তুই হবি আমার শেষ পর্ব

0
1704

#তুই_হবি_আমার??
#DîYã_MôÑî
#শেষ_পর্ব

বাসর রাতে একহাত লম্বা ঘোমটা টেনে আরীবের জন্য অপেক্ষা করছে হিমা। ওদিকে রোজ সবার ঘরের বাইরে থেকে উকি দিয়ে দেখছে কে কি করছে। হিমার ঘরের সামনে আসতেই দেখে হিমা একা একা বসে আছে,,,

রোজ : একি তুমি একা একা বসে আছো কেন? তোমার বর কই.? বাসর রাত শুরু হয়ে গেছে নাহ.?

হিমা : আসেনি। তুমি এখানে.?
রোজ : দেখতে আসলাম বাসর ঘরে কে কি করছে। কুহু আপুর রুমে মাত্র রাজ ভাইয়া ঢুকলো। তাই দেখতে আসলাম আরীব আসছে কিনা। তুমি বসো আমি এখুনি পাঠিয়ে দিচ্ছি।

হিমা : তোমার বর কোথায়.?
রোজ : জানি না। ও বললো আমাকে ঘুরে বেড়াতে। তাই ঘুরে বেড়াচ্ছি।

হিমা : তোমার বাসর হবে না.?
রোজ : আমাদের রুম তো সাজায়নি। আপিলা বলেছিলো হবে। কিন্তু সাজানো না থাকলে হবে কিভাবে। আচ্ছা তুমি থাকো আমি যাই।

রোজ বেড়িয়ে এসে আরীবকে ঠেলে ঘরে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে আটকে দিলো।আর বাইরে থেকে চিল্লিয়ে বললো
রোজ : এক বছরের মধ্যে আমি ফুপি + চাচিআম্মু হবো। নাহলে তোমার একদিন কি আমার ৩৬৪দিন।

আরীব বিছানার পাশে গিয়ে দাড়ালো। হিমা ভয় পেয়ে বললো
হিমা : আমি ওকে কিছু বলিনি। আর কিছু শেখাইও নি।

আরীব : ওকে শেখানোর ক্ষমতা তোমার কেন আমারই নাই। আমি জানি ও নিজেই বলেছে সব। বেশি পাঁকা মেয়ে। তবে তুমি কি জানো আমি ওকে আগে ভালোবাসতাম.?

হিমা : তো কি হইছে আমিও আগে একজনকে ভালোবাসতাম। বদ ছেলে আমার কাছ থেকে টাকা নিয়ে ভেগে গেছে। যাই হোক প্রত্যেকের জীবনে একটা অতিত থাকে। আমাদের উচিত খারাপ অতিত ভুলে বর্তমান আর ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাবা। আর রোজেরও বিয়ে হয়ে গেছে,, আপনি যদি এখনো রোজের কথা ভাবেন তাহলে বলবো ” ঘরে বউ থাকতে পরের বউ নিয়ে টানাটানি না করাই শ্রেয়। আর রোজ কিন্তু মোটেও ছেড়ে দেবার পাত্রি না। ওকে দেখেই বোঝা যায় ও বাস্তবধর্মী আররররর

আরীব : আবার শুরু করে দিলে..?? চুপ থাকো প্লিজ। আজকে বাসর রাত। এসে সালাম করো,,, আর ওযু করে আসো নামায পড়বো। তারপর যা হওয়ার হবে।



রাজ : ঘুমিয়ে যাও,,, সারাদিন অনেক খাটাখাটি করেছো। ক্লান্তি দূর হবে।

কুহু : বাসর রাতে ঘুমাবো মানে.? এই রাতে টুপ করে এসে ঠাসস করে উত্তর ছুড়ে দিলে “ঘুমাও”। এটা কোনো কথা.?

