তুমিময় আসক্তি পর্ব-২০

0
1216

#তুমিময়_আসক্তি
#কলমে_আলো_ইসলাম

“২০”

–” দোলার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। গলায় হাত দিয়ে কাশতে থাকে। রুদ্র ঘাবড়ানো চোখে তাকিয়ে দোলার মাথায় হাত বুলাতে থাকে। কি হয়েছে এমন করছো কেনো? খাবার আটকে গিয়েছে কি? সাবধানে খাবে তো। রুদ্রর কথায় দোলা কাশি থামিয়ে বলে কাঁটা। দোলার অসম্পূর্ণ কথায় রুদ্র বুঝে যায় যা বোঝার।

— “” রুদ্র গ্লাসে পানি নিয়ে দোলার মুখের সামনে ধরতেই দোলা ঢকঢক করে সব পানি শেষ করে দেয় এক চুমুকে। কিন্তু তাও কাজ হয়না তাতে।
–‘ কাঁটাটা এমন ভাবে বিঁধেছে দোলার কষ্ট হচ্ছে। ঢোক গিলতে গেলেও ব্যথা পাচ্ছে। রুদ্র বুঝতে পারে না কি করবে।

— রুদ্র শুকনো ভাত নিয়ে দোলার সামনে ধরতেই দোলা মুখ ঘুরিয়ে নেয়৷ আসলে কিছু গিলার মতো অবস্থায় সে নেই এখন৷ দোলার চোখ মুখ লাল হয়ে উঠেছে। ফর্সা মুখে লালাভ বর্ণ ধারণ করে মুখটা রক্তিম করে তুলেছে। রুদ্র চোখ পাকিয়ে তাকালে দোলা চুপসে যাওয়া চেহারা করে চুপচাপ ভাতটা মুখে নিয়ে নেয়।

— একদম চিবোনো যাবে না৷ গিলে নাও। রুদ্রর কথায় দোলা তাই করে৷ ভাতের সাথে কাঁটাটাও চলে যায়। দোলা যেনো স্বস্তি পায়। একটা টানা দীর্ঘশ্বাস ফেলে পানি খেয়ে রিলাক্স করে। দোলার কপাল জুড়ে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে উঠেছিল এতখনে। দোলা সেটা শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছে শেষ করার আগেই রুদ্র গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠে, কোনো কাজ তো ঠিকঠাক ভাবে করতে পারো না৷ কিন্তু বড় বড় কথার বেলায় খুব ভালো পারো সেটা। খাওয়ার সময় মন থাকে কোথায়? কাঁটা দেখে খেতে পারো না ষ্টুপিড।।

— রুদ্রর বকা শুনে দোলা মুখটা বাংলার পাঁচের ন্যায় করে বসে থাকে।
— তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করো। এরপর ওষুধ আছে খেতে হবে বলে রুদ্র আবার খাওয়ায় মনোযোগ দেয়।

– মিনিট দুই যেতে রুদ্র খেয়াল করে দেখে দোলা মুখটা মলিন করে একই ভাবে বসে আছে। খাবার খাচ্ছে না।
— রুদ্র দোলাকে কিছু একটা বলতে গিয়ে থেমে যায়৷ এরপর তার প্লেটটা রেখে দোলার প্লেটটা হাতে নিয়ে দোলার সামনে এক লোকমা ভাত তুলে ধরে।

— দোলা অবাক চোখে তাকায় রুদ্রর দিকে। তার যেনো কোনো ভাবেই বিশ্বাস হচ্ছে না রুদ্র এমন একটা কাজ করতে পারে। তাকে খাওয়াই দিচ্ছে। দোলা গোটা কয়েক বার চোখ বন্ধ করে আবার খুলে।

— রুদ্র বিরক্ত নিয়ে তাকিয়ে আছে দোলার দিকে। আর দোলা এখনো শকড কাটিয়ে উঠতে পারিনি।

