তুই হবি আমার পর্ব-২৩

0
1864

#তুই_হবি_আমার??
#DîYã_MôÑî
#পর্ব__২৩
#Sanggeet_Ceremony

সাত-আট বার বমি করে ক্লান্ত হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে মেঘ। রোজ পাশে বসে নেইপলিশ দিচ্ছে নখে আর মাঝে মাঝে ফু দিচ্ছে। নেইলপলিশ রেখে এসে মেঘের মাথায় হাত রাখলো রোজ।

রোজ : এখন কাকে মিস করছো.? কার কথা মনে পড়ছে.?
মেঘ : বেসিন।

রোজ : আব আয়া উট পাহাড়কে নিচে। নেক্সট টাইম তোমার ইনা মিনা টিনাকে মিস করার আগে একবার বেসিন আর আমার রিসিপির কথা মনে করে নিবে। তাহলে দেখবে কাউকে মিস করবে না। তারপরেও যদি করো তাহলে ওগুলো বানিয়ে তোমাকে খাইয়ে দিবো।তখন বুঝবা কেমন লাগে।

মেঘ : এবার থাম প্লিজ। এখনো বমি আসতেছে।
রোজ : আর আসবে না। এটা খাও।

রোজ একটা সিভিট বের করে মেঘের মুখে ঠেসে ঢুকিয়ে দিলো। নিজেও একটা মুখে নিলো।

রোজ : কাল সাঙ্গীত। আর বাড়িতে সবাই আছে। আমার হাতের ব্যাথা একটু আছে তাহলে এতো বড় ব্যান্ডেজ কেন.? এটা খুলে ছোট করে ব্যান্ডেজ করে দাও।

মেঘ : আমার পা টিপে দে আগে। তারপর ভেবে দেখছি..
রোজ : আমাকে কি তোমার চাকরানি পাইছো.? আমি কি বলছি সেটা শোনো।

মেঘ রোজকে টেনে বুকের সাথে মিশিয়ে ওর গলায় মুখ গুজে শুয়ে পড়লো,,
মেঘ : এখন ঘুমাবো,, পা না টিপলে এমন থাক।

রোজ : আজব!!! মামাবাড়ির আবদার। ছাড়ো,,, ছাড়ো
মেঘ : একমাত্র ঘুম ভাঙবে তারপর ছাড়বো। আরে এমন করিস কেন,, আমি তো তোরইই জামাই। বউকে জড়িয়ে ধরে ঘুমানোর লিগ্যাল রাইট আছে আমার। সো নড়ানড়ি বাদ দে আর আমাকে একটু শান্তিতে ঘুমাতে সাহায্য কর।

রোজ আর কিছু বললো না। চুপচাপ শুয়ে কালকের প্লানিং করতে লাগলো। কয়েকটা ম্যাসেজ সেন্ট করে নিজেও ঘুমিয়ে গেলো। রাতে রোজকে ডেকে তুলে খাইয়ে দিয়েছে মেঘ। তারপর বাইরে গিয়ে AB এর খোজে ব্যস্ত হয়ে পড়লো।

পরদিন সকালে,, রাজ কুহুকে সুন্দর করে সাজিয়ে স্টেজের সামনে বসিয়ে রাখা হয়েছে। আয়াশ ওদের ছবি তুলছে।রুশানি আর টিনাও ছবি তোলায় যোগ দিলো। রোজ ব্যালকোনিতে দাড়িয়ে সবটা দেখছে। মেঘ স্টেজের পাশে দাড়াতেই টিনা মেঘের গা ঘেসে দাড়ালো।

রোজ : বেহায়া মেয়ে। ঠিক মেঘরোদ্দুরের পাশে চলে গেছে, বেটি চুন্নি।

মেঘ লক্ষ্য করলো রোজ রাগি লুকে ওর দিকে তাকিয়ে আছে। তাই ঘাড় ঘুরিয়ে এদিক ওদিক তাকাতেই টিনাকে পাশে দেখলো। মেঘ দ্রুত চলে আসলো ওখান থেকে। টিনা গাল ফুলিয়ে আবার কুহুর পেছনে গিয়ে দাড়ালো। রোজ আজ চেঞ্জ করে সেই নীল শাড়িটা পড়েছে যেটা মেঘ দিয়েছিলো। চুলগুলো খোপা করে আয়নার সামনে দাড়ালো,, একটা নীল টিপ আর চোখে কাজল দিলো। কিন্তু কোথাও জানি কি নেই।

