#তুই_আমার_কাব্য 🍂
#Writer: Anha Ahmed
#Part: 06
.
🍁
.
মুখ গোমরা আর রাগ নিয়ে বাসায় পৌঁছাতেই তনুর ফোন। ফোন রিসিভ করতেই ঝারির ঝুরি পড়লো যেনো,
– ওই ফাজিল মাইয়া, সমস্যা কি তোর? সেই কখন থেকে অপেক্ষা করতেছি। আশার নাম গন্ধই নেই। কতদূর তুই? কখন আসবি? প্রোগ্রাম শেষ হলে আসবি তুই? একা একা বসে আছি তোর জন্য। পাঁচ মিনিটের মধ্যে না আসলে তোকে খুন করে তোর বডি বাসায় পার্সেল করে দেবো। না হলে কথা…
আর কিছু বলার আগেই মেঘলা চিৎকার করে বলে ওঠে,
– চুওওপপ। আমাকে কিছু বলতে দিবি কি?
– কি বলবি তুই হ্যা? একে তো নিজে দেরি করছিস আর ধমচ্ছিসও নিজে। আর আমি যখন দেরি করছি একটু তখন তো খুব কথা শোনাস। আজকে যখন আমার পালা আসছে আমি ছাড়বো কেনো হ্যা?
– হয়ছে বলা? এখন আমি বলি?
– হুম বল
– আমি রেডি হয়ে আসছিলাম তখনই এক উগাণ্ডার প্রবাসির বাচ্ছা আমার শাড়িতে কাঁদা ছিটিয়ে চলে গেলো। ইচ্ছা করে করেছে শয়তানের ডিমগুলায়। সেই সকাল থেকে না খেয়ে রেডি হয়েছি। এক ঝটকায় সব শেষ। এখন আমি কি করবো?
কাঁদো কাঁদো গলায় কথাগুলো বলে সিঁড়িতেই বসে পড়লো মেঘলা। তনু অবস্থা বুঝে আর কোনো কথা না বলে অন্য একটা ড্রেস পড়ে চলে আসতে বললো। কিন্তু মেঘলার মন তাতে সন্তুষ্ট হলো না। এতো শখ করে ছিলো সব পানি হয়ে বুড়িগঙ্গায় ভেসে গেলো। বাসায় গিয়ে একটা ড্রেস পড়ে দ্রুত বেড়িয়ে গেলো।
তনু বসে আছে মুখ ফুলিয়ে আর রাস্তার দিকে মেঘলার আশায় তাকিয়ে আছে। এক পর্যায়ে ওঠে গেটের দিকে হাঁটতে লাগলো। আবির বিপরীত দিক থেকে আসছিলো। তনুকে দেখে দাঁড়িয়ে পড়লো। তনুকে ডেকে জিজ্ঞাসা করে,
– আরে তুমি মেঘলার ফ্রেন্ড না?
– জ্বি ভাইয়া।
– মেঘলা আসে নি? আসবে না আজকে?
– জ্বি ভাইয়া আসবে। এইতো ওর জন্যই অপেক্ষা করছি। দেখেন না আজকের দিনেই ওর দেরি করতে হলো। ( মন খারাপ করে)
– আরে চাপ নিও না। এসে যাবে।
কথাটা বলেই চলে যাচ্ছে তখনই আবারো পেছন থেকে তনু ডাক দিলো,
– আবির ভাইয়া!
– হুম। কিছু বলবে?
– জ্বি। কিছু মনে না করলে আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করি?
– হ্যা হ্যা নিশ্চিয়।
– আমার কেনো যেনো মনে হচ্ছে আপনি মেঘলাকে আগে থেকে চেনেন। আমার এইটা মনে মনে হওয়া কি শুধুই আমার ভ্রম নাকি সত্যতা আছে এর?
আবির কিছুটা হকচকিয়ে ওঠে বলে,
– তোমার হঠাৎ এইটা কেনো মনে হলো?
– কেনো মনে হলো তা বলতে পারবো না। আর শুধুমাত্র সিনিয়র বলেই আপনি ওকে হেল্প করছেন এটাও সম্পূর্ণ সত্য না।
আবির হেসে উত্তর দিলো,
– মেয়েদের এতো মাথা চালাতে নেই। বোকাসোকা থাকো। হা হা
বলে চলে যাবে আবারো থেমে গেলো তনুর মুখে মেঘলা নাম শুনে। পেছন ঘুড়ে তাকাতেই দৃষ্টি দৃঢ় হয়ে এলো একদিকে। মেঘলা ধীর পায়ে আসছে। সম্পূর্ণ লাল একটা চুড়িদার পড়েছে। ফুল হাতা তবুও দুই হাতে চুড়ি ভর্তি। চুলগুলো খোলা। আর সাজ কিছু পরিবর্তন করে নি। আবিরসহ তনুও হা করে তাকিয়ে আছে মেঘলার দিকে। আবিরের মুখ ফসকে বেড়িয়ে এলো,
– আপ্সরা!!