— আর কতখন এইভাবে খাবার ধরে রাখবো ইডিয়ট। নিচ্ছো না কেনো? রুদ্র ধমকে দোলার আজ খারাপ লাগে না৷ বরং অনেক ভালো লাগছে৷ দোলার মধ্যে অনুভূতিটা এখন ঠিক কেমন বলে বোঝাতে পারবে না দোলা। দোলা আর দেরি না করে হা করে। কিন্তু মুগ্ধ চোখে রুদ্রর দিকে তাকিয়ে আছে। রুদ্র দোলাকে খুব যত্ন নিয়ে খাওয়াচ্ছে।

–‘ তানিয়া রাতের খাওয়া শেষ করে রুমে এসে দেখে তার ফোন বাঁজছে৷ ফোন হাতেই নিতেই কেটে যায় কলটা আবার। তানিয়া ভ্রু কুচকে ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে তার বাবার নাম্বার। তানিয়ার মুখে খুশির আমেজের রেখা ফুটে উঠে।

– মিনিট এক যেতে আবার ফোনটা বেজে উঠে। তানিয়া এক সেকেন্ডও দেরি না করে ফোন রিসিভ করতেই তানভীর আহমেদ অভিমানে গলায় বলা, কি রে মা মামা, মা ভাইয়াকে পেয়ে বাবাকে ভুলে গেলি?

– “” তানিয়া মুচকি হেসে বলে না গো বাবা তোমাকে ভুলিনি৷ আর না কখনো ভুলব৷ তুমি তো আমার সব বাবা। কেমন আছো?
– তানিয়ার কথায় তানভির আহমেদ খুশি হোন৷ এরপর কিছুখন কৌশল বিনিময় শেষে তানভীর আহমেদ বলেন, কবে ফিরছিস তানু? তোকে ছাড়া আমার একা একা ভালো লাগছে না। তাড়াতাড়ি ফিরে আয় মা।

– বাবার কথায় তানিয়ার মুখের হাসিটা গায়ের হয়ে যায়। মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে আসে।
– তানিয়ার উত্তর না পেয়ে তানভীর আহমেদ বলে কি রে মা শুনতে পাচ্ছিস আমার কথা?

– হুম বাবা বলো শুনছি থমথমে গলায় বলে তানিয়া।

–“” কি হলো কিছু বলছিস না যে?

– বাবা আমি তোমাকে একটা কথা বলতে চাই৷ প্লিজ আমার কথাটা রাখবে অনুরোধ করে বলে তানিয়া।
–‘ এমন করে বলছিস কেনো মা। বলনা কি বলবি। আমি তো আমার মা’টার সব কথা রাখার চেষ্টা করি। বেশ সাবলীলভাবেই বলে কথা গুলো তানভীর আহমেদ।

–” বাবা আমি এখানেই থেকে যেতে চাই৷ সবার সাথে এখানেই বাকি জীবনটা কাটাতে চাই৷ প্লিজ বাবা তুমিও চলে এসো এখানে। আমি আর আমেরিকা ফিরে যেতে চাই না।

–তানিয়ার এমন কথার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলো না তানভীর আহমেদ। মুখটা মলিন হয়ে আসে তার। হাসিটা অনেক আগেই উবে গেছে।

— তানিয়া আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করছে তার বাবার উত্তরের।
-দেখ তানু, তুই যদি আসতে না চাস তাহলে আমি জোর করব না৷ কিন্তু আমাকে ওইখানে আর ফিরে যেতে বলিস না৷ আমি তোর মায়ের থেকে দূরে থাকতে চাই বলে তোকে নিয়ে এতদুর এসেছিলাম। এখন আবার একই জায়গায় আমাকে ফিরে যেতে বলিস না। মনোক্ষুণ্ণ হয়ে বলে তানভীর আহমেদ কথাটা।

