তুই হবি আমার পর্ব-২৪

0
1819

#তুই_হবি_আমার??
#DîYã_MôÑî
#পর্ব__২৪
#Sanggeet_Ceremony

আরাভ : আয়াশ তুই.? তুই #AB এটা কিভাবে সম্ভব.?

আয়াশ : অসম্ভব কেন..? তোমরা গ্যাংস্টার হতে পারো। আমি পারি না.? সবসময় সব জায়গায় তোমাদের লিডারসিপ,, আমি তো তার কিছুটা অর্জন করেছি। এটায় দোষ্ কিসের.?

রোজ : এখন সোহরাব কে ছেড়ে দাও আয়াশ। আমি তো তোমার শর্তে রাজি হয়েছি। আর আমি প্রস্তুত নিজেকে শুট করতে।

আয়াশ : নিজেকে শুট করলে আমি বিয়ে করবো কাকে.? আমি আর যাই করি একটা কাজ কিন্তু বাহবা দেওয়ার মতো করেছি,, তোমরা দু বোন আমাদের দু ভাই এর বউ হবে। সবসময় একসাথে থাকতে পারবে,, এর থেকে ভালো জীবন কি হতে পারে.?

রোজ : তাহলে কাকে শুট করতে হবে.?

আয়াশ : মেঘকে।
রোজ : হুয়াটটট। আর ইউ ক্রেজি.? আমি মেঘকে শুট করবো তুমি ভাবলে কি করে.?

আয়াশ : কোনো ব্যাপার না,, আমি কল করে বলে দিচ্ছি যেন সোহরাবকে আল্লাহর কাছে পাঠিয়ে দেয়।

রোজ : নাহহহ। আমি করবো।
আয়াশ : মেঘ কোথায়.?

রোজ : আসছে।
আরাভ : এটা ঠিক করছিস না আয়াশ। এসব করার মানে কি.? তুই তো আমাদের ভালোবাসিস,, মেঘকে তো নিজের ভাই এর মতো দেখতিস তাহলে.? কারোর কথায় করছিস..? তার নাম বল আমাদের।

রোজ সোফার ওপর বসে,,, পায়ের উপর পা তুলে আয়াশ কে ইশারা করলো,,

রোজ : দরজার দিকে তাকাও আয়াশ। যার জন্য অপেক্ষা করছিলে সে এসে গেছে।

দরজার দিকে তাকালো সবাই,, মেঘ আর সোহরাব পকেটে হাত দিয়ে দুজন দুদিকে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে আছে। সোহরাব হাই তুলে বললো,,

আয়াশ : শুধু তথ্য জানলে হয় না আয়াশ। সেই তথ্য কোথায় কিভাবে কাজে লাগাতে হয় সেটাও জানতে হয়।

রোজ : এক্চুয়ালি আমিই গতকাল আয়াশকে ম্যাসেজ দিয়েছিলাম যে আমি আয়াশের সব কথা শুনবো আর আয়াশ সোহরাবকে ছেড়ে দেবে। আয়াশ ভেবেছিলো সবটা ওর প্লানিং মতে হচ্ছে। কিন্তু নাহ সবটা মেঘরোজ আর সোহরাবের প্লানিং মতো চলছিলো।

আয়াশ আড়চোখে রোজের দিকে তাকালো।
রোজ : আরে আয়াশ বসো। আজ তোমাদের আমি আমার গল্প বলবো। সেটা শোনানোর জন্যই এই প্লানিং। জিজু তোমার ভাইকে বসাও।

মেঘ এসে আয়াশের কাধে হাত দিয়ে ওকে ধরে বসালো। রোজ রুশানির দিকে তাকিয়ে বললো,,

???

রোজ : পৃথিবির সবচেয়ে খারাপ মহিলা কে জানেন.? আপনি। আপনি যদি আপিলার মা না হতেন তাহলে আমার ১১নম্বর খুন টা আপনাকে দিয়ে শেষ করতাম। যাই হোক মেইন পয়েন্টে আসি।
তোমরা অনেকে ভাবছো আমি কিভাবে খুন করেছি.? কবে কোথায়.? আর খুন করেছি কিন্তু কেউ জানে না.? আমার কোনো শাস্তি হয়নি কেন.?

