তার শহরের মায়া ২ পর্ব-১১+১২

0
704

#তার_শহরের_মায়া ২
#পার্ট_১১_১২
#Writer_Liza_moni

এই অনু গাল ফুলিয়ে বসে আছিস কেন?

ভাল্লাগে না।ঐ লোকটা আমার হাত ধরলো কেন?

সামান্য এই ব্যাপারে এত রাগ করতে হয়?

আচ্ছা বাদ দে,বাড়ি চল।
.
এটাকে বলে কপাল। 280 টাকার ফুচকা 600 টাকা পাইছি। আহা মাঝে মাঝে এরকম বাটপারি করলে দুই দিনে বড়লোক হইয়া যামু।বলেই টাকাগুলোয় চুমু খেলেন শফিক মিয়া। প্রেমে পড়লে মানুষ হাছাই বোকা অয়। ওই পোলাডা হইলো তার জলজ্যান্ত প্রমান।

ব্যাগ থেকে টাকা বের করতে করতে শফিক মিয়ার কাছে এগিয়ে আসতে লাগল অনু। অনু কে আসতে দেখে শফিক মিয়া তাড়াতাড়ি টাকাগুলো পকেটে ঢুকিয়ে ঠান্ডা তেলে কত গুলো ফুচকা ছেড়ে দিলেন।

কত টাকা জানি পাবেন আপনি?

শফিক মিয়া জোর করে হাসার চেষ্টা করে বললেন আর টাকা লাগবো না আফা।

আপনাকে আমি খুন করে ফেলবো। বলছি না আপনাকে আমি চাচা ডাকি। আপনি আমাকে আফা ডাকলে এই বার সত্যি সত্যি খুন করে ফেলবো।অনু বলে ডাকবেন। বুঝছেন?

শফিক মিয়া ঠান্ডা তেলে ফুচকা গুলো নাড়তে নাড়তে ঢোঁক গিলে বলল আইচ্ছা।

বললেন নাতো কত টাকা হলো?

আমনের টাকা তো দিয়া গেছে।

অনু ভ্রু কুঁচকে বললো কে দিয়ে গেছে?

ওই যে তখন একটা লোক দাঁড়াইয়া ছিল না এখানে বাইক লইয়া,,সে দিয়া গেছে।

অনু বেশ অবাক হলো।চিনে না জানে না একজন অপরিচিত লোক টাকা দিয়ে গেল।ব্যাপারটা ঠিক বুঝলো না সে।শফিক মিয়ার দিকে ভ্রু কুঁচকে বললো কত টাকা দিয়ে গেছে?

শফিক মিয়া ইতস্ত করে বলল 600 টাকা।

অনু যেন আকাশ থেকে পড়লো। কিহ 600 টাকা?
এতো টাকা আসছে ফুচকার দাম?

ইয়ে মানে,, না মানে,,

বাকি টাকা ফেরত দিন।

শফিক মিয়া ঢোক গিলে বললো,,ফেরত দিবো মানে?উনি আমারে বকশিশ দিছেন।

কত টাকা বকশিশ দিছে?

শফিক মিয়া ঢোঁক গিলে বলল ইয়ে মানে বিশ টাকা।

এই বয়সে মিথ্যা কথা বইলেন না চাচা।600 টাকা ফুচকার দাম আসে নাই।আপনি বাকি টাকাগুলো ফেরত দেন আমাকে। আমার তো আবার তাকে টাকা ফেরত দিতে হবে তাই না?আমি তো আর অপরিচিত কারো টাকায় ফুচকা খাইতে পারি না।

শফিক মিয়া মুখটাকে বাংলার পাঁচের মত করে পকেট থেকে আরও 320 টাকা বের করে অনুর হাতে দিল। একটু আগে দেখা তার এত স্বপ্ন এই ভাবে ভেঙে গেল আহারে সফিক চাচা।

320 টাকা ধান্দা করতে গিয়েছিলেন আল্লাহ মালুম। এমন করেন কেন চাচা? এইসব ভালো না।
বলেই অনু একটা রিকশা থামিয়ে মেসের উদ্দেশ্যে চলল।

হাতের টাকা গুলোর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,,লোকটাকে দেখলে তার গুলো ফেরত দিতে হবে। আমার থেকে যাবে আর ও 280 টাকা মোট 600 টাকা দিয়ে দিব।এমন করার কারণটা কি জানতে হবে।আমি কি বলছি নাকি যে, আমার ফুচকার দাম দিয়ে দিতে যত্তসব।
.
.
শুনলাম তুই নাকি চাকরি ছেড়ে দিয়েছিস তূর্য?