–‘ ” বাবা আমি চাই সবাইকে নিয়ে থাকতে। তুমি আমার জীবনে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ। তোমাকে বাদ দিয়ে আমি কখনোই কিছু করতে পারব না। আমি জানি বাবা তোমার কষ্ট হয় মায়ের থেকে দূরে থাকতে। কিন্তু তুমি বাধ্য হয়ে দূরে থাকো৷ আমি তো বড় হয়েছি৷ এখন সব বুঝি বাবা। মায়ের লোভ লালসা তোমাদের আলাদা করেছে এটাও জানি৷ কিন্তু এইভাবে আর কতদিন বাবা? মাকে তো বোঝাতে হবে। তাকে সঠিক পথে নিয়ে আসতে হবে ।

— তোর মায়ের কাছে তার টাকা পয়সাই আসল। সম্পর্কের কোনো দাম নেই৷ সব কিছু জানার পরও মুখ বুজে সহ্য করে গেছি। কিন্তু এখন আর সম্ভব না৷ তাই দূরে চলে আসা তোকে নিয়ে। তারপরও তোর মা বুঝেনি৷ একবারের জন্য অনুতপ্ত হয়নি। তাই আমি তোর মায়ের আশা ছেড়ে দিয়েছি। হতাশ সুরে বলে তানভীর আহমেদ।

– বাবা তুমি আমার জন্য পারবে না আবার ফিরে আসতে? তানিয়ার এমন ইমোশনাল কথায় তানভীর আহমেদ থমকে যায়৷ এই কথার জবাবে কি বলা উচিত তার জানা নেই।

— তানভীর আহমেদ পরিবেশটা স্বাভাবিক করার জন্য বলে আচ্ছা আমি দেখছি কি করা যায়। যাবো বললে তো আর সব ছেড়ে চলে যাওয়া যায় না। এইদিকটা গুছিয়ে তবে যেতে হবে আমাকে। তার জন্য সময় লাগবে তানু৷ আমাকে একটু সময় দে আমি পরে জানাবো। এরপর একটু কথা বলে কেটে দেয় তানিয়া।

— তানিয়া ফোন কাটতেই আবার ফোন বেজে উঠে। আননন নাম্বার থেকে ফোন আসতে দেখে তানিয়া কৌতুহল নিয়ে ভ্রু কুচকে তাকায়।
– একবার কেটে গিয়ে আবার কল আসে। তানিয়া ফোন রিসিভ করে চুপ করে থাকে।

— অপরপাশ থেকে সালাম আসতেই তানিয়া একটু নড়েচড়ে উঠে সালামের জবাব দেয়। কণ্ঠেটা খুবই চেনা চেনা লাগে তানিয়ার৷ কিন্তু কে হতে পারে বুঝতে পারছে না।

—“” সজল মিহি কন্ঠে বলে কেমন আছেন? তানিয়া সাবলীল ভাবে জবাব দিয়ে বলে কে আপনি?
— সজল। ওই যে ক্যানটিনে আর লিফটে বাকিটা বলার আগে তানিয়া মৃদু চিৎকার করে বলে আপনি,? আপনি আমার নাম্বার পেলেন কোথায়?

– “” তানিয়ার কথায় সজল মুখে হাসি রেখে বলে আজকাল কারো নাম্বার পাওয়া কোনো ব্যাপার নাকি? ও পেয়েছি কোনো এক ভাবে। যার জন্য আপনার নাম্বার খুঁজে ফোন দেওয়া, সজলের কথায় তানিয়া ভ্রু কুচকে বলে কি?

— আচ্ছা আপনারা হসপিটালে কেনো এসেছিলেন? আর আপনার সাথে ওইটা দোলা ছিলো না? উনাকে কেউ একজন কোলে করে নিয়ে আসলো মনে হলো? উনি কি উনার স্বামী?

–“” জ্বি উনি দোলা মানে বউমনি আর যিনি কোলে করে নিয়ে এসেছে উনি আমার ব্রো । বউমনির স্বামী।

–” আচ্ছা কি হয়েছে উনার৷ গতকাল তো ভালোই ছিলো হঠাৎ। কোনো সমস্যা?

