#তুই_আমার_কাব্য 🍂
#Writer: Anha Ahmed
#Part: 13
.
🍁
.
মেঘলা দিনের মেঘলা মন মেঘলা হলে আকাশ
অযথা মন কাব্য লেখে পেলে প্রেমের আভাস।
এ কাব্য বোঝা সহজ নয় কঠোর শব্দে লেখা
কাগজ পাখির চিরকুটে গাথা এ প্রেমের ভাষা।
মেঘলা সোফায় হেলান দিয়ে পায়ের উপর পা দিয়ে হাতের কুনই সোফার একটা হাতায় রেখে গালে হাত দিয়ে ঠোট কিছুটা উল্টিয়ে বসে আছে। কে করছে এসব এখনো খুঁজে বের করতে পারছ না। কোনো লিংক পর্যন্ত পাচ্ছে না। মনে মনে ভেবে যাচ্ছে,
– এখন গোয়েন্দা বিভাগের সাথে সংযুক্ত হতে পারলে বেশ ভালো হতো। এছাড়া আর কোনো উপায় পাচ্ছি না তাকে খুঁজে পাওয়ার। আর একটা আছে। কোনো তান্ত্রিকে কাছে গিয়ে অদৃশ্য হওয়ার যাদুই দ্রব্য এনে অদৃশ্য হয়ে খুঁজে বের করা যেতো। বুদ্ধিটা খারাপ না। ইস্! যদি সত্যি সত্যি যদি অদৃশ্য হতে পারতাম তাহলে কত্ত ভালো হতো। কত কিছু করতে পারতাম। সবার আগে ওই কাব্য ফাব্য কে শিক্ষা দিতাম। আচ্ছা কিভাবে দিতাম? হ্যা, সকাল সকাল এক বালতি ঠান্ডা পানি ঢেলে দিতাম, তারপর রান্নায় এক ডিব্বা না না এক কেজি মরিচ দিতাম, ওর জামা কাপড় ছিড়ে রাখতাম। হি হি বেশ মজা হতো। তখন বুঝতো আমাকে শাস্তি দেওয়ার শাস্তি। আই উইশ এইরকম কখনো করতে পারতাম।
মেঘলা মনে মনে কথাগুলো ভেবে খুশি হয়ে যাচ্ছে। আর তার স্পষ্ট প্রতিবিম্ব ফুটে ওঠছে ওর মুখে। কাব্য দুর থেকে দাঁড়িয়ে ওর এরকম বিহেভিয়ার দেখে প্রথমে একটু অবাক হলেও পরে নিজেও হেসে দেয়।
এদিকে মেঘলার বাবা বেশ কিছুক্ষণ পর মুখ গম্ভীর করে পার্টিতে ফিরে আসে। মেঘলার বাবাকে আসতে দেখে পরিবারের সবার দৃষ্টি তার দিকে স্থির হলো। মেঘলার মায়ের মনে হচ্ছে এখনই হয়তো এখান থেকে নিয়ে যাবে। তাই সে মেহেরের কাছে গিয়ে দাড়াঁলো। মেহের ওর মায়ের বাহুতে দুইহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরলো। শুভ, জহির একসাথে দাঁড়িয়ে পড়লো। মোহনা মেহেরের মেয়েকে কোলে নিয়ে বসে আছে। কাব্য এক সাইডে গিয়ে ফ্রেন্ডদের সাথেই দাঁড়িয়ে ছিলো। মেঘলার বাবাকে দেখে সেখান থেকে এগিয়ে আসতে দেখে মেঘলা এখনো সেইভাবে বসেই খায়ালি পোলাও পাকাচ্ছে। কদম পিছিয়ে মেঘলার সামনে গিয়ে পকেটে দু হাত দিয়ে দাঁড়ালো। কিন্তু মেঘলার সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপই নেই। কাব্য পকেট থেকে এক হাত বের করে ওর সামনে মুখের সামনে তুরি বাজালো। তাতেও মেঘলার কোনো পরিবর্তন হলো না। ভাবনার জাগতে ডুকেছে বলে কথা। বের হতেও তো সময় লাগে। কাব্য এবার ভ্রু কুচকে মেঘলার দিকে তাকিয়ে রইলো। হাতটা আবার পকেটে ঢুকিয়ে সোজা হয়ে পাশ ফিরে দাঁড়িয়ে এক পা দিয়ে মেঘলার পায়ে পারা দিয়ে দাঁড়ায়। ব্যাথা অনুভব করে মেঘলা ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে এলো। (কে জানে বেচারির পোলাও কতটা পাকিয়েছিলো। কাব্যটা ভালো মতো রান্নাও করতে দিলো না। হি হি)
মেঘলা পায়ের দিকে তাকিয়ে দেখে কেউ ওর পায়ে পারা দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পা থেকে লক্ষ করে উপর পর্যন্ত তাকাতেই কাব্যর মুখটা দেখতে পেলো। কাব্যর এমন কাজে মেঘলা রাগে বোম হয়ে যায়। যাকে মুসিবতে ফেলার প্ল্যান করছে সেই এসে ওকে টর্চার করে যাচ্ছে। একি সহজে মেনে নেওয়া যায়? মেঘলা পা টান দিয়ে রেগে এক ঝটকায় ওঠে যায়। শুধু যে নিজে ওঠেছে তা না ওঠেই কাব্যকে ঝারি দিয়ে বলে,
– এই যে মি. চোখে কি দেখেন না? চোখের কি মাথা খেয়ে নিয়েছেন? নাকি ইচ্ছে করে করেছেন? যদি তাই করে থাকেন আর ভাবেন আমি কিছু বলবো না তাহলে ফর ইউর কাইন্ড ইনফরমেশন এখানে না আপনি আমার সিনিয়র আর না আমি আপনার জুনিয়র। সো যা খুশি করতে পারবেন না আমার সাথে।
কাব্য ঘাড় ঘুরিয়ে নরম কন্ঠে বলে,
– এক্সকিউজ মি? আপনি কি আমাকে কিছু বলছেন?
কাব্যর এইরকম গা ছাড়া প্রশ্নে মেঘলা ড্যবড্যব করে কাব্যের দিকে তাকিয়ে রইলো। কাব্য মেঘলার রিয়েকশন দেখে কাব্য মনে মনে হাসছে। মেঘলাকে আবার জিজ্ঞাসা করে,
– আপনি কি আমার সাথে কথা বলছেন? যদি বলে থাকেন তাহলর অনুগ্রহ করে আরেকবার বলুন। আমি খেয়াল করি নি।
– খেয়াল করি নি মানে? আমি ষাড়ের মতো চিল্লায়ে কথাগুলো বললাম আর আপনি শুনতেই পান নি? খেয়ালই করেন নি? মসকরা পাইছেন? আমার পায়ে পারা দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন কেনো?
কাব্য এবার মেঘলার দিকে ঘুরে মুড নিয়ে দাঁড়িয়ে অবাক সূচক ভংগিতে জিজ্ঞাসা করে,
– এক্সকিউজ মি! কি বললেন? আমি আপনার পায়ে পা দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম?
– জ্বি হ্যা।
– সময়টা উল্লেখ করতে পারবেন প্লিজ?
– এইতো কিছুক্ষণ আগে।
– প্রমাণ?
– এ্যা?
– প্রমাণ, প্রমাণ আছে কোনো? আমি তো দেখছি আমার পা আপনার পা দেখে বেশ দূরত্বে। কিসের ভিত্তিতে বিশ্বাস করবো আপনি সত্য বলছেন? তার জন্য তো প্রমাণ চাই না তা?
– প্রমাণ চাই মানে? আপনি পা দিয়ে দাড়ায়ে ছিলেন আর আপনাকেই প্রমাণ দেবো? আপনি কি করছেন তা তো আপনি নিজেই জানেন আমি কেনো প্রমাণ দিতে যাবো?
– কারণ আমার জানা মতে আমি কাজটা করি নি কিন্তু আপনি আমাকে দোষারোপ করছেন। তো এক্ষেত্রে তো প্রমাণ চাওয়া আবশ্যক। প্রমাণ সংগ্রহ করে আসবেন।
কাব্য কথাগুলো বলে পাশে থেকে ওয়েটারের কাছ থেকে কোল্ড ড্রিংসের গ্লাস নিয়ে এগিয়ে গেলো সামনে। মেঘলা রাগে গটগট করতে করতে এগিয়ে গিয়ে এক ক্লাইমেক্সের মুখোমুখি। পার্টির লাইট অফ করে সাধারণ লাইট জ্বালানো হয়েছে। জহির আহমেদ মিউজিক অফ করতে বলে যদিও মিউজিকটা সফ্টই ছিলো। তবুও মিউজিক অফ করে দেওয়া হলো। সবাই চুপচাপ মেঘলার বাবা এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে মোহনার দিকে এগিয়ে যায়।
সবার চোখ যেনো ক্যামেরার মতো মেঘলার বাবার উপর পড়ে আছে। মেঘলার চোখের পলক বার বার পড়ছে। সবার মুখ ফ্যাকাশে শুধুমাত্র কাব্য ব্যতিত। সে টেবিলে হেলান দিয়ে পা ক্রস করে দাঁড়িয়ে কোল্ড ড্রিংকস খেয়ে যাচ্ছে। এমন একটা ভাব নিয়ে আছে যেনো আগে কি ঘটতে চলেছে সে সব কিছু জানে। মেঘলার বাবা মোহনার সামনে বাসে গিয়ে বসে পকেট থেকে কিছু একটা বের করে। একটা লম্বা লাল বক্স। বক্সটা খুলে একটা ছোট স্বর্ণের চেইন বের করে। সবাই বিস্মিত চোখে তাকিয়ে আছে। নিরবতা ভেঙ্গে মেঘলার বাবা বলে উঠে,
– নাতনির মুখ কি আর এমনি এমনি দেখা যায়? নানু হিসেবে আমার কাছে কিছু তো পাওনা আছে ওর। আর আমার বড় মেয়ের মেয়ে বলে কথা। আমার প্রথম সন্তানের প্রথম সন্তান অর্থাৎ আমার বড় নাতনি।
সবার চোখ ছানা বড়া। কেউ মনে হয় বিশ্বাস করতে পারছে না মেঘলার বাবার কথাগুলো। মেহেরের চোখ ভরে আসলো আনন্দ অশ্রুতে। শুভ এসে মেহেরের পাশে দাঁড়াতেই মেহের খুশিতে জড়িয়ে ধরলো। মেঘলার বাবা নাতনিকে কোলে করে দাঁড়িয়ে মেহেরের দিকে তাকাতেই মেহের ছুটে এসে বাবাকে জড়িয়ে ধরে। মেঘলা আর দাড়িয়ে থাকতে না পেরে সেও দৌড়িয়ে এসে জড়িয়ে ধরে। মোহনাও বাদ পড়ে না। মেঘলার বাবার কাছ থেকে মেঘলার মা বাবুকে নিজের কোলে নেয়। মেঘলার বাবা তিন মেয়েকে এক সাথে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু দিয়ে বলে,
– আমার তিন জান্নাত
মুহুর্তেই খুশির বন্যা বয়ে যায়। চারদিকে হৈ-হুল্লোড় পড়ে যায়। পার্টি শেষ হয়ে যায় কিন্তু মেঘলারা এখনো আছে। বাবুকে ঘিরে বসে আছে মেঘলা, মোহনা ও মেঘলার মা। জহির আহমেদ ও শফিক রহমান একসাথে বসে আছে। আর ওদিকে দুই ভাই মিলে সফ্ট ড্রিংস খাচ্ছে। শফিক রহমান ও জহির আহমেদ একসাথে এসে মেঘলাদের পাশে সোফায় বসে জহির আহমেদ বলে,
– তো মি. রহমান! আমরা তো এখন আত্মীয় হয়ে গেলাম। এতো বড়ো খুশির মহল, খুশির মিলন উপলক্ষে কিছু একটা হয়ে যাক। কি বলেন?
– হ্যা হ্যা অবশ্যই। পরিবারটা বড় হয়ে গেলো। এবার জমে যাবে সব আনন্ত উৎসব।
পাশে থেকে মোহনা চট করে বলে উঠলো,
– আংকেল তবে এই খুশিতে পিকনিক করা যাক।
জহির আহমেদ হেসে দিয়ে বলে,
– বাহ্ চমৎকার বুদ্ধি। চলো যাওয়া যাক লং ট্রিপে। কি বলেন মি. রহমান?
– আমার আপত্তি নেই তবে মিসেস আহমেদ? ওনি তো আসেন নি এখনো। ওনাকে ছাড়া যাওয়া বেমানান।
– ওর তো ফুফি মারা গিয়েছে নয়দিন আগে। এসে পরারই কথা ছিলো কিন্তু অনেকদিন পর যাওয়ার কারণে আত্নীয় স্বজন আসতে দেয় নি। চলুন আমাদের দেশের বাড়িতে ঘুরে আসা যাক। মেহের মাও দেখে নি গ্রামের শ্বশুড় বাড়ি। আর আমাদেরও বেশ অনেক বছর যাবৎ যাওয়া হয় না।
– মন্দ বলেন নি। গ্রামে আমরা কবে শেষ গিয়েছি মনে নেই।
সিদ্ধান্ত নেওয়া শেষ হয়ে গেলো। সবাই বেশ খুশি। খুশি খুশি বর উঠে গেছে। তবে মেঘলা খুশিও না আবার দুখিও না। একটা ভাবলেশহীন ভাব। কেনো জানি না তার ইন্টারেস্ট জাগছে না। হয়তো কখনো দেখে নি বলে। মেঘলা পানি খাওয়ার জন্য ওঠে যায়। পানি খেয়ে পানির গ্লাস রেখে সামনে তাকিয়ে খেয়াল করলো কাব্যও এদিকে আসছে। হয়তো বা সেও পানি খাবে অথবা অন্য কোনো কাজ। মেঘলা কাব্যর দিকে তাকিয়ে শয়তানি মেনি হাসি দিলো। হাসিটা কাব্যর চোখ এড়ালো না যদিও সে ফোনের দিকে তাকিয়ে ছিলো। মেঘলা আবারো পানি খাওয়ার ভান করে গ্লাসে পানি ভরে খানিকটা খেয়ে আর খানিকটা লুকিয়ে ফ্লোরে ফেলে দেয়। পানি ফেলে সেখান থেকে ধীরে ধীরে সরে আসে। একটু দুরে দাঁড়িয়ে ফোন চালানোর ভান ধরে কাব্যর দিকে নজর রাখে। কাব্য পড়ে যাবে সে দৃশ্য মেঘল্ একদমই মিস করতে চায় না। ভেবেই মনে মনে খুশির লাড্ডু খেয়ে যাচ্ছে। কিন্তু সে খুশি বেশিক্ষণ টিকলো না। কারণ কাব্য সেইখান দিয়েই গিয়েছে যেখানে মেঘলা পানি ফেলেছে। গিয়ে টেবিল থেকে কিছু কাঠ বাদাম মুঠো ভরে নিয়ে চিবুতে চিবুতে হেুটে চলে যায়। মেঘলা অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকে। কি করে সম্ভব? সে নিজ হাতে ফেলেছে পানি। তাহলে কি করে পড়লো না? তার মানে কি কাব্য দেখে ফেলেছে? নাকি মেঘলার গ্লাসে পানি ছিলোই না? মেঘলা চেক করার জন্য গটগট করে হেঁটে চলে যায়। টেবিলটা যেখানে রাখা হয়েছে তা একটু উঁচু । মেঘলা টেবিলের কাছে যেতে গিয়ে পা পিছলে চিৎ হয়ে পড়ে যায়। ভয়ে চোখ খিচে বন্ধ করে ফেলে। আর মনে মনে ভাবে,
– আমি মরে যাচ্ছি। পড়ে যাওয়ার সাথে সাথে আমার মা দিয়ে গরগর করে রক্ত বের হয়ে যাবে। তারপর আমি মারা যাবো। আর না হলে হাত পা ভেঙ্গে হাসপাতালে ভর্তি থাকবো। কি হবে আমার? যাই হোক না কেনো এর জন্য দায়ি ওই সাদা মোরগটা। ও পড়লো না তাহলে আমি কেনো পড়লাম? আমি কখনো ক্ষমা করবো না। মরে ভুত হয়ে তোকে জ্বালাবো মি. কাব্য সাহিত্য।
কথা গুলো ভাবতে ভাবতে আবিষ্কার করলো সে খুবই নরম জাতীয় কিছুর মধ্যে বসে আসে। এক চোখ আস্তে আস্তে খুলে দেখে পড়ে নি। সাথে সাথে দু চোখ খুলে দেখে কালো ফোমের বল চেয়ারে প্রায় আধসোয়া অবস্থায় পড়ে আছে। আশে পাশে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই। তবে এটা আসলো কোথা থেকে? কে দিলো? মেঘলার স্পষ্ট মনে আছে এইটা এখানে ছিল না। মেঘলা এইটা ভাবতে ভাবতে সামনে পানির গ্লাসে পানি ভরার শব্দ পেলো। তাকিয়ে দেখে কাব্য পানি ঢালছে। পানি খেয়ে কাব্য মেঘলার দিকে এগিয়ে আসার সময় যেখানে পানি ফেলেছে সে টুকু ডিঙিয়ে এসে মেঘলার সামনে এক হাত পকেটে রেখে আরেক হাতের কিছু কাঠ বাতাম মেঘলার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে,
– বাদাম খাও। বুদ্ধি বাড়বে। বুদ্ধির যথেষ্ট অভাব আছে। এখানে যদিও ভার্সিটিতে না তবুও সুনিয়র হয়েই উপদেশ দিচ্ছি প্রতিদিন বাদাম খাবে। মোটা মাথাটা চিকন হবে।
মেঘলা কাব্যর কথাগুলো শুনে ফুসতে শুরু করে। কাব্য মেঘলার রিয়েকশন যেনো দেখেও দেখলো না। ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ওপরে চলে যায়।
চলবে…… ❤
ভুলক্রুটি ক্ষমা করবেন। হ্যপি রিডিং। ধন্যবাদ সবাইকে।