রাজ : তাহলে জেগে থাকো। আমি ঘুমাতে গেলাম। কাল সকালে আবার ডিউটিতে যেতে হবে।

কুহু : হুয়াটট। ওই তোমার মাথা ঠিক আছে.? বিয়ের পরের দিন কেউ অফিসে যায়.? মানুষ দেখলে কি ভাববে,, বউ ভালো না তাই বউ এর কাছ থেকে মুক্তি পেতে অফিসে গিয়ে বসে আছে রাজ।

রাজ : ইউ আর ভেরি ইন্টেলিজেন্ট। গুড নাইট জান।
কুহু : তোর ঘুম আমি ছুটাচ্ছি।

কুহু পাশে থাকা টেবিলের ওপর থেকে গ্লাসে থাকা পানি নিয়ে রাজের মুখের ওপর ঢেলে দিলো। রাজ চটপট উঠে বসলো। তারপর কুহুর শাড়ি দিয়ে মুখ মুছে। ভ্রু কুচকে ওর দিকে তাকালো।

কুহু : এভাবে দেখার কিছু হয়নি। আমি জানি আমি যথেষ্ট সুন্দরি। অনেক ছেলের লাইন লেগে ছিলো আমার পেছনে। ভাগ্য দোষে তোমার কপালে এসে পড়ছি…

রাজ : ভাগ্য দোষ.? এতোক্ষন টায়ার্ড বলে ছেড়ে দিয়েছি। এবার আর ছাড়ছি না। অনেক ছেলের লাইন লেগেছিলো বাট বিয়ে যখন আমার সাথে হয়েছে তখন তো সেটার মিসইউজ করা যাবে না।

রাজ কুহুর হাত বালিশের সাথে চেপে ধরলো। তারপর ওর দিকে এগিয়ে গেলো।



রওশন : এই রোজ তুই এভাবে সারা বাড়ি ঘুরে বেড়াচ্ছিস কেন.? আজ তোর বাসর রাত কোথায় রোম্যান্স করবি তা না,,,,

রোজ : ঈশাপুকে বলবো.? তুমি আমাকে বাজে কথা বলছো,,

রওশন : ভালো কথাই তো বললাম। বিয়ে হলো বাসর হবে না.?

ঈশা : এই রোজ তুই এখানে..?তোকে মেঘ ডাকছে। ছাদে যেতে বলেছে।
রোজ : এই রাতে ছাদে কি ফুটবল খেলতে ডাকছে.? আমি ঘুমাতে যাচ্ছি। হুদাই নাটক করার সময় নেই।

ঈশা : ছাদে একটা মেয়েকে যেতে দেখলাম মনে হলো। ছাদে মেঘ একা,, মেয়েটা কি করতে গেছে.? ভাবার বিষয়। আচ্ছা তুই ঘুমাতে যা অনেক রাত হয়ে গেছে।

রোজ : (ছাদে মেয়ে গেছে.?? ওই মেঘের বাচ্চা আবার লুতুপুতু করছে না তো মেয়েটার সাথে।) তোমরা ঘুমাও আমি একটু ছাদ থেকে ঘুরে আসি। গরম লাগছে একটু বাতাস লাগিয়ে আসি।

রোজ ল্যাহেঙ্গার পাড় উচু করে ছাদের দিকে হাটতে শুরু করলো।

রওশন : কোনো মেয়েকে তো যেতে দেখলাম না। আমি তো এখানেই সোফায় বসে ছিলাম। তুমিই তো মাত্র আসলে ছাদ থেকে।

ঈশা : দিন দিন ডাফার হচ্ছো। বাসর ঘর সাজাইনি কেন সেটা মাথায় আসেনি.? মেঘ রোজকে সার্প্রাইজ দিবে বলে সবকিছু হোল্ড করে রেখেছে। আর আমরা এতোক্ষন সে কাজেই মেঘকে হেল্প করছিলাম। মেয়েটাকে আর কষ্ট পেতে দিবো না। এখন থেকে রোজ সবসময় হাসবে খেলবে মজা করবে আনন্দ করবে।

রওশন : হ্যা সবই তো বুঝলাম। আলিজা আর কলিরা কোথায়.?

