তবুও ভালোবাসি পর্ব-১৫

0
381

#তবুও ভালোবাসি
#পর্ব_১৫
#রেজওয়ানা_রমা

রিয়ান বাড়ি আজকে বাড়ি যাবে এটা বাড়িতে কেউ জানে না। এই প্রথম বার সে মাত্র এক দিনের জন্য বাড়ি যাচ্ছে। হয়তো আজও যেতো না। মেহুল কে ছেড়ে থাকতে যে রিয়ানের বড্ড কষ্ট হয়। তাই কিছু সময় মেহুলের সাথে কাটানো সুযোগ হাতে পেয়ে আর হাত ছাড়া করতে চাইলো না। গাড়ি তে সারা রাস্তা মেহুল রিয়ানের হাত জড়িয়ে আছে। এক মূহুর্তের জন্যেও রিয়ানের কাছ থেকে দূরে যাচ্ছে না। মেহুলের মনে এখনো ভয় সেই পার্সেল টা নিয়ে। গাড়িতে সবাই আড্ডা দিতে দিতে বাড়ি ফেরে।

দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়ে এলো। মেহুল আর রিফা এখনো বাড়ি ফেরে নি। মা চিন্তায় অস্থির হয়ে পড়ছে। এরই মধ্যে দরজায় কলিং বেল বাজতেই ছুটে যায় রিয়ানের মা। দরজার খুলেই চোখ বড় বড় হয়ে যায় তার। চোখের সামনে মেয়ে আর ছেলের বউ এর সাথে ছেলে কে দেখে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেন না তিনি। কান্না ভেজা কন্ঠে বলেন,

-রিয়ান বাবা তুই

রিয়ান মা কে জড়িয়ে ধরে বলে,

– কেমন আছো আম্মু?
– সন্তান যখন মায়ের কোলে ফিরে আসে কোনো মা কি খারাপ থাকতে পারে

রিয়ান মা কে ছেড়ে দিয়ে বলে,
-এই যে দেখো আমি এসেছি তুমি কি এখনো কাদবে? (মায়ের চোখের পানি মুছে দিয়ে)
-তোমাদের মা ছেলের ভাব করা শেষ হলে আমরা ভিতরে ঢুকতে পারি ( রিফা)

রিফার কথায় সবাই মা মুচকি হেসে বলে আয় আয় ভিতরে আয়।
মেহুল আর রিফা ভিতরে আসে। রিয়ান এখনো মায়ের গলা জড়িয়ে মায়ের পিছু পিছু ঘুরছে। তখন রিফা বলে,

– দেখেছো মা এতো দিনে আমরা কেউ ভাইয়া কে সাপ্তাহিক ছুটি তে বাড়ি আনতে পারি নি। আর যে না তোমার বউ মা এসেছে বাড়িতে সেই তোমার ছেলেও দুই দিনের ছুটি তেও বাড়ি তে😁

রিফার কথায় মেহুল লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নেয়। আর রিয়ান সাথে সাথে রিফার কান টেনে বলে,

-বেশি পেকে গিয়েছিস। আমি এসেছি আমার মা কে দেখতে। তোর ভাবী দেখতে মোটেও আসি নি😤
– হ্যাঁ তাই জন্য তো প্লান করে ভাবী কে নিয়ে যেতে বললে😅
-প্লান করে মানে? কিসের প্লান? ( মা)
– না আম্নু কিছু না (আমতা আমতা করে রিয়ান)
-না আম্মু অনেক কিছু ( চিল্লায়ে রিফা)

রিয়ান রিফার মুখ চেপে ধরে ওপরে নিয়ে যায়। আর বলতে বলতে বলে যায়,
– খুব বাড় বেড়েছিস তুই। চল আজকে দেখাবো তোর এক দিন আর আমার যে ক দিন লাগে। কোনো কথা পেটে থাকে না। ফাজিল মেয়ে একটা।
-উম্মম্মম্মম্মম্মম্মম

