তারে ভালোবাসি বলে পর্ব-০২

0
597

#তারে_ভালোবাসি_বলে
#পর্বঃ০২
#লেখকঃআয়ান_আহম্মেদ_শুভ

অয়ন গাড়ি থেকে নামতেই দেখতে পেলো ঈশা দাঁড়িয়ে আছে। অয়ন ঈশার বাহু জোড়া চেপে ধরে চিৎকার করে বলতে লাগলো

— এখানে কেনো তুই?

— অয়ন আমার হাত ছাড়ো।

— কেনো? আমি তোর হাত ধরলে অসহ্য যন্ত্রণা হয়! আমি তোকে ছুলেই তোর ভালো লাগে না। আর দিব্বো তোকে টাচ করলে খুব আনন্দ হয়।

— মুখ সামলে কথা বলো অয়ন।

অয়ন ঈশার মুখ চেপে ধরে চোখের উপর চোখ রেখে বিরবির করে বলছে

— চুপ। কোনো কথা তুই বলবি না। আমি নিজের চোখে দেখেছি দিব্ব আর তোর প্রেম লিলা। কোথায় কোথায় টাচ করেছে দিব্ব তোকে? ঘাড়ে, কোমরে, পেটে, আর কোথায়? বল না আর কোথায়? না জানি কোথায় কোথায় ছুঁয়েছে দিব্ব। আমি তোকে ছুঁতে পারিনি বলে ওর কাছে গিয়েছিস তুই? বল উত্তর চাই আমার।

ঈশা নিশ্চুপ। অয়নের মুখ থেকে বেরিয়ে আশা প্রতিটা ঘৃণ্য শব্দ ঈশার বুকে এসে বিঁধছে। অয়নের এক ভিন্ন রূপ আবিষ্কার করছে ঈশা। ঈশা চোখ জোড়া বন্ধ করে আছে। আঁখি বেয়ে পরছে নোনা জল। অয়ন একটু থেমে আবার বলতে লাগলো

— এতো বছরের ভালোবাসার সম্পর্ক এক মিনিটের মধ্যে মিথ্যে প্রমান করেছিস তুই। শারীরিক চাওয়া পূরণ করতে আমাকে ঠকিয়েছিস তুই। তোর মতো একটা রা…..

— ঠাসসসসসসসস, ঠাসসসসসসসস

অয়নকে আর কিছু বলার সুযোগ ঈশা দিলো না। অয়নের সুদর্শন চেহারার মধ্যে বসিয়ে দিলো নিজের হাতের পাঁচ আঙুলের ছাপ। অয়ন মাথাটা এক পাশ হেলিয়ে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে। ঈশা কাঁন্না ভেজা কন্ঠে বলতে লাগলো

— একটা মেয়েকে আর কত ছোট তুই করবি? ভূলে যাস না আমারও সহ্যের সীমা আছে। আমিও একটা মানুষ।

* অয়ন নিশ্চুপ হয়ে আছে। ঈশা অয়নের দিকে একটিবারের জন্যও দৃষ্টিপাত করছে না। কিছু সময় যেতেই অয়ন ঈশাকে উদ্দেশ্য করে বলল

— এখান থেকে চলে যাও তুমি। আর হ্যাঁ আমি খারাপ। খুব খারাপ আমি। নিজের আপন জনকে অন্যের সাথে দেখার পর সহ্য আমারও হয়নি। তাই রাগের মাথায়…. ক্ষমা করে দিও।

অয়ন কথাটা বলতেই চলে যেতে লাগলো। ঈশা ভিশন অবাক হয়ে গেলো অয়নের কথা শুনে। ঈশা এটা আশা করেনি। ঈশা ভাবছে এখন যদি অয়ন এখান থেকে চলে যায় তবে সারা জীবনের জন্য অয়নের চোখে তাকে একটা রাস্তার মেয়ে হিসেবে থাকতে হবে। আজ অয়নের প্রত্যেকটা অপমানের জবাব দিতে হবে তাকে। অয়নের মন থেকে এই ভূল বোঝাটা সম্পূর্ন রূপে দূর করতে হবে। ঈশা পিছন থেকে দৌড়ে এসে অয়নের হাত ধরে ফেলল। অয়ন পিছন ফিরে তাকাতেই ঈশা বলতে লাগলো