ঈশা : ওরা নিজেদের কাজে ব্যস্ত। এখন চলো বাড়ির সবাই ঘুমাচ্ছে আর আমরা নিশাচরের মতো টো টো করে বেড়াচ্ছি। চলো।

রওশন : যাচ্ছি তো। এতো ঝারি দেওয়ার কি আছে। বউ হয়েছো কোনো দেশের মন্ত্রী না। যে খালি ধমকি আর অর্ডার দিয়ে বেড়াও।

ঈশা : কি বললে তুমি.? আমি তোমাকে ধমকি দেই.?
রওশন : আস্তে কথা বলো রোজরা ডিস্টার্ব হবে। চলো আমরা ঘুমাতে যাই। শোনো বেশি জোরে কথা বলবে না। বেশি উত্তেজিত হলে তোমার কষ্ট হবে। ঠিক আছে।
ঈশা কিছু বলতে যাচ্ছিলো কিন্তু রওশন ওকে বাধা দিয়ে ঘরে নিয়ে যায়।



রোজ ছাদে পা রাখার সাথে সাথে চমকে যায়। নিচে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে রাস্তা বানানো। পুরো ছাদটা সাদা কাপড়ে ডেকোরেট করা। ছাদের মাঝখানে একটা খাট সেটাও সাদা বেডসিটে মোড়ানো। রেলিং ছুঁয়ে নীল সাদা বেলুন উড়ছে। ছাদের তিনপাশে মোম দিয়ে সাজানো আর একপাশে পেছন ঘুরে দাড়িয়ে আছে মেঘ। রোজের চোখ মেয়েটাকে খুজতে ব্যাস্ত।

রোজ : মেয়েটা কোথায়..?? কোথায় লুকায় রাখছো চুন্নিটারে।

রোজের কথায় মেঘের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়লো,, ও ভেবেছিলো রোজ এসে ছাদের কথা বা ওর কথা জিজ্ঞাসা করবে। কিন্তু মেয়ে.? মেয়ে কোথা থেকে আসলো.?

মেঘ : কার মেয়ে.? কিসের মেয়ে.?
রোজ : ঈশাপু যার কথা বললো। ছাদে নাকি একটা মেয়ে এসেছে। তাকে তো দেখতে পাচ্ছি না। কোথায় লুকাইছো তাড়াতাড়ি বের করো।

মেঘ : হায় রে বোকা মেয়ে। ঈশাপু মিথ্যা কথা বলছে। এখানে তুই আর আমি ছাড়া আর কেউ নেই।

রোজ : ঈশাপু মিথ্যা বলবে কেন.? তুমি আমাকে লুকায় লুকায় মেয়েদের সাথে ইয়ে করো,,, এজন্যই বলেছিলে সারাবাড়ি ঘুরতে। আমাদের ঘরও সাজাও নাই। এই ছিলো তোমার মনে.? আমার জীবন নিয়ে খেলতেছো….

মেঘ : আরে আরে কাঁদছিস কেন.? ওরা মজা করেছে। এই দেখ এখানে কেউ নেই। তুই ছাড়া আমি আর কোনো মেয়ের কথা নিজের মনের আশেপাশে ঘেসতেও দেই না। আর নিজের আশেপাশে কিভাবে রাখবো.? বিশ্বাস কর আমি কারোর সাথে কিছু করিনি।

রোজ : আমাকে ছুঁয়ে বলো।
মেঘ : এই নে। তোকে ছুঁয়ে বললাম। আমি তোকে ছাড়া কোনো মেয়ের কথা নিজের মনের কোথাও আনবো না। তোকে ছাড়া দ্বিতীয় কোনো মেয়ে,, আমাদের মেয়েরা বাদে। কারোর কথা ভাববো না। হ্যাপি.?