রিফা শুধু উম্মম উম্মম করে আর হাত দিয়ে মুখ খোলার চেষ্টা করে। রিয়ানের মায়ের আর বুঝতে বাকি নেই যে কিসের প্লানের কথা বলছিল। ছেলে মেয়ের এমন কান্ডে হেসে দেন তিনি। মেহুল রিয়ান আর রিফার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রয়। এমন সময় মা এসে বলেন,

– বউমা তুমিও যাও ফ্রেস হয়ে নাও। আমি তোমাদের কফি পাঠিয়ে দিচ্ছি।

-জ্বী মা।

মেহুল চলে যায়। আর রিয়ানের মা মুচকি হেসে একা একাই বলেন যে, ছেলে টা আমার বড্ড ভালবাসে বউ মা কে। এর পর তিনি কিচেনে চলে যান। সেখানে একজন সার্ভেন্ট রাতের খাবার তৈরী করছিল। মা সেখানে গিয়ে কফি বানাতে গেলেই রোজ ( সার্ভেন্ট) বলে,
– ম্যাডাম আপনি সোফায় বসুন আমি বানিয়ে দিচ্ছি।
– না আমি বানিয়ে দিচ্ছি তুমি ছেলে মেয়ে গুলো কে দিয়ে এসো বরং।
-ওকে ম্যাম। ম্যাম একটা কথা বলবো?
– হ্যাঁ বলো না। সংকোচ করছো কেন
– না মানে এত বছর ধরে কাজ করছি কখনও দেখি নাই রিয়ান স্যার কে ফ্রাইডে তে বাড়ি আসতে। আজকে হঠাৎ,
– ( মুচকি হেসে) হ্যাঁ। সব টা মেহুলের জন্য। মেহুল কে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলো পাগল ছেলে টা আমার তাই ই তো রিফার সাথে প্লান করে মেহুল বাইরে নিয়ে গিয়েছিলো।
-ওও। (একটু হেসে) রিয়ান স্যারের বুদ্ধি আছে অনেক😅
– হুম ছেলে টা কার দেখতে হবে না😏
-জ্বী😅
-নাও কফি রেডি দিয়ে এসো
– জ্বী ম্যাডাম
রোজ চলে যায় কফি নিয়ে রিফার রুমে। রিফা কে কফি দিয়ে রিয়ানের রুমের দিকে যায়।

এদিকে শাড়ী চেঞ্জ করে একদম সিম্পল হালকা গোলাপি কালারের সালোয়ার কামিজ পড়ে বের হয় মেহুল। মেহুল কে এই কালারে বেশ মানায়। কোনো সাজ ছাড়াই তাকে খুব সুন্দর লাগছে। চুল গুলো একটা ক্লিপ দিয়ে আটকানো। মুখ মুছতে মুছতে ওয়াস রুম থেকে বের হয় মেহুল। মেহুল বের হতেই রুমে প্রবেশ করে রিয়ান। মেহুল এভাবে দেখে দাড়িয়ে পড়ে রিয়ান। যেন সে এভাবেই যুগ যুগ ধরে দেখতে চায় মেহুল কে। মেহুল রিয়ান কে দেখে তারাতারি ওরনা টা বুকে জড়িয়ে নেয়। মেহুলের এমন কান্ডে ধ্যান ভেঙে রুমে ঢুকে সোজা ওয়াসরুমে চলে যায় রিয়ান।