আমার প্রথম খুনটা সবথেকে বেশি থ্রিলিং ছিলো,, কারন যাকে খুন করেছি সে রুশানি চৌধুরির বন্ধুর ছেলে,, পাঁচ বছর আগে আপিলাকে ওই ছেলেটা অনেক ডিস্টার্ব করতো। ইভেন একবার রেপ করার চেষ্টাও করেছি,, কলি আপু ছিলো বলে একটুর জন্য বেঁচে গেছিলো আপিলা। কিন্তু পরের বার যখন আপিলা আমার সাথে দেখা করতে এসেছিলো রেড রোজ NgO তে। সেদিন ছেলেটাও ওর পিছু পিছু আসে,, আমার সামনে আপিলার সাথে জোরজবরদস্তি করার চেষ্টা করে। আর আমি ওকে বটি দিয়ে,, বেশ সুন্দর করে পিস পিস করে কেটেছিলাম। আমার নামে কেসও হয়েছিলো। কিন্তু দন্ডবিধি ৮৩ ধারা মোতাবেক ৭বছরের বেশি কিন্তু ১২বছরের কম বয়স্ক অপরিনত বোধশক্তি সম্পন্ন কোনো শিশুর হাতে খুন হলে সেটা অপরাধ নয় বিবেচনা করে আমার কেস টা ক্লোজ হয়।

বাংলাদেশে থেকেই আরো দুইটা খুন করি আমি। যার খবর পুলিশ আর আমার ngO এর মানুষ ছাড়া কেউ জানে না। তারা দুজনই ছিলো প্রমোটার। আমার NgO ভেঙে ওরা সেখানে পাঁচতারা, মানে 5sTaR হোটেল বানাতে চেয়েছিলো। সেটা আমি কিভাবে হতে দেই.? আমি ওদের মানা করেছিলাম। অনেক বুঝিয়েছিলাম। কিন্তু না,, তারা শুনলো না,, কাপুরুষের মতো রাতের আঁধারে আমাদের উচ্ছেদ করার জন্য লোক ভাড়া করে নিয়ে আসলো,, জানো.?আমি ১৩ বছরের ছোট, কিউট,গোলুমলু বেবি ছিলাম বলে প্রথমে আমাকে পাত্তাই দেয়নি। কিন্তু যখন একজনকে হাতুরি দিয়ে পেটাতে শুরু করি তখন সেটা দেখে হয়তো ভয় পায় তাই কিছু গুন্ডা আমার পেছনে লেলিয়ে দেয়।কতো বড় ভীতু বাচ্চা মেয়েকে মারতে ওতো বড় বড় আংকেল,,কিন্তু তাদের চোখেও ধুলো সরি ঝালের/লঙ্কার গুড়ো ছিটিয়ে ঠিকই ওপরজনকে মারতে সক্ষম হই আমি। যেহেতু একটা বড় ঝামেলা হয়েছিলো তাই পুলিশ আসতে বাধ্য হয়।

তবে দন্ডবিধি ৯৯ ধারার শর্তসাপেক্ষে কোনো ব্যাক্তি শরীর রক্ষার জন্য আত্নরক্ষার ব্যাক্তিগত অধিকার প্রয়োগ করে খুন করলে সেটা অপরাধ হিসবে গন্য হবে না [ দন্ডবিধি ১০০ধারা ]
এবং
দন্ডবিধি ৯৯ ধারার শর্তসাপেক্ষে কোনো ব্যাক্তি সম্পত্তি রক্ষার জন্য আত্নরক্ষার ব্যাক্তিগত অধিকার প্রয়োগ করে খুন করলে সেটা অপরাধ হবে না [ দন্ডবিধি ১০৩ধারা ]

তাই কেসটা কয়েকদিন ঝুলে ক্লোজ হয়ে গেছে।

আর ৫টা খুন ইন্ডিয়াতে করি। কলেজের বাইরের রাস্তাটায় এক বখাটের গ্যাং এর ৪জনকে গাড়ি দিয়ে পিসে মেরে ফেলি,, ওরা আমাদের কলেজের দুইটা ছেলেকে বিনাঅপরাধে মেরেছিলো সেজন্য। ছেলে দুটো নতুন আর তারা দুজনই একটা মেয়েকে ভালোবাসতো যে ওই গুন্ডাগুলোর মধ্যে একজনের বোন। ভালোবাসা নিশ্চই অপরাধ না.? যদি ভালোবাসা অপরাধ হয় আর ছেলেদুজনের মৃত্য জায়েজ হয়। তাহলে আমার খুন করাও জায়েজ। হি হি। তাছাড়া কেউ আমাকে দেখেনি আর ওটাও এক্সিডেন্ট কেস হিসাবে চেপে গেছে। কারন আমি যখন রাতে গাড়ি নিয়ে বের হই তখন গাড়ির নম্বর প্লেট চেঞ্জ করে ফেলি। আর তাই কেউ আমার গাড়ি দেখলেও আমার বিরুদ্ধে কোনো প্রুভ পাবে না।

