তার শহরের মায়া পর্ব-৩১

0
569

#তার_শহরের_মায়া ২
#পার্ট_৩১
#Writer_Liza_moni

পরীক্ষা শুরু হতে আরো ২০ মিনিট সময় আছে।অনু রিক্সা থেকে নেমে ভাড়া দিয়ে ভার্সিটির ভেতরে যাবে এমন সময় তূর্য অনুর সামনে এসে হাজির।

তূর্য কে দেখে অজান্তেই ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো অনুর।

আজ তো আপনার পরীক্ষা।আজ যদি আপনার সাথে দেখা না হতো তাহলে কেমন লাগে না। আমি সেই সকাল থেকে আপনার ম্যাসের সামনে দাঁড়িয়ে ছিলাম। না আপনি বারান্দায় আসলেন আর না জানালা খুলছেন।

আপনি একটা আস্ত পাগল। পাগলামি বেড়ে যাওয়ার আগে মানসিক ডাক্তার দেখান।

আপনিই তো আমার মানসিক ডাক্তার মিস পরমানু।

লোকটা নির্ঘাত আমার পরীক্ষার বারোটা বাজাতে আসছে।এত ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর কথা কেউ বলে? কথা গুলো শুনলেই তো বুকের বাঁ পাশে ধক করে উঠে।
মনে মনে কথা গুলো বললেও অনু মুখে বলে,

দেখুন আজ থেকে আমার পরীক্ষা শুরু।আর এই পরীক্ষা চলাকালীন সময় গুলো তে আপনি আমার সামনে ও আসবেন না।

তূর্য ভ্রু কুঁচকে চোখ ছোট ছোট করে অনুর মুখের দিকে তাকিয়ে বললো,
কেন? আমি কী আপনাকে অনেক বেশি বিরক্ত করে ফেলছি? আপনি যদি একবার হ্যাঁ বলে দেন তাহলে আমি আর কখনো আপনার সামনে আসবো না কথা টা একদমই বিশ্বাস করবেন না। আপনার ভালো লাগুক আর বিরক্ত লাগুক যাই লাগে না কেন আমি আপনার পিছু ছাড়ছি না। আমার ভালোবাসা এত সস্তা না।

অনুর হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে তাড়াহুড়ো করে বললো,
এই সরুন, আমার সামনে থেকে সরুন।আর মাত্র ১০ মিনিট সময় আছে। আমার পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে।অনু দ্রুত হাঁটতে থাকে। হঠাৎ পেছনে ফিরে বললো,

পরীক্ষার পর দেখা হচ্ছে। আল্লাহ হাফেজ।

তূর্য মুচকি হেসে ডান হাত দিয়ে মাথার চুল এলোমেলো করে দিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে গেল।

জেমি তিয়াস এবং বাড়ির সবার জন্য কিছু আইটেম রান্না করে নিয়ে আসে। জেমির এমন কাজ খুব ভালো লাগলো মিসেস তৃনার।

তিনি মুচকি হেসে ডাইনিং টেবিলে খাবার সাজিয়ে দেন। তূর্য সকালে ব্রেকফাস্ট না করায় বাড়িতে এসেই মাকে তাড়া দিয়ে বললো তাকে নাস্তা দেওয়ার জন্য।

ড্রইং রুমের সোফায় জুঁই এর সাথে বসে ছিল জেমি। তূর্য জেমি কে দেখে প্রথমে চিনতে পারলো না। জুঁই এর দিকে ইশারা করে বললো,
কে এই মেয়েটা?