রোজ : আমি রাগ করেছি।
মেঘ : আচ্ছা.? তাহলে কি করলে আমার রোজের রাগ ভাঙবে.?

রোজ : যা বলবো তা করতে পারবে না। শুধু শুধু বলে কি লাভ.?
মেঘ : মেঘ তার রোজের জন্য সব করতে পারে। তুই শুধু একবার বলেই দেখ।

রোজ : সত্যি.? তাহলে চাঁদ এনে দাও।
মেঘ : তাই.? আচ্ছা দিবো। এখন চল,,,

মেঘ রোজকে কোলে তুলে খাটে এনে বসিয়ে দিলো। তারপর চোখ বুজে থাকতে বললো।

রোজ : আনতে না পারলে কিন্তু আরো রাগ করবো। তখন কিন্তু আমাকে দোষ দিতে পারবে না।

মেঘ : আরে একটা চাঁদ তো এনেছি এবার আরেকটা আনবো। একটু ওয়েট কর প্লিজ।

রোজ : ওরে বাটপার। চাঁদ একটা। তুমি কি আরো একটা বানায় আনতেছো.? আমি কিন্তু চোখ খুলছি,,,

মেঘ রোজের চোখে হাত দিয়ে রোজের পাশে বসলো। তারপর ওর চোখের সামনে থেকে হাত সরিয়ে নিলো। রোজ চোখ খুলে বড় বড় করে তাকালো। ওর সামনে একটা রূপার থালা ভর্তি পানি। আর পানিতে চাঁদের সাথে জ্বলজ্বল করছে রোজের চেহারার প্রতিবিম্ব।

মেঘ : ওই চাঁদটা তোর জন্য। আর এটা আমার চাঁদ। আমার জীবনের একমাত্র চাঁদ।

রোজ : হি হি। আমাদের মেয়ে তাহলে চাঁদনি হবে।
মেঘ : মেয়ের নাম আমি ঠিক করে রেখেছি। তোকে সময়মতো জানিয়ে দিবো। আর ওর জন্য আমি প্রতিটা জিনিস সোনা রূপা দিয়ে বানাবো। ভালো হবে না.?

রোজ : এটা ঠিক না। আর বুঝলে কিভাবে মেয়ে হবে.? ছেলেও তো হতে পারে।
মেঘ : মেয়ে হবে আমি জানি। আর ঠিক ভুল কি তুই বিচার করবি.?
ওই এতো ভারি ল্যাহেঙ্গা এখনো পড়ে আছিস কেন.? কষ্ট হচ্ছে না.?

রোজ : খুলতেই তো চেয়েছিলাম তারপর ছাদে চলে এসেছি। একা একা তো খুলতে পারবো না। কেউ মনে হয় জেগেও নাই। থাক খুলতে হবে না।এভাবেই থাকি। আচ্ছা!! আমরা কি আজ এখানে ঘুমাবো.?

মেঘ : চুপ করে বস।আমি খুলে দিচ্ছি।
রোজ : নাহহহহ। না মানে অনেকগুলো সেপটেপিন,, তারপর ক্লিপ,, তারপর ওরনা। খুলতে হবে না।

মেঘ : চুপচাপ পা তুলে বস। আমি সব খুলে দিচ্ছি। আর দেখ ওখানে একটা শাড়ি আছে ওটা পড়বি। আর হ্যা ওদেশে গিয়ে বোরকা পড়ে থাকবি। আমি চাইনা ছেলেদের নজর তোর ওপর পড়ুক + গান ছাড়া কোনোকিছুর দিকে খেয়াল করবি না। মনে থাকবে.?