আরেকটা খুন। এটা অবশ্য একটা মেয়ে ছিলো,, মেয়েটার একটাই দোষ্ সে ছিলো দেমাগি সাইকো,, বুঝোই তো,, তবে তার কাছ থেকে আমি অনেক কিছু শিখেছি,, যেমন কিভাবে ধোকা দিতে হয়,, কিভাবে পথের কাটা দূর করতে হয়। কিভাবে নিজের চাহিদা পূরন করতে হয়। ইত্যাদি ইত্যাদি। আর তার দোষটা হলো,, সে আমাকে ধোকা দিয়েছিলো,, কলেজের একটা ফর্মুলা প্রিন্সিপাল স্যার বিশ্বাস করে আমাকে দিয়েছিলো আর ও সেটাই চুরি করে নিলো,,, আশ্চর্য এই বন্ধুত্ব,,, ওর পরিচয় ছিলো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড সাঞ্জানা হিসাবে আর কি সুন্দর ভাবে পেছন থেকে ছুরি মেরে দিলো। ওকে তো ওরই প্রিয় জায়গায় ওর প্লানিং মতেই জীবিত দাফন করে দিয়েছি।

আর বাকি দুটো কাল করেছি মেঘ সোহরাবের সামনে। ওটা সোহরাব অফিসিয়ালি হ্যান্ডেল করে নিবে। কারন ওরা যথেষ্ট অন্যায় করেছে।

এগুলো গেলো আমার করা খুনের হিসাব। এসব শুনে নিশ্চই বুঝতে পারছেন আমি প্রয়োজনে কখনো রাগি, কখনো প্রতিবাদি, কখনো জেদি কিংবা কখনো খুনি হয়ে যাই। মেঘরোদ্দুররা নিজেদের পাওয়ার হাতে নিয়ে এজগতে এসেছে, থেকেছে। তবে আমি কিন্তু একদমই নরমাল ভাবে ঢুকে পরেছি, আমার না ছিলো টাকা,,,, না ছিলো কোনো মেন্টালি, অফিসিয়ালি, লিগ্যালি পাওয়ার। তাই সময় আসলে ওদের থেকে বেশি ডেন্জারাস হওয়ার ক্ষমতা আমি রাখি।

???

সোহরাব : আরে রোজ সব কি তুমি বলবে.? বেচারা রা এতো শক নিতে পারছে না। আলিজা পানি খাও আর মেন্টালি প্রিপারেশন নাও আজ এখানে তিনটা খুন হতে চলেছে,, আয়াশ তুমি তো ঘামছো। আরাভ ওকে রুমাল বা তোয়ালে দাও ঘামটা মুছে নিক।

আমি বলবো #Ab কে খুজে পাওয়ার রহস্য। A মানে Ayash B মানে Boss যেটা বলে তোমাকে সবাই ডাকে। তাইনা.? এখন কথা হলো,রোজ বিডিতে এসেই একদিন একা কলেজে যায়। তোমরা জানো হয়তো.. সেখান থেকে ট্রাস্টি ডিপার্টমেন্টের এবং কলেজের কথা জানতে পারে। চেক পাশ করার ব্যাপারটা তোমরা সবাই জানো তবে তোমাদের কলেজের ডকুমেন্ট চুরির ব্যাপারটা জানো না।

ফায়দাঃ আয়াশ ভেবেছিলো সমস্ত টাকা নিজে নিয়ে নিবে,, খুনগুলোও করেছে চতূরভাবে। তবে ওই যে একটা ভুল,, নির্ভুল কাজ করতে গিয়েই খুনি নিজের অজান্তে ভুল করে বসে। আয়াশ তুমি কি ডিফেরেন্ট ওয়েতে খুন করতে পারো না ? এক স্টাইলে সবাইকে মারো,,?? ইট্স বোরিং ম্যান।

