গল্গ #তার জন্য
পর্ব #২
লেখিকা #আফিফা আনতারা হুমায়রা
পরদিন সকালবেলা,,
আনতারা:আয়ূশ উঠেন জলদি আপনার যাওয়ার সময় হয়ে যাচ্ছ।
আয়ূশ :হু উঠতেছিত তো।১০ মিনিট সময় দাও আমি ৩০ মিনিটের মধ্যে উঠতেছি(ঘুমঘুম কন্ঠে)।
আনতারা:আপনি উঠবেন না আমি তেলাপোকা ছেড়ে দিব আপনার গায়ে।
তেলাপোকার কথা শুনে আয়ূশ পড়িমারি করে উঠে গেল।
আয়ূশ :ভয় দেখাও কেন..?
ছোট বাচ্চাটা ভয় পায়না বুঝি।
আনতারা:হয়েছে আর ঢং করতে হবে না। উঠেন উঠে নামায পড়ে নাস্তা করে রেডি হন আপনার বাসের সময় হয়ে যাচ্ছে।
আয়ূশ নামায পড়ে নাস্তা করে রেডি হয়ে গেল যাওয়ার জন্য।আনতারা রাতেই তার ব্যাগ গুছিয়ে রেখেছিল।
আনতারা:ভালোভাবে যাবেন,ঠিকমত খাওয়া -দাওয়া করবে,নামায আর কুরআন তেলাওয়াত করবেন ঠিকমত।সময় পেলে জামাতে নামায পড়বেন।
আর হ্যাঁ মনে করে সফরের সময় যে দোয়াগুলি পড়তে হয় পড়বেন কেমন।
আয়ূশ :ওকে রানী সাহেবা।আপনার আদেশ শিরোধার্য।
আয়ূশ তার গন্তব্য স্হলে পৌঁছে আনতারাকে ফোন দিয়ে জানায় সে ভালোভাবে পৌঁছেছে।
কাজ থেকে হোটেলে ফেরার সময় একটা পরিচিত কন্ঠ শুনে আয়ূশ থমকে যায়।
সে:Assalamuyalaikum কেমন আসেন..?
আয়ূশ :Wyalaikumussalam… Alhamdulillah ভালো তুমি আয়ূশী…?
(হু ঠিক ধরেছেন এটা ভিলেনি আয়ূশীটা)
আয়ূশী :আমিও ভালো আছি।আনতারা কেমন আছে..?
আয়ূশ:Alhamdulillah সেও ভালো আছে।তা তুমি এখানে যে।
আয়ূশী:ঘুরতে এসেছি।আপনি..?
আয়ূশ:আমি অফিসের কাজে এসেছি।
টুকটাক তাদের মাধ্যে আরও কিছু কথা হয়।কথায় কথায় জানতে পারে তারা এক হোটেলে তো উঠেছেই তাদের রুম ও পাশাপাশি।
কাজের জন্য আয়ূশকে আরও কিছুদিন থাকতে হবে।আয়ূশী ও থেকে যায় সে আরো ঘুরবে বলে।এ সময় যখন আয়ূশ অফিস থেকে ফিরে তখনি আয়ূশী এসে হাজির হয়।আয়ূশ প্রথম প্রথম বিরক্ত হলেও পরে আর হয়না।কারণ আয়ূশী আনতারার গল্পই বেশি করত।সে কেমন ছিল,কি করত,তাকে সবাই কত ভালোবাসে এইসব।
কিন্তু সময় যত গড়ায় তাদের গল্গ থেকে ততই আনতারার বিষয়ে কথা বলা কমে যায়।
কাজ শেষ করে আয়ূশ বাসায় আসে।
ইদানিং আনতারা খেয়াল করে আয়ূশ প্রায় অনেক রাত পর্যন্ত ফোনে কথা বলে।তার প্রতি সে উদাসীন।এর কারন আনতারা খুজে পায়না।তাই সে ভাবে আয়ূশ কে বলবে কি হয়েছে।
আনতারা: আয়ুশ কি হয়েছে আপনার।অনেক রাত পর্যন্ত ফোনে কথা বলেন।আমার প্রতিও খুব উদাসীন ।নামাযও আর এখন ঠিকমত পড়েননা।আগের আপনি আর এখনকার আপনির মাঝে অনেক তফাত।
আয়ূশ:আনতারা, আমার এখন কাজের খুব চাপ তাই নামাযের সময় পাইনা। আর তুমি কি আমাকে সন্দেহ করছ,,আমি ফোনে কাজের কথা বলি আজাইড়া পেচাল পাড়িনা।
আনতারা:কাজের চাপ থাকলেও তো নামাযটা….