রোজ : তোমার কথা শুনে মনে হচ্ছে সারা পৃথিবিতে তুমি একা বিয়ে করেছো আর তোমার একারই বউ আছে। আর কারোর বউ নাই হি হি।

মেঘ : যা ভাবিস ভাব। কিন্তু যেটা বলেছি সেটাই করবি ব্যাসস। নে ওরনা খোলা হয়ে গেছে। গিয়ে শাড়িটা পড়ে না, পেটিকোট আর ব্লাউজ পড়ে আয়। শাড়ি আমি পড়িয়ে দিবো।

রোজ : আমি তো শাড়ি পড়তে পারি।
মেঘ : কেন পারিস.? তোকে শাড়ি পড়া শিখতে কে বলেছে..? আমি এতো কষ্ট করে শাড়ি পড়ানো শিখেছি শুধুমাত্র তোকে শাড়ি পড়িয়ে দিবো বলে আর তুই..??

রোজ : আর আমি সবকিছু শিখেছি। হি হি। তার একটা কারনও আছে। কারনটা হলো মেয়েরা অতিরিক্ত ন্যাকাপনা করে,,, আর আমি সবার মতো হতে চাইনি।

মেঘ : আপাতত আমার শখের জন্য…
রোজ : অকে। তবে মনে হয় না তুমি ঠিকঠাক শাড়ি পড়াতে পারবে। যাই হোক চাচ্ছো যখন তখন পড়াও। যদি ভুল হয় গাট্টা দিবো।

মেঘ রোজকে সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়ে রেলিং ঘেসে দাড়ালো। দমকা বাতাস বইছে। চারিদিক শুনশান। মেঘ এক হাতে রোজের খোপা খুলে দিয়ে ওকে পেছন থেকে শক্ত করে জরিয়ে ধরলো।

রোজ : এই তুইতোকারি এবার বাদ দাও। কেমন জানি চাকরানি চাকরানি লাগে।

মেঘ : এই ” তুই ” ডাকটার জন্যই তো তোকে ফিরে পেলাম। তুমি করে তো ডেকেছিলাম। তখন কি ফল পেয়েছিলাম.? তুই হয় আপনি করে ডাকতিস নাহলে পাগল বলে দূরে সড়িয়ে দিতিস।

রোজ : সরি মেঘরোদ্দুর। আমি সত্যিই তোমাকে কষ্ট দিতে চাইনি। সবটা তো ওমনই হয়ে গেলো। আমিও চাইতাম তোমাকে সবটা বলতে কিন্তু পারিনি। আমি তো ভেবেছিলাম তোমাকে কখনোই পাবো না। দেখো আজ তোমার জন্যই আমি কুশান চৌধুরিকে ফিরে পেলাম। আমাকে মেয়ে বলে স্বীকার করেছেন উনি।

মেঘ : বেয়াদবি করছিস আমার সামনে.? বলেছি না নাম ধরে আর ডাকবি না। বাবাই বলবি। সত্যি বলতে বাবাইও (কুশান) তোকে ভালোবাসতো।শুধু আম্মুর কথা ভেবে তোর থেকে দূরে থেকেছে। আর এখন তো সব ভুল বোঝাবুঝি শেষ। তাই আর ওসব টেনে আনিস না।

রোজ : আমার তো ভালোবাসার ওপর থেকে বিশ্বাসই উঠে গেছিলো যেদিন নুরিন আপু আর তোমাকে একসাথে দেখি। পরে বাবা মানে তোমার বাবা আমাকে সবটা জানায়।

মেঘ : সবাই জীবনের কোনো একটা সময় নিজের ভালোবাসাকে ভুল বোঝে। এটা খুব কমন হয়ে গেছে। তবে আমার জন্য এটা যাস্ট দেখার জিনিস নিজের জীবনে ভালোবাসায় এই “ভুল ” শব্দটা নেই। তবে একটা লক্ষ্য আর মূলমন্ত্র ছিলো। জানিস সেটা কি.?

