#তবুও ভালোবাসি
#পর্ব_১৬
#রেজওয়ানা_রমা
মেহুল এক পা এক পা করে পিছনে যাচ্ছে। মেহুল পিছনে যেতে যেতে দেয়ানের সাথে পিঠ লেগে যায়। রিয়ান মেহুলের একদম কাছে চলে আসে। দুইজনের মধ্যে এক হাত সমপরিমাণ জায়গা। মেহুল রিয়ানের সামনে থেকে সরে যেতে চাইলে রিয়ান তার এক হাত দেয়ালের সাথে ধরে ফলে মেহুল আর যেতে পারে না। এবার মেহুল অন্য দিক দিয়ে সরে যেতে চাইলে রিয়ান একই ভাবে আটকায়। মেহুলের দুই পাশে রিয়ানের দুই হাত দেয়ালের সাথে। মেহুলের হার্ট বিট বেড়ে যায়। মেহুল মাটির দিকে তাকিয়ে আছে। হাতে কফির মগ। কফির মগ টা শক্ত করে ধরে আছে দুই হাত দিয়ে। এর মধ্যেই রিয়ান মেহুলের হাত থেকে মগ টা নিয়ে বলে,
– এত ভয় পাচ্ছো কেন? আমি তো কফি টা নিচ্ছিলাম ( বাকা হাসি দিয়ে)
রিয়ান কফির মগ টা নিয়ে বেলকানি তে চলে যায়। মেহুল এতক্ষণে মেহুল হাঁফ ছেড়ে বাঁচে। একা একা বিড় বিড় করতে থাকে
অসভ্য লোক একটা। খবিশ, বদমাইশ, ভাল্লুক, খাটাস ভয় পাইয়ে দিয়েছিলো। মন টা চায় একটা দেই ধরে। আমার কলিজার পানি শুকিয়ে গিয়েছিলো বাবা গো। যাই কফি টা খেয়ে কলিজা ঠান্ডা করে নেই।
মেহুল কফি টা নিয়ে বেলকানি তে রিয়ানের পাশে গিয়ে বসে। কেউ কোনো কথা বলছে না। মেহুলের মুখে এখনো ভয়ের ছাপ। রিয়ান মেহুলের এমন ভাব দেখে হেসে বলে,
– কি ব্যাপার? এখনো কি ভয় পেয়ে আছো?
– ন-না ভয় পাবো কেন?
– কেন আমাকে ভয় পাও না (মেহুলের একটু কাছে এসে)
মেহুল এক লাফে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাড়ায়। রিয়ান এবার জোরে হেসে উঠে। মেহুল আড় চোখে একটু রিয়ানের দিকে তাকায়। রিয়ান হাসছে। রিয়ান কে হাসতে দেখে মেহুল অপলক তাকিয়ে রয়। রিয়ানের হাসি টা অনেক সুন্দর। হাসলে রিয়ান কে খুব সুন্দর লাগে।রিয়ানের হাসি দেখে মেহুলের ঠোঁটে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠে। রিয়ানের হাসতে হাসতে মেহুলের হাত ধরে পাশে বসিয়ে বলে,
-এত ভয় পাওয়ার কিছু নেই মহারানি। আপনার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমি কিছুই করবো না।
– (নিশ্চুপ)
হঠাৎ মেহুলের ফোন আসে। আবারও সেই নাম্বার কুরিয়ান অফিসের। মেহুল রিসিভ করবে কি না ভাবছে। ভয়ে ভয়ে রিসিভ করে।
-হ্যালো
-মেহুল ইসলাম নীরা বলছেন?
-জ্বী
-ম্যাম আপনার একটা পার্সেল আছে। এসে নিয়ে যেতে হবে
-আবারও পার্সেল?
-জ্বী ম্যাম
রিয়ান ইশারায় জিজ্ঞাসা করতে বলে, যে এখন পার্সেল টা নিতে পারবে ক না।
-ওকে। এখন আসলে কি পার্সেল টা রিসিভ করতে পারবো?
