#তুই_আমার_কাব্য 🍂
#Writer: Anha Ahmed
#Part: 31
.
🍁
.
– আপনি এতো রাতে এখানে এসেছেন লুডু খেলতে? তাও আমার সাথে?
– তোমার কাছে আরো কেউ আছে নাকি? থাকলে তার সাথেও খেলতে পারি।
– আপনি কি মশকরা করতে এসেছেন?
– ওওম হ্যা মনে হয়।
– অদ্ভুত!
– জন্ম থেকেই।…. আচ্ছা তুমি খেলবে না তো? ওকে! তোমার দান ও আমি দিয়ে দিচ্ছি। তুমি নীল আমি হলুদ। হেরে গেলে পড়ে আবার আমাকে কিছু বলতে এসো না।
কাব্যর এমন গা ছাড়া কথা শুনে মেঘলার ভিষণ রাগ লাগতেছে। কাব্য লুডু খেলছে একা একা। এমন একটা ভাব যেনো নিজের বাড়িতে আছে আর সে কোনো এক স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে অবস্থান করছে। মেঘলা কাব্যর দিকে তাকিয়ে কপাল কুচকে বলে,
– একাই তো খেলতে পারেন ভালোই। তাহলে এখানে এসেছেন কেনো?
– এসেছিলাম তো তোমার সাথর খেলবো বলে বাট তুমি তো খেলছো না। তাই আর কি একাই খেলছি।.. এই দেখো তোমার গুটি একটা কাটা পড়ে গেছে।
অদ্ভুত মানুষ তো! একাই খেলছে আবার কেটেও দিচ্ছে। মাঝে মাঝে একে ভিন্ন গ্রহের মানুষ মনে হয় মেঘলার। যখন যেখানে অধিকাংশ মানুষ একইরকম থাকে তখন সেখানে এই মানুষটা ভিন্ন প্রকৃতির আচরণ করে। কিছু কিছু ব্যক্তি আছে যারা সবার বিপরীতে যাবেই। নয়জন একটা জিনিস ভালো বললে একজন থাকেই যে কি না জিনিসকে খারাপ বলবেই। এই কাব্য হলো সেই প্রকৃতির। না! ভুল বললাম। তাদের থেকেও কয়েক গুণ উর্ধ্বে।
মেঘলা কব্যের দিকে তাকিয়েই আছে। একে এখন কিছু বলে লাভ নেই সেইটাও খুব ভালো করে বুঝে নিল। এক মনে এখনো সে খেলেও যাচ্ছে। মেঘলার নামের গুটির গুলো ইচ্ছাকৃত কেটেই যাচ্ছে আবার উঠে যাচ্ছে । মেঘলার কেনো যেনো খুব রাগ লাগছে আবার ওর খেলা দেখে বেশ হাসিও পাচ্ছে কিন্তু এখন হাসতে মানা। কোনো মতেই হাসা যাবে না। হাসি সংযত করে মেঘলা নরম গলায় বলে,
– আচ্ছা একটা কথা বলি?
– হুম বলো।
– আপনি কিভ..
ফোনের স্ক্রীণের দিকেই তাকিয়ে থেকে কাব্য মেঘলার কথা আটকে দিয়ে বলে,
– একটা কথা শেষ। ইভেন একটা কথার বেশির বলে ফেলছো।
মেঘলা কাব্যর কথা শুনে হতভম্ব। মানে! একটা কথা মানে একটা কথাই? একটা কথা বলা যায়? আশ্চর্য শব্দটার উপরে আরো কোনো শব্দ আছে কিনা তা মেঘলার এখন জানতে খুব ইচ্ছে করছে। কারণ এর পরিপ্রেক্ষিতে কি শব্দ ব্যবহার করবে একে বারেই খুঁজে পাচ্ছে না। বাংলা অভিধান নিয়ে বসলে হয়তো পাওয়া যেতে পারে। চোখটা বন্ধ করে ছোট্ট করে নিঃশ্বাস ফেলে চোখ খুলে আবারো বলে,
– আচ্ছা! ঠিক আছে। একটা কথা বলা শেষ। এখন কিছু প্রশ্ন করতে পারি?
