তুই আমার পর্ব-০৪

0
2655

#তুই__আমার
#লেখাঃ সাফিয়া_জান্নাত_মুন
#৪র্থ পর্ব

——-কাব্য দৌড়ে এসে মেঘাকে জড়িয়ে ধপ কে গড়িয়ে পড়লো মেঝেতে।

ঝনঝন শব্দে ভেঙ্গে পড়লো মাথার উপর ঝুলে থাকা ক্যান্ডেলা টা। হাজারো কাঁচের শব্দ এত তীক্ষ্ণায়স শব্দ করতে পারে তা বুঝার বাহিরে ছিলো। কাঁচের টুকরো মেঝের সাথে বারি খেয়ে ছিটকে ছিটকে পড়েছে।
কিছুই কাঁচ কাব্যর হাতে বিধে গেছে। এতো বড় একটা ঘটনায় মেঘা ভয়ে কাঁপতে শুরু করলো। ছোটখাটো বিষয়গুলো তে মেঘা ঘাবড়ে যায় আর সেখানে এত বড় একটা ঘটনা সে যে মারাত্মক ভাবে ভয় পেয়ে গেছে সেটা শুধু তার মুখ দেখলে বুঝা যায়।
মেঘা জ্ঞান হারালো চারপাশের আহাজারি সে নিতে পারলো না। যদি আজ তার জীবনের শেষ সময় হতো কতো নিসংশ্রো মৃত্যু টা না তার হতো। হাজারো কাচের টুকরো বিধে যেতে শরীরে। চামড়া ভেদ করে ভিতরে ঢুকে গেলে কি ব্যাথা না অনুভব হতো,,,
!
!
!
এতো বড় একটা দূর্ঘটনা আদৌ ঘটতে পারে তা নিয়ে সবার ভাবনা চিন্তার শেষ নেই।
সোফায় শুয়ে রাখা হয়েছে মেঘাকে মাথার কাছে মিশু বসে ডুকরে ডুকরে কাঁদছে।

মেঘার থেকে সবাই বেশি কাব্য কে নিয়ে চিন্তিত কাব্যর বা হাতে এক না বেশ কিছুই কাঁচের টুকরো বিধে গেছে। তার তা থেকে রক্তপাতের সূত্র। সে না তার হাত ডেসিন করতে দিচ্ছে না কারো কথা শুনছে।
এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মেঘার দিকে।

মেঘা চোখে মেলে তাকিয়ে নিজের পাশে মিশুকে দেখলো। মিশুর, হাতজোরা শক্ত করে চেপে ধরলো ছেরে দিলেই জানি সে পালিয়ে যাবে।
মেঘা চারদিকে চোখ মিলে তাকলো কাব্যর দিকে চোখ পড়তে নামিয়ে নিলো সে।
!
!
মেঘার জ্ঞান ফিরায় সবাই স্বস্তির নিশ্বাসপ্রশ্বাস ফেললো। মেঘাকে রুমে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে সাথে মিশু কে পাঠানো হয়েছে।
এমন একটা ঘটনার পর অনুষ্ঠানের আর কিছুই বাকি থাকে না, সবাই মেঘার জ্ঞান ফিরার আগে চলে গেছে।
নানী গজগজ করতে কখন নিজের রুমে চলে গেছে।
কাব্যর মা খালা কাব্যর ডেসিন করে দিতে চাইলেও তার জেদের কাছে বরাবরো হাড় মানছে।
কবির ফাস্টএইড বক্স নিয়ে এসে জোরপূর্বক তার মা খালা আর বাবা কে তাদের রুমে পাঠিয়ে দিলো সারাদিনের অনেক ক্লান্তিকর দিন কেটেছে সবার।

কবির কাব্যর পাশে বসে একটা একটা করে কাঁচের টুকরো বের করছে আর আহ উঁহু করছে কিন্তু কাব্যর মুখ দিয়ে কোনো কথা বের হচ্ছে না সে জানো পাথরেরন্যায়ে বসে আছে। দুনিয়াদারি কোনো দুঃখ কষ্ট তাকে ছুঁয়াতে পারছে না।

—–কাব্য

নিশ্চুপ

—-তোর কি হয়েছে বলতো? আর কোনো দিন এতটুকু ব্যাথা পেলে চেঁচিয়ে সারাবাড়ি মাথায় তুলতি আর আজ এত এতো ব্যাথা পেয়েছিস তাও তুই নিশ্চুপ।

—কিছুই কিছুই ব্যাথার কাছে এই ব্যাথা টা সামান্য ভাই। এই ব্যাথা টা তো শরীরে আঘাত করেছে আর কিছুই ব্যাথা যে মনকে ক্ষতবিক্ষত করে চলেছে প্রতিনিয়ত। এই ব্যাথা সরে যাবো কিন্তু মনের ব্যাথা সারবে কি করে?.

