#তুই__আমার
#লেখাঃ সাফিয়া জান্নাত মুন
# ১ম পর্ব
——–প্লিজ কাব্য ভাইয়া আমায় ছেড়ে দিন প্লিজ ভাইয়া আপনি বুঝার চেষ্টা করুন এটা সম্ভব না। প্লিজ ভাইয়া আমি আপনার পায়ে পড়ি আমি আপনার ভাবি হবো ভাইয়া।
আমার কথায় কাব্য ভাইয়া আমায় টাশ টাশ করে দুই দুটো থাপ্পড় মেড়ে দিলো,এই নিস্তব্ধ ঘরের এক কোণায় পড়ে আছি আমি। আমার সামনে যে দারিয়ে আছে তার বিষয় আমি কি বা বলি আমার নিয়তি আজ এক নিষ্ঠুর পরিহাস করেছে আমার সাথে।
কাব্য ভাইয়া আমায় এতো শক্ত করে বাহুজোড়া ধরে টেনে তুলছে আমায় ব্যাথায় চিৎকার করে কান্না করতে ইচ্ছে হচ্ছে। কাব্য ভাইয়া আমায় দেয়ালের সাথে মিশিয়ে দিলো। আমার গাল চেপে ধরে বলতে লাগলো,
——মেঘ তুমি কেমনে পারো আমার ভাইকে বিয়ে করতে, তুমি জানো না আমি তোমায় কত ভালোবাসি তোমার দিকে কেউ চোখ তুলে তাকালে তার চোখ তুলে নিয়ে আসতে ইচ্ছা হয় আমার আর সেখানে অন্যকেউ তোমায় টার্চ করবে মেঘ অন্যকেউ তোমায় বউ বলে ডাকবো মেঘ তোমার উপর অধিকার ও ঘাঁটাবে বলো মেঘ বলো
—- ভাইয়া আপনি পাগলামো কেন করছো
ভাইয়া ডাক শুনে প্রতিবারের মতো কাব্য রেগে গেলো মেঘার উপর মুহূর্ত। পাগল পাগল ভাব হয়ে গেলো কাব্যর মেঘাকে ছারে দিয়ে ছটফট করতে লাগলো কাব্য,, কি করবে সে কি করবে।
কাব্যর রাগ মাথায় চড়ে আছে। কাব্য ফুঁসে আসলো মেঘার দিকে মেঘার গলা টা চেপে ধরলো খুব শক্ত করে।
মেঘা কাব্যর হাত টা ছাড়ানোর অপ্রাণ চেষ্টা করছে কিন্তু কাব্যর শক্তির সাথে পেড়ে উঠছে না। মেঘার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে তার শরীরে ভার ধরে রাখার মতো শক্তিটুকু সে পাচ্ছে না। কাব্য মেঘার দিকে তাকিয়ে তাকে ছেরে দিলো মেঘা ধপাস করে নিচে ফ্লোরে পড়ে গেলো। মেঘা শুধু জোর নিশ্বাস নিচ্ছে বড্ড কষ্ট হচ্ছে তার।
কাব্য মেঘার সামনে হাটু পেতে বসলো দুগালে হাত দিয়ে মেঘাকে দেখছে।
—– এই মেঘ তোমার কষ্ট হচ্ছে বুঝি?
আমি কিছুই বলতে পারছি না চোখের পানির বাধ নামছে না বয়ে চলেছে।
—মেঘ কাল না তোমার ভাইয়ের সাথে এনগেজমেন্ট। আচ্ছা কোনো হাতে তোমায় রিং পড়াবে কোন হাত টা মেঘ কোন হাত টা
আমি কাব্য ভাইয়ের কথায় ভয় পেয়ে গেলাম এখন ভাইয়া আমার সাথে কি করবে কি করতে চায় সে আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। নিজের হাত দুইটা গুটিসুটি মেরে লুকিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি।
কাব্য ভাইয়ের চোখে মুখে স্পষ্ট শয়তানি হাসির ছাপ ফুটে উঠেছে।
—- দেখি দেখি মেঘ এই হাত টার অনামিকা আঙ্গুলে রিং পড়ায় না তাই না মেঘ।
—ভা ভাইয়া
—উঠো মেঘ তোমার আমার ভাবি হওয়ার খুব শখ না আমি তোমায় হওয়াছি মেঘ।
কাব্য মেঘাকে টেনে তুললো। মেঘার রুমের বা পাশে একটা জানালা আছে বেশ সুন্দর দেখা যায় যখন জানালা টা খুলে দেওয়া হয় রাতের বেলায় চাঁদের আলো ঢুকে আর দিনের বেলায় সূর্যের আলো পড়ে
মেঘা বুঝতে পারছে না কাব্য এখন মেঘার সাথে কি করবে তাকে কেনো বা জানালার সামনে এনে দাড় করালো।
কাব্য ছলছল নয়নে বললো
মেঘ তুমি আমায় যে নিউজ টা কষ্ট দিচ্ছো তার শাস্তি আমি তোমায় দিচ্ছি না পাখি বিশ্বাস করো আমি যা করছি তোমার ভালো জন্য করছি মেঘ।
—-এভাবে আপনি আমার ভালো করছেন ভাইয়া?