কথাটা সম্পূর্ণ করার আগেই।
আয়ূশ:দেখ আনতারা তোমার এসব নীতি কথা বাদ দাও প্লিজ, আর এখান থেকে যাও বলে আয়ূশ আরও কিছু কড়া কথা শুনিয়ে দিল আনতারাকে।
আনতারার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে।খুব কষ্ট হচ্ছে তার।এর আগে আয়ূশ তার সাথে এভাবে কথা বলেনি।
আনতারা ভাবে হয়ত আসলেই কাজের অনেক চাপ তাই হয়ত এভাবে বলছে।পরে সব ঠিক হয়ে যাবে।নিজের মনকে এই বলে শান্তনা দেয় সে।কিন্ত আসলেই কি সব ঠিক হবে।
এর মাঝে চলে যায় অনেক দিন।আয়ূশ এখন আগের থেকেও বেশি খারাপ ব্যবহার করে আনতারার সাথে।আনতারাও এসবে মানিয়ে নেয় নিজেকে।কারন সে আয়ূশকে ছাড়তে পারবে ভিশন ভালোবাসে যে তাকে।
একদিন বাসায় এসে আয়ূশ অবাক।তাদের রুমটা অনেক সুন্দর করে সাজান।কিন্তু আনতারাকে দেখতে পাচ্ছে না সে।কিছুক্ষণ পর আনতারা রুমে আসে।খুব সুন্দর করে সেজেছে সে।চোখের কাজল তার মায়াময় মুখটাকে আরও মায়াবী করে তুলেছে।
আনতারা এসেই একটা কাগজ আয়ূশকে দিল।কাগজটা দেখে আয়ূশ খুশি হবে কিনা বুঝতে পারতেছেনা।কাগজটা আনতারার প্রেগন্যানসি রিপোর্ট।
রিপোর্ট টা পড়ে রেখে দিল আয়ূশ।আর কিছু না বলেই ঘুমাতে চলে যায়।
আনতারা ভেবেছিল আয়ূশ এই খবরটা পেয়ে খুব খুশি হবে আর তাদের মধ্যকার সব দূরত্ব চলে যাবে কিন্তু কিছুই হলোনা।আনতারা খুব ভেঙে পড়ে আয়ূশের এই কাজে।কাজ শেষ করে আনতারও ঘুমাতে যায়।
গভীর রাত,,
আয়ূশ ফোনে কথা বলতেছে।
আয়ূশ:এখন আমি কি করব আয়ূশী..?
আয়ূশী:কি করবা মানে বাচ্চটা নষ্ট করে ফেল আর যত দ্রুত পার আনতারাকে ডিভোর্স দাও আর আমাকে বিয়ে করে নাও।
কিছুক্ষণ আগে আয়ূশ সব বলে আয়ূশীকে আর জানতে চায় কি করবে এখন সে।
আয়ূশ:তোমার মাথা খারাপ। কি বলছ এসব।বাচ্চাটা আমার আয়ূশী তাকে আমি মারব কিভাবে।
আয়ূশী:(কেঁদে কেঁদে)তুমি কি আমায় ভালোবাসনা আয়ূশ।দেখ আমি যা বলছি আমাদের ভালোর জন্য বলছি।আমাদের বিয়ে হলে আমরাও বেবি নিব।ও আমাদের বেবি হবে আয়ূশ।
এভাবে আরও কিছুক্ষণ ভুজুংভাজুং বুঝায় আয়ূশ কে।আর ছাগল আয়ূশও তার কথা মেনে নেয়।
এর ঘটনার কিছুদিন পর,একদিন সকাল বেলা।
আনতারা:জোরে চিৎকার করে বলে,আল্লাহ।
আনতারার চিৎকার শুনে আয়ূশ ঘর থেকে বেরিয়ে এসে দেখে আনতার ফ্লোরে পড়ে আছে আর তার চারপাশে রক্তের বন্যা।
আয়ূশ:এই আনতারা কি হয়েছে তোমার।আনতারা এই আনতারা কথা বল কথা বলনা।
আয়ূশ যখন বুঝল যে আনতারা জ্ঞান হারিয়েছে তখন দ্রুত ওকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
ডাক্তার আনতারাকে ওটিতে নিয়ে যায়।
ওটির বাইরে দাড়িয়ে পাইচারি করছে আয়ূশ।
কয়েক ঘন্টা পর আয়ুশ আর আনতারার বাবা আসে।জবের জন্য আয়ূশ আনতারাকে নিয়ে শহরে থাকে আর ওর বাবা-মা গ্রামে।
এখনও আনতারাকে বের করা হয়নি আর না কোন ডাক্তার বা নার্স বের হয়েছে এ পর্যন্ত। সময় যত গড়াচ্ছে তাদের টেনশনও ততো বাড়ছে।অনেকক্ষণ পর ডাক্তার বেরিয়ে এলেন।
আয়ূশ:ডাক্তার কি অবস্থা আমার স্ত্রীর..?
কেমন আছে ও।
ডাক্তার :আপনার স্ত্রী ভালো আছে কিন্তু…?
কিন্তু কি ডাক্তার..? আনতারা আর আয়ূশের মা এক সাথে বলে উঠলেন।
ডাক্তার :রুগী ঠিক আছে।কিন্তু বাচ্চটাকে বাঁচান সম্ভব হয়নি।
এ কথা শোনার পর সবাই হতবম্ভ হয়ে যায়।
এদিকে হাসপাতালে ঢোকার সাথে সাথে আয়ূশী কথাটা শুনতে পায় আর তার মুখে হাসি ফুটে ওঠে।