টানাপোড়ন তুমি পর্ব-০১

0
194

#টানাপোড়ন_তুমি
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
#পর্ব_১

অর্ষার বইয়ের ভাঁজে জন্মনিরোধক পি”ল দেখে হকচকিয়ে গেলাম।অর্ষা কি প্রে”গ্ন্যাসি এড়াতে চায়? ”

রাতে শুতে গিয়ে অর্ষাকে বললাম “ঘুমাবে কখন?এতো রাত জেগে পড়লে তো অসুস্থ হয়ে যাবে ”

অর্ষা বইয়ে মুখ গুঁজে বললো ” সামনের সপ্তাহে একটা জব পরিক্ষা,জবটা পেয়ে গেলে আর পিছু তাকাতে হবে না ”

আমি মন ভার করে শুয়ে পড়লাম।লক্ষ্য করলাম অর্ষাও আমার পাশে শুয়ে মৃদু স্বরে বললো

” মন ভার করে রেখেছো কেন? ”

ইতস্তত করে বললাম ” তুমি বাচ্চা নেওয়ার কথা ভাবছো না? ”

” ভাবছি তো,কিন্তু একটু পরে।আমি সংসারে আটকে থাকতে চাইনা প্লিজ,আগে ক্যারিয়ারটা গুছিয়ে নিই, তারপর ওসব নিয়ে ভাববো ”

” আচ্ছা ”

” মুখ ওমন ভোতা করে ফেললে কেন?আচ্ছা যাই হোক,আমায় আদর করতে মন চাচ্ছে? ”

” চাওয়াটা কি বাধ্যতামূলক? ”

” সে কি কথা,ঘুমানোর আগে সুন্দরী বউকে একটু আদর করতে মন চাইবে না?দ্রুত আদর করে ঘুমাও,আমার অনেক পড়া বাকি আছে ”

অর্ষার সাথে আমার কথাবার্তা ঠিক এরকম।সামান্য প্রেমালাপ শুরু হতে না হতেই ভালোবাসার কথা থেকে পড়াশোনা,বিলেতে স্কলারশিপ নিতে চাওয়া এসব বিষয়ে মোড় নেয়।

অর্ষা বরাবরই মেধাবী ছাত্রী,সাথে পরিশ্রমীও।সেই জোরেই দ্রুত চাকরিটাও পেয়ে গেলো।ভালো বেতনের চাকরি।

চাকরি হওয়ার পর আমাদের মধ্যে সম্পর্কটাও কেমন যেন ঠুমকো হতে শুরু করলো।অর্ষা অফিস শেষে ক্লান্ত হয়ে ফিরে,তারপর গভীর ঘুমে তলিয়ে যায়। অর্ষার সাথে টুকটাক যা কথা হয় সেটা ওর অফিস,বিদেশে স্কলারশিপ নেওয়ার ইচ্ছে এসব বিষয়ে।

অর্ষার সাকসেসে আমি ঈর্ষাম্বিত নই,তবে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে একটা বন্ধন থাকা জরুরি।অর্ষা মেধার জোরে দু মাসের মধ্যে দেশের বাইরে যাওয়ার স্কলারশিপ ও পেয়ে গেলো।

কিছুক্ষণ আগে ওকে এয়ারপোর্টে বিদায় জানিয়ে আসলাম।আয়নার সামনে দাড়িয়ে ভাবছি পুরনো সব কথা।আয়নার গায়ে অর্ষার কপালের টিপ নজরে এলো।ব্যবহারের টিপ এখানে অথচ অর্ষা হাজার দূরত্বে।দূরত্বটা বড্ড বেশি হয়ে গেলো না তো?

খেতে বসে বাবা বললো ” মেয়েটার মধ্যে জেদ আছে বলতে হবে।বিলেতে যাওয়া তো মুখের কথা নয় ”

মা চোখ মুখ কালো করে বললো ” কি জানি,মেয়ে-ছেলের ওপর বিশ্বাস নেই।কখন মন পাল্টে কে জানে।আমার তো ভয় করছে ”

বাবা মাকে ধমকের স্বরে বললো ” অর্ষা খুবই ভালো মেয়ে।পড়াশোনা ছাড়া অন্যসবে সময় দিবে না।দেখবে কিছুদিনের মধ্যে রাজ্য কেউ ওখানে নিয়ে যাবে ”

আমি আর খেতে পারলাম না।নানাবিধ ভাবনায় অস্থিরবোধ হলো।অস্থিরতায় রাত কাটলো।পরেরদিন অর্ষার ফোন এলো।অর্ষা ভিষণ কৌতুহলী হয়ে সেখানকার সৌন্দর্য্যর কথা বললো।সব শেষে শুধু বললাম ” তুমি দেশে ফিরছো কবে? ”

” এখন ফেরার তো কোনো প্রশ্নই ওঠে না।আচ্ছা রাখি,ঘর গোছাতে হবে ”

মনে হতে লাগলো অর্ষাকে বোধহয় আমি হারিয়েই ফেললাম।বাচ্চা নিলে সংসার,আমার সাথে আবদ্ধ হতে হবে এই ভেবেই কি অর্ষা বাচ্চা নিতে রাজি হচ্ছিলো না!

পরপর দু’দিন কে’টে গেল।অর্ষাকে ফোন দিলো ব্যস্ত দেখায়।দশটা মেসেজের একটা রিপ্লাই দেয়।নতুন যায়গা,পরিবেশ নিয়ে ওর নাকি খুব ব্যস্ত সময় যাচ্ছে।

রাতে ফোন দিলাম।কয়েকবার রিং হওয়ার পর ধরে বললো
” রান্নাঘরটা পরিষ্কার করছিলাম।এখানকার কোয়ার্টার গুলো অনেক বড়,অফিস শেষে যেটুকু সময় পাই পরিষ্কার করতেই হাঁপিয়ে উঠছি ”

” বেশ তো।ওখানটা কেমন লাগছে? দেশের কথা মনে পড়ে না? ”

” দারুণ লাগছে,স্বপ্নের যায়গায় এসছি,সারাক্ষণ মন আপ্লুত হয়ে থাকে ”

” তোমায় দেখতে ইচ্ছে করছে।মনে হচ্ছে অনন্তকাল তোমায় দেখিনা ”

” এখানে গোছগাছ করতে বছর খানেক তো লাগবেই।আর যত সম্ভব ফেরার কোনো পরিকল্পনা নেই ”

” তার মানে, দু’জন দু দেশে থেকে সম্পর্ক টিকে থাকবে কিভাবে? ”

অর্ষার ওখান থেকে একটা ছেলের আওয়াজ ভেসে এলো।ইংরেজিতে কি বললো ঠিক বুঝতে পারলাম না।অর্ষা ব্যস্ত ভঙ্গিতে বললো ” সেসব পরে দেখা যাবে।এখন রাখি ”

” কেউ এসছে নাকি?কন্ঠ শুনলাম ”

” হ্যা,চেরিস এসছে।কাজ বুঝে দিতে।কি বলো তো,পুরোপুরি নতুন যায়গায় এসছি তো,ওর কাছেই সবকিছু বুঝে নিচ্ছি ”

কে’টে গেলো আরো এক সপ্তাহ।দু তিনটা মেসেজ ছাড়া অর্ষার সাথে কোনো কথা হয়নি।রাতে ঠিক করলাম কিছুক্ষণ হাঁটবো।রাস্তায় হাঁটতে বেড় হয়ে একটা একটা অদ্ভুত ঘটনা চোখে পড়লো।এমন একটা ঘটনার সম্মুখীন হতে হবে কখনো ভাবিনি….

চলবে?