#তুই_আমার_কাব্য 🍂
#Writer: Anha Ahmed
#Part: 27
.
🍁
.
বসন্ত ছাড়াই মনে রং লেগেছে মেঘ বালিকার। শ্রাবণের আকাশে মেঘ ভেলায় ভাসে যেমন, তেমনই মেঘলাও ভাসছে নিজস্বতায়।
ঘড়িতে সকাল ছয়টা বেজে পাঁচ মিনিট। সূর্যের কোমল উষ্ণতা কেবলই ছড়াচ্ছে চারদিকে। শহর হলেও দু একটা পাখির কিচিরমিচির ঠিকই শোনা যাচ্ছে। পুরোপুরি বেলা না পর্যন্ত দু একটা পাখির ডাক বেশ ভালই লাগে। তবে তুলনামুলক বেশি হলে ভালো লাগাটা কিঞ্চিৎ বিরক্তে পরিনত হয়। মেঘলা দু কানে ইয়ার ফোন লাগিয়ে ছাদের চিলেকোঠার ছাদের উপর পা দুলিয়ে সুখ গুনচ্ছে। সে জানে এ সুখ চিরস্থায়ী না। হয়তো যেকোনো সময় ফুরিয়ে যাবে, হয়তো আবার থেকেও যাবে। হারিয়ে যাবে বলে সে চিন্তায় সময় খারাপ না করে যেটুকু সময় পাচ্ছে তা কুড়িয়ে নিচ্ছে। খালি মুখে বসে থাকা যায় না। তাই ফ্ল্যাক্সে চা নিয়ে বসেছে। ফ্রেস ফ্রেস একটা ভাব আসে সকালে চা দিয়ে দিন শুরু হলে। এক কাপ শেষে আরেক কাপের অর্ধেক তখন কারো ছাদে ওঠার শব্দ পেলো মেঘলা। দরজার দিকে তাকিয়ে আছে সে। ঘুমে আচ্ছন্ন প্রায় এমন অবস্থায় ছাদের দরজাটা অতিক্রম করে সোজা হয়ে দাঁড়ালো কাব্য। চুলগুলো অগোছালোভাবেও কপালে পড়ে আছে। সকালের সূর্যের প্রভাবে বেশ কোমল কোমল লাগছে মুখটা। উপরের কিছু চুলগুলো আলোর প্রতিফলনে হালকা সোনালী রঙের মতো লাগছে। ছেলে মানুষের এতো সৌন্দর্য মানায় না। দেখলেই কেমন যেনো হিংসা হিংসা ভাব আসে। কি দরকার এতো সুন্দর হওয়ার? হাটে হাটে মেয়েরা পাগল হয়ে পড়ে যাবে এমন রূপের কি খুব দরকার ছিলো? গায়ে রঙটা একটু চাপা হলেও তো পারতো। না হলে মুখটায় আকর্ষণ না থাকলেও হতো। এতো এটিটিউট একজনকেই দেওয়ার কি দরকার ছিলো? পারসোনালিটিটাকে ওই এটিটিউটটাই বিশেষ করেছে। আর মেয়েদের মতো চুলগুলোও কি সিল্কি! এগুলো ভাবতেই মেঘলা মোট ফুলিয়ে তাকিয়ে থাকে কাব্যর দিকে। আচ্ছা! কাব্য তার থেকে এটাতে তার সমস্যা নাকি এর ফলে যে মেয়েরা আর্কষিত হয় সেইটা তার সমস্যা? প্রশ্নটা মনে আসতেই মেঘলা বেশ ভাবনা চিন্তায় মগ্ন হলো।
কাব্য ব্যায়ামে ব্যস্ত ছিলো। ব্যয়াম করতে করতেই হঠাৎ চিলেকোঠার ছাদের ওপর নজর পড়তেই চোখগুলো ছোট ছোট করে ফেললো। ব্যায়াম করতে লাগলো আবার কিন্তু দৃষ্টি তার স্থির মেঘলার দিকে। মেঘলাকে দখছে আর মনে মনে ভাবছে,
– বাস্তব না কল্পনা? কল্পনা হলে ঠিক আছে কিন্তু যদি বাস্তব হয় তাহলে এতো সকাল বেলা এত জায়গা থাকতে ওখানে বসে আছে কেনো? হয়েছেটা কি ওর? আমাদের বাড়িতে জোড় করে আনা যায় না সেখানে নাকি ইচ্ছা করে এসেছে। কালকে আসার পর দেখেই দেখছি বড়ই অদ্ভুত আচরণ করছে যা সচরাচর আমার সামনে করে না। হঠাৎ বিয়ে ঠিক হওয়া নিয়ে শোকে পাগল হলো নাকি?