নেক্সট রোজকে মারার প্লান করেছিলে যেন রোজের শোকে মেঘ পাগল হয়ে যায় আর পুরো কলেজটা তোমার হাতে চলে আসে। আর কলেজের পেপার্সও যা তুমি নিজের নামে করতে চেয়েছিলে। তুমি জানতে মেঘ তোমাকে কুহুকে আর আরাভকে বেশি ভরসা করে,, তুমি বললেই সবটা হাসিল করতে পারবে। কিন্তু হলো তার উল্টো,, রোজ বেঁচে গেলো,, মেঘ পাগল না হয়ে সাইকো মার্ডারার মানে আগের মতো হতে লাগলো। আরাভও মেঘকে সামলিয়ে কলেজে আসতে লাগলো । বলতে গেলে সবটাই তোমার হাতের বাইরে চলে গেছিলো।

তখনই রোজ ফিরে এসে তোমার পাঁকা ধানে মই দিলো, এবার তোমার নজর পড়লো রোজের ওপর। রোজকে পেলে সবটা তোমার হাতের মুঠোয়। কারন তোমার কুনজর আগে থেকেই রোজের ওপর ছিলো আর এখন তো সবটাকাও রোজের হাতে চলে এসেছিলো।মেঘ ঠিক হতে লাগলো সবাই আগের মতো হতে লাগলো। রোজের রুমে হিডেন ক্যামেরা লাগিয়েছিলে আমাদের খবর নেওয়ার জন্য,, এতো কষ্ট কেন.? আমাদের কাছে আসতে. আমরাই সব বলে দিতাম। আমাকে আর মেঘকে তুমি শেষ করবে.? আমরা না চাইলে তোমরা আমাদের নিয়ে যেতে পারতে না । প্লানিংটা নতুন ছিলো বলে রোজ কিছু জানতো না,, শুধু শুধু কেঁদে ভাসালো । আর একটা কথা আমার কিন্তু কোনো গুলি লাগে নি,,, পুরোটাই গুজব ছিলো। এটুকু জানাই এনাফ তোমার জন্য।

???

মেঘ : আমি কখনো তোকে আর আরাভকে আলাদা করে দেখিনি,, একবার বলতিস আমাকে,, আমি নিজে সবটা তোকে দিয়ে দিতাম। আরে আমি তোকে শুধু বন্ধু না একটা ভাইয়ের চেয়েও বেশি ভাবতাম। আর তুই? যাই হোক রোজকে কথা দিয়েছি আমি এই টোটাল কেসটায় আমি থাকবো না। কারন মুখে যাই বলি তোর কষ্ট আমি সহ্য করতে পারবো না।

আরাভ : দেখ তোদের কোথাও ভুল হচ্ছে,,, রোজ তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে আমার ভাই এমন না। ওকে কেউ ফাসাচ্ছে।

আলিজা : হ্যা রোজ,, আয়াশ এমন না।

রোজ : আচ্ছা ? তাহলে প্রমাণ হোক কে ঠিক আর কে ভুল। আংকেল ভেতরে আসো।

মৃন্ময় আসছে একটা মদের বোতল হাতে নিয়ে। মাঝে মাঝে ছিপি খুলে মদ খাচ্ছে। রোজ নাক ফুলিয়ে বললো,,

রোজ :তোমাকে কখনো পাপা বলে ডাকবো না। আজও মদ খাচ্ছো।

মৃন্ময় : তোর জন্য অনেক আগেই মদ খাওয়া ছেড়ে দিয়েছি মামনি,, এটা কোল্ড ড্রিংকস। পুরোনো অভ্যাস তো ছাড়তে পারছি না । তাই শো অফ করার জন্য এই ব্যবস্থা।

মেঘ : এতো পরিবর্তন!!! শেষমেশ আমার বাপ টাকেও পটিয়ে নিলি.?

মৃন্ময় : চুপ হাদারাম। কোনো কাজের যোগ্যতা নেই আবার আমার মামনিকে খোচা মেরে কথা বলিস.? জীবনে শোধরাবি না।

মেঘ : আমি তোমার নিজের রক্তের ছেলে.. ও তো পরের মেয়ে,,, ওর জন্য নিজের ছেলেকে অপমান করতেছো..?