রোজ : কিছু একটা মিসিং,, কাজল আর টিপ তো পড়েছি। আর কি নেইনি.? আমার লিপস্টিক লাগে না,, মেক মেক আপ এ এলার্জি, কানের দুল ঠিক আছে, টিকলি পড়েছি হাতে নীল চুরি,, পায়ে নুপুরও তো আছে। তাহলে এমন লাগছে কেন.? ফাঁকা ফাঁকা খালি খালি,, আমি কি দেখতে খারাপ হয়ে গেছি.? সত্যি সত্যি পেতনি হয়ে গেলাম না তো.?

মেঘ : বাকিটা আমি কমপ্লিট করে দিচ্ছি।

মেঘ পকেট থেকে একটা বেলিফুলের মালা বের করে রোজের খোপায় পড়িয়ে দিলো। তারপর দুইটা সোনার চেইন বের করলো,, দুইটাতেই হাফ লাভ সেইপের লকেট। মানে দুইটা লকেট মিলে একটা লাভ। তারপর একটা রোজের গলায় পড়িয়ে দিলো। আর টুপ করে নিজে একটা পড়ে নিলো। মেঘের কাজে রোজ থতমত খেয়ে যায়।

মেঘ : তুই পড়িয়ে দিবি না জানি। তাই নিজেই পড়ে নিলাম। বাব্বাহ তোকে তো বড় বড় লাগছে। এখন বোঝা যাচ্ছে তোর বিয়ের বয়স হয়েছে। দাড়া আরেকটা জিনিস বাকি।

রোজের চোখ থেকে কাজল নিয়ে রোজের কানের লতি স্পর্শ করলো।

মেঘ : নজর টিকা দিয়ে দিলাম আর কেউ তোর ওপর নজর দেবে না। আমাকে দিবি না.?

রোজ আজ অবাকের পর অবাক হচ্ছে। মেঘ এমন বাচ্চাদের মতো করছে কেন.? কি হয়েছে ওর.? মেঘের অভিমান মিশ্রিত কন্ঠ শুনে রোজ মেঘকেও নজরটিকা দিয়ে দিলো।

মেঘ : আজ আমি খুব খুশি। খুব খুব খুব।
রোজ : কারন কি.? এভাবে লাফালাফি করতেছো কেন.? আর এমন উদ্ভট বিহেব কেন করছো.?

মেঘ : আমাদের বাড়িতে বেবি আসছে। আমি চাচ্চু হচ্ছি।
রোজ : তোমার তো ভাই নাই,, চাচ্চু হচ্ছো কিভাবে.?

মেঘ : শুধু আমি চাচ্চু হচ্ছি না তুই খালামনি হচ্ছিস। আরাভ বাবা হবে। একটু আগে রিপোর্ট আসছে।

কিছুক্ষনের জন্য থমকে গেলো রোজের মুভমেন্ট। চুপ করে মেঘের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। তারপর একছুটে বাইরে বেরিয়ে আসলো। বাগানে স্টেইজের সামনে আলিজাকে ঘিরে সবাই দাড়িয়ে আছে। রুশানি আর চৌধুরি পরিবারের সবাই গিজগিজ করছে আলিজার সামনে। রোজ দু তিনবার উকি দিয়েও আলিজাকে দেখতে পেলো না। রোজ সামনে এগিয়ে গেলো কিন্তু কেউ সরছে না। রুশানি তো রোজকে আলিজার কাছে ঘেসতেই দিচ্ছে না। বারবার ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে। রোজের চোখের কোনে পানি। বিষয়টা আরাভ লক্ষ করে বললো,,

আরাভ : সবাই আলিজাকে অনেক অভিনন্দন জানিয়েছেন এবার একটু সরে দাড়ান আমার বেবির ছোটআম্মু ওকে এবং ওর আম্মুকে দেখতে এসেছে। মামনি ( রুশানি ) একটু সাইড দিন রোজ আলিজার কাছে বসবে।

আলিজা : হ্যা মামনি সড়ো। রোজ কোথায়.?