– একটা করতে পারো।
– বড় উপকার হলো।… আপনি কিভাবে এলেন এখানে? না মানে এতো রাতে আপনাকে এলাউ করলো কে?
– আমার একটা গার্লফ্রেন্ড এখানকার নার্স। ওর সহযোগিতায়ই এসেছি।
– সোজা ভাবে উত্তর দেওয়া কি আপনাদের ব্যক্তিত্বের আইনে অপরাধ?
– মোটেও না। আমি সর্বদা স্ট্রেইট ফরওয়ার্ড কথা বলি।
– আচ্ছা! তাহলে সত্যি আপনার গার্লফ্রেন্ড এখানকার নার্স। বাহ্! খুবই ভালো। কিন্তু কথা হলো আমার কেবিনের নার্স আপনাকে এলাউ করলো কিভাবে? সেই কি আপনার গার্লফ্রেন্ড?
– না না। কাব্যর গার্লফ্রেন্ড দেখতে ওমন মোটা, কালো হবে নাকি? সব থেকে সুন্দর যে নার্সটা সেটাই আমার গার্লফ্রেন্ড। আর তোমার কেবিনের নার্সটা আমাকে দেখার পর ক্রাশ খেয়েছে সেইটা বুঝতে পেরে সুযোগের স্বদ ব্যবহার করেছি।
– বাহ্! কতগুণ আপনার।
– থাকতেই হবে। দি আর জে আয়ুস্মান কাব্য আমি।
– আর জে! জীবনে তো রেডিও তে আপনাকে হোস্টিং এ পেলাম না।
– মাটা মোটা ব্যক্তিরা আমাকে পাবেও না।
– এই কোন মাইড দিয়ে আমার মাথা মোটা মনে হয় হ্যা? আমার মাথা আমার মতোই স্লিম।
– এর জন্য মাথা মোটা বলি। মাথা মোটা মানে মস্তিষ্কে মোটা মোটা তার শুধু, তার মধ্যে কোনো বুদ্ধি নেই। অতিরিক্ত তেল দিয়ে ভাজা মগজ, যার কারণে গুনাগুন সব তেলে চলে গেছে আর মগজ ফাঁকা।
মেঘলা চিকন চোখে দাঁতে দাঁত কামড় দিয়ে বসে বসে কথা গুলো গিলার চেষ্টা করছে। কারণ এই মূহুর্তে ওর রিয়াকশন করা একদমই ঠিক হবে না। চুপচাপ এক কান দিয়ে শুনে আরেক কান দিয়ে বের করতে হবে।
কাব্য হঠাৎ ফোনটা বন্ধ করে ওঠে মেঘলার সামনে দাঁড়িয়ে হাত ধরে টান দিয়ে বলে,
– আর খেলবো না। ভালো লাগছে না। চলো ঘুরতে যাই।
মেঘলার চোখ মুহুর্তেই বড় বড় হয়ে গেলো। ঘন ঘন দুইবার চোখের পলক ফেলে একবার হাতের দিকে আরেকবার কাব্যর মুখের দিকে তাকায়। কাব্য শয়তানি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
– আমি জানি আমি হ্যান্ডস্যাম বয়। এভাবে তাকিয়ে চোখ দিয়ে গিলে ফেলা বন্ধ করো।
মেঘলা সাথে সাথে চোখ নামিয়ে আবার তাকালো। কিন্তু এবার চোখে ফুটিয়ে তুললো বিরক্তির হালকা ভাব। তারপর ঝাঝালো কন্ঠে বলে,
– আপনি কি এটাকে রিসোর্ট করছেন? এটা একটা হাসপাতাল। আর আমি একজন পেসেন্ট। এখানে আমি ঘুরতে আসি নি।
– ওওও তুমি পেসেন্ট? কোন এ্যঙ্গেল দিয়ে? ফিট এন্ড হেলদি লাগছে একদম।
– আববব এখন সুস্থ কিছুটা কিন্তু ছিলাম তো। ভিষণ পেট ব্যাথা হয়েছিলো।
– আচ্ছা! ইস্! তাহলে তো খুবই অসুস্থ তুমি।