— চলে যাচ্ছো কেনো? ভূলে গেলে এখানে তুমি আমার সাথে না অন্য কারো সাথে দেখা করতে এসেছো।

— আমি কিছু ভূলে যাই না। সেটা তুমি ভালো করেই জানো। ইচ্ছে করছে না আর কারো সাথে দেখা করতে। তাই চলে যাচ্ছি।

— তাই না। ভয় পাচ্ছো? সত্যিটার থেকে পালিয়ে যাচ্ছো তুমি!

* ঈশার কথা শুনে অয়নের আবার রাগ উঠে গেলো। অয়ন নিজের বা হাত থেকে হ্যান্ড ওয়াচ টা খুলে ফেলে দিলো। ফুল হাতা কালো শার্টটের হাতাটা উপরে তুলতে তুলতে অয়ন ঈশার দিকে একটু ঝুঁকে বললো

— সত্যিটা আমি জানি। এখন শুধু সেই সত্যির শাস্তি দেওয়া বাকি।

অয়ন ক্লাবের ভিতরে চলে গেলো। ঈশাও অয়নের পিছনে পিছনে যায়। অয়ন আসতেই রিফাত, রিপ, ও তার বেশ কিছু কাছের বন্ধু অয়নের কাছে চলে আসে। অয়ন রিফাতকে উদ্দেশ্য করে বলল

— কি বলেছে এই রাস্কেলটা?

— অয়ন অনেক বড় ভূল করে ফেলেছিস তুই। ঈশা আসলে…..

— থাম, থাম। ওর বিষয়ে কিছু বলিস না। কি বলেছে দিব্ব সেটা বল

— আসলে দিব্বর ছবি গুলো মিথ্যে ছিলো। ও তোদের মাঝে দূরত্ব তৈরি করতে চেয়েছিলো।সেই জন্যই এসব….

* অয়ন রিফাতের সম্পূর্ণ কথা শুনলো না। অয়ন দিব্বর কাছে গিয়ে ওকে কলার ধরে ফ্লোর থেকে তুললো। অয়নের চোখ দিয়ে মনে হচ্ছে রক্ত বেরিয়ে যাবে। প্রচন্ড রেগে গেছে অয়ন। অয়ন দিব্বকে উদ্দেশ্য করে বলল

— জানোয়ার তুই এতো নিচে কি করে নামতে পারলি? দুনিয়াতে কি মেয়ের অভাব পরেছে নাকি! এই দুনিয়া জানে আমি ঈশাকে ভালোবাসি। আর ওকে আমার চাই। আমাদের মাঝে যে আসবে তার অবস্থা কি হতে পারে তার উদাহরন তুই হবি।

অয়ন স্টামটা হাতে নিতেই কেউ একজন পিছন থেকে অয়নকে আটকালো। অয়ন পিছন ফিরে তাকাতেই দেখতে পেলো ঈশা। ঈশা অয়নকে রাগি কন্ঠে বলছে

— এসব কি?

— দেখতে পাচ্ছো না কি? এখান থেকে যাও এখন।

— না। তুমি ওকে এখান থেকে যেতে দাও। আর ওকে কেনো আঘাত করছো তুমি? কি ভূল করেছে ও?

— কি ভূল করেছে মানে? ও আমার চোখে তোমাকে ছোট করতে চেয়েছে। এটাকি ভূল নয়?