বেশ অনেকক্ষণ যাবৎ মেঘলার কোনো পরিবর্তন না দেখে ব্যায়াম বন্ধ করে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো কাব্য।
মেঘলাে আকাশকুসুম অনেক কিছু চিন্তার মাঝে ছেদ ঘটালো একটা ছোট্ট শব্দ। আশে পাশে তাকিয়ে শব্দের উৎস আবিষ্কার করতে ব্যর্থ হলো। কিন্ত তার মনে হলো ড্রাম জাতীয় কিছুতে ঢিল দিলে যে শব্দ হয় শব্দটা তেমনি ছিলো। কিন্তু এমন কিছু বা এমন কাউকে দেখছে না। তখনই হঠাৎ মনে পড়লো কাব্যর কথা। কোথায় গেলো কাব্য? ছাদে তো এসেছিলো। চলে গেছে?
দ্রুত ওখান থেকে নেমে ছাদের এদিক ওদিক ওকি ঝুকি মেরে খুঁজছে। নেই কোথাও। হতাশ হয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে দাড়িয়ে রইলো। পেছন ঘুরতেই কাউকে দেখতেই চমকিয়ে ওঠে। চমকিয়ে পেছনে সরতে গিয়ে পায়ের সাথে পা জড়িয়ে পড়ে যেতেই হাত ধরে ফেলে কাব্য। সোজা হয়ে দাড়িয়ে এক হাত পকেটে ঢুকিয়ে ফেলে আর আরেক হাত দিয়ে মেঘলার হাত ধরে মেঘলার দিকে তাকিয়ে আছে। হুট করে টান দিয়ে একদম নিজের কাছে দাঁড় করিয়ে দেয় মেঘলাকে। মেঘলার ওই হাতটা পেচিয়ে কোমরে রেখে নিজের হাত দিয়ে বন্ধ করে রেখেছে।
মেঘলা ড্যাব ড্যাব করে শুধু তাকিয়েই আছে। কি হলো বুঝতেই সময় যাচ্ছে তার। কাব্যর কথায় ধ্যান ভাঙ্গলো। কাব্য চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে তার দিকে। মেঘলার এখন কি রিয়েক্টশন দেওয়া উচিৎ বুঝতে পারছে না। জোড় পূর্বক মেকি হাসি দিয়ে বলে,
– আরে ভাইয়া আপনি? আমি আসলে খেয়াল করি নি আপনাকে।
– ঠাটিয়ে দু একটা চড় খেলে খেয়াল আপনা আপনি থাকতো। দাড়িয়ে থেকেও পড়ে যাও কিভাবে? এতোক্ষণে তো কোমরের হাড্ডি পাউডার হয়ে যেতো না ধরলে।
– আমার কি দোষ? আপনি হঠাৎ করে এলেন তাই ভয়ে পেয়ে গেছি। ওভাবে কেউ দাঁড়িয়ে থাকে?
– আমাকে দেখে ভয় পাওয়ার কি আছে?
– তো ভয় পাবো না? আপনাকে দেখলাম নেই আবার হঠাৎ করে কোথা থেকে অবতীর্ণ হলেন।
– আমাকে খুঁজছিলে বুঝি?
– হ্যা আ আব না না। খামোখা আপনাকে খুঁজতে যাবো কেনো?