রোজ সবার পেছনে দাড়ি মাথা নিচু করে কাঁদছিলো। আলিজার ডাক শুনে মাথা তুলে তাকালো। রুশানি একপ্রকার রেগে সাইড হয়ে দাড়ালো। আরাভ রোজের হাত ধরে টেনে আলিজার সামনে দাড় করালো।

আরাভ : আমাদের বেবির লাইফে সবথেকে বড় কন্ট্রিবিউশন তোমার আর মেঘের, রোজ। তোমরা না থাকলে কখনোই আমরা নিজেদের ভালোবাসা, নিজেদের আগের জীবন টা ফিরে পেতাম না। মামনি তোমার সাথে অনেক খারাপ বিহেভ করেছে এটা যেমন সত্যি তেমনই আলিজা তোমাকে নিজের বোনের পাশাপাশি তোমার মায়ের স্নেহও দিয়েছে। তার পরিবর্তে তুমি নিজের সবটা দিয়ে তোমার আপিলাকে ভালোবেসেছো,, যত্নে রেখেছো। তাকে ঠিক ভুল বুঝতে সাহায্য করেছো যা মামনিও পারে নি।

রুশানি : আরাভভভ।
আরাভ : ডোন্ট সাউট অন মি মামনি। আমি আলিজা কিংবা রোজ নই যে আপনার সম্মান রাখার জন্য আপনার অন্যায়কে মেনে নিবো। রোজ তখন থেকে আলিজার সাথে দেখা করার চেষ্টা করছে,, আর আপনি বারবার ওকে সরিয়ে দিচ্ছেন। আরে আপনি ওকে মেয়ে বলে মানেন না ঠিক আছে। তবে আলিজা ওকে বোন হিসাবে মানে, ভালোবাসে। ওর অধিকার আছে এই খুশিতে সামিল হওয়ার।

আলিজা : আজকের দিনেও তুমি রোজের সাথে এমন করছো ? ভুলে যেওনা মামনি আজ রোজের জন্য আমি বেঁচে আছি।

রোজ : আপিলা বাদ দাও প্লিজ।
আলিজা : নাহহ। তোর অতিতের খন্ডাংশ ছাড়া কেউ কিছু জানে না। তুই প্রমিস করিয়েছিলি যেন আমি আর কলিলি কাউকে কিছু না বলি কিন্তু আমার ” মা ” তার ভুল ভাঙতে আমাকে সত্যিটা বলতেই হবে।

কলি : ছি! চাচিআম্মু এতোকিছুর পরেও তোমার শিক্ষা হলো না.? বিশ্বাস করো তোমার পরিচয় দিতেও আমার লজ্জা লাগে। ঘৃনা লাগে তোমাকে চাচিআম্মু বলে ডাকতে।

রোজ : এখনো সময় হয়নি আপিলা। সময় হোক আমি নিজে সবটা বলবো। আমার অতিতের সব ঘটনা আমার সব কাহিনি। এখন একটা শুভ মুহূর্ত। এটাকে নষ্ট হতে দিও না প্লিজ।

আরাভ : দেখুন মামনি,, এটা হলো রোজ। যে আপনার চোখের বালি। আশা করি আমার বউ এর ওপর এমন অধিকার ফলাবেন না যাতে রোজ কষ্ট পায়।

রুশানি : এই অপয়া অসভ্য বেয়াদব চরিত্রহীনা মেয়েটার জন্য তোমরা আমাকে কথা শোনাচ্ছো.? আমাকে.?

মেঘ : যাস্ট সাট আপ মিসেস রুশানি কুশান চৌধুরি। হাউ ডেয়ার ইউ টু ইউজ দিস চিপ ওয়ার্ড এগাইন্টস মাই রোজ.? কুশান আংকেল নিরুপায় হয়ে তার মেয়ের সম্পর্কে এমন শব্দ শুনতে পারেন কিন্তু মেঘ কখনো তার ভালোবাসার অপমান সহ্য করবে না। আপনি রোজকে চরিত্রহীনা বলছেন,, আপনার নিজের চরিত্র ঠিক আছে তো.? আরে রোজ তো ওর আপুর Bf এর সাথে মজা করেছিলো কিন্তু তাদের বর্তমান সম্পর্ক কি.? তারা সব ভুল বোঝাবুঝি মিটিয়ে বিয়ের পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে। আর আপনি তো নিজের বোনের সংসারেই ঢুকে পড়েছিলেন।

