তুই আমার জানপাখি পর্ব-২৭ এবং শেষ পর্ব

0
3140

তুই আমার জানপাখি
Faria Siddique
Last part

এভাবে কেটে গেল ৩ মাস।।।।।
এই তিন মাসে আমি আর শানকে বিরক্ত করি নি।।।।।
অনেক অভিমান জমে গেছে।।।।
ওইদিনের পর থেকে আমি আর শানের সাথে কথা বলার চেস্টা করি নি।।।
শানও আমার সাথে কথা বলে নি।।।
এর মাঝে রুশারও বেবি হয়ে গেল।।।।একটা ছেলে বাবু হয়েছে।।।।
ওর নাম রেখেছেল ফারান সিদ্দিকী আদর।।।।।।
ওর বয়স ১৫ দিন।।।।।।
সারা আর সামিয়াও লন্ডন চলে এসেছে।।।
জন আর বিশালের পরিবার তাদেরকে মেনে নিয়েছে।।।।
মেহেকও দুই মাসের প্রেগন্যান্ট।।।।

এই তিনমাসে সবার জীবন পাল্টালেও আমার জীবনের কোন পরিবর্তন হয় নি।।।।
কিন্তু হে এই তিনমাস রাতের বেলা ওই লোকটা আসতো।।।।আমি যতই না করতাম আরও বেশি করে আসতো।।।।।এসে এসে আমাকে বিরক্ত করতো।।। কিন্তু তার মুখে সবসময় মাস্ক পরা থাকতো।।।।যার কারনে আমি মুখ দেখতাম না।।।।
আজকে সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে নামাজ পরে ভার্সিটির জজন্য রেডি হয়ে নিচে গেলাম।।।এরপর নাস্তা করে বের হয়ে গেলাম।।।।।
ভার্সিটিতে গিয়ে দেখি বিশাল,জন,সামিয়া,সারা সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করছে।।।
আমি গিয়ে সবাইকে হাগ করলাম।।।
তারপর আমরা যে যার ক্লাসএ চলে গেলাম।।।।
আজকে শান স্যার আসে নাই।।।।।।তাই তার ক্লাসটা আমাদের অফ ছিল।।।।
সবগুলা ক্লাস শেষ করে আমি বাসায় চলে আসলাম।।।।।
আজকে কিছু কাজ থাকায় বাসায় আসতে আসতে রাত হয়ে গেছে।।।।
আমি বাসায় এসে দেখি পুরা বাসা অন্ধকার।।।।
আমিঃকেউ আছে?????
আমি আরও কয়েকবার ডাকলাম কারোর কোন সাড়া পেলাম না।।।।
আমি আবার ডাকতে যাব তার আগেই লাইট অন হয়ে যায় এবং সবাই একসাথে বলে উঠে happy birthday……
আমিঃআমার তো মনেই ছিল না।।।।।।
ভাইয়ারাঃতোর birthday কিন্তু আমি ভুলি নাই।।।।।।আমরা আমাদের টুকুর birthday ঠিকই মনে রেখেছি।।।।
সবার সাথে মজা করে আমি আমার রুমে চলে আসলাম।।।।
আমি ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতেই দেখি আমার খাটের ওপর একটা চিরকুট পরে আছে।।।।