কাব্য এক ভ্রু উঁচু করে মেঘলার দিকে তাকিয়ে আছে। মেঘলা কাব্যর দৃষ্টি লক্ষ করে নার্ভাস হয়ে পড়ে। দুই ঠোঁট চেপে মেকি হাসি দিয়ে বলে,
– আপনাকে একটু ছুঁই? কাউকে দেখে ভয় পাওয়ার পর তাকে একটু করে ছুতে হয়। তাহলে নাকি ভয় চলে যায়।
– ছুঁয়েই তো আছো। নতুন করে কি ছুঁতে চাও?
কাব্যর কথায় মেঘলা বড়বড় করে তাকিয়ে নিজের দিকে তাকিয়ে দেখে কাব্য ওকে এমন ভাবে ধরে রেখেছে যেনো আরেকটু বাতাসের ধাক্কা খেলে একদম মিশে যাবে। তার থেকেও বেশি অবাক হয় ও ওর ডান হাত। কাব্য প্রায় কাঁধে রেখেছে। ঘটনার আকষ্মিকতায় মেঘলার হাত ওভাবে ধরে রাখে কাব্যকে। কিন্তু এতোক্ষণ ওদিকে খেয়ালই করি নি। ঝাটকা মেরে কাব্যকে সরিয়ে দুরে গিয়ে দাঁড়িয়ে দুই চোখ খিচে বন্ধ করে ফেলে। ইচ্ছে করছে দেয়ালটা ফাঁক করে ওর মধ্যে ঢুকে যেতে। মাথা নিচু করে কাব্যর দিকে তাকাতেই দেখে কাব্য রিলাক্স হয়ে বসেে আছে ছাতার নিচে। মুখে হাসির আভা। লজ্জায় মেঘলা দ্রুত পায়ে নেমে আসে। কাব্যর ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা ফুটে ওঠে।
🍁
ড্রয়িং রুমে মেহভিনকে ঘিরে বসে আছে মেহের আর শুভ। আজকে প্রথমবার হেঁসেছে আছে সে। কিন্তু তা দেখেছে একমাত্র মেঘলা। মেঘলা কথা বলার সময় হঠাৎ করে তার মুখে হাসি দেখেছে। এইটা শুনার পর মেহের আর শুভ তাকে ঘিরে সে নানান কথা কিন্তু পুনরায় হাসিটা দেখতে পাচ্ছে না। কি অদ্ভুত তাই না? ছোট্ট বাচ্চাটার হাসি দেখার সে কি আকুলতা! কত সে চেষ্টা! কিন্তু বড় হওয়ার সাথে সাথে এসব বাষ্পীভূত হয়ে যায়।
মেঘলা রান্নাঘরে ঢুকেছে। শুধু শুধু বসে থেকে ভালো লাগছে না। তাই বিকেলের নাস্তা তৈরী করার উদ্দেশ্য রান্নাঘরে খুটিনাটি নাড়ছে। নাস্তা পরিবেশন করছে তখন কারো পায়ের শব্দ পেয়ে ওপরে তাকায়। পার্পেল কালারের একটা গেঞ্জি আর একটা টাউজার পড়ে ফোনে কথা বলতে বলতে নিচে নেমে আসছে। ওফ্! ক্যজুয়্যালেও কি ড্যশিং লাগছে। কথাগুলো ভাবতে ভাবতেই হাতে গরম অনুভব করলো। চুলায় হাত চলে গেছে। ভাগ্যিস বন্ধ ছিলো। নিজের মাথা নিজেই থাল্কা থাপ্পড় দিয়ে মুচকি হাসি দিয়ে বেড়িয়ে গেলো।
সারাদিন পড়াশুনার পর একঘেয়েমি ধরে যায়। পড়ায় আর মনও বসছে না। তাই একটু ফ্রেস হয়ে বাহিরে কিছু দরকারি কথাও বলতে বলতে নিচে নেমে আসছে। বসার রুমে মেঘলাকে দেখতে না পেয়ে কাব্য আশেপাশে তাকাচ্ছে। তখনই চোখ পড়ে মেঘলা মুচকি মুচকি হেসে এদিকেই আসছে। একা একা হাসতে দেখে ভ্রু কুচকে মেঘলার দিকে তাকিয়ে আছে। মেয়েটার মাথা কি সত্যিই গেছে? একা একা হাসছে কেনো? মনে মনে কথাগুলো বলে সবার সাথে গিয়ে বসলো। তখনই মেঘলা জোড়ে জোড়ে বলে,
– টেন টেনাআআআ… সবার নাস্তা হাজির। সবার জন্য আজকে মেঘলা স্পেশাল নাস্তা।
সবাই বেশ নড়ে চড়ে বসলেও কাব্যর মধ্যে তেমন কোনো পার্থক্য দেখা গেলো না। একবার তাকিয়েই টিভির রিমোট হাতে নিলো। কাব্য ভাব থেকে মেঘলা ভেংচি কেটে শুভর উদ্দেশ্য বলে,
– জিজু আপনি ফাস্ট। টেষ্ট করে বলুন তো আপনার শালিকা কেমন রাধুনি?