রোজ : চুপ করো প্লিজ,,, আপিলা কষ্ট পাচ্ছে। এমন সময় ওকে কষ্ট দেওয়া ঠিক না। আমার জন্য সমস্যা আমি চলে যাচ্ছি এখান থেকে।

টিনা : সেটাই ঠিক হবে। তুমি চলে যাও রোজ।প্লিজ।

আরীব : ওয়েট রোজ। কোথাও যাবে না,, আর আপনি (টিনা) আপনি কে.? রোজকে চলে যেতে বলার.? রোজ আমার বন্ধু। ও এখানেই থাকবে। কারোর যদি সমস্যা হয় তাহলে সে নিজে চলে যাবে। বাড়ির ভেতরেও যেতে পারে অথবা সোজা গেলে বাড়ির গেট পাবে,, সো চলেও যেতে পারে।

রুশানি : [ প্রথমে পাপড়ি আর এখন তুই,, তোদের জন্য আমি আমার সাজানো স্বপ্ন ভাঙবো না রোজ। যে করেই হোক সবটা উসুল করে নিবো। ]মনে মনে

মেঘ : তোর হাত ঠিক হয়ে গেছে.?
রোজ : হ্যা। ঠিক হয়ে গেছে তো। ( মেঘ চোখ মোটা করে তাকালো ) নাহ মানে একটু ব্যাথা আছে,, বুলেট চামড়া ঘেসে বেরিয়ে গেছে তো,, বেশি ব্যাথা থাকে নাকি।

মেঘ : আলিজাকে গিফট দে।
রোজ : রেকর্ডিং করে যা পেয়েছি তাতে একটা বাংলো কেনা যাবে। বাংলো গিফট দিবো.? জিজু বেবি হলে বাংলো গিফট দেওয়া যায়।

আরাভ রোজের কথা শুনে ফোন কানে দিয়া কেটে পড়লো।

মেঘ : এখন বাংলো দিলে বেবির মুখ দেখে কি দিবি.? আর এখন বেবিকে না বেবির মাম্মাকে গিফট দিতে হয়।

রোজ : কি দিবো.? আমার কাছে কিছু নেই।
মেঘ : আমাদের রিসোর্টের 75% তোর নামে করা বাকি 25% আলিজার নামে দে।

রোজ: কি.? এসব কবে..? কি করে.? আমি নিজেই তো জানি না আপিলার নামে করবো কিভাবে.?

মেঘ : একটা সাইন করবি আর 25% আলিজার হয়ে যাবে। পেপার্স আমার কাছেই আছে। সাইন করে আলিজার হাতে দে।

রোজ : তোমাদের জিনিস তোমরা দাও,,, আমি আমার আপিলাকে অন্যকিছু গিফট দিবো,, তোমাদের দেওয়া গিফট আমি দিবো কেন.?

মেঘ : আলিজা রোজ তোমাকে কিছু দিতে চায়। দেখো বলতে পারছে না।

আলিজা : কি দিবে.? অনেক কিছুই তো দিয়েছে। এখন একটা গান শোনালে সবার মুড সুইং কেটে যেতো।

মেঘ : হ্যা,, তা তো শোনাবে তবে #Mr রিসোর্টের 25% শেয়ার তোমার নামে করে দিতে চায়। রোজ সাইন করে দে ফাস্ট। ( রোজ ভয়ে ভয়ে এসে সাইন করে দিলো ) এই নাও পেপার্স।

আলিজা : এটা আমি নিতে পারিনা। ওটা তোমাদেরর
মেঘ : হ্যা আমাদের ছিলো,, কিন্তু আমার হবু বউ এটা তোমাকে গিফট করেছে। উপহার কখনো ফেরত দিতে হয় না। তুমি এটা না নিলে রোজ কষ্ট পাবে।

রোজ : আপিলা নিয়ে নাও। আমার নামেও 75% শেয়ার আছে,, জানতাম না আগে,, তুমিও ভেবে নাও জানো না। তবুও ওটা ধরো। নাহলে এই রাক্ষস আবার নতুন কিছু ধরিয়ে দেবে।