রোজ : পাপা তোমার ছেলের জন্য একটা কথাই মাথায় আসছে “গাধাকে যত পেটো, গাধা কি ঘোড়া হয়.? সে কথা মুখে নিলে, লজ্জা সেকি পায়??”

রোজের কথায় হেসে উঠলো মৃন্ময়। আরাভ অস্থির আর বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো,,

আরাভ : এসব কি রোজ.? প্রমাণ দেবে বলে তামাশা শুরু করেছো.?

রোজ : প্রমাণ চাও.? চারপাশটা ভালো করে দেখো প্রমাণ পেয়ে যাবে,,, একি অপরাধিগুলোকে দেখা যাচ্ছে না কেন? অদৃশ্য হয়ে গেলো নাকি.?বাবাহ এদের কাছে বুঝি ম্যাজিক্যাল পাওয়ার আছে।

সবাই দেখলো এখানে তিনজন নেই আয়াশ,, রুশানি আর টিনা। এতক্ষন সবার খেয়াল রোজের ওপর ছিলো আর সে সুযোগে ওরা পালিয়েছে।

রোজ : তোমার কাপুরুষ ভাইটা গেলো কই.?
সৌরভ : একটু আগেই তো চুপচাপ বেড়িয়ে গেলো,,

রোজ : আটকালে না কেন..?
সৌরভ : আমাকে বন্দুক দেখিয়ে ইশারায় ভয় দেখালো,, যদি গুলি করে দেয়.? তোমার বোনটা বিধবা হয়ে যেতো

রোজ : একটাই তো করতো,,, এই যে আমিও একটা খেয়েছি,,, মেঘরোদ্দুর কি বিধবা হইছে.? ভীতুর ডিম। আচ্ছা সমস্যা নাই সবাই ১০-১ উল্টা গোনো ওরা হাজির হয়ে যাবে।

সবাই বিরক্তি নিয়ে রোজের অদ্ভুদ কথা শুনছে। কিছুক্ষনের মধ্যে রাজ আয়াশদের টানতে টানতে নিয়ে আসলো ।

রোজ : আরে তোমার সহকারিদের কথা শুনবে না.? তাদের কথা তো বলাই হয়নি। এদের মধ্যে ইন্টারেস্টিং বিষয় কি জানো.? এখানে আয়াশ সবথেকে লোভি কারন ও সব চায়। আর মিসেস রুশানি চান টাকা প্রপার্টি এবং টিনা চায় মেঘকে। আচ্ছা টিনা এতোদিন কতো বাষ্প জমিয়েছো যে মেঘকে চাইছো.? যাক সেসব কথা। এবার বলো আজকে তো জীবনের শেষ মুহূর্ত কাটাতে চলেছো। তা কোনো শেষ ইচ্ছা টিচ্ছা আছে.? এক্চুয়ালি আমি ঠিক করে নিয়েছি কাওকে মাফ করবো না। সবার আগে রুশানি তারপর আয়াশ তারপর তোমাকে মারবো। এখন বলো তোমরা কিভাবে মরতে চাও,, অপশন দিবো.?
১. বিষ খেয়ে মরবে..?
২. হার্ট এট্যাক করে,, তোমাদের খুনের নিনজা টেকনিক।
৩. ছুরি দিয়ে গলা কেটে দেই.?
৪. ঠিক কপাল বরাবর একটা শুট করবো। বেশি না ৫মিনিট কষ্ট পাবে।
৫. চাইলে গাড়ি দিয়ে পিসে মারতে পারি,, আমাকে তো মারতে চেয়েছিলো,, দেখো মরিনি। কিন্তু এটা কনফার্ম করতে পারবো যে তোমরা ঠিক মরবা।

নাও চয়েজ ইজ ইউর্স।সবাইকে ৫মিনিট সময় দিলাম। ভেবে বলো। বাকিরা শেষ বারের জন্য নিজেদের প্রিয়জনকে দেখে নাও। আর হ্যা রুশানি ম্যাডাম মৃত্যু ছাড়া আরেকটা অপশন আছে আপনার কাছে,, আজীবনের জেল। আমার আম্মুকে মেরেছিলেন তাইনা.? উফফ আপনার মেয়ে কাঁদছে সেটা তো সহ্য করতে পারছি না আমি। তাই ভাবছি আপনার শাস্তিটা কমিয়ে দিবো। গার্ডস গরম সিক আনো।( গরম সিকটা হাতে নিয়ে রুশানির দিকে তুলে ধরলো,, ) এটা দিয়ে নিজের হাতে লিখুন “আমি খুনি” তারপরই রাজ ভাইয়া আপনাকে আরামে যত্ন করে আপনার ঠিকঠাক আস্তানায় পৌছে দেবে।