– অবশ্যই অবশ্যই। ভালো না হলেও মিষ্টি লাগবে জানি। শালিকার হাতের ছোঁয়া যে আছে।
– জিজু! আমি ঝাল রান্না করেছি। মিষ্টি লাগবে কি করে?
– ওহ্ তাই নাকি? সরি সরি। আরে দাও দাও তর সইছে না। কি বানিয়েছো?
– আমার স্পেশাল পাস্তা এন্ড ক্যাপাচিনো।
– জমে ক্ষীর। মেহের! বোনকে দেখো কিছু শিখো। এখন তো মনে হচ্ছে তোমাকে রেখে তোমার বোনকে তুলে নিয়ে এলেই ভালো হতো।
মেহের চোখ ছোট করে কিন্তু ঠোঁটে হাসি রেখেই শুভর দিকে তাকালো। মেহেরের দৃষ্টি দেখে শুভ হা হা করে হেসে ওঠে পাশে তাকাতেই হাসি থামিয়ে গলা খাকড়ি দিয়ে বলে,
– না বাবা তুমি আমার শালিকাই ভালো। কই দাও দাও।
মেঘলা একে একে সবাইকে দিয়ে নিজেও খেতে বসলো। যেই মুখে দেবে তখনই শুভ বলে ওঠলো,
– বাহ্! শালিকা দারুণ রাঁধুনি হয়েছো তো। দিল খুশ কারদিয়া। কাহো কেয়া চাহিয়ে তোফে মে।
মেঘলা কিছু বলতে যাবে আবারও থেমে গেলো কাব্যর কথায়। কাব্য খাচ্ছে আর টিভি দেখছে। শুভর কথা শুনে তখনই বলে,
– ভাইয়া তোর টাকা বেশি হলে আমাকে দিলেও পারিস। একেই তো মিথ্যা বলছিস তার মধ্যে আবার সেইটার জন্য গিফট দিতে চাচ্ছিস? লবণ হয় নি পরিমাণ মতো।
মেঘলা ঠোঁট ফুলিয়ে তাকিয়ে আছে কাব্যর দিকে। কাব্যর কথায় মেহের মিটমিট করে হাসছে। সেইটা বুঝতেই মেঘলা মুখটা কাঁদো কাঁদো করে শুভর দিকে তাকায়। শুভ হেসে দিয়ে কাব্যকে ধমকিয়ে বলে,
– চুপ থাক তো তুই। তুই কি বুঝিস? মেঘলারাণী কতো ভালো রান্না করেছে। মেঘলা তুমি ওদের কথা কানে নিও না। ওরা সব বিরোধী দলের।
শুভ ক্যাপাচিনোর কাপটা নিয়ে দাঁড়িয়ে সিড়ির উদ্দেশ্যে যেতে বলে,
– এতো তেল মারিস না।
বলেই কাপে চুমুক দিয়ে সামনে দিয়ে হেঁটে চলে গেলো। মেঘলা মুখ গোমড়া করে কাব্যর দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে,
– আবার অপমান! খবিশ ছেড়া কুনানকার। ভালো হয় নাই তাও তো খেতে খেতে যাচ্ছিস।
মুখ ভেংচি দিয়ে ট্রে নিয়ে রান্না ঘরের দিকে যাচ্ছে তখনই দারোয়ান দরজার কাছে এসে মেহেরকে ডাক দিয়ে বলে,
– বড় মেমসাহেব! কে জেনো মেঘলা আপুমণির খোঁজ করছে।
মেঘলার খোঁজ করছে শুনে কাব্য সিঁড়ি মাঝখানে গিয়ে থেমে ঘুরে দাঁড়ায়। মেঘলার খোঁজ কে করছে? সবাই দারোয়ানের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়।
চলবে…… ❤
#তুই_আমার_কাব্য 🍂
#Writer: Anha Ahmed
#Part: 28
.