—-মেঘ বিশ্বাস করো আমি তোমায় এতো কষ্ট দিতাম না আমি যে তোমার অন্যকারো হতে দিতে পারবো না মেঘ যদি অন্যকেউ হতো মেঘ বিশ্বাস করো তাকে আমি খুন করে ফেলতাম কিন্তু সে তো আমার রক্ত আমার বড় ভাইয়া। আমি বাধ্য হয়ে এসব করছি মেঘ।
মেঘা কিছুই বলছে না তার নিয়তির দোশ দেওয়া ছাড়া তার কিছুই করার নেই। সে কিছুই করতে পারবে না মুখ বুঝে সহ্য করা ছাড়া তার আর করার কিছুই নেই।
কাব্য কাপাকাপা হাতে মেঘার অনামিকা আঙ্গুল টা ধরলো। জানালার দুচিপার মাঝে রাখলো
নিজের এক হাত মেঘার মুখের মধ্য দিয়ে দিলো।
মেঘার কিছুই বুঝার আগেই কাব্য জানালার চিপায় আঙ্গুল টা টেসে দিলো মেঘা চিৎকার করতে পারছে না কাব্য আগেই তার মুখে হাত দিয়ে ছিলো ব্যাথার চোটে মেঘা কাব্যর হাতে কামড় দিতে বাধ্য হলো।
মেঘার আঙ্গুল টা থেতলে গেছে রক্তের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। কাব্য মেঘাকে ছেড়ে দিলো। মেঘা বিছানায় বসে পড়লো ব্যাথার ত্যাড়োনায় মেঘা শুধু ছটফট করতে লাগলো।
কাব্য নিজের সাথে করে আনা ব্যাগ টা থেকে কটন তুলা গজ ডেটল এন্টিসেফট্রিক বের করলো ফাস্ট এইড বক্সের সব কিছুই বের করে ব্যাগে ভরে নয়ে এসেছে কাব্য। মেঘার আঙ্গুল টা নিয়ে রক্ত পরিষ্কার করতে করতে বললো
আমি বলেছিলাম মেঘ কোনো কিছুই করার আগে আমার পারমিশন নিবা কে শুনে কার কথা এখন ভুগো। তুমি কাঁদবে না মেঘা একদম কাঁদবে না।
কাব্যর না করা স্বতঃ মেঘা কান্না করে যাচ্ছে তাই এক ধমক দিতে মেঘা চুপ করে গেলো।
কাব্য চুপচাপ মেঘার আঙ্গুল টা ব্যান্ডেজ করে দিলো। মলম টা নিয়ে গলায় লাগিয়ে দিলো। আইস প্যাক টা নিয়ে কপালে ধরলো তারপর মাথায় ধরলো। এক গ্লাস পানি নিয়ে এসে ব্যাথার ওষুধ ও খাইয়ে দিলো
—-মেঘ তুমি এই আইস প্যাক টা মাথায় ধরে রাখো তুমি অনেক কান্না করেছে না পাখি মাথা ব্যাথা টা কমবে।
মেঘা নিশ্চুপ কোণো কথা তার বলতে ভালো লাগছে না সেই শক্তি টুকু তার নেই।
–মেঘ এই বিয়ে আমি হতে দিবো না জান। তুমি শুধু দেখে,আমি আর কি কি করি। তুমি টেনশন ফ্রি থাকো মেঘ তুমি শুধু আর শুধু কাব্য চৌধুরীর বউ হবে আর কারো না।
কাব্য নিজের সাথে করে আনা ব্যাগ টা দুই কাধে ঝুলিয়ে বেলকানির পাশে থাকা পাইপ বেয়ে নিচে নেমে গেলো।
অন্ধকার কুয়াশা সে মিলিয়ে গেলো তার ছায়া দেখা যাচ্ছে না।
কিন্তু আমার জীবনে যে হিংস্রতার ছায়া ফেলেছেন তার ফলাফল কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তার কোনো আইডিয়া নেই। কিছুই ভাবতে পারছি না আইস প্যাক টা মাথায় আছে তবু কিছুইতেই মাথা ঢান্ডা হচ্ছে না। আমি পালিয়ে যেতে চাই সবকিছুই থেকে অনে ক দূরে অনেক কিন্তু কিছুইক্ষন পরে আমার মাথায় আসে একমাত্র ছোট বোন মিশু টার কি হবে?