— কি হয়েছে তোর? এতো কঠিন কঠিন কথা বলে দিছিস অনায়াসে।

— কই কঠিন ভাই?

–আমি জানি না তোর কি হয়েছে কিন্তু আজকাল বড্ড বেপরোয়া হয়ে উঠেছিস তুই। নিজের প্রতি একটু খেয়াল রাখ।

—নিজের মানুষগুলো খেয়াল রাখেনি আর
ত্বাচ্ছিল্য হাসি হেসে।

বিষয়টা গম্ভীর ভাবে উপলক্ষ করলো কবির। সারাদিন এর ক্লান্তি তার ঘারে এসে চেপেছে। ইচ্ছে থাকলেও সে নিজের ভাইয়ের পাশে বসে সারারাত কাটাতে পারছে না। সারাদিনের অফিসের চাপ সামলাতে সামলাতে নিজেকে এখন ব্যস্তনগরীর শ্রেষ্ঠ নগরবাসী হিসাবে বোধ হয়।

—কাব্য রুমে যা।
কবির ফাস্টএইড বক্স টা নিয়ে উপরে উঠে গেলো গন্তব্য তার বিছানা নিজের রুমে গিয়ে সে চিতপটাং হয়ে শুয়ে পড়বে এখন আর তার অন্যকাজ মাথায় আসছে না।

যে যার রুমে চলে গেছে পুড়া বাড়ি শুনশান চারিদিকে কোনো হৈচৈ নেই নেই কোনো শব্দ। শুধু মাঝেমধ্যে ঝিঝি পোকার ঝি ঝি শব্দে কান ঝালাপালা হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
!
!
!
মিশু মেঘার সাথে ঘুমায় না কারন টা ঠিক মহামারি কিছুই না। মিশুর আবার অভ্যাস ৩টায় উঠে ঘরময় আলো করে পড়তে বসা। বিপত্তি হচ্ছে একটু শব্দে মেঘার ঘুম ভেঙ্গে যায় মিশু পড়া সময় তার আশেপাশে কাউকে চায় না সে চরমবিরক্ত বোধ করে তাই মিশু অন্যরুমে থাকে।
আজো মিশু মেঘার সাথে থাকলো না।
আজ ও কি সে পড়তে পাড়বে? মেয়েটা বড্ড পর পর হয়ে যাচ্ছে আগে জড়িয়ে ধরে ঘুমাতো এখন একা এক ঘরে থাকে। একটু শান্তিমগ্ন গল্প করবে তার সাথে তার উপায় ও নাই। আজকের দিনে সে পাশে নেই ভাবতে খারাপ লাগে মেঘার।
!
!
!
মেঘার কপালে কিছুই একটা বিড়বিড় করছে বেশ অনুভব করছে ঘুমের ঘোর কাটতে লাগলো। ঘুম ভাব নিয়ে কপালে হাতে দিতে কারো হাতের উপর হাত পড়লো তার।
মুহূর্ত সে ঘুম থেকে প্রায় লাফিয়ে উঠলো।
নিজের সামনে কাব্যকে দেখে মেঘার ভয় ডাবল ভোল্টেজ এ বাড়তে থাকে।

কাব্য তার ভয়ের প্রতি ভ্রুক্ষেপ না করে। নিজের মতো করে মেঘার কপালে পরম যন্তে মলম লাগিয়ে দিচ্ছে।
এক দীর্ঘ নিশ্বাস ছেড়ে বললো
জানো মেঘ পাখি তোমার উপর যখন ওই বিশাল ক্যান্ডেলা টা পড়তে দেখলাম ভয়ে আমার জান যাবার উপক্রম হয়েছিলো এই বুঝি আমি তোমায়।
বলতে কাব্যর গলা ধরে এসেছে আর কিছুই বলতে পারছে না সে। তার চোখ ছলছল করছে।

কাব্য আবার মেঘার হাত টা নিয়ে মলম লাগাতে লাগাতে বললো,
তখন বেশ লেগেছে না নানী যেভাবে চুড়ি ঢুকাছিলো আমার প্রচণ্ড রাগ উঠছিলো কিন্তু আমি কিছুই বলতে পারিনি সরি গো হাফ বউ।

—তার মুখে হাফ বউ কিথা টা শুনে আমি চমকে চমকে উঠি কি সম্পর্কের মারপ্যাঁচে ফেলো আমায় খোদা।

—তুমি কিছুই বলছো না কেনো? ও মেঘ বলো কিছুই?

—আআপনি কি প্রমাণ করতে চান ভাইয়া?

—কাব্য অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো,, আমি আবার কি প্রমাণ করতে চাইবো মেঘ?