কাব্যর ব্যঙ্গ করে কথা বলার ধরণ দেখে মেঘলার বেশ সন্দেহ হলো। তবে কি কাব্য জানে ও অভিনয় করছে? তা কি করে সম্ভব? কাব্য তো ছিলো না ওখানে। জানার তো কথা না। আর ব্যাপারটা একমাত্র জানে তনু, আর ওর মা। এর বাহিরে কারো জানার কথা না তে। তবে? কাব্য এমন করে কথা কেনো বলছে? কুছতো জারুর গারবার হে। মেঘলা একটা ছোট্ট ঢোক গেলে বলে,
– আপনি এমন ভাবে বলছেন যেনো কিছু জানেনই না।
কাব্য মেঘলার হাত ছেড়ে দিয়ে চেয়ারটা এক হাত দিয়ে এনে তাতে হেলান দিয়ে পা উঠিয়ে বসে। তারপর হাত দুটো মাথার পেছনে নিয়ে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,
– সবাই যা জানে সেটাও জানি আর যেটা জানে না সেটাও জানি।
মেঘলার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায় কাব্যর কথা শুনার সাথে সাথে। কাব্যর দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে রয়েছে। কাব্য একটা মুচকি হেসে এক টানে চেয়ার মেঘলার সামনে নিয়ে মেঘলার দিকে ঝুকে বলে,
– বেশি ভেবো না বেবিডল। তোমার বাড়িতে আমার এক গুপ্তচড় আছে। তোমার প্ল্যান সব আমি জানি যখন থেকে তুমি প্ল্যানটা করেছো।
মেঘলা চোখটা খিচে বন্ধ করে কিছুক্ষণপর কাঁদো কাঁদো মুখে কাব্যর দিকে তাকায়। কাব্য মিট মিট হাসছে। মেঘলার বোঝা হয়ে গেছে যে সে ধরা পড়েছে। ধরা পড়েছে না ওর প্ল্যান হ্যাক হয়ে গেছে। এখন ওর সামনে আর ঢং করে লাভ নেই। এখন যে করেই হোক জানতে হবে এই ঘর শত্রুটা কে। মেঘলা করুণ দৃষ্টিতে বলে,
– কিভাবে জানলেন?
– ঘর শত্রু বিভীষণ।
চলবে…. ❤
#তুই_আমার_কাব্য 🍂
#Writer: Anha Ahmed
#Part: 32
.
🍁
.
আকাশ কুসুম চিন্তা করছে মেঘলা। কে এই ঘরশত্রু? বাড়ির প্রতিটি মানুষ, দারোয়ান, মালি সবাইকে তার সন্দেহ করা শেষ কিন্তু তার কাছে কাউকে এমন মনে হচ্ছে না। কাব্য কি বোকা বানানোর চেষ্টা করছে? ব্যাটা বজ্জাতকে বিশ্বাস নেই। বানায়তেও পারে। তাই মেঘলা আর বোকা হবে না ভেবে একটা ভাব নিয়ে বলে,
– আপনার কি আমাকে এতটা বোকা মনে হয়? কি ভাবে কি আমায়? আমার মাথায় কিছুই নেই? শূন্য মাথা নিয়ে ঘুরি আমি?
মেঘলার পাশের টেবিলে কিছু ফল রাখা ছিলো। কাব্য সেগুলো থেকে কিছু আঙ্গুর নিচ্ছে। আঙ্গুর
ছিড়ছে আর বলছে,
– বাহ্! তোমাকে যতটা বোকা ভেবেছিলাম ততটাও না। কি সুন্দর নিজের সম্পর্কে সব সঠিক তথ্য পেস করলে। বুদ্ধি হয়েছে একটু।
মেঘলা একটু পার্ট নিতে যাবে তখনই কাব্যর কথাগুলো আবার ভাবলো। কি বুঝাতে চাইলো? বোকার মতো মুখ করে কাব্য আবার জিজ্ঞাসা করেও বসলো,
– আপনি কি বুঝালেন বুঝলাম না ঠিক। মানে আপনি কি আমার সুনাম করলেন নাকি বদনাম?