চিরকুট
তারাতারি ছাদে চলে আসো।।৫ মিনিটের মধ্যে।।।।।
আমি কিছুই বুঝলাম না।।।।।।আমি চিরকুটটা ফেলে দিলাম।।।।ঠিক সেই সময়ে আমার রুমে লোডশেডিং হয়ে যায়।।।।
আমিঃএটা কি হল।।।।
হঠাৎ মনে হল কেউ আমার কামিজের ভিতরে আমার পেটে হাত দিয়ে খুব শক্ত করে আমাকে জড়িয়ে ধরে আছে।।।।
তার গায়ের গন্ধটা খুব চেনা চেনা লাগছে।।।।।
আমিঃরুদ্র।।।।
রুদ্রঃজানপাখি।।।।।
আমিঃরুদ্র রুদ্র।।।।।।
রুদ্রঃআর দেরি না করে তারাতারি ছাদে যাও।।।
আমি আর কোন কথা না বলে তারাতারি ছাদে চলে গেলাম।।।।
ছাদে গিয়ে দেখি খুব সুন্দর করে ছাদ সাজানো হয়েছে।।।।
লাল গোলাপের পাপড়ি দিয়ে অনেক বড় একটা লাভ শেপের মধ্যে একটা টেবিলে কেক রাখা আর পাশেই লেখা happy birthday janpakhi…..
আমি এসব কিছু দেখে কান্না করে দিলাম।।।।ঠিক তখনি কেউ আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আমার গাড়ে নাক ডুবিয়ে বলল happy birthday janpakhi….
আমিঃরুদ্র।।।(কাপা কাপা গলায়)
রুদ্রঃহুম।।।।আমি তোমার রুদ্র।।।।।।।
আমি এবার পিছনে ফিরে দেখি শান।।।
আমিঃশান!!!!!!!!!!
রুদ্রঃ আমিই রুদ্র আবার আমিই শান।।।।
আমি আর কিছু না বলে রুদ্রকে জড়িয়ে ধরলাম।।।।
আমিঃকিন্তু তুমি তো মারা গিয়েছিলে????
রুদ্রঃওইসব সব আমার প্লান ছিল।।।।
আমিঃবুঝলাম না।।।।
রুদ্রঃ আসলে আমি দুই বছর আগে আমার মিশনে পুরাপুরি সফল হতে পারি নি।।।।দুবাইয়ের ডন আমার হাত থেকে পালিয়ে যায়।।।আর আমার ধারণা ছিল সে আমাকে মারার চেস্টা করবে।।।।আর তাই আমি আমার পিএ কে বললাম আমার মরার খবর ছড়িয়ে দিতে।।।।আর সে তাই করল।।।।।।এই দুই বছর আমি তোমার কাছে যাই নি কারন এতে তোমার লাইফ রিস্ক হতে পারে।।।।আর যখন শুনি তোমরা লন্ডনে আসতাছো আমি ঠিক করলাম আর না তোমার থেকে আর দূরে থাকব না।।।।তাই তো শান সেজে তোমার কাছাকাছি ছিলাম।।।।
আমিঃকিন্তু তুমি আমাকে তোমার পরিচয় দেও নি কেন???
রুদ্রঃআমি চেয়েছিলাম মিশন শেষ করে তোমার সামনে এসে দাঁড়াব।।।তাই তো কালকে মিশন শেষ করে আজকে তোমার সামনে এসে দাঁড়ালাম।।।
আমিঃকিন্তু তুমি জানলে কি করে যে আমি এখনো তোমাকেই ভালবাসি???
রুদ্রঃজানো তোমাকে রাতের বেলায় খুবি সুন্দর লাগত..(বাকা হেসে)
আমিঃতার মানে রাতের ওই বজ্জাত লোক টা তুমি!!!!!!!!!
রুদ্রঃyes……
তারপর আমি আর রুদ্র নিচে গিয়ে সবাইকে সবকিছু খুলে বললাম।।।।রুশা তো কান্না করতে করতে শেষ।।।।
দেখতে দেখতে আমার আর রুদ্রের বিয়েও হয়ে গেল।।।।

৫ বছর পর

আমার আর রুদ্রের একটা মেয়ে হয়েছে।।।।সারা আর জনের একটা ছেলে আর বিশাল আর সামিয়ার জমজ ছেলে মেয়ে হয়েছে।।।আর মেহেকের একটা মেয়ে হয়েছে।।।।।।
আমাদের মেয়ের নাম ফারিন খান অদ্রি।।।।
জনের ছেলের নাম জাইন।।।। বিশালের ছেলে মেয়ের নাম ইশান আর ইশানি।।।
আর আমার বড় ভাইয়ার মেয়ের নাম মেহের সিদ্দিকী।।।।।
অদ্রির বয়স ৪ বছর, জাইনের বয়স ৫ বছর।।।ইশান আর ইশানির বয়সও ৫ বছর।।।।আর মেহেরের বয়স সাড়ে ৪ বছর।।।।আর আদরের বয়স ৬ বছর।।।।

আজ আমার আর রুদ্রের বিবাহবার্ষিকি।।।
পুরা বাড়ি সুন্দর করে সাজানো হয়েছে।।।।।
এই ৫ বছর আমার সাথে রুদ্র কখনো ধমক দিয়ে কথা বলে নি।।।।।।বরং প্রেগন্যান্সির সময় আমার সব আবদার পুরন করেছে।।।।।
রুদ্রই আমার জীবনের বেস্ট পাওয়া।।।।

সমাপ্ত।।।