এবার টিনা তোমার কাজ হলো ওনার হাতে সুন্দর করে সিক দিয়ে লিখে দেওয়া,, তাহলে তোমার মৃত্যুর যন্ত্রনা কমানোর ব্যবস্থা আমি করে দিবো।দেখবে চোখ বোজার সাথে সাথে জাহান্নামে পৌছে যাবে,,, জান্নাতে গেলে খুশি হতাম কিন্তু পাপ তো কম করো নি…. দেখো কি জোটে কপালে.?

আয়াশ : জানতাম এমন কিছু হবে।
রোজ : আমাদের থেকে তুমি বেশি বুদ্ধিমান তাই এটা যে জানবে, সেটা আমিও জানি। এবার বলো নিজেকে বাঁচানোর জন্য কি প্লান করে রেখেছো। নাকি প্লান ধার নিবে আমার কাছ থেকে,, মরে গেলে ধার শোধ করারও একটা ব্যাপার আছে।

সোহরাব : কি বলো রোজ? তোমাকে ধার দেওয়া মানায় না। বরং বুদ্ধি দান করতে পারো আর মানুষকে দান করে সেটা ফিরিয়ে নিতে হয় নাকি..?

আয়াশ : তোমাদের সামনে আমার হাতে যে ল্যাপটপ আছে সেটা একটা টাইম বোম। আর আমি যদি মরি এখানের কেউ বাঁচবে না। তোমার আপিলার সাথে তার নিষ্পাপ বাচ্চাটাকেও মেরে ফেলবে রোজ.?

আরাভ : আয়াশ এসব কি বলছিস.? তার মানে রোজ যা বলছে তাই ঠিক। তুই শুধু তোর পাওয়ার চাস্,, আমাদের নাহহ।

আয়াশ : ওফ তুমি মেঘের চামচা ছিলে সেটাই থাকো না। আমার ভাই হতে এসো না। ভাই হয়ে সারাজীবন আমার জন্য কি করেছো..?? কিচ্ছু না। আমি সবসময় তোমাদের হাতের পুতুল হয়ে নেচেছি আর না।

আলিজা : এসব কি বলছো আয়াশ.?? ও তোমার ভাই।

রোজ :” আয়াশ বেবি ওদের মেরে ফেলো,,, কিন্তু আমি তো তোমার জান তাইনা.? চলো একসাথে ওদের মেরে সব টাকা নিয়ে পালিয়ে যাই। ” কি ভেবেছিস এটা বলবো.? এতোক্ষন জিজুর ভাই বলে সম্মান করেছি,, এখন নো ভাই নো সম্মান।অনলি বুমমমমমমম। দেখা তোর বোমের কামাল। যদি আমরা মরি তো তুইও মরবি,, যদি না মরি তাহলে তুই একাই এখন, চোখে চাঁদ-সূর্য একসাথে দেখবি। আর সেটা দেখাবো আমি।

আয়াশ ল্যাপটপ অন করে সুইচ প্রেস করলো। কিন্তু কিছু হচ্ছে না।
আয়াশ : কিছু হচ্ছে না কেন.?

মৃন্ময় : হবে না তো। কারন ওটা এখন যাস্ট একটা ডিভাইস,,, আর কন্ট্রোলার ডিভাইস আই মিন রিমোট টা তোমার কাছে আছে তো.?

মেঘ : ওটা মে বি আমার কাছে। এই খেলনা টা না.??? (একটা ৪ইঞ্চির রিমোট উচু করে ধরলো)

রোজ : ইউর গেম ইজ ওভার আয়াশ। সাতমাসের হিসাব সাতটা বুলেটে শেষ করবো। সামান্য পার্টনারসিপ আর শেয়ারের জন্য তুমি অন্যদের সাথে সাথে নিজের বাবাকেও মেরে ফেলেছো। তোমার মতো সন্তানের বেঁচে থাকার কি কোনো অধিকার আছে.?

