#তারে_ভালোবাসি_বলে
#পর্বঃসূচনা
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ
— অয়ন কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমায়? প্লিজ ছাড়ো আমার হাত। অয়ন ব্যথা লাগছে। প্লিজ…
* অয়ন ঈশার কোনো কথাই শুনছে না। ঈশার ইচ্ছের বিরুদ্ধে তার হাত শক্ত করে চেপে ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে অয়ন। অয়নের এমন অদ্ভূত কান্ড দেখে পুরো ক্লাসের সবাই অবাক হয়ে যায়। ঈশার কয়েক জন বান্ধবী তাদের পিছন পিছন আসছে। অয়ন ঈশাকে ক্যাম্পাসের বাহিরে নিয়ে এসে ওর হাত ছেড়ে দেয়। ঈশার হাত প্রচন্ড লাল হয়ে গেছে। চোখের কোনে জল চলে এসেছে প্রায়। ঈশার অয়নের দিকে তাকিয়ে আছে। অয়নের সুদর্শন চেহারাটা রক্তবর্ণ ধারণ করেছে। কয়ন এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। কি করে শুরু করবে অয়ন? বুঝে উঠতে পারছে না। ঈশা অয়নকে উদ্দেশ্য করে বলল
— অয়ন আর ইউ ম্যাড? এরকম ভাবে আমাকে এখানে কেনো নিয়ে আসলে তুমি? সমস্যা কি তোমার?
— চুপ চাপ দাঁড়িয়ে থাক তুই। এখানে কেনো এনেছি তা তোকে বোঝাচ্ছি। একটু অপেক্ষা কর তুই।
অয়নের মুখে তুই শব্দটা শুনে ঈশা খানেক টা অবাক হলো। এই প্রথম অয়ন তাকে তুই তোকারি করে কথা বলছে। ঈশা একটু দম ছেড়ে বলল
— তুমি আমাকে তুই করে বলছো!
— হ্যাঁ বলছি। কেনো কি করবি তুই? এই সম্পর্ক শেষ করে দিবি? ওয়েট
অয়নের কথা শেষ না হতেই দিব্ব এসে হাজির। দিব্বর উপস্থিতি ঈশার ভালো লাগলো না। ঈশা দিব্বকে দেখে বেশ আঁচ করতে পারছে এরপর কি হবে। ঈশা দিব্বর দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে ঈশা মিনতি করছে দিব্বর নিকট। ঈশার পানে তাকিয়ে দিব্ব বাঁকা হাঁসি দিলো। ঈশার কিছুই করার নেই। মনে প্রাণে শুধু ঈশা এটাই প্রার্থনা করছে যেনো সব কিছু ঠিক হয়ে যায়। অয়ন ঈশাকে একটু শান্ত গলায় বলল
— ঈশা তুমি তো দিব্বকে চিনো তাই না?
— হুম
— এখন সত্যি করে বলো দিব্বো তোমার কি হয়? কি সম্পর্ক তোমাদের মাঝে?
— কিছু না। অয়ন আমার কথা শোনো তুমি…
অয়ন ঈশাকে সম্পূর্ণ কথা বলতে দিলো না। অয়ন ঈশার বাহু জোড়া চেপে ধরে। ঈশারা মুখের কাছে মুখ নিয়ে অয়ন রাগন্নিত কন্ঠে বলল
— চুপ। একদম চুপ। যা শোনার তা আমি অনেক আগেই শুনেছি। আজ শুধু দিব্ব বলবে আর তুই শুনবি।
অয়ন ঈশার বাহু জোড়া ছেড়ে দিয়ে দিব্বর দিকে রাগি লুক নিয়ে বলল
— এই এখন কেনো চুপ তুই? বলছিস না কেনো তোদের একান্তের আলাপ আলোচনা। বল দেখছিস না ঈশা ম্যাম বার বার ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলছে
— অঅয়ন ভাইয়া আসলে আমার এসব কথা বলতে!!