আরেএএ ভাইয়া এটা আমাদের হবু বড় ভাবি। জুঁই এর কথা শুনে তূর্য পা থেকে মাথা পর্যন্ত পর্যবেক্ষণ করে নিলো জেমিকে। জেমি মুচকি হেসে তূর্য কে সালাম দিলো।

আসসালামুয়ালাইকুম ভাইয়া।

ওয়ালাইকুমুস সালাম। ভাইয়া বলার দরকার নেই। আমি আপনার ছোট দেবর। তূর্য বলে ডাকলেই হবে।

আপনি তো আমার বয়সে বড় হবেন।

তাতে কি? সম্পর্কে তো আর না।
বলেই তূর্য নাস্তা করার জন্য চলে গেল।

জেমি আজ শালীন পোশাক পড়েই এসেছে।এই দেশের মানুষের সাথে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে সে।গোলাপি রঙের চুরিদারে বেশ মানিয়েছে তাকে।

জেমি আশে পাশে তাকিয়ে তিয়াস কে খুঁজছে। কিন্তু এই সময় তিয়াস বাড়িতে থাকে না। অফিসে থাকে।এই কয়েক দিন অফিসে কাজের চাপ একটু বেশিই। জেমি গত কাল রাতে এত করে বললো আজকের দিনটা ছুটি নেওয়ার জন্য কিন্তু অফিস থেকে ছুটি পেল না।
তাই না চাওয়া স্বত্তেও যেতে হয়েছে।

ভাবি তুমি এখানে বসে থাকতে থাকতে বোর হচ্ছো নিশ্চিই?চলো তোমাকে তিয়াস ভাইয়ার রুমটা ঘুরিয়ে দেখাই।সাথে আমাদের বাড়িটা ও।

জুঁই এর কথায় সায় দিল জেমি।মেয়েটা অনেক মিশুক।তাই জেমির সুবিধাই হলো।

জুঁই জেমি কে সাথে করে তিয়াস এর রুমে চলে গেল। তিয়াস, তূর্য, জুঁই তিন ভাই বোনই খুব গোছালো মানুষ।
মিসেস তৃনা ছোট থেকেই ওদের কে গোছালো ভাবে গড়ে তুলেছেন।

তিয়াস ভাইয়ার বউ সুন্দর আছে। খাবার খেতে খেতে বললো তূর্য।

তিয়াস এর পছন্দ হয়েছে ওকে।ওর প্রাক্তন কে না কি দেখাতে হবে তার চেয়ে ও সুন্দর মেয়ে ডিজার্ব করে সে।

ভালো। আমার বউ এত সুন্দরী না আবার। ধবধবে ফর্সা না হলেও মুখে মায়ার খেলা।আর আমি তার ব্যাক্তিত্বের প্রেমে পড়েছি।তাই তার সব কিছুই আমার ভালো লাগে।

মিসেস তৃনা তূর্যর দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো,
তুই আবার বিয়ে করলি কবে?বউ আসলো কই থেকে?

তূর্য মুচকি হেসে বললো, তিয়াস ভাইয়ার পরেই বিয়েটা করে ফেলবো আমি।

কাকে?কী বকিস এই সব?

অনু কে ছাড়া আবার কাকে বিয়ে করতে যাবো?

মিসেস তৃনা তূর্যর মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন অনু তো লক্ষী একটা মেয়ে। আমার দুই ছেলের পছন্দ কেই আমি গ্রহন করবো। জীবন টা তো তোদের। আমার না। তোদের জীবনের সাথে কেমন মানুষ কে জড়াবি এটা তোদের সিদ্ধান্ত।বাবা মা হয়েছি বলেই যে জোর করে তোদের ইচ্ছের বিরুদ্ধে অন্য কারো সাথে বিয়ে করিয়ে দিবো এমন বাবা মা আমরা না। আমার সন্তানদের খুশিতেই আমরা খুশি।

মা নামক মানুষ টা বরাবরই খুব বেশি প্রিয় তূর্যর কাছে।তার ফ্যামেলির প্রত্যেকটা মানুষই ঠিক তার মনের মতো।বাবা মায়ের সাথে ছেলে মেয়েরা একটু কম ফ্রী।সব ধরনের কথা তারা তাদের মা বাবার সাথে শেয়ার করতে পারে না। কিন্তু ছোট থেকেই এই দূরত্ব টা তৈরি হতে দেননি মিসেস তৃনা। একজন শিক্ষিত মা হিসেবে তিনি ছেলে মেয়েদের যতেষ্ট ভদ্র ভালো মনের মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছেন এবং পেরেছেন ও।

তিয়াস এর রুমটা বেশ পছন্দ হয়েছে জেমির।সব কিছু গুছিয়ে রাখা। তিয়াস বই পড়তে বেশ ভালোবাসে।তার ছোট্ট একটা বুক শেলফ আছে। সেখানে বিখ্যাত লেখকদের লেখা বই রাখা আছে।অবসর সময় টা বই পড়েই কাটিয়ে দেয় তিয়াস।

তিয়াস এর রুম থেকে বের হয়ে জেমির চোখ পড়লো অন্য একটা রুমের দিকে।সে হাতের ইশারায় দেখিয়ে বললো,

আচ্ছা জুঁই ঐ বা দিকের রুমটা কার?