রাতে ডিনার টেবিলে বসে তূর্যর উদ্দেশ্যে কথাটা বললেন ওর বাবা। তূর্য এক গ্লাস পানি খেয়ে মুচকি হেসে বললো,,হ্যাঁ ভাল্লাগেনা ওই চাকরিটা। আর জুয়েল স্যারের মেয়ে সব সময় আঠার মতো পিছনে লেগে থাকে অসহ্য লাগে আমার।

কেন চাকরি সাধ মিটে গেছে?অনেক তো বলেছিলি সবকিছু সহ্য করে চাকরি করব, চাকরি করব। এখন কেন চলে আসলি?

শখ মিটে গেছে। এখন কিছু দিন ঘুরে ফিরে তারপর ভাইয়ার অফিসে জয়েন হয়ে যাবো।
.
.
বিছানায় বসে বসে নোটস গুলো লিখে নিচ্ছে অনু।রাত প্রায় ১১টা হবে। ঘুম আসছে না দেখে নোটস গুলো লিখে নেওয়া প্রয়োজন মনে করলো সে।কাজ ফেলে রাখার মানে হয় না।

আধঘন্টা এক নাগাড়ে লিখতে লিখতে বিরক্ত হয়ে যায় অনু। ঘুম ও এসেছে চোখে। মোটামুটি অনেক টা লিখা হয়েছে।বই খাতা ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে বিছানায়।সব কিছু অগোছালো রেখে সেই ভাবেই ঘুমিয়ে পড়লো সে।
.
.
সেই কখন থেকে তূর্যর ফোন বেজে যাচ্ছে। এই জন্য ভীষণ বিরক্ত হলো তূর্য। ইচ্ছে করেই কল রিসিভ করছে না সে।
হুমায়ূন আহমেদ এর লেখা তোমাকে বইটা আধশোয়া হয়ে বসে পড়ছিলো সে।

এত রাতে ও শান্তি দিচ্ছে না আমায়।
কেন যে অতি শখের ঠেলায় ঐ অফিসে চাকরি করতে গেছিলাম? এখন ফলস্বরূপ এই উটকো ঝামেলা ঘাড়ে চেপে বসছে।
রিং হয়ে কেটে গেল কল।সাথে সাথে আবার ও ফোন বেজে উঠলো।
বিরক্ত হয়ে কল রিসিভ করলো তূর্য।ওপাশ থেকে এনি বলে উঠলো,,
বাবু তুমি আমার কল রিসিভ করছো না কেনো? সেই কখন থেকে কল করে যাচ্ছি। আমার বুঝি কষ্ট হয় না?

তূর্য ঝাঁঝালো কন্ঠে বললো,,
দেখতেই পাচ্ছো কল রিসিভ করছি না।তার পর ও কেন এই ভাবে কল করে যাচ্ছো বলো তো?আসলে সমস্যা টা কি তোমার? আমি বলেছি না তোমাকে আমার ভালো লাগে না। তারপর ও এমন করার কারন কী এনি?

আমি তোমাকে ভালবাসি তূর্য।

তূর্য তাচ্ছিল্য হাসলো। কলেজ লাইফ থেকেই এমন অনেক শুনেছে সে।
তূর্য নরম গলায় বললো,,
এনি,,
তুমি তোমার আব্বু আম্মুর আদরের দুলালি। আমার থেকে ও অনেক ভালো ছেলে পাবা। এমন পাগলামি করে কোনো লাভ নেই। আমি তোমাকে ভালবাসি না। ভালোবাসা তো দূরের কথা,, তোমার প্রতি আমার ভালো লাগাটা ও কাজ করে না।প্লিজ আমাকে আর বিরক্ত কইরো না।

তূর্য নিজ থেকেই কল কেটে দিল। কিছু না বলতে, বলতে,, মেয়েটা অতিরিক্ত করতেছে।সবার প্রতি ফিলিংস আসে না। কেন বুঝে না এরা?যদি পৃথিবীর সবার জন্য মনের মাঝে ভালো লাগা, ভালোবাসা আসতো তাহলে দিন শেষে মানুষ কখনোই শুধু একটা মানুষের শহরের মায়ায় আটকে থেকে এত কষ্ট পেতো না।