এরই মধ্যে রোজ রুমে প্রবেশ করে।
-মেহুল ম্যাডাম আসবো?
-আরে রোজ। এসো এসো
-ম্যাডাম আপনাদের কফি।
-রেখে যাও।
কফি দিয়ে চলে যেতে নিলে মেহুল আবারও বলে উঠে,
-রোজ
-জ্বী ম্যাডাম
-তুমি আমার ছোট বোনের মত। আমাকে ম্যাডাম নয় আপু বলে ডেকো কেমন।
-জ্বী? আপু? ( বিষ্ময় হয়ে)
-কেন আপু বলতে কি কোনো সমস্যা?
-জ্বী না। (মাথা নিচু করে) আপনি রিয়ান স্যারের স্ত্রী। আপু নয় বউ মনি ডাকি?
-(মুচকি হেসে) ঠিক আছে তাহলে এখন থেকে বউ মনিই ডেকো
-জ্বী ( ছলছল চোখে)
-এখন এসো
-জ্বী বউ মনি

রোজ চলে যায়। আর ওদিকে রিয়ান সাওয়ার নিচ্ছে। মেহুল রুম টা গোছাচ্ছে। বিছানা ঠিক করছে। রিয়ান ওয়াসরুম থেকে বের হয় টাওয়েল পড়ে। রিয়ান কে এভাবে দেখে মেহুল অন্য দিকে ঘুরে বলে,
– আপনি তো আচ্ছা নির্জ্জল লোক। একটা মেয়ের সামনে এভাবে আসতে লজ্জা করল না?
– কিভাবে এসেছি? ( অবাক হয়ে)
-কিভাবে এসেছেন বুঝতে পারছেন না? টাওয়েল পড়ে কেউ বাইরে আসে?
-তো কি হয়েছে। এখানে তুমি ছাড়া আর কেউ নেই তো
– কিন্তু আমি তো আছি।
– হুম তো কি হয়েছে তুমি তো আমার স্ত্রী। ( পিছন থেকে মেহুলের কোমর জড়িয়ে ধরে)
– তাই বলে এইভাবে ( মাথা নত করে)
-হুম এইভাবে। বরং এর চেয়েও…….
-চুপ একদম চুপ ( রিয়ানের মুখ চেপে ধরে)

রিয়ান এবার হেসে দেয়। আরো কাছে যায় মেহুলের। মেহুলের গলায় মুখ ডুবিয়ে দিয়ে বলে,

– আমাকে চুপ করালেই কি আমার অনুভূতি গুলো কে চুপ করাতে পারবে নীড়?
-(নিশ্চুপ)
-হুম্মম্মম বলো। (আবেগ জড়ানো কন্ঠে)
-(নিশ্চুপ)
-নীইইড়
-হুম
-কিছু বলছো না কেনো?
-কি বলবো? (মাথা নিচু করে কোমল স্বরে)
-ভালোবাসবে আমাকে?

মেহুলনিশ্চুপ কোনো কথা বলছে না। এবার রিয়ান মেহুল কে ছেড়ে দিয়ে বলে,

-ওকে আমাকে ভালোবাসতে হবে না। আমি একাই তোমাকে ভালোবাসবো। এতো এতো ভালোবাসবো যে আমাদের দুজনের জন্য এই ভালোবাসা টাই যথেষ্ট

বলে রিয়ান একটা টাওজার আর টি-শার্ট নিয়ে আবারও ওয়াসরুমে চলে যায়। আর মেহুল তাকিয়ে থাকে অবাক হয়ে। আর ভাবে,
কি বলে গেলো? এতো ভালোবাসবে যে আমাদের দুজনের জন্য এটাই যথেষ্ট? এই লোক টা কি পাগল? ধ্যাত। কফি টা ঠান্ডা হয়ে গেলো।
মেহুল কফি নিয়ে নিচে চলে আসে। কিচেনে রোজ কে বলে আবারও কফি পাঠাতে। বলেই মেহুল চলে যায় রিফার রুমে। দরজা খোলা ছিল তাই রুমে প্রবেশ করতেই মেহুল দেখে রিফা ফোনে কথা বলছে,

– প্লিজ বোঝার চেষ্টা করুন। আমি পারবো না আর কাউ কে বিশ্বাস করতে। আমি একবার ঠকেছি বার বার ঠকতে পারবো না। এই সব ভালোবাসা টালোবাসা বলে কিছু হয় না।