– দুটোই করেছি।
মেঘলা মুখ ফুলিয়ে যাচ্ছে আর রাগে ফুসছে। অপমান আর অপমান। এতো তাচ্ছিল্যতা আর মেনে নেওয়া যাবে না। সুদে আসলে শোধ তোলার এক গভীর ষড়যন্ত্র কষছে মেঘলা। কি লাভ কি? সেই তো অন্যের জন্য গাড্ডা খুঁড়ে সেখানে নিজেকেই পড়তে হবে। ব্যাটা কাব্য বহুত চালাক। নিশ্চিয় গর্ভে থাকাকালীন প্রচুর বাদাম খেয়েছেন কাব্যর মা।
কাব্য পাশে রাখা ছোট্ট একটা ব্যাগ মেঘলার দিকে ছুড়ে দিলো। হঠাৎ গায়ের উপর এরকম করে কিছু পড়ায় মেঘলা চমকিয়ে ওঠে। রেগে গিয়ে মৃদু চিৎকার করর বলে,
– এইটা কি হলো? এইভাবে কেউ কিছু ছুঁড়ে মারর? আপনাকে না মাঝে মাঝে খুন করতে ইচ্ছে করে আমার।
– বাকি রেখেছো কোথায়?
– কি?
– নাথিং… ওইটা খোলো আর যা আছে তা ইউজ করো।
– কি এটায়?
– আমার চোখ জোড়া নিয়ে তারপর দেখো। তোমার তো চোখ নেই কি না?
মাঝে মাঝে মেঘলার মনে হয় খোদা মনে হয় এ লোকটাকে বাঁকা হাড় দিয়ে তৈরী করেছেন। সুন্দর করর কথায় বলতে পারেনা। বিরক্তভাব নিয়ে ব্যাগটা খুলে দেখলো কালো কাপড় জাতীয় কিছু। ভালো করে না খুলেই কাব্যর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিলো ওগুলো হাতে নিয়ে। কথার ধরনে ছিলো প্রচন্ড বিরক্তির সুর।
– এগুলো কিভাবে ইউজ করবো? কি করে ইউজ করবো?
কাব্য মেঘলার প্রশ্নে মাথা নিচু থাকা অবস্থাতেই ডেভিল স্মাইল দিয়ে মেঘলার দিকে তাকিয়ে বলে,
– আমার হেল্প লাগবে? মানে ইউজ করতে সাহায্য করবো?
– না জানলে সাহায্য করবেন না?
বলেই মেঘলা হাতের কাপড়গুলো ভালো করে খুলিয়ে দেখে কালো প্যান্ট, কালো আর ধূসর রঙের টি-শার্ট আর একটা পাতলা কালো হুডি। ওগুলো দেখে চোখ বড় বড় করে একবার জামাগুলোর দিকে কাব্যর দিকে তাকিয়ে একটা মেকি হাসি বলে,
– না না। তার কোনো দরকার নেই। আমি এগুলো ইউজই করবো না। হে হে সাহায্যর প্রশ্ন তে আসেই না।
– তুমি পড়বে না?
– কোনো প্রশ্নই আসে না।
– ওকে
হাতে থাকা ফোনটায় ডায়াল করর কানে নিয়ে রিলাক্স মুডে কথা বলতে শুরু করলো,
– হ্যালো! ভাবি! আমি কি কোনো ভাবে বিরক্ত করলাম? … ওহ্! তাহলে তো ভালোই হলো। আচ্ছা তোমাকে না কিছু জানানোর ছিলো।….. হুম খুব দরকারি। ওই যে…….
আরে কিছু বলার আগেই মেঘলা বেড থেকে দ্রুত নেমে ছু মেরে ফোন নিয়ে কেটে দেয়। বেচারি মুখ করে জামাগুলো পড়ার সম্মতি নিয়ে ওয়াশ রুমে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর বের হয়ে এলে দেখে কাব্যর কানে। মেঘলন গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসছে আর কাব্যর দিকে তাকিয়ে মনে মনে ওর গুষ্টি উদ্ধার করছে।
পায়ের শব্দ পেয়ে কাব্য মেঘলার দিকে চোখ ঘুরালো। কয়েক সেকেন্ড শুধু নিরবে দেখে গেলো। মুখে তেমন কিছু বললো। তবে মনে মনে শুধু একটা একটা শব্দ উচ্চারণ করলো,
– হায়!