–‘ এরপর তানিয়া সব খুলে বসে সজলকে। সজলের খারাপ লাগে কথা গুলো শুনে।
—‘ খুবই দুঃখজনক ব্যাপার।। উনার মতো একটা ভালো মানুষের সাথে এমন হবে ভাবিনি। আচ্ছা আপনি তখন আমাকে ইশারায় কি বলতে ছিলেন। আমি না ঠিক বুঝে উঠতে পারিনি।

–” আপনার মতো উজবুক যে বুঝবে না এটাই স্বাভাবিক বলেই তানিয়া জিহবা কাটে।

— সজল কৌতুহল ভরা গলায় বলে এক্সকিউজ মি?
–‘ নাহ কিছু না, বেশ নরম শান্তশিষ্ট স্বরেই বলে তানিয়া। আসলে তখন ব্রো ছিলো সাথে তাই আপনাকে আসতে বারণ করছিলাম।

— কেনো? উনি থাকলে সমস্যা কি?
— আসলে ব্রো এইসব পছন্দ করে না৷ তার ওয়াইফের সাথে অন্য পুরুষ কথা বলুক চাইনা। তাই আর কি।
–‘ ওহ! তার মানে উনাকে আমার দেখতে যাওয়া আর হলো না।
–” সজলের কথা বুঝতে না পারায় তানিয়া বলে মানে?
-” ভেবেছিলাম উনার সাথে দেখা করতে যাবো আপনাদের বাড়িতে কিন্তু.. তার আগেই তানিয়া উচ্চস্বরে বলে একদম না। ভুলেও এমনটা করবেন না প্লিজ।

–” জ্বি বুঝতে পারছি। আচ্ছা তবে ফোন তো করতে পারি আপনার কাছে উনার খবর নেওয়ার জন্য? তানিয়া একটু ভাবার পর বলে ওকে সমস্যা নেই তবে বউমনির সাথে কোনো ভাবে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবেন না এখন প্লিজ।

— ওকে মাথায় থাকবে। কিন্তু খারাপ লাগছে খুব উনার জন্য। উনি অনেক ভালো মনের মানুষ। উনার সাথে এমন একটা ঘটনা হবে ভাবিনি। একটু থেমে সজল বলে আপনিও মানুষ টা খারাপ না৷ একটু রাগী এটাই সমস্যা বলেই সজল রাখছি বলে কেটে দেয় ফোন। আর তানিয়া আহম্মক সেঁজে বসে থাকে।

–‘ কি বললো উজবুকটা৷ আমি রাগী আবার ভালো মানুষও। প্রশংসা করলো নাকি অপমান করলো ভাবান্তর হয়ে বলে তানিয়া৷ এরপর একা একা হেসে উঠে বলে আসলেই পাগল ছেলেটা বলে তানিয়া ফোন রেখে ঘুমানোর প্রস্তুতি নেয়।

–” সজল হসপিটাল রিসিপশন থেকে তানিয়ার নাম্বারটা পাই। দোলাকে ভর্তি করার পর তানিয়া সব ফর্মালিটি পূরণ করে আর সেখানে তার নাম্বার টা দেয়। তাই সজল রিসিপশন থেকে সহজেই তানিয়ার নাম্বারটা পেয়ে যায়।

–” রাত ১টা বেজে ৩৫ মিনিট।
–” সবাই ঘুমে বিভোর এই সময়ে। দোলাও ঘুমিয়ে গেছে অনেক আগে। শুধু ঘুম নেই রুদ্রর চোখে। রুদ্র বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। অনেক হিসাব নিকাশ মেলানোর চেষ্টায় সে। তার আচরণে সে নিজেই অবাক হচ্ছে৷ কি হচ্ছে তার সাথে এইসব। কেনো হচ্ছে এমন তার সাথে? এতটা চেঞ্জ কিভাবে আসলো তার মধ্যে বুঝে উঠে না।