—নিজেকে ভালো।

—হাহাহাহা আমি যে ভালো সেটা আমি জানি মেঘ so ভালো প্রমাণ করতে আমি যাবো না।

এনার সাথে কথা বলতে আমার কথা অদ্ভুত ভাবে জড়িয়ে যায় মনে মনে যে কথার পাসরা সাজিয়ে ফেলি তা মুখ দিয়ে বের হবেই না আর এমন কথা শুনলে আর কিছুই বলার ও থাকে না।

—মেঘ চলো

কাব্য ভাইয়ার কথায় আমি আকাশ থেকে পড়লাম রাত ২ টা বাজে এ সময় আমায় কোথায় যাওয়ার জন্য বলছেন কাব্য ভাইয়া??

একটা প্রশ্নবোধক চিহ্ন নিজের চোখে ঝুলিয়ে নিয়ে বললাম,
আ আমি যাবো না ভাইয়া।

—-মেঘ আমি তোমার পারমিশন চাইনি বা শুনেতেও চাইনি তুমি যাবা না থাকবা?

—শুধু বলেছি চলো

—আ আমি কেনো যাবো আপনার সাথে।

—এমনি তেই তো তুমি ভীতকরনীর সর্দার আর তারপর আমায় প্রশ্ন ঝুরে ঝুরে মারছো।

আমি ভয়ে চুপসে গেছি একের পর এক কাব্য ভাইয়া কি করে চলেছে নিজে জানে। আমি চুপচাপ নিজের যায়গায় বসে আছি আমার ভাবান্তর না দেখে
কাব্য ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলো

—প্রতিবারের মতো এবারো আমার হাত পা অসম্ভব ভাবে কাঁপতে লাগলো।

—কাব্য ভাইয়া আমায় কোলে তুলে নিলে আর নিজের মতো আমাকে নিজের সাথে করে নিয়ে যেতে লাগলো।

আমার কোনো কথা তার কানে পর্যন্ত যাচ্ছে না বোধয়,, তিনি তার মতো চলছেন।
এতো রাতে যদি কেউ এই অবস্থায় দেখে কি হবে তা কি ওনি আন্দাজ ও করতে পারছেন?
আমি জোর করে নামতে চাইলাম পারলাম না যেখানে আমার ওজন ৪৭ কেজি সেখাখে কাব্য ভাইয়ার ৮০ কেজি। স্বাভাবিক ভাবে ওনার শক্তির কাছে আমি পেরে উঠবো না।

—উফ মেঘ পাখি এতো ঝটপট করছো কেনো বলো তো তোমায় পাখি ডাকি বলে কি নিজেকে পাখি ভাবতে শুরু করলে হা হা করে হাসতে হাসতে কথা টা বলেন আর আমায় গাড়িতে বসিয়ে দিলেন।
!
!
কোথায় যাচ্ছি কেনো যাচ্ছি কিসের জন্য যাচ্ছি তা আমি কিছুইতেই বুঝে উঠতে পারছি না? আজ কি করবে উনি আমার সাথে বড় কিছুই কি??
ভাবতে আমার গলা শুকিয়ে কাঠ বার বার ডোক গুলছি উদ্দেশ্য একটা গলা ভিজানো।

অন্ধকার একটা জায়গা গাড়ি নিয়ে এসে থামলেন কাব্য ভাইয়া। চারিদিকে কোনো আলোর ছিটেফোঁটা নেই গাড়ি হেড লাইটিং টা যতটুকু আলো ছড়াছে ঠিক ততটুকু দেখা যাচ্ছে।

আমি অন্ধকার কে খুব করে ভয় পাই। অন্ধকার মনে হয় আমায় দাঁত মুখ চিপে গিলতে আসে। আমার ভয়েরচিহ্ন হিসাবে যোগ হয় অন্ধকার। কাব্য ভাইয়া আমার সাথে কি করতে চাইছে এখন।

ভাইয়া নেমে অনেকক্ষন থেকে আমায় নামতে বলছে কিন্তু আমি নামছি না ভাইয়া চটে করে রেগে গেলেন আমায় টেনে নামিয়ে শক্ত করে হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছেন।
একটা গ্যারেজ টাইপ ঘরে আমায় নিয়ে এসে ছেড়ে দিলেন। চারাদিকে গাড়ি ঠিক করার সরাঞ্জম অগুচ্ছালো হয়ে পড়ে আছে।

আমি সামনের দিকে তাকাতে ভয়ে কাব্য ভাইয়ার হাত টা চেপে ধরলাম
আমার নিশ্বাসবন্ধ হয়ে আসার উপক্রম হয়েছে কেমন কেমন লাগছে আমার এ আমায় কোথায় নিয়ে এলো? আমি আর কিছুই ভাবতে পারছি না এক আকাশ ভাবনা মাথার উপর রেখে আর কিছুই ভাবতে পারছি না। ভয়ে আমি ঘামতে লাগলাম,, নিস্তেজ হয়ে যাচ্ছি,, জানি আমার দেহে থেকে আত্না টা কেউও বের করে নিচ্ছে,,,,,,,,,,,

চলবে______________________