আলিজা হাসি মুখে পেপার্স গুলো নিলো।
স্টেজ খালি করা হচ্ছে। রোজ নাকি আজ গান গাওয়ার পাশাপাশি নাচবে। সুমিকেও বলা হয়েছিলো কিন্তু ও আজ ক্লান্ত। রোজ শাড়ির আঁচল কোমরে গুজে নিলো। হাত সোজা করে দেখছে ব্যাথা লাগছে কিনা। নাহ লাগছে না।।

রোজঃ
মেঘের পালক চাঁদের নোঁলক
কাগজের খেঁয়া ভাসছে X2
বুক ধুকবুক চাঁদপানা মুখ
চিলেকোঠা থেকে হাসছে।
মেঘের বাড়িতে ভেজা ভেজা পায়
তা থৈ তা থৈ বর্ষা।
কাক ভেজা মন জল থৈ থৈ
রাত্তির হলো ফর্সা।
আমি তুমি আজ একাকার হয়ে
মিশেছি আলোর বৃত্তে।
মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে,,,
মেঘের পালক চাঁদের নোঁলক কাগজের খেঁয়া ভাসছে

আলতো পায় ছড়ানো পথ
ভিজে আয়না
এই শহর আবছা ভোর
টের পায় না
জল টুপটুপ পায়ে ছন্দ
রাত্তির জুঁই ফুল X2
হাতে হাত রেখে আলোক সালুক
স্বপ্নে মশগুল।
অগোছালো মন নেমেছে শ্রাবন
মেঘ থৈ থৈ ঝর্ণা।
আমি তুমি আজ একাকার হয়ে
মিশেছি আলোর বৃত্তে।
মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে,,,
মেঘের পালক চাঁদের নোঁলক কাগজের খেঁয়া ভাসছে

আলতো পায় ছড়ানো পথ
ভিজে আয়না
এই শহর আবছা ভোর
টের পায় না
জল টুপটুপ পায়ে ছন্দ
রাত্তির জুঁই ফুল X2
হাতে হাত রেখে আলোক সালুক
স্বপ্নে মশগুল।
অগোছালো মন নেমেছে শ্রাবন
মেঘ থৈ থৈ ঝর্ণা।
আমি তুমি আজ একাকার হয়ে
মিশেছি আলোর বৃত্তে।
মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে,,,
মেঘের পালক চাঁদের নোঁলক কাগজের খেঁয়া ভাসছে

রং এর দোয়াতে আঁকি বুকি ভোর
এলোমেলো ঘোরে কাটছে।
দিন পাল্টায় আলো আলতায়
দুটো মন আজ হাটছে।
যত অলি গলি আকুলি বিকুলি
এই পথ চলা কদ্দুর
আগুনের আচে আনাচে কানাচে
আমি আর মেঘরোদ্দুর
তুমি আমি তিন সত্যি হয়ে
বাকি সব আজ মিথ্যে
মম চিত্তে নিতি নৃত্যে কে যে নাচে।

নাচ শেষে সবাই রোজের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। কেউ টু শব্দও করছে না। মেঘও ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে। রোজের ভয় লাগতে শুরু করলো। নাচ কি খারাপ হলো.? কেউ তো একটা ক্লাপও দিলো না। হঠাৎ একটা তালির শব্দ শোনা গেলো। সবার মাঝ দিয়ে গুটি গুটি পায়ে পাপড়ি হেটে আসছে,, রেড রোজ NgO এর সেই ছোট্ট মেয়ে পাপড়ি।

পাপড়ি : ইট্স বিউটিফুল রোজ আপ্পি। অনেক সুন্দর হয়েছে। ইউ আর লুকিং লাইক এ এঞ্জেল।

পাপড়ির কথায় ধ্যান ভাঙে সবার। সবাই করতালি দিয়ে রোজকে শুভেচ্ছা জানায়। রোজ এসে পাপড়িকে কোলে তুলে নেবে এমন সময় পাপড়ি বলে ওঠে,,