দিব্বর কথায় উপস্থিত সবার মনে তৈরি করলো কৌতুহল। কি এমন কথা ঈশা দিব্বকে একান্তে বলেছে? যা দিব্ব সবার সামনে বলতে ইতস্তত বোধ করছে! অয়ন আর ঈশার সম্পর্কের বিষয়ে জানেনা এমন লোক ভার্সিটিতে খুব কম আছে। সবাই তাকিয়ে আছে দিব্বর মুখের দিকে। অয়ন কর্কশ গলায় বলল
— এখানে কোনো নাটক হচ্ছেনা দিব্ব। তোকে কিছু জ্বিগাসা করেছি। উত্তর দে
— ভাইয়া ঈশার সাথে আমার সম্পর্ক আছে। তবে এটা কোনো ভালোবাসার সম্পর্ক নয়। আমাদের মাঝে আছে কিছু চাওয়া পাওয়ার সম্পর্ক। আমরা দুজন প্রায় সময়ই নিজেদের ইচ্ছামত শারীরিক…
— থাম। আর কিছু বলিস না তুই।
অয়ন ঈশার দিকে তাকিয়ে আছে। অয়নের চোখ জোড়া জানান দিচ্ছে তার মনের মধ্যে কি ঝড় চলছে। ঈশা দিব্বর দিকে এগিয়ে আসতে যাবে এমন সময় অয়ন চিৎকার করে ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলে
— যাস্ট স্টপ মিস ঈশা চৌধুরী। দাঁড়ান এখানে আমার কথা শেষ হয়নি এখনও।
ঈশা অয়নের দিকে ছলছল চোখে তাকিয়ে বলল
— অয়ন তুমি আমার কথা বিশ্বাস না করে এই রাস্তার ছেলের পক্ষে কথা বলছো। ওর কথা বিশ্বাস করছো।
— হ্যাঁ করছি। কারন ও প্রমান করে দিয়েছে। আপনার আর ওর অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি গুলো এখন আমার কাছে আছে।
— অয়ন তুমি যা দেখেছো তা সম্পূর্ণ…
— ঠাসসসসস, ঠাসসসসস আর এটা কথাও না। আমি যা দেখেছি তা সত্যি। দিব্ব যদি রাস্তার ছেলে হয়। তবে আমার মতে তুমি ওর থেকে কোনো অংশে কম না। লজ্জা লাগছে এই ভেবে যে আমি তোমার মতো একজনে এখনও ভালোবাসি। ছিঃ ঈশা কেনো করলে এমন? একটু অপেক্ষা করতে পারলে না আমার জন্য? তোমার যখন এতোই ইচ্ছে ছিলো তবে আমায় বলতে। আমি ব্যবস্থা করতাম। কিন্তু না। তুমি কি করলে দিব্বর সাথে। ছিঃ
ঈশা মাথা নিচু করে নিজের চোখের জল ফেলছে। কি করবে সে? এই চোখের জল ছাড়া আর কি করার আছে তার? অবাক হচ্ছে ঈশা এই ভেবে যে অয়ন একটা রাস্তার ছেলের কথা শুনে তার ভালোবাসার মানুষটির শরীরের হাত তুললো। তার থেকেও বেশি অবাক হলো ঈশা এই দেখে যে অয়ন ঈশার চরিত্রে রাস্তার মেয়ের স্টাম্পটা বসাতে দুবার ভাবলো না। অয়ন ঈশার দিকে দৃষ্টিপাত করলো না। অয়ন ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে গেলো। ঈশা এখনও পাথরের মতো দাঁড়িয়ে আছে। তার ভিতর কোনো পরিবর্তন লক্ষ করা যাচ্ছে না। মিনিট খানেক যেতেই ঈশার ক্লোজ বান্ধবী মিলি ঈশার কাছে আসে। মিলি ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলল
— ঈশা এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? দেখছিস না লোকজন হাসা হাসি করতে তোকে নিয়ে। আর কত লোক হাসাবি তুই? চল বাড়ি যাই
কথাটা বলতেই ঈশার হাত ধরে মিলি এগিয়ে যেতে লাগলো। ঈশা ও মিলি দুজনি নিশ্চুপ। সকল নিরবতা ভেঙ্গে ঈশা মিলিকে বলল
— আচ্ছা মিলি আমি কি এতোটাই খারাপ একটা মেয়ে যে কিনা যাকে তাকেই কাছে পেতে চাইবো! আমার চরিত্র কি এতোটাই খারাপ?
— দেখ ঈশা এই সবের কোনো উত্তর আমি দিতে পারবো না।
— কেনো পারবি না?
— দেখ চোখ মুছে ফেল। অয়ন ভাইয়ার কথায় মনে কষ্ট নিস না। পুরুষ মানুষ। একতরফা বিচার করাই ওদের ধর্ম
— না। মিলি আমি কারো কথায় কষ্ট পাইনি। কষ্ট পেয়েছি শুধু মাত্র অয়নের কথায়্। ও আমার কথা বিশ্বাস করলো না। এমনকি আমার কোনো কথা পর্যন্ত শুনলো না। ও আমায় সবার সামনে চড় মারলো। আমি কি ভূল করেছি? ঐ দিব্বকে তো আমি ভালো করে চিনি না পর্যন্ত।
— ঈশা অয়ন ভাইয়ার কাছে তোদের আপত্তি কর ছবি আছে। এসব দেখার পর কি কারো মাথা ঠিক থাকে?
— মানে? যে ভূল আমি করিনি তার ছবি কি করে হয়?
