জোর করে বিয়ে পার্টঃ ৯

0
2064

জোর_করে_বিয়ে
পার্টঃ ৯
লেখকঃ সিয়াম হোসেন

সানজিদার বাবাকে নিলয়ের বাবা ফোন করে বললো যে তার ছেলে এই বিয়ে করতে পারবে না ।

-কিরে মা ওরা না করেদিলো কেনো তোকে বিয়ে করতে । (সানজিদার বাবা)
-ওরা বিয়ে করতে চাইলেও ‌আমি করতাম তারা যখন না করে দিয়েছে তখন ভালোই হইছে । (সানজিদা)
-কেনো কি হয়েছে । (বাবা)
-যেই ছেলের বিশ্বাস নেই তাকে আমি বিয়ে করতে পারবো না । (সানজিদা)
-মানে । (বাবা)
-মানে ওই‌ ছেলেটা যে আমাকে জোর করে বিয়ে করেছে ঠিক আছে কিন্তু আমার সাথে ও তেমন কিছুই করেনি অথচ নিলয় ভাবছে ও আমার সাথে নাকি খারাপ কিছু করেছে আমাকে বিশ্বাসই করতে চায় না । (সানজিদা)
-কিন্তু তোর এখন বিয়ে না হলে কি হবে ভেবে দেখেছিস । (বাবা)
-কি হবে । (সানজিদা)
-মানুষেরা তোকে নিয়ে হাসা হাসি করবে । (বাবা)
-আমি মানুষের কাছে থাকিও না খাইও‌ না যে তাদের কথায় কান দিবো । (সানজিদা)
-তবুও একবার ভেবে দেখ তোর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে এই কথা গ্রামের সবাই জানে এখন যদি বিয়েটা নাহয় তাহলে তারা কি ভাববে আর আমরা কোন মুখ নিয়ে গ্রামের বাড়ি যাবো । (বাবা)
-তারা যা ভাবে ভাবুক আমরা কালকেই গ্রামের বাড়িতে যাবো এখানে আর থাকবো না । (সানজিদা)
-কিন্তু
-কোনো কিন্তু নেই আমি আছি তো । (সানজিদা)
সানজিদার বাবা আর কোনো কথা না বলে রুমে চলে গেলেন ।
-কোন মুখ নিয়ে গ্রামে যাবো সবাই তো আমাদের নিয়ে হাসাহাসি করবে । (সানজিদার মা)
-সেটাই‌তো ভাবছি কিন্তু ওরা তো বিয়েতে না করে দিয়েছে । (সানজিদার বাবা)
-আমি বলছিলাম যে কি একবার গিয়ে নিলয়ের বাবার সাথে কথা বলে দেখো কি বলে । (সানজিদার মা)
-আমার মনে হয় না তারা রাজি হবে আর যদি রাজি হয় তাহলে সানজিদা রাজি হবে না । (সানজিদার বাবা)
-তাহলে এখন কি করবে । (সানজিদার মা)
-দেখি কি করা যায় ভাবতে দাও । (সানজিদার বাবা)

অপর দিকে সিয়ামের বাবা ছেলের মুক্তির জন্য কয়েকটা উকিলের কাছে গিয়েছেন কিন্তু কেউই তার কেসটা নিতে চান না । সবার এক কথা সিয়ামের দোষ আর ওযে মেয়েটাকে নিয়ে এসেছে এটা সবাই দেখেছে এমনকি পুলিশ তার বাসায় গিয়ে মেয়েটাকে পেয়েছে । সমস্ত প্রমাণ সিয়ামের বিরুদ্ধে আর এই রকম কেসে সবসময় মেয়েরাই জিতে যায় কারণ আইন মেয়েদেরকে একটু বেশিই সম্মানের দৃষ্টিতে দেখে । সিয়ামের বাবা মন খারাপ করে রাস্তা দিয়ে হাঁটছিলেন । ভাবছিলেন আর একটা উকিলই দেখবেন যদি এটাও না করে দেয় তাহলে আর কিছু করার থাকবে না ।
দেখে দেখে একটা নাম কথা উকিলের কাছে গেলেন । উকিলের খোজটা তার বন্ধু দিয়েছে তিনি নাকি তার কোনো এক দুসম্পর্কের আত্বীয় হন ।