🍁
.
মেহের কাপটা রেখে দারোয়ানের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে,
– কে খুঁজছে চাচা মেঘলা? নাম টাম কিছু বলেছে?
– হ্যা। নাম বলছে আবির।
– আবির! আরে ওকে বাহিরে রেখে এসেছো কেনো? ভিতরে আসতে বলেন।
– বলছি। কিন্তু গেইটের বাহিরেই দাঁড়ায়ে আছে। ভেতরে আসতে চায় না। আমারে শুধু বললো আপনাকে এসে বলতে মেঘলা আপামণিকে পাঠাতে। খুব নাকি দরকার।
– আচ্ছা চলেন তো দেখি। আমি যাই।
মেহের মেঘলার দিকে তাকিয়ে দারোয়ান চাচার সাথে বেড়িয়ে গেলো। বাহিরে আবির গাড়ির দরজার সামনে পা ক্রস করে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। মেহেরকে আসতে দেখে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে হাসি দিয়ে বলে,
– কেমন আছেন আপু?
– এইতো ভালো। তুমি?
– আমিও ভালো আছি। যদি কিছু মনে না করেন তাহলে মেঘলাকে নিয়ে একটু বের হতে হবে, দরকার খুব। দরকার না হলে আসতাম না এখানে।
– ওসব কথা ভেতরে গিয়ে হবে। আর তোমার হবু বউ তুমি নিয়ে যাবে তাতে সমস্যা কি? ভেতরে আসো আগে।
– না আপু আমি ভেতরে যাবো না। আমি গাড়িতে অপেক্ষা করছি আমি বরং মেঘলাকে পাঠিয়ে দিন। আসলে আম্মু ওকে নিয়ে রিং কিনে আনতে বলেছে। কালকে নাকি এন্গেজমেন্টের ডেট ফিক্সড করবে। এন্গেজমেন্ট করিয়ে আম্মু আব্বু দেশের বাড়ি যাবেন নানুর মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে। তাই আজকে পাঠিয়ে দিলেন।
– আচ্ছা তুমি থাকে আমি এখনি পাঠাচ্ছি ওকে।
– না ও যাবে না
এমন কথা শুনে মেহের পেছন ফিরে তাকায়। কাব্য এগিয়ে আসছে ওদের দিকে। কাব্য আবির একে অপরের দিকে গম্ভীর মুখে তাকিয়ে আছে। কাব্য মেহেরের পাশে এসে দাঁড়িয়ে মেহেরকে বলে,
– ভাবি তুমি যাও। আমি আছি এখানে।
– আচ্ছা তুমি থাকো আমি মেঘলাকে ডেকে দেই।
মেহের চলে যেতেই কাব্য আবিরের মুখোমুখি দাড়িয়ে বলে,
– সরি টু সে দ্যাট মেঘলা তোর সাথে যাবে না।
– মেঘলার গারজিয়ান যেখানে পারমিশন দিয়েছে সেখানে তোর কথা শুনবো বলে তোর মনে হয় কি করে?