–” রুদ্র আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে৷ সামনে দ্বিখণ্ডিত চাঁদটা জ্বলজ্বল করছে। তারা গুলো জেগে যেনো চাঁদকে সঙ্গ দিচ্ছে।

— আমি কেনো দোলার প্রতি দুর্বল হয়ে পড়ছি? কেনো ওকে দেখলে সব কিছু ভুলে যায়? এ কেমন অনুভূতি আমার মধ্যে। ওর জন্য মায়া কেনো হচ্ছে আমার? সকল প্রশ্ন গুলো আকাশের দিকে তাকিয়ে চাঁদকে করে রুদ্র।

–” আমি আবার কারো মায়ায় আসক্ত হয়ে যাচ্ছি। এটা কি মায়া নাকি মোহ? নাকি ভালোবাসা?

–‘ না না এমনটা হতে পারে না৷ আমি কাউকে ভালোবাসি না৷ আর বাসতে চাইও না। সবাই ছলনাময়ী। না রুদ্র না৷ এদের মায়ায় আবদ্ধ হলে চলবে না৷ রুদ্রনীল চৌধুরী কারো মায়ায় পড়তে পারে না৷ ওই সব ফেইক লাভ, মোহ দরকার নেই৷ আমাকে আগের মতো হতে হবে। অসুস্থ ছিলো দায়িত্ব পালন করেছি শেষ। আর কিছু নেই আর না থাকবে বলে রুদ্র ঘরের মধ্যে চলে আসে৷ কিন্তু দোলার ঘুমন্ত ফেসটা দেখে রুদ্র ঠিকই আবদ্ধ হয়ে যায় তাতে।

–” মোহনীয় চোখে তাকিয়ে থাকে৷ দোলার বাচ্চাসুলভ ঘুমন্ত চেহারা যে কারো মায়ায় আবদ্ধ হতে বাধ্য যে। রুদ্র কিছুখন তাকিয়ে থাকতেই দেখে তানিয়া শীতে জড়োসড়ো হয়ে ঘুমাচ্ছে। রুদ্র এসির পাওয়ার টা কমিয়ে দিয়ে দোলার গায়ে চাদর টেনে দিয়ে। দোলার থেকে দূরত্ব রেখে শুয়ে পড়ে।

— রুদ্র দোটানায় ভুগছে৷ দোলার থেকে দূরে যাওয়ার তীব্র আকাঙ্খা আবার দোলার মায়াবী মুখের মায়ায় আবদ্ধ হওয়ার তীব্র ভয়। দোলার জ্বালানো, হাসি মুখ, কান্নারত ফেস সব কিছু ভেসে উঠে রুদ্র সামনে। রুদ্র শক্ত করে চোখ বন্ধ করে বলে এইসব কিছু ভাবতে চাইনা আমি৷ আমাকে দূরে থাকতে হবে এই মেয়ের থেকে এটাই জানি শুধু। এরপর রুদ্র ঘুমিয়ে যায় কিছু সময় বাদে।

–” সকালে ঘুম থেকে উঠে রুদ্র রেডি হয় অফিসের জন্য। দোলা সকাল থেকে লক্ষ্য করছে রুদ্র আজ তাকে আবার এড়িয়ে চলছে। দোলার মনটা আবার খারাপ হয়ে যায়। রুদ্রকে স্বাভাবিক হতে দেখে দোলা নতুন করে আশার পথ দেখতে পেয়ছিলো৷ কিন্তু এখন মনে হচ্ছে সে আশার প্রদীপ টা আবার নিভে যাচ্ছে।

