টানাপোড়ন তুমি পর্ব-০৪ এবং শেষ পর্ব

0
56

গল্প #টানাপোড়ন তুমি (শেষ পর্ব)
লেখক #জয়ন্ত_কুমার_জয়

অর্ষা কর্কষ গলায় বললো ” পূজা মেয়েটা আবার কে? ”

” চিঠিতে তো জানালাম।ছিনতাইকারীর কবলে পরার সে রাতে পরিচয় হইছে ”

” তা বুঝলাম।বিপদে পড়েছো সে হেল্প করছে,বিষয়টা সেখানেই থেমে যাওয়া উচিত।কিন্তু না থেমে এতদূর এগোচ্ছে কেন? ”

” এতদূর এগোচ্ছে বলতে? ”

” কি এগোচ্ছে বুঝতে পারছো না? ওই মেয়ের হাসি তোমার এতো ভালোলেগে গেলো কেন? তুমি কি আমার আড়ালে কিছু করে বেড়াচ্ছো? ”

” তোমার আড়ালে যা করেছি তা তো বললাম ”

” মেজাজটাই খারাপ করে দিয়েছো তুমি।অফিস শেষ করে আমি ফোন দিচ্ছি।আর হ্যা,খবরদার ওই মেয়ের সাথে আর কথা বলবে না।আমি সামনের মাসে বাড়ি আসবো ”

” সে কি,তোমার অফিসের কি হবে? ”

” রাখো তোমার অফিস।বাড়ি এসে এত্তো এত্তো বাচ্চা তোমার হাতে ধরিয়ে দিবো।ওই মেয়ের সাথে আর কথা বলবে না।বললে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না বলে দিলাম।

******

রাজ্যর থেকে অর্ষার বলা সব কথা শুনে পূজা মুচকি হেসে বললো ” সুতোয় টান পড়েছে তাহলে ”

” কিন্তু আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।অর্ষা হঠাৎ আপনার কথা শুনে এতোটা রেগে গেলো কেন!আর আপনিই বা কিভাবে বুঝলেন আপনার কথা লিখলে অর্ষা এতো ব্যস্ত হয়ে পড়বে বাড়ি ফেরার জন্য? ”

পূজা শব্দ করে হাসলো।হাসির শব্দে রাজ্যের আবারো ঘোরের মতো লাগলো।মেয়েটার হাসি এতো সুক্ষ কেন?বু”কে গিয়ে বিঁধে যায় সে আওয়াজ।একগাল হাসি নিয়ে পূজা বললো

” মেয়ে হয়ে জন্মেছি জনাব।সব বুঝতে পারি ”

” আপনি কিভাবে বুঝে ফেললেন? আমি তো অর্ষাকে কখনো বুঝতে পারিনা ”

” একটা মেয়ের মন অন্য আরেকটা সবচেয়ে বেশি বুঝে ”

” কি জানি! ”

পূজা হঠাৎ মুখের সবটুকু হাসি মুছে দিয়ে গভীরতা মাখা চোখে তাকিয়ে বললো ” আমার মন বুঝতে পারেন? ”

রাজ্য কিছুটা আড়ষ্টতা নিয়ে বললো ” একটু একটু পারি বোধহয় ”

” একসাথে এতোদিন সংসার করলেন তবুও স্ত্রীর মন বুঝলেন না।আর দু’দিনেই আমার মন বুঝে ফেললেন? তো কি বুঝলেন? ”

” আপনি অনেক কষ্টে আছেন।কেন জানি মনে হচ্ছে এইযে আপনি এখন হাসছেন,এটা সত্য না।বাস্তবে আপনি অসুখী ”

পূজা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো ” ঠিক ধরেছেন।আমি ভালো নেই ”

” আমায় বলবেন?কি হয়েছে আপনার? ”

” জানেন,আমি না খুব সাধারণ একটা মেয়ে।আমার কোনো বন্ধু নেই।তাই যার সাথে একটু পরিচয় হয় তার প্রতি অসীম মায়া জন্মে যায়।আপনার প্রতিও মায়া পরে গেছে।সেই রাতে অপ্রস্তুত অবস্থায় আপনার লাজুক মুখটা দেখেই আমার সবটা কেমন এলোমেলো হয়ে গেলো।প্রতিদিন অফিস ছুটির পর আপনাকে রাস্তায় খুঁজতাম।না পেয়ে মন খারাপ নিয়ে বাড়িতে গিয়ে অনেক কান্না করতাম।খুব কষ্ট হচ্ছিল।আমার কিশোরী মনকে আপনি তচনচ করে দিয়ে কই যে হারালেন!বড্ড খোঁজার পর আপনার দেখা পেলাম।কিছুতেই আর হারাতে দিতে ইচ্ছে করছিলো না।তাই তো লজ্জার মাথা খেয়ে আপনার নাম্বার চাইলাম ”

রাজ্য অবাক দৃষ্টিতে পূজার দিকে তাকিয়ে তার কথা শুনছে।পূজা আবারো বলতে শুরু করলো

” তারপর যখন বললেন আপনি বিবাহিতা,আমার যে কি কষ্ট হয়েছিলো।চারটা রাত ঘুমাতে পারিনি।এইটুকু পরিচয়েই আমার সবটুকু আপনাকে দিয়ে দিয়েছিলাম।প্রতিটা রাত জ্বলে পুড়ে ম”রেছি ”

রাজ্য আবেগ জরিত স্বরে বললো ” আমিও তো আপনার….”

রাজ্যের কথা থামিয়ে দিয়ে পূজা বললো ” জানি। আপনিও আমার প্রতি দূর্বল হতে শুরু করেছিলেন।আর একটু সুতো ছাড়লে আপনি আটকা পড়ে যেতেন ”

” ভালো যদি বাসতেন তাহলে অর্ষাকে দেশে ফেরার মায়াটা কেন করে দিলেন? ”

” ভালোবাসার অর্থ জানেন তো? যাকে ভালোবাসি তার ভালো চাওয়াটাই তো ভালোবাসা।হ্যা,কয়েকবার মনে হয়েছিলো আপনাকে নিজের করে নিই।তারপর ভাবলাব এটাতে একটা মেয়েকে ঠকানো হবে।কেড়ে নেওয়াতে কোনো ভালোবাসা নেই। আর অর্ষাও আপনাকে যথেষ্ট ভালোবাসে।আপনি বুঝতে পারেননি ”

” কি অদ্ভুত একটা মেয়ে আপনি!আপনার সাথে বন্ধুত্বটা রাখবেন তো? ”

” হু রাখবো ”

রাজ্যকে বিদায় জানিয়ে বাড়ি অব্ধি পুরো রাস্তাটা পূজা হেঁটে গেলো।ঘরে ঢুকতেই পূজার মা বললো

” পূজা মা,সেদিন বললি কোন ছেলেকে নাকি তোর পছন্দ হয়েছে।সেই ছেলেকে একদিন বাড়িতে ডাক,আমরা কথা বলি ”

পূজা চোখের জল আড়াল করে মৃদু হেসে বললো ” এখন বিয়ে নিয়ে ভাবছি না মা।নতুন করে কোনো পুরুষকে ভালোবাসা আমার পক্ষে আর সম্ভব না ”

——————সমাপ্ত—————-