– মেঘলার আমাদের বাড়ি আমাদের দায়িত্বে এসেছে। এখান থেকে ও কোথাও গেলে আমাদের সাথে যাবে। বাহিরের কারো সাথে না। সেরকম হলে আমি ওকে বাসায় পৌঁছে দেবো তারপর তুই ওকে ওর বাসা থেকে নিয়ে যেতে পারিস। আই হ্যাভ নো অবজেকশন। বাট নাও ইউ কান্ট টেক হার।
– বাহিরের মানুষ আমি? হা হা। ভুলে গেলে মনে করিয়ে দেই আমি ওর হবু স্বামী। সো আমি ওর একান্ত ব্যাক্তিগত সম্পর্কের অন্তর্ভুক্ত। সেদিক থেকে দেখতে গেলে তুই ওর জীবনের বাহিরের মানুষের মধ্যে পরিস।
– কিসের ভিত্তিতে নিজেকে হবু স্বামী বলছিস? তোদের এন্গেজমেন্ট হয়েছে? হয় নি তো এখনো। আংকেল রাগের মাথায় একটা কথা বলেছে সেইটাকে এতো মজবুত ভিত্তি বানিয়ে বসিয়ে আছিস?
– কথা দেওয়াটাই কি যথেষ্ট না?
– আমি মনে করি না।
– তোর মনে করাতে সব কিছু ঠিক, বেঠিক নির্বাচন করা হবে সেইটা আশা করাও ভুল নয় কি?
– অবশ্যই না। অবশ্যই আমি যেইটা সঠিক মনে করি সেটাই সঠিক আর যা ভুল মনে করি তা ভুল। কারণ যেটা যা আমি সেইটাকে তাইই মনে করি। গট ইট?
– নো। সরি। মেঘলা চলে এসেছে এবং ও আমার সাথেই যাবে।
কাব্য পেছন ঘুরে দেখলো মেঘলা সত্যিই চলে এসেছে। তবে মুখটা কিছুটা মলিন। সে যে যেতে ইচ্ছুক নয় তা ওর মুখের দিকে তাকালেই বোঝা যাচ্ছে স্পষ্ট।
মেঘলা একবার আবির আর একবার কাব্য দিকে তাকাচ্ছে। কি করবে বুঝতে পারছে না। যদিও এরকম পরিস্থিতিতে মাথা শূন্যই থাকে তবুও এই শূন্য মাথার তলায় কিছু একটা পাওয়ার আশায় ভেবে যাচ্ছে। খুবই ধীর গতিতে হাটঁছে। ওদের কাছে যাওয়ার আগেই কিছু একটা করতে হবে। যেনো ওদের মাঝে ঝগড়াও না হয়েই মেঘলা যাওয়াটা আটকাতে পারে। কিন্তু কি করে? ওড়নার কোণা আঙ্গুলে পেচাতে পেচাতে মনে পড়লো ফোন আনে নি। থেমে গিয়ে আবিরকে ইশারায় বুঝিয়ে দেয় ফোন আনতে যাবে।
আবির কাব্যকে উদ্দেশ্য করে হেসে বলে,
– সি! মেঘলা আমার সাথে বের হওয়ার জন্য সেজেসে। তার হবু স্বামীর জন্য।
কাব্য আবিরের একদম কাছে এসে চোখে চোখ রেখে বলে,
– ডোন্ট কিপ হোপ সো হাই। ইট উইল ব্রেক সুন।
– আই সি! লেটস সি।
– আই ইউল নেভের গো হার উইথ ইউ এলোন।
– উই উইল হ্যভ টু।
– নট টুডে এন্ড নট টুমোরো।
– এভরিডে সি উইল সো উইথ মি এলোন।
– আআআআআআআআআআ
কাব্য কিছু বলতে যাবে সেই সময়ই মেঘলার চিৎকার কানে ভেসে আসতেই পেছন ফিরে তাকায়। মেঘলা বাড়িতে ডুকার সিঁড়ির কাছে পড়ে আসে পা ধরে। কাব্য আবিরের দিকে রক্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে মেঘলার দিকে ছুটে আসে। মেঘলার পায়ের গোড়ালি ধরে কান্না করে যাচ্ছে। আবিরও ছুটে এসেছে। মেঘলার চিৎকার শুনে মেহের শুভও চলে এসেছে। কাব্য ব্যস্ত কণ্ঠে বলে ওঠে,
– পড়ে গেলে কি করে?
– আ আ আমি তাড়া তাড়ি ককরে আআসার সময় কিভাভাবে যেনো পড়ে যাই। পাপায়ে লেগেছে খুব।
মেহের ছুটে এসেছে জিজ্ঞাসা করে,
– কি হয়েছে মেঘলার?