-‘”” দোলা সকাল থেকে একই ভাবে বসে আছে৷ এখনো তার ফ্রেস হওয়া হয়নি৷ পায়ের ব্যথাটা আগের থেকে একটু বেশি লাগছে তার কাছে। কমার পরিবর্তে বেশি কেনো হলো বুঝতে পারছে না৷ দোলা আজ যেনো ডান পা টা নড়াতেই পারছে না কোনো ভাবে। কিছুখন রুদ্রর দিকে তাকিয়ে থেকে দেখে রুদ্র তার মতো রেডি হচ্ছে দোলার দিকে কোনো লক্ষ্য নেই তার৷ দোলা হতাশ হয় রুদ্র কাজে।

–” দোলা রুদ্রর অপেক্ষা না করে একা একা আবার উঠার চেষ্টা করতে যায়। কারণ তার ওয়াসরুম যাওয়াটা দরকার। কিন্তু রুদ্র যে আয়না দিয়ে দোলাকেই অনুসরণ করছে এটা দোলা জানে না। দোলা এক পা মাটিতে রেখে আরেক পা রাখতেই ব্যথায় কুঁকড়ে উঠে বসে পড়ে। রুদ্র একই ভাবে দাঁড়িয়ে আছে৷ দোলা খাটের একটা অংশ ধরে আবার উঠার চেষ্টা করলে রুদ্র উচ্চ স্বরে তানিয়াকে ডাক দেয়। রুদ্রর ডাকে দোলা চমকে উঠে বসে পড়ে আবার৷ তারপর রুদ্রর দিকে পুর্ণ দৃষ্টি রাখে। রুদ্র আয়নায় তার দৃষ্টি আবদ্ধ রেখে দ্বিতীয়বার তানিয়াকে ডাকতেই তানিয়া ছুটে আসে।

–‘ ডাকছিলে ব্রো? রুদ্র তানিয়ার কথার জবাব না দিয়ে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে যায়৷ তানিয়া কিছুই বুঝে না রুদ্রর বিহেভের মানে।

–‘ যা বাবা ডেকে সেরে চলে গেলো। কিন্তু দোলা ঠিকই বুঝেছে রুদ্র ব্যাপারটা। দোলা আপসেট হয়ে যায় পুনরায়।

–‘ তানিয়া আমাকে একটু ধরবে। ওয়াসরুম পর্যন্ত এগিয়ে দিবে প্লিজ।
– হ্যাঁ বউমনি এসো বলে দোলাকে ধরে তানিয়া।

–‘ রুদ্র মন খারাপ করে বসে আছে অফিসে। মুলত তার কিছুই ভালো লাগছে না। দোলার সাথে সকালে এমন বিহেভ করার জন্য ভীষণ খারাপ লাগছে রুদ্রর। রুদ্রর সামনে বারবার দোলার অসহায় ফেসটা ভেসে উঠছে।

–” রাজ প্রবেশ করে রুদ্রর অফিসে। রুদ্রকে আনমনে হয়ে থাকতে দেখে বলে কি রে কি ভাবছিস এত?
–” রাজের কথায় রুদ্রর ভাবনার ব্যাঘাত ঘটে। রুদ্র একটা তপ্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে কখন আসলি?
–” এইতো এখনই। আচ্ছা শুনলাম ভাবির নাকি শরীর খারাপ? এখন কেমন আছে রে?

-“” রাজের প্রশ্নে রুদ্র রাজের দিকে তাকায়। কিন্তু রুদ্রর আজকের তাকানোটা রাজের কাছে অস্বাভাবিক লাগে৷ রুদ্র চাহনিতে আজ কোনো রাগের ছাপ নেই দোলার কথা বলাতে। আছে অসহায়ত্বের ছাপ বিদ্যমান।

–‘ কি হয়েছে রুদ্র? তুই কি কোনো কিছু নিয়ে আপসেট?
–” ভালো লাগছে না কোনো কিছু রাজ। কেনো এমন হচ্ছে আমার মধ্যে জানি না৷ কিন্তু সব কিছুতে বিরক্ত লাগছে৷ বারবার শুধু ওই মেয়েটার কথায় মনে পড়ছে। ওর করুণ চাহনি আবার মাঝে মাঝে হেসে উঠা, মায়াভরা চোখে তাকিয়ে থাকা এইসব কিছু আমাকে ভাবাচ্ছে। আমি পারছি না আর দোস্ত। কেনো হচ্ছে আমার সাথে এইগুলা?