— না ভূল নয়। আজ দিব্ব আমাকে অনেক সাহায্য করেছে। কি সাহায্য জানো? সঠিক মানুষ চিনতে সাহায্য করেছে। আজ দিব্ব যা করেছে তারপর তুমি আমায় যা যা বলেছো তা আমার মনে সারা জীবন থাকবে। তোমার আমার প্রতি বিশ্বাস নাই। আজ দিব্ব চেষ্টা করেছে কাল অন্য কেউ চেষ্টা করবে। আর তুমি বরাবরের মতো তাদেরকে বিশ্বাস করবে আর আমায়, থাক নাই বা বললাম। আসছি আমি

ঈশা ক্লাব থেকে বেরিয়ে গেলো। অয়ন থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। অয়ন ভাবছে সত্যি তো আমি একটি বার ও ঈশার কথা শুনিনি। ওকে বিশ্বাস করতে পারিনি। আমি যা দেখেছি তাই বিশ্বাস করে ফেলেছি। আর কি করতাম আমি? পিক গুলো দেখার পর আর দিব্বর কথা গুলো শোনার পরে সব কিছু এলোমেলো হয়ে গিয়েছিলো আমার। রাগের মাথায় অনেক বাজে কথা বলে ফেলেছি আমি। না ঈশাকে আটকাতে হবে।

অয়ন কথা গুলো ভাবতেই ক্লাব থেকে দৌড়ে বেরিয়ে গেলো। ঈশা বেশি দূর যেতে পারেনি। অয়ন ক্লাব থেকে বেরিয়ে দেখতে পেলো ঈশা একটা রিক্সা নিয়েছে। ঈশা যেই মুহুর্তে রিক্সায় উঠতে যাবে। ঠিক সেই সময় অয়ন এসে ঈশাকে আটকায়। অয়ন ঈশার হাত ধরে আছে। ঈশা চরম বিরক্ত নিয়ে বলল

— এসব কি?

— আমিও যাবো?

— তো যাও। আমার হাত কেনো ধরেছো। আমি রাস্তার মেয়ে। আমার পাশে তোমায় মানায় না।

— হুম। আমি ঐ পিক গুলো দেখে নিজের মাথা ঠান্ডা রাখতে পারিনি। তাই..

— হয়েছে! অয়ন আর কত ড্রামা করবে তুমি? এসব ড্রামা করার কোনো মানে হয় না।

— সত্যি তো?

— হুম

— আচ্ছা যাও। আর আটকাব না

— হুম

অয়ন ঈশাকে ছেড়ে দিলো। ঈশা রিক্সায় উঠলো। অয়ন চুপ চাপ নিজের গাড়ির দিকে এগিয়ে আসে। খারাপ লাগছে আজ। ঈশাকে এভাবে আঘাত আমি না করলেও পারতাম। কিন্তু কি করবো? ওকে ভালোবাসি। আর ওকে আমি কারো সাথে সহ্য করতে পারি না। তাই তো রেগে যাই। পাগলিটা একটুও বুঝতে চায়‌ না।

অয়ন আনমনে গাড়ি ড্রাইভ করতে থাকলো। ঈশাকে বাজে উক্তি করার জন্য নিজের কাছে নিজেকে ছোট মনে হচ্ছে আমার। একি করলাম আমি। ঈশা কি আমায় ক্ষমা করে দিবে? ও তো পারতো জোর করে আমাকে সবটা বলে দিতে। নিরব থেকেই তো আমার মনের সন্দেহকে বিশ্বাসে পরিনত করলো। তবে যাই হোক ক্ষমা করলে করুক আর না করলে নাই। আমি ওর পিছু কোনো দিন ছাড়বো না। বিচ্ছুর মতো পরে থাকবো ওর পিছে এই পিচ্ছু। দেখি কত দিন আমার থেকে দূরে থাকতে পারে। অয়ন কথা গুলো ভাবতেই আনমনে হেসে উঠলো। অয়ন কিছু দূর গাড়ি ড্রাইভ করতেই আচমকা অয়নের গাড়ির সামনে একটা মেয়ে চলে আসে। অয়ন হার্ড ব্রেক করলো। তবুও লাভ হলো। মেয়েটিকে সাজোরে ধাক্কা মারে অয়নের গাড়ি। গাড়ি থেকে কিছুটা দূরে ছিটকে পরে মেয়েটার দেহ।
অয়ন তারাতাড়ি গাড়ি থেকে নেমে মেয়েটার কাছে ছুটে আসে। মেয়েটির দিকে তাকাতেই অয়ন বেশ চমকে উঠে। অয়ন………………….

#চলবে……………….