কাব্য মেঘলাকে কোলে নিয়ে মেহেরের উদ্দেশ্য বলে,
– নামার সময় নাকি ব্যাথা পেয়েছে। তুমি তাড়াতাড়ি ফাষ্ট এইড বক্স থেকে স্প্রে টা আনো।
মেঘলা মাথা নিচু করে বসে আছে। মেহের পায়ে স্প্রে করে মলম লাগিয়ে দিচ্ছে কারণ সে কাব্যকে মেডিসিন লাগাতে দেয় নি। কাব্যর চোখমুখও কেমন যেনো স্বাভাবিক হয়ে ওঠেছে। শুরুতে যেমন উদ্বিগ্নতা ছিল তার ছিটেফোঁটাও নেই। বরং সে ডাইনিং টেবিলে বসে বসে বাদাম চিবুচ্ছে। মেঘলা আড়চোখে কাব্যর এই কাহিনি দেখে কিছুটা বিচলিত হলো। বড়ই আশ্চর্য এই লোকটা। হতে পারে মেঘলা পরিবারের কেউ না তাই বলে কি সামান্য সহমর্মিতা কাজ করবে না। ওর চিল করা দেখে মেঘলার মনে মনে ইচ্ছে করছে সবগুলো বাদাম গুড়ো করে পানির সাথে মিশিয়ে খাওয়ায়ে দিতে।
মেঘলার পাশেই বসে আছে আবির। মেঘলা ঘাড় ঘুরিয়ে নরম সুরে আবিরের উদ্দেশ্যে বললো,
– সরি আবির ভাইয়া। আপনি আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আসলেন আর আমি যেতে পারলাম না। জানি না কিভাবে যে পড়ে গেলাম। হয়তো তাড়াহুড়ো বেশি করতে গিয়ে। আসলে ভাবলাম দাঁড়িয়ে আছেন তাই তাড়াতাড়ি করি কিন্তু এমন একটা অবস্থা হয়ে গেলো।
– আচ্ছা ঠিক আছে। তোমার সুস্থতার আগে কোনো কিছুই বড় না।
– আপনি যদি বলেন আমি এখন যেতে পারবো। বেশ কিছুটা ঠিক হয়েছে।
– হুম হয়েছে। অনেক বলেছো। বললাম না তোমার সুস্থতার থেকে ইর্ম্পটেন্ট আর কিছুই না। আজ যেতে পারো নি কাল পারবে। দ্যাটস্ নট এ বিগ ঢিল। তুমি রেস্ট করো আর মেডিসিন খেয়ে নাও। আমি আসি ওকে?
– সরি ওয়ান্স এগেইন
– সিল্লি গার্ল। বাই এন্ড টেক কেয়ার।
– বাই
খাওয়া দাওয়া শেষে মেঘলা নিজ রুমে বসে আছে। পায়ের ব্যাথার কারণে নিজের রুমে বসে খেয়েছে। বিছানার উপর পা ওঠিয়ে বসে আছে আর ঢুলছে। আয়নার দিকে চোখ পড়তেই বিছানা থেকে নেমে আয়নার সামনে গিয়ে চুল ঠিক করতে করতে মনে হলো কেউ আসছে। দৌড়ে গিয়ে বিছানায় বসে পায়ে হাত রেখে হাত বুলিয়ে যাচ্ছে। অসহায় মুখ করে দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে কাব্য দাঁড়িয়ে আছে। অসহায় মুখোভাব নিয়েই কাব্য বলে,
– ওও কাব্য ভাইয়া আপনি? হঠাৎ এখানে? কিছু দরকার?
– হুম দরকার, ভিষণ দরকার।
– কি দরকার? বলুন আমি বলে দিচ্ছি কোথায় রাখা আছে। আমি তো হাঁটতে পারছি না তাই খুঁজে দিতে পারবো না। একটু কষ্ট করে বের করে নিয়েন।
– ইস্! কি ব্যাথাটাই না পেয়েছো।
– হুম খুব
– আচ্ছা এই নাও এই মেডিসিনটা খেয়ে নাও। ভাবি বাবুকে নিয়ে ব্যস্ত তো তাই আসতে পারলো না। আমিই এলাম। দেখে যাই কেমন আছো।
– কিসের মেডিসিন? লাগিয়েছি তো আবার খেতে হবে কেনো?