—” রুদ্রর কথায় রাজের ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে। মনে শীতল হাওয়ার স্পর্শ অনুভব করে। ভালো লাগছে অনেক রুদ্রর কথা শুনে। তার মানে রুদ্র সত্যি দোলার মায়ায় পড়ে যাচ্ছে৷ তার ভালোবাসায় আবদ্ধ হচ্ছে?

–‘ আমি এই সব থেকে মুক্তি চাই। আমাকে প্লিজ উপায় বল রাজ৷ এইভাবে চলতে দিতে পারিনা সব কিছু। আমার সব কিছু এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে৷ কোনো কাজে মন বসাতে পারছি না ঠিক ভাবে। এমন চলতে থাকলে আমি শেষ হয়ে সব দিক থেকে উত্তেজিত কন্ঠে বলে রুদ্র.।

–“”কেনো পালাতে চাচ্ছিস সব কিছু থেকে রুদ্র? সব কিছু যখন নতুন ভাবে শুরু হতে যাচ্ছে তাহলে কেনো শুরু করছিস না? আরেকটা সুযোগ দে-না জীবন কে। নতুন করে বাঁচনা দোলাকে নিয়ে। দেখ একজন বা দুজনের উপর ভিত্তি গোটা নারী সমাজকে তুই বিবেচনা করতে পারিস না। তাই বলি কি আরেকটা সুযোগ দিয়ে দেখ দোলাকে। আমার বিশ্বাস তোকে ঠকাবে না দোলা।

— রাজের কথায় রুদ্র একটা হাসি দেয়। যে হাসি মধ্যে উপহাস, তাচ্ছিল্য বিদ্যমান। রাজ ভ্রু কুচকে তাকায় রুদ্র দিকে।

–” যার জীবনটাই ধোকা দিয়ে শুরু তার আবার নতুন স্বপ্ন। ছোট থেকে ধোকা পেয়ে আসছি। প্রথমে নিজের মা ধোকা দিয়ে চলে গেলো। এরপর যখন জীবনের মানে কি বুঝতে শিখলাম, অনুভূতি গুলোর সাথে পরিচিত হতে লাগলাম তখন এসে একজন ধোকা দিয়ে গেলো। ধোঁকা ধোকা আর ধোকা। আমার জীবন টা ধোকা আর ছলনার মধ্য দিয়ে চলে গেলো৷ তাই নতুন করে কাউকে ভরসা করার সাহসটা পায়না৷ আর আমি চাইও না কেউ আবার ভরসার হাত বাড়িয়ে দিয়ে সে হাত টেনে নিক৷ আমি এমন ভাবে ভালো আছি আর এইভাবে থাকতে চাই। কাউকে লাগবে না আমার।

–” রাজ একটা হতাশার দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে৷ সেই একই রুদ্রতে পদার্পণ। একই রাস্তায় ফিরে আসা৷ রাজ একটু আশ্বস্ত হয়েছিলো রুদ্রর কথাতে কিন্তু সে আবার সব কিছু ভেঙে গুড়িয়ে গেলো।

–‘ আমার একটা প্রজেক্টের কাজের জন্য বাইরে যেতে হবে। তুই কি যাবি আমার সাথে? রুদ্র কথায় রাজ অসহায় চোখে তাকিয়ে বলে নাহ তুই যা। আমার অন্য একটা কাজ আছে। এরপর বিদায় নিয়ে চলে যায় রাজ। রুদ্র তার কাজে ব্যস্ততা দেখিয়ে চলে যায়।

–“” চলবে….