রোজ : কিহ..?
মেঘ : **তুই হবি আমার**। আজ দেখ তুই, তোর পুরোটা জুরে মেঘের বিচরন। তোর সবটা জুরে আমি,, আমার কথা না হয় বাদই দিলাম কারন আমার হার্ট তোর নামে বিট করে। আমার দেহের প্রতিটা শিরা উপশিরা দিয়ে বয়ে চলে রোজ নামক

রোজ : এন্টিবডি.? অ্যান্টিজেনকে প্রতিরোধ করার জন্য রক্তে যে পদার্থ সৃষ্টি হয় তাকে এন্ডিবডি বলে। আমিও অনেকটাই তোমাকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছি তাহলে আমি #রোজ_অ্যান্টিজেন

মেঘ : আমি একটু রোম্যান্টিক মুডে গেলে তোর জ্বলে..?? প্রতিটা দিন আমি যখন একটু সিরিয়াস হই তখন সেই সিচুয়েশনের ২৪টা বাজিয়ে দিস… এভাবে চললে

মেঘের কথা শেষ হওয়ার আগেই রোজ পেছন ঘুরে মেঘের দুঠোট নিজের দখলে নিয়ে নেয়। মিনিট পাঁচেক পরে মেঘকে ছেড়ে কিছুটা দূরে সরে মাটির দিকে তাকিয়ে রইলো রোজ।

মেঘ : মাটির দিকে তাকালে আর পার পাচ্ছিস না। শুরুটা তুই করেছিস শেষটা আমি করবো।

আজ ওদের ভালোবাসার পূর্নতা পাবার রাত। অপেক্ষার প্রহর শেষ হবার রাত। আজকের এই রাতে ভালোবাসায় সিক্ত হবে এমন দুটি মানুষের মন যারা একে অপরকে ছাড়া অসম্পূর্ণ।
.
.
.
.
দেখতে দেখতে সাত বছর কেটে গেলো। পাপড়ি এখন অনেকটা বড় হয়েছে রোজের সাথে অনকগুলো গানের রেকর্ডিংও কমপ্লিট করেছে। রওশন ঈশার দুই মেয়ে রশনি আর ইশানি। আরাভ আলিজার একমাত্র ছেলে আদ্রিয়ান খান। আর আদ্রর ননয়ের মনি আরিয়ানা ইবনাত পিউ, কুহু আর রাজের মেয়ে। হিমা আরীবের এক ছেলে এক মেয়ে,, আকাশ আর আর নীলাঞ্জনা। কলির ছেলে কাঈফ।

সবাই বিগত ২ঘন্টা ধরে হসপিটালের কেবিনের বাইরে অপেক্ষা করছে রোজের ছেলেকে দেখার জন্য। যদিও আল্ট্রাসোনোগ্রাফি করে জেনেছিলো মেয়ে হবে কিন্তু নার্স এসে বললো ছেলে হয়েছে। কিছুক্ষন পর একজন নার্স এসে একটা ফুটফুটে বেবি গার্ল মেঘের হাতে তুলে দিলো।

নার্স : এই নিন মিস্টার মেঘালয় আহমেদ। আপনার মেয়ে,,, আসলে,,,, না মানে,,,, প্রথমে তো ছেলে ভেবেছিলাম,, যেভাবে জোরে জোরে কাঁদছিলো আর হাত পা ছুড়ছিলো,, জেনেরালি বাচ্চারা এতো ছোটাছুটি করে না। যাই হোক আপনাদের মেয়ে কিন্তু মাশাআল্লাহ।

মেঘ : রোজ কেমন আছে.?
নার্স : হ্যা ভালো। ওনাকে কিছুক্ষনের মধ্যেই কেবিনে দেওয়া হবে। চিন্তা করবেন না।

মেঘ মেয়েকে উচু করে মেয়ের গালে চুমু খেলো। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে সুখের নোনাজল।

রওশন : মেয়ের নাম কি রাখবে মেঘ..?
ইশানি : পাপা বেবিটা আমাদের বোনু.?

