তুই যে আমারই পর্ব-০৮

0
5758

#তুই_যে_আমারই
#আঁখি আজমীর নুরা
part 8

তাই আমি প্লেটটা রেখে চোখের পানি গুলো মুছে দিলাম। চোখের পানি নাকের পানিতে চেহেরার বেহাল অবস্থা। আমি ওয়াশরুম থেকে এক মগ পানি এনে আঁখির মুখ মুছে দিলাম। তাও যেনো ফুঁপানি বন্ধ হচ্ছে না। তাই বললাম চকলেট খাবি?
কিন্তু নাহ! কোনো কথাই বলছে না। ভাব্বা ভিষণ কেঁপেছে…মনে মনে বললাম। আঁখিকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলতে লাগলাম ভাবছি, এখনতো শীতের দিন, এই সময়ে বনভোজন গেলে মন্দ হয় না। যদি কেউ একজন খাবার খেয়ে নেইতো, তাহলে ভেবে দেখতে পারি।

অমনি আমি ইয়ায়ায়া বড়ো একটা হা করে নিলাম। আর আয়াজ ভাইয়া আমার কান্ড দেখে দাঁত দেখিয়ে একটা মেকি হাসি দিলো।
আমি হা করে হাসিটা দেখতে লাগলাম। কারণ আয়াজ ভাইয়ার হাসিটা অনেক সুন্দর।
আয়াজ ভাইয়ার দিকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে, ভ্রু কুঁচকে আয়াজ ভাইয়া বলে উঠলো, কি দেখিস অমন করে? হুমম?
আয়াজ ভাইয়ার এভাবে পাল্টা প্রশ্নে আমি হকচকিয়ে গেলাম।

সাথে সাথেই মাথা নিচু করে ফেললাম।
আয়াজ আর কিছু না বলে আমাকে খাইয়ে দিতে লাগলো।
কিন্তু মুখে ভাতের লোকমাটা নেওয়ার পর আমার এক্সপ্রেশন টা চেঞ্জ হয়ে গেলো। কারণ আয়াজ ভাইয়া আমাকে পুঁইশাক দিয়ে ভাত মেখে দিয়েছে।
কিন্তু আমি পুঁইশাক দুই চোখে সহ্য করতে পারি না। আর এখন সে কিনা… ধ্যাত মুখ থেকে ভাতটা ফেলতে গেলেই আয়াজ ব্যাপারটা বুঝতে পেরে চট করে আঁখির হাতটা চেপে ধরে। আর এমন ভাবে চোখ রাঙ্গানি দেয়, ভয়ে ভাত যে চিবিয়ে খেতে হবে তাই যেনো ভুলে গেলাম। আর গিলতে লাগলাম।
বহু কষ্টে নাক ছিটকে খাবার গুলো শেষ করলাম।

এরপরে আয়াজ ভাইয়া মুখের সামনে গ্লুকোজের পানির গ্লাস টা দিলো। ভয়ে ভয়ে সেটাও সাবার করলান।
কিন্তু ঝামেলা হচ্ছে ওখানে। “মেডিসিন ”
আয়াজ চোখ গরম করে বলল এখন যদি মেডিসিন নিয়ে তালবাহানা করেছিস তো হাতে একটা স্টিলের স্কেল নিয়ে সেটা আমাকে দেখিয়ে বলল, এটা কিন্তু তোর পিঠে উড়িয়ে ফেলবো। আমাকে আর পাই কে গটগট করে সবকটা মেডিসিন খেয়ে নিলাম।

এরপর আঁখিকে খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে প্লেটে যে অবশিষ্ট খাবার ছিলো ওগুলো শেষ করে নিজের রুমে চলে গেলাম