বইটা বিছানার পাশের টেবিলে রেখে লাইট অফ করে ঘুমিয়ে পড়লো তূর্য।
.
.
আগুন রাঙ্গা সূর্যর তেজ যেনো আজ বেড়ে গেছে অনেক টা। গাড়ির হর্নের অসহ্যকর শব্দ কানে আসতেই বিরক্তরা এসে পাড়ি জমাচ্ছে অনুর চোখে মুখে।ঘেমে একাকার হয়ে গেছে। ওড়না দিয়ে মুখ মুছে হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলো বেলা ১২ টা।শরীরটা কেমন দূর্বল লাগছে। কাঠ ফাটা রোদের মধ্যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে রিকশা বা একটা সিএনজি ও খালি দেখতে পাচ্ছে না।

এখন বার লাইব্রেরীতে ও যেতে হবে। কিছু বই কেনা দরকার।হাঁটা ধরলো অনু। কিছু টা এগিয়ে গেলে রাস্তার ওপাশেই লাইব্রেরী আছে। টাকার জন্য কখনোই চিন্তা করতে হয়নি তার।যখনি প্রয়োজন পড়েছে বাবাকে কল করে জানিয়ে দিয়েছে।আর সাথে সাথেই টাকা তার বিকাশে চলে এসেছে।

রিফা কেয়া চলে গেছে তাদের প্রেমিকের সাথে।আজ আবার কেয়া আর তার প্রেমিকের সম্পর্কের এক বছর হলো।তাই সে চলে গেছে।আজ সারা বিকেল প্রেমিকের সাথে ঘুরে কাটিয়ে দিবে।

আমিই কপাল পোড়া।আজো একটা ঠিকঠাক প্রেমিক জুটলো না।
অনুর হাঁটার ধরন অগোছালো হয়ে গেছে।কোনো রকম রাস্তা পার হয়ে লাইব্রেরীর ভেতরে যেতেই জ্ঞান হারায় সে।
.
.
কিছু পড়ে যাওয়ার শব্দ পেয়ে পেছনে ফিরে তাকালো তূর্য।ফ্লোরে অনু কে পড়ে থাকতে দেখে হঠাৎ করেই এক রাশ খারাপ লাগা এসে বাসা বেঁধেছে মনে। জুঁইয়ের জন্যই কিছু বই কিনতে আসছিলো সে।

এই যে মিস,, তূর্য অনুর মাথার নিচে হাত রেখে অন্য হাত দিয়ে অনুর দু গালে হালকা চড় দিতে দিতে ডাকলো।

অনেক লোক জড়ো হয়ে গেছে সেখানে।
উনি অজ্ঞান হয়ে পড়েছেন মনে হয়।

পানি দিন তো,,
দোকান দারের উদ্দেশ্যে বললো তূর্য।তার কপালে চিন্তার ভাঁজ ফুটে উঠেছে।এই দিকে সমান তালে অনুর ফোন বেজে যাচ্ছে।

তূর্য অনুর চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে দিলেও জ্ঞান ফিরে না তার।

উনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া দরকার।

তূর্য অনু কে কোলে তুলে নিয়ে সিএনজির একজন চালকের উদ্দেশ্যে বললো,,
মামা,, সামনের যে কোনো একটা হাসপাতালে নিয়ে চলুন।
.
.
ডাক্তার অনু কে দেখে বললেন,,
শরীর অতিরিক্ত দূর্বল, আর খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো না করার ফলেই মাথা ঘুরে পড়ে গেছে। চিন্তার কিছু নেই। কিছু টেস্ট করিয়েছি। আগামীকাল সকাল দশটার দিকে এসে রিপোর্ট নিয়ে যাবেন।

শরীর বেশি দূর্বল বলে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে। বিকালের দিকে শেষ হলে বাড়িতে নিয়ে যাইয়েন।

বলেই ডাক্তার অনুর দিকে এক পলক তাকিয়ে তূর্যর দিকে বললো কে হয় উনি আপনার?

তূর্য স্পষ্ট করেই উত্তর দিলো,,

“কেউ না”

চলবে,,,, 🍁