মেঘলা সামনে এসে দাঁড়াতেই আবারো মেঘলার হাত ধরে টেনে দরজার কাছে নিয়ে গিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
– হুসসসস! একটা কথাও যেনো মুখ গিয়ে বের না হয়। চুপচাপ আমার সাথে আসবে। যেখানে নিয়ে যাবো সেখানে যাবে না হলে কিন্তু সবাইকে সব বলে দেবো।
– আরে কিন্তু যাচ্ছিটা কোথায় তা তো বলবেন?
– চোখ কি সাথে নেই? থাকলে শুধু দেখে যাও। পৌঁচানোর পর ঠিকই বুঝবে।
– আমার ভয় লাগছে। কেউ দেখে নিলে মান ইজ্জত সুরমা নদীতে ভেসে যাবে।
– ইজ্জত ভাসবে কিনা জানি না তবে আর একটা কথা বললে তোমায় সুরমা নদীতে ফেলে আসবো।
মেঘলা আর কোনো কথা বললো না। কেবিনের লাইট বন্ধ করে দরজাটা সামান্য ভিরিয়ে দিলো কাব্য। এরপর মেঘলা চুপচাপ কাব্যর পেছনে পেছনে চলতে থাকলো।
বেশ অনেকক্ষণ সময় লাগলো হাসপাতাল থেকে বেড়োতে। এতো রাতে লুকিয়ে হাসপাতাল থেকে বের হওয়া খুব একটা সহজ না। এসেই কাব্য লম্বা একটা নিঃশ্বাস ছাড়লো। সামনে একটা ব্লু আর একটা ব্লাক কম্বিনেশনের বাইক। কাব্য ওঠে মেঘলা বাইকের পেছনে বসতে ইশারা করলো।
মেঘলা একটু ভয়ে আছে কোথায় যাচ্ছে এইটা নিয়ে কিন্তু তার থেকেও ওর বেশি ভালো লাগছে এতো রাতে বাহিরে এসে। রাতের শহরটা অধিকাংশ মেয়েদেরই দেখার ভাগ্য জুটে না। তার মধ্যে বাইকে ঘুরার তো আরো না। আর তার মধ্যে সেখানে কাব্য। উপরটা না করলেও ভেতরেটা তো দুই পায়ের উপর সুস্থ ভাবে দাঁড়িয়ে রাজি। তাই কোনো কথা না বলেই পেছনে গিয়ে বসলো।
কিছুদুর যাওয়ার পর কাব্য একটা দোকানের সামনে গিয়ে থামলো। আশে পাশে সমস্ত দোকান বন্ধ। একমাত্র এই দোকানটাই খোলা। এমন সময় এরকম একটা দোকান খোলা দেখে মেঘলার একটু অবাক হলো। দোকানটাও একটু অন্যরকম, ভিন্ন ধরনের। দেখে ছোট খাটো রেস্টুরেন্ট টাইপ লাগছে। পাঁচ ছয়টা ছোট ছোট ছনের ঘরের মতো। সামনের কিছুটা রেস্টুরেন্টের মতো করে পিছন সাইডে ওরকম করে ব্যবস্হা করা সবগুলাই অন্ধকার শুধু দোকানদার যেটায় আছেন সেটায় লাইট জ্বলছে। বেশ অন্যরকম জায়গাটা। না রেস্টুরেন্টে বলা যাচ্ছে আর না ধাবা। কাব্য মেঘলাকে নামতে বললো। মেঘলা নেমেও গেলো। তারপর গাড়িটা পার্ক করে মেঘলার কাছে এসে দাঁড়িয়ে বলে,
– চলো কেক খাই। খিদে খিদে লেগেছে। আশে পাশে তো কোনো দোকানই খোলা নেই এইটা ছাড়া।
– তো কি এতো রাতে কেউ কেক খায়?