বিকেলে
সবাই একসাথে লিভিং রুমে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। তখন আমি সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলাম, ভাবছি কোথাও পিকনিক গেলে কেমন হয়?
আয়াজের কথা শুনে আজিফা চিল্লিয়ে উঠে। আর বলে সেই হবে।
তখনই রোজিনা চৌধুরী বললেন, হঠাৎ এই প্লেনিং যে।
আয়াজ বলে উঠলো, হুমম আম্মু। আমি আবার কথা দিয়ে কথা ভঙ্গ করি না। আঁখির দিকে তাকিয়ে কথাটা বললাম।
আম্মু আমার দিকে ভ্রু কুঁচকালো। পরক্ষণেই কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসলো।
আলতাফ চৌধুরী বললেন যাবি যখন আরিফা আর অনিলাকেও বল, সবাই যায়। অনিলা হচ্ছে আলতাফ চৌধুরীর একমাত্র কলিজার ছোটো বোন। অর্থাৎ আজিফা, আরিফা আর আয়াজের একমাত্র ফুফিমনি। অনিলা চৌধুরীর হাসবেন্ড মোঃ ইকবাল মাহমুদ। তাদের এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে ইফাজ মাহমুদ। আয়াজের সমবয়সী। ভাই কম বন্ধু বেশি। একজন যেনো আরেকজনের কলিজা। ঠিক তেমনি মেয়ে ইফতি মাহমুদ ও আজিফার বেস্ট ফ্রেন্ড এর মতো। কারণ তারাও দুইজনি সমবয়সী।
আজিফা বলে উঠলো, তা মন্দ বলোনি আব্বু। সবাই একসাথে যাবো। কিন্তু কথা হচ্ছে কোথায় যাওয়া যায়?
আমি সাথে সাথেই চিৎকার মেরে বলে উঠলাম সাজেক!সাজেক!
আরে আরে আস্তে আস্তে আমরা কেউ বয়রা না তো। কানে হাত দিয়ে রোজিনা চৌধুরী বলল।
ওয়াও সাজেক! তা মন্দ বলিসনি। জায়গাটা কিন্তু হেব্বি।
আয়াজ আজিফার মাথায় গাট্টা মেরে বলল তোরতো সব কিছুই জোস লাগে। হক সেটা উগান্ডা।
যা ফাযিল।
আচ্ছা হয়েছে হয়েছে। সাজেকই ফাইনাল বলে উঠলো রোজিনা চৌধুরী।
আমার খুশি আর দেখে কে? ইয়ায়াহুহুহুহুহু। কিছু একটা মনে পরতেই মুখটা দুইহাত দিয়ে চেপে ধরলাম। কারণ সামনে যে আয়াজ ভাইয়া আছে সেটা যেনো খুশিতে ভুলেই গেলাম।
মুখে হাত দিয়ে ভয়ে ভয়ে ভাইয়ার দিকে তাকালাম। দেখলাম ভ্রু উঁচিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি সাথে সাথেই মাথা নুইয়ে নিলাম।
আঁখির এই কান্ড দেখে, আয়াজের হাসিতে পেট ফেটে যাচ্ছে। তাও চুপ করে আছি। অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে হালকা হাসলাম।

রাতে খেয়ে দেয়ে যে যার রুমে চলে গেলাম। আয়াজ বসে বসে ল্যাপটবে অফিসের কাজ করছে। অফিসের সকল ডকুমেন্টস কমপ্লিট করে আঁখির রুমের দিকে পা বাড়ালো। এটা তার রোজ দিনের অভ্যাস। প্রত্যেকদিন ঘুমানোর আগে আঁখির রুমে গিয়ে এক নজর দেখে আসা। আর তাই হলো।

রুমে গিয়ে দেখলাম উপুর হয়ে ঘুমোচ্ছে। গায়ে ব্লাঙ্কেটের ছিটফোঁটাও নেই। গিয়ে গায়ের উপর ব্লাঙ্কেটটা টেনে দিলাম। খাটের পাশে বসে মুখের পানে চেয়ে রইলাম। এতো মায়া মুখকানায়। গালের মধ্যে বৃদ্ধ আঙ্গুল দিয়ে স্লাইড করতে লাগলাম। আর ঠোঁটের উপর চুমু দিচ্ছি। বেশ কয়েকটা চুমু দিয়ে, নাকের সাথে নাক ঘষা দিয়ে নাকটা আস্তে করে টেনে দিলাম। কবে যে তুই বড়ো হবি। কবে তোকে মন ভরে একটু আদর করবো।আর যে পারছি না। বলেই মাথার উপর কিছুক্ষণ হাত বুলিয়ে দিয়ে বেরিয়ে গেলাম।