-ভিতরে আসবো । (সিয়ামের বাবা)
-হ্যা আসুন আপনি নজরুল সাহেব তাই না । (উকিল)
-হ্যা কিন্তু আপনি কি করে জানেন(সিয়ামের বাবা)
-আপনার বন্ধু আমাকে ফোন করে বলেছে । তা বলুন কি সাহায্য করতে পারি আপনার জন্য । (উকিল)
তারপর সিয়ামের বাবা সব কিছু খুলে বললেন ।
-হুমম কেসটা খুবই জটিল সব প্রমাণ আপনার ছেলের বিরুদ্ধে । (উকিল)
-দেখুন আপনি না করবেন না আপনার কাছে আসার আগেও কয়েকটা উকিলের কাছে গিয়েছি তারাও না করে দিয়েছে যে কোনো ভাবে চেষ্টা করে দেখুন । (সিয়ামের বাবা)
-দেখুন নজরুল সাহেব সব কিছুই আমাদের বিরুদ্ধে তবে একটা উপায় আছে । (উকিল)
-কি উপায় । (সিয়ামের বাবা)
-আপনি একবার সেই মেয়েটার পরিবারের সাথে কথা বলে দেখুন । (উকিল)
-মানে ।
-মানে খুব সোজা তাদের কাছে গিয়ে বলবেন তারা যেনো তাদের মেয়েকে আপনার ছেলের সাথে বিয়েটা মেনে নেয় এবং কেসটা তুলে নেয় । (উকিল)
-তারা কি রাজি হবে তাছাড়া কালকে তো ওই মেয়ের বিয়ে । (সিয়ামের বাবা)
-রাজি করাতে হবে নাহলে আপনার ছেলেকে বাঁচানো সম্ভব না । (উকিল)
-আচ্ছা ।
সিয়ামের বাবা সেখান থেকেও ‌মন খারাপ করে বেরিয়ে এলো । রাস্তার এক পাশ দিয়ে হাটছে ।
-আরে ওটা আংকেল না । (সোহাগ)
-হুমম আংকেলই তো কিন্তু মন খারাপ কেনো চল তো দেখি । (রাফি)

-আংকেল আপনার মন খারাপ কেনো । (আশিক)
-ও তোরা
-হুমম কিন্তু আপনার মন খারাপ কেনো । (আশিক)
-এমনি
-সিয়ামের ছাড়ানোর বেপারে কি বললো । (আশিক)
-সব উকিল না করে দিয়েছে বললো যে তারা এই‌কেসটা নিতে পারবে না । (সিয়ামের বাবা)
-তাহলে কি সিয়ামকে ছাড়ানো যাবে না । (রাফি)
-একটা উপায় আছে কিন্তু হবে কিনা জানি না । (সিয়ামের বাবা)
-কি ।
সিয়ামের বাবা উকিল তাকে যা বলেছে তাই ওদেরকে বলে দিলো ।
-এটা নিয়ে কোনো চিন্তায় করবেন না । (আশিক)
-মানে ।
-মানে হলো সানজিদার বিয়ে ভেঙে গেছে আর এখন আপনি গিয়ে যদি এই কথা বলেন তাহলে তারা রাজিও হতে পারে । (আশিক)
-বিয়ে ভেঙে গেছে মানে কি করে । (সিয়ামের বাবা)
-আমরা আছি তো আমরা থাকতে ওদের বিয়ে হয় কি করে । (আশিক)
-তোরাও হয়েছিস এক একটা বদের হাড্ডি । (সিয়ামের বাবা)
-হি হি এখন যান সানজিদার বাবা মার সাথে কথা বলে দেখুন । (আশিক)
সিয়ামের বাবা চলে গেলো মিমের মামার বাসায় ।