– তো তোমার জন্য কি তোমার শ্বশুর মশাই কোনো রেস্টুরেন্ট খোলা রেখেছে যে সেটায় যাবো। কথা না বাড়িয়ে চলো।
কাব্য আগে আগে হেঁটে দোকানদারকে কাছে গেলো। চারপাশটা একদম সুনসান। মেঘলা চারপাশটা দেখে একা না থেকে জোড়ে হেঁটে কাব্যর পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। মেঘলার উপস্থিতি পাশে পেয়ে ওর দিকে তাকিয়ে তিল পরিমাণ হাসি দিয়ে দোকানদারের উদ্দেশ্যে বলে,
– মামা! বালা আছো নি?
– জ্বি অয়, বালা আছি । কিতা অবস্থা?
– বালা । রাইত যে অইচে বহুত, কিতা হরেন । ইগো কেক নি? আমারে দিবায় নি?
– জ্বি অয়। আমি এগু বালা ফাই। যে মজা অয় গো। দমলও।
– অয়। যে বুক লাগছে গো। আমারে..
মেঘলা তখনই সাথে সাথে বলে ওঠে,
– এই আপনারা কি বলছেন? সিলেটি কেনো বলছেন? বাংলায় বলেন। আমি সিলেটি বুঝি না।
কাব্য মেঘলার কথায় ফিক করে হেসে বলে,
– এতোদিন সিলেটে আছো তাও সিলেটি মাততে জানো না? জানোটা কি?
– আপনার মতো তো অকাজে ঘুড়ে বেড়াই না যে নতুন করর আঞ্চলিক শিখবো।
– পারলে তো শিখবে। জানোই যে পারবে না তাই শিখো না।
– হে তাইই। হয়েছে? এবার চুপ করেন।
– ওকে! তবে এক শেষ বলি?
মেঘলা চুপ থেকে কাব্যর দিকে তাকিয়ে সায় দিলো। তখনই কাব্য আস্তে আস্তে বলে,
– আমি তোমারে যে বালা ফাই গো।
মেঘলা কাব্যর কথা শুনে ড্যাব ড্যাব করে তাকায় আছে। ওনার মুখে এমন ভাষা যেনো একদম বেমানান। শুনতেও কেমন যেনো অস্বস্তি লাগছে। আরো বেশি অস্বস্থি লাগছে কি বলছে তা পুরো পুরো বুঝতে না পেরে। মনে হচ্ছে যেনো চাইনিজ মুভির পার্ট দেখলো। কোনো কথা বলর যেমন শুধু দেখে যেতে হয় তেমন। তবর চাইনিজ মুভি চাইলেই ইংরেজি সাব টাইটেলে শোনা যায়। এইটার সেই জো নেই। নিজের সামনেই কথা বলছে কিন্তু তা না বুঝতে পারা এই মুহুর্তে মেঘলার কাছে সবচেয়ে বেশি বিরক্তকর লাগছে। ওরা যদি মেঘলার বদনাম করে তাও মেঘলা বুঝতে পারবে না। সামনা সামনি বদনাম। কি সাংঘাতিক ব্যাপারটা। শেষের কথাটাও বুঝতে পারে নি। কিছুক্ষণ তাকিয়ে দেখে কৌতুহল বসত জিজ্ঞেসা করেই বসলো,
– এইটার মানে কি আমি তোমার মাঝে অনেক ভালো গুণ পাই এইটা?
মেঘলার অর্থ রুপান্তর শুনে কাব্যর অন্তর আত্মা হেসে কুপোকাত। কি বলবে বুঝতে না পেরে অন্য দিক ফিরে কিছুটা হেসে এগিয়ে গিয়ে বলে,
– বুঝতে হবে না। আসো ভেতরে।
মেঘলা মুখ গোমরা করে ভিতরে গিয়ে বসতেই লাইট জ্বলে উঠলো। লাইটিং আর ডেকোরেশন দেখে মেঘলা শুধু তাকিয়েই রইলো। দেখে মনে হচ্ছে যেনো এইটা ওদের জন্যই বিশেষ করে করা হয়েছে। কিছুক্ষণ পর দোকানদার একটা ছোট খাটো কেক সামনে এনে রাখলো। মেঘলা দোকানদারকে দেখেই জিজ্ঞাসা করে বসে,
– মামা এতো রাতে এতো সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছেন যে? এইটা কি সবসময়ই থাকে নাকি…
– না না মামণি আসলে কি হয়ছে বলো তো তোমরা আসার আগে এখানে কিছু ছেলে মেয়ে জন্মদিন পালন করে গেছে, ওদেরই এসব। খোলা হয় নি আর কি।…. আচ্ছা আপনারা কি খালি কেকই খাবেন নাকি আরো কিছু?