আমি যদি এভাবে চলে চাই তখন যদি মামা-মামি রাগ করে মিশুকে বের করে দেয় তখন ও কোথায় যাবে কি করবে? ওর করার কিছুই থাকবে না।
আজ মা-বাবার কথা খুব মনে পড়ছে আজ তারা বেঁচে থাকলে হয়তো আমার জীবন টা অন্যরকম হতো।
সেই ছোটবেলায় এক এক্সিডেন্ট এ মা-বাবা আমাদের দুবোন কে এতিম করে চলে গেলেন। ১২ বছর বয়স থেকে ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত ফুপুর কাছে মানুষ হলাম সুখেদুঃখে ভালোই দিন কেটে যাচ্ছিলো। ফুপুর সাথে হয়তে থেকে সুখ পেয়েছিলাম নিয়তির তার সহ্য হলো না ফুপুর চাকরিটা চলে যায় ফুপুকে তার ছেলেমেয়ে ভরণপোষণ করতে জারি হলেও আমাদের দুই বোনকে কেউও নিতে রাজি হলো না আর কেনো বা নিবে অন্যর ভার কেউ নিতে চায় না।
আমার একমাত্র মামা শরীফ চৌধুরী। তার দুইছেলে কবির চৌধুরী আর কাব্য চৌধুরী।
নিজের পছন্দের ছেলেকে বিয়ে করার জন্য আমার মামু আমার মাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছিলো আর কখনো খোজ খবর নেননি তিনি যে মারা গেছেন সেই খবর পর্যন্ত তার কাছে অজানা ছিলো। তিনি সব জানার পর আমায় আর মিশুকে জরিয়ে কেঁদেছেন অনেক কেঁদেছেন। আমি আর মিশু সেই ছয় সাত মাস থেকে মামু বাড়িতে থাকি। আমার মামিমা ও বেশ ভালো মনের মানুষ আমাদের দুইবোন কে মেয়ের মতো ভালোবাসেন।
কাব্য ভাইয়া আমাকে দেখতে পারতো না কেনো কি কারন তা বুঝে উঠতে পারিনি। তার ব্যবহার প্রথম থেকে অদ্ভুত লাগলেও আমি তেমন খেয়াল করতাম না।
এইতো দিন আগের কথা কাব্য ভাইয়া তার বন্ধুদের সাথে ৩দিনের ট্রিপে গিয়েছিলেন।
এরমধ্য মামিমা খুব অসুস্থ হয়ে পড়েন। তিনি আর মামু মিলে আমার সাথে কবির ভাইয়ার বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
এটা শুনার পর কাব্য ভাইয়া আমার সাথে এতো কিছুই করলো। কাব্য ভাইয়ার মতো এতো সুন্দর ছেলে আমায় এতো ভালোবাসে তা আমি কল্পনা করিনি কিন্তু আমি এই বাড়ির বড় বউ হতে চলেছি কাব্য ভাইয়ার সত্য আমি সবার সামনে বলবো কি করে আর মামু মামু কিভাবে বা নিবস তার যদি হার্ট এট্যাক হয় আর মামিমা যাকে মা ডাকি তার যদি কিছুই হয়। কবির ভাইয়া সাথে নিজের ছোট ভাইয়ের সম্পর্ক টা কেমন হবে? ফাটল ধরে যাবে এই বাড়িতে।
বিধাতা কি করতে চায় কি হবে এখন আগে আমি কিছুই আর ভাবতে পারছি না। আমার মাথা গরম হয়ে ফেটে পড়বে চারিদিকে এখন।
গভীর ঘুম হ্যা ঘুমে আমি কাবু হতে লাগলাম আস্তে আস্তে সব ভুলে ঘুমিয়ে পড়লাম নিজের অজান্তে।
চলবে___________