আয়াশ : ততুমি কিভাবে জানলে..?
মৃন্ময় : আমি বলেছি। কারন সেদিন তোমাদের অফিসের, তোমার বাবার কেবিনের পাশের কেবিনে আমি ছিলাম। তুমি ভেবেছো অফিস শেষ করে সবাই চলে গেছে,,, কিন্তু না আমি ছিলাম সেখানে। একটা ডিলের জন্য গেছিলাম কিন্তু সেদিনই জানতে পারলাম সব কিছু। তোমরা হয়তো ভাবছো রোজের সোর্স আর গার্ডস কারা, কোথেকে এসেছে। তাহলে মৃত্যুর আগে এটাও জেনে রাখো এতোদিন রোজের সবকাজে আমি রোজকে সাহায্য করেছি। এখানের সব খবর আমি দিয়েছি।

রোজ : সব কথা শেষ.? এবার ১১নম্বর খুনটা করি.? হাত নিসপিস করছে।

আরাভ : নাহহ। ওকে তুমি মারবে না।
রোজ : অদ্ভুদ। এই ছেলের মাথা খারাপ,, নিয়ত খারাপ,,, চরিত্র খারাপ। তবুও মারবো না.? কম সে কম তোমার বাবাকে মেরেছে এবার তো শাস্তি পেতে দাও।

আরাভ রোজের হাত থেকে গান নিয়ে নিলো। তারপর চোখ বুজে আয়াশের বুক বরাবর শুট করলো। পরপর ৮টা বুলেটে ক্ষত বিক্ষত করে দিলো আয়াশের শরীর। আয়াশের পরিনতি দেখে রুশানি আর টিনার শরীর শিউরে উঠলো।রুশানি রোজের পায়ের কাছে হাটু গেড়ে বসে পড়লো,,

রুশানি : আমাকে মাফ করে দাও রোজ।আমি এমন পরিনতি চাই না। আমি তো তোমার মায়ের মতো,,

রোজ : মেঘরোদ্দুর ওদের যে ব্যবস্থা করার তুমি করো। আমার মাথা ব্যাথা করছে আমি ঘুমাতে চাই। ভালো লাগছে না আর।

রোজ চলে গেলো ওখান থেকে,,, আরাভ আয়াশের লাশে হাত বুলাচ্ছে। আলিজা রুশানির আর্তনাদে চিৎকার দিয়ে উঠে কাঁদছে। টিনাকে আর ওর বাবাকে স্মাগ্লার হিসাবে এরেস্ট করবে রাজ।সবটা সিড়ির কাছে দাড়িয়ে দেখছে রোজ। একটা ফুটফুটে নিষ্পাপ শিশুর জীবনটা একসময় তারই প্রিয়জনদের কারনে জটিলতায় ভরে গেছিলো আর আজ সেই জটিলতা থেকেই মুক্তি পেলো সে। তবে হারালো কিছু সম্পর্ক, কিছু মায়া, কিছু মানুষের অস্তিত্ব। সত্যিই কি মানুষগুলো নেই.? হয়তো আছে সবার হৃদয়ের মনিকোঠায়, অথবা মুছে গেছে মন থেকে।

রোজ : কালকের সকালটা আমার জন্য একটা নতুন শুভ আরম্ভ হবে। পেছনের সব অতিত মুছে দিবো জীবন থেকে। কি লাভ এমন অতিত রেখে যা প্রতিনিয়ত কষ্ট নামক যন্ত্রনা হয়ে তাড়া করে বেড়ায়। যাদের হারিয়েছি তারা থাকবে স্বৃতি হয়ে আর যাদের পেয়েছি তারাই হবে আমার ভবিষ্যৎ। আজ থেকে কারোর প্রতি কোনো রাগ, ক্ষোভ, মান,অভিমান নেই। যা আছে যতটুকু আছে ততটা ভালোবাসায় পূর্ণ হবে। পূর্ণ করবো আমি। রোজ আবার আগের মতো হয়ে যাবে,, তোমার রোজ আবার আগের রোজে পরিপূর্ন হয়ে তোমার কাছে ফিরবে মেঘরোদ্দুর।এটা রোজের পাক্কা প্রমিজ।

চলবে,,