কাব্য ফোনে কথা বলতে বলতে একটু পাশে গিয়েছিলো। ফিরে এসে দোকানদারের কথার জবাব দিতে যাবে তখনই মেঘলা কাব্যকে বলে ওঠে,
– এই এই শুদ্ধ বাংলায় বলবেন।
কাব্য মুচকি হেসে দোকানদারের উদ্দেশ্য বলে,
– কেক ছাড়া আরো কিছু আছে নাকি?
– আছে আছে। সবই আছে। কি লাগবে সেইটা বলেন শুধু।
– আমি তো ভাবলাম শুধু কেকের দোকান। আচ্ছা মেনু কার্ড আছে নাকি?
– কেকটা স্পেশাল তো তাই ওটাই সাজানো থাকে বেশি। তবে এর পাশাপাশি সবই আছে।
লোকটা মেনুকার্ড কাব্যর দিকে এগিয়ে দিলো। কাব্য হালকা কিছু অর্ডার দিয়ে বসে একবার ঘড়ির দিকে তাকালো। চেয়ারটা একটু এগিয়ে মেঘলার দিকে তাকিয়ে দেখে সে আশেপাশে তাকাচ্ছে। মেঘলাকে ডাক দিয়ে বলে,
– কেকটা কাটবে নাকি বসেই থাকবে।
– কেক কাটবো কেনো? জন্মদিন থোরি হে। আর এতো রাতে কেক খায় কে?
– ভুত প্রেত খায়।
– জ্বি। ভুত প্রেত আর পাগলরাই খায়। আপনার কেক আপনিই কাটুন।
– ওকে! নো প্রবলেম। আমিই কাটবো। বাট আমি যখন কাটবো তখন তুমি উইশ করবে। যাষ্ট মনে করো আজ আমার বার্থ ডে ওকে!
– অদ্ভুত! উইশ করার কি আছে? এমনিই কি কাটা যায় না?
– না। আমার ইচ্ছে করছে না।
– করবো না।
– ফোন দিয়ে বলে দেবো কিন্তু
– ভালো হচ্ছে না কিন্তু বলে দিলাম। ব্যাক মেইল কথায় কথায়।
– ভদ্র মানুষ হলে এমন করতে হতো না।
কাব্য কাটতে যাবে তখনই কিছু একটা মনে করে চেয়ার থেকে ওঠে গেলো। কাব্যকে ওঠতে দেখে মেঘলা কাব্য দর দিকে তাকিয়ে থাকে। কাব্য মেঘলার পাশে এসে ওকেও উঠতে বলে। মেঘলা বাধ্য মেয়ের মতো ওঠে গেলে কাব্য চেয়ারটা সড়িয়ে মেঘলার পেছনে গিয়ে চাকুটা মেঘলার হাতে মুঠোয় করে ধরে। পেছন থেকে মেঘলাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে আছে। মেঘলার হাত কাব্যর হাতে মুঠোয়। কাব্য এমন কিছু এখন করবে তা যেনো মেঘলার কল্পনার অতীত ছিলো। কাব্য এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ছোঁয়ায় পুরো শরীর জমে বরফ হয়ে গিয়েছে। না নরতে পারছে আর না সে নিজে নরতে চাচ্ছে। অদৃশ্য অনুভুতির বেড়াজালে বন্দি হয়ে আছে, যে বেড়াজাল থেকে মুক্তি পাবার কোনো ইচ্ছাও তার নেই।
চলবে….. ❤