয় ও আমার সাথে থাকবে আপনার কোনো সমস্যা । আপনার বন্ধুদেরকে দিয়ে ওকে কিভাবে মেরেছেন । এরপর থেকে ওর গায়ে হাত দিলে আপনাকে ছেরে কথা বলবো না । (সানজিদা)
কথা গুলো বলেই চলে গেলো ।
আর সিয়াম তো দাড়িয়ে দাড়িয়ে ভাবছে আমি আবার কখন নিলয়কে মারার জন্য বন্ধুদেরকে পাঠালাম।
চলবে…..