পাপড়ি : আরে কি করছো আমাকে কোলে নিও না হাতে ব্যাথা পাবে। আর আমি কি ছোট বাচ্চা নাকি যে কোলে নিতে হবে। আমি বড় হয়ে গেছি।

মেঘ এসে পাপড়িকে কোলে তুলে নিলো।
মেঘ : পাঁকা বুড়ি একেবারে। কি বোন বানিয়েছো রোজ..? এর সাথে কথা বলায় প্রতিবার আমি হারি।

রোজ খেয়াল করলো পাপড়ি সুমির দিকে তাকিয়ে আছে। সুমিও পাপড়ির দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে।
পাপড়ি : হেই আন্টি হুয়াট হ্যাপেন্ড.?
রোজ : আন্টি না পাপড়ি মাম্মা। উনি তোমার মাম্মা হয় । অনেক কষ্টে তোমার মাম্মাকে খুজে এনেছি। আন্টি বললে কিন্তু চলে যাবে।

পাপড়ি : মাম্মা.? মেঘ বেবি আমাকে নিচে নামাও আমি মাম্মার কাছে যাবো।

মেঘ পাপড়িকে নিচে নামিয়ে দিতেই পাপড়ি দৌড়ে সুমির কাছে চলে গেলো। মেঘরোজ চেয়ার নিয়ে বসে ওদের দিকে তাকিয়ে আছে।

পাপড়ি : মাম্মা তুমি এতোদিন কোথায় ছিলে.?
সুমির ওরনা টেনে কথাটা বলতেই সুমি চমকে পেছনে তাকায়।

সুমি : আমাকে বলছো সোনা.?
পাপড়ি : হ্যা মেঘ বেবি আর রোজ আপ্পি বলেছে তুমি আমার মাম্মা। মাম্মা পাপা কোথায়.?

সুমি অস্থির হয়ে পাপড়িকে কোলে তুলে নিয়ে পাপড়ির গালে চুুমু খেতে লাগলো। সুমির চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। সুমিকে কাঁদতে থেকে সম্রাট এগিয়ে আসলো।

সম্রাট : কাঁদছো কেন সুমি.? আর এই বাচ্চাটা কার.?
পাপড়ি : এই তুমি কে.? আমার মাম্মাকে টাচ করবা না। আমি কিন্তু পাপাকে বলে দিবো। তোমাকে দেখতে রুদ্রাহ দাদু জেয়সিনের মতো লাগছে। এতো লম্বা দাড়ি কেন.? তুমি বুঝি শেফ করো না.?

রোজ : এই রে পাপড়ি তো দাভাইকে ধুয়ে দেবে এবার। ওকে তো বলতে হবে ওটাই ওর পাপা।

মেঘ : একটু ধুয়ে দিলে সমস্যা কি.? আমাকে তো ডিটার্জেন্ট ছাড়া কেঁচে দেয়। এই বয়সে এতো বিচ্ছু।

রোজ : যে যেমন পাপড়ি তার সাথে তেমনই করে,, বেশিরভাগ সময়।

মেঘ : হ্যা আর ওই কমভাগ সময়ে আমাদের নির্বাচন করে । তাইনা.? তোর সংস্পর্শে এসে ওর এই অবস্থা না জানি তোর বেবি কেমন হয়…

রোজ : আমার বেবি, আমি বুঝে নিবো। আমার বেবিকে নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না।

মেঘ : সেটাই তো,, কিন্তু না ভেবেও তো পারছি না।কারন আমি ছাড়া তো তোর বেবিই হবে না। একা একা বেবি হওয়াবি কি করে.?

রোজ : উফফ,,,, চুপ যাও,, আচ্ছা শোনো,যদি দেখো তোমার কোনো প্রিয় মানুষ তোমাকে ধোকা দিয়েছে। তখন কি করবে,,

মেঘ : খুন করে ফেলবো। আমি সব মানতে পারি কিন্তু ধোকা না।

রোজ : তুমি সিউর.? যে তাকে মারতে পারবে.? এমনও তো হতে পারে বন্ধুত্ব, মায়া, ভালোবাসার জন্য তাকে মাফ করে দিলে।

মেঘ : এসব বলছিস কেন.?
রোজ : কারন তুমি তাকে মারতে না পারলেও আমি পারবো তাকে মারতে। আজকের ফাংশন শেষ হলে সবাই গেস্ট হাউজে চলে যাবে। এবাড়িতে শুধু আমরা থাকবো,, আর আজই সেই রহস্য ভেদ হবে যা তোমরা করতে চাও। তৈরি থেকো সত্যিটা মেনে নেওয়ার জন্য।

রোজ উঠে সম্রাটদের কাছে চলে গেলো। পাপড়ি সম্রাটের দাড়ি ধরে টানছে আর এটা সেটা বলছে।

রোজ : পাপড়ি এমন করে না,,ওটা তোমার পাপা।
সম্রাট : পাপা.?