– জ্বী ম্যাম পারবেন
-ওকে
ফোন কেটে দিয়ে রিয়ানের দিকে তাকায় মেহুল। রিয়ান মুচকি হেসে বলে,
– চলো। এবার আমি যাচ্ছি তোমার সাথে।
-আমার খুব ভয় করছে
-কিসের ভয় আমি আছি তো
-আবার কি পাঠিয়েছে
-চলো গেলেই দেখতে পাবো
একটু পরে আজান দিয়ে দেয়। দুইজনই অজু করে নামায পড়ে নেয়। অতঃপর রিয়ান নিচে চলে আসে। সাথে মেহুলও। ড্রইং রুমে মা বাবা বসে গল্প করছে। রিয়ান বাড়ি ফেরার পর থেকে বাবার সাথে দেখা হয় নি। বাবা বাইরে গিয়েছিলেন। তাই আর দেখা হয় নি। রিয়ান আর মেহুল কে নিচে আসতে দেখে রিয়ানের বাবা বলেন,
– আরে মেহুল মা এসো এসো
– শুধু ওকেই দেখলে আমাকে দেখলে না😤 ( রিয়ান)
-তুমি তো ডুমুরের ফুল। তাই আর দেখতে পাই নি।
-উম্মম্ম আব্বুউউউউ
সবাই হেসে দেয়। রিয়ান তার বাবার গলা জড়িয়ে ধরে বলে,
– কেমন আছো আব্বু?
– আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছি বাবা। তুমি কেমন আছেন?
– আমিও ভালো আছি।
– হ্যাঁ তুমি তো ভালো থাকবেই এখন যে বউ কে কাছে পেয়েছো ( সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে রিফা বলে)
– এই বদমাইশ তুই চুপ থাক। বড্ড বেশি কথা বলিস
মা আর মেহুল এতক্ষণ এদের কান্ডে মুচকি মুচকি হাসছে। মা মেহুল কে নিজের পাশে বসিয়ে বলে,
– এমন লক্ষী মন্ত্র মেয়ে ক জন পায় বল তো? যেমন সুন্দর দেখতে তেমন ব্যবহার। সবার নজর কাড়ে। ( মেহুলের গালে হাত রেখে)
মেহুল লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নেয়।
রিয়ান বলে উঠে,
-দেখতে হবে না পছন্দ টা কার হুহ😤
– হ্যাঁ সে তো আমারা সবাই জানি তুমি কি কি করেছো😁 (রিফা)
-আহ! চুপ করো না। আমার মেয়ে টা লজ্জা পাচ্ছে ( মা)
সন্ধা টা পরিবারের সবাই এক সাথে আড্ডা দেয় অতঃপর রিয়ান আর মেহুল বেরিয়ে পড়ে।
রিয়ান ড্রাইভ করছে আর আড় চোখে মেহুল কে দেখছে। মেহুল উদ্বিগ্ন হয়ে আছে। তিয়ান মেহুলের হাতের ওপর হাত রেখে বলে,
-চিন্তা করছো কেন? আমি আছি তো তোমার সাথে
-আগের টা কে পাঠিয়েছিল? বলেছিলেন না খোঁজে বের করবেন?
-করেছি তো। কিন্তু যার কথায় এমন পার্সেল পাঠিয়েছে তার নাম টা এখনো বলে নি। খুব বিশ্বস্ত লোক
-কোথায় তিনি?
-তুমি জেনে কি করবে?
-আমি জেনে কি করবো এমনি জানতে চাইছিলাম
-চলে এসেছি
মেহুল গাড়ি থেকে নামে। দুইজন এক সাথে ভিতরে যায়। পার্সেল টা নিয়ে আবারও বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেয়। মেহুল আর দেরী না করে গাড়ির ভিতরে পার্সেল টা খোলে। আর দেখে চিৎকার করে পার্সেল টা হাত থেকে ফেলে দেয়। রিয়ান সাথে সাথে ব্রেক কষে।
পার্সেলে ছিল একটা রক্ত মাখা ছুরি, রিয়ান মেহুলের বিয়ের ছবি যেখানে রিয়ানের ছবিতে লাল কালি দিয়ে ক্রস দেওয়া। আর একটা চিরকুট। লেখা আছে,
প্রিয় মেহুল,
বলেছিলাম বিয়ে টা করো না। আমি ছাড়া তোমার জীবনে অন্য কেউ আসতে পারে না। এই বিয়ে টা করে তুমি রিয়ানের ক্ষতি ডেকে আনলে। তোমার জীবনে কে নরক বানাতে আমি আসছি বেবি। আজ হোক কাল হোক কিংবা আজ থেকে বহু বছর পরেও আমার তোমাকে চাই। তুমি পারবে তো তোমার স্বামীর মৃত্যু চোখের সামনে দেখতে? জানি একটু কষ্ট হবে তবে কি করার এর চেয়েও অনেক কষ্ট তুই আমাকে দিয়েছিস। সব টা ফেরত দেব সব
ইতি,
তোমার ভালোবাসা
মেহুল রিয়ান কে জড়িয়ে ধরে কাদছে। রিয়ান এক হাত দিয়ে মেহুল কে জড়িয়ে আছে আর এক হাত দিয়ে ড্রাইভ করছে। রিয়ান ড্রাইভ করতে করতে কিছু একটা প্লান করে। কিছুক্ষণ পর তারা বাড়িতে পৌঁছে যায়। মেহুল ফ্রেস হয়ে বিছানায় গুটিসুটি মেরে বসে আছে আর নীরবে কাদছে। রিয়ান ফোনে কথা বলছে। রিয়ান মেহুলের কাছে গিয়ে বলে,
– তোমার কি কাউ কে সন্দেহ হয়?