আদ্রিয়ান : আমাদের সবার ছোট বোনু। শোন ওর কাছে যাবি না। ওকে কোলে নিবি না। নিতে গেলে যদি পরে যায় তখন ব্যাথা পাবে।

পিউ : ইশশ কি সুন্দল বেবি।
আদ্রিয়ান : এই তুতলা তোকে বলেছি না এক ঘন্টা চুপ থাকবি। কথা বললি কেন,, যা আরো এক ঘন্টা কোনো কথা বলতে পারবি না তুই। এটা তোর শাস্তি।

কাঈফ : আমাদের সবার থেকে এই বেবিটা বেশি কিউট। ফর্সা মুখে লাল লাল গাল একেবারে রোজ মিমির মতো। কেউ ওর গাল ধরে টানবি না। টাচ করবি না।

কাঈফের কথায় সবার মন খারাপ হয়ে গেলো। রোজকে বেডে দেওয়া হয়েছে। বাচ্চারা বেবির দোলনার চারপাশে গোল হয়ে আছে। বাকি সবাই রোজকে দেখে বাইরে চলে গেলো।

রোজ : কি ব্যাপার ওদের মন খারাপ কেন.? সবাই চুপচাপ।
মেঘ : দেখো ঝগড়া করেছে হয়তো।

রোজ : পাপড়ি কি হয়েছে.? তোমাদের মন খারাপ কেন.?

পাপড়ি : ফুপি কাঈফ সবাইকে,, বেবিকে টাচ করতে মানা করেছে। সবার থেকে বেশি সুন্দর আর ছোট সেজন্য। কাঈফ ভালো জন্যই বলেছে কিন্তু ওরা কাঈফেন ওপরই রেগে গেছে।

রশনি : হ্যা মিমি তুমিই বলো । আমাদের সাথে কি বেবি খেলবে না..?? আমাদের কোলে আসবে না?

রোজ : কেন খেলবে না সোনা। যখন বড় হবে তখন খেলবে। বেবি তো এখন অনেক ছোট। আর তোমাদের কাঈফ ভাইয়া কিন্তু ঠিক বলেছে। এখন বেবিকে বেশি টাচ করলে বেবি অসুস্থ হয়ে যাবে। তোমরা কি চাও বেবি অসুস্থ হয়ে কষ্ট পাক.?

সবাই : না।
রোজ : তাহলে কাঈফের ওপর আর রেগে থেকো না। কাল সবাই বেবিকে টাচ করবা আর যখন বেবি একটু বড় হবে তখন কোলে নিবা, খেলবা। ঠিক আছে.?

সবাই : হ্যা।

আদ্রিয়ান : কিন্তু বেবির নাম কি মিমি.?
রোজ : সেটা তো তোমাদের চাচ্চু জানে। আমাকেও বলেনি। এবার তোমরা তোমাদের চাচ্চুর কাছ থেকে নাম শোনো।

সবাই ছুটে এসে মেঘকে ঘিরে ধরলো,, মেঘকে নিয়ে টানাহ্যাঁচড়া করতে করতে মেঘকে মেঝেতে শুইয়ে ওর বুকের ওপর উঠে বসলো আদ্রিয়ান।

আদ্রিয়ান : নাম বলো তাড়াতাড়ি নাহলে গুলি করে খুলি উড়ায় দিবো। ( রোজের কাছ থেকে ডাইলগটা শিখে সবার ওপর ব্যাবহার করে )

মেঘ : আরে বলছি তো। আগে ওঠো। রোজ ওদের উঠতে বলো জান। এতোজন মিলে এমন করলে তো দাড়ানোরও শক্তি থাকবে না। গায়ে ব্যাথা ছিলো তো,, আদ্র বাবা ওঠো তোমার চাচ্চু অসুস্থ বাবা,, মনে নেই গতকাল অনেক জ্বর ছিলো আমার..