-আপনি এখানে কেনো বেড়িয়ে যান । (সানজিদা)
-দেখো মা আমার ছেলে যা করেছে তার জন্য আমি ক্ষমা চাইছি যদি তুমি কেসটা তুলে নাও তাহলে আমার ছেলেটা বেঁচে যায় । (সিয়ামের বাবা)
-ও তাহলে এখানে ছেলেকে বাঁচাবোর জন্য সুপারিশ করতে এসেছেন কিন্তু আমার সাথে যা করেছে সেটা । (সানজিদা)
-আমি জানি তোমার বিয়ে ভেঙে গেছে তাই বলছি যদি এখন তুমি আমার ছেলের সাথে যে তোমার বিয়ে হয়েছে সেটা মেনে নাও‌ তাহলে ভালো হয় । (সিয়ামের বাবা)
-আপনার ছেলেকে কখনই আমার স্বামী হিসেবে মানতে পারবো না আর আর বিয়েটাকেও না । (সানজিদা)
-কি হয়েছে রে মা । (সানজিদার বাবা)
-দেখো না এই লোকটা এখন নিজের ছেলেকে বাঁচানোর জন্য এখানে সুপারিশ করতে এসেছে । (সানজিদা)
-আপনি তো সানজিদার বাবা আপনি বোঝার চেষ্টা করুন আপনার মেয়ের বিয়ে ভেঙে গেছে আর আমার ছেলে জোর করে হলেই কি আপনার মেয়ের সাথে বিয়ে তো করেছে তাই বলছিলাম যদি আপনারা এই বিয়েটা মেনে নেন তাহলে আমার ছেলেটা বেঁচে যায় । কথা দিচ্ছি আমি থাকতে আমার ছেলে আপনার মেয়ের সাথে কিছুই করবে না ।(সিয়ামের বাবা)
-আমার বাবাকে আপনার বোঝাতে হবে না চলে যান । (সানজিদা)
-ঠিক আছে তবে আপনি একবার ভেবে দেখবেন এটা আমার নাম্বার (সিয়ামের বাবা সানজিদার বাবাকে নিজের নাম্বারটা দিয়ে বেড়িয়ে গেলেন)

-দেখ মা লোকটা কিন্তু ঠিক কথায় বলছিলো । (সানজিদার বাবা)
-মানে কি বলতে চাচ্ছো তুমি (সানজিদা)
-বলছিলাম সিয়াম তো তোকে বিয়ে করেই নিয়েছে তাছাড়া এই কথা যদি গ্রামের সবাই জানে তাহলে আমাদের দিকে আঙুল তুলে কথা বলবে সবাই তাই বলছিলাম তুই ওকে মেনে । (বাবা)
-বাবা কি বলছো তুমি । (সানজিদা)
-আমি ভেবে চিন্তেই কথা গুলো বলছি অন্তত আমাদের জন্য । (বাবা)
-ঠিক আছে । (সানজিদা)
-সত্যিই মা তোর মতো মেয়ে পেয়ে আমরা ধন্য । (বাবা)
সানজিদার বাবা সিয়ামের বাবার কাছে ফোন করে বললেন যে তারা রাজি । তারপর সবাই মিলে থানায় গিয়ে কেসটা তুলে নিলো ।

-আপনার সাথে আমার বিয়েটা মেনে নিচ্ছি তার মানে এটা নয় যে আমার সবকিছুই আপনার । আমার কাছে কখনও স্বামীর অধিকার নিয়ে আসবেন না । (সানজিদা সিয়ামকে আলাদা করে নিয়ে বললো)
সিয়াম কিছু না বলে শুধু মুচকি হাসলো ।
-তাহলে আরকি তখন তো বিয়েটা জোর করে করছিলি এখন ধুমধামেই হয়ে যাক কি বলেন । (সিয়ামের বাবা)
-ঠিক আছে তাই হোক । (সানজিদার বাবা)
তারপর সিয়াম ও সানজিদার বিয়েটা ধুমধাম করেই হয়ে যায় । সানজিদা এখন বাসর ঘরে বসে আছে আর সিয়াম ছাদের উপর দাড়িয়ে বন্ধুদের সাথে গল্প করছে ।

-সত্যি তোরা না থাকলে এই বিয়েটা হয়তো হতো না । (সিয়াম)
-আরে বাদ দে এখন ঘরে যা ভাবী হয়তো তোর জন্য অপেক্ষা করছে । (রাফি)
-মাম্মা বিড়াল মারতে কিন্তু ভুলিস না । (আশিক)
-আমি কি বিড়াল মারবো বিড়াল যদি আগেই‌ আমাকে খামছি দেয় । (সিয়াম কথাটা বলেই সবাই‌হেঁসে উঠলো)

সিয়াম নিজের রুমে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করেদিলো । আর সানজিদা স্বাভাবিক ভাবেই খাটের সাথে হেলান দিয়ে শুয়ে আছে আজকে যে বাসর রাত তার কাছে কিছু মনেই হচ্ছে না । সিয়াম খাটের দিকে এগোতে লাগলো ।
-আমার কাছে আসার চেষ্টা করবেন না আর ওই‌ সোফায় গিয়ে শুয়ে থাকুন যান । (সানজিদা)
সিয়াম কোনো কথা না বলে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লো আর যাই জোর করে করুক না কেনো সানজিদার ইচ্ছার বিরুদ্ধে এখন আর যেতে চায় না শত হোক নতুন বউ ।

চলবে………..