তনুও যেনো ঘোরে ঘোরে বলে ওঠলো,
– এর থেকেও বেশি
মেঘলার কেমন যেনো লাগছে। চারপাশে বসন্তের সবুজ গাছের মাঝে নিজেকে একা শীতের রুক্ষ গাছের মতো লাগছে। কিন্তু তার তো আর এটা জানা নেই যে কেউ একজন তাকে ঘাসফুলের মাঝে গোলাপের দৃষ্টিতে দেখছে। নেশা ছাড়াই নেশায় ঘোরে চলছে। মূহুর্তেই নিজের হাত নিজে দেয়ালে বারি দিয়ে বলে,
– ধ্যত! এর থেকে তো শাড়িতেই ভালো ছিলো। মেয়েটা জানে মারবে আর না হলে জানে মরবে। প্ল্যানটা পুরো ভেস্তে গেলো। এতো কষ্টে নিজেকে কন্ট্রোল করে রেখেছি সেই কবে থেকে সেটাও মনে হয় যাবে এবার।
এদিকে কাব্যকে খোঁজাখুঁজি চলছে তখনই সে এসে হাজির। ওকে দেখে ওর রাহুল বলে ওঠলো,
– আরে এই তো কাব্য। কিরে কই ছিলি?
– এই তো স্যার একটু ডেকেছিলেন।
– তোর পারফরমেন্সের জন্য সবাই ওয়েট করছে।
– প্রথমে না করতে গিয়েও কি যেনো ভেবে দ্রুত স্টেজে ওঠে গিটার নিয়ে স্টেজের পেছনের রুমে চলে গেলো। আর সামনে একটা সোফ্ট কাপল ড্যান্স শুরু হলো।
এদিকে মেঘলা এসে তনুকে ডাক দিলেও ও শুনতে না পেলে ওকে ধাক্কা দেয়। এতে তনু একটু ভরকে ওঠে বলে,
– হ্যা হ্যা কে কে?
– কে মানে? আমি মেঘলা। ( কপাল কুচকে)
– ওহ্ হ্যা মেঘলা।
– কি হয়ছে রে?
– তুই এতো সেজেছিস কেনো রে? আমিই তো ফিদা ছেলেদের কথা তো বাদই রাখি। ইস্ ছেলে হলে তোকে তুলে নিয়ে বিয়েই করে নিতাম।
– ইস্! কি ফিল্মি ডায়লগ মারছিস। বাদ রাখ। আমি তো নরমালি এসেছি। সবাই শাড়ি পড়েছে আর সেখানে আমি এই চুড়িদার।
– আরে তুই জানিস না তোকে যা লাগছে না কি বলবো? তাই না আবির ভাইয়া?
মেঘলা এতোক্ষণ আবিরকে খেয়াল করে নি। আর আবিরও মেঘলার ধ্যানে ছিলো। তনুর ডাক শুনে ধ্যান ভেঙ্গে বললো,
– একদম। আরে চাঁদ কি নিজের সৌন্দর্য কখনো দেখতে পারে? তার সৌন্দর্য তো অন্যরা দেখে।
আবিরের কথা শুনে মেঘলা হেসে ওঠে। তখনই কানে গিটারের শব্দ ভেসে আসে। সেই সুর। মেঘলা ওদের হাত দিয়ে ইশারা করর আসতেছি বলে দৌড়ে চলে যায় স্টেজের দিকে। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখে কাপল ড্যান্স হচ্ছে। এইটা স্পষ্ট যে এইটা কেউ প্র্যাকটিক্যালি বাজাচ্ছে। কিন্তু কে এবং কোথা থেকে? ততক্ষণে গানও শুরু হয়ে গেলো। মেঘলা যেনো আরো হন্যে হয়ে খুঁজতে লাগলো স্টেজের আশেপাশে। স্টেজের পিছনে ভার্সিটির লাইব্রেরি। মেঘলা সেখানেই চলে গেলো। ভেতরে যেতে যেতেই গান শেষ হয়ে গেলো। মেঘলাও থেমে গেলো। খুঁজে না পেয়ে নিরাশ হয়ে ফিরতে যাবে কখনই অনুভব করলো ওর চোখ কেউ কাপড় দিয়ে বেঁধে দিচ্ছে। চিৎকার করতে যাবে সাথে সাথে মুখটা হাত দিয়ে চেপে দিয়ে ওর হাতটাও বেঁধে দিলো। কাছে কারো উষ্ণ নিশ্বাস পেয়ে অজানা কারণেই মেঘলার বুকের ধুকপুকানি এতো বেড়ে গেছে যে সাথে থাকা মানুষটারও সেই আওয়াজ কানে পৌঁছাচ্ছে। মেঘলার কাছ থেকে দুরে যেতেই মেঘলা ছুটার জন্য চেষ্টা করছিলো কিন্তু আবারো থেমে গেলো গিটারের আর সেই গলার সুর শুনে,