কথা টা শুনতেই মেহুলের বুকের ভিতর আতকে উঠে। রিফা যে ভুল করেছে মেহুলও সেই একি ভুল করেছে। দুই জনই একই মানুষ কে ভালোবেসেছে। আর দুইজনই ঠকেছে।
মেহুল রিফার কাছে গিয়ে কাধে হাত দিতেই রিফা পেছনে তাকায়,

অতঃপর বলে,
আপনি আর ফোন দিবেন না।
বলেই ফোন কেটে মেহুলের হাত ধরে বলে,

-আরে ভাবী তুমি এখন এখানে? এসো না বসো।
– রিফা!
– হ্যাঁ ভাবী
-যদি কিছু মনে না করো তাহলে একটা কথা জিজ্ঞাসা করি?
-আরে কি বলছো? আমি আবার কি মনে করবো? বলো না কি বলবে। তোমার যা ইচ্ছা তুমি জিজ্ঞাসা করতে পারো। এতে পারমিশন নিচ্ছো কেন তুমি তো আমার বড় বোনের মত ( মেহুলের গলা জড়িয়ে )
-কে ফোন করেছিলো? যাকে তুমি ফোন করতে বারণ করছো?

রিফা মেহুলের কাছ থেকে একটু দূরে সরে গিয়ে বলে,
-আজকে নয় ভাবী। অন্য একদিন বলবো। ( গম্ভীর স্বরে)

মেহুল কিছু বলতে যাবেই তার আগে রিফা আবারও বলে,

– তুমি এখন আমার ঘরে কি করছো? হ্যাঁ আমার ভাই টা তোমার জন্য ছুটে এসেছে তুমি তার কাছে না গিয়ে আম্র কাছে এসেছো গল্প করতে?

মেহুল কিছু বলবে তার আগেই রিফা মেহুলের হাত ধরে টানতে টানতে রিয়ানের রুমের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আর মেহুল পিছনে পিছনে হেটে যাচ্ছে আর হাসছে রিফার এমন কান্ডে। মেয়ে বড্ড ছেলে মানুষ। হাসি খুশি মনের। সবার সাথে খুব সহজেই মিশে যায়।

এদিকে রোজ আবারও কফি নিয়ে যায় রিয়ানের রুমে। রোজ, রিফা আর মেহুল প্রায় এক সাথেই রুমে প্রবেশ করে। রুমে ঢুকে দেখে রিয়ান ল্যাপটপে কি জানি করছে। রিফা রিয়ান কে উদ্দেশ্য করে বলে,

এই নাও তোমার বউ কে রেখে গেলাম। পায়ে শিকল দিয়ে বেধে রাখো। যেন তোমার কাছ থেকে আর পালাতে না পারে।

রিফার কথা ল্যাপটপের দিক থেকে মেহুলের দিকে তাকায় অতঃপর আবারও ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে বলে,

– পায়ের শিকল দিয়ে বাধলে কি মন পাওয়া যায়? মনের শিকল দিয়ে বাধতে হবে বুঝলি?

-তাই ই বাধো না😁

এমন সময় রোজ কফি দিয়ে চলে যায়। রোজের পিছু পিছু রিফাও চলে যায় আর যাওয়ার আগে মেহুলের কানে কানে বলে যায়

– এইবার তোমরা রোমান্স করো হিহিহি

মেহুল একটা চড় উচু করে বলে একটা মাইর দিবো। দুষ্টু মেয়ে

রিফা আর রোজ হাসতে হাসতে চলে যায়। মেহুল এসের রিয়ানের দিকে কফিএ মগ টা এগিয়ে দেয়। রিয়ান ল্যাপটপ টা রেখে বিছানা থেকে নেমে দাড়ায়। এর পর দরজা ট লাগিয়ে মেহুলের কাছে এগোতে থাকে,
.
.
.
.
.

#চলবে