সকালে
সবাই ব্রেকফাস্ট করতে বসলাম তখন হঠাৎ বাবা বলে উঠলো, আচ্ছা তোরা যে পিকনিক যাবি বলছিস, তা সেটা কখন যাচ্ছিস। ডেট ফিক্সড করছিস।
-হুমম আব্বু করেছি তো
-কখন?
-আঁখির এক্সাম এর পর। এক্সাম শেষ হওয়ার কয়েকদিন পরই।
-ওহ গুড
এরপর সবাই ব্রেকফাস্ট করে যে যার যার কাজে চলে গেলাম।

এভাবে বেশ কিছুদিন চলে যায়। এ কদিনে আয়াজ ভাইয়া আমাকে পড়াশোনায় ভিষণ প্রেশারের মধ্যে রাখে। আজকে এক্সাম রুটিন দিছে। রুটিন দেওয়ার পরপরই আয়াজ ডেইলি রুটিনের আরেকটা সিডিউল দিয়ে দিলো। আর বলে দিয়েছে, পুরো যতদিন পর্যন্ত এক্সাম চলবে ততদিন আমাকে এই সিডিউল মাফিক চলতে হবে। নয়তো বেতের বারি ফ্রী তে গিফট আছে।

এরপর এক্সাম মোটামুটি ভালোভাবেই শেষ হয়। আমার খুশি আর দেখে কে? কারণ এক্সাম শেষ। মানে আয়াজ নামক প্যারাও শেষ। আহা আমারে আর পড়তে বসতে হবে নাহ।
আয়াজ ও ব্যাপারটা খেয়াল করে। আর কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসে।

আঁখির এক্সাম শেষ হওয়ার কয়েকদিন পরই আরিফা আর ওর হাসবেন্ড দিহান আহমেদ আসে। আঁখি সিঁড়ি দিয়ে উপর থেকে নামতেই আরিফা আর আরিফার মেয়ে ইলহান আহমেদ আর ছেলে অন্তু আহমেদ কে দেখে খুশিতে চিৎকার দিয়ে ওঠে।

দৌড়ে গিয়ে আরিফা আপুকে জড়িয়ে ধরলাম। এরপরে দিহান ভাইয়াকে সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করে, দিহান ভাইয়ার কোল থেকে অন্তুকে কোলে নিয়ে নিলাম।

অন্তুর এখন ছয় মাস। একদম গুলুমুলু বাবু। আর ইলহান এর ছয় বছর। এবার ক্লাস ওয়ানে পড়ে।

-আজিফা আপু ও ভিষণ খুশি। কতোদিন পর নিজের বোনকে পেলো। বিকেলে নাকি পিপিন ও আসবে। কিছুক্ষণ আগে ফোন করে জানালো।
-ওয়াও অনেক মজা হবে। কতোদিন পিপিনকে দেখি না আরিফা বলে উঠলো।

বিকেলে অনিলা চৌধুরী আর তার ছেলে মেয়ে সবাই এসেছে। রোজিনা চৌধুরী দৌড়ে গিয়ে অনিলাকে জড়িয়ে ধরলো। আর বলল আরে আপা কতোদিন পর দেখলাম। ভালো আছেনতো।
ইফাজ, ইফতি দুইজনই তাদের মামানিকে সালাম দিলো।
-রোজিনা চৌধুরী বলে উঠলো আরে থাক বাবা হয়েছে।
সবার এতো আওয়াজ শব্দ শুনে, আলতাফ চৌধুরী চোখে চশমাটা দিয়ে রুম থেকে বের হলো। বেরিয়ে দেখে বোনটা এসেছে। কতোদিন পর কলিজাটাকে দেখলো।