ইস্ক দি গালিয়া তাঙ্ক হে
শারমো শারমি মে বান্ধ হে
খুদছে খুদকি ক্যছি ইয়েহ জাঙ্ক হে
পাল পাল ইয়ে দিল ঘাবড়ায়ে
পাল পাল ইয়ে দিল শারমায়ে
কুছ কেহতাহে অর কুছ কার যায়ে
ক্যছি ইয়েহ পেহেলি মে দিল মার যানা
ইস্ক মে জালদি বাড়া জুরমআনা
তু সাবার তো কার মেরি ইয়ার
যারা সাস তো লে দিলদার
চাল্ ফিকির নু গোলি মার ইয়ার
হে দিন জিনদাদি দে চার
হলে হলে হো যায় গা পেয়ার ছালেয়া
হলে হলে হো যায় গা পেয়ার
গানের প্রতিটা লাইন যেনো মেঘলার উদ্দেশ্যই লেখা তার মনের ভাব। হাতের বাঁধন হালকা হয়ে আসতেই বুঝতে পারলো কেউ হাত খুলে দিচ্ছে। মেঘলা দ্রুত হাতের বাঁধন পুরোটা খুলে চোখ খুলতে খুলতেই রুম পুরো ফাঁকা। কেউ নেই। অনেক খোঁজার চেষ্টা করলো কিন্তু পেলো না। রুম থেকে বের হতেই মেঘলার চোখ যায় নেভি ব্লু কালার শার্ট পড়া একটা ছেলের ওপর। খুবই গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা চলছে বুঝা যাচ্ছে। পেছন থেকে কেউ কাব্য ভাই বলে ডাক দিতেই কাব্য পেছন ঘুরলো আর মেঘলাও চেহারাটা দেখলো। আবারো দেখে ছোট খাটো ক্রাশ খেলো। কিন্তু পরক্ষনেই কাব্যর করা ব্যবহার মনে পড়ে চেহারাই পাল্টে গেলো। ওখান থেকে হেঁটে আসতে আসতে চিন্তা করতে লাগলো কিছুক্ষণ আগের ঘটনা। কে হতে পারে? কেনই বা তাকে এভাবে বেঁধে রেখে অদ্ভুতভাবে উধাও। চিন্তা করতে করতে খেয়ালই করলো না সামনে কেউ আছে। ঠাস করে মাথায় গুঁতো খেতেই চমকে উঠলো আর ব্যাথায় শব্দ করে ওঠলো,
– আহ্। কে রে? কানার মতো হাঁটে।
কপাল ঢলতে ঢলতে সামনে তাকাতেই থ। কাব্য ওর দিকে কিঞ্চিৎ রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কাব্যকে দেখে মেঘলা মিন মিন বলতে শুরু করলো,
– হে খোদা! আজকেও কি ওনার সাথেই টাকরাতে হলো আমায়? আজকেও কি এই খারুস সাদা মুরোগ কোনো পানিশমেন্ট দেবে এর জন্য?
মেঘলার মিন মিন করা দেখে ধমকিয়ে কাব্য বলে,
– এই মেয়ে! কি বললে? আমি সাদা মুরোগ?
মেঘলা একটা ভেটকি দিয়ে বলে,
– ন না না। সাদা মুরগি কেনো বলবো? আ আমি কিছু বলি নি তো?
– একে তো নিজে অন্ধের মতো হাটছো আর দোষ দিচ্ছো অন্য কে। তুমি কি আসলেই অন্ধ? চশমা লাগলে বলো কিনে দেবো তাও প্লিজ বার বার কপাল ফাটাতে এসো না।
– আ আমার চোখ একদম ঠিক আছে। কোনো চমশার দরকার নেই।
– আচ্ছা তাই? তাহলে কি বলবো ইচ্ছা করে আমার সাথে বার বার কোনো না কোনো ভাবে আমার কাছে আসছো। কি ভালো টালো লেগেছে নাকি আমায়?
মেঘলার দিকে ঝুকে কিছুটা কথাটা বলে চলে গেলো। মেঘলা কাব্যোর শেষের কথা শুনে ওখানেই থ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। বলে কি এই ছেলে? মেঘলার নাকি এই ছেলেকে ভালো লেগেছে। অবশ্য মিথ্যে তো বলে নি। ভালো তো লেগেইছে। বেচারি পানিশমেন্টের চাপে গুলিয়ে ফেলছে হা হা।
চলবে….❤
ভুল ক্রুটি ক্ষমা করবেন। ধন্যবাদ।