ওটা ছোট ভাইয়ার রুম।

ওহ আচ্ছা।চলো তোমাদের ছাদটা ঘুরে আসি।

হুম চলো। আমাদের ছাদে গেলে তোমার মন ভালো হয়ে যাবে। আমার ছোট ভাইয়া প্রকৃতি প্রেমি। আমাদের ছাদটা সবুজে ঘেরা। বিভিন্ন ধরনের ফুলের গাছ আছে। ভাইয়ার ফুল বেশ প্রিয়।

আর তোমার বড় ভাইয়া কী প্রকৃতি প্রেমি না?মানে উনি কী ফুল পছন্দ করে না?

করবে না কেন? আমাদের সবারই ফুল প্রিয়। শুধু আলসেমির জন্য কেউ বাগান করে না। ছাদের বাগান টা তূর্য ভাইয়া করেছে।ওর এই সব করতে নাকি ভালো লাগে।

জেমি কিছু না বলে মুচকি হাসলো।

তূর্য নিজের রুমের বারান্দায় বসে আছে। রোদের আলোয় আলোকিত বারান্দা। তূর্যর বারান্দায় ও ফুলের গাছে ভরপুর।মন ভালো করার মতো একটা জায়গা।

মহারানি তো বারন করে দিয়েছেন উনার এক্সামের সময় গুলোতে যেনো উনার সামনে ও না যাই। আমার জন্য আবার নাকি তার পরীক্ষা ভালো হবে না।পাগলী একটা।

মনে মনে এইসব ভাবছে আর মুচকি মুচকি হাসছে তূর্য।
দেখা যেহেতু করাই যাবে না তাহলে এই সময়টাতে জবে জয়েন করে ফেললে হয়ে যাবে। শুধু শুধু সময় নষ্ট করার মানেই হয় না।

পরীক্ষা শেষ হলে ফ্রেন্ডদের সাথে কেফে তে গিয়ে আড্ডা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় রিফা,কেয়া। কিন্তু অনুর মন চাইছে তূর্যর পাগলামী গুলো উপভোগ করতে।তবে সেটা চাইলেও সম্ভব না।লোকটা যে মারাত্মক কথা বলে আমাকে ভেঙ্গে গুড়িয়ে দেওয়ার জন্য এটাই যথেষ্ট।

রবি ঠাকুরের গান টা যেনো কী ছিল? হ্যাঁ মনে পড়েছে,,
আমি তোমারি বিরহে রহিব বিলীন
তোমাতে করিব বাস।
দীর্ঘ দিবস দীর্ঘ রজনী দীর্ঘ বারোসো মাস।

সামনে আসলেও একদম পাত্তা দেওয়া যাবে না এই লোকটা কে।
.
অনুর কথা শোনার মতো ছেলে তূর্য না। বিকেলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে বেরিয়ে আসার সময় অনুকে এক পলক দেখার লোভ টা সামলাতে পারলো না তূর্য।

অনু সেই সময় বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল। তূর্য অনু কে বারান্দায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে চাঁদ হাতে পাওয়ার মতো খুশি হয়েছে।

আশেপাশে তাকাতেই অনুর চোখ পড়লো তূর্যর উপর। তূর্য কে দেখে হেসে ফেললো।

তূর্য নিচ থেকে চিল্লিয়ে বললো,

মৃত্যু আর আল্লাহ ছাড়া আপনার থেকে আমাকে কেউ দূরে সরিয়ে রাখতে পারবে না মিস পরমানু।
এমনকি আপনি ও না।

চলবে,,,