রোজ : সুম্পি কনসিভ করতে পারবে না এটা জানি আমি। আর পাপড়ি আমার সবচেয়ে কাছের ছোট সদস্য। ওর বাবা মা দুজনেই রোড এক্সিডেন্টে মারা যায়। আমি যখন ওকে পাই তখন ও খুব ছোট,, কে জানি আমার NgO এর সামনে ওকে রেখে যায়,, একটা চিরকুটও ছিলো যেখানে ওর বাবামায়ের কথা বলা ছিলো। সেই ছোট্ট থেকে ও আমার মতোই স্ট্রাগেল করে বড় হচ্ছে।আমি চাইনা ও আমার মতো অবহেলা, কষ্ট পাক। তাই আমি ওকে তোমাদের হাতে তুলে দিতে চাই। তোমরা ওকে মানুষ করবে। ও নিজেও কিন্তু এই ছোট বয়সে অনেক সুন্দর গান গায়। বুঝতে পারছো বাড়িতে দুইটা আর্টিস্ট পাবে,, দেখো ও কিন্তু তোমাদের মাম্মা পাপা হিসাবে মেনে নিয়েছে, সুম্পির অনেকটা কাছে চলে গেছে,, বাকিটা তোমাদের ইচ্ছা।

সুমি : কিন্তু আমি তো ভেবেছি আমার মেয়ের নাম দিয়াশা রাখবো।
রোজ : তো মানা করেছে কে.? রেখে দাও দিয়াশা খাঁন পাপড়ি।

সম্রাট : তোর মায়ের নাম পাপড়ি ছিলো.?
রোজ : হ্যা।। সেজন্যই আমি ওর নাম পাপড়ি রাখি। দাভাই শোনো, একটু সাইডে আসো।

সম্রাট : কি.?
রোজ : তুমি, সুম্পিদের আর আংকেল + কুশান চৌধুরিদের নিয়ে আজ গেস্ট হাউজে যাও,, এখানে ঝামেলা হতে পারে। আর ওদের কাছে কেউ না থাকলেও সমস্যা হবে। রওশনরা থাকবে তোমাদের সাথে। সো ডোন্ট ওয়ারি।

সম্রাট : কি হবে এখানে..
রোজ : আমি কাল তোমাদের সব বলবো প্লিজ আজ কোনো প্রশ্ন করো না।

সম্রাট : কিন্তু,,,
রোজ : প্লিজজজজজজজ প্লিজজজজজজজ।

রাত ১১টা। একে একে সবাই গেস্ট হাউজের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। রোজের কথায় রাজ গেস্ট হাউজের চারপাশে কড়া সিকিউরিটির ব্যাবস্থা করেছে। বাড়ির ড্রইংরুমের সোফায় বসে আছে সবাই,, রোজ দরজার কাছে দাড়ানো।

আলিজা : আর কতক্ষন বসে থাকবো রোজ.? ঘুম আসছে তো।

আরাভ : কে আসবে.? তার নাম টা তো বলো। আমার তো ধৈর্যে কুলাচ্ছে না।

কুহু : আমাদের পরিচিত কেউ.? এই কোনো বিশেষ কেউ না তো.?

রুশানি : এসবের মানে কি.? এভাবে জোর করে বসিয়ে রেখেছো কেন.?

রোজ : ওই তো এসে গেছে সে। ওয়েলকাম #AB। ওয়েলকাম টু আওর নোন ফ্যামিলি।

সবাই দরজার দিকে তাকালো,,মেঘ, কুহু, আরাভ রীতিমত শক্ড। তার মানে #AB ই হলো,,

চলবে,,