রোজ : এতোদিন নাম বলোনি। এবার শাস্তি পাও।
মেঘ : আরে একজন তো আমার দলে আসো। সবগুলো তাদের মিমির চামচা হয়েছে।

পাপড়ি : চামচা না মেঘ বেবি আমরা রোজ ফুপির টিম মেমবার,,, ফুপির সাপোর্টার। তুমি যতক্ষন না নাম বলবে আদ্র ততক্ষন উঠবে না।

মেঘ : আচ্ছা বলছি। তোমাদের বোনের নাম রোদেলা আহমেদ মুন। ডাকনাম চাঁদনি। হয়েছে.?

সবাই : আমাদের পিচ্চি বোনু চাঁদনি।

সবাই চাঁদনিকে ঘিরে দাড়িয়ে ওকে দেখতে লাগলো। মেঘ আবার রোজের কাছে বসতেই রোজ বলে উঠলো

রোজ : ৭বছর আগের কথা এখনো মনে আছে.?
মেঘ : তোমাকে দেওয়া প্রতিটা কথা,, তোমার সাথে কাটানো প্রতিটা মুহূর্ত আমার ততদিন মনে থাকবে যতদিন আমার নিঃশ্বাস এই পৃথিবিতে পড়বে।

রোজ : ওহহ তার মানে যদি রকেটে করে চাঁদে বা মঙ্গল গ্রহে যাও তাহলে আমাকে ভুলে যাবে । সাত বছরের সংসার আর আমাদের চাঁদনি সব ভুলে যাবে। দেখলি তো মামনি তোর বাবাই কেমন..?

মেঘ : এখনো আগের মতো দুষ্টুমি। ভুলে যেও না এখন তুমি আর ছোট নাই। দুদিন পর তোমার মেয়ে বড় হয়ে আমার জামাই এর দশা আমার মতো খারাপ করে দেবে। আর সেই প্যারা দেওয়া শিখবে তোমার কাছে।

রোজ : তুমি এমনটা বলতে পারলে.? আমি তোমাকে প্যারা দেই..??আমাকে আগের মতো একটুও ভালোবাসো না তুমি।
মেঘ : হ্যা তো।

রোজ : আমিও তোমাকে ভালোবাসি না। আমার মেয়েই আমার সব। হুহ। যাও তুমি

মেঘ রোজের কপালে আলতো করে চুঁমু দিলো।
মেঘ : ভালোবাসি। শুধুই তোকে। তোরা ছাড়া আর কে আছে আমার.?
রোজ : ভালোবাসি তো তবে তোমাকে না আমার মেঘরোদ্দুরকে। হি হি

সবাই : আমরাও ভালোবাসি তোমাদের। তোমরা আমাদের ভালোবাসো না..? চাচ্চু তুমি শুধু মিমিকে ভালোবাসো..?? আমরা এটা বলে দিবো সবাইকে।

ওদের কথা শুনে মেঘ অসহায় চোখে দরজার দিকে তাকালো,, সবাই বাইরেই আছে।যদি সত্যিই বলে দেয়..?? ভীষন লজ্জাজনক ব্যাপার। মেঘ রোজের দিকে তাকাতেই দেখলো,, রোজ খিলখিল করেরে বাচ্চাদের সাথে মিলে হাসছে। মেঘ মাথা থেকে সব চিন্তা বাদ দিয়ে রোজের হাসিমাখা মুখের দিয়ে চেয়ে থাকলো কিছুক্ষন। তারপর চাঁদনিকে রোজের পাশে শুইয়ে রোজের হাত ধরে চাঁদনির গালে নিজের ঠোট ছোঁয়ালো।

আজ মেঘরোজের জীবন পরিপূর্ণ। এভাবেই খুনসুটি আর ভালোবাসায় ভরা থাকুক ওদের জীবন

সমাপ্ত।