-(ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাদে)
-মানে তুমি তাকে চেনো? কেউ একজন তোমাকে পাওয়ার জন্য এসব করছে। কিন্তু কে?
-আদি
-আদি? কোন আদি?
-এই শহরের সব চেয়ে বড় গুন্ডা
-এই আদি? আদি তোমাকে কিভাবে চেনে?
-যখন আমি অনার্স ফাস্ট ইয়ার তখন,,,,
এর মধ্যে রোজ মেহুল আর রিয়ান কে ডিনারের জন্য ডাকতে আসে। মেহুল আর কিছু বলে না। রিয়ান মেহুল কে নিয়ে নিচে যায়।
রাতের খাবার খেয়ে সবাই যার যার রুমে চলে যায় মেহুল আর রিয়ান ও রুমে চলে আসে। এখন রাত ১২ টা বাজে। সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে। মেহুল বেলকানি তে বসে বসে পার্সেলের কথা টা ভাবছে। সারাদিন আজকে রিয়ান তার সাথে। এতো হাসি খুশির মাঝেও মেহুলের মন উদ্বিগ্ন। কিছুতেই ভুলতে পারছে না। মনে মনে ভয় পেয়ে আছে এখনো। বেলকানি দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে ভাবছে রিয়ানের যেন কিছু না হয়।
এমন সময় রিয়ান মেহুলের পিছনে গিয়ে মেহুলের গা ঘেসে দাড়িয়ে থাকে। মেহুল উল্টা ঘুরতেই ধাক্কা খায়। মাথা তুলে রিয়ান কে সামনে দেখে একটু পিছিয়ে যায়। রিয়ান মেহুলের একদম কাছে চলে যায়। দুই জনের মধ্যে ৫ আঙুলের দূরত্ব। রিয়ানের গরম নিশ্বাস মেহুল অনুভব করতে পারছে। মেহুল রিয়ান কে এতো কাছে আসতে দেখে চোখ খিচ ধরে বন্ধ করে নেয়। হাত মুষ্ঠি করা। মেহুল শ্বাস আটকিয়ে রেখেছে। মেহুলের এমন কান্ডে রিয়ান মুচকি হেসে মেহুল কে কোলে তুলে নেয়। মেহুলের এবার হার্ট অ্যাটাক হওয়ার উপক্রেম। মেহুল রিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। রিয়ান মেহুল কে নিয়ে রুম থেকে বের হচ্ছে। মেহুল লজ্জায় যেন মরেই যাচ্ছে। কেউ না জানি দেখে নেয়। লজ্জায় চোখ বন্ধ করে নেয় মেহুল। রিয়ান সোজা ছাদে চলে আসে। মেহুল কে নামিয়ে দিয়ে মেহুলের ঘাড়ে মুখ গুজে বলে,
-এইবার চোখ টা খোলো নীড়।
মেহুল আস্তে করে চোখ খুলতেই চোখ গুলো বড় বড় হয়ে যায়। এমন কিছু দেখবে মেহুল জীবনেও কল্পনা করে নি। মেহুল দু পা সামনে এগিয়ে যায়। রিয়ান মেহুলের পিছনে প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে। মেহুল তার চোখের সামনে দেখছে,
.
.
.
.
.
#চলবে