— দেখ ঈশা আমায় তুই বিশ্বাস করে বলতে পারিস সব কথা। আমার জানা মতে তুই এতো নিচে নামতে পারিস না। তবে মানুষ মাত্রই ভুল। আমরা কেউ ভূলের উর্ধ্বে না। তাই বলছি অয়ন ভাইয়ার কাছে ক্ষমা চেয়ে নে। দেখ সম্পর্কটা ঠিক হয় কিনা।
— ওয়াট?
মিলির কথা শুনে ঈশার চোখ জোড়া বড় হয়ে গেলো। তার মানে মিলিও দিব্বর কথা বিশ্বাস করেছে। ঈশা মিলিকে বলল
— তুইও অয়নের মতো আমায় ভূল বুঝেছিস! আরে আমি আর তোকে কি বলবো। যার সাথে জীবনের বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছি। সেই মানুষটি আমায় বিশ্বাস করলো না। তুই আর কি করবি?
— দেখ ঈশা আমি তোকে বিশ্বাস করি কিন্তু…
— থাক আর বলতে হবে না মিলি। আমার সবটা বোঝা হয়ে গেছে। আমি আসছি। আর কারো সহানুভূতি দেখানোর প্রয়োজন নেই।
✒️ ঈশা একটা রিক্সা নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। চোখ থেকে টপটপ করে পরছে কষ্টের নোনা জল। বুকের মধ্যে একটা ওজন অনুভব করছে ঈশা। মনে হচ্ছে কেউ তার কলিজায় আঘাত করেছে। অসহ্য যন্ত্রণা। ঈশা ভাবছে দিব্ব এতোটা নিচে কি করে নামতে পারলো? সামান্য ভালোবাসা প্রত্যাক্ষান করায় এতো বড় সাজা তাকে পেতে হলো! কোন মুখ নিয়ে দাঁড়াবে সে? অয়ন সারা জীবনের জন্য তাকে ছোট করে দেখবে। না আর কখনও অয়নের সামনে যাবো না আমি। অনেক দূরে থাকবো ওর থেকে। যে আমায় ভালোবাসে বিশ্বাস করতে পারবে না তাকে আর কি বলবো? ঈশা নিজের বাসায় চলে আসে
* ভার্সিটি থেকে সোজা অয়ন চলে আসে নিজের বাসায়। ভিশন কষ্ট হচ্ছে অয়নের। এই প্রথম অয়ন ঈশাকে অপমান করলো। কিন্তু কি করার ছিলো আর? ঈশা আমার বিশ্বাস ভেঙ্গে দিয়েছে। আমি কি করে ওকে ক্ষমা করতাম? যদি ও নিজের ভূল স্বীকার করে নিতো। তা হলে ভেবে দেখতাম। কিন্তু না। ঈশা নিরব ছিলো। তার মানে এসবের জন্য ঈশা দায়ি। আমাকে ঠকিয়েছে ঈশা। কি দোষ ছিলো আমার? একটু ভালোই তো বাসতাম তাকে। সব বিশ্বাস, ভালোবাসা, ভরসা এক মূহুর্তে শেষ করে দিলো। হায়রে মানুষ।
অয়ন আনমনে কথা গুলো ভাবছে এমন সময় অয়নের ফোনটা বেজে উঠলো। অয়ন ফোনটা হাতে নিতেই দেখতে পেলো ইফতির কল এসেছে। অয়ন কলটা পিক করলো
— হ্যালো অয়ন।
— হুম, বল
— দিব্বকে ধরে এনেছি আমরা। এখন কি করবো বল!
— উফফফফ গড। ওকে কোলে নিয়ে নাচাগানা কর। ইডিয়েট। ওকে ইচ্ছামত অত্যাচার কর। ততক্ষন অত্যাচার করতে থাক যতক্ষন পর্যন্ত আমি না আসি।
— ওকে
* অয়ন এক গ্লাস পানি খেয়ে নিলো। আর বলল
— যার জন্য আমি ভালোবাসা হারিয়েছি। তার কোনো অধিকার নেই ভালোবাসা পাওয়ার। দিব্ব আজ তোকে কে বাঁচাতে আসে আমি তা দেখবো।
✒️ অয়ন গাড়ি নিয়ে তারাতাড়ি বাসা থেকে বেরিয়ে গেলো। দিব্বকে ক্লাবে আটকে রাখা হয়েছে। অয়ন ক্লাবে চলে আসে। ক্লাবে এই সময়টাতে কেউ থাকে না। অয়ন ক্লাবের সামনে এসে গাড়ি পার্ক করে। গাড়ি থেকে নামতেই অয়ন অবাক হয়ে যায়। অয়নের এখানে আসার আগেই………………
#চলবে………………