অনিলাও যেনো এতোদিন পর ভাইকে দেখে খুশিতে যেনো চোখ থেকে আপনাআপনি পানি পরতে লাগলো।
-দ্রুত গিয়ে ভাইকে জড়িয়ে ধরলাম। আর হুঁ হুঁ করে আবেগে কেঁদে উঠলাম।
-আরে পাগলি মেয়ে কাঁদছিস কেন? বিয়ে হয়েছে এতো বছর হয়েছে তাও যেনো এখনো ভিতরে বাচ্চা স্বভাবটা রয়েই গেলো।
বাড়ির সবাই মুগ্ধ হয়ে ভাইবোনের মিলনমেলা দেখছে।

আরিফা বলে উঠলো তোমরা কি এখন এভাবে একজন আরেকজনকে জড়িয়ে ধরে সারাদিন কান্না করে ভাসিয়ে দিবে বলে ভেবে রেখেছো নাকি।
আরিফার কথায় দুজনই তাদের ধ্যান থেকে ফিরে আসলো। আর চোখ মুছে মুচকি হাসলো অনিলা চৌধুরী।
-আলতাফ চৌধুরী বলল, ইকবাল! ইকবাল কই? ওকে দেখছি না যে? ও আসে নি?
-না ভাইয়া উনি আসেনি। বিসনেজের কাজে উনি উনি একটু বাইরে গিয়েছেন। তাই আসতে পারেনি।

সারাবিকেল অনেক মজা মাস্তিতে কেটেছে সবার।

রাতে
সবাই একসাথে ডিনার করতে বসলো। আজিফা মাছের পেটি অনেক পছন্দ করে। যেই না, রোজিনা চৌধুরী মাছের পেটি টা আজিফার প্লেটে দিতে যাবে, অমনি ইফাজ তার মামানির হাতটা ধরে পেটিটা তার প্লেটে নিয়ে দিলো।
অমনি ধপ করে যেনো আজিফার মাথায় আগুন ধরে গেলো।
-এটা কি হলো?
-কেনো কি হবে? আমি মাছের পেটি নিলাম খাবো বলে তাই।
-কেনো ইফাজ ভাইয়া তুমি দেখো নি ওটা আমাকে দিচ্ছে। তুমি কোন সাহসে নিলে।
-কেন মামানির মুখে তো আমি একবারও শুনিনি, যে এটা তোকে দিচ্ছে?
-মানে কি ইফাজ ভাইয়া তুমি জানোনা মাছের পেটি আমি লাইক করি? তুমি ইচ্ছে করেই নিয়েছো। আমি বুঝিনি ভেবেছো?
-তুই কি ভাবলি না ভাবলি তাতে আমার কিছু যায় আসে না। আমার অনেক পছন্দ তাই নিয়েছি।
হ্যাঁরে ইফাজ তুই কবে থেকে মাছের পেটি খাওয়া শুরু করেছিস বলে উঠলো অনিলা চৌধুরী। তোকেতো আগে কখনো দেখিনি।
-আগে খাইনি। বাট এখন খেতে ইচ্ছে করছে।
-ইচ্ছে না ছাই। সব আমার ভাগ কাটার চাল। বুঝি নাই মনে করছো নাকি।

উফফ তোরা থামবি! বিরক্ত হয়ে রোজিনা চৌধুরী বললেন ঢেকসি তো আরো অনেক আছে।
যার যত খুশি খা।

এদিকে আমি অসহায়ের মতো এক কোণে বসে টুকুস টুকুস করে খাচ্ছি আর ওদের সবার কান্ড দেখছি।
কারণ আমার পাশে আমার যম মানে স্বয়ং আয়াজ বসে আছে।
সেই-ই আমাকে প্লেটে যা তুলে দিয়েছে। তাই খাচ্ছি। খেতে খেতে হঠাৎ….
চলবে