– খেতে হবে৷ এটাই তো মেইন। অনেক ব্যাথা পেয়েছো তো। পা যদি ভেঙে গিয়ে থাকে ভেতরে তাই এই মেডিসিন খেতে হবে। এইটা খাওয়ার পর পা সারারাতের জন্য অবশ হয়ে যাবে। মানে খুব ব্যাথা পেয়েছো, রাতে ব্যাথা বাড়বে, অবশ হয়ে থাকলে ব্যাথা করবে না আর। তারপর সকালে ঠিক হয়ে যাবে।
– আআব তার কোনো দরকার নেই তো। অতো টা ব্যাথা নেই তো। একটু ব্যাথা। ঘুমালে ঠিক হয়ে যাবে।
– না তোমাকে এইটা খেতেই হবে। ভাবির আদেশ।
– আরে রাখেন তো আদেশ। বললাম তো আমি ঠিক আছি।
– ঠিক আছো? ব্যাথা পাও নি?
– না না পেয়েছি তো। অনেক পেয়েছি কিন্তু এখন কমেছে।
– পেয়েছো বুঝেছি কিন্তু বলতে চাচ্ছো না। বুঝতে পারছি আমাদের জানাতে চাও না কষ্টটা তাই না?
– ধুর ছাতা কিছুই হয় নি আমার।
– হুম জানি।
বলেই মেঘলার কাছে গিয়ে মেঘলার মুখে ঔষধ পুরে পানি দিয়ে দিলো। পানিটা ড্রেসিং টেবিলের উপর রেখে চিরুনি দিয়ে চুল সেট করতে থাকে। মেঘলা এবার সত্যি সত্যি অসহায় দৃষ্টি নিয়ে বলে,
– এইটা কি করলেন? বললাম কিছুই হয় নি। আমার যেতে ইচ্ছে করছিলো না তাই নাটক করছিলাম।
– জানি
কাব্যর জানি কথাটা শুনে মেঘলা চোখ বড় বড় কাব্যর দিকে তাকায়। কাব্য চিরুনিটা রেখে মেঘলার দিকে ঘুরে টবিলের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে টেবিলের ওপরে দু হাত ভর করে রেখে বলে,
– তোমায় সোফায় বসিয়ে পা টা দেখার পরই বুঝেছি। আর তোমার নাটকটাও সস্তা ছিলো। এরপর থেকে এক্টিং স্কিলটা ডেভেলপ করার চেষ্টা করবে। আর চিন্তা ধারণা উন্নত করো। বাংলা সিনেমার মতো হয়েছে।
কথাগুলো বলেই চলে যাচ্ছিলো। দরজার গিয়ে দু পকেটে হাত গুজে পেছন ঘুরে মেঘলার দিকে দাঁড়ায়। মেঘলা এখনো আয়নার দিকে তাকিয়ে আছে। শিস বাজিয়ে মেঘলার দৃষ্টি ওর দিকে নিয়ে বলে,
– বাই দা ওয়ে ওইটা ভিটামিন ছিলো।
ভিটামিন ছিলো? আবাবো বকা বানিয়ে চলে গেলো। মেঘলা রাগে দাঁত কড়মড় করতে লাগলো। একে তো ওকে দিয়ে সব কনফেস করিয়ে গেলো তা ওপর বোকা বানিয়েও গেলো। তারমধ্যে এতো কষ্ট করে করা অভিনয়কে সস্তা বললো? কত বড় সাহস? কত বড় অপমান? নিজের চুল টেনে খাটে থাকা একটা বালিশ দরজার দুকে ছুড়ে দিলো রাগে। তারপর চুপ হয়ে বসে কিছু একটা ভেবে নিজে নিজেই বলে,
– আমারো মনে হচ্ছে নাটকটা সস্তা হয়ে গেছে।
চলবে